অপর প্রান্তে,পর্ব-০৬ শেষ পর্ব

অপর প্রান্তে,পর্ব-০৬ শেষ পর্ব
লেখাঃ হাবিবুর রহমান হাবিব

ফোনে রুমির কথাটা শুনে নিবির বললো,
–আপনার বাবা যে আপনার রুমের জানালায় গ্রিল লাগিয়েছে সেটা আমি জানি। আপনাকে সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ব্যবস্থা আমার কাছে আছে। এইবার জানালা দিয়ে আপনাদের বাসায় ঢুকবো না, ঢুকবো আপনাদের বাসার মেইন দরজা দিয়ে। আপনি শুধু ভোর চারটার সময় রেডি থেকেন।

রুমি,
–কিন্তু আমি বাসা পালালে তো বাবা আবার তোমাকে সমস্যায় ফেলবে। আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে চাই না।

নিবির,
–আমি কিভাবে সমস্যায় পড়বো!? আপনার বাবা এবার আমাকে ধরলেও তার কোনো লাভ হবে না । কারন আপনিতো তখন আমাদের বাসায় থাকবেন না।

রুমি,
–মানে!? তাহলে কোথায় যাবো আমি?

কিছুটা হতাশ কন্ঠে নিবির বললো,
–আপনি চলে যাবেন দূরে কোথাও। আপনাকে বাসা থেকে নিয়ে আসার পর বাসে উঠিয়ে দেবো। আপনি তখন অনেক দূরে কোথাও চলে গিয়ে নিজের মতো করে থাকবেন। পরে আর এ এলাকার ধারে কাছেও আসবেন না। এতে আপনি ঐ বজ্জাতটার সাথে বিয়ে বসা থেকেও রেহাই পাবেন, আর ফ্যামিলির ঝামেলা থেকেও মুক্তি পাবেন।

রুমি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। ওর চেহারায় একপ্রকার মলিনভাব। রুমি ক্ষীণস্বরে বললো,
–তার মানে এরপর থেকে তোমাদের সাথে আমার আর দেখা হবে না?

কথাটা শুনে নিবির অনেকটা স্তব্ধ হয়ে চুপ করে রইলো। ও যে হাতে ফোন ধরে আছে সে হাত এখন খানিকটা কাপছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
–বড় কথা হলো আপনাকে যেভাবেই হোক বিপদ থেকে পিছা ছাড়াতে হবে। এখন বড় বিষয় হলো আপনাকে ঝামেলা থেকে মুক্ত করা, পরে আর দেখা হবে কিনা সেটা ভাবা এখন বড় বিষয় না।

রুমি কিছুক্ষন চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
–মেইনদরজা তো লক করা থাকবে। আমার রুমের দরজার বাইরেও তালা দেয়া। তুমি তাহলে আমাদের বাসায় ঢুকবে কিভাবে!?

নিবির,
–সেটা নিয়ে আপনি টেনশন করবেন না।দরজার লক আর তালার ঝামেলা মেটানোর ব্যবস্থা করে নেবো আমি। আপনি তো জানেনই, আমি ঝামেলায় এক্সপার্ট।

রুমি চোখে হতাশার ছাপ নিয়ে মুচকি হেসে ফেললো নিবিরের কথায়। নিবিরের মুখেও এখন হতাশার হাসি। “ভোর চারটায় রেডি থেকেন।” বলে ফোনের আলাপে ইতি টানলো নিবির।
———

তালার কথা ভেবে নিবিরের মাথায় যে বন্ধুর নাম আসলো তাকে সবাই চাবি সুমন বলে ডাকে। চাবি সুমন তালার চাবি বানানোর ব্যবসা করে। তালার কাজে সে বেশ পারদর্শী। অনেক আগে সুমনের সাথেই নিবির একসাথে চুরি করতো বড় বড় দালানে। তবে, পরে সুমন সৎ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে চুরির কাজ ছেড়ে ব্যবসায় নামে। নিবিরের সামনে সুমন কসম করেছিলো যে, ও আর নিবিরের সাথে চুরির কারবারে সামিল হবে না।

নিবিরের এখন দুশ্চিন্তা, সুমন কি রাজি হবে ওর সাথে গিয়ে রুমিদের বাসার তালা খুলতে?

রাত এগারোটায় সুমনের বাড়িতে গেলো নিবির। নিবিরের প্রস্তাব শুনে সুমন তীব্র না জানালো। অনেক বুঝিয়েও সুমনকে রাজি করানো গেলো না। নিবির অনেকবার বললো যে, ও চুরির জন্য না, কাউকে উদ্ধারের জন্য সেই বাড়িতে যাবে। কিন্তু সুমনকে কোনোভাবেই গলানো গেলো না।

সুমনের কথা হলো,
–তোর সাথে চুরি করতে গিয়ে সেদিন আমি যেই গণকেলানী খেয়েছি সেটা কি তুই ভুলে গেছিস!! তোর আর মনে থাকবে কেন, তুইতো ঠিকই কেটে পড়তে পেরেছিলি। শুধু কপাল পুড়েছিলো আমার। ওরকম মাইর মনে হয় কোনো জানোয়ারের গায়েও পড়ে না যতটা আমার গায়ে পড়েছিলো সেদিন। ঐ ভয়াবহ কিচ্ছাকাহিনি আমার সাথে হওয়ার পরেও তুই কিভাবে ভাবতে পারলি যে আমি তোর সাথে যেতে রাজি হবো!? ভাই তুই আমার সামনে থেকে সরে যা, তোকে দেখলেও আমার ঐদিনের কথা মনে উঠে গাঁ শিউরে ওঠে।দোহাই লাগে আমাকে মাপ কর্। যা এখান থেকে।

সুমনকে বলে আর লাভ হলো না। নিবির হতাশ হয়ে ওর বাড়ি থেকে বের হয়ে অন্য উপায় খুজতে লাগলো। ওর মনে পড়লো মন্টুমিস্ত্রির কথা। মন্টু হলো নিবিরদের প্রতিবেশী, রাজ মিস্ত্রির কাজ করে। নিবির মন্টুকে একবার একধরনের ক্যামিক্যাল দিয়ে লোহা গলাতে দেখেছিলো। তাই ভাবলো, যেভাবেই হোক মন্টুমিস্ত্রির থেকে ক্যামিক্যালটা চেয়ে নিতে হবে।

নিবির মন্টুমিস্ত্রির বাসায় হাজির হয়ে অনেক জোড়াজুড়ি করে মন্টুকে রাজি করিয়ে ক্যামিক্যালটা জোগাড় করে।
———

রুমির বাবা বাসার সামনের মেইনগেট দিয়ে ঢুকে দোতলার জানালার দিকে চোখ ফিরিয়ে দেখেন, রুমি তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুমির বাবাও গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রুমির দিকে বড়বড় চোখে তাকিয়ে দাত কিড়মিড় করলেন। বাইরে বৃষ্টি পড়াতে মেইনগেট ও বাসার মাঝের ছোট উঠোনে কাদাপানি জমেছে। রুমির বাবা রুমির দিকে ওভাবে তাকিয়েই বাসার দিকে হাটা শুরু করলেন। দু’পা এগিয়েই পিচ্ছিল কাদায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলেন তিনি। এরপর কোনোমতে দাঁড়িয়ে উপরে তাকিয়ে দেখেন রুমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে। উনি হাতে লেগে থাকা কাদা মেইনগেটের লোহার ভাজে মুছে বাসায় আসলেন।
———

নিবির রুমিদের বাসার সামনে এসে হাজির। সময় এখন ভোর তিনটা। একঘন্টা আগে আসার কারন, ক্যামিক্যাল দিয়ে লোহা গলানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

রুমিদের দুইতলা বাসার নিচতলায় থাকে রুমির মা-বাবা, আর দোতলার রুমটাতে থাকে রুমি। মেইনদরজা একটাই। বাসার সামনে একটা পোষা কুকুর। নিবির শব্দহীন ভাবে গেট টপকে মেইনদরজার সামনে আসলো। এরপর সূক্ষতার সাথে লক করা মেইনদরজার লোহায় ক্যামিক্যাল ঢেলে গলানো শুরু করলো। মোটা লোহা বিধায় গলতে সময় লাগলো প্রায় আধা ঘন্টার মতো। এরপর দরজাটা খুলে নিবির ক্ষীণ আলোর একটা টর্চলাইট জ্বালিয়ে নিঃশব্দে বাসার ভিতরে ঢুকলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে একটা সিড়ি দেখতে পেয়ে সেটা বেয়ে ও দোতলায় উঠলো । পৌছালো রুমির তালাবদ্ধ রুমটার সামনে।

নিবির তালাটায় ক্যামিক্যাল ঢালা শুরু করলো। প্রায় বিশ মিনিট লাগলো তালাটা খুলতে। কৌটোতে থাকা সব ক্যামিক্যাল প্রায় শেষ।

দরজা খুলেই নিবির দেখে সামনে রুমি দাঁড়িয়ে। নিবির অবাক হয়ে বললো,
–তুমি কিভাবে জানলে আমি দরজার সামনে আছি!?

রুমি,
–তোমাকে জানালা দিয়ে দেখেছি গেট টপকাতে। তখন থেকেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।

নিবির,
–দেখেছেন, আপনাকে আগেই বলেছিলাম আপনাকে নেয়ার ব্যবস্থা আমার কাছে আছে। আপনি শুধু শুধু টেনশন করছিলেন তখন। জীবনে কোনো চুরির মিশনে ফেল হইনি আমি, এবারতো মিশন আপনাকে নিয়ে, তাই ফেল হওয়ার বিষয়টা তো প্রশ্নেই আসেনা। এখন চলুন তাড়াতাড়ি, আর একমূহুর্তও সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।

রুমি মুচকি হাসলো। তবে সে হাসির ভিতরেও যে একটা হতাশাভাব লুকোনো সেটা রুমিকে দেখে বুঝতে পারলো নিবির। নিবিরের মনেও ভাবনার যুদ্ধ। ও চায়না রুমি দূরে কোথাও যাক; কিন্তু ও জানে, এটাই রুমির জন্য একমাত্র খোলাপথ।

রুমি আর নিবির দোতলা থেকে সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে ঠিক এমন সময় রুমির বাবা ওয়াশরুম থেকে হাই তুলতে তুলতে বের হলেন। ওয়াশরুমটা হলো নিচতলায়, সিড়ির সামনেই। নিবির আর রুমি তাড়াতাড়ি দোতলার ওয়ালের পাশে লুকিয়ে পড়লো। রুমির বাবা সিড়ির দিকে একনজর তাকালেন। একধরনের হালকা পোড়া পোড়া গন্ধ লাগছে তার নাকে। চেক করার জন্য সিড়িতে উঠতে উদ্যত হলেন ঠিক এমন সময় ভাবলেন, হয়তো দূরে কোথাও কোনোকিছু পুড়ছে কেউ। ওনার চোখ ঘুমে ফেটে যাচ্ছে। তাই গন্ধটার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমাতে গেলেন।

রুমি আর নিবির একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো, যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো। সিড়ি বেয়ে নেমে নিঃশব্দে মেইনদরজা থেকে বের হলো ওরা। এরপর পোষা কুকুরটার উপর বিশেষ নজর রেখে ওরা আস্তে আস্তে গেটের দিকে এগোলো। গেটের তালা গলাতে গিয়ে পড়তে হলো বিপদে। ক্যামিক্যাল সব শেষ! এখন কি করা যায়!?

রুমি ফিসফিসিয়ে বললো,
–আমি গেট বেয়ে টপকে যেতে পারবো, সমস্যা নেই।

নিবির,
–বলেন কি!! গেটের উপরে কিন্তু বড় বড় ধাড়ালো সিক দেয়া। একবার পা ফসকে গেলেই..

রুমি,
–তুমি শুধু লাইটটা ভালো করে ধরো। গেট টপকানো ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নেই। আমি উঠলাম। আর কথা বাড়িয়োনা আমার সাথে।

নিবির মশকরার ভংগিতে বললো,
–আপনার কথা শুনে তো মনে হয় যেন আমার সবকথাই বাড়াবাড়ি।

রুমি,
–(ধমকের সুরে) এই অসময়েও মশকরা করার মুডে আছো তুমি!! এখন লাইটটা ধরো ভালো করে।

নিবির,
–(ভয়ার্ত কন্ঠে) সাবধানে উঠো কিন্তু।

রুমি অনেক সাবধানতার সাথে গেটের ভাজ বেয়ে টপকাতে সফল হলো। এবার নিবিরের পালা। রুমি আতঙ্কের স্বরে বললো,
–এখন তো ওপাশে টর্চলাইট ধরার জন্য কেউ নেই!! তুমি অন্ধকারে কিভাবে গেট টপকাবে!?

নিবির,
–আরে আমি আজীবন অন্ধকারে সবকিছু টপকে গেছি। আপনি অযথা টেনশন করেন সবসময়।

নিবির টর্চলাইটটা পকেটে রেখে গেট বেয়ে উঠতে শুরু করলো। ও অন্ধকারেও এসব বিষয়ে বেশ পারদর্শী। কিন্তু এবার ঘটে গেল অঘটন।

লোহার গেটটার যে ভাজে রুমির বাবা কাদা মুছেছিলেন সেই ভাজে পা রাখতেই নিবিরের পা পিছলে যায়। নিবিরের এক পা গেটের উপরে থাকায় একটা ধারালো সিক ওর পায়ের ভিতর অনেকখানি ঢুকে যায়। মূহুর্তের মধ্যে এমনটা হয়ে যাওয়ায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই আকষ্মিক তীব্র ব্যাথায় নিবির চিৎকার করে ওঠে। তবে পরমূহুর্তেই একহাতে নিজের মুখ চেপে ধরে চুপ হয়ে যায় নিবির। কিন্তু ততক্ষনে পোষাকুকুরটা জেগে গেলো। জেগেই প্রচন্ড উচ্চস্বরে চেচাতে লাগলো কুকুরটা।

নিবিরের হাটুর নিচে সিকটা বাধায় সেখান থেকে প্রচুর রক্ত বেয়ে পড়ছে। রুমি এ দৃশ্য দেখামাত্র মূহুরতেই হাটু গেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। দুহাতে মুখ চেপে ধরে অনর্গল অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে রুমি। ওর চোখে এখন তীব্র আতঙ্কের ছাপ।

নিবিরের পা ব্যাথায় অবসপ্রায়। কোনোভাবেই পা’টা সিক থেকে ছুটাতে পারছে না ও। এদিকে কুকুরটা বিকটশব্দে চেচিয়েই যাচ্ছে। নিবির কাতর কন্ঠে রুমিকে বললো,
–আপনি চলে যান। বাসস্টেশনের আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে থাকুন। সকাল ছ’টার যেকোনো একটা বাসে উঠে দূরে কোথাও চলে যান। প্লিজ এভাবে রাস্তায় বসে সময় নষ্ট করবেন না। ধরা পড়ার আগে চলে যান তাড়াতাড়ি।

রুমি কান্নার চাপে মুখ থেকে শব্দ বের করতে না পেরে শুধু মাথা নাড়িয়ে না জানালো। নিবির তীব্র ব্যাথা সত্ত্বেও কন্ঠে খানিকটা জোর দিয়ে বললো,
–আপনি শেষ মূহুর্তে এরকম বোকামি কেন করছেন!? এটাই হয়তো আপনার শেষ সুযোগ সব ঝামেলা থেকে ছাড়া পাওয়ার। আপনি প্লিজ আমার কারনে এই সুযোগটাকে নষ্ট করবেন না।

পোষা কুকুরটার বিরামহীন চেচামেচিতে আশেপাশে হৈচৈ পড়ে গেলো। রুমির বাবা দরজা খুলে বাইরে বের হলেন। নিবির শেষবারের মতো জোরে চিৎকার দিয়ে রুমিকে বললো,
–আপনি চলে যান এখান থেকে..
———

নিবির এখন রুমিদের বাসার গেটের পাশের একটা পিলারে দঁড়ি দিয়ে বাধা। ও দু’পা মাটিতে ছড়িয়ে পিলারে পিঠ ঠেসে বসা অবস্থায় আছে। এক পা দিয়ে এখনো রক্ত ঝড়ছে কিন্তু সেটার কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত করা হয় নি।

রুমি ওর রুমের জানালা দিয়ে নিবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে আবারো রুমবন্দী করা হয়েছে। ও ফুপিয়ে কাদছে আর চিৎকার করে ওর বাবাকে বলছে নিবিরকে ছেড়ে দিতে।

নিবিরের কপালের একপাশ বেয়ে রক্ত পড়ছে, গাল ছিলে গেছে, একচোখ ফোলা আর সারা শরীরে লাল দাগ। রুমির বাবা নিবিরের সামনে বড় লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে। ঘন্টাখানেকের মতো লাঠি চালিয়ে তিনি এখন ক্লান্ত হয়ে গেছেন। রুমির বাবা ছাড়াও নিবিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরো অনেকজন। তাদের মধ্যে রাকিবও আছে। রাকিব নিবিরের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেই যাচ্ছে। কথার এক ফাকে রাকিব নিবিরের উদ্দেশ্যে বললো,
–আমাদের হিরো নায়িকাকে তুলে নিয়ে যেতে এসে গেটের সাথে লড়াইয়ে কুপোকাত হয়ে গেছে। শেষমেষ গেটই তার গল্পের ভিলেন হয়ে দাড়ালো!!

কথাটা বলেই রাকিব অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।

নিবিরের যেন এখন চারদিকেই অন্ধকার। কিন্তু এরমধ্যে ঘটলো অন্য ঘটনা।

রুমির মামা রুমান দুজন পুলিশসহ এসে রাকিবের গালে জোরে থাপ্পড় বসায়। আশেপাশের সবাই কান্ডটা দেখে হতবাক হয়ে তাকাতাকি শুরু করলো।

অছি-রুমান রাকিবের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
–বজ্জাতের বাচ্চা, আমার ভাগ্নির সাথে নোংরামি করার সাহস কিভাবে পেলি তুই!!

কথাটা শুনে সবাই হতভম্ব। রাকিব আতঙ্কিত হয়ে বললো,
–কি বলছেন এসব। আপনাকে কে বলেছে এসব কথা। আপনাকে…আপনি কোনো প্রমান ছাড়া আমার ব্যাপারে কিসব যাতা বলছেন!

রুমান ওর গালে আরেকটা চড় বসিয়ে বললো,
–প্রমান আমার কাছে আছে। রুমি ইকটু আগেই ফোন করে তোর সব কুকীর্তি বলেছে আমাকে।

রাকিব,
–(রাগী কন্ঠে) ওসব ভূয়া কথা। কোনো সাক্ষীও নেই ওর কাছে।

রুমি জানালায় দাঁড়িয়ে জোর গলায় বললো,
–সাক্ষীও আছে আমার কাছে।

রুমান রুমিকে ওর রুম থেকে বাইরে নিয়ে এসে রাকিবের সামনে আনলো। রুমি অনেক সাহস জমিয়ে সবার সামনে ভারী গলায় বললো,
–ইন্টারে পড়ার সময় আমি আর রাকিব একই কোচিং এ পড়তাম। স্যার বিকাল বেলা একটা স্কুলের ক্লাসরুমে আমাদের পড়াতেন। একদিন কোচিংয়ের পরে আমি স্কুলের মাঠে বান্ধবীদের সাথে কথা বলছিলাম। এমন সময় ও এসে কি যেন দেখাবে বলে আমাকে সাথে নিয়ে গিয়ে একটা ফাকা ক্লাসরুমে ঢোকে। তারপর…

এতটুকু বলার পর রুমির গলার স্বর কেপে ওঠে। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলে,
–তারপর ওর আরো দুজন বন্ধুসহ ও আমার সাথে নোংরামি করার চেষ্টা করে। আমি কোনোমতে পালিয়ে দৌড়ে মাঠে ছুটে আসি। ও মাঠ পর্যন্ত আমার পিছে দৌড়াতে থাকে। এরপর আমার বান্ধবীদের দেখে চলে যায়। আমি লজ্জায় বান্ধবীদের কিছুই বলিনি। কিন্তু ওরা আমার ছেড়া কাপড় দেখে ঠিকই বুঝেছে ব্যাপারটা। আমার ঐ বান্ধবীরা এ ঘটনার সাক্ষী।

কথা বলতে বলতে রুমির চোখ রাগে টলমল হয়ে যায়। রুমান রুমিকে সান্তনা দিয়ে বলে,
–সাহস করে কথাগুলো বলার জন্য সাবাস রুমি।কারো অপরাধ লুকিয়ে রাখা ঠিক না। তাতে অপরাধ আরো বাড়ে। তোর জবানবন্দী আর সাক্ষীদের জোরে ওর বিহিত আমি করেই ছাড়বো।

রাকিবকে পুলিশের গাড়িতে ওঠানো হয়। ও “সব মিথ্যা কথা, সব মিথ্যা কথা” বলে ক্রন্দনস্বরে চেচাতে থাকে।

রুমান নিবিরের দিকে তাকিয়ে একজন পুলিশ কন্সটেবলকে বলে,
–ওকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করো।

রুমির বাবা রুমানের সামনে এসে বললেন,
–দ্যাখ রুমান, রাকিবকে এরেস্ট করলে অনেক বড় সমস্যায় পড়ে যাবো। গুষ্ঠির মানসম্মান ধুলায় মিশে যাবে আর ব্যবসাটাও লাটে উঠবে আমার। আমি বলছি কি, অঘটন যা হওয়ার তাতো অনেক আগে হয়েই গেছে। সেটাতো এখন আর বদলানো যাবে না। শুধু শুধু সেটা নিয়ে এখন বাড়াবাড়ি করে লাভ কি। তুই ওকে এখনই ছেড়ে দে।

রুমান,
–আমি যা করার তাই করবো। আপনার অর্ডারে চলি না আমি।

রুমির বাবা ধমকের সুরে বললো,
–রুমান!! তুই কিন্তু..

রুমির বাবার হাত চেপে ধরে রুমির মা বললেন,
— রুমান যা করছে তা করতে দাও ওকে।

রুমির মায়ের একগাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। চোখে প্রচন্ড রাগের ছাপ।
———–

হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে নিবির জানতে পারে, রুমি ওর মামার কথায় ঢাকার একটা ফ্লাটে সেটেল হয়েছে। ব্যাপারটা জেনে নিবিরের ভালোও লাগলো আবার অন্যদিকে একপ্রকার হতাশায় চোখ মলিন হয়ে গেলো।

কিন্তু হঠাৎ একদিন একটা বড় ট্রাক আর প্রাইভেট কার সহ রুমি নিবিরদের বাসায় আসলো। নিবির অবাক হয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে রুমি বললো,
–তোমারা এখন থেকে ঢাকায় থাকবে, আমার ফ্ল্যাটে। মামা তোমার জন্য একটা পুলিশের চাকরির ব্যবস্থা করে রেখেছে ওখানে। ঢাকায় যাওয়ার পর শুভকাজটা সেরে আমিও তোমাদের ফ্যামিলিতে জয়েন করবো।

নিবির হতভম্ভের মতো দাঁড়িয়ে কথাগুলো ঠিকমতো বোঝার চেষ্টা করছে।

নিবির,
–(ভ্রু কুচকে) ফ্যামিলিতে জয়েন করবে? কিভাবে?

রুমি,
–সেটাও কি তোমাকে বলে দিতে হবে!!

__সমাপ্ত__

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here