স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি। #দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। (পর্ব-৩৯)

#স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি।
#দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। (পর্ব-৩৯)
#আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা।

পরম মমতায় মেয়েকে আগলে নিয়ে বসে আছেন লায়লা আঞ্জুমান। মেয়ের মাথায় বিলি কাটবার ফাঁকে পরখ করছেন মেয়েকে। চোখের কোল ঘেঁষে গড়িয়ে পড়ছে একফোঁটা দুফোঁটা নোনাজল। ঠোঁটের কোণের হাসিটা সরছেই না। তবে অনুভূতি প্রকাশপূর্বক কোন রা নেই মুখে। রা করছে না মেয়েটাও। মায়ের আদর উপভোগ করছে চুপটি করে। ইশ! কতকাল বাদে এহেন আদর ভাগ্যে জুটল তার! সেই কৈশোর থেকে এমন একটা দিনের অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে এলো। কত প্রতিক্ষার পর! এখনো স্বপ্ন লাগছে, ঘোর লাগছে। খুশিতে জ্বলজ্বল করছে মুখ। আন্দাশ্রুতে ভিজতেছে গাল। মন ঝপছে শুকরানা ঝিকির।

সেই কখন থেকে এই মিলনপর্ব চলছে, শেষ হবার নামটি নেই। আবেগে আপ্লূত মা-মেয়ের হুঁশটি নেই। তখন দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা। চারদিক থেকে মাগরিবের আযান ভেসে এলো। তারিফের বাসার কাছেই মসজিদ। বেশ জোরেই এসে ঠেকল রবের পথে যাবার আহ্বান। এতেই ধ্যান ভাঙল মুশরাফার। ধীরে ডাকল, ‘মা?’

ধ্যান ফিরল লায়লার। ডাকটা এত মধুর লাগে কেন? মেয়েটা এত সুন্দর করে ডাকে যে হৃদয়ে প্রশান্তিতে ঢেকে যায়। লায়লা শুনেও জবাব দিলেন না, আবার শুনবার আশায়। মুশরাফার আবার ডাকল, হৃদয়গ্রাহী ডাক, ‘মা?’

লায়লা এবার জবাব দিলেন আদরে, ‘ কী, মা?’

মুশরাফা চোখ বন্ধ করে হাসল। আজ কতকাল বাদে মাকে ডেকে বিপরীতে উত্তর পেল! অবশেষে! ধীরেই বলল, ‘আযান হয়েছে। নামায পড়ব।’

মায়ের কাছ ছাড়বার অনুমতি প্রার্থনা করল মুশরাফা। ওর বিনয়ী ভঙ্গিতে মুগ্ধ হলেন লায়লা। প্রসন্ন হেসে ছেড়ে দিলেন। আলতো সুরে বললেন, ‘নামায পড়ে আবার এসে বসিস আমার পাশে। অনেক কথা বলবার আছে তোকে।’

আযান কানে যেতেই জাওয়াদ উঠে দাঁড়াল। নাজমুল সাহেবকে বলল,
‘মামা, চলুন নামাজে যাই।’
নাজমুল সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। নাজমুল সাহেবের পাশে বসা ফারুকী। জাওয়াদ তার দিকে তাকাল। কী ভেবে যেন ধীরে বলল, ‘আপনি যাবেন, বাবা?’

শ্বশুরকে মেনে নিলেও সম্বোধন করেনি জাওয়াদ। এই ক্ষণেই করল বোধহয়। জামাতার মুখে ‘বাবা’ সম্বোধন শুনে বেশ খুশি হলেন ফারুকী। সৌজন্যতাবোধ হোক আর যাই হোক জামাতার আহ্বান ফেলতে পারলেন না। উঠে দাঁড়ালেন, ‘হ্যাঁ, যাবো। ‘

জাওয়াদ প্রসন্ন হাসল। বিনয়ী স্বরে বলল, ‘বাবা আসুন।’

তারিফও আর বসে রইল না। তার পরিপূর্ণ পরিবারের সাথে নামাজের জন্য পা বাড়াল। ওর মুখে ভুবনভুলানো আনন্দ।

_________________________

রুমের এক কোণে একনিষ্ঠমনে নামাজ পড়ছে মুশরাফা। রুকু করছে, সেজদায় মাথা ঠেকাচ্ছে। অনেক্ক্ষণ যাবত মাথা নুইয়ে রাখছে। আবার উঠে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। মেয়েকে চোখে হারানো লায়লা এসে বসেছেন খাটে। স্থির চোখে তাকিয়ে দেখছেন মেয়েকে, মেয়ের নামাজকে। চোখ, মন প্রশান্তিতে ভরে গেছে। তার তাকানোর মাঝে মুশরাফা সালাম ফেরালো। আয়াতুল কুরসি পড়তে পড়তে মায়ের দিকে তাকাল। চোখে চোখ পড়ল। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওমা ফিল আরদি… পড়তে পড়তে মায়ের পানে চেয়ে হাসল। লায়লা হাসলেন না, প্রসন্নমনে চেয়ে রইলেন। মুশরাফা আয়াতুল কুরসি শেষ করে জিজ্ঞেস করল, ‘কিছু বলবে, মা?’

লায়লা আনমনা হলেন। তারপর কোমল স্বরে বললেন, ‘ আমাকে নামাজ পড়া শিখিয়ে দিবি?’

ফরজ নামাজের পর দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। মুশরাফা মোনাজাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মায়ের কথায় থেকে গেল। বিস্ময়ে চক্ষুচড়ক হলো ওর। অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল। বিস্মিত স্বরে বলল,
‘তুমি সত্যিই নামাজ পড়বে, মা?’

লায়লা সায় জানালেন। তিনি মানত করেছিলেন, রাফা তার কাছে ফিরে এলে তিনি ইসলামের পথে ফিরবেন। মেয়ে ফিরে এসেছে এবার তার ইসলামের পথে ফিরবার পালা। মুশরাফা আনন্দে আটখানা। মায়ের উন্নতি দেখে খুশিতে চোখ ভিজে এলো। উচ্ছ্বসিত স্বরে বলল,
‘আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তোমাকে কবুল করুক। এখন পড়বে নামাজ? আসো, আমি শিখিয়ে দিই। একবারে সহজ। তুমি পারবে। একবার পড়ে দেখো, অনেক প্রশান্তি।’

উৎফুল্ল হয়ে কত কী বলে গেল মুশরাফা। ওকে কী ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে! লায়লা সেই খুশি পরখ করলেন। ধীরে বললেন, ‘আজ না, তুই আঞ্জুমান ভিলায় গেলে তখন পড়ব। ‘

মুশরাফা জোর করল না। মা নামাজ পড়বার মনস্থ করেছেন এটাই ওর জন্য অনেক কিছু। মা ফিরছেন তবে ধর্মের পথে। ভীষণ আনন্দ হলো মুশরাফার। তার কানে এসেছে তার জীবনের ভীষণ আপন চারজন পুরুষ আজ একসাথে, কাধে কাধ মিলিয়ে নামাজ পড়তে গেছে। মুশরাফা নামাজ শেষে দুই রাকাত শুকরানা নামাজ পড়ল। আনন্দে কাঁদল খুব।

নামাজ শেষে চায়ের আসর বসল এই ঘরেই। মা বোন, মামী সবার কত আলাপ। লায়লা খুটিয়ে খুটিয়ে মেয়ের সুখ নির্নয় করছেন,
‘রাফা, তোর শ্বশুর বাড়ির সবাই কেমন? তোর পর্দার নিয়ে কোন সমস্যা নেই তো? ওরা সাপোর্ট করে?’
বলা বাহুল্য, লায়লা কখনোই মেয়ের শ্বশুরালয় নিয়ে মাথা ঘামাননি।

মুশরাফা উৎফুল্ল মনে বলল, ‘ সবাই ভালো। আলহামদুলিল্লাহ সবাই সাপোর্ট করে। আমার শ্বাশুড়ি পর্দার জন্য, বাসা আলাদা করে দিয়েছেন। পাশাপাশি আলাদা তিন ফ্ল্যাটে থাকি। কোন সমস্যা হয় না।’
‘একা একা একটা সংসার কীভাবে সামলাস? কষ্ট হয় না?’
‘ শ্বাশুড়ি মা আছেন, জাওয়াদ আছে। আলহামদুলিল্লাহ সবাই হেল্পফুল। প্রেশার পড়ে না।’

লায়লা রয়ে সয়ে বললেন, ‘জাওয়াদ কেমন? তুই সুখে আছিস তো?’

মুশরাফা প্রাণবন্ত হাসল। সন্তুষ্টচিত্তে বলল, ‘ আলহামদুলিল্লাহ ভীষণ ভালো আছি।’
থেমে লাজুক স্বরে বলল, ‘জাওয়াদ আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর আর সুখের একটা অধ্যায়। দোয়া কোরো মা।’

লায়লা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলালেন, ‘অনেক সুখী হ। আমার দোয়া সবসময় তোর সাথে থাকবে।’

খাওয়া শেষে লায়লা ফরিদার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘ মাথায় একটু তেল লাগিয়ে দাও তো। চুল গুলো ভীষণ ড্রাই হয়ে গিয়েছে।’

ননাশের আদেশ মাফিক তেল নিয়ে বসেছে ফরিদা। মুশরাফা পাশে বসে গল্প করছে। আকস্মিক লায়লা বললেন,
‘কাছে আয়, তোর মাথায় বিলি কেটে দিই।’

লায়লা খাটের উপর বসেছেন। মুশরাফা গিয়ে বসল ফ্লোরে। লায়লা অনন্যচিত্তে মেয়ের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছেন। মুশরাফা খোঁপা করে এসেছে। লায়লা খুলে বেনুনি করতে লাগলেন। লায়লা কী যেন ভাবলেন, তারপর বললেন,
‘রাফা, শুননা?’
‘হ্যাঁ, মা বলো!’

‘ আল্লাহর রহমতে তুই ফিরে এসেছিস আমার কাছে। আমার পুরো পরিবার আবার আগের মতো হয়েছে। এই খুশিতে আমি চাইতেছি কিছু দান সদকা করতে। ধর, কোন মসজিদ বা এতিমখানায় টাকা দেয়ার ইচ্ছে করছি। আগে তো সেভাবে করা হয়নি। তাই আমার আইডিয়া নেই। তুই বল, এটা ভালো হবে? ‘

লায়লার পরামর্শ চাইলেন মেয়ের কাছে। মুশরাফা ঘাড় ঘুরিয়ে হেসে বলল,
‘ এতিম মিসকিনকে খাওয়ানো, এবং মসজিদে দান করবার মতো উত্তম কাজ দুটি নেই। এই উত্তম কাজটা তুমি নির্দ্বিধায় করতে পারো, মা। এগুলো কেয়ামতের দিন তোমার জন্য সুপারিশ হয়ে দাঁড়াবে।’

লায়লা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ‘ তাহলে আমি আজই তোর বাবাকে বলব।’
‘জাযাকিল্লাহু খায়রান।’ মুশরাফা সামনে তাকাল। লায়লা আবার বেনুনিতে মনোযোগ দিলেন। মুশরাফা আকস্মিক ডাকল,
‘মা?’
‘ বল।’
মুশরাফা ভয়ে ভয়ে বলল,
‘একটা হাদিস শুনাই, তোমাকে?’

লায়লাকে আগ্রহী স্বরে বললেন, ‘শোনা দেখি।’

মুশরাফা হেসে বলল, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা কোনো গুনাহের কাজ করার নিয়ত করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোনো গুনাহ লিপিবদ্ধ কোরো না। তবে সে যদি গুনাহের কাজটি করে ফেলে, তা হলে কাজটির অনুপাতে তার গুনাহ লিখো। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে তা হলে তার জন্য একটি নেকি লিপিবদ্ধ করো। সে যদি কোনো নেকির কাজ করার জন্য ইচ্ছা বা নিয়ত করে কিন্তু এখনও তা করেনি তা হলে তার জন্য একটি নেকি লিপিবদ্ধ কর। আর যদি কাজটি সে করে তা হলে তার জন্য দশগুণ থেকে (আন্তরিকতা অনুপাতে) সাতশগুণ পর্যন্ত নেকি লিপিবদ্ধ কর।’ (বুখারি)।’

থেমে বলল, ‘ভালো কাজের ইচ্ছে পোষণ করে তুমি নেকির ভাগিদার হয়ে গেছো। পরকালে আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিবে।’

লায়লার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখা গেল। বললেন,
‘ হাদিসটা সুন্দর। ভালো কাজের কথা ভাবলেই সাওয়াব! সুন্দর তো ব্যাপারটা। ‘
থেমে বললেন, ‘ আল্লাহ আমার মেয়েকে অনেক অনেক মঙ্গলকর পুরষ্কার দিক।’

‘আমার মেয়ে’ কথাটা কী হৃদয়গ্রাহী শুনাল। বুকে শীতলতা বয়ে গেল। মুশরাফা চমৎকার হাসল।

লায়লার বেনুনি বাধা শেষ। বেনুনির আগায় সুন্দর ফুলের একটা হেয়ার ব্যান্ড বেধে সামনের দিকে ছেড়ে দিলেন। তারপর জায়ফাকে ডাকলেন। জায়ফা কাছে আসতেই বললেন, ‘কাভার্ডে একটা প্যাকেট আছে। বের করে দে তো।’

জায়ফা কাভার্ড খুলে প্যাকেট আনল। লায়লা হাতে নিয়ে একবার দেখে নিলেন। তারপর মুশরাফার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
‘দেখতো এটা কেমন হয়েছে?’

একরাশ কৌতুহলের সাথে প্যাকেটটা হাতে নিল মুশরাফা। ভেতরে হাতড়াতে বেরিয়ে এলো একটা কালো বোরকা। মুশরাফা ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘এটা কার জন্য, মা?’

লায়লার মুখে অমায়িক হাসি, ঝলকানো খুশির রেশ। ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে বললেন, ‘ মাসখানেক আগে যখন দুবাই গিয়েছিলাম, তখন তোর জন্য কিনেছিলাম। তুই ত তখন আমার কাছে ছিলি না, তাই দেয়া হয়নি। বাইরে যাবার সময় পরিস। ‘

যেই পর্দার জন্য মায়ের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ হলো, সেই মায়ের কাছ থেকে পর্দা সমগ্রী পেয়ে আবেগে আপ্লূত হয়ে গেল মুশরাফা। চোখে বিস্ময়, খুশির জল চিকচিক করল। কাঁপা স্বরে কেবল বলল, ‘আ…মার জন্য তু…মি বো..র..কা নিয়ে…

‘দুবাইয়ের বোরকা দোকানে চোখ পড়লেই তোর কথা মনে পড়তো আমার। মনে হতো ওখানে তুই দাঁড়িয়ে আছিস। মনটা হু হু করে উঠতো, জানিস? কতবার যে তুই ভেবে পুতুল গুলো ছুঁয়ে দেখেছি হিসেব নেই। শেষ দিকে তোর বাবা আমাকে ওই দোকানের সামনে দিয়ে যেতে দিত না। এই বোরকা তোর বাবার অগোচরে কিনেছি। পরে দেখ তো, হয় কি না।’

মুশরাফা বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে আছে কেবল। নড়ছে না। লায়লা নিজ উদ্যোগে মেয়েকে দাঁড় করালেন। বোরকা খুলে মেয়েক পরিয়ে দিলেন। দেখলেন বোরকা’ টা হয় কি না। মেয়েকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বিজয়ী হেসে বললেন, ‘ আমি ভীষণ ভয়ে ছিলাম হবে কি না। যাক, হয়েছে। বাইরে যাবার সময় পরে যাস। তোর পছন্দ হয়েছে, তো?’

মায়ের দেয়া প্রথম উপহার পেয়ে বেজায় খুশি মুশরাফা। আবেশে মাকে জড়িয়ে ধরল। ঠোঁটের হাসি নিয়ে কেঁদে উঠল, খুশির কান্না। সেই কান্নার শব্দ হলো, চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াল। অস্ফুট স্বরে বলল, ‘এটা তোমার পক্ষ থেকে পাওয়া সবচেয়ে সুন্দর উপহার আমার কাছে। ‘

লায়লা তুষ্টির হাসি ফেরত দিলেন। বোরকা ছুঁয়ে দেখবার সময় আকস্মিক মুশরাফার মনে পড়ল তার দেখা একটা স্বপ্নের কথা, যেখানে মা এমন করেই তাকে বেনুনি করে দিচ্ছিল। সেই স্বপ্নে সে ঠিক এখানে মেঝেতে বসেছে, মা ওর চুলে বিনুনি করে দিচ্ছিল, ও মাকে এই হাদিসটাই শুনিয়েছিল, মা ওকে এমন একটা বোরকা দিয়েছিল, পরিয়েছিল। ঠিক এমন করেই, এমন কথাই বলেছিল, সে খুশিতে এমন করেই কাঁদছিল। সেই ঘুমের স্বপ্নটা যেন আজ অবিকল বাস্তবে ধরা দিয়েছে। মুশরাফা চমকাল, স্বপ্নগুলো সব আজ সত্যি হয়ে ধরা দিচ্ছে! মুশরাফা খুশির মাত্রা বাড়ল। ঘুমের ঘোরে দেখা স্বপ্ন বাস্তব হতে দেখার মতো আনন্দ দুটি নেই।

______________________________

ঘড়ির কাটায় রাত নটা। বসার ঘরে চায়ের কাপ হাতে বসে আছে জাওয়াদ। চারপুরুষের আড্ডা জমেছে বেশ। তবুও জাওয়াদের মন পড়ে আছে মুশরাফার কাছে। সেই যে শেষ আসবার পর নাস্তার সময় দেখা হলো আর দেখা নেই। বহুদিন বাদে পরিবারকে ফিরে পেয়ে কথার ঝুলি খুলে বসেছে। কখনো জায়ফা,ফাইজা, সাফার সাথে, তো কখনো মা, মামীর সাথে। রুম থেকে বেরই হচ্ছে না। এখনো ভেতর ঘর থেকে তার উচ্ছ্বসিত স্বর ভেসে আসছে। আজ বাসায় সব পুরুষ তার মাহরাম। তাই তার কোন বাধা নেই। এদিকে জাওয়াদ তো হুটহাট ভেতর ঘরে যেতে পারছেনা। ভালোই আটকেছে সে। তার দেখা পাওয়া গেল খাওয়ার সময়।

মায়ের সান্নিধ্য থেকে বেরিয়েছে মুশরাফা মামীকে সাহায্য করবার জন্য। ফরিদা রাতের খাবার দিচ্ছেন টেবিলে। তাকে হেল্প করছে সাফা আর জায়ফা। বাবার আদেশ পালনে যায়নি সাফা। বিমূঢ় রণমুর্তি নিয়ে রয়ে গেছে। কিচেনে যাবার সময় হলরুমে চোখ গেল। জাওয়াদ বসে আছে সোফায়। বাবা, ভাই, মামা কেউ নেই। সবাই গেল কোথায়? একা একা বসে ফোন দেখছে জাওয়াদ। চেহারায় ক্লান্তির চাপ। ইশ! এতক্ষণে একটাবার খোঁজ নেয়া হয়নি। অন্যায় হয়ে গেল। মুশরাফা অপরাধী মুখে এগিয়ে গেল হলরুমের দিকে। তাকে দেখে ফোন থেকে চোখ তুলে চাইল জাওয়াদ। প্রিয়তমাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। প্রসন্ন গলায় বলল,
‘ পরিবারকে ফিরে পেয়ে আপনি তো দেখি অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেছেন। ‘

মুশরাফা অনুতাপ নিয়ে চাইল, ‘আসোলে মায়ের সাথে সময় কাটাচ্ছিলাম তো, মা ছাড়ছিলোই না। ‘

থামল মুশরাফা। ওর মনে অনেক প্রশ্ন। সেই প্রশ্নদের লাই দিয়ে বলল, ‘ মা, বাবা, সাফাপু সবাই হুট করে আমাকে মেনে নিল কিভাবে? আপনি কিছু করেছেন?’
জাওয়াদ সে কথার উত্তর দিল না। কেবল বলল, ‘ সুদিন তো এসে গেছে। কেমন বোধ করছেন?’

জাওয়াদকে বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছে। ক্লান্তিবোধের লেশ মাত্র নেই। মুশরাফার অনুতাপ সরল মুখ থেকে। ‘সুদিন’ শব্দটা কানে বাজল। জাওয়াদের মুখে অনেকবার শুনেছে। কিছু কিছু সময় জাওয়াদকে ভীষণ খুশি দেখাতো, জিজ্ঞেস করলে বলতো সুদিনে একসাথে বলব। এই দিনকে ইঙ্গিত করেছে? মুশরাফা আবার প্রশ্ন করল,
‘ মা,বাবা সাফাপু আমাকে ভীষণ অপছন্দ করতো। আপনি ও তাকে খুব ঘৃণা করতেন। হুট করে দেখলাম, সব ঠিক। মানে কিভাবে? আপনাদের মাঝে সব ঠিকঠাক হলো কিভাবে? আপনি হুট করে অনুমতি দিলেন কী ভেবে? আপনি তো সহজে দমবার পাত্র নন? আপনাদের মাঝে কীভাবে সন্ধি হলো? বলুন না!’

লাগাতার প্রশ্ন করে থামল মুশরাফা। ওকে ভীষণ কৌতুহলী দেখাচ্ছে। চোখে প্রশ্নের সাথে খুশিও দেখা যাচ্ছে। প্রাপ্তি, পূর্নতা আছে সেথায়। জাওয়াদের দেখতে ভালো লাগছে। সে হাসল কেবল। বলতে পারল না, তোমার অগোচরে এক বিশাল যুদ্ধ হয়ে গিয়েছে, কত কী হলো, তুমি টের পাওনি, রাফা। সবাইকে সব কথা জানাতে নেই। সে মজার স্থলে বলল,
‘ বলব না।’

‘প্লিজ! আমার সব কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। হিসেব মিলছে না। প্লিজ ক্লিয়ার করুন না!’ অনুরোধ ঝরে গেল মুশরাফার মুখ থেকে। জাওয়াদ কোমল স্বরে বলল,
‘আর ইউ হ্যাপি?’

মুশরাফার চেহারায় তারা ঝলকালো যেন। উচ্ছ্বসিত স্বরে বলল, ‘ভীষণ! মা, বাবা আমাকে ভীষণ আদর করেছেন। মাকে আমি হাদিস শুনিয়েছি। ক্যান ইউ ইমাজিন? মা আমাকে বোরকা গিফট করেছে। আমার যে কী পরিমাণ খুশি লাগছে আমি আপনাকে বুঝাতে পারব না।’

মুশরাফা প্রাণবন্ত হাসছে। তার হাসি দেখে জাওয়াদ ও হাসছে। ওর মন বলছে, আমার সব ত্যাগ সার্থক। জাওয়াদ সার্থক সুরে বলল,
‘যাক, এবার আর নিয়ম করে দিনে দুবেলা আপনার ফুলোমুখ আর কান্না দেখতে হবে না। বাঁচলাম।’

মুশরাফা জিজ্ঞেস করল,
‘এটাই আপনার সারপ্রাইজ ছিল?’

জাওয়াদ সায় জানাল। মুশরাফা জানে এই পুরো ব্যাপারটা জাওয়াদের পছন্দ নয়, তবুও শুধু এবং শুধুমাত্র মুশরাফার জন্য সব সমাধান করেছে। মানুষটা ওর জন্য এত ভাবে। মুশরাফা গলে গেল। আবেগে আপ্লূত হয়ে বলল,
‘আপনাকে ভীষণ জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।’

বলে মুশরাফা কাছে এলো। স্ত্রীর পাগলামো দেখে হাসছে জাওয়াদ। আশপাশে চোখ ঘুরাতে গিয়ে আকস্মিক গেস্ট রুম থেকে শ্বশুরকে বেরিয়ে এলেন। বেরুতে বেরুতে জোরে জোরে বলছেন,
‘জাওয়াদ, তোমাকে বলছি….

বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। বাবার স্বর শুনে তড়িৎ সরে গেল মুশরাফা। বিব্রতবোধ করল তিনজনই। ফারুকী ঘুরে গিয়ে কিছু না বলে রুমে ঢুকলেন আবার।

মুশরাফা ইতস্ততভাবে বলল, ‘আগে বলবেন না!’
জাওয়াদের শ্লেষাত্মকভাবে বলল, ‘আপনি দেখবেন না!’
থেমে গলা খাঁকারি দিয়ে ধীরে বলল, ‘আপনার ভালোবাসা বাবার সামনে না দেখিয়ে জমিয়ে রাখুন, একান্তে দেখব আপনার অনুভূতি আর ভালোবাসার ঢেউ। ‘

মুশরাফা অন্যদিকে মুখ ঘুরাল। জাওয়াদ হাসতে হাসতে বলল, ‘তা আজ একান্তে, আই মিন বাসায় যাওয়া হবে?’

মুশরাফা নিশ্চুপ রইল। জাওয়াদের ধারণা মুশরাফা থাকবার বায়না ধরবে। এতকাল বাদে পরিবারকে পেয়েছে যাবার ইচ্ছে হবে না। তাই সে বলল,
‘তুমি থাকো, আমি ফিরে তিলো মিলোকে দেখব।’

মুশরাফা মন আজ কেন যেন একটু বেশি উতলা হলো। এত কাঙ্ক্ষিত পরিবারকে ফিরে পেয়ে ও মন এইক্ষণে জাওয়াদে আটকাল । এই মানুষটা ওকে এত চমৎকার সারপ্রাইজ দিয়েছে, পরিবার দিয়েছে। তার জন্য একটা টাইট হাগ প্রাপ্য। ইচ্ছে করছে, এই মানুষটার বুকে মাথা ঠেকে বসে থাকতে, অনেকক্ষণ।
সবচেয়ে বড়ো কথা সুখবর কনফার্ম করা বাকি। ওটা বাসায় গিয়ে চেক করবে। ইতিবাচক হলে জাওয়াদকে জানাতে হবে। আর এই চমৎকার খবরটা জানানোর জন্য দারুণ পরিকল্পনা আছে ওর। জাওয়াদ ওকে এত সুন্দর সারপ্রাইজ দিয়েছে, সে ও দিবে। এবং আজই। ইতিবাচক হলে আজকের দিনটা ওদের জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর এই মানুষটাকে ওর দরকার। মন যেন অনুভূতিপ্রবণ আর খামখেয়ালি হলো। হুট করেই পাগলামো চড়ে বসল। সে বলল, ‘ ডিনার করে বাসায় ফিরব ইনশা আল্লাহ। ‘

জাওয়াদ অবাকই হলো, ‘সত্যি চলে যাবে? অনেকদিন পর পরিবারকে ফিরে পেয়েছো, থাকো না হয়।’

মুশরাফা জেদী স্বরে বলল, ‘ আমাকে ফিরতে হবে।’

জাওয়াদ ওর মতিগতি পরখ করে ভ্রু নাচাল, ‘ এত ভালোবাসা! আজ ভালোবাসা একটু বেশি মনে হচ্ছে। তোমার মতলব কী?’

মুশরাফা কেমন করে বলল, ‘আমি আজ আপনার সাথে কিছুটা সময় একান্তে কাটাতে চাই।’

পরিবারকে ফিরে পাবার খুশিতে মেয়েটা বোধহয় নিজের মাঝে নেই। কীসব পাগলামো করছে। এমন পাগলামো তো করে না। জাওয়াদ বেশ উপভোগ করল। প্রশ্রয়ের হাসি দিয়ে বলল,
‘ আচ্ছা যেও। আমি আপনার কিছুটা সময়ের অপেক্ষায় রইলাম।’

মুশরাফা ডাইনিং এ গেল। সাফা টেবিল সাজাচ্ছে। মুশরাফা বলল, ‘আপি, দাও আমিও হেল্প করি।’

সাফা মুখে একরেশ হাসি টানল। বেশ আন্তরিকতা দেখিয়ে বলল, ‘ লাগবে না। তুই বোস।’

মুশরাফা তাও হাত লাগাল। প্লেট সাজানোর সময় সাফা বলল, ‘ সেই কখন থেকে ভারি শাড়ি পরে আছিস, গরম লাগছে না? চেঞ্জ করে নে। ফ্রেশ লাগবে।’

মুশরাফা হেসে বলল, ‘খুব একটা লাগছে না। আমার অভ্যাস আছে।’
ফাইজা আর জায়ফা এসে মুশরাফার সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। তাদের গল্প মেক আপ নিয়ে। কোন ব্র‍্যান্ডের ব্যাগ ভালো, লিপস্টিক কোন শ্যাড সুন্দর, কে কোন শীট মাস্ক ইউজ করে ভালো রেজাল্ট পেয়েছে, কোন ক্লিনজার ভালো। কার স্কিনটোন কী এসব। মুশরাফা ও বেশ সাবলীল ভাবে মেক আপ আর স্কিন কেয়ার নিয়ে নিয়ে কথা বলছে। ওর জ্ঞান দেখে সাফা অবাক হলো। এই খ্যাত মেয়ে এত কিছু জানে?
সাফা কাজের ফাঁকে বোনকে পরখ করল। মুশরাফার সাজগোজে আভিজাত্যের চাপ পেল। মুশরাফা চুল স্ট্রেইট, আগে তো কার্লি ছিল। স্ট্রেইট করেছে! মুখে এখনো টুকটাক মেক আপ আছে। বাসা থেকে নিয়ে আসা অযু দিয়ে মাগরিব পড়েছে বিধায় ধুতে হয়নি। বডিতে একটা গ্লো আছে। যারা স্কিনকেয়ার করে তাদের স্কিন আলাদা বুঝা যায়। মুশরাফার স্কিন বেশ গ্লোয়িং। হাত দেখে মনে হচ্ছে ম্যানিকিওর করেছে। ঠোঁটে স্মোকি রোজ কালার ন্যিউড লিপস্টিক, চোখে মাশকারা। কেঁদেছে তো অনেক, যায় নি। ওয়াটারপ্রুফ বোধহয়। গালে হালকা ব্লাশন। চমৎকার ডিজাইনের জুয়েলারি পরা। সব মিলিয়ে বেশ স্মার্ট লাগছে। নিমিষেই বলা যায়, ফ্যাশনসেন্স ভালো। এতবছরে আজ প্রথম মনে হলো রাফা সুন্দর। ও তো এমন ছিল না! এত স্মার্ট হলো কবে? কিভাবে? পর্দার ভেতর ও এসব করা যায়?

________

খেতে বসেছে সবাই। বাবা মায়ের মাঝে বসেছে মুশরাফা। আজকের মধ্যমণি সে। লায়লা পাশে বসিয়ে নিজ হাতে বেড়ে খাওয়াচ্ছেন মেয়েকে। মেয়ের সামনে পানির গ্লাসটাও ভরতি করে দিয়েছেন। বেশ স্পেশাল ফিল হচ্ছে মুশরাফার। এই আদরই তো মিস করেছে কতকাল। মেয়ে জামাইয়ের খাতিরদারি করছেন ফারুকী। সেই ফাঁকে চলছে কথা। খাওয়ার ফাঁকে লায়লা ডাকলেন,
‘জাওয়াদ?’

খাওয়া থামিয়ে তাকাল জাওয়াদ। কিছুটা সময় নিয়ে জবাব দিল, ‘জ্বি, মা?’

ওর মুখে ‘মা’ ডাক শুনে তুষ্টির হাসি দিল মা-মেয়ে। তারিফের মনে পড়ল, জাওয়াদের বলা সেই কথা সিলেট ট্যুরে থাকবার সময় জাওয়াদকে তারিফ বলেছিল, লায়লাকে মা ডাকতে। তখন উত্তরে জাওয়াদ বলেছিল, ‘ মা ডাকতে হলে তাকে মা হতে হয়, আপনার মা এখনো নিজেরই মেয়েরই মা হয়ে উঠেন নি, আমার কী মা হবেন! আগে মা হয়ে দেখাক। যেদিন মনে হবে, তিনি ‘মা’ হয়ে উঠেছেন ডাকটা না হয় সেদিনই ডাকব।’
তারিফ চোখ ঘুরিয়ে মায়ের দিকে তাকাল। বোনের প্রতি মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে মনে হলো আজ সত্যিই মম রাফার ‘মা’ হয়ে উঠেছে। তারিফ চমৎকার হাসল। লায়লা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ আঞ্জুমান ভিলাও কিন্তু তোমার বাড়ি। রাফাকে নিয়ে কবে যাবে?’

জাওয়াদ প্রথমে তাকাল মুশরাফার দিকে। ওর খুশিমাখা মুখ দেখে মনের কথা চেপে রাখল। হাসল কেবল। ফারুকী বললেন,
‘ জাওয়াদ, এবার আমার আমন্ত্রণ নামা গ্রহন করতে হবে। আর কোন মানা শুনবো না। আমি কাল তোমাদের বাসায় গিয়ে বেয়াই বেয়ানকে দাওয়াত করে আসব। পরশু বরযাত্রী নিয়ে যাচ্ছো তুমি আঞ্জুমান ভিলায়। ‘

মুশরাফা খুশির সাথে বলল, ‘তোমরা আমার বাসায় যাবে?’

আঞ্জুমান হেসে বললেন, ‘মেয়ে বিয়ে দিয়েছি, যাব না? তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ির নাম্বার দিস। আমি কথা বলব। বিয়ের সময় তো আত্মীয় স্বজন ডাকা হয়নি। এবার দুই পক্ষই ডাকব। একটা গেট টুগেদার হয়ে যাবে। তোকে, জাওয়াদকে ও সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।’
থেমে জাওয়াদের পরামর্শ চাইলেন, ‘কী বলো জাওয়াদ?’

মেয়েকে পরিচয় করি লজ্জাবোধ করা লায়লা নিজ থেকে মেয়েকে, মেয়ে জামাইকে সবার সামনে আনতে চাচ্ছেন, ব্যাপার বেশ চমৎকৃত। জাওয়াদ প্রতি কথায় স্ত্রীর খুশিমুখই দেখল। সব ভুলে সে সায় জানাল, ‘ আপনারাও জাননি, পরিবার যেহেতু হয়েছে। আলাপ হোক কাল আপনারা আমাদের বাসায় আমন্ত্রিত। ‘

থেমে তারিফের উদ্দেশ্যে বলল, ‘ভাইয়া, আপনি এবার বিয়ের আয়োজন শুরু করুন।’

সেই টেবিলেই আলোচনা হলো তারিফের বিয়ের। মুশির জন্য আটকে থাকা বিয়ের সানাই আবার বাজানোর পরিকল্পনা হলো। খাওয়া শেষ করে আনন্দে আটখানা হয়ে ফোন তুলল তারিফ। প্রেয়সীকে কল দিয়ে উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘ এবার শপিং শুরু করো, মৌ। আমি পরিবার নিয়ে আসছি তোমাকে নিতে। ফাইনালি!’

আনন্দে চিৎকার দিল মৌ। তারিফের ঠোঁটে বিজয়ী হাসি। তার বিয়ে ঠেকানো সার্থক।

___________________

দশটা বাজতেই যাবার কথা ওঠাল মুশরাফা। লায়লা তো শুনতেই নারাজ। কড়া স্বরে বললেন, ‘ একদম যাবার নাম নিবি না। আজ থাকবি আমার কাছে।’

ফারুকী ও সায় জানালেন, ‘আজ বরং থেকে যাও।’

ফরিদা, তারিফ, নাজমুল সাহেব, লায়লা, ফারুকী সহ একে একে সবাই খুব জোর করল। কিছু মুশরাফার এক কথা, সে যাবে। সবার জোরাজোরি দেখে জাওয়াদও বলল, ‘সবাই এত করে বলছে যখন থেকে যাও। সকালে সবার সাথে যাবে না হয়।’

মুশরাফা আজ সব যুক্তির উর্ধ্বে যেন। সে তার কথায় অনড়। সবাইকে বুঝাল, বাসায় বিড়াল দুটো আছে। ওদের খাওয়া দিতে হবে। তা ছাড়া কাল সবাই যাবে, প্রস্তুতি আছে। এমন আরও কত বাহানা দিয়ে এক প্রকার জোর করে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে। মায়ের দেয়া বোরকা পরে বাসায় ফিরল। তারপর কাঙ্খিত সময়টা এলো। জীবন যেন আজ সব সুখ ঢেলে দিচ্ছে ওকে। উচ্ছ্বাসে হত-বিহবল হয়ে গেল। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় এগুলো জাওয়াদকে চমকে দেয়ার।

চলবে….

আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

বিঃদ্রঃ-১ এক পর্বে শেষ হয়নি। আরও কিছুটা বাকি আছে। ৪০মিলিয়ে শেষ করব ইনশা আল্লাহ।

বিঃদ্রঃ-২ ভালো করে রি-চেইক করা হয়নি। ভুল দেখলে পেইজ ইনবক্সে বলে দিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here