নিখোঁজ,পর্বঃ এক

গল্পঃ নিখোঁজ,পর্বঃ এক
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

“শেফালি জানো আমার না তোমার ওই ফোলা ফোলা গাল দুটো খুব করে টানতে ইচ্ছা করে”

হৃদয়ের কথা শুনে শেফালির মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।রাত বাজে সাড়ে দশটা।হৃদয় আর শেফালি দুইজন ব্যাংকের সামনে একটা যাত্রী ছাউনির নিচে বসে আছে।শেফালি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সামনের ইলেকট্রিকস খুটিতে আগুন জ্বলে উঠার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে গেলো।চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার আর ঠিক সে সময় কারো ভয়ানক চিৎকার ভেসে আসলো।
একটু বাদেই কারেন্ট চলে আসলো তখন হৃদয় দেখলো ওর পাশে শেফালি নেই।শেফালি কোথায় চলে গেলো তাহলে?

অন্ধকার জেলে হৃদয় বসে আছে।ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডকে খুন করার দায়ে হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে।একটু বাদে একজন পুলিশ অফিসার একটা ডান্ডা হাতে হৃদয়ের সামনে এসে বসলো।হৃদয় তখন একটু নড়েচড়ে বসলো।পুলিশ অফিসার হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
->তোকে দেখে তো বেশ ভালো ঘরের ছেলে বলে মনে হয়।তো হঠাৎ ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডকে খুন করার প্রয়োজন পড়লো কেন?
হৃদয় বিরক্তমাখা স্বরে বলল
->স্যার আমি আপনাকে কতবার বলবো যে,আমি উনাকে মারিনি তারপরেও আপনি কেন আন্দাজে আমার দোষ দিচ্ছেন।
->এখানে আন্দাজে তোর দোষ দেওয়া হচ্ছে না।সিকিউরিটি গার্ডের চিৎকার শুনে ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা এসে বর্শা হাতে তোকে দেখতে পায়।আর সবাই বলছে তুই খুন করেছিস।
হৃদয় হেসে উঠে বলল
->এ তো দেখি বাংলা সিনেমার কাহিনি হলো।নায়ক খুন করেনি কিন্তু খুন করার অস্ত্র হাতে নিয়েছে তাতেই সবাই তাকে খুনি ভাবতে শুরু করেছে।
পুলিশ অফিসার তখন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল
->তারমানে কি তোর সাথে এমন হয়েছে?
->তা নয়তো কি?যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে ওই যাত্রী ছাউনির পিছনে যে বিল্ডিং আছে সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেন তাহলেই তো হয়।
->তা তো দেখে নিবোই।
->স্যার শেফালির কোন খোঁজ পেলেন?
->না তো।তবে খোঁজ পেলে জানতে পারবি।
পুলিশ অফিসার দেরি না করে সেখানকার বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে এসে দেখতে লাগলো।ফুটেজে দেখা যাচ্ছে হৃদয় আর শেফালি দুইজন ব্যাংকের সামনে দাড়িয়ে আছে।ব্যাংক যেখানে অবস্থিত সে জায়গা তেমন জনবহুল না,তাই রাতের এই সময় গাড়ি চলাচল নেই তেমন।মাঝে মধ্যে হাসাহাসি করছে।একবার রাস্তায় হাঁটছে,আবার দাড়িয়ে পড়ছে।তারপর দুইজনেই যাত্রী ছাউনির নিচে চলে গেলো একটু বাদেই কারেন্ট চলে গেলো তারপর চারদিক অন্ধকার কিন্তু ব্যাংকের সামনে ওই সিকিউরিটি গার্ড যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেখানে আবছা আলো দেখা যাচ্ছে।ঠিক সে সময় কোথায় থেকে একটা বর্শা এসে গার্ডের বুকে ঢুকে গেলো।তারপর নিজে থেকে বুক হতে বর্শা বের হয়ে এলো।দেখে মনে হলো কেউ একজন নিজে বর্শাটা বের করলো।কিন্তু ক্যামেরাতে কাউকে দেখা যাচ্ছিলো না,কিন্তু হঠাৎই একটা সাদা মানুষের মতো অবয়ব সেখান থেকে দ্রুত সরে গেলো।পুলিশ এই দৃশ্যটা বার বার দেখতে লাগলো।বার বার একই দৃশ্য দেখা গেলো।আর তখন কারেন্ট চলে আসে।তখন যাত্রী ছাউনি হতে হৃদয় একা বেরিয়ে আসে আর চারদিকে ছোটাছুটি করতে থাকে।হৃদয় বেরিয়ে আসলেও মেয়েটি আর আসেনি।তাহলে মেয়েটি গেলো কোথায়?
ঠিক সে সময় হৃদয় এসে গার্ডের লাশ দেখতে পায়।আর বর্শাটা হাতে নেয়।পুলিশ অফিসার আবার হৃদয়ের সামনে আসলো তারপর বলল
->আসলেই খুনটা তুমি করো নি।কিন্তু শেফা না কি যেন নাম মেয়েটির সে হঠাৎ কোথায় গেলো?
->সেটায় তো বুঝতে পারছি না স্যার।কারেন্ট চলে গেলো কিন্তু কারেন্ট আসতেই শেফালিকে আর কোথাও দেখতে পাইনি আর ওকে খুজতে গিয়ে গার্ডের লাশ চোখে পড়ে সাথে সেই বর্শা।
->হুম।এত রাতে তোমরা করছিলে কি?আর মেয়েটির সাথে তোমার সম্পর্ক কি?
->আসলে স্যার আমি আর শেফালি একে অপরকে ভালোবাসি।কিন্তু ওই মেয়েটি অনাথ হওয়ায় আমার বাড়ি থেকে মেনে নেয়নি।তাই পালিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছিলাম।
->বুঝলাম।তুমি এখন যেতে পারো সমস্যা নেই।তবে খুনের জায়গায় এমন ভুল আর কখনো করবে না ঠিক আছে?
->হুমম।স্যার শেফালির ব্যাপারটা দেখবেন একটু।
->চিন্তা করো না আমরা পুরো চেষ্টা করবো।

হৃদয় থানা থেকে বের হয়ে বাসার দিকে আসতে লাগলো।বাসায় গেলে ওর মা-বাবা যে কত কথা শোনাবে তার কোনো হিসেব নেই।হৃদয় শেফালিকে ফোন দিতে লাগলো কিন্তু শেফালির ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।মেয়েটা কোথায় চলে গেলো বুঝতে পারছে না।শেফালির জন্য চিন্তা হচ্ছে খুব।বাড়ি যেতেও ইচ্ছা করছে না।সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।কিন্তু মন তো আর মানছে না।হৃদয় আবার সেই যাত্রী ছাউনির সামনে ফিরে আসলো।যেখান থেকে শেফালি উধাও হয়ে গেছে সেই জায়গা সে ভালো করে দেখতে লাগলো।যদি কেউ শেফালিকে ধরে নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয় তার পায়ের কোন না কোনো ছাপ থাকবে।কিন্তু হৃদয় দেখলো সেখানে যে পায়েন ছাপ গুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো ঘোড়ার পায়ের ছাপের মতো।হৃদয় অবাক হয়ে আছে।এমন সময় ব্যাংকের সামনে পাহারারত একজন পুলিশ কন্সটেবল এসে ধমকের সুরে বলল
->এই যে ভাই আপনি এখানে কি করছেন?
তারপর সে হৃদয়কে চিনতে পেরে বলল
->আপনাকে তো এরেষ্ট করা হয়েছিলো,তারপরেও এখানে কেন এসেছেন?
->আপনি এখানে কোনো ঘোড়া দেখেছেন?
তখন সে রেগে গিয়ে বলল
->এ মেয়ে এত রাতে এখানে ঘোড়া কই থেকে আসবে যান বলছি নয়তো খবর আছে।
হৃদয় আর কিছু না বলে চলে আসতে বাধ্য হলো।হৃদয় যখন বাসায় এসে পৌছালো তখন বাজে রাত তিনটা।হৃদয় এসে ওর বোনের জানালায় টোকা দিলো।বেশ কিছুক্ষন পর দরজা খুলে গেলো।দরজা খুলতে দেখলো হৃদয়ের বোন আফসানা দাড়িয়ে আছে।আফসানা হৃদয়ের পিছন দিকে দেখে ওকে চুপিসারে বলল
->ভাইয়া ভাবি কই?আর এতো দেরি করলি কেন?
->এখন ভিতরে চল তারপর বলছি।
হৃদয় আর আফসানা ভিতরে আসতেই দেখলো হৃদয়ের মা-বাবা দুইজনে দাড়িয়ে আছে।দুইজনের চোখে মুখে রাগ।হৃদয়ের বাবা বেশ কড়া গলায় বলল
->কি মেয়েটা তোমার সাথে আসেনি তাই তো?আমার ভালো করে জানা আছে এই ধরনের মেয়েরা এমন খারাপই হয়।যাদের জন্মের ঠিক নেই।
->বাবা আসলে?
তখন হৃদয়ের মা ধমক দিয়ে বলল
->তুই থাম আমার সব জানা আছে।আমি ভাবতে পারছি না আমার ছেলে হয়ে তুই কিভাবে একজন নাম পরিচয়হীন মেয়েকে বিয়ে করার কথা চিন্তা করিস?
->মা শেফালি নাম পরিচয়হীন নয়।আর ও অনেক ভালো মেয়ে।
->এতই যখন ভালো তাহলে তোর সাথে এলো না কেন?
->এসেছিলো কিন্তু, ,,,?
->কিন্তু কি?
হৃদয় আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।আফসানা তখন ওর মা-বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
->নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে।আর মা তুমি ভাবিকে শুধু শুধু খারাপ ভাবছো।জানো মা ভাবি যেদিন অনাথ আশ্রমে যায় সেদিন যেন সেখানকার বাচ্চাদের ঈদের দিন হয়।সব বাচ্চারা ওকে মায়ের আসনে বসিয়েছে সে খারাপ হয় কি করে?
->তা না হয় বুঝলাম।তবে ওই মেয়েকে তার মা-বাবার পরিচয় বলতে বলিস তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
কথা শেষ করে হৃদয়ের মা-বাবা নিজেদের রুমে চলে গেলো।হৃদয়ের মা বাবা শেফালিকে মেনে নিবে না তাই বিয়ের কোনো প্রশ্নই আসে না।তাই হৃদয় ওর বোনকে বলে যে সে আজই শেফালিকে বিয়ে করবে আর বাসায় নিয়ে আসবে সে যেন মা-বাবাকে ম্যানেজ করে।আফসানা ওর মা-বাবাকে বিষয়টা বললে তারা রাজি হতে চায় না কিন্তু তারপরেও ছেলের কথা ভেবে রাজি হয় কিন্তু এখন যখন দেখলো শেফালি হৃদয়ের সাথে আসেনি তখন তারা আবার মত বদলে ফেললো।

হৃদয়ের বয়স ২৫ বছরের মতো।শেফালির বয়সও ওইরকমই।আজ থেকে বছর খানেক আগে শেফালির সাথে হৃদয়ের একটা পার্কে দেখা হয়।প্রতিদিন শেফালি কয়েকজন বাচ্চাকে নিয়ে বিকেল বেলা পার্কে বেড়াতে আসতো।তাদের নিয়ে ঘুরতো,খাবার কিনে দিতো।শেফালির এই ব্যাপারটা হৃদয়ের খুব ভালো লাগে।তাই হৃদয় প্রায় নিজের কাজ ফেলে এই সময়টাতে শেফালির আশেপাশে ঘুর ঘুর করতো।হৃদয় মনের অজান্তে কখন শেফালিকে ভালোবেসে ফেলেছে সে বুঝতে পারেনি।তবে শেফালি হৃদয়ের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওর সাথে কথা বলে যে,”হৃদয় ওকে ফলো করে কেন?”হৃদয় তখন সরাসরি বলে দেয় যে সে তাকে পছন্দ করে।কিন্তু শেফালি রাজি হয়না।তখন হৃদয় নিজেও শেফালির মতো সেই বাচ্চাদের সাথে সময় দিতে থাকে,তাদের বিভিন্ন জিনিস কিনে দিতে থাকে।আর বাচ্চারাও হৃদয়ের সাথে বেশ ভালোভাবে মিশে যায় আর এভাবে একসময় শেফালির সাথেও হৃদয়ের সম্পর্ক হয়ে যায়।শেফালি নিজেও হৃদয়কে ভালোবেসে ফেলে।হৃদয় পরে জানতে পারে একটা অনাথ আশ্রম আছে যেটা শেফালি দেখাশোনা করে।আর সেখানেই সে থাকে।কিন্তু শেফালির আসল পরিচয় কি সেটা জানতে চাইলে সে বলেনা।এমনকি নিজের বাড়ি,মা-বাবা কারো কথা সে বলে না।বেশি প্রশ্ন করলে বলতো,”আমায় যদি তোমার ভালোবাসতে ইচ্ছা করে তো ভালোবেসো,আমার পরিবার সম্পর্কে জানতে চেও না।আর যদি মনে করো যে,আমি পরিবার সম্পর্কে জানতে না পারলে তুমি আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে না তাহলে ঠিক আছে রেখো না।আমি কিছু মনে করবো না।তবে আমার একটা অতীত আছে যেটা আমি কখনো মনে করতে চাইনা কারন সে অতীত ওকে ভালো থাকতে দেয়না”।
তাই হৃদয় আর জোর দেয়নি।হৃদয় শেফালিকে বাসায় নিয়ে এসেছিলো।শেফালিকে হৃদয়ের মা-বাবা দুইজনেরই পছন্দ হয়।কিন্তু যখন জানতে পারে শেফালির মা-বাবার পরিচয় নেই তখন তারা আর মেনে নিতে চায় না।তাই হৃদয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো সে শেফালিকে বিয়ে করে বাসায় উঠবে কিন্তু তার আগেই সে নিখোঁজ।
কোথায় গেলো সে?

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here