গল্পঃ দ্যা ডার্ক আইল্যান্ড,পর্বঃ_৮ ( শেষ)

গল্পঃ দ্যা ডার্ক আইল্যান্ড,পর্বঃ_৮ ( শেষ)
লেখাঃ_IH_আবিদ
.
.
রাত ১২.০০ টা। বায়োজিদের ঘুম ভাঙ্গলো। এতক্ষন ঘুমিয়েছে। কেউ ডাকও দিলো না। এই সময় সে কটেজের বাইরে জানালা দিয়ে তাকালো। দেখলো লিসা মাটির থেকে আধা ইঞ্চি উপরে ভেসে যাচ্ছে। ঠিক যেন কেউ তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। বায়োজিদ চিতকার করে ডাক দিলো৷
–লিসা লিসা
কোন উত্তর নেই৷ বায়োজিদ পাগলের মত নিচে নামলো। জঙ্গলের দিকে ছুটলো কিন্তু কোন চিহ্ন পেলোনা লিসার৷ বায়োজিদ মাথায় হাত দিলো। সে কটেজে ফিরে এসে বাকিদের ডাক দিচ্ছে৷ সবাই অঘোড়ে ঘুমাচ্ছে৷ বায়োজিদের ডাকাডাকিতে সবাই ঘুম থেকে উঠে আসছে। বায়োজিদ সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলল৷ এবার অস্ত্রের বাক্সটা নিয়ে আসা হলো৷ বায়োজিদ হাতে একটা শটগান নিলো। বাকিরাও অস্ত্র হাতে অস্ত্র নিলো৷ জরিস, ড্যানিয়েল, আর দুজন গার্ড আর বায়োজিদ ৫ জন রাতের আধারেই জঙ্গলে বেরিয়ে পরলো৷
এদিকে লিসা হাওয়ায় ভেসে চলছে৷ লিসার চোখ দুটা খোলা। কিন্তু সে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে এখনো অচেতন৷ লিসাকে হিপনোটাইজ করা হয়েছে৷ লিসা সামনে চলছে৷ এসময় লিসার হঠাৎ হুশ আসলো। কিন্তু তারপরও কিছু করতে পারছেনা। চিতকার করতে পারছে না। শরীর নাড়াচাড়া করতে পারছেনা৷ শুধু সে দেখছে সে শুন্যে ভেসে চলছে। সে খুব চেস্টা করছে জোরে চিতকার দিতে এবং জোড়ে দৌড় দিয়ে ছুটে পালাতে৷ কিন্তু পারছেনা৷ তার শরীর যেন পুরা পাথর হয়ে আছে৷ সে শুধু এগিয়ে চলছে৷
এদিকে বায়োজিদ আর বাকিরা বন্দুক হাতে জঙ্গলে হাটছে। সবাই একসাথেই থাকার চেস্টা করছে৷ কারন দলছুট হলেই বিপদ৷ এ জঙ্গলে জম্বিরা আছে। অনেকক্ষন ধরে খুজছে লিসাকে কিন্তু কোন হুদিস নাই৷
এসময় হঠাৎ তারা শব্দ পেলো। সবাই খুব সতর্ক হয়ে গেলো৷ সতর্ক হয়ে একটা সবাই সবার পিঠ লাগিয়ে একটা রাউন্ড বানিয়ে নিলো৷
একটু পর তারা দেখলো তাদের সামনে মাটি নড়ে উঠতেছে৷ মাটির ভেতর থেকে হাত উঠে এলো৷ এরপর মাথা উঠে এলো৷ জম্বিটা উঠে আসছে। বায়োজিদ গুলি করলো সেটার মাথায়। মাথাটা ভেঙ্গে গেলো৷ কিন্তু সবাই মাটির নিচে মূদু কম্পন টের পেলো৷ একসাথে অনেকগুলা জম্বি বের হবে হবে মাটির নিচ থেকে৷ মাটি থরথর করে কাপছে৷ একটু পরে একে একে মাটির নিচ থেকে হাত বের হচ্ছে৷ এভাবে আরেকটা, তারপর আরেকটা৷ এভাবে জম্বিগুলো মাটির নিচ থেকে বের হয়ে উপরে উঠে আসছে৷ বায়োজিদ আর তার সঙ্গীরা গুলি করছে৷ গুলি করতে কর‍তে সেখান থেকে দৌড়াচ্ছে৷ জম্বিগুলো পেছন পেছন আসছে৷ হঠাৎ বায়োজিদ হোচট খেয়ে পরে গেলো৷ মাটির নিচ থেকে একটা জম্বি তার পা টেনে ধরেছে৷ বায়োজিদ বন্ধুকের বাট দিয়ে বারি দিয়ে ছুটালো৷ কয়েকটা জম্বি বায়োজিদের একবারে কাছে এসে পরেছে। বায়োজিদ গুলি করলো৷ পেছন থেকে একজন বায়জিদকে জাপটে ধরলো৷ বায়োজিদ মাথা ধরে রেখে ওটা৷ কুনুই দিয়ে আঘাত করে সরিয়ে দিলো৷ পাশের জম্বিটাকে লাথি মেরে ফেলে উঠে দাড়ালো৷ পকেটের পিস্তলটা বের করে সোজা হেডশট করলো৷ আরো কয়েকটা আসছে বায়োজিদ উঠে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে দৌড় দিলো৷ এভাবে সবাই একটা ফাকা জায়গায় চলে আসলো৷ সামনে আগানোর আর পথ নাই৷ সবাই বন্দুক তাক করে জম্বিদের গুলি করছে৷ এমনসময় সেখানে একটা ঝোড়ো বাতাস শুরু হলো৷ চোখে সব অন্ধকার দেখছে৷ সবাই দেখছে একটা মহিলা ঝাড়ুর উপর বসে আসছে৷ সবাই অবাক হয়ে গেলো৷ মহিলাটা এসে তাদের সামনে থামলো৷ ঝাড়ুর থেকে নামলো। মহিলাটা কালো কুতসিত৷ চামড়া ঝুলে গেছে চোখ গুলাও বড় বড় গোল গোল যেন বের হয়ে যাবে৷ নাকটা বড় আর বাকানো৷ হাতের নখ গুলা বড় বড়৷ বোঝাই যাচ্ছে ধারালো অনেক৷ বায়োজিদ গুলি করলো মহিলাটাকে কিন্তু কিছুই হলোনা৷ মহিলাটা একটা ভয়ানক কন্ঠে হাসা শুরু করলো৷ বলল
— অনেক হয়েছে তোদের বাহাদুরি। এবার চল৷।
বায়োজিদ বলল
— কোথায়?? আর লিসা কোথায়? আর কে তুই?
— আমি মুনা,,, একজন ব্ল্যাক উইচ মানে ডাইনী৷ তোদের সেই যুবতী মেয়েটা আমার কাছেই আছে৷
তার থেকে আজ আমি আমার যুবতী রূপ ফিরে পাবো৷
এসময় বায়োজিদ আর তার সাথের সবার বন্ধুক একাকী ফসকে গেলো আর একটা অদৃশ্য দড়ি তাদের পেচিয়ে ফেলল৷ দড়ি দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু মনে হচ্ছে খুব শক্ত করে পেচানো হইছে৷ শরীর পুরা শক্ত হয়ে গেলো। নড়াচড়া করতে পারছেনা৷ তাদের পেছন থেকে কয়েকটা জম্বি উঠে দাড়ালো মাটির নিচ থেকে৷ তারা উঠে ৫ জনকে তাদের ঘাড়ে উঠিয়ে নিলো। কিন্তু কামড়ালো না৷ বায়োজিদ, জরিস, ড্যানিয়েল আর দুইজন গার্ড৷ জম্বিরা তাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। মুনা তার ঝাড়ুতে বসে আকাশে উড়ালো। দিলো৷ জম্বিরা তাদের নিয়ে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেটে হেটে নিয়ে যাচ্ছে। পেছন পেছন আরো পঞ্চাশটার মত জম্বি হেটে চলছে৷ বায়োজিদ নড়াচড়ার চেস্টা করছে কিন্তু পারছেনা। এভাবে চলতে চলতে তাদের একটা গুহার কাছে আনা হলো৷ গুহাটা খুলে গেলো৷ ভেতরে হাল্কা আলো আধারী৷
জম্বি গুলো গিয়ে তাদের একপ্রকার ছুড়ে ফেলো মাটিতে৷ বায়োজিদ মাথায় হাল্কা আঘাত পেলো৷ কপাল খানিক কেটে গেলো। এবার বানটা খুলে গেলো৷
পিছনে জম্বিগুলা দাঁড়িয়ে আছে৷
বায়োজিদ আর বাকিরা উঠে দাড়ালো৷ তাদের সামনে কিছুদূর একটা উচু আসনে বসে আছে একজন। মাথাটা নিচু করা একজন লোক বসে আছে৷ হঠাৎ লোকটা মাথা তুলে তাকালো৷ চোখদুটা সবুজ জ্বলজ্বল করে উঠলো৷ লোকটা উঠে দাঁড়িয়ে হাওয়ায় ভেসে ভেসে তাদের সামনে আসলো৷
” হ্যালো এভ্রি ওয়ান, নাইস টু মিট ইউ৷ আমি জ্যাক ক্রো। এই দ্বীপের বাদশা আর একজন বড় যাদুকর আর সে আমার প্রেয়সী মুনা, একজন উইচ ”
বায়োজিদ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে৷ কিন্তু লিসাকে দেখছে না।
— ও তো তুই সেই জ্যাক ক্রো। যে ব্ল্যাক ম্যাজিক করার জন্য নিজের পুরা পরিবার শেষ করেছে৷ তোর ভাই লিউএল ক্রিক কোথায়?
— ও বাহ,, আমার পুরা হিস্ট্রি জেনে আসছো দেখা যাচ্ছে৷ হ্যা আমি জ্যাক ক্রো। আমার ভাই ক্রিককে আমিই মেরেছি। আমার সাথে বেইমানি করেছিলো৷ পুরা রাজত্ব একা করতো। ব্ল্যাক ম্যাজিকের জগতে তার মাধ্যমে আসলেও আমি তার চেয়েও বড় যাদুকর হয়ে তাকে শেষ করেছি৷ আর আমার পরিবারকেও আমি শেষ করেছি৷ করতে হয়েছিলো৷ কারন আমার পরিবার আমার জন্য বিপদ ছিলো৷
— তুই কোন মানুষের পর্যায়েই না।
— আমি মানুষ হা হা হা৷ আমি মানুষ না৷ আমি একজন ডেভিল৷
বায়োজিদ আর বাকিদের একটা রুমে বন্দি করে রাখা হলো।
— কখনো ভাবি নাই এরকম কিছু হবে। ( জরিস)
— হয়তো আমাদের লোভ খুব বেশি ছিলো তাই আজ ভোগ করছি। ( ড্যানিয়েল)
— আমরা অনেক জায়াগায় গার্ড দিয়েছি। কিন্তু এরকম কখনো কিছু হয়নাই৷ এসবকি আসলেই। ( গার্ড ১)
— এসব কি সত্য নাকি কল্পনা। আমরা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি৷ ( গার্ড ২).
— কিছু করতে হবে৷ আচ্ছা আমি যতটুক জানি এসব যাদুকরদের কোন না কোন জায়গায় একটা দুর্বলতা থাকে৷ কিছু একটা থাকে৷ সেই দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে বা নষ্ট করে দিলে তারা অনেকটা কাবু হয়ে যায়৷
বায়োজিদ কথা শুনছে৷ ডায়নি মুনা নিজে বির বির করে বলছে– “ঐ যুবতীর রক্ত না পেলে আমি শেষ হয়া যাব। বাচবোনা বেশিক্ষন। ”
.
বায়োজিদ এসে বলল
— তোমরা শুনছো৷ ওই ডাইনিটা লিসার রক্ত না পেলে মারা যাবে। মানে যে কোনভাবে হোক এই ডায়নিকে লিসার রক্ত দেয়া যাবেনা। তাইলেই এটা শেষ৷ আর এখান থেকে কোনভাবে বের হয়ে সোজা আমরা দ্বীপের পেছনে চলে যাবো। সেখানে কাঠের ভেলা আছে। সেই কাঠের ভেলাতে করে চলতে থাকবো। কোন বড় জাহাজ পেলে আমরা চড়ে বসবো। এখান থেকে বাচতে পারবো৷
সবাই বায়োজিদের কথায় একমত হলো৷ কিন্তু এখান থেকে বেরুবে কিভাবে।
বায়োজিদের হাত হঠাৎ তার কোমরে গেলো৷ ধাতব কিছু অনুভব করলো৷ বায়োজিদ হাত ঢুকালো৷
তার পিস্তল তার কোমড়েই গোজা আছে৷ সেসময় ডাইনিটা যাদু করে সবার অস্ত্র ফেলে দিয়েছিলো৷ শুধু বায়োজিদের হাতের শটগান পরে যায় কিন্তু কোমরের পিস্তলটা সেখানে থেকে যায়।
বায়োজিদ পিস্তলটা বের করলো৷ ভেতরের কার্তুজ চেক দিলো। মাত্র ৮ টা গুলি আছে৷ এটাই শেষ অস্ত্র৷ শেষ সম্বল৷ বায়োজিদ দরজার ফাক দিয়ে দেখলো। লিসাকে একটা শিকল দিয়ে ঝুললো হয়েছে৷ সেটার নিচে মুনা দাঁড়ানো। মানে উপর থেকে লিসার শরীরের বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করবে তারপর গা বেয়ে বেয়ে রক্ত পরবে আর সে রক্ত মুনা তার গায়ে মাখবে মানে অনেকটা ঝড়নার মত রক্ত পরবে আর এ রক্ত গায়ে মাখলে মুনা তার যৌবন ফিরে পাবে৷
বায়োজিদ বলল
— আমি এখন এখন গুলি করে তালা ভেঙ্গে বের হবো৷ আপনারা সবাই এখান থেকে বাইরে পালাবেন। সোজা দ্বীপের পেছনে চলে যাবেন। আর হাতে কিছু নিয়ে নিবেন, জম্বি আসলে সোজা মাথায় বারি ৷ আমি লিসাকে নিয়ে আসছি৷ সবাই রেডি৷
বায়োজিদ দরজার দিকে পিস্তল তাক করলো৷
— ওয়ান টু থ্রি।
ট্রিগারে চাপ পরলো৷ দরজা আলগা হয়ে গেলো। ৫ জন মিলে সজোরে ধাক্কা দিয়ে দরজা ভেঙ্গে বের হয়ে গেলো। ৪ জন বাইরের দিকে ছুটলো। প্রত্যেকে হাতে সেখানে বড় পাথরের টুকরা নিলো। সেগুলা গায়ের জামা খুলে সেগুলায় পেচিয়ে নিলো। মোটামুটি একটা ভাল রকমের অস্ত্র তারা বানিয়ে ফেলো। জম্বি আসলে শুধু মাথা ফাটাবে। বায়োজিদ দৌড়ে যাচ্ছে। জম্বি দুটা বর্শা হাতে নিয়ে দারানো বায়োজিদ পিছন থেকে জম্বি দুটাকে হেডাশট করলো৷ এইদিকে মুনা চিতকার করে উঠলো৷ এখন রক্ত না পেলে মুনা মরে যাবে। মুনার চামড়া শুকিয়ে গেছে। বায়োজিদ সোজা মুনার মাথায় গুলি করলো৷ এবার গুলি কাজ করেছেন। মুনা চিতকার দিয়ে ঢলে পরলো৷ কপাল ফুটা হয়ে রক্ত ঝরছে। কালো রক্ত। বায়োজিদ উপরে গুলি করলো। শিকল কেটে লিসা নিচে পরছে৷ বায়োজিদ ধরে ফেলল৷
— লিসা চোখ খুলেন
লিসা আলতো চোখ খুলছে। বায়োজিদ লিসাকে কাধে তুলে নিলো। সেখান থেকে বের হচ্ছে। এমন সময় বায়োজিদ একটা অদৃশ্য লাথি খেলো। ছিটকে গিয়ে পরলো৷ লিসাও আরেকদিকে ছিটকে পরলো৷ লিসা উঠতে পারছে না। জ্যাক ক্রো সামনে আসলো৷ দেখলো মুনা মরে পরে আছে৷ জ্যাক ক্রো এর চোখ সবুজ থেকে লাল হচ্ছে। প্রচুর হিংস্র একটা চেহারা হচ্ছে৷ এদিকে জম্বিরা বাকিদের নিয়ে এসেছে যারা পালিয়েছিলো। ধরা পরে গেছে। এতগুলা জম্বিদের সাথে পেরে উঠতে পারেনি। কিন্তু কাউকে খায় নি। আগে জ্যাকের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে৷
বায়োজিদ প্রচুর ব্যাথা পেয়েছে। মেরুদন্ড ভাঙ্গা ভাঙ্গা অবস্থা। জ্যাক প্রচন্ড রাগের সাথের বায়োজিদের গলা চেপে ধরলো৷
— খুব চালাক হ্যা,, খুব মাতব্বরি তোর৷ বাইরে চল বাস্টার্ড। এবার আমার সাথে লেগে দেখি। দেখি কত পারিস।
এই বলে বায়োজিদকে ছুড়ে ফেলে দিলো সোজা তার গুহার বাইরে গিয়ে পরলো একটা গাছের সাথে। জ্যাক বাতাসের মত আবার বায়োজিদের সামনে আসলো। চোয়ালের নিচে প্রচুর জোরে একটা ঘুষি দিল৷ বায়োজিদের কর্ড ভেঙ্গে গেছে৷ বায়োজিদের গলা চেপে তাকে নিয়ে হাওয়ায় ভেসে উঠলো। ভাসা অবস্থায় তার গায়ে ২৫/৩০ টা ঘুষি মারলো৷ ঘুষির বেগ এত যে গায়ের হাড্ডী মাংস ভেদ করে যাচ্ছে৷ তাকে ধরে আছড়ালো যেমন ধোপারা কাপড় ধোয়৷ বায়োজিদের গায়ের আর একটা হাড্ডিও আস্ত নাই৷ বায়োজিদ আর কিছু অনুভব করতে পারছেনা৷ চোখ বন্ধ হয়ে গেলো৷ জ্যাক বায়োজিদকে ধরে শুন্যে তুলে একদিকে ঢিল ছুরে মারলো। কোনদিকে মারলো জ্যাক নিজেও জানেনা৷ বায়োজিদ দূরে একটা জায়গায় গাছের সাথে ঝুলে রইলো৷ তার আর কোন জ্ঞান অনুভূতি নাই৷ আস্তে আস্তে গাছ থেকে দেহটা পরে গেলো৷ বায়োজিদের হাত গাছটার নিচে একটা গর্তে আটকে রইলো৷
এদিকে জ্যাক ক্রো নিজের মাথা ঠান্ডা কর‍তে তার আসনে বসে আছে৷ মাথা নিচু করে মুনার বডির দিকে তাকিয়ে আছে। লিসা, জরিস, ড্যানিয়েল, আর গার্ড দুজনকে ঘিরে জম্বিরা দাঁড়ানো।
জ্যাক ক্রো বলে উঠল
— জম্বিরা, তোমরা ওদের খেয়ে ফেলো আমার আর কাজ নাই এখন৷
জম্বিরা এবার ওদের খাওয়ার জন্য এগুচ্ছে ধীরে ধীরে পালানোর আর পথ নাই৷ সবাই চোখ বন্ধ করে নিলো। জীবন এখানেই শেষ। এটাই হয়তো নিয়তি৷
.
এসময় একটা ছোটখাটো ঝড় বয়ে গেলো। জ্যাক ক্রো মাথা তুলে তাকালো৷ একটা সবুজ বলায় তাদের ঘিরে রেখেছে। মুহুর্তেই সব কয়টা পুড়ে জম্বি ছাই কয়লা হয়ে গেলো৷ কেউ কিছু বুঝলো না কি হচ্ছে। জ্যাক পুরা আকাশ থেকে পরলো। হতভম্ব হয়ে আছে৷
এসময় জ্যাক একটা লাথি খেলো, অদৃশ্য লাথি। জ্যাক মাটিতে পরে গেলো৷
জ্যাক পেছন ফিরে দেখে বায়োজিদ ঠিক তার পেছনে দাঁড়ানো। বায়োজিদের হাতে একটা সবুজ আলো জ্বলছে। জ্যাক বলে উঠলো
— গ্রীন ক্রিস্টাল,,, তুই কোথায় পেলি?
— তুই যেখানে আমাকে ফেলেছিলি সেখানেই পেয়েছি৷
এটাই সেই গ্রীন ক্রিস্টাল যেটা জ্যাক ক্রো অনেকদিন ধরে খুজতাছিলো৷ কিন্তু পায়নি৷ বায়োজিদকে মেরে যেখানে ছুরে ফেলছিলো। যে গাছের নিচে বায়োজিদ পরে ছিলো৷ সেটার নিচের গর্তের ভেতর ছিলো এ গ্রীন ক্রিস্টাল। বায়োজিদের হাত সেই গর্তের ভেতর ছিলো। বায়োজিদের রক্তের ফোটা ক্রিস্টালের উপর পরার ফলে সেটা সক্রিয় হয়ে উঠে। প্রথমে বায়োজিদের পুরা শরীর ঠিক হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত সে এই ম্যাজিকাল শক্তি পায়৷
— জ্যাক ক্রো। এবার খেলার দ্যা এন্ড হবে।
— বেশিক্ষন টিকতে পারবিনা। ওই ক্রিস্টাল আমার।
— দেখা যাবে৷
বায়োজিদ আর জ্যাক ক্রো প্রচন্ড মারপিট হলো। জ্যাক ক্রো এবার কোন ভাবেই পারছেনা বায়োজিদের সাথে। বায়োজিদের শক্তি অনেকগুন বেরে গেছে৷ জ্যাক ক্রো আর বায়োজিদ দুজনই শুন্যে ভেসে মারপিট করছে। জ্যাক ক্রো গায়ের চামড়া ছিলে নিচ্ছে বায়োজিদ। জ্যাকের গা থেকে সবুজ রক্ত বের হচ্ছে। জ্যাকের পুরা গায়ের চামড়া ছিলিয়ে নিলো বায়োজিদ৷ জ্যাক যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে জ্যাককে ধরে উল্টা করে মাটিতে আছাড় দিলো। আছাড় দিয়ে মাটিতে উলটা গেড়ে দিলো৷ একটা বড় পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে দিলো। পাথরের গায়ে লিখে দিলো জ্যাক ক্রো। অর্থাৎ একেবারে কবর রচনা করে দিয়েছে৷ শেষ চিরতরে এই ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান৷ দ্বীপের এই কালো যাদুর অস্তিত্ব শেষ৷ আর কোনদিন কেউ এখানে এসে প্রান হারাবেনা৷ লিসা, জরিস, ড্যানিয়েল, আর গার্ড দুজন বাইরে আসলো৷ সকাল হচ্ছে। সুর্য আকাছে আলো দিচ্ছে আস্তে আস্তে। এটা একটা নতুন সকাল। অভিশাপ মুক্ত সকাল৷
হেলিকপ্টার সেখানে আসলো৷ সেখান থেকে সবাইকে উদ্ধার করল। কটেজ থেকে তাদের সব সরঞ্জাম নেয়া হলো। তাদের ভাষ্যমতে তাদের কন্ট্রল ইউনিট তাদের কোনভাবেই ট্র‍্যাক করতে পারছিলোনা৷ যার ফলে কোন যোগাযোগ সম্ভব হয়নি বায়োজিদ লিসা আর বাকিরা হেলিকপ্টারে বসে আছে৷ বায়োজিদ হাতের গ্রিন ক্রিস্টালটা পানিতে ফেলে দিলো৷ কারো কাছে কোন রেকোর্ডিং নাই৷ রেকোর্ডিং গুলো নষ্ট করে দিছে বায়োজিদ৷ নিজেই করেছে৷ সে চায়না এই ঘটনা কেউ জানুক৷ তারপর এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। সবাই একে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়৷ আসলে বায়োজিদ এসব কাউকে বলতে নিষেধ করে দিছে৷ সে সব কিছু নিছক স্বপ্নের মত ভুলে যেতে যায়৷
ফ্লাইটের অপেক্ষায় আছে বায়োজিদ। লিসা আর বাকিদের সাথে দেখা করছে। শেষবার কুশল বিনিময় করে বিদায় নেয়ার পালা৷ সবাই যার যার দেশ ফিরে যাবে। লিসা কানাডায়, ড্যানিয়েল ইংল্যান্ড, জরিস নেদারল্যান্ড আর বায়োজিদ বাংলাদেশ।
ফ্লাইটের ডাক এলো। বায়োজিদ বিমানে উঠছে। শেষবার পেছন ফিরে দেখে নিলো৷ প্লেন টেক অফ করলো। বায়োজিদ বসে আছে। এবার নিজ দেশে ফেরার পালা।
.
.
( সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here