গল্পঃ নিখোঁজ,পর্বঃ তিন অন্তিম পর্ব

গল্পঃ নিখোঁজ,পর্বঃ তিন অন্তিম পর্ব
লেখাঃMd Tarajul Islam(Shihab)

তিনশত বছরের পুরোনো বর্শা দিয়ে খুন হওয়ার ব্যাপারটা পুলিশ অফিসার নাজমুলের কাছে সাধারন কোনো বিষয় মনে হচ্ছে না।তারপরেও যে কয়জন খুন হয়েছে ঠিক সে কবয়টা বর্শা সেখান থেকে পাওয়া গেছে।এত দিনের পুরোনো বর্শা এলো কোথায় থেকে নাজমুল বুঝতে পারছে না।এমন সময় এক কন্সটেবল বলল
->স্যার আমি এরকম বর্শা একটা যাদুঘরে দেখেছি।
নাজমুল ভ্রু কুচকে বলল
->ঠিক বলছো তো?
->হ্যা স্যার একদম ঠিক বলছি।
->ঠিক আছে আমায় সেখানে নিয়ে চলো।
নাজমুল সেই পুলিশ কন্সটেবলকে সঙ্গে নিয়ে যাদুঘরে আসলো।সেখানে একটা কাঁচের মধ্যে একই রকম বর্শা রাখা।নাজমুলের হাতে একই রকম বর্শা দেখে যাদুঘরে জিনিসগুলো দেখানো লোক নাজমুলের কাছে এসে বলল
->একি স্যার! আপনি এই রকম বর্শা কোথায় পেলেন?
->আসলে এটা দিয়ে বেশ কয়েকটা খুন হয়েছে তাই এটার ব্যাপারে আমরা তদন্ত করতে এসেছি।
->স্যার এই বর্শা তো প্রায় তিনশত বছরের পুরোনো আর এটা আমরা জঙ্গলের ভিতরে পুরোনো রাজপ্রাসাদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম।
->ও আচ্ছা।কয়টা পেয়েছিলেন এরকম বর্শা?
->আমরা অনেক খোজাখুজির পর এই একটা বর্শা পেয়েছি মাত্র।
->আচ্ছা।
নাজমুল কন্সটেবলকে বলল
->এবার তাহলে চলো আমরাও একবার সেই রাজপ্রাসাদ থেকে ঘুরে আসি।
রাজপ্রাসাদে যাওয়ার কথা শুনে কন্সটেবল একটু ভয় পেয়ে গেলো।তারপর বলল
->স্যার ওখানে আত্মারা বাস করে।
নাজমুল তখন কন্সটেবলকে ধমক দিয়ে বলল
->চুপ করো আর চলো এখান থেকে।
নাজমুল কন্সটেবলকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের সে রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্য রওনা দিলো

হৃদয় গর্তের মধ্যে পড়ে যাওয়ার পর সে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে।হাতে পায়ে সামান্য একটু ব্যথা পেয়েছে সে।গর্ত দেখে মনে হচ্ছে এর গভীরতা দশ-এগারো ফুটের মতো হবে।হৃদয় উঠে বসলো আর তখনি কেউ একজন ওর হাত স্পর্শ করলো হৃদয় সাথে সাথে কেঁপে উঠে পিছন দিকে সরে আসলো।ওকে স্পর্শ করা মানুষটি যখন সামনে এগিয়ে এলো তখন তার মুখে বাইরের আলো পড়ায় চেহারা স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠলো।হৃদয় বলল
->শেফালি তুমি এখানে?
শেফালি মুখে আঙুল দিয়ে বলল
->আস্তে কথা বলো।
->তুমি এখানে আসলে কি করে?
->কাল রাতে যখন তোমার সাথে বসে ছিলাম তখন অদৃশ্য সেই ঘোড়া মানব আমায় নিয়ে চলে আসে।সে অনেক দ্রুত গতিতে চলতে পারে।তাই তুমি বুঝতেই পারো নি।
->কে সে?আর ও তোমায় কেন নিয়ে এসেছে?
তখন শেফালি ওর কোমড় থেকে এক চার-পাঁচ ইঞ্চি লম্বা একটা সোনালি রংয়ের তীরের ফলার মতো একটা জিনিস বের করলো।যেটা একটা দড়িসহ শেফালির কোমড়ে বাধা ছিলো।শেফালি ওইটা বের করে বলল
->কি এটা?
->এটাই হলো সেই জিনিস এটার জন্য আমায় নিয়ে আসা হয়েছে।
->আসলে এই জিনিসটা কি?
->এটা এমন একটা জিনিস এটার মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে ডাকা যায় আবার তাকে ফেরত পাঠানো যায়।আর এটা আমাদের বংশের জিনিস এটা কারন ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারে না।আর এটা দিয়ে আমরা ওই রাজার আত্মাকে আবার ফেরত পাঠাবো।
->কে ওই রাজা আর এটা তুমি কোথায় পেলে?
->ওই রাজা আমার বাবার পূর্বপুরুষদের কেউ হবে হয়তো।আর এটা আমার পূর্বপুরুষদের থেকে আমাদের কাছে এসেছে।আর তুমি জানতে চাওনা আমার অন্ধকার অতীত সম্পর্কে আজ আমি তোমাকে সেটা বলবো।
->কি সেই অতীত?
->আসলে এটার ক্ষমতা জানার পর আমার কাকা জুনায়েদ এটার সাহায্য তার পূর্বপুরুষদের ডাকতে চায়।সে তাদের মাধ্যমে অলৌকিক শক্তি অর্জন করতে চায়।আর তাদের পুরোপুরি পৃথিবীতে আনতে হলে দুইটা জিনিসের প্রয়োজন।এক নাম্বার একটা চক্র আর দুই এটা।আমার চাচার কাছে চক্র আছে কিন্তু এটা নেই।আর চক্রের সাহায্য আত্মাকে এনেছে কিন্তু কারো শরীরে সেটা প্রবেশ করাতে পারেনি।তাই সে আমার মা-বাবাকে ধরে এই জিনিসটা চায় কিন্তু বাবা দিতে অস্বীকার করে।আর এটা আগেই আমার হাতে দিয়ে দেয়।এটা না পেয়ে জুনায়েদ আমার মা-বাবাকে আমার চোখের সামনে হত্যা করে।
শেফালি এটুকু বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।হৃদয় ওর কাঁধে হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিলো।হৃদয় বলল
->তারপর কি হলো?
->আমি তখন সেখান থেকে পালিয়ে আসি।আমার বাবা বলেছিলো যেকোনো মূল্যে এটাকে রক্ষা করতে হবে।তাই আমি এটা নিয়ে সমুদ্রের পাড়ে এসে একটা ডাব গাছের গোড়ায় পুতে রাখি।আর ঠিক তখন আমার ওপর অদ্ভুত রকমের প্রাণী হামলা চালায়।তারপর যখন সুস্থ হলাম তখন আমি সেখানে থেকে এটা নিয়ে যাই আর আমার সাথে রাখি।
->এখন তাহলে আমাদের এখান থেকে যেতে হবে।
->না আমাদের আগে ওই আত্মাকে ফেরত পাঠাতে হবে নয়তো সে আরো মানুষকে খুন করবে।
->ঠিক আছে তাহলে এখান থেকে উঠতে হবে।
হৃদয় প্রথম বেশ কষ্ট করে উপরে উঠলো তারপর একটা লতা জোগাড় করে সেটা নিচে নামিয়ে দিলো তখন সেটা হৃদয় শেফালিকে ওপরে তুললো।
হৃদয় আর শেফালি গর্ত থেকে উঠার পর দেখলো ওদের সামনে এক মাঝবয়সী লোক দাড়িয়ে আছে।আর ওর পিছনে দাড়িয়ে আছে সেই অদ্ভুত প্রাণীগুলো।শেফালি দেখে চমকে গেলো।কারন এটাই সেই জুনায়েদ।জুনায়েদ হাসতে হাসতে বলল
->অনেক পালিয়ে বেরিয়েছো মামুনি এবার চলো আমার সাথে নয়তো তোমার প্রেমিক সহ দুইজনকে মেরে দিবো।
হৃদয় শেফালিকে ইশারায় ওর কথা মেনে নিতে বললো।জুনায়েদ ওদের দুইজনকে পুরোনো রাজপ্রাসাদের ভিতর নিয়ে গেলো।সে শেফালির কাছে সেই জিনিস চাইলে সে দিয়ে দিলো কারন না দিলে সে ওদের ক্ষতি করতে পারে।
জুনায়েদ জিনিসটা হাতে পাওয়া মাত্রই হাসতে লাগলো।একটু বাদে দুইজন লোক একটা কফিন টেনে নিয়ে আসলো যেটার ভিতরে একটা লাশ রাখা।হৃদয় আর শেফালি দুইজন দাড়িয়ে থেকে এটা দেখছে।জুনায়েদ তীরের মতো জিনিসটা চক্রের ওপর বসাতেই সেটা থেকে একটা আলো বের হলো।আর তখনি সেখানে উপস্থিত হলো ঘোড়ার পিঠে বসা একটা লোকের আবছা অবয়ব।হঠাৎ সেটি ধোয়ার মতো হয়ে ওই চক্রের মধ্যে প্রবেশ করতে লাগলো।আর সেই চক্র থেকে হলুদ আলো বের হয়ে কফিনের মধ্যে থেকে প্রবেশ করতে লাগলো।

পুলিশ অফিসার নাজমুল এক পাশে দাড়িয়ে থেকে পুরো ব্যাপারটা দেখছিলো।নাজমুলের সাথে আরো কয়েকজন পুলিশ আছে।নাজমুল চিৎকার করে বলল
->বন্ধ করো এসব নয়তো একজনও বাচতে পারবেনা।
নাজমুলের কথা শুনে জুনায়েদ রেগে ওর দিকে তাকালো।নাজমুল আর ওই পুলিশ ওর দিকে বন্দুক তাক করে আছে।জুনায়েদ বলল
->আমায় কেউ আটকাতে পারবেনা।
হৃদয় একটা লাঠি দিয়ে জুনায়েদের হাতে আঘাত করতে চক্র মাটিতে পড়ে গেলো তখনি শেফালি মাটি থেকে সেটি তুলে নিলো।জুনায়েদ বলল
->কাজটা ঠিক করছিস না ওটা আমায় দে।
শেফালি জুনায়েদের কথা না শুনে দুটো চক্র থেকে ওই জিনিস আলাদা করতেই লাল আলো জ্বলে উঠলো আর ওদের সামনে দাড়ালো সেই ঘোড়া সহ লোকটির সাদা অবয়ব।জুনায়েদ ইশারা করতে ওই প্রানী গুলো একে একে নাজমুলদের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।গুলি চালিয়ে ওরা প্রত্যেককে মেরে ফেললো।নাজমুল বলল
->এবারের আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করো না হলে তোকেও এভাবে মারবো।
->পারবি না।আমার আসল অস্ত্র এখনো আছে।
তখন ওরা দেখলো ওই অশরীরী ঘোড়ায় চড়া লোকটি ওর হাতে আবারো বর্শা আনছে।যেভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে ঠিক সেভাবে।নাজমুল ওর দিকে গুলি চালাতো লাগলো কিন্তু গুলি ওর শরীর ভেদ করে বের হয়ে যাচ্ছিলো।বর্শা ওদের দিকে ছুড়ে মারতে যাবে তার আগে শেফালি ওর সামনে এসে দাড়িয়ে ওই চক্র অশরীরির দিকে ধরে অন্য এক ভাষায় কি যেন পড়তে লাগলো।আর তখন চক্র হতে হলুদ আলো বের হতে লাগলো।সেটা অশরীরীর গায়ে লাগতে সে অদৃশ্য হয়ে যেতে শুরু করলো।হঠাৎ সে চক্র হতে প্রচুর আলো বের হয়ে পুরো রুম আলোকিত হয়ে গেলো।সেই সাথে সব অশরীরী আর ওই অদ্ভুত প্রানী গুলো অদৃশ্য হয়ে গেলো।জুনায়েদ এটা দেখে বলল
->কাজটা ঠিক করলি না।
->তুই আমার মা-বাবাকে মেরে কি কাজটা ঠিক করেছিস।
জুনায়েদ রেগে গিয়ে ওর পিঠ হতে তলোয়ার বের করলো আর তখন নাজমুল আর কয়েকজন পুলিশ মিলে ওকে ধরে ফেললো।নাজমুল জুনায়েদকে ধরে নিয়ে গেলো।হৃদয় দৌড়ে শেফালির কাছে এসে বলল
->তুমি ঠিক আছো তো?
->হ্যাঁ ঠিক আছি গো।
হৃদয় শেফালিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো।দুইজন সমুদ্রের পাড় ধরে হাঁটছে।সন্ধ্যা নেমে এসেছে।সূর্যের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে সূর্য সমুদ্রের অতল গহবরে হারিয়ে যাচ্ছে।শেফালি ওই চক্র নিজের সাথে রেখেছে।হৃদয় বলল
->আচ্ছা তুমি যে জিনিস গুলো পড়লে এসব শিখলে কি করে?
->বাবা শিখিয়েছিলো।
->তার মানে তোমার পুরো বংশটায় তান্ত্রিক টাইপের।
শেফালি ভ্রু কুচকে হৃদয়ের দিকে তাকালো।হৃদয় হেসে ফেললো।শেফালি চিন্তিত মুখে বলল
->তোমার মা-বাবা আমায় মেনে নিবে তো?
->চিন্তা করো না।তারা ঠিক মেনে নিবে।এখন চলো।
হৃদয় শেফালিকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।হৃদয়ের মা-বাবা একটু মেনে না নিলেও সব জানার পর মেনে নিতে বাধ্য হয়।আর সেদিনই ওদের বিয়ে হয়।সব শেষে দুইজনের ভালোবাসা পূর্নতা পেলো।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here