গল্পঃ দ্যা ডার্ক আইল্যান্ড,পর্বঃ_৭

গল্পঃ দ্যা ডার্ক আইল্যান্ড,পর্বঃ_৭
লেখাঃ_IH_আবিদ
.
রাত ১১.৪৫। বায়োজিদ কটেজের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ছুড়ি দিয়ে নিজের হাত কাটলো। হাত থেকে ফোটা ফোটা রক্ত পরছে। বায়োজিদ তার নাইট ভিশন বাইনোকুলার দিয়ে তাকিয়ে আছে৷ হ্যা ওইতো জম্বিগুলা আসছে। সব কিছু তার প্ল্যান মত রেডি আছে৷ জম্বিগুলো কাছাকাছি আসছে। গুনে নিলো মোট ১২ টা জম্বি ৷ নিচে দরজা খোলাই আছে। জম্বি গুলো ভেতরে ঢুকছে। বায়োজিদ ছাদেই দাঁড়িয়ে আছে । একটু পর তামাশা দেখবে। একটু পরই খ্যাট খ্যাট কয়েকটা শব্দ হলো৷ বায়োজিদ পিস্তলটা হাতে নিয়ে নিচে নামলো৷ নিচে নেমে দেখলো ঠিক যেমন কল্পনা করছিলো ঠিক তেমনই হয়েছে। ৯ টা জম্বি জালে আটকা পরছে। এটাই বায়োজিদের প্ল্যান ছিলো। সে ফাদ এমনভাবে সেট করবে যে ওটায় পা লাগলেই উপর থেকে জাল পরে একটার সাথে আরেকটা পেচিয়ে যাবে৷ ৩ জম্বি কোনভাবে বেচে গেছে৷ বায়োজিদ সোজা সেগুলো হেডশট করে মারলো৷ জম্বিগুলা জালে পেচিয়ে আছে৷ সেই পেচানো অবস্থাতেই জম্বিগুলা বায়োজিদকে ধরার জন্য হাত বাড়াচ্ছে৷ কিন্তু এতে তারা নিজেরাই ব্যালেন্স হারিয়ে পরে গেলো৷ মাটিতেই গড়াগড়ি খাচ্ছে৷ বায়োজিদ টর্চ মেরে দেখলো৷ ৯ জনের মধ্যে একজন তাদের সেই গার্ড ছিলো পোশাক দেখে বুঝলো৷ বায়োজিদ জালের দড়িটা বাইরে এনে তার জিপের সাথে লাগালো। জিপ স্টার্ট দিল। নিজের সাথেই বলল
— যাক বাবা, খেলা হবে।
জিপ চলছে পেছনে জালে পেচানো জম্বিগুলা হেচড়াচ্ছে মাটিতে প্রচন্ডভাবে। এভাবে পুরা রাস্তা হেচড়াতে হেচড়াতে নিয়ে আসলো। রাস্তা কিছুটা আঁকাবাকা করে ঘুরে নিলো। যেন জম্বিদের শায়েস্তা বেশি করা যায়। এভাবে পুরা রাস্তা হেচড়িয়ে নিয়ে আসা হল জম্বিদের৷ বায়োজিদ কটেজের সামনে থামলো। কটেজের ভেতর লিসা আর বাকিরা জিপের শব্দ পেলো। বায়োজিদ রাতেই ফিরে আসবে কেউ ভাবেনি৷ সবাই বেরিয়ে আসলো৷ বায়োজিদ ইশারা করলো সবাইকে ওখানেই দাড়াতে। কাছে না আসতে৷ সবাই দেখল জালের ভেতর অদ্ভুত মানুষ সদৃশ প্রানী নড়াচড়া করছে৷ বায়জিদ জিপের পেছন থেকে গ্যাসোলিনের গ্যালনটা হাতে নিলো৷ সেগুলা জম্বিগুলার উপর ঢালছে। বাকি সবাই এ দৃশ্য দূর থেকে দেখছে। এবার বায়োজিদ জালের বাধন আলগা করে দিলো। বায়োজিদ হেটে আসছে। জম্বিগুলোও জাল থেকে বের হয়ে হাটা শুরু করছে। বায়োজিদ লাইটারটা জ্বালিয়ে পেছনে ফেলে দিলো। আগুন ধরা শুরু হলো আগুন গিয়ে গিয়ে একে একে ৯ টা জম্বির গায়ে লেগে গেলো৷ আগুন লাগা অবস্থায় হাটতে হাটতে তারা পরে গেল। শরীরের মাংস খসে পরতে লাগলো৷ হাত পা ছিড়ে যেতে লাগলো৷ লিসা বলল
— আপনি ঠিক আছেন?
— হ্যা,, সব প্ল্যান মাফিক যেরকম যা ভাবছিলাম।
বায়োজিদ বলছে
— এগুলা হলো একপ্রকার নরখাদক যেগুলাকে বলা যায় জম্বি। যা বুঝলাম এগুলা মরা লাশ৷ কিন্তু কোন একভাবে হতে পারে ব্ল্যাক ম্যাজিকের মাধ্যমে এসবে জীবন দেয়া হয়। ঠিক জীবন না একপ্রকার রোবট বানানো হয়৷ এগুলা মানুষ খায়৷ একপ্রকার জানোয়ার এগুলা। এমনকি এগুলা যদি আপনাদের কাউকে কামড়ায় তাইলে এদের ইফেক্ট আপনাদেরও হবে। যেমন সেই স্পটের গার্ডও জম্বি হয়েছিলো৷ হয়তো সে কোনভাবে জম্বির কামড় খেয়ে বাচতে পেরেছিলো৷ কিন্তু ইফেক্ট তারও হয়ে যায়৷ যার ফলে তাদের দলে যোগ দেয়৷
— কিন্তু এগুলা কিভাবে আসলো। আর এদের সম্পর্কে বাইরের কেউ জানেনা কেন ( ড্যানিয়েল)
— সেটাই রহস্য। কিভাবে এদের উৎপত্তি ? কিভাবে আসল .। এটা জানিনা। যাই হোক। সাবধান থাকতে হবে৷ অস্ত্র রেডি রাখতে হবে৷
বায়োজিদ ভেতরে গিয়ে ঘুম দিলো৷ বাকি সবাই যার যার মত ঘুমালো।
পরের দিন সকাল বেলা৷ বায়োজিদ বের হলো কাউকে কিছু না জানিয়ে জিপ নিয়ে গেল। জিপ চালাচ্ছে। চেহারার একটা উদ্ভ্রান্ত ভাব৷ জিপ চালিয়ে থামলো একটা জায়গায়। সামনে লোহার গেট৷ ভেতরে বিশাল একটা বাড়ি। ঠিক যেমন সে স্বপ্নে দেখছিলো৷ গতকাল রাতে জম্বিদের হেচরানোর সময় এ জায়গাটা তার চোখে পরে কিন্তু তখন পাত্তা দেয়নি৷ তাই সকাল সকাল জায়গাটায় চলে আসলো ৷ দিনের বেলাতেও জায়গাটা কেমন ভুতুরে৷ বায়োজিদ গেট ঠেলে গেলো। লোহার একেবারে জঙ ধরা ভঙ্কুর গেট৷ বেশি জোর খাটালে যেকোন সময় ভেঙ্গে পরে যাবে৷ বায়োজিদ আস্তে করে ধাক্কা দিতেই গেটের কিছু অংশ ভঙ্কুর হয়ে পরে গেলো৷ বায়োজিদ বাড়িটাতে ঢুকছে৷ বাড়িটায় হাল্কা আলো আধারি। দরজা ঠেলে ঢুকলো৷ ভেতরটা তার স্বপ্নের মতনই দেখা৷ কিন্তু সেই জায়গাটা দেখলো যেখানে স্বপ্নে বাচ্চা মেয়েটাকে দেখেছিলো। সেখানে কিছুই নেই। তবে ঘরে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ৷ দাগ গুলা অনেক পুরাতন শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে৷
বায়োজিদ সিড়ি দিয়ে হেটে উপরে গেলো৷ রুম গুলা চেক করল৷ প্রতিটা রুমই ভাঙ্গাচোরা জিনিস দ্বারা ভরপুর৷ একটা রুমে গেলো৷ সেখানে দড়ি টানানো। সেই দড়িতে একটা কংকাল ঝুলে আছে কংকালটার গায়ের জামাও পচে গেছে৷ স্বপ্নে দেখেছিলো একটা মেয়ে চুল আচড়ায় আর তখন একজন তাকে গলা কেটে ঝুলায়। বায়োজিদের মাথা ঘুরছে প্রচুর। নিজেকে সামলে নিল। পাশের আরেকটা রুমে গেলো৷ এ রুমে অনেক ছেড়া বই পত্র। বায়োজিদ ফিরতে নিবে এসময় চোখ পরল একটা বইয়ের উপর৷ আসলে এটা বই না৷ একটা একটা ডায়রি৷ বায়োজিদ ডায়রিটা হাতে নিলো। সেখানে লেখা ” জ্যাক ক্রো ”
বায়োজিদ ডায়রিটা খুলে দেখলো। ভেতরে অনেক কাগজ পচে গেছে তাই পড়া যাচ্ছেনা৷ কিছু লেখা এরকম
” আমি জ্যাক। আমি এরেনোফেরাতে নিজ পরিবারের সাথে থাকি৷ আমি খুব ভাল ছিলাম। আমার স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে। আমার ৬ বছরের বয়সী একটাই মেয়ে, নাম এঞ্জেলা। আমার স্ত্রী ডায়না৷ কিন্তু একসময় এখানে আমার ভাই লিউএল ক্রিক আসে। সে ছিলো একজন ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান। আমি তার যাদুর সম্পর্কে জানতাম না কিছু৷ কিন্তু একসময় জানতে পারি৷ সেই আমাকে জানায় এ সম্পর্কে। আমি একসময় লোভে পরে তার সাথে এই ব্ল্যাক ম্যাজিকের কাজ শুরু করে আমি নিজেও একজন ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান হয়ে যাই৷ আমি অনেক শক্তিশালী হয়ে যাই৷ আমার পরিবার একসময় এ বিষয় জেনে যায়। তাই আমি তাদের নিজ হাতে হত্যা করি৷ নিজের স্ত্রী, নিজের মেয়েকে৷ আমি আর ক্রিক একসময় এ দ্বীপে রাজত্ব শুরু করি৷ এ দ্বীপের মানুষরা আমাকে মান্য করে চলতো। কিন্তু মানুষ একসময় দ্বীপ ছাড়া শুরু করে৷ সেখানে একটা গণকবর আছে সেই কবরের লাশদের আমি ব্ল্যাক ম্যাজিকের মাধ্যমে একপ্রকার মানব খেকো পিচাশে পরিনত করি৷ কিন্তু একসময় ক্রিক আমার সাথে বেইমানী করে আর আমাকে দ্বীপ ছাড়তে বাধ্য করে ”
বায়োজিদ ডায়রির পেজ উল্টালো আর কিছু পেলোনা।
বায়োজিদ বুঝলো এ দ্বীপে দুইজন ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান আছে। একজন জ্যাক ক্রো আর আরেকজন লিউএল ক্রিক। যদি জ্যাক ক্রো দ্বীপ ছাড়ে তাইলে এখন আছে লিউএল ক্রিক। ডায়রিটার একেবারে শেষ পেজে দেখলো একটা স্কেচ আকা কয়লা দিয়ে। একটা হ্যাট পরা মানুষ, লম্বা কোট। এটাই জ্যাক ক্রো তাইলে। সে স্বপ্নেও দেখেছিল এমন কাউকে৷
বায়োজিদ প্রচুর প্যাচে পরে গেল। কিভাবে বের করবে এ রহস্য৷ বায়োজিদ বাইরে বের হয়ে আসলো।
জিপে চড়ে সোজা তার কটেজে গেলো৷ সবাই বায়োজিদকে খুজে অস্থির৷ জিপ এসে কটেজের সামনে থামলো৷ সবাই বেরিয়ে এলো। রীতিমতো ঝাড়া শুরু করলো তাকে। লিসা বলল
— কই ছিলেন আপনি? এত সকাল সকাল কই গেছিলেন?
বায়োজিদের চেহারা প্রচুর অসুস্থ মনে হচ্ছে।
— একটু ঘুরে আসলাম।
এই বলে রুমে গিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পরল। তার মাথা প্রচুর ব্যাথা করছে।
রাত ১২.০০ টা। বায়োজিদের ঘুম ভাঙ্গলো। এতক্ষন ঘুমিয়েছে। কেউ ডাকও দিলো না। এই সময় সে কটেজের বাইরে জানালা দিয়ে তাকালো। দেখলো লিসা মাটির থেকে আধা ইঞ্চি উপরে ভেসে যাচ্ছে। ঠিক যেন কেউ তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
.
.
.
( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here