গল্পঃ দ্যা ডার্ক আইল্যান্ড,পর্বঃ_৩

গল্পঃ_দ্যা_ডার্ক_আইল্যান্ড,পর্বঃ_৩
লেখাঃ_IH_Abid
.

জম্বিগুলা ব্যানারের বডিকে কয়েক টুকরা করে ফেললো৷ তার লাশ টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো । জংগলের ভেতরে৷ এদিকে রুজব আর গার্ড দাঁড়িয়ে আছে৷ রুজবের পা এখন ঠিক হয়ে গেছে৷ গার্ড ডাক দিচ্ছে ব্যানারকে
— মি ব্যানার মি ব্যানার।
কোন সাড়াশব্দ নেই৷ গার্ড আর রুজব সামনে হাটছে জংগলের এদিক ওদিক তাকাচ্ছে৷ ব্যানারের কোন হুদিস নেই৷ রুজবের মনে হলো সামনের ঝোপের পেছন থেকে কোন শব্দ হলো৷ । রুজব আস্তে করে ঝোপ সরিয়ে তাকালো। তাকানো মাত্র নিজে নিজের মুখ চেপে ধরলো। সে চিতকার কর‍তে চাইছে না৷ নিজের মুখ নিজে চেপে ধরে পেছন থেকে গার্ডকে খোচা দিচ্ছে। গার্ড তার চেহারা দেখে জিজ্ঞাস করছে কি হইছে৷ রুজব গার্ডের কোমর থেকে পিস্তল টান দিয়ে বের করলো৷ গার্ড বললো।
— কি হয়েছে? আপনি এমন কেন করছেন?
রুজব হাত দিয়া ইশারা করছে সামনে৷ গার্ড তার বন্দুক হাতে নিলো৷ আস্তে আস্তে ঝোপের পিছনে তাকালো। দেখলো ব্যানারের বডিটা চিবিয়ে খাওয়া হচ্ছে৷ তার পাশে বিশ্রি দেখতে মানুষ আকৃতি প্রানী৷
একে একে ব্যানারের গায়ের পচা মাংস চিবিয়ে চলছে৷ মাংস ছেড়ে এবার হাট কামড়াচ্ছে৷ একজন বুকের ভেতর থেকে হৃতপিন্ড বের করে চাবাচ্ছে৷ গার্ড বলে উঠলো
— ওহ শিট। ব্লাডি জম্বিস৷
জম্বিগুলা তাকালো তাদের দিকে। তখনও ব্যানারের মাংস চাবাচ্ছে তারা৷ জম্বিগুলো উঠে দাড়ালো৷ আস্তে আস্তে সামনে আসা শুরু করলো৷ গার্ড বন্দুক বের করে গুলি করলো৷ একটা জম্বি পরে গেলো৷ রুজব আনারী হাতে পিস্তল দিয়ে গুলি করলো কিন্তু গুলি লাগছে পেটে বা বুকে। সেগুলো মরছে না। তারা পেছনে দৌড় দিলো৷ গার্ড আর রুজব দৌড়াচ্ছে৷ হঠাৎ মাটির নিচ থেকে একটা হাত রুজবের পা টেনে ধরলো। রুজব ব্যালেন্স হারিয়ে পরে গেলো৷ রুজবকে টেনে মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ প্রথমে পা, তারপর কোমর, তারপর শরীর তারপর মাথা পুরাটাই মাটির নিচে ঢুকে গেলো৷ পিস্তলটা বাইরেই পরে রইলো৷ এদিকে গার্ড দৌড়ে কোনরকম জিপে বসলো৷ তাকে যে করেই হোক এই খবর সবাইকে দিতে হবে৷ সে তার ওয়াকিটকি বের করে বাকিদের সাথে যোগাযোগ করার চেস্টা করলো৷ কিন্তু কোন সিগনেল পাচ্ছে না৷ সে জিপ স্টার্ট দিচ্ছে কিন্তু স্টার্ট হচ্ছে না৷ জীপ স্টার্ট হয়ে গেলো৷ জীপ নিয়ে সেখান থেকে ছুটে চললো৷ হঠাৎ সে খেয়াল করলো তার জীপের পেছনে কিছু একটা আছে৷ গার্ড পিছনে ঘুরতে নিলেই প্রচন্ডভাবে ঘাড়ে কামড়ে ধরে জম্বিটি। জম্বিটা জীপের পেছনেই বসে ছিলো আগে থেকে। জীপ গিয়ে সজোড়ে একটা গাছের সাথে বারি খেয়ে উলটে যায়৷ জিপ থেকে তেল গরিয়ে পরছে৷ একটু পরই প্রচন্ড একটা বিস্ফোরণ হলো৷
পুরা দ্বীপ বিস্ফোরণের শব্দে কেপে উঠলো৷ এ শব্দটা সবাই শুনলো৷ বায়োজিদ লিসাকে ফটোগ্রাফি করতে সাহায্য করছিলো৷ তারাও শব্দটা পেলো৷
লিসা বলল
— এটা কি ছিলো?
— জানিনা৷ মনে হচ্ছে কোনকিছু বিস্ফোরণ হয়েছে৷
বায়োজিদ শব্দটা অনুমান করলো৷ কোনদিন থেকে আসতে পারে৷ এছাড়া সে দূর থেকে কালো ধোয়াও দেখতে পেলো৷ লিসা বলল
— বায়োজিদ ওদিক দেখো
— হ্যা দেখেছি। চল।
বায়োজিদ বাকি ২ স্পটের সবাইকে খবর দেয়৷ কিন্তু নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব করছে৷ কিন্তু বায়োজিদ খুব তারা অনুভব করছে কি হয়েছে তাকে দেখতেই হবে৷ বায়োজিদ, লিসা আর তাদের গার্ড জীপে বসলো৷ জীপ চালিয়ে যাচ্ছে।
বেশ অনেকখানি পথ৷ প্রতিটা স্পটের দুরত্ব যথেষ্ট৷ এই তারা এসে পরেছে৷ তাদের সামনে আরেকটা জিপ এসেছে৷ এটা স্পট চার এর। লিউক ( ফিনল্যান্ড) , টরি ( বেলজিয়াম) আর তাদের গার্ড। একটু পর আরেকটা জিপ আসলো। এটায় আছে ড্যানিয়েল ( ইংল্যান্ড) আর জরিস ( নেদারল্যান্ড) আর তাদের গার্ড। অর্থাৎ সবাই এখন উপস্থিত৷ তাদের সামনে জিপটায় আগুন জ্বলছে৷ আগুনের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে৷ সামনে যাওয়া যাচ্ছেনা। ভেতরে পোড়া লাশের গন্ধ আসছে৷ বুঝাই যাচ্ছে ভেতরে লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে৷ ভেতরে হাড্ডি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নাই বুঝাই যাচ্ছে। বায়োজিদ আর সাথে কয়েকজন হাটতে লাগলো। জায়গায় জায়গায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখলো৷ সবাই আতঙ্কের মধ্যে৷ আর সবচেয়ে আতঙ্গিত হলো যখন দেখলো ব্যানারের টুকরা করা লাশ৷ মাথাটা অর্ধেক খাওয়া৷
সবার মধ্যে একটা হুলস্থুল কান্ড৷ তারা এখানে আর কেউ থাকতে চাইছে না৷ আজই তারা ছাড়বে এ দ্বীপ লাগবেনা ফটোগ্রাফি সবাই গার্ডদের বলছে এ জায়গা ছাড়ার জন্য৷ শুধু বায়োজিদ চুপ করে আছে৷ গার্ডরা তাকিয়ে ফোন দেয়ার চেস্টা করছে৷ কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এখানে কারোর ফোনে নেটওয়ার্ক নাই৷ হুট করে সব নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়েছে৷ যেন এই দ্বীপে কোন অদৃশ্য কোন শক্তি ভর করে আছে৷ যেই শক্তির প্রভাবে সব নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেছে৷ অন্যন্য ট্রাকিং ডিভাইস দিয়ে ট্রাই করা হলো৷ কোন কিছুতেই কাজ হলো না৷ তারা কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারলোনা৷ বায়োজিদ সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল
— দেখ যা দুর্ঘটনা ঘটা ঘটে গেছে৷ এরকম দ্বীপে ডিভাইস কাজ না করা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমাদের উচিৎ এখন শান্ত থাকা৷ কেউ প্যানিক করবেন না৷ ।
আর এখন আমাদের উচিৎ হবে সবাই একত্রে থাকা৷ যেকোন একস্পটে থাকা৷ গার্ডরা একত্রে থাকা৷ আর সব অস্ত্রও সাথে রাখা৷ আমরা আগামীকাল সব একত্র হবো৷ আজ যে যার স্পটে ফেরত যাই৷ আগামীকাল সব গুছিয়ে সবাই আমাদের স্পটে চলে আসবেন মানে তিন নাম্বার স্পটে৷ এখানে এভাবে প্যানিক করা উচিত না৷
লিসাও সম্মতি দিলো
— আমি বায়োজিদের সাথে একমত। আমাদের উচিৎ এখন একত্রে থাকা৷
সবাই বায়োজিদ আর লিসার কথায় রাজি হল৷ সবাই যার যার স্পটে ফেরত গেলো৷ সন্ধ্যা বেলা বায়োজিদ তার ব্যাগ থেকে বের করলো পিস্তল, দুইটা কার্টুজ, বুলেট৷ আর ভাংগা ক্যামেরার মেমোরি কার্ড৷ হ্যা এগুলা সে ওই খানে পেয়েছে এবং সবার চোখের আড়ালে সে এগুলা নিজের ব্যাগে ভরে নিয়েছে৷ পিস্তলটা সেখানে পেয়েছে যেখানে রুজবকে মাটির ভেতর টেনে নেয়া হয়৷ আর কার্তুজ, আর গুলির প্যাকেট পায় যখন গার্ড দৌড়াচ্ছিল তখন পরে গেছিল। ক্যামেরাগুলো ভাঙ্গা কিন্তু ভেতরের মেমোরি কার্ড হয়তো ঠিক৷ তাইলে কিছু তথ্য পাওয়া যেতে পারে এই আশায় সাথে নিয়ে এসেছে৷ বায়োজিদ ল্যাপটপ অন করলো৷ মেমোরি কার্ড কিছু টেকনিক করলে ঠিক করা যায়৷ বায়োজিদ মেমরি কার্ড গুলা ঠিক করলো৷ ল্যাপটপে দিয়ে দেখছে কোন তথ্য পাওয়া যায় কিনা কিন্তু না কার্ড কোন রেসপন্স করছে না৷ কয়েকবার ঠিক করার চেস্টা করলো৷ কিন্তু না কাজ করছে না৷ বায়োজিদ বিরক্ত হয়ে ফেলে দিতে নিবে৷ এমন সময় শেষ চেস্টা করল আর কাজ হয়ে গেলো৷ কার্ড রেসপন্স করছে৷ এবার বায়োজিদ ভিডিও ওপেন করল৷ তারপর একে একে সব দৃশ্যগুলা দেখলো৷ দেখছে আর চোখ ছানাবড়া হচ্ছে বায়োজিদের৷ এসব কি। সেই মানুষ রুপি নরখাদকরা ব্যানারকে ছিড়ে খাচ্ছে। মাংস খুবলে খাচ্ছে৷ এবার পরের ভিডিওতে দেখলো সেই গোলাগুলির দৃশ্য৷ দেখলো গার্ড জম্বির মাথায় গুলি করায় সেটা পরে গেছে৷ অন্যদিকে রুজব পেটে বুকে গুলি করছে কিছুই হচ্ছেনা৷ তারপর রুজব কিছু একটার সাথে হোচট খায়৷ একটা হাত তাকে টেনে নেয়৷ ক্যামেরাটা পরে থাকে। সেই ক্যামেরায় পরবর্তী চিত্র ধারন হয় বায়োজিদ দেখে একটা জম্বি জিপের পিছন গিয়ে বসলো৷ গার্ড দৌড়াতে দৌড়াতে সেই জিপে উঠে চলে যায়৷ এ পর্যন্তই শেষ ভিডিও৷।
এখন পুরা কাহিনী বুঝলো৷ সেই জম্বিরা প্রথমে ব্যানারকে মারে, তারপর রুজবকে মারে। তারপর গার্ড জিপ নিয়ে পালায় কিন্তু কিন্তু জিপের পেছনে জম্বি ছিল৷ জিপ চলা অবস্থায় জম্বি গার্ডকে আক্রমণ করে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে আগুন লেগে যায়৷ পুরা কাহিনী বুঝলো৷ তারমানে এ দ্বীপে ভয়ানক কিছু একটা আছে৷ কোন বড় রহস্য আছে৷ রহস্যকে ছোটবেলা থেকে লালন করতো বায়োজিদ৷
তাকে বের করতে হবে কি আছে এখানে৷ বায়োজিদ পিস্তলটা হাতে নিলো৷ আজ রাতে বেরুবে সে৷
.
.
( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here