গল্পঃ নিখোঁজ,পর্বঃ দুই

গল্পঃ নিখোঁজ,পর্বঃ দুই
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

ব্যাংকের সামনে যে কয়টা পুলিশ পাহারারত ছিলো তার প্রত্যেকে গার্ডের মতো করে খুন হয়েছে।এদের কে খুন করলো এটা নিয়ে বেশ শোরগোল শুরু হয়েছে।পুলিশ অফিসার নাজমুলের মাথায় কিছু আসছে না।এসব কিছু যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।সেই পুলিশদের যে বর্শা দিয়ে খুন করা হয়েছে সেটা ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।এখন সেটার রিপোর্ট আসলেই খুনির ব্যাপারে কিছু না কিছু নিশ্চয় জানা যাবে।এমন সময় এক পুলিশ কন্সটেবল এসে বলল
->স্যার আমরা সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ পেয়ে গেছি।
->ঠিক আছে চালু করো।
নাজমুল সিসিটিভি ফুটেজ মনযোগ সহকারে দেখতে লাগলো।কিন্তু হঠাৎ সে দেখলো হৃদয় নামের সেই ছেলেটি সেখানে ঘুর ঘুর করছে।নাজমুল বলে উঠলো”এই বেটা আবার এখানে কি করছে?”নাজমুল দেখলো এক কন্সটেবল ওকে তাড়িয়ে দিলো।তারপর হৃদয় চলে গেলো।হৃদয় যাওয়ার কিছু সময় পর হঠাৎ একটা সাদা ধোয়াশার মতো কিছু এসে দাড়ালো।দেখতে একদম ঘোড়ার মতো।মনে হচ্ছে ঘোড়ার পিঠে কোনো এক মানুষ বসে আছে।হঠাৎ সেই ঘোড়ার ওপরে থাকা মানুষ একে একে সেই পুলিশের দিকে বর্শা নিক্ষেপ করতে লাগলো।প্রতিটা পুলিশ যেন অপ্রস্তুত ভাবে দাড়িয়ে ছিলো।আর সেই ঘোড়ার ওপরে থাকা কেউ অলৌকিক ভাবে নিজের হাতে বর্শা আনছিলো আর ওদের মেরে যাচ্ছিলো।
এই দৃশ্য দেখে নাজমুল আর সেই কন্সটেবল দুইজনই হতভম্ব।কন্সটেবল বলল
->স্যার আমি এটা কি দেখলাম।দেখে তো মনে হচ্ছে যে,এটা কোনো অশরীরী।
->কি বলছো এসব,অশরীরী বলে কিছু নেই।
নাজমুল এটা বলে সে আবার নিজেই ভাবছে,এটা দেখতে একদম অশরীরীর মতো।নাজমুল হৃদয়কে ধরতে যাবে,কারন সে আবার ওই জায়গায় কাল কেন গিয়েছিলো?নাজমুল উঠতে যাবে তার আগেই হৃদয় হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল
->স্যার শেফালির কোনো খোঁজ পেলেন কি?
হৃদয় কথাটি বলে নাজমুলের সামনে এসে দাড়ালো।নাজমুল তখন বলল
->তার আগে বলো কাল তুমি আবার রাতে সেখানে কেন গিয়েছিলে?
->শেফালিকে খুঁজতে গিয়েছিলাম।
->বলেছিলাম তো যে আমি ওকে খুজে বের করবো।
->কোথায় আর খুঁজছেন,উল্টো আমি আসতে না আসতে আমায় প্রশ্ন করা শুরু করেছেন।
->আচ্ছা তুমি একটা জিনিস দেখো।
নাজমুল হৃদয়কে সিসিটিভির সেই ফুটেজ চালু করে দেখাতে লাগলো।হৃদয় দেখে বলল
->ঘোড়ার মতো এটা কি?
->বুঝতে পারছি না।
->স্যার শেফালি যেখানে বসে ছিলো সে জায়গাতে আমি ঘোড়ার পায়ের ছাপ দেখেছিলাম।কিন্তু সেখানে ঘোড়ার কোনো উপস্থিতি টের পায়নি।
নাজমুল বেশ অবাক হয়ে ভাবছে,যদি এই ঘোড়ায় চড়া লোকটির ছায়ামূর্তি মানুষ মারতে পারতে তাহলে হয়তো সে শেফালিকেও নিয়ে গেছে।নাজমুল আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো।

হৃদয় থানা থেকে বের হয়ে এসে ভাবছে,সে এখন শেফালিকে খুজে পাবে কি করে?শেফালি তো ওর অতীত সম্পর্কে কিছু বলেনি,তবে কি ওর নিখোঁজ হওয়ার পিছনে কি ওর অতীত জড়িত আছে।জানতে হলে সেই অনাথ আশ্রমে যেতে হবে যেখানে শেফালি থাকে?হৃদয় দেরি না করে অনাথ আশ্রমে চলে এলো।হৃদয়কে দেখে সব বাচ্চারা খুশি হয়ে গেলো।হৃদয় তাদের সাথে একটু মজা করে সেখানকার এক আয়া নাসরিন জাহানের কাছে গেলেন।হৃদয় নাসরিন জাহানকে বললেন
->আন্টি আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো?
নাসরিন অবাক হয়ে বলল
->হ্যাঁ বাবা বলো কি কথা?আর শেফালি কই?
->আন্টি শেফালি আমার বাসায় আছে।
হৃদয় ওকে মিথ্যা বললো কারন সত্যি বললে সমস্যা হতে পারে।শেফালির আর হৃদয়ের সম্পর্কের ব্যাপারে আশ্রমের প্রায় সকলেই জানে।নাসরিন বলল
->ও।
->আন্টি আপনি শেফালি বা ওর পরিবারের ব্যাপারে কি কিছু জানেন?
->হঠাৎ ওর ব্যাপারে জানতে চাইছো আজ?ও তোমায় কিছু বলেনি।
->না আন্টি।এজন্য তো আপনার কাছে জানতে চাইছি।বলুন দয়া করে?
->আজ থেকে দুইবছর আগে আমাদের এই আশ্রমের মালিক রত্না ম্যাডাম সমুদ্রের ধারে রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছিলো।যখন ওকে আমরা পাই তখন ওর অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো সারা শরীর জুড়ে শুধু আচরের দাগ।আমরা ওকে এখানে নিয়ে আসি।প্রায় তিন-চার মাস সময় লাগে ওর সুস্থ হতে।সুস্থ হওয়ার পর আমরা ওর পরিবারের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়।আর আমাদের কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করে এখানে থাকার জন্য।তাই আমরা আর কিছু না জেনে ওকে এখানে রেখে দিই।
->ও আচ্ছা।না জানি কি এমন অতীত লুকিয়ে আছে ওর জীবনে।
->হুম।
->আচ্ছা আন্টি আসি আমি।
হৃদয় আশ্রম থেকে বাইরে বেরিয়ে এলো।হৃদয় হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্র পাড়ে চলে এলো।কিছু মাথায় আসছে না ওর।শেফালি সমুদ্র পাড়ে কি ভেসে এসেছিলো নাকি ওকে কেউ ফেলে রেখে গিয়েছিলো?হৃদয় হাঁটার সময় হঠাৎ খেয়াল করে দেখলো মাটিতে ঘোড়ার পায়ের ছাপ।হৃদয় ভেবে নিলো এই ঘোড়ায় চড়ে যে গেছে সে শেফালিকে নিয়ে যায় নি তো?হৃদয় ঘোড়ার পায়ের ছাপ ধরে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।সেই ঘোড়ার পায়ের ছাপ জঙ্গলের দিকে চলে গেছে।হৃদয় কোনোকিছু না ভেবে সে নিজেও জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করলো।সে ক্রমশ জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।জঙ্গলের ভিতরে আসতে গা কেমন ছমছম করছে।কিন্তু ভয় পেলে চলবে না শেফালিকে ওর খুজে বের করতে হবে।এমন সময় হৃদয়ের কানে এক অদ্ভুত আওয়াজ এলো।হৃদয় আওয়াজ শুনে চারদিক দেখতে লাগলো।কিন্তু কেউ নেই।হৃদয় আবারো সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।একটু দুর আসতে আবার সে ওই আওয়াজ শুনতে পেলো।মনে হলো ওর পিছনের জঙ্গল নড়ছে।হৃদয় পিছনে ঘুরে দেখলো ওর সামনে একটা ভয়নাক অদ্ভুত প্রাণী দাড়িয়ে আছে।যেটার মুখ ইঁদুরের মতো আর পুরো শরীর ছাগলের মতো।এমন অদ্ভুত জন্তু সে আগে কখনো দেখেনি।হঠাৎ তার হাত-পা পরিবর্তন হয়ে বাঘের মতো হতে লাগলো।হৃদয় বুঝলো এখানকার পরিস্থিতি তেমন সু্বিধার না তাই সে দ্রুত দৌড়াতে লাগলো।হৃদয়ের পিছন পিছন সেই প্রানী দৌড়ে আসছে।
হৃদয় দৌড়ানোর সময় হঠাৎ পা ফসকে একটা গর্তের মধ্যে পড়ে গেলো।

নাজমুল খুন হওয়া জায়গা আশেপাশের মানুষের থেকে কিছু জানতে পারলো না।তারা নাকি কেউ খুন হতে দেখেনি।কিন্তু যারা এখানে খুন হয়েছে তাদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা বর্শা দিয়ে মারা হয়েছে।যেকয়জন খুন হয়েছে সে কয়টা বর্শা সেখানে পড়ে আছে।সেই বর্শা গুলো দেখতে অনেক পুরোনো বলে মনে হয়।যেমন আগের রাজাদের প্রহরীরা ব্যবহার করতো।এমন সময় নাজমুলের হাতে ফরেনসিক রিপোর্ট আসলো।রিপোর্টে বর্শার ওপর থেকে কোন হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি তবে একটা জিনিস জানতে পারা গেছে সেটা হলো এই বর্শা তিনশত বছরের পুরোনো।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here