দ্বিতীয় জন 💔,02,03

দ্বিতীয় জন 💔,02,03
Tanzin Hasan Maya
পর্ব দুই

রায়ানকে চরিত্রহীন বলাতে আমার শরীরের রক্ত টগবগ করতে লাগলো। কারন এই তিন বছরের রিলেশনে ওকে কখনোই তেমন কিছু করতে দেখিনি বা শুনিও নি।
মনের অবস্থা বুঝি সবসময় চেহারায় ফুটে ওঠে। হয়তো হিমুও সেটা দেখতে পেয়েছিলো। তাই হঠাৎই ও আমার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল-
-‘রায়ানের প্রতি তোর এতো টান দেখে, সত্যিই আমার খুব আফসোস্ হচ্ছে। যদি আমি ওর মতো চরিত্রহীন হতে পারতাম তাহলে আমার কপালেও ওরকম ভালোবাসা জুটতো!’
-‘এতোক্ষণ আমার শরীর টা নিয়ে যে অত্যাচার করলি সেটা কি চরিত্রহীনের মধ্যে পড়েনা?’ – কিছুটা রেগে গিয়ে বললাম।

ও আমার কথা শুনে রাগে হিসহিস্ করে উঠলো-
-‘আমি তোর স্বামী। তোর শরীর নিয়ে আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। কিন্তু তুই সেটাকে “অত্যাচার” বলে এটা প্রমাণ করে দিলি যে তোর কাছে স্বামীর চেয়ে প্রেমিকই বড়।’

ও এতোক্ষণ আমার উপর শুয়ে ছিলো। ঐ কথাটা বলার পরপরই ও উপর থেকে নেমে গেলো। রুমে লাইট অন করে, একটা শার্ট পরে নিলো। আমি তাড়াহুড়া করে শাড়িটা ঠিক করে নিয়ে বসে পড়লাম। ও আমার দিকে না তাকিয়েই সোজা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধরলো। কিন্তু দরজার কাছে যেতেই হঠাৎ থেমে গিয়ে আমায় উদ্দেশ্য করে বলল-

-‘যার কাছে স্বামীর থেকে প্রেমিক বড়, তার কাছে থাকার আমার কোন রুচি নেই!’

কথাটা বলেই ও ঠাস করে মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল। ওর এমন আচরনে আমি মনে মনে খুব অবাক হলাম। কিন্তু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

যাকগে, তবু বাঁচা গেলো অন্তত। দরজাটা ভেতর থেকে লক করে দিয়ে বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলাম। চোখ বন্ধ করতেই রায়ানের কথা মনে পড়লো। মাথার মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো। আচ্ছা রায়ান কি সব কিছু জানার পর আমায় মেনে নিবে??? নাকি রায়ানের কাছে আমি সব কিছু লুকাবো?
নাহ্! ওকে পাওয়ার জন্য আমি যেকোন কিছু করতে রাজি!

এখনই ওর সাথে কথা বলতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ফোন পাবো কোথায়? আমার ফোন তো হিমু কেড়ে নিয়েছে। অগ্যতা মনমরা হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।

একটুপরই মনে পরলো হিমু তো যাওয়ার সময় ভুলে ওর ফোনটা রেখে গেছে। ঐ টা দিয়ে এখন নিশ্চিন্তে কথা বলা যেতে পারে। খুশিতে আটখানা হয়ে ওর ফোন থেকে রায়ানের নাম্বারে কল করলাম।

কল হতেই নাম্বার ওয়েটিং দেখালো। পরপর কয়েকবার কল করলাম, কিন্তু বারবারই ওয়েটিং দেখাতে লাগলো।

রাগে ফ্লোরে বসে পড়লাম। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ও কার সাথে কথা বলতে পারে? তাও আবার এতো লং টাইম ধরে? একটু পরেই রায়ান কল ব্যাক করলো। আমি রিসিভ করে কোন কথা বলার আগেই ও রাগান্বিত কন্ঠে বলতে লাগলো-
-‘কে ভাই আপনি? এতো রাতে কল দিয়ে ক্যান বিরুক্ত করছেন? দেখতেই তো পাচ্ছেন নাম্বার টা ওয়েটিং! তবু বারবার কল করতে হবে??? আজিব মানুষ তো!!’
ওর কথা শুনে মনে হলো কলটা কেটে দিই। কিন্তু পারলাম না। কান্না জড়ানো কন্ঠে বললাম-
-‘রায়ান আমি বর্ষা! তুমি এতো রাতে কার সাথে কথা বলছিলে?’
-‘ওহ্! তুমি। এইটা কার নাম্বার? দুইদিন থেকে তোমার কোন খবর নেই।’
-‘তার আগে বলো তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?’
ও কিছুটা রাগ করে বলল-
-‘তুমি আমায় সন্দেহ করছো? এই তোমার ভালোবাসা? আমার প্রতি তোমার কোন বিশ্বাস ই নেই।’

ওর কথা শুনে আমার মাথায় চরচর করে রাগ উঠতে লাগলো। রাগে স্পষ্ট ভাবে কথা পর্যন্ত বলতে পারছিলাম না। তবু চাপা গলায় ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বললাম-
-‘কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কোন লাভ হবেনা রায়ান। যা বলছি তার উত্তর দিতে পারলে দাও নয়লে রাখো।’
-‘তুমি এতো রেগে যাচ্ছ কে……

ওর কথা শেষ না হতেই লাইনটা কেটে দিলাম। ওর একই কথা ফালতু ভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতে দেখে খুব রাগ লাগলো। রাগে আমার হাত পা কাঁপছে। ও ভেবেছিলো আমি হয়তো একটু পর ওকে আবার কল করবো। কিন্তু না করাতে ও নিজেই কল দিলো। আমি কল কেটে দিয়ে নাম্বার ব্লাক লিস্টে রাখলাম। মাত্র দুই দিন কথা বলিনি এরই মধ্যেই নাম্বার ওয়েটিং। বাহ্। একটা বার তো খোঁজ নিলোই না বরং নতুন করে একটা জোটাইছে। আজ যদি ওকে হাতে নাতে ধরতে না পারতাম, তাহলে হয়তো সারাজীবন ওর প্রতি আমার অন্ধ বিশ্বাস কাজ করতো।

কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মাথা টলমল করতে লাগলো। শেষ মেশ বেডে গিয়ে শুয়ে পরলাম।

ঘুম ভাঙলো শাশুড়ি মার ডাকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেলা দুইটা বাজে। তাড়াহুড়া করে উঠে দরজাটা খুলে দিলাম। আমায় দেখে উনি হেসে বললেন-
-‘কি ব্যাপার বউমা। তুমি বুঝি এতো বেলা করেই ওঠো? তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে যে!’
-‘ঠিক আছে মা, আপনি যান আমি আসছি!’

গোসল সেরে বেলকনীতে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাতের বেলা এসেছি। ভালোমতো কিছুই খেয়াল করিনি। বিশাল বড় বাড়ির এরিয়া। সবুজে ভরা চারপাশ। সবুজ রং দেখে মনটায় প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেলো।

রুমে এসে চুল শুকাতে লাগলাম আর চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। অনেক সুন্দর ভাবে রুমটা সাজানো গোছানো। একটু পর হিমু আসলো রুমে। আমায় দেখে একটানা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। তারপর রাগী রাগী ভাব নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করলো। ওর আধা ভেজা চুল দেখে বুঝলাম একটু আগেই ও গোসল করেছে। আমার সাথে কোন কথা না বলেই রুম থেকে চলে গেলো।

আমি রেডি হয়ে কেবল বাইরে যেতে ধরেছি, এরই মধ্যে হিমু হনহন করে রুমে চলে আসলো। এসেই দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল-

-‘তোর এতোবড় সাহস কিভাবে হলো আমার ফোন থেকে অন্য কারো কাছে কল করার?’
ওর কথা শুনে আমি ভয়ে-লজ্জায় চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকলাম। আমায় চুপ থাকতে দেখে ও আরো দ্বিগুণ রেগে গিয়ে বলল-
-‘বল তোর এতো সাহস কিভাবে হলো?’
এবারো আমি চুপ। আমার উচিত ছিলো ওর নাম্বার ডিলেট করার। কিন্তু রাগের মাথায় কিছুই খেয়াল ছিলো না।

হিমু দরজার কাছে গিয়ে চেক করে আসলো, ভালো ভাবে লক করা আছে কিনা। তারপর সোজা আমার কাছে এসে আমার মাথার পেছনের চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে বলল-
-‘আমার কথা কি তুই বুঝতে পারছিস না?’
ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আমি কান্না করতে লাগলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল-
-‘প্রেমিকের উপরে তোর এতোটাই টান যে আমার সব অত্যাচার মেনে নিতে পারছিস তবু কোন উত্তর দিতে পারছিস না!’

এবার আর সহ্য করতে পারলাম না। কান্না করতে করতে বললাম-
-‘এবারের মত আমায় ক্ষমা কর হিমু। আমি আর কখনো ওর সাথে কনটাক্ট করবো না।’
আমার কথা শুনে ওর চোখ দুটো রক্তের মতো লাল হয়ে উঠেলো। ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
-‘এইসব মিথ্যা অভিনয় তুই তোর প্রেমিকের সাথে করবি আমার সাথে নয় বুঝলি।’
-‘আমি সত্যি বলছি হিমু। বিশ্বাস কর!”

ও এবার আমার কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো। আমার চুল ছেড়ে দিয়ে বলল-
-‘কেনো? এক রাতের মধ্যেই কি এমন হলো যে তুই আর ওর সাথে কনটাক্ট করবিনা? নিশ্চয় কোন প্ল্যান করেছিস!’
আমা ওর বাম হাতটা চেপে ধরে বললাম-
-‘আমি কোনই প্ল্যান করিনি হিমু। তুই এবারের মতো আমায় ক্ষমা কর প্লিজ!’

রায়ানের সাথে ঘটে যাওয়া রাতের ঘটনা টা মনে হতেই ভেতরে ঘৃনায় ভরে উঠলো।

হঠাৎ হিমুর হাতের স্পর্শে আমি চমকে উঠলাম। ও দুই হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল-
-‘সত্যিই তুই কোন প্ল্যান করিসনি? তাহলে এখন আমি যা চাইবো তুই তা দিতে পারবি?’

আমি কোন উত্তর দিলাম না। কারন আমি নিজেই এখনও দোটানার মধ্যে আছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যতোটুকু সময়ের দরকার আমি এখনো ততটুকু সময় পাইনি। এরই মধ্যে হিমু আমায় কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শোয়ালো। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ও আমার উপরে শুয়ে আমার কানের কাছে ওর মুখ টা নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো –
-‘তোকে আমি বলেছিলাম না, তুই আমায় যতো কষ্ট দিবি আমি তার দ্বিগুণ সুদে আসলে তোকে ফেরত দিবো।’

আমি ওকে কোন বাঁধা দিলাম না। ও আমার ঠোঁটে একটা কিস্ করলো। আমি চোখ মেলাতেই দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ও আমার চোখে চোখ রেখে বলল-
-‘কি ব্যাপার তুই আজ কোন বাধা দিচ্ছিসনা যে?’
-‘কোন ইচ্ছা নেই তাই!’
-‘রাগ, অভিমান নাকি নতুন কোন প্ল্যান?’
-‘কোনোটাই নয়। আচ্ছা তুই যে আমার বিরুদ্ধে গিয়ে আমার বাবা মাকে রাজি করিয়ে জোর করে বিয়ে টা করলি, এটা কি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?’
-‘কিসের বাড়াবাড়ি? আমি তোকে ভালোবাসি। সেখানে তুই অন্য ছেলের সাথে কিছু করলে আমি সেটা কখনোই মেনে নিতে পারবোনা।’
-‘তাহলে তুই যে আমার ভালোবাসাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে দিলি তাহলে আমি সেটা কিভাবে মেনে নিবো?’

ও কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলো। আমি ওর মুখটা ধরে আমার মুখের দিক করে নিয়ে বললাম-
-‘এখন তুই চুপ হয়ে গেলি কেন বল?

ও তবু চুপ করে রইলো। আমি ওকে শান্ত ভাবে বললাম- -‘আমার কাছে তুই পৃথিবীর সব স্বার্থপর মানুষদের মধ্যে একজন। যে কিনা নিজের সুখ আর স্বার্থের জন্য পশুর চেয়েও বেশি হিংস্র হতে পারে!’

এবারো ও কোন উত্তর দিলোনা। আমি ওর ঠোঁটে কিস্ করতে করতে বললাম-
-‘আমি কিন্তু তোকে ছেড়ে যাবোনা। তুই যেমন নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য যা তা করেছিস, ভেবে নে আমিও তেমনি করবো অথবা তার চেয়েও বেশি।’

হিমু আমার কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো। আমি দুই হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে ছিলাম। ও আমার হাত দুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আমি ওর গলা আর বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম-
-‘তোকে তো আমি অনেক বার বলেছিলাম, আমার দেখা সবচেয়ে নিঁখুত সুন্দর ছেলেটা তুই। তখন তো তোকে ফ্রেন্ডের চোখে বলেছিলাম। এখন স্বামীর চোখে তোকে আর অপরূপ সুন্দর লাগছে। তুই জোর করে কিছু করলে সেটা আমি খুব ইনজয় করবো ইউ নো….

To be continue….

[একটা সম্পর্কের মধ্যে যখন দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি ঢুকে পড়ে তখন সেই সম্পর্কের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তির মধ্যে নানারকম অন্তর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই গল্পটা মূলত সেই কেন্দ্রিক। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]

দ্বিতীয় জন 💔
Tanzin Hasan Maya
পর্ব তিন

হিমুকে বর্ষা সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আর হিমু ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে বর্ষা বিরক্ত হয়ে হিমুকে বলল-
-‘কি ব্যাপার তুমি এরকম ছটফট করছো কেনো? আমি যে তোমায় এখন পেতে চাচ্ছি তুমি কি সেটা বুঝতে পারছোনা?’

হিমু বর্ষার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, যেই মেয়ে আমাকে টাচ করতেই দিতে চায়না সেই মেয়ে এখন নিজ থেকে আমার কাছে ধরা দিচ্ছে! নিশ্চয় এর পেছনে কোন রহস্য আছে। অথবা নতুন কোন ফাঁদ পেতেছে। ভুল করেও এই ফাঁদে আমার পা দেওয়া যাবে না।।

হিমু এবার জোর করেই বর্ষার বাহু থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো। বেড থেকে নেমে গিয়ে মাথার চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল-
-‘আমি খুব মেন্টালিভাবে ডিপ্রেসড্ হয়ে আছি। আশা করি তুমি এই অবস্থায় এমন কিছু করবেনা যাতে আমি আরো বেশি ভেঙে পরি। ডাইনিং রুমে আসো সবাই আমাদেথ জন্যে ওয়েট করছে।’

হিমু রুমের বাইরে চলে গেল। বর্ষা বেড থেকে নেমে আয়নার সামনে গিয়ে শাড়ি ঠিক করতে লাগলো। মাথার চুল গুলোও আঁচরে নিলো।
রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে ধরে আবার কি মনে করে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ একটানা নিজের মুখর দিকে তাকিয়ে থেকে আয়নার উপরে একটা কিস্ করলো । ওর দু ঠোঁটের ছাপ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠলো। ও সেদিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল।

বাসায় ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে রায়ান। মাথা ভর্তি একগাদা চুল। পরনে থ্রি কোয়ার্টার একটা প্যান্ট আর টি শার্ট। গায়ের রং কিছুটা শ্যামলা প্রকৃতির হওয়ায় সবুজ রঙের টি শার্ট টা ওকে ভালোই মানিয়েছে। বেশি লম্বা না। বেশি মোটাও না। তবে সবমিলিয়ে একপ্রকার সুন্দর বলাই যায়।

ও এখন ভিশন দুশ্চিন্তাই আছে। অলরেডি দুইটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফ্লার্ট করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরে পরেছে। এদিকে বর্ষাও ওকে পেনডিং অবস্থায় রেখে দিয়েছে। বেচারির মন মানসিকতা ধীরে ধীরে খুব হাইপার হয়ে যাচ্ছে।

পৃথিবীতে এমন কিছু শ্রেণীর মানুষ আছে যারা অতি দেহ ভোগেও তৃপ্ত হয়না। রায়ান সেই দলেরই এক জন। বর্ষাকে বহুদিন ধরে টার্গেটে রেখেছে ফিজিক্যালি রিলেশন করার জন্যে কিন্তু সাপে বরে মেলেনি। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওমন পরীর মতো একটা মেয়েকে সে ছেড়ে দেওয়ার সাহস পায়নি। অন্য কোন মেয়ে হলে অনেক আগেই মামলা টা চুকে দিতো। কিন্ত বর্ষা অনেক বেশি সুন্দরী হওয়ায় রায়ান ফেসে গিয়েছে। ওক ছাড়তেও পারেনা ঠিক মতো রাখতেও পারেনা।

বর্ষার নাম্বারে রাত থেকে রায়ান ট্রাই করছে। কিন্তু সুইচড অফ বলছে। আবার লাস্ট বার যে নাম্বার থেকে বর্ষা কল করেছিল সেই নাম্বার থেকেও ওর নাম্বার ব্লাক লিস্ট করে রাখা আছে। শেষে উপায় না পেয়ে ব্লাক লিস্ট করা ঐ নাম্বারেই একটা মেসেজ করলো। মেসেজ টা এমন-
“প্লিজ বর্ষা তুমি আমায় ভুল বুঝিওনা। আমি অন্য কোথাও কিছু করিনি। তুমি আমায় বিশ্বাস করো। আর পারলে আমায় ক্ষমা করে দাও কারন আমার উচিত ছিলো তখনি তোমাকে তোমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। আমি আমার এক ছেলে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলেছিলাম। যাই হোক প্লিজ তুমি আমার সাথে একটা মিনিট কথা বলো আমি তোমার সব ভুল ভেঙে দিবো।”

এদিকে হিমু ওর ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথে বসে লাঞ্চ করছিলো। এমন সময় ওর ফোনে মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো। ও পকেট থেকে ফোন টা বের করে দেখে রায়ানে নাম্বার। সাথে সাথে ওর মাথায় আগুন ধরে গেলো। ওর সামনে বসেই বর্ষা খাচ্ছিল। ও সিংহের মতো হিংস্র দৃষ্টিতে একবার বর্ষার মুখের দিকে তাকালো। দুই জনের চোখা চোখি হলো। বর্ষা ঠিক বুঝতে পারলোনা হিমু কেন ঐরকম করে ওর দিকে তাকালো।

তারপর হিমু ঠিক মতো খেতেও পারলোনা। বাকি খাবার রেখেই রুমে চলে আসলো। ওর এমন আচরন বর্ষার কাছে ঠিক সুবিধার মনে হলোনা। ও খুব তাড়াহুড়ো করে খেয়ে রুমের দিকে আসতে লাগলো।

এদিকে হিমু রুমে এসে মেসেজ সিন করেই পুরো শক্ খেয়ে গেলো। রাগে ওর মুখ চোখ লাল হয়ে যেতে লাগলো। ও রায়ানের নাম্বারে সাথে সাথে কল করলো। একবার কল হতেই রায়ান রিসিভ করলো। হিমু কোন কথা না বলে চুপ করে আছে। ওপাশ থেকে রায়ান বলল-
-‘বর্ষা? আমি জানি তুমি খুব রাগ করে আছো। কিন্তু আমায় তো কিছু বলার সুযোগ দাও নাকি?
হিমু যথাসম্ভব নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল-
-‘সরি। আপনি কে বলছেন?’
-‘আপনি কে? আর এই নাম্বার আপনার কাছে কেনো?
-‘আমি হিমু। আমার নাম্বার আমার কাছে থাকবেনা তো কি পাড়া পড়শীর কাছে থাকবে?’
-‘এই নাম্বার থেকে তো গতকাল রাতে আমার গার্লফ্রেন্ড বর্ষা আমায় কল করেছিল। তাই….
রায়ানের কথা শেষ না হতেই হিমু ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল-
-‘ওয়েট। কি বললেন বর্ষা?’
-‘জ্বী!’
-‘সরি বাট বর্ষা তো আমার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী।’
-‘ক্যামনে?’
-‘গত দুই দিন হচ্ছে পারিবারিকভাবে ওর সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ, আমি আপনার সাথে আমার অনেক কথা ছিলো! যদি আপনি চান সাক্ষাতে কথাগুলো বলতে চাই!’

রায়ানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। এতো বড়ো একটা পার্টনার অল্পের জন্য হাত ছাড়া হয়ে গেল। ওর খুব আফসোস হতে লাগলো! অন্তত মিথ্যে বিয়ে করেও ওর সাথে কিছু করা যেতো। সেটাও সে করতে পারলোনা। তার আগেই বর্ষা ওকে ফুল ডোজ দিয়ে দিলো। রায়ানের খুব রাগ আর জিদ হতে লাগলো। সে মনে মনে বর্ষার উপরে প্রতিশোধ নিতে চাইলো। তাই একটু পর ই হিমুকে বলল-

-‘ঠিক আছে। আমি মিট করতে রাজি আছি। তবে তার আগে একটা শর্ত আছে!’
-‘কি শর্ত বলুন?’
-‘আমি বর্ষারসাথে এক মিনিট কথা বলতে চাই!’
-‘ওকে লাইনে থাকুন!’

হিমু ফোন টা হোল্ড করে বর্ষাকে ডাকতে লাগল। এতোক্ষণ বর্ষা আড়ি পেতে হিমুর সব কথাই শুনছিল। ও এটাও বুঝতে পেরেছিলো যে হিমু কার সাথে কথা বলছীলো। হিমু ওর নাম ধরে ডাকতেই ও খুব দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকে পড়লো। যাতে হিমু ভাবে বর্ষা ওর ডাক শুনেই দুরে কোথাও থেকে চলে আসলো।

বর্ষা হিমুর সামনে যেতেই হিমু ওর হাতে ফোন দিয়ে বলল রায়ান ওর সাথে কথা বলতে চায়। বর্ষা কিছুটা ইতস্তত করতে করতে ফোনটা কানে ধরে বলল-
-‘হ্যালো….
-‘Congratulation!! আশা করি অনেক সুখে আছো! কিন্তু কাজ টা কি তুমি ঠিক করলে? না জানি এর মুল্য তোমায় কিভাবে দিতে হয়!’

বলেই রায়ান লাইনটা কেটে দিলো। বর্ষা ওর কথা শুনে জাস্ট একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ফোনটা হিমুর হাতে দিলো। হিমু অবাক হয়ে গেলো। যাকে কিনা ও জীবন দিয়ে ভালোবাসে আজ তাকেই আমার জন্য হারিয়ে ফেললো। তবু এতোটা নরমাল হয়ে হাসলো কিভাবে?

হিমুর কমলা রঙের গায়ের বর্ণ নিমিষেই লাল হয়ে গেল। চোখ দিয়ে আগুন ঝরতে লাগলো। বর্ষা এহেন অবস্থাতেও একটুও বিচলিত হলো না। যা হিমুর টেনশন বেড়ে যাওয়ার আর একটা কারন।

হিমুর ফ্যামিলির সবাই বর্ষাকে খুব আদরে রেখেছে। এতো সুন্দর পুতুলের মতো একটা বউকে কে না আদরে রাখে? বর্ষাও খুব অল্প সময়ের মধ্যে সবাইকে আপন করে নিয়েছে। ও সবার সাথে এতোটাই মন খুলে কথা-বার্তা, হাসি-ঠাট্টা করে যে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর অমতে বিয়েটা হয়েছিলো।
বর্ষা ওর ফ্যামিলির সকলের সাথেও খুব নরমালি ভাবে কথা বলে। সবাই যেনো হাফ ছেড়ে বেঁচেছে ওর এভাবে খাপ খাইয়ে নেওয়া দেখে।

রাতে বর্ষা বেডে শুয়ে পড়লো আর হিমু সোফায়। রায়ানের সাথে কথা বলার পর থেকেই হিমুর মাথা গরম হয়ে আছে। ও চাইলেও আর আগের মতো নরমাল ভাবে বর্ষার সাথে মকথা বলতে বা মিশতে পারছেনা। বর্ষাও সেটা আন্দাজ করতে পেরে চুপচাপ হয়ে আছে।

হিমু রাতে রায়ানের সাথে মেসেজ করে ডেট আর জায়গাটা ফিক্সড করে ফেলল। তারপর ফোন চাপাচাপি করতে করতেই ঘুমিয়ে পরলো।

ঘুম ভাঙলো মাঝরাতে বর্ষার হাতের ছোঁয়া পেয়ে। ওর দুই গালে বর্ষা হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে লাইট অন করা ছিলো। হিমু চোখ মেলাতেই বর্ষা ওর হাত দুটো হিমুর গাল থেকে সরিয়ে নিলো। হিমু যতোটা অবাক হলো তার চেয়েও বেশি রাগান্বিত হয়ে বলল-
-‘কি হচ্ছে এসব?’
-‘কেনো তুমি বুঝতে পারছো না?’
-‘তুই আমায় তুমি তুমি করে বলছিস ক্যান?’
-‘তো কি তুই তুই করে বলবো? স্বামীকে কেউ তুইতুই করে বলে?’
-‘কেউ না বলুক, তুই বলবি! আর এখন আমায় বিরক্ত করিসনা প্লিজ একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে!’

হিমু গতকাল সারারাত জেগে ছিলো। ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল কিন্তু সেই ঘুম দিয়ে রাতের ঘুমের ঘাটতি মেটেনি। ও বর্ষাকে কথাটা বলেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

বর্ষা হিমুর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কি অপরূপ লাগছে ওকে দেখতে। হিমু অনেক বেশি লম্বা। ছিপছিপে শরীর। ভরাট ঠোঁট। গভীর তার চোখের চাহনি। ধনুকের মতো জোর ভ্রু। ও হাসলে যেনো মুক্তো ঝরে। ওকে দেখলেই মনে হয় খুব সযত্নে সৃষ্টিকর্তা ওকে তৈরি করেছে।

ওর কপালের উপর পরে থাকা চুল গুলো বর্ষা সরিয়ে দিতে দিতে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-
-‘আমি তোমার ছোঁয়া খুব মিস করছি।’
হিমু খুব ক্লান্ত হয়ে ছিলো। একে তো রাত জাগা তার উপরে আবার টেনশন। ও বর্ষার হাত দুটো চেপে ধরে বলল-
-‘প্লিজ আমায় বিরক্ত করিসনা। একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে।’
কে শোনে কার কথা। বর্ষা খুব জেদি মেয়ে, নাছোড়বান্দা! ও হিমুর পার্শে কোন মতে শুয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে কিস করতে লাগলো।

প্রথম প্রথম হিমু ওকে বাধা দিলো। তারপর বিরক্ত হয়ে উপায় না দেখে ডুব দিলো বর্ষার মাঝে।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বর্ষা ফ্রেস হলো। তারপর শাশুড়ির সাথে রান্না-বান্না করতে লাগলো।

আজ বিকেলে রায়ানের সাথে হিমুর দেখা করার কথা ছিলো। হিমু যথাসময়ে ফিক্সড জায়গায় এসে ওয়েট করছে। একটু পর রায়ান কে কল দিলো কিন্তু রায়ান রিসিভ করলোনা। পরপর কয়েকবার কল করলো। তবু রায়ান একবারও রিসিভ করলো না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো। রায়ানের কোন খবর নেই। রাগ করে হিমু বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে ধরলো। বাইক স্টার্ট করতে যাবে এমন সময় রায়ানের নাম্বার থেকে কল আসলো।

হিমু রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এক মহিলা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল-
-‘বাবা কে তুমি? রায়ানের নাম্বারে এতোবার ফোন দিচ্ছো কেনো?
-‘আমি হিমু! আপনি কে? আমার সাথে আজ ওর দেখা করার কথা ছিলো!’
-‘মহিলা টি এবার কান্না করে ফেলল। একটু পর কান্না থামিয়ে বলল-
-‘বাবা রায়ান তো আর বেঁচে নেই। আজ দুপুরে ও অস্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে। আমি ওর ফুফু।’

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here