দোলনচাঁপার_টানে,পর্ব:১০,১১

দোলনচাঁপার_টানে,পর্ব:১০,১১
দেবারতি_ধাড়া
দশম_পর্ব

“জানো সৌহ, আজ আমি স্কুল থেকে ফেরার সময় গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তোমাকে কাল বললাম না যে আমি এই লোডশেডিং এর ব্যাপারে কথা বলবো ওনাদের সাথে। পঞ্চায়েত প্রধান বললেন লিখিত অভিযোগ জানাতে, তা না হলে নাকি আমার অভিযোগটি গ্রহণীয় হবে না! আমি ঠিক করেছি আমি লিখিত দরখাস্ত জমা দেবো ওনাদের কাছে।

তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে সৌহ। খুব মিস করছি তোমাকে! তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো। সারা সপ্তাহ আমি এই শনিবার আর রবিবার আসার জন্যই অপেক্ষা করি, কখন তুমি আসবে আর দুটো দিন তোমার সাথে কথা বলতে, একসাথে থাকতে পারবো সেই জন্য। আমিতো জানি তুমি এসে গেলে আমি আর লিখতে পারবোনা.. তুমি ভীষণ জ্বালাবে আমাকে! তাই তুমি এসে পৌঁছানোর আগেই ডায়েরিটা নিয়ে বসে পড়লাম। জানো আজ আমার গাছে অনেকগুলো ফুল ফুটেছে। আমি কয়েকটা ফুল তুলেও এনেছি। আমিতো জানি তোমারও দোলনচাঁপা ফুল খুব ভালো লাগে। তাই আমি আমার খোঁপাতেও দোলনচাঁপা ফুল লাগিয়েছি। তুমি আমার শরীর আর আমার চুল থেকে দোলনচাঁপা ফুলের ঘ্রাণ নাও। মিশে যেতে চাও আমার শরীরের মধ্যে। তুমি পাগল করে দাও আমাকে তোমার আদর, স্পর্শ আর ভালোবাসা দিয়ে.. সারা সপ্তাহ পর শনিবার আর রবিবার তোমাকে কাছে পেতে আমারও যে ভীষণ ভালো লাগে সৌহ.. ওই বুঝি তুমি এলে! কলিংবেলটা বাজছে! এসে তুমি এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে পারোনা সৌহ! যতক্ষণ না গেট খুলতে যাই ততক্ষন তুমি বেল বাজিয়েই চলো! আসছি দাঁড়াও…”

ডায়েরিটা পড়তে পড়তে মেঘা আর সৌহার্দ্যের সমস্তকিছুই ভেসে আসছিলো কিঙ্কিণীর চোখের সামনে। মেঘা ডায়েরিটা সযত্নে তুলে রেখে দৌড়ে গিয়ে গেট খোলার সাথে সাথেই ওকে জড়িয়ে ধরলো সৌহার্দ্য। তারপর ওর শরীর আর চুল থেকে প্রাণ ভরে ঘ্রাণ নিতে থাকলো দোলনচাঁপা ফুলের..

-আহ! সৌহ! ছাড়ো আমাকে! গেটটা তো বন্ধ করতে দাও!
-না মেঘা! আমি ছাড়বোনা তোমাকে… কতদিন পর তোমাকে কাছে পেলাম বলতো? তুমি জানো তোমাকে ছাড়া এই এক সপ্তাহ থাকতেই আমার কাছে এক বছরের মতো লাগে! আগে একটু জড়িয়ে থাকতে দাও তারপর ছাড়বো!
-ঠিক আছে.. আগে আমাকে গেটটা তো বন্ধ করতে দাও! তারপর তুমি যতক্ষন খুশি জড়িয়ে থাকো আমাকে। কেউ এসে পড়লে কি ভাববে বলতো?
-এখানে কে আসবে মেঘা? কেউ দেখতে আসবেনা আমাদের! এখানে তো শুধু মাঝে মাঝে একটু দুলালবাবুই আসেন দেখাশোনার জন্য। কিন্তু উনি তো জানেন যে শনিবার আর রবিবার আমি তোমার কাছে থাকি.. তাই উনি তো আসেননা শনি-রবিবার। তাই এখন আর কেউ আসার নেই, আর তাই আমি তোমাকে ছাড়বোও না!

ভোরের ট্রেনেই সৌহার্দ্য প্রত্যেক শনিবার চলে আসে ফুলতলি গ্রামে মেঘোমালার কাছে এই স্কুল বাড়িটায়। শনিবার স্কুলের হাফছুটি থাকে। তাই আজ সৌহার্দ্যই রান্না করে খাওয়ায় মেঘাকে। এই দুটো দিন মেঘার রান্নার ছুটি থাকে। তাই সৌহার্দ্যর আদরের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কোনোরকমে একটু ব্রেকফাস্ট করে নিয়েই রেডি হয়ে স্কুলে বেরিয়ে গেলো মেঘা। সৌহার্দ্য রান্না করতে শুরু করে দিলো। এই দুটো দিন মেঘা আর সৌহার্দ্য দুজনেই ভীষণ আনন্দে কাটায়। সৌহ তো মেঘাকে কাছ ছাড়াই করেনা এক মুহূর্তের জন্যও। মেঘাও সারাক্ষণ মিশে থাকে সৌহার্দ্যের বুকের মধ্যে। স্কুল থেকে ফিরে লাঞ্চ করে নিয়ে মেঘা সৌহার্দ্যের বুকে মাথা রেখে একটু শুয়েছিলো। সৌহার্দ্যকে কাছে পেলে মেঘা এক্কেবারে শান্ত হয়ে যায়। তাই আজও চুপটি করে শুয়েছিলো মেঘা..

-কী হয়েছে মেঘা? তুমি এরকম চুপ করে আছো কেন সোনা? মন খারাপ নাকি?
-না সৌহ.. মন খারাপ কেন হবে? তোমাকে কাছে পেলে তো আমার মন সবচেয়ে বেশি ভালো হয়ে যায়.. মনে হয় তোমাকে এখানেই আটকে রেখে দিই.. ছাড়তেই ইচ্ছা করেনা আমার!
-কে ছাড়তে বলেছে? আমি তো তোমার এখানেই থেকে যেতে চাই.. রেখে দাওনা আমায়!
-উমম্! রাখতেই তো চাই.. কিন্তু তোমাকে না! তোমার বেবীকে..

বলেই মেঘা নিজেকে মিশিয়ে নিলো সৌহার্দ্যের বুকের মধ্যে। সৌহার্দ্যও আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো মেঘাকে। সৌহার্দ্য নিজেকে উজাড় করে দিলো মেঘোমালার অভ্যন্তরে.. তারপর ক্লান্ত হয়ে সৌহার্দ্য শুয়ে পড়লো মেঘার বুকের ওপরেই।

এভাবেই আদরে, ভালোবাসায় দুটো দিন কেটে গেলো ওদের। সোমবার ভোরের ট্রেনেই সৌহার্দ্য রওনা হলো কলকাতার উদ্দেশ্যে.. এই দুটো দিন দুজন দুজনকে নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে মেঘার ডায়েরিটা আর পড়াই হলোনা সৌহার্দ্যের। আর এই দুদিন ওরা নিজেদের বেবী প্ল্যানিং নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলো যে মেঘা আর সৌহার্দ্যর মধ্যে গ্রামের বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নিয়েও সেভাবে আর কোনো কথাই বলা হয়নি। মেঘা শুধু এটুকু বলেছিলো, ও সরকারকে বারবার বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নিয়ে চিঠি লিখে অভিযোগ জানাবে। আর সৌহার্দ্য বলেছিলো ও সবসময় মেঘার পাশে আছে আর থাকবেও। তাই এই ক্ষেত্রে যা যা করণীয় মেঘা যেন তাই তাই-ই করে, তাতে যা সাহায্যের দরকার হবে তার সবটাই সৌহার্দ্য করবে। সৌহার্দ্য বেরিয়ে যাওয়ার পর মেঘা খাতা পেন নিয়ে দরখাস্ত লিখতে বসে পড়লো। তারপর সেটা নিয়ে আগে পঞ্চায়েতে জমা দিয়ে তারপর স্কুলে ঢুকলো। মেঘা এই ব্যাপারটা নিয়ে স্কুলের সবার সাথেও কথা বলেছিলো, কিন্তু কেউই সেভাবে সহযোগিতা করেনি মেঘাকে। বরং তারা বারণই করেছিলো এসব ঝামেলায় না জড়াতে। সবাই বলেছিলো, আগেও এরকম অনেকেই গ্রামের বিদ্যুৎ পরিষেবা অটুট রাখার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলো। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। তাই মেঘাও এসবকিছু বেকারই করছে। কোনো লাভ হবেনা তাতে। কিন্তু মেঘা সেসবের তোয়াক্কা না করে নিজেই দায়িত্ব নিয়েছিলো সবকিছুর…

এই সবকিছুর মধ্যে মেঘা নিজের কথা ভাবতেই ভুলে গিয়েছিলো। নিজের শরীরের যত্ন নিতেও ভুলে গিয়েছিলো, তাই নিজের শেষ ঋতুস্রাবের তারিখটাও বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো মেঘা। তার প্রায় মাস দুয়েক পর যখন নিজের শরীরের কিছুটা পরিবর্তন অনুভব করলো, তখনই ওর মনে পড়ে গেলো সেবারে সৌহার্দ্যের সাথে ওর বেবী প্ল্যানিং এর কথাটা। সেটা মনে করেই মেঘার মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। পরের দিন সকালেই বাথরুমে গিয়ে যখন ছোট্ট ওই যন্ত্রটার সাহায্যে ওর মাতৃত্বের কথা প্রথম জানতে পারলো, তখনই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো মেঘা। সঙ্গে সঙ্গে ঘরে গিয়ে নিজের ফোনে ডায়াল করলো সৌহার্দ্যের নাম্বারটা। ঘুমন্ত সৌহার্দ্য এত ভোরে মেঘার ফোন দেখে অবাক হয়ে গেলো। ঘুম চোখেই ফোনটা রিসিভ করে চিন্তিত গলায় সৌহার্দ্য বললো,

-কী হয়েছে মেঘা? এত সকালে ফোন করলে? কিছু কী হয়েছে?!

ফোনটা ধরেই সৌহার্দ্যর গলা শুনেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো মেঘা..

-কী হয়েছে সোনা বলো আমায়? তুমি কাঁদছো কেন বাবু? আমাকে দেখতে ইচ্ছা করছে? আমি যাবো? নাকি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো? কী হয়েছে বলো আমাকে?

কান্না জড়ানো গলাতেই মেঘা বলে উঠলো,

-আমি মা হতে চলেছি সৌহ.. আজ আমি খুব খুশি… খুব খুব খুব খুশি আমি…
-সত্যি বলছো তুমি মেঘা?
-সত্যি সত্যি সত্যি.. তিন সত্যি… থ্যাঙ্কু সৌহ.. থ্যাঙ্কু সো মাচ…
-আমি আজই তোমার কাছে আসছি মেঘা.. আমি গিয়েই তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো.. এখন কিন্তু তোমাকে খুব সাবধানে থাকতে হবে মেঘা.. ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও করতে হবে! এখন যে তোমার মধ্যে আরও একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে। এখন অন্তত নিজের শরীরের একটু যত্ন নিও..

সেদিন ভোরের ট্রেনেই ফুলতলি গ্রামে এসে মেঘাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলো সৌহার্দ্য। ডাক্তারের পরামর্শ মতো সমস্ত ওষুধপত্র, পুষ্টিকর খাবার সমস্ত কিছু কিনে দিয়ে একটা দিন মেঘার সাথে কাটিয়েই আবারও কলকাতায় ফিরে গিয়েছিলো সৌহার্দ্য। কিন্তু সেদিনই মেঘার থেকে কথা আদায় করে নিয়েছিলো সৌহার্দ্য, যে এখন সৌহার্দ্য কলকাতায় ফিরে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু প্রত্যেক শনিবার এসে সোমবার যেমন ফিরে যায়, এখন সেরকম চলতে থাকলেও, মেঘা আর সৌহার্দ্যর সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দু-তিন মাস আগে সৌহার্দ্য নিজের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এই গ্রামে এসেই থাকবে।ষার এখানেই কোনো একটা কাজ জোগাড় করে নেবে। আর তাতে মেঘার কোনো আপত্তিই সৌহার্দ্য শুনবেনা! মেঘাও নিজের সন্তানের কথা ভেবে রাজি হয়ে গিয়েছিলো তাতে..

মেঘার চিঠি এবং দরখাস্ত মারফত অভিযোগ পাওয়ার পর পঞ্চায়েতের কাছ থেকে খুব বেশি সাহায্য না পাওয়ায় মেঘা আরো উঁচু তলার সঙ্গে কথা বলে এবং তারপর বিদ্যুৎ পরিষেবা কিছুটা হলেও অটুট রাখা গেলো কিছুদিনের জন্য। তাই বাচ্চারা প্রত্যেকদিন সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসতো। বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হওয়াটা একটু কম হতে লাগলো। বাচ্চারা নিয়মিত পড়া করে স্কুলে আসতেও শুরু করলো। মেঘাও বেশ আনন্দিত হলো বাচ্চারা ওর কথা শুনে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছে দেখে। গ্রামের কিছু মানুষ এসে মেঘাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন ওনাদের গ্রামের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে এত কিছু ভাবার জন্য। তাই অল্পদিনের মধ্যেই মেঘা স্কুলের বাচ্চাদের প্রিয় মেঘা দিদিমণি হওয়ার সাথে সাথেই গ্রামের মানুষের কাছেও ভীষণ প্রিয় হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু প্রথম প্রথম বেশ কিছুদিন বিদ্যুৎ পরিষেবা অক্ষুন্ন থাকলেও, কিছুদিন পর থেকে আবারও সেই আগের মতোই লোডশেডিং হতে শুরু করে সন্ধ্যের পরে। তাই দেখে মেঘা আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। আর গ্রামের বিদ্যুৎ পরিষেবা অক্ষুন্ন রাখার জন্য আবারও ওপর মহলের সাথে কথা বলতে তৎপর হয়ে উঠলো…

ক্রমশ…

এই পর্বটি কঠোরভাবে #প্রাপ্তমনস্কদের_জন্য..

#দোলনচাঁপার_টানে
#দেবারতি_ধাড়া
#একাদশ_পর্ব

কোকো চিৎকার করতে করতে পাশের ঘর থেকে এই ঘরে দৌড়ে আসায় ঘোর কাটলো কিঙ্কিণীর। এতক্ষণ কিঙ্কিণী যেন কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। ঘোর কাটতে কিঙ্কিণী দেখলো সন্ধ্যে হয়ে গেছে। কোকোর হয়তো খিদে পেয়ে গেছে, তাই জন্যই এমন চিৎকার করছে। কিঙ্কিণী ডায়েরিটা টেবিলের ওপর উল্টে রেখে পাশের ঘরে কোকোকে খেতে দিতে গেলো। তারপর আবারও এসে ডায়েরিটা নিয়ে বসলো।

“জানো সৌহ.. তোমার বেবি কিন্তু খুব দুষ্টু হয়েছে! সারাক্ষণ আমাকে লাথি মারে! আর তোমাকে দেখতে চায়.. ও কিন্তু ঠিক বুঝতে পারে তোমার আসার সময় হয়ে গেছে! আর সেই জন্যই এই শুক্রবার দিনটা এলেই আমার শরীরটা বেশি অস্থির হয়ে পড়ে। আমি জানি ও আসবে বলে তুমিও খুব চিন্তিত! আর তাই জন্য এখন বেশি বেশি করে কাজ করছো আর টাকা সঞ্চয় করছো। আমি জানি আমার মতো তুমিও ওকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে। এমনিতেই তুমি আমার শরীর নিয়ে খুব চিন্তা করো। তাই আমার শরীরের কোন সমস্যা হলেও তোমাকে বলতে ইচ্ছা করে না। আমি জানি আমার কোনো সমস্যার কথা শুনলেই তুমি অত দূর থেকে দৌড়ে এখানে চলে আসবে! তাই জন্যই আমি তোমাকে সবকিছু জানাতে চাইনা! আর একটা ব্যাপার নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত সৌহ..
কিন্তু আমি তোমাকে এখনই এই সবকিছু বলতে চাই না। কারণ তুমি আবার এটা নিয়েও চিন্তা করবে। আমি ডায়েরিতে সব লিখে রাখছি, তুমি যখন আসবে তখন পড়ে নিও। আমি জানি তুমি এখন আমাদের বেবিকে নিয়ে খুব চিন্তিত, আর তাই জন্যই এই ডায়েরিটা পড়ার কথা এখন আর তোমার মনেই থাকে না। আমিও এখনই চাই না যে তুমি এই ডায়েরিটা পড়ো। আগে তুমি আমার এখানে একেবারে চলে এসো.. আমরা যখন একসাথে এক বাড়িতে থাকবো, তখন তুমি এই ডায়েরিটা পড়বে.. আমি নিজেই তোমাকে ডায়েরিটা পড়ার জন্য বলবো। ততদিন এই লড়াইটা শুধু আমার একারই থাক..

আমি লিখিত দরখাস্ত আর অভিযোগ জমা দেওয়ার পর কিছুদিনের জন্য বিদ্যুৎ পরিষেবা অব্যাহত থাকলেও তার কয়েক মাস পরে আবারও সেই আগের মতোই বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করেছিলো সন্ধ্যার পর। সেজন্যই আমি আবারও অভিযোগ জানিয়েছিলাম প্রশাসনের কাছে। কিন্তু ওনারা আমাকে জানালেন যে ওনারা নাকি সবরকম ব্যবস্থা করেছেন যাতে গ্রামের বিদ্যুৎ পরিষেবা অব্যাহত থাকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা সেটারই খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছেন ওনারা।

ওনাদের সাথে সাথে আমিও আমার মতো করেই খোঁজ নিতে শুরু করেছিলাম যে কেন প্রশাসন দায়িত্ব নিচ্ছেনা। কেনই বা এভাবে বারবার বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সন্ধ্যার পর। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সন্ধ্যার পর থেকেই নাকি বিভিন্ন রকম অসামাজিক কাজকর্ম হয় এই গ্রামে। আর আমি যে জানতে পারি সেটা ওই সমাজবিরোধী লোকেরাও বুঝতে পেরে যায়। তাই জন্য আমাকেও অনেকেই ফোন করে থ্রেট করেছে। আমাকে খুনের হুমকি দিয়েছে। আমাকে বলেছে আমি যদি এসমস্ত খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ না করি তাহলে আমাকে মেরে ফেলবে! আমার বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দেবে! আমি যেন এই সমস্ত বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামাই! কিন্তু সৌহ আমি সবকিছু জেনেও কি করে চুপ থাকতে পারি বলতো? আমার জীবনের ঝুঁকি আছে বলে আমিতো আর গ্রামের মানুষের ক্ষতি করতে দিতে পারিনা! আমি ঐ বদমাশ লোক গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবো থানায়। তাতে আমার যা ক্ষতি হওয়ার হবে!
মাঝেমাঝেই আমাকে কেউ আননোন নাম্বার থেকে ফোন করে উল্টাপাল্টা কথা বলছিলো! কাল রাতেও আবার এসেছিলো ওই বদমাশ লোক গুলোর ফোন। আমি যেন এসবের মধ্যে আর না থাকি। কিন্তু আমাকে যে থাকতেই হবে! আমি আজ আবার দরখাস্ত লিখতে বসবো.. অভিযোগ জানাবো ওদের নামে! আর এই নাম্বার গুলোকেও থানায় জমা দেবো আমি। দেখি ওরা আমার কি ক্ষতি করতে পারে! প্রশাসনের কাছেও ওদের নামে অভিযোগ জানাবো আমি।”

ঠিক সেই মতোই মেঘা ওই সমাজবিরোধী বদমাশ গুন্ডা গুলোর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানালো গ্রামের পুলিশ স্টেশনে, আর সেইসঙ্গে প্রশাসনের কাছেও। তার কিছুদিনের মধ্যেই কয়েকজন সমাজ বিরোধীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও গ্রামের বিদ্যুৎ পরিষেবা অব্যাহত থাকছিলোনা। হঠাৎই একদিন রাত্রিবেলা মেঘা ওর বাড়ির বাগানের দিক থেকে কিছু লোকের কথা বলার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলো। তাই জন্য ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে টর্চটা হাতে নিয়েই দেখতে গেলো কারা কথা বলছে। সেদিনও স্কুল থেকে ফেরার পরেই লোডশেডিং হয়ে গিয়েছিলো। বাগানের দিকে গিয়ে দেখলো বেশ কিছু লোক কিছু বেআইনি অস্ত্র-শস্ত্র এবং বেআইনি জিনিসপত্র দেওয়া-নেওয়া করছিলো। তখনই সেসব দেখে মেঘা চেঁচিয়ে উঠেছিলো,

-একী! কে আপনারা? কী করছেন এখানে? এবার বুঝেছি! এই কারণেই আপনাদের জন্যই প্রত্যেকদিন সন্ধ্যেবেলার লোডশেডিং করানো হয় তাইনা? যাতে আপনারা সবার চোখের আড়ালে অন্ধকারে আপনাদের অসামাজিক বেআইনি কাজকর্মগুলো চালিয়ে যেতে পারেন! আর সেই কারণেই আমি এত করে চেষ্টা করা সত্ত্বেও এই গ্রামে বিদ্যুৎ পরিষেবা অব্যাহত রাখতে পারছিনা। আপনাদের কী কোনো লজ্জা নেই? আমি আপনাদের নামে থানায়, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর পরেও আপনারা এই সমস্ত বেআইনি কাজ-কর্ম করে চলেছেন? আপনাদের মতো এইরকম কিছু সমাজবিরোধী লোক কিছুদিন আগে গ্রেফতার হয়েছে সেটা দেখেও আপনাদের কোনো ভয় নেই তাইনা? কী ভেবেছিলেন আপনারা? আমাকে ফোন করে ভয় দেখালেই, খুনের হুমকি দিলেই আমি চুপ করে থাকবো? সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করবো? আর আপনাদের বিরুদ্ধে আমার সব অভিযোগ আমি তুলে নেবো? কক্ষনো না! আপনারা যদি ভেবে থাকেন যে ফোন করে খুনের হুমকি দিলেই আমি আপনাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আমি তুলে নেবো সেটা আপনাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা! আমি আবারও আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবো থানায়!

-খুব বাড় বেড়েছিস না তুই? তুই আমাদের নামে অভিযোগ করবি? কি করে করবি রে এই গ্রামের মেঘা দিদিমণি? আজই তো তোর শেষ দিন রে! খুব শখ হয়েছিলো না লোকের কাছে, এই গ্রামের মানুষের কাছে ভালো সাজার? স্কুলের বাচ্চাদের সাথে সাথে গ্রামের মানুষের মেঘা দিদিমণি হয়েছিলি তাইনা? তোর সব ভালোমানুষী আজকেই শেষ করে দেবো! শুনেছি নাকি তোর পেটে একটা বাচ্চাও আছে! তোর ওই পেটের বাচ্চার আর এই পৃথিবীর আলো দেখা হবেনা! এই পৃথিবীর আলো দেখার অনেক মাস আগেই আজই তোর পেটের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে তোর বাচ্চা! আহারে! তোর দোষের জন্য তোর বাচ্চাটাও শেষ হয়ে যাবেতো রে!

বলেই একজন গুন্ডা এগিয়ে এলো মেঘার দিকে।

-না! দয়া করে আমার বাচ্চাটার কিছু করবেন না! দয়া করে ছেড়ে দিন আমাকে… আমার বাচ্চাটার কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ… আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ আমি তুলে নেবো। আমি কারোর কাছে আপনাদের নামে কিছু বলবো না… দয়া করে আমাকে মারবেন না! আমার বাচ্চাটা তো কোনো দোষ করেনি.. দয়া করে ওকে এই পৃথিবীর আলো দেখতে দিন..
না এগোবেন না! এগোবেননা বলছি আমার দিকে!

কিন্তু মেঘার কোনো কথা গ্রাহ্য না করেই লোকটা এগিয়ে এলো মেঘার কাছে। একটানে মেঘার শরীর থেকে টেনে খুলে ফেললো মেঘার শাড়িটা! মেঘা আত্মরক্ষার জন্য হাতে থাকা টর্চটা দিয়েই লোকটার মাথায় সজোড়ে আঘাত করলো। সাথে সাথেই লোকটা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো মাটিতে। তারপরই যেন লোকটা আরও বেশি হিংস্র পশুর মতো হয়ে উঠে ঝাঁপিয়ে পড়লো মেঘার শরীরের ওপর। ধস্তাধস্তির কারণে মেঘা পড়ে গেলো মাটিতে। মেঘার শরীর থেকে ব্লাউজটা টেনে খুলে দিলো ওই লোকটা। নিজের বলিষ্ঠ শক্ত হাত দিয়ে খামচে ধরলো মেঘার স্তনযুগল। ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো মেঘা। পাগলের মতো হাত পা ছুঁড়তে লাগলো ওই জানোয়ার গুলোর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলোনা.. মেঘার পরিহিত সায়া টেনে ছিঁড়ে ফেলে উন্মুক্ত করলো মেঘার যোনিপথ। ওই লোকটি বারংবার মেঘার যোনিপথে নিজের যৌনাঙ্গ চালনা করে নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাতে লাগলো। তাতেও শান্তি হলোনা ওই লোকটির! যে টর্চটা দিয়ে লোকটির মাথায় মেঘা আঘাত করেছিলো, সেই টর্চটাই মেঘার যোনিপথে চালনা করে অমানবিক, পাশবিক অত্যাচার করতে শুরু করলো মেঘার ওপর…

মেঘা বারবার হাত জোড় করে ওই সমাজবিরোধী গুলোর কাছে ওকে আর ওর বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাকুতি-মিনতি করতে থাকলো। কিন্তু তা সত্ত্বেও মেঘার কোনো কথাই শুনলোনা ওই সমাজবিরোধীর দল। মেঘার শরীরের উপর একের পর এক ঝাঁপিয়ে পড়লো ওখানে উপস্থিত থাকা সমস্ত লোক। তারপর মেঘার শরীরটাকে শেয়াল-কুকুরের মত ছিঁড়ে খেতে লাগলো ওই জানোয়ার গুলো। একের পর এক ওই জানোয়ার গুলো নিজের যৌনাঙ্গ চালনা করতে লাগলো মেঘার অভ্যন্তরে। মেঘা নিজের বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য বারবার চিৎকার করে আর্তনাদ করতে লাগলো। কিন্তু কোনো ভাবেই নিজেকে বা নিজের বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারলোনা। প্রায় আট-নয়জন পুরুষের অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের ফলে মেঘার শরীরে আর একটুও শক্তি অবশিষ্ট থাকলোনা… শেষবারের মতো কঁকিয়ে উঠে চিৎকার করে আর্তনাদ করে উঠে পাড়ি দিলো চির নিদ্রার দেশে। মেঘার শরীর থেকে নির্গত রক্ত বন্যায় ভেসে গেছে সারা বাগান..

তার মধ্যেই একজন লোক বলে উঠলো,

-এ ভাই! মনে হচ্ছে মালটা মরেই গেছে!

পাশ থেকে আরও একজন বলে উঠলো,

-হ্যাঁ হ্যাঁ! মরে তো অনেক্ষণ আগেই গেছে! আমি তো ওর ওপর উঠেই বুঝেছিলাম যে মালটা মরে গেছে! তবে যাই বলিস ভাই! মরে গিয়েও মালটা যা সুখ দিয়েছে না! উফ! হেব্বি খাসা মাল ছিলো কিন্তু! পেটের বাচ্চাটাও শেষ হয়ে গেছে একেবারে! দেখছিসনা কেমন রক্ত বন্যা বইছে মালটার শরীর থেকে!
-এখন এই মালটার বডিটাকে নিয়ে করা যায় সেটা বল?
-কী আবার করবি? সামনের এই পুকুরটায় ভাসিয়ে দিলেই তো হয়!
-না না! এত মাথা মোটা কেন তুই? পুকুরে ফেললে দুদিন পরই তো লাশটা ভেসে উঠবে! তখন আবার তদন্ত হবে! তার চেয়ে বরং মালটাকে এখানেই পুঁতে দিই! কেউ জানতেও পারবেনা! আর এই অন্ধকারে এদিকে কেউ আসবেওনা! আজ রাতে তো আর কারেন্ট আসারও কোনো চান্স নেই! চল চল মাটি খোঁড়ার চেষ্টা কর সবাই! কাজে লেগে পর ভাই! এখানে এই মালটাকে পুঁতে দিয়ে আমরা কিছুদিনের জন্য এই গ্রামের বাইরে গিয়ে গা ঢাকা দেবো! তাহলে আর আমাদের কেউ সন্দেহও করতে পারবেনা! আর জানতেও পারবেনা এই মালটা কোথায় গেছে! কিংবা কীভাবে নিখোঁজ হয়েছে!

এভাবেই মেঘার ধর্ষিত এবং মৃত দেহটাকে বাগানে পুঁতে দিলো সমাজবিরোধীর দল। এতটাই নিখুঁত ভাবে মেঘার দেহটাকে বাগানের মাটির মধ্যে পুঁতে দিলো যে ওখানে এক ফোটা রক্তের চিহ্নও ছিলোনা…

ক্রমশ…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here