নিবেদন। (পর্ব- ৩৪)

#নিবেদন। (পর্ব- ৩৪)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা।

প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে মুশরাফা। ঘেমে একাকার সারা ঘা। চোয়ালে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। চোখের পলক পড়ছে বারংবার। দৃষ্টি স্থির সম্মুখে। নিঃশ্বাস ছাড়া কোন রা নেই মুখে। খানিক দৌড়ে ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে থামছে। বড়ো বড়ো নিশ্বাস ফেলছে। বসে পাশে রাখা বোতলে এক চুমুক দিয়ে গলা ভেজাচ্ছে, কপালের ঘাম মুছছে। তারপর আবার ছুট দিচ্ছে। ক্ষণ চলছে এই করেই। জাওয়াদ ঘুমাচ্ছে রুমে, এদিকে তার খেয়ালটি নেই। রুম থেকে বেরুবার সময় কতবার ডেকে এসেছে, জনাবের খবর নেই। তার এক কথা, পুরো সপ্তাহ অফিসে খাটাখাটুনি করে একটা দিন ছুটি পেয়েছে। আজ সারাদিন ঘুমাবে সে। কোন ব্যায়াম ট্যায়াম চলবে না। উপরন্তু, অনুরোধ করায় মুশরাফাকে কাছে টেনে আঁকড়ে ধরে ঘুমজড়ানো গলায় বলল, ‘সারাসপ্তাহ আমার টিফিন রেডি করার জন্য সকালে ঘুমানোর সময় পাও না। আজ তো টিফিনের ঝামেলা নেই। তুমিও ঘুমাও। ‘

মুশরাফা তখন বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘ এই বাহানার জন্যই দিন দিন ভুড়িয়ে যাচ্ছেন। মেদভর্তি পেটের জন্য কদিন বাদে আংকেল দেখাবে।’

‘ আমাকে দেখে অভ্যাস করে নাও। কদিন বাদে নিজেকেই তো দেখতে হবে।’

মুশরাফা না ভেবেই বলল, ‘আমি নিয়মিত ট্রেডমিলে হাঁটি। আপনার মতো আমার পেট একটুও বের হয়নি। কদিন বাদেও হবে না।’

ঘুম জড়ানো চোয়ালে জাওয়াদ হাসল। বন্ধন গাঢ়তর করে কানের কাছে মুখ নিল। ধীর স্বরে বলল, ‘ মেদের জন্য না হলেও অন্য কারণে হবে।’

মুশরাফা ভ্রু কুঁচকাল, ‘কী কারণ?’

জাওয়াদ আবার হাসল। মুশরাফার পেটের উপর আলতো হাত রাখল। তারপর ওমন ফিসফিসিয়ে বলল, ‘কারণ তখন তোমায় হয়ে কেউ একজন আসবে। আমাদের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি নিয়ে, ভীষণ ভীষণ বিশেষ হয়ে। যে আমাদের সব ভালোবাসা কুড়িয়ে নিবে। ‘

মুশরাফার কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল। টান টান হয়ে গেল কপাল। মাথাটা কাত করে তাকাল একবারে কাছেপাশে থাকা মানুষটার দিকে। তার চোখ এখনো বন্ধ। ভাবখানা একবারে ঘুমন্ত মানবের মতোই। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে সে যে জটিল একটা কথা বলে ফেলেছে তার লক্ষণ মাত্র নেই। মুশরাফা চোখে বিস্ময় নিয়ে চাইল। তার তাকানোর মাঝেই আকস্মিক চোখ খুলল জাওয়াদ। প্রশান্ত চোখে তাকাল স্ত্রীর পানে। মুশরাফা লক্ষ করল ওর চেহারায় আনন্দ ঝিলিক দিচ্ছে। বাবা হবার অনুভূতি যেন অনুভব করতে পারছে। স্ত্রীর পানে চেয়ে ঝলমলে হাসল। চমৎকার দেখাল ওকে। মুশরাফা ওই চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। লজ্জার রেখা ঘিরে ধরল কিয়ৎক্ষণেই। দৃষ্টিতে দৃষ্টি স্থায়ী হলো না। চোখ ঘুরাল, লজ্জায় নুয়াল মাথাও। ধীরে বলল,
‘যাহ্! আমার লজ্জা লাগছে!’

জাওয়াদের চোখ থেকে ঘুম সরে গেছে সেই ক্ষণে। স্ত্রীর লজ্জাবিলাস দেখে হেসে উঠল।
‘ও বাবা! মা হবার কথায় এত লজ্জা , মা হলে না জানি কী করবে! দেখা যাবে, আমার বাচ্চা কাঁদছে। আমি তোমাকে বললাম, দেখো বাচ্চা কাঁদছে। তুমি লজ্জায় নুয়ে পড়ে বলবে, যাহ্, আমার লজ্জা লাগছে। আমি তখন বউয়ের লজ্জা থামাব না কি বাচ্চার কান্না?’

মুশরাফা পালিয়ে যাবার মনস্থির করল। লজ্জা লাগছে ভীষণ, এখানে আর এক মুহুর্ত নয়। বাঁধন ছেড়ে ওঠে যাবার চেষ্টা করে বলল, ‘ ছাড়ুন, আমি যাব।’
জাওয়াদ ছাড়ল না। বাঁধন গাঢ় করে বলল, ‘ কোন ছাড়াছাড়ি হবে না। আগে পরে তো সেই ফিটনেস আর থাকবে না। আজ একটু বাদ দিলে খুব একটা অসুবিধা হবে না। আসো, ঘুমাও।’

মুশরাফা কিছু বলতে নিল। জাওয়াদ নরম সুরে বলল,
‘তোমার ফিটনেস নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। তুমি যেমন আছো, তেমনই আমার আকর্ষণ কেড়ে নিচ্ছো, আর কেড়ে নেবার পায়তারা করো না। পুরো সপ্তাহ এ কাজ ও কাজে অনেক ধকল যায়। আজ শুধু রেস্ট নিবে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, ঘুমাও।’

জাওয়াদ আলতো হাতে বিলি কা/টতে লাগল মুশরাফার এলোচুলে। আবেশে চোখ বুজল মুশরাফা। এমন যত্ন ফেলে কারইবা ট্রেডমিলে হাঁটার ইচ্ছে জাগবে? সুখের আবেশে ইচ্ছেরা ধূলিসাৎ হয়ে গেল। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টানল। চোখ খুলল, প্রেমময় চোখে চাইল প্রেমপুরুষের পানে। জাওয়াদের চোখ বন্ধ। পাতা নড়ছে। ঠোঁটের কোণে তখন মৃদু হাসির রেখা উঁকি দিচ্ছে। সুন্দর মুহুর্তের সুখ সেও অনুভব করছে।

মুশরাফা গভীর চোখে চাইল ভাবনায় এলো অতীতস্মৃতি। বিয়ের দিনটা ওদের জীবনের চমৎকার একটা দিন ছিল, প্রেম ভালোবাসায় মাখামাখি ছিল। পরদিন থেকেই বিতৃষ্ণা, রাগ ক্ষোভ এসে হানা দিয়েছে দুজনার মাঝে। দুজনার চালচলন ছিল দুজনার বিরক্তির কারণ। মুশরাফা প্রকাশ না করলেও জাওয়াদ ঠিকই প্রকাশ করতো। এই মানুষটা ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। সেই ভালোবাসা বিয়ের পর দিনই হারিয়ে গেছিল। কতখানি দূরত্ব এসে গেছিল আপনাআপনি। আজকে যেই মানুষটার চোখে তার জন্য প্রেম ভাসে, এই প্রেম তখন ওর কাছে কেবল কল্পনায় ছিল
। কতগুলো মাস এই মানুষটার অবহেলা, বিরক্তি সহ্য করেছে সে। তাহাজ্জুদের নামাজে কেঁদেকেটে কত রাত পার করেছে।
যত্নভরে আজ যেই হাতটা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, এই যত্নের দেখা পায়নি সেই সময়ে। জাওয়াদের চোখে নিজের জন্য বিতৃষ্ণা দেখে দিন পার হতো। তারপর কত উত্থান পতনের পর সেই বিতৃষ্ণার রেখা সরেছে। জাওয়াদ আবার ভালোবাসতে শুরু করল। মুশরাফার ধৈর্যের ফল হিসেবে এবারের ভালোবাসাটা আগের চেয়ে হাজারগুণ বেশি হলো। আজকাল সে এই মানুষটার ভালোবাসায় মুড়িয়ে থাকে। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে মানুষটা? সেই জাওয়াদের সাথে আজকের জাওয়াদের আকাশ পাতাল ব্যবধান। তবে এই জাওয়াদটা সুন্দর, ভীষণ সুন্দর! এই জাওয়াদকে দেখলেই ওর ভালোবাসা পায়। মুশরাফা আনমনে হাসল। জাওয়াদ চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল,
‘ ভালোবাসাটাসা পেলে প্রকাশ করো , নয়তো চোখ বন্ধ করো। ‘

মুশরাফা ধরা পড়ে তীর্যক চোখে চেয়ে দৃষ্টি ফিরাল। না ঘুমানোর মননে থাকা মুশরাফার চোখে ঘুম ভর করল একসময়। সেই ঘুম ছুটে গেল কিছুসময় বাদে। ঘড়িতে তখন সাতটা বাজে। দেয়াল ঘড়িটা ঢং ঢং শব্দ করছে। সেই শব্দেই ঘুম ভেঙেছে ওর। চোখ মেলে জাওয়াদকে কাছেপাশেই পাওয়া গেল। পরনের ঢিলে টি-শার্ট, প্লাজো দেখে স্মরণে এলো, ও ট্রেডমিলে হাঁটার পরিকল্পনা নিচ্ছিল। এই লোকের ফাঁদে পড়ে অসময়ে ঘুম ভর করেছে ওর। সরে এসে অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করল। ওয়াকিং সুজ পরে এগিয়ে এলো ড্রয়িংরুমে। সেখানে ট্রেডমিল রাখা।

রেস্ট টাইমে স্মৃতি আওড়াচ্ছিল মুশরাফা। আনমনেই হেসে উঠল। তারপর আবার ছুট লাগাল। ওর ওয়াকিং টাইমে হাই তুলতে তুলতে ড্রয়িংরুমে এলো জাওয়াদ। মুশরাফা ওঠে আসবার পর ঘুম ছুটে গেছে ওর। এত চেষ্টা করেও দু’চোখ জোড়া লাগে নি। এদিকে ক্ষিধের তাড়ানা অনুভব করল। কাল অনিকরা এসেছিল। ওদের চলে যাবার তাড়ায় একটু তাড়াতাড়িই ডিনার সেরে ফেলেছে। অনেকটা সময়ে পেরিয়ে গেছে উপোস পেটে। এই ক্ষণে কিছু না খেলেই নয়।

ডাইনিং রুমের চৌকাঠে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। স্ত্রীকে দেখে হাসল। ঘেমে-নেয়ে একাকার । এই মেয়ে ফিটনেস কনসার্ন। একটু ও ছাড় নেই। খাবার দাবারে ও কত সতর্কতা! এটা খাওয়া যাবে না, ফ্যাট। ওটায় ক্যালরি বেশি, ওটায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে। নিজের সাথে সাথে ওকেও মেনটেইন করে রাখে। কত বাঁধাধরা! তবে মন্দ লাগে না জাওয়াদের। দিনশেষে নিজেকে সুস্বাস্থ্যবান হিসেবে পায়। স্মিত হাসল জাওয়াদ। আবার হাই তুলল। বাঁ হাতের উলটো পিঠ মুখে ঠেকিয়ে পড়ল, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা। ‘

মুশরাফার চোখ পড়ল জাওয়াদের দিকে। সে রেস্ট নিল। ধীরে ধীরে হাঁটার গতি থামিয়ে একবারে থেমে গেল। তারপর বলল, ‘ কাম, ইট’স ইউর টার্ণ।’

জাওয়াদ পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। টেবিলের উপর রুমাল রাখা। ওটা তুলে নিয়ে স্ত্রীর হাতে তুলে দিল। বলল, ‘ছুটির দিনে সব ছুটি। নেমে আসো।’

মুশরাফা রুমাল দিয়ে মুখ মুছে নিচে নামল। জাওয়াদ গ্লুকোজের বোতলের মুখ খুলে এগিয়ে দিল। তারপর চেয়ারে বসে কয়েক চুমুক পান করল। জোর গলায় বলল,
‘আমি এখন নাস্তা বানাতে যাব। নাস্তা বানিয়ে টেবিল সাজিয়ে ডাকা অবধি আপনি ওয়াকিং করবেন। কোন বাহানা চলবে না এখন।’

জাওয়াদ ফ্যানের স্পিড বাড়িয়ে দিল। তারপর টেবিলের উপর ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে বলল, ‘ ক্ষিধেয় পেটে টান পড়েছে। বিন্দুমাত্র এনার্জি নেই। এখন আমার মেইন ফোকাস ব্রেকফাস্ট এ।’

মুশরাফা চাপা শ্বাস ফেলল। জাওয়াদকে আজ হাজার চেয়ে ও জগিং করানো যাবে না, তা বেশ বুঝে গেছে সে। সে ক্লান্তির শ্বাস ফেলে কিচেনের দিকে পা বাড়াল। জাওয়াদ বলল, ‘ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি আপেল খেয়ে নিচ্ছে। সমস্যা হবে না।’

ততক্ষণে বেসিনে আপেল ধুয়ে খেতে শুরু করেছে জাওয়াদ। ঘামে শরীর ম্যাজমেজ করছে। মুশরাফা কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুম গেল। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে কিচেনে গিয়ে দেখল জাওয়াদ অমলেট করছে। মুশরাফা এগিয়ে গিয়ে বলল,
‘আপনি বসুন, আমি করছি।’

জাওয়াদ ধীরে বলল, ‘আজকের ব্রেকফাস্ট আমি করব। তুমি বরং মাকে ডেকে নিয়ে আসো। ‘

মুশরাফা ভ্রু নাড়াল, ‘ আল্লাহ! কী চমৎকার ভাগ্য আমার! ‘
জাওয়াদ কৌতুকের সুরে বলল, ‘নিয়ম করে দিন তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়বে। ‘

মুশরাফা হেসে উঠল। গত রাতে মেহমানদের এঁটো বাসন গুলো পড়ে আছে সিঙ্কে। মুশরাফা সিঙ্কের ট্যাপ ছেড়ে বলল, ‘এগুলো ধুয়ে নিই, তারপর ডাকতে যাব।’

কাজের ফাঁকে চোখ গেল জানালা গলিয়ে নিচে। রাস্তার পাশে একটা মা বিড়াল পড়ে আছে। মাথা থেতলানো। কোন গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে বোধহয়। মায়ের বুকের কাছে একটা বিড়াল ছানা করুণ সুরে ডাকছে। আরেকটা মায়ের চারপাশে ঘুরে ঘুরে আর্তনাদ করছে। এই করুণ দৃশ্য দেখে মুশরাফা বুক কেঁপে উঠল। মুশরাফার ভীষণ মায়া হলো। আকস্মিক বলল,
‘ বিড়ালে এলার্জি বা ভয় আছে আপনার?’

হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিক কথায় জাওয়াদ প্রশ্নবিদ্ধ চোখে চাইল। তারপর বলল, ‘না। কেন?’

মুশরাফা পরবর্তী কথা বলা আগে সময় নিল। কিছু সময় বাদে বলল, ‘ আমি একটা বিড়াল পুষতে চাই। এনে দিবেন?’

সরল আবদার মুশরাফার। জাওয়াদ ঘটনা বুঝার চেষ্টা করল, হঠাৎ মুশরাফার মাথায় বিড়ালের খেয়াল এলো কেন? বুঝতে পারল না, কেবল মুশরাফার চোখে আগ্রহ দেখল। জাওয়াদ গম্ভীরমুখে বলল,
‘শুনো মেয়ে,এখন বিড়াল নয় বাচ্চা পালার সময়। পুষবে যখন বাচ্চা পুষো! আমি ও একটা বাচ্চা পুষতে চাই, তুমি এনে দিবে?’

মুশরাফা বিব্রতবোধ করল। সে জানে জাওয়াদ ইচ্ছে করে ওকে বিব্রতবোধ করবার চেষ্টা করছে। সে চোখ ফিরিয়ে বিড়বিড় করল, আল্লাহ চাইলে এনে দিব। জাওয়াদ হেসে ফেলল,
‘ আজই এনিমেল হাউজ থেকে একটা বিড়াল কিনে এনে দিব। তা কেমন বিড়াল পছন্দ তোমার? ‘

মুশরাফা দৃঢ় গলায় বলল, ‘বিড়াল কেনা যাবে না।’

‘কেন যাবে না? আজকাল বাজারে অহরহ বিড়াল পাওয়া যায়। ‘

‘ ওই বিড়াল কিনে পোষা যাবে না।’
‘কেন?’

‘ বিড়াল কেনা বেছা নাজায়েজ। ‘
জাওয়াদ অবিশ্বাস্য চোখে চাইল, ‘সত্যিই! আমি জানতাম না।’

মুশরাফা কোমল স্বরে বলল, ‘ হাদিসে এসেছে,
জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুর ও বিড়ালের মূল্য নিতে নিষেধ করেছেন; তবে শিকারী কুকুর ব্যতীত।’

জাওয়াদ শুনল, বুঝল। তারপর কৃতজ্ঞ চোখে চাইল। ওর চোখ শ্রদ্ধা। এই হাদিসটা কখনো শুনেনি ও। মনে মনে দোয়া করল, ‘জাযাকি-আল্লাহু খায়রান।’
তারপর ঝলমলে হাসল।
শীতল স্বরে বলল,
‘তাহলে বিড়াল কোথায় পাব?’

মুশরাফা বাইরের দিকে ইশারা করল, ‘ বাসার নিচে একটা মা বিড়াল মারা গেছে। বাচ্চা দুটো কী আর্তনাদ করছে। যে কোন সময় কুকুর এসে মেরে ফেলবে। ওদের রেসকিউ করব আমরা। এতে আল্লাহ আমাদের উপর খুশি হবেন। ‘

জাওয়াদ এসে বিড়ালগুলোর করুণ দৃশ্যখানা দেখল। খুব মায়া হলো ওর। ভেবেচিন্তে বলল,
‘ আমার কিন্তু বিড়াল সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তুমি এনে ঠিকঠাক পুষতে পারবে?’

‘বিড়াল সম্পর্কে আমার বেশ ধারণা আছে। সমস্যা হবে না ইনশা আল্লাহ। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব, যাতে ওদের কোন সমস্যা না হয়। নাহলে আল্লাহ আমাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।’
অসহায় স্বরে বলল মুশরাফা। জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকালো,
‘ ওদের পুষলে সওয়াব পাওয়ার কথা, শাস্তি দিবেন কেন?’

মুশরাফা মলিন স্বরে হাদিস শুনাল,
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল, অবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়। এ কারণে মহিলা জাহান্নামে প্রবেশ করল। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি [রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেন, আল্লাহ ভালো জানেন, বাঁধা থাকাকালীন তুমি তাকে না খেতে দিয়েছিলে, না পান করতে দিয়েছিলে এবং না তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছিলে, তা হলে সে জমিনের পোকা-কামড় খেয়ে বেঁচে থাকত। (সহিহ বুখারী)

আমার সামর্থ না থাকা সত্ত্বেও যদি বিড়াল পুষতে যাই, এর কারণে যদি বিড়ালের কোন সমস্যা হয়। তবে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। আমি পারব তো?’

মুশরাফার স্বর ভীত হলো এই পর্যায়ে। জাওয়াদ মাতৃহারা দুই বিড়ালের দিকে তাকাল। তারপর স্ত্রীকে আশ্বাস দিল, ‘ পারবে ইনশা আল্লাহ। আমি ওদের রেসকিউ করে এনিমেল হাউজ নিয়ে যাব। বিড়াল দেখিয়ে কিভাবে কী করতে হবে এ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আসব। ওদের পরামর্শ মাফিক অনেকদিনের খাবার নিয়ে আসব। কোন সমস্যা হবে না। চিন্তা করো না। ‘

মুশরাফার ভয় কমল কিছুটা। খানিকবাদেই উৎফুল্ল হয়ে উঠল। বলল,
‘ জানেন? বিড়াল চরিত্রটা সুন্দর। বিড়াল একমাত্র প্রাণী যারা, মসজিদে নববীতে অবলীলায় ঘুরে বেড়ায়। বিড়াল পবিত্র প্রাণী। কুকুর কোন খাবারে মুখ দিলে সাতবার ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়। কিন্তু বিড়ালের পবিত্রতা এতই যে একবার ধুলেই হয়ে যায়। রাসূল (সাঃ) এর পছন্দ ছিল বিড়াল। আয়েশা (রাঃ) আর বিড়াল একি পাত্রে খাবার খেয়েছে।

একটা হাদিসে এসেছে,
তাবি’ঈ দাউদ ইব্‌নু সা-লিহ ইব্‌নু দীনার (রহ:) থেকে বর্ণিতঃ
তার (মায়ের) মুক্তিদানকারিণী মুনীব একবার তার মাকে কিছু ‘হারিসাহ্‌’ নিয়ে ‘আয়িশাহ্‌’ (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। তার মা বলেন, আমি গিয়ে তাকে সালাতরত পেলাম। তিনি তখন আমাকে (হাত নিয়ে) ইশারা করলেন, ‘তা রেখে দাও’। তখন একটি বিড়াল এলো এবং তা হতে কিছু খেল। এরপর ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) সালাত শেষ করে বিড়ালের খাওয়া স্থান থেকেই খেলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিড়াল নাপাক নয়। ওটা তোমাদের আশেপাশে ঘন ঘন বিচরণকারী জীব। তিনি [আয়িশাহ্‌ (রাঃ)] আরো বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট (পানি) দিয়ে উযু করতে দেখেছি। (মিশকাতুল মাসাবিহ) ‘

বিড়াল নিয়ে মুশরাফার উৎফুল্লতা দেখে হাসল জাওয়াদ। নাস্তা খেয়ে জিহানকে নিয়ে নিচে নামল। আলতো হাতে একটা ঝুড়িতে ভরে তুলে আনল। তারপর নিয়ে গেলে এনিমেল হাউজ। সেখানে পরিক্ষা নিরিক্ষা শেষ, সবকিছু ধারণা নিয়ে ফিরে এলো। সাথে ক্যাটফুড। মুশরাফা বিড়াল ছানা পেয়ে ভুবন ভুলানো হাসি উপহার দিল। মেয়েটা অল্পতেই খুশি। তারপর বিড়ালচর্চায় লেগে পড়ল। বিড়ালের থাকার ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা , উষ্ণতা, লিটার, নাম রাখা আরও কত কী! জিহান উপচে পড়া খুশিতে মাতছে। হৈ-হুল্লোড় বাসা মাথায় তুলছে। চাচীকে অনুরোধ করছে, একটা বিড়াল তাকে দিয়ে দিতে। কমলাটে বিড়ালটা ওর পছন্দ হয়েছে। মুশরাফা হেসে বলল, ‘ আরেকটু বড়ো হোক দিয়ে দিব।’ জিহান আগামী দু’দিন এ এ বাসা থেকে নড়বে এ কথা জানিয়ে দিল সবাইকে।

বিড়ালচর্চায় কাটল বেলা। দুপুরে রান্নাও হলো না। বাইরে থেকে খাবার আনল জাওয়াদ। বিকেলবেলা তারিফ ফোন দিল। কালই ঢাকা ফিরে এসেছে সে। মায়ের অবস্থার কথা শুনে না এসে পারল না। জাওয়াদকে জানাল, বিলম্বিত বিয়ে নিয়ে মামার সাথে আলোচনা করতে মামার বাসায় গিয়েছে। জাওয়াদ যেন মুশরাফাকে নিয়ে যায়। জাওয়াদ ইতিবাচক উত্তর দিয়ে ফোন রাখল। মুশরাফার উদ্দেশ্যে বলল,
‘ ভাইয়া মামার বাসায় গেছেন। আমাদের যেতে বলছেন। যাবে?’

নতুন জায়গায় এসে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে বিড়ালদের। অনবরত ডেকে যাচ্ছে। মুশরাফা বিড়াল দুটোর দিকে ইশারা করে করুণ সুরে বলল, ‘ ওদের একা রেখে কিভাবে যাব? আপনি চলে যান।’

মুশরাফার চেহারায় একটা মাতৃত্বের আভা। বলা হয়, একটা বিড়াল পোষা আর একটা বাচ্চা পোষা সমান। বিড়ালদের মায়ের মতো করে যত্ন করে রাখতে হয়। মুশরাফাকে এই ক্ষণে বিড়ালদের ‘মা’য়ের মতোই লাগছে। এইটুকু সময়ে সম্পর্কের এক সুতোয় বাঁধা পড়েছে। জাওয়াদ ভাজিতাকে বলল,
‘বুঝলি জিহান, এখন তোর চাচ্চি ক্যাটমম হয়ে গেছে। এখন তার মেইন প্রায়োরিটি তার বিড়াল বাচ্চা। স্বামী, ভাই সব অধ্যায় বন্ধ। ‘

জিহান চাচ্চুর কথা ধরতে পারল না। কেবল বুঝল চাচ্চি ‘ক্যাটমম’ হয়ে গেছে। সে বলল, ‘চাচ্চি যদি ক্যাটমম হয়, তাহলে আমি ক্যাটদের কী হয়েছি? ক্যাটড্যাড?’

জাওয়াদ হো হো করে ফেলল। ভাতিজার গাল টেনে বলল, ‘ তোর চাচ্চি মম হলে, ড্যাড হবো আমি। তুই হবি, ক্যাটব্রাদার। মানে ওদের ভাই। ‘

জিহান ‘ভাই’ শুনেই খুশি হলো। বলল, ‘ওরা কি আমাকে ‘ভাইয়া’ ডাকবে?’

জাওয়াদ হাসির জন্য উত্তর দিতে পারল না। জিহান মনোযোগ দিয়ে বিড়ালের ডাক শুনল। ওরা শুধু মেয়াও মেয়াও করছে। আর কিছু বলছে না। জিহান গাল ফুলিয়ে বলল, ‘ওরা তো মেয়াও ছাড়া কিছু বলছে না। ভাইয়া ও ডাকছে না।’

জাওয়াদ হাসি থামিয়ে বলল, ‘এটা ওদের ভাষা। মেয়াও হলো ওদের কোড ওয়ার্ড। এই একটা শব্দ দিয়ে ওরা অনেক কিছু বুঝায়। ওরা তোকে ভাইয়া ও ডাকে।’

‘কিভাবে?’

‘যখন মেয়ায়ায়াও বলে টেনে ডাক দেয়, কিংবা তোর কাছ ঘেঁষে দাঁড়াবে তখন বুঝবি ওরা তোকে ‘ভাইয়ায়ায়া’ বলে ডাকছে। ওদের মুখে টান শুনলেই দৌড় দিবি। এখন থেকে তুই ওদের বড়ো ভাই। ভাই বোনদের আগলে রাখবি। অনেক দায়িত্ব কিন্তু তোর।’ গুরুগম্ভীর মুখে আদেশ দিল জাওয়াদ। জিহান ও মাথা নাড়িয়ে সায় জানাল, সে বড়ো ভাইয়ের দায়িত্ব পালন করবে।

জাওয়াদের কথা শুনে মুশরাফা হাসি চেপে রাখতে না পেরে শব্দ করে হেসে ফেলল। তাল মেলাল জাওয়াদ। হো হো করে হাসছে সে।

‘বিনা মেঘে বজ্রপাত এর মতো কোথা থেকে টপকে পড়লি?’ নাজমুল সাহেবের বাসার সামনে যেতেই দেখা হলো অনিকের সাথে। উৎফুল্ল গলায় বলল কথাটা। জাওয়াদ ওর কাধ চাপড়ে বলল,
‘ আমার শ্বশুরের মাথার উপর বাস করে আবার জিজ্ঞেস করিস!’

অনিক দুঃখী ভান করে বলল,
‘তাই বল। এ বিল্ডিংয়ের মেয়ে বিয়ে করে শ্বশুর বাসাতেই আসিস, আমার জন্য তো কখনো আসিস না।’
জাওয়াদ অনিক পিঠে চওড়া চাপড় মারল, ‘ বিয়ের আগে তোর সাথে দেখার করার জন্য তো আমার আত্মা আসতো। আর দু’দিন আগে ও আমার আত্মা পাঠিয়েছি? শা লা অকৃতজ্ঞ! ‘
অনিক পিঠ ঢলে বন্ধু কাধে শক্তপোক্ত কিল বসাল। রাগ নিয়ে বলল,
‘ বিয়ে করেছিস, বউ আছে। বউকে গিয়ে মা/র। আমাকে মারছিস ক্যান?’

জাওয়াদ প্রাণবন্ত হাসল, ‘বউকে ভীষণ ভালোবাসি। মা/ রের জন্য হাত উঠে না।’

‘আমি তো বানের জলে ভাইস্যা আইছি। সেই স্কুল লাইফ থেকে কত লক্ষ মা/র দিয়েছিস খেয়াল আছে তোর?’

‘তোরে মা’রার মাঝে অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। তুই মনে করিস না, এসব বলে টলে তুই মা/র থেকে বেঁচে যাবি। আমি তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি বুড়ো বয়সে ও মা’রব তোকে। ‘
হেসে বলল জাওয়াদ। অনিকের সাথে থাকলে ও ভীষণ উৎফুল্ল, চঞ্চল, বাচ্চা হয়ে যায়।

অনিকের হাতে বাজারের ব্যাগ। বোধকরি, সপ্তাহিক বাজার করে ফিরছে সে। জাওয়াদ ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিল। অনিক হাত খালি করেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বলল,
‘একবারে বাসা অবধি দিয়ে আসবি। এটা আমার গায়ে হাত তোলার শাস্তি।’

জাওয়াদ আবার ঠুয়া মা/রল অনিকের মাথায়। অনিক গম্ভীরমুখে বলল, ‘ আমি ভেবেছিলাম তোর ছেলের কাছে আমার মেয়ে বিয়ে দিব। এখন দেখছি ভাবনা বদলাতে হবে। তোর স্বভাব ভালো না। তোর মতো গায়ে হাত তোলা স্বভাবের শ্বশুরের ঘরে আমার মেয়ে বিয়ে দিব না। ক্যান্সেল। ‘

জাওয়াদ উচ্চৈঃস্বরে হেসে উঠল। বলল, ‘ তোকে মা’রা আমার বন্ধুগত অধিকার। পুত্রবধূকে স্নেহ করা শ্বশুরগত অধিকার। আমার ছেলে হলে তোর মেয়েকেই আমার ছেলেবউ করব ইনশা আল্লাহ। তারপর বেয়াই হিসেবে তুই আমার বাসায় যাবি, আমি দেখলেই তোকে পিটাব। ভাবতেই আনন্দ হবে।’

অনিক চুপ রইল। তারপর বলল, ‘তোকে আমি বেয়াই ডাকব? জাওয়াদ বেয়াই, আপনি ভালো আছেন?
কী ফানি শুনাবে?’ হো হো করে হেসে ফেলল অনিক। জাওয়াদ ও তাল মেলাল, ‘আমি আগেই বলে দিচ্ছি, তোকে আপনি বলতে পারব না।’

হাসি ঠাট্টার মাঝে ওরা চারতলায় পৌঁছে গেল। কলিংবেল বাজাতেই তারিফ দরজা খুলল। জাওয়াদ ওকে দেখে সালাম দিল। কুশল বিনিময়ের পর অনিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।
‘ভাইয়া, ও অনিক। আমার বন্ধু। আবার আমার আর রাফার উকিলবাবাও। আর অনিক উনি আমার একমাত্র শ্যালক। ‘

তারিফ হাসল এক গাল। অনিক হেসে হাত এগিয়ে দিল। এর আগে ছেলেটার সাথে দেখা হয়েছে, কিন্তু কথা হয়নি। তারিফ হ্যান্ডশেক করে বলল,
‘তুমিই তবে সেই মহান ব্যাক্তি! আমার পক্ষ থেকে একটা ট্রিট প্রাপ্য তোমার। ভেতরে এসো।’

অনিক যেতে চাইল না। হাতের ব্যাগ দেখিয়ে বলল, ‘ বাসার বাজার করেছি। যেতে হবে ভাইয়া। অন্য একদিন।’

বলে বিদায় নিল। জাওয়াদ ভেতরে ঢুকল। রুমে চোখ ঘুরানোর সময় এক সোফায় বসে থাকা শ্বশুরকে চোখে পড়ল। জাওয়াদের মনে প্রশ্ন খেলে গেল। তারিফ তো উনার কথা বলেনি। শ্বশুরের চোখে চোখ পড়তেই বিব্রতবোধ করল জাওয়াদ। ফারুকী আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘কেমন আছো?’

জাওয়াদের এক হাতে একটা ফলমূলের প্যাকেট। সেগুলো রাখতে রাখতে বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ। ‘

ব্যাস আর কথা আগালো না। নাজমুল সাহেব ভেতর ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। জাওয়াদ সবে সোফায় বসেছে। মামা শ্বশুরকে দেখে উঠে দাঁড়াল। হ্যান্ডশেক করে গলায় গলা মেলালো। বিনম্র স্বরে সালাম দিয়ে, ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করল। অমায়িক হাসি তার ঠোঁটে। জাওয়াদের চোখে আচরণে স্পষ্ট শ্রদ্ধা। এই সুন্দর দৃশ্য দেখে ফারুকীর কেন যেন আফসোস হলো, হলো হিংসাও। জাওয়াদের আসল শ্বশুর তো সে, কই তার সাথে তো এমন আচরণ করল না। সব সম্মান মামা শ্বশুরকে দিচ্ছে। তাকে একটা সালাম অবধি দিল না। বেয়াদব ছেলে।

নাজমুল সাহেব বসবার ইশারা করে বললেন, ‘রাফাকে নিয়ে এলেনা কেন?’

জাওয়াদ স্মিত হেসে বলল, ‘ দুটো বিড়াল এডপ্ট করেছে, এখন ওগুলো নিয়েই ব্যস্ত আপনার মেয়ে।’

নাজমুল সাহেব হাসলেন। বললেন, ‘ রাফার অনেকদিনের শখ ছিল বিড়াল পোষার। একবার নিয়ে এসেছিলাম। তোমার মামীর বিড়ালে এলার্জি বলে আবার রেখে আসতে হয়েছিল। যাক এখন ওর শখ পূরণ হলো।’
জাওয়াদ ও প্রসন্ন গলায় বলল, ‘ এইজন্যই বিড়াল পেয়ে এত খুশি হয়েছে ও। সেই সকাল থেকে বিড়ালের পাশে বসা, বিড়ালচর্চায় লাঞ্চ ও করে নি ঠিকমতো। ‘ ‘

ফারুকী আর তারিফ পাশাপাশি বসা, ওরা নিরব দর্শকের মতো চেয়ে রইল। শুনে রইল মুশরাফাকে নির্মল ভালোবাসা দুই পুরুষের কথোপকথন। ফারুকীর দৃষ্টি কেবল জাওয়াদের দিকে। মুশরাফার কথা বলবার সময় ওর চোখমুখে খুশি, সুখ ঝলমল করে ওঠছে। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সম্মান, সন্তুষ্টি ফুটে উঠছে। স্ত্রীর ছোটো ছোটো আহ্লাদকে প্রশ্রয় দেয়াটা চোখে পড়ছে ভীষণ। এই ক্ষণে এসে ফারুকীর ও মনে হলো, এই ছেলের কাছে তার মেয়ে সুখেই আছে বোধহয়।

ওরা তখন বিলম্বিত বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। তারিফ, মামা, আর ফারুকী বলছেন জাওয়াদ শুনছে চুপচাপ। আলোচনার মাঝে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে ভেতর রুম থেকে বসার ঘরে এলেন লায়লা। উদ্ভ্রান্ত, বিধ্বস্ত অবস্থা তার। উদ্মাদের মতো আক্রমণ করলেন জামাতার উপর। আতর্কিত আক্রমণে ভড়কে গেল জাওয়াদ। হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল। সেইক্ষণেই ওর ধরতে পারল, আজকের দিনটা লায়লার, মানে ওর শ্বাশুড়ি। সেই কাঙ্খিত দিন এসে গেছে।

চলবে…

আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here