দ্বিতীয় জন 💔,08,09

দ্বিতীয় জন 💔,08,09
Sumana Easmin
পর্ব আট

হিমু ও বর্ষা দুজনেই উঠে বসলো। ওরা ভালো করে কান পেতে শুনলো মেয়েটার কান্না ছাদ থেকে আসছে। বর্ষার ভেতর ভয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ও হিমুকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরলো। হিমু ওকে আশ্বস্ত করে বলল-
-‘ভয় পেওনা। হয়তো পাশের ফ্ল্যাটের কেউ কান্না করছে। তুমি এখানে থাকো আমি ছাদে গিয়ে দেখে আসি। ঘটনা টা কি!’
-‘তুমি আমায় রেখে যেওনা। আমিও সাথে যাবো।’
-‘এতো রাতে তোমার ছাদে যাওয়ার দরকার নেই। চুপচাপ শুয়ে থাকো। তাছাড়া তোমার ড্রেস পরতে পরতে এখন অনেক সময় লাগবে!’

বর্ষা আর কোন কথা বলল না। হিমু ছাদে যেতে লাগলো। ও যতোই সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠলো ততোই কান্নার শব্দটা অস্পষ্ট হতে লাগলো। আর ধীরে ধীরে শব্দটা অস্পষ্ট ভাবে ছাদ থেকে না এসে হিমুর রুম থেকে আসার মতো শোনাতে লাগলো। হিমু যখন একদম ছাদে গিয়ে পৌঁছুলো তখন শব্দ টা একদম স্পষ্ট ওর রুম থেকে আসার মতো শোনা গেলো। হিমু দ্রুত ছাদ থেকে ওর রুমে যেতে লাগলো।

বর্ষা কাপড়চোপর পরে নিয়ে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। একটু পর সে কান্নার শব্দটা ছাদ থেকে ওর রুমের দিকে আসতে শুনতে পেলো। ভয়ে ও ঢোক গিলতে গিলতে কাঁপতে লাগলো। আর হিমুর অপেক্ষা করতে লাগলো। একসময় ও বুঝতে পারলো কান্নার শব্দটা ঠিক ওর রুমের কর্নারের দিক থেকে আসছে। ও ভয়ে ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগলো। ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিল না। হিমুকে ডাকার মতো শক্তি ওর গলায় ছিলো না।

তারপর কয়েক সেকেন্ডর মধ্যেই শব্দটা থেমে গেলো। এতে বর্ষার ভয় কিছুটা কমে গেলো। সে মনে মনে হিমুকে গালি দিতে লাগলো। কেনো ওকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া হলো না।
সে বারান্দার দিকে হিমুর পায়ের শব্দ শুনে ধীরে ধীরে চোখ মেলাতে লাগলো। রুমের লাইট অফ দেখে সে প্রথমেই কিছুটা ভরকে গেলো। কারন রুমে তো লাইট দেওয়া ছিলো। আর হিমু যে লাইট অফ করে যায়নি সেটা ওর স্পষ্ট মনে আছে।

ওর হার্টবিট আবার বাড়তে লাগলো। ও চোখ বন্ধ করে ফেললো। হিমুর পায়ের শব্দ যখন ঠিক দরজার কাছাকাছি শুনতে পেলো তখন সে চোখ মেলালো। চোখ মেলাতেই সে দেখতে পেলো ওর সামনে এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীর থেকে রক্ত মাংস গলে গলে পরে যাচ্ছে। সে এতোটুকুই দেখা মাত্রই চোখ বন্ধ করে জোরে হিমুর নাম ধরে ডাকতে লাগলো। একবার ডাকার পরই সে সেন্সলেইস হয়ে পরে গেলো।

হিমু ছাদ থেকে কিছুদূর নেমে আসতেই শব্দটা অস্পষ্ট ভাবে শুনতে পেলো। রুমের কাছাকাছি এসে সে খেয়াল করলো শব্দটা আর নেই। সে যখন রুমের দরজার কাছে তখন বর্ষার চিৎকার শুনতে পেলো। তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে দেখলো বর্ষা সেন্সলেইস হয়ে পড়ে আছে।

বর্ষার চিৎকারে অলরেডি সবার ঘুম ভেঙে গেছে। হিমু বর্ষার মুখে পানি ছিটে দিতেই বর্ষার জ্ঞান ফিরলো। সে চোখ মেলে হিমুকে দেখেই আবার মূর্ছা গেলো। সবাই হিমুর রুমে জড়ো হলো। তারপর সবাইকে হিমু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনা খুলে বললো।

এই দুইদিন রায়ান ও তার ফুফুকে কোন ট্রিটমেন্ট করানো হয়নি। রায়ানকে ছেড়ে দেওয়া মাত্রই সে তার দলবল কে ফোন করে আসতে বলল। তারা এসে রায়ান ও তার ফুফুকে নিয়ে হসপিটালে এডমিট করালো।

কুসুমের দুই বোন বহুবার হিমু আর বর্ষা কে কল করেছে। কিন্তু ওরা কেউই কোন রেসপন্স করেনি

বর্ষার অবস্থা খুবই খারাপ। সে একটু পর পরই সেন্সলেইস হয়ে যাচ্ছে। হিমুর অবস্থা আরো বেগতিক। সে বর্ষার কাছে যেতেই পারছেনা। বর্ষা তাকে দেখা মাত্রই সেন্সলেইস হয়ে যাচ্ছে।

এভাবেই তিনদিন কেটে গেলো। কুসুমের বোনরা ও আর ওকে কল করেনা। রায়ানের ও কোন উৎপাত নেই। হিমু বুঝতে পারলো না রায়ান হঠাৎই কেনো এমন সাইলেন্ট হয়ে গেলো।

কয়েকদিন রাত থেকে হিমুর সাথে সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে লাগলো। ঠিক মাঝরাতে সে অনুভব করে কোন অশরীরী তার শরীরের সাথে আষ্ঠে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। কিন্তু সে চোখ মেলাতেই দেখে কিছুই নেই।

কয়েকদিন থেকে বর্ষা হিমুর মার কাছেই ছিলো। আজ ওর শরীর টা একটু ভালো।
দুপুরের দিকে হিমু কি যেনো লেখালেখি করছিলো।এমন সময় বর্ষা গোসল সেরে হিমুর সামনে গিয়ে বসল। ভেজা চুলে বর্ষাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। হিমু মুখ তুলে বর্ষার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো। আজ ওকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।

বর্ষা হিমুর থেকে খাতা কলম নিয়ে এক পার্শে সরিয়ে রাখলো। হিমুকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো। হিমু বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল-
-‘শরীর কেমন এখন?’
-‘ভালোই’
-‘কিছু বলবে?’
বর্ষা চুপচাপ। ওর মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।
-‘এই কয়দিন আমায় দেখে যেভাবে সেন্সলেইস হয়ে যাচ্ছিলে, আমি তো ভাবছিলাম এই সুযোগে ডিভোর্স টা না হয়ে যায়!’
-‘আমি তোমায় ডিভোর্স দিবো?’
-‘হুম!’
বর্ষা চুপ করে রইলো। কোন উত্তর দিলোনা। একটুপর সে হিমুকে বলল-
-‘আজ আমি তোমায় অনেক না বলা কথা বলতে চাই। যেগুলো আর বয়ে বেড়াতে পারছিনা।’
হিমু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো –
-‘তোমার এমন কোন না বলা কথাও আছে, যেটা আমি জানি না?’
-‘হুম, এমন অনেক কথাই আছে!’
-‘তাহলে আর দেরি কেনো? বলো শুনি!’
-‘বলবো তো অবশ্যই! তার আগে আমায় কথা দাও সব কিছু জানার পর আমায় ছেড়ে যাবেনা?

হিমু তো চিন্তাই পরে গেলো। কি এমন কথা থাকতে পারে যেটা জানার পর ও বর্ষাকে দুরে ঠেলে দিবে? কিন্তু এই বিষয় টা নিয়ে সে বেশিক্ষণ কিছু না ভেবেই বলল-
-‘তুমি কি জানোনা আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি?’
-‘জানি বিধায় তো বলছি। সবসময় তোমার এই ভালোবাসা হারানোর ভয় হচ্ছে হিমু!!’
হিমুর মাথার উপরে আকাশ ভেঙ্গে পরলো। সে এতো আশ্চর্য বোধ হয় আগে কখনো হয়নি। ও একটু বাঁকা হেসে বলল-
-‘কি বললে তুমি? আমার ভালোবাসা হারানোর ভয় হয় তোমার?’
-‘হু!’
-‘আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা!’
-‘সেই জন্যই তো আজ সব বলতে চাচ্ছি!’
-‘ঠিক আছে বলো!’

বর্ষা বলতে শুরু করল-
-‘তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি দুই জনকে খুন করেছি। অনেক অসাধ্য কাজও সাধ্য করেছি। তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি আর তোমার জন্য কি কি করেছি।’

বর্ষার এতোটুকু কথা শুনেই হিমুর মাথা ঝিমঝিম করতে লাগলো। ও মাথা এক হাত দিয়ে ধরে বলল-
-‘ওয়েট বর্ষা, তুমি কি আমার সাথে ফান করছো?’
-‘ফান করতে যাবো কেনো, সব তো সত্যিই বলছি। আমায় তুমি বলতে দাও। আগে সব শোনো তারপর যা বলার বলিও!’

To be continue….
[নেক্সট পার্টে বর্ষার সকল রহস্য উন্মোচন হবে]

দ্বিতীয় জন 💔
Sumana Easmin
পর্ব নয়

বর্ষা খুব গুছিয়ে গুছিয়ে হিমুকে কথা গুলো বলতে শুরু করলো-
-‘কলেজে যখন প্রথম দিন তোমায় দেখেছিলাম সেদিনই তোমার প্রেমে পরে গিয়েছিলো। ভেবে নিয়েছিলাম তুমি আর অন্য ছেলেদের মতোই হবে! আমি তোমার দিকে তাকালে তুমিও আমার দিকে তাকাবে। আমার সব ধরনের ইশারা ঈঙ্গিতের রেসপন্স করবে। কিন্তু না। কয়েকদিন পরেই বুঝতে পারলাম, তুমি সেরকম টা নও।
তুমি সব মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকো। শেষে উপায় না পেয়ে তোমার ফ্রেন্ড কাব্যের সাথে আমি ফ্রেন্ডশীপ করলাম। সেই সুবাদে তোমার সাথে টুকটাক কথা হতে থাকলো। এভাবে ধীরে ধীরে তোমার সাথেও ফ্রেন্ডশীপ হয়ে গেলো।

কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার কি জানো? যেকোনো ছেলেই আমায় প্রথম দেখাতেই প্রোপোজ করে ফেলতো, কিন্তু শুধু তমিই আমায় প্রোপোজ করার বদলে আমার থেকে আরো দূরে দূরে থাকতে লাগলে।

আমার কখনো কখনো মনে হতো তুমি আমায় লাইক করো, আবার কখনো কখনো মনে হতো গার্লফ্রেন্ড হিসেবে তুমি আমায় লাইক করোনা।
কয়েকমাস পর লক্ষ্য করলাম তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তুলির সাথে কথা বলো। আমার সেটা একদম সহ্য হতো না। তুলির ক্যারেক্টার ও তেমন সুবিধার ছিলো না। আমাদের ক্লাসমেট রাকিবের সাথে রিলেশন করতে করতে আবার ওর ফুফাতো ভাইয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে পরে। তারপর ফিজিক্যালি সব কিছু করে ফেলে। এতে রাকিব খুব চটে গিয়েছিল। আমার সাথে প্রায়ই তুলির বিষয় নিয়ে ও কথা বলতো, খোঁজখবর নিতো।

এরই মধ্যে আমি জানতে পারলাম তুলি নাকি তোমায় প্রোপোজ করবে। আমি তো রাগে মরে যেতে লাগলাম। রাকিব কে সবকিছু বললাম। রাকিব শুনে বলল, “হিমুর ও নিশ্চয় মত আছে! তা না হলে তুলি ওকে প্রপোজ করার সাহস পাবে কই থেকে?”

রাকিবের কথা আমার কাছে একদম সত্য মনে হতে লাগলো। কারন এতোদিনের ফ্রেন্ডশীপে আমি কখনো তোমায় প্রপোজ করার সাহস পাইনি। আর ও দুইদিনেই কেমনে পায়? শেষে রাকিব আর আমি একটা প্ল্যান করলাম। তুলির যে ফুফাতো ভাই বয়ফ্রেন্ড আছে তার সাথে আমি রিলেশন করবো।

প্লান মোতাবেক রিলেশন ও করে ফেললাম। সেই ছেলেটা আর কেউ নয়, আমাদের রায়ান। ও আমায় দেখার পর ও নিজ থেকেই আমায় প্রোপোজ করেছিলো। অমনি আমিও রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।
কয়েকদিন পর তুলি সেটা জানতে পেরে আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট করে ফেলে। আর রায়ানের সাথে আবার নতুন করে রিলেশন করতে চায়। কিন্তু রায়ান আমার প্রেমে এতোটাই ডুবে ছিলো যে ও তুলিকে বার বার রিজেক্ট করে দিতে থাকে।

প্ল্যান মোতাবেক আমি আর রাকিব ভেবেছিলাম তুলি রাগ করে রাকিবের কাছে ফিরে যাবে। কিন্তু ও সেটা না করে ও আরো তোমার সাথে ক্লোজ হতে থাকে। এতে আমার রাগ একদম মাথায় চরে যায়। তুলির উপর যতোটা না রাগ কাজ করছিলো তার চেয়েও বেশি রাগ কাজ করছিলো তোমার উপরে।
কারন তুমি ওকে আস্কারা না দিলে তো ও তোমার এতো ক্লোজ হতে পারতো না। তার উপরে আবার ও জানতো আমি তোমায় লাভ করি। সেই জন্য আরো বেশি করে তোমার গায়ে পরে পরে মিশতো।
সহ্য করতে না পেরে একদিন রাকিবকে বলেই দিলাম আমি তুলিকে শেষ করে ফেলবো। রাকিবও আমার কথায় সায় দিলো। তারপর আর কি। তুমি তো জানোই রাকিবের হাতে অনেক ছেলে পেলে আছে। ওকে রাকিব তুলে নিয়ে গেলো ওর আস্তানায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে খুন। আমি নিজে ওর গলা কেটে দিয়েছি।

রাকিব কয়েকদিনের মধ্যেই একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে পরলো। আর আমি রায়ানের সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করতে লাগলাম। তারপর ধীরে ধীরে খেয়াল করলাম তুমি আমার আর রায়ানের বিষয় টা নিয়ে খুবই বিরক্ত হয়ে যাচ্ছো। ঠিকঠাক মতো আমার সাথে মিশছো না। ক্লাসেও আসছো না।

কিছুদিন পর হুট করেই একদিন আমায় প্রোপোজ করে ফেললে। আমি কতোদিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম সেই দিনটির জন্য। অবশেষে পেয়েও গেলাম। আমি তোমায় একসেপ্টও করে নিতাম। কিন্তু যখনি মনে হতো তুমি তুলির সাথে খুব ক্লোজলি মিশতে তখনি মাথায় রাগ উঠে যেতো। সে কারনে তোমায় আর একসেপ্ট করতে পারিনি। আমি তোমায় বুঝিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম যে ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে দেখলে কেমন লাগে।

তারপর আর বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলোনা। তুমি সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে আমার ফ্যামিলিকে রাজি করিয়ে আমায় বিয়ে করে ফেললে।

তোমায় কষ্ট দেওয়ার কারনেই আমি রায়ান কে ভালোবাসার নাটক করেছিলাম। বিয়ের পর শুধু একটা কারন খুঁজছিলাম। কিভাবে রায়ানের সাথে ব্রেকাপ করা যায়। তারপর একদিন কারন পেয়ে গেলাম আর ব্রেকাপও করে ফেললাম।’

হিমু এতোক্ষণ সব চুপচাপ শুনছিলো। তারপর ধীর গলায় বলল-
-‘আমি তোমায় আমার ভালোবাসার কথা বলতে পারছিলাম না। ঐ সময় তুলি আমার গায়ে পরে কথা বলতে আসতো। আমি ভাবলাম তুলি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই ওকে দিয়ে তোমায় ভালোবাসার কথা বলিয়ে দিবো। ওর সাথে আমি যতো কথা বলেছি সব তোমায় নিয়ে। অথচ…..
-‘কেনো? আরেকজনকে দিয়ে কেনো বলাতে হবে? আমি কি তোমার সাথে ক্লোজ ছিলাম না?’
-‘হুম ছিলে। কিন্তু আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে তুমি আমায় লাভ করো কি না সেইটা!’
-‘হুম, হয়েছে। নিজের কি মাথা নেই? নিজে বুঝে নিতে পারোনা? মানুষের মুখের কথায় তোমায় বুঝে নিতে হবে?’
হিমু চুপ।
বর্ষা আবার বলতে শুরু করলো-
-‘সেদিন রাতে তুমি রায়ানের সাথে দেখা করার জন্য মেসেজ করেছিলে। তুমি ঘুমিয়ে পড়ার পর আমি মাঝ রাতে সেগুলো পড়ে নিয়েছিলাম।
তারপর তুমি সন্ধ্যার পরও যখন বাসায় ফিরলেনা তখনি আমি রায়ানের চাল ধরতে পেরেছিলাম। রাকিবকে সব খুলে বললাম। তারপর রায়ানের ফুফুর এসিসটেন্ট (হাজরা) এর নাম্বার আমরা কালেক্ট করলাম। কালেক্ট করতে অনেক দেরী হওয়ায় ঐ শালা তোমার উপর বেশিক্ষণ টর্চার করার সুযোগ পেয়েছিল। আমরা অতো রাতে রায়ানের ওখানে যেতেও পারতাম না। তাই ঐ উপায় বের করে নিয়েছিলাম।

হাজরা এখন আমাদের দলের লোক। ওনাকে আমরা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি। কুসুম ও তার দুই বোনকে উনিই ম্যানেজ করেছিলেন।

এখন যেটা বলবো সেটা শুনে তুমি আরো চমকে যাবে।
কুসুমকেও আমিই হত্যা করছি। ও আমার কাছ থেকে তোমায় ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল।’

হিমু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
-‘তাহলে কুসুম আমায় তোমার ব্যাপারে কিছু বলেনি কেনো?’
-‘কারন আমি তাদের নিষেধ করেছিলাম। শেষে তুমি সব জেনে গিয়ে আমায় ত্যাগ করো সেই ভয়ে।’
হিমু বর্ষার কাছ থেকে উঠে গিয়ে জানালার পার্শে দাড়ালো। একটুপর বর্ষাও হিমুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। দুইজন চুপচাপ। হিমুর নিরবতা বর্ষা সহ্য করতে না পেরে নিশব্দে কান্না করতে লাগলো। হিমু বর্ষার দিকে না তাকিয়েই বলল-
-‘তাহলে এখন সবকিছু বললে কোন সাহসে?’
-‘আমি আর এইসব বয়ে বেড়াতে পারছিনা। সেদিন রাতে যে মেয়েটিকে দেখে আমি ভয়ে সেন্সলেইস হয়ে গিয়েছিলাম, তার মুখে কুসুম আর তুলির ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। এইজন্য আমি আরো বেশি ভেঙে পড়েছি।’
কথাটা বলেই বর্ষা চোখ মুছতে লাগলো। একটুপর আবার বলল-
আমি রায়ান ও তার ফুফুকেও অনেক বড় শাস্তি দিয়েছি। যখন শুনলাম রায়ান তোমায় অমানবিক ভাবে পিটিয়েছে তখন আমার মাথার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। রায়ানের ফুফুকে হাজরার মাধ্যমে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আমাদের আস্তানায় এনেছিলাম। ওনাকে আমি নিজ হাতে অনেক কঠিন কঠিন ভাবে আঘাত করেছি। আর রায়ানের তো একটা চোখ নষ্ট করে…..
-‘বর্ষা প্লিজ থামো। আমি আর এইসব নিতে পারছিনা। আমি আর কিচ্ছু জানতেও চাইনা!’
হিমুর মুখ চোখ লাল হয়ে গিয়েছে। হাত দুটো মৃদু মৃদু কাঁপছে। বর্ষা কাঁদতে কাঁদতে বলল-
-‘আমি জানতাম হিমু, তুমি সবকিছু জানার পর আমায় আর মেনে নিতে পারবেনা। আমি জানতাম।’
হিমুকে চুপচাপ থাকতে দেখে বর্ষার ভেতর আরো বেশি ভেঙে গেলো। সে কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে বলল-
-‘আমি সত্যিই তোমার ভালোবাসা পাওয়ার অযোগ্য। আমি যে পাপ করেছি তার শাস্তি আমি নিজেই নিজেকে দিবো। তোমার কাছ থেকে দূরে থেকে।’
কথাটা বলেই বর্ষা ওর রুমে চলে গেলো। কাপড়চোপর গোছাতে লাগলো। কয়েকদিন থেকে টানা সেন্সলেইস হয়ে পরে থাকায় ওর শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে গেছে। আজকে এইসব বলতে গিয়ে ওর মাথাটা আরো ভারী হয়ে গেছে। টলমল করছে। কখন জানি মাথা ঘুরে পরে যায় তার ঠিক নেই।

একটুপর হিমু রুমে আসলো। বর্ষাকে কাপড়চোপর গোছগাছ করতে দেখে সে বলল-
-‘আমি তো কিছুই বললাম না। এরই মধ্যে তুমি তোমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলে?’
-‘আমি এমন কিছু জানতে চাইনি যেটা বলতে তোমার ঘন্টার পর ঘন্টা ভাবতে হবে হিমু!’

হিমু বর্ষার রাগ অভিমান মুহুর্তেই বুঝতে পারলো। সে আর একমহুর্ত দেরী না করে বর্ষাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। বর্ষা ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। হিমু আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল-
-‘তুমি কি ভাবছো তুমি শুধু একাই আমায় ভালোবাসো? আমি বাসিনা?’
বর্ষা চুপ করে আছে।
হিমু ওকে ছেড়ে দিয়ে বলল-
-‘তুমি যদি আরো দশটা খুন করো, আরো হাজার টা পাপ করো তবু আমি তোমায় ত্যাগ করতে পারবোনা। কারন আমি তোমায় অন্ধের মতো ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি।’

বর্ষা খুশিতে কান্না করতে লাগলো। হিমু দেরী না করে দরজা লক করে এসে বর্ষার সাথে গভীর মিলনে আবদ্ধ হলো। একটুপরই ওরা খেয়াল করলো ছাদ থেকে টপটপ করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here