গল্পঃ দ্যা ডার্ক আইল্যান্ড,পর্বঃ_৬

গল্পঃ দ্যা ডার্ক আইল্যান্ড,পর্বঃ_৬
লেখাঃ_IH_Abid
.
মেয়েটার গায়ের মাংসও একেকদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো৷ পুরা ফ্লোর কালো রক্তে ভরে গেলো৷ বায়োজিদ আরেকটা রুমে গেলো৷ এখানে কিছু বাচ্চাদের খেলনা পেলো৷ বায়োজিদ আবার একটা শব্দ পাচ্ছে যেন কেউ জোরে জোরে ছুড়ি ধার দিচ্ছে৷ বায়োজিদ সামনে হেটে গেলো.৷ সামনে হাটতে হাটতে শব্দটা থেমে গেলো৷ বায়োজিদ দাঁড়িয়ে গেলো৷ তার মনে হচ্ছে ফ্লোরটা ভেঙ্গে যাবে৷ বায়োজিদ সামনে দৌড় দিলো৷ একটা রুমের বাইরে দিয়ে দেখলো একটা ২৩/২৪ বছর বয়সী মেয়ে রুমে বসে আয়নার সামনে চুল আচড়াচ্ছে৷ এসময় একজন লোক ঘরে ঢুকলো৷ হাতে একটা চকচকে ছুড়ি লোকটি গিয়ে মেয়েটার চুলের মুঠি ধরলো৷ ধরে হ্যাচকে টান দিলো৷ মেয়েটার চিতকার করে হেলে পরলো৷ লোকটা ছুড়ি দিয়ে মেয়েটার গলায় চালিয়ে দিলো৷ তারপর মেয়েটার গলায় দড়িয়ে পেচিয়ে ঝুলিয়ে রাখলো৷ বায়োজিদ দেখে সেদিকে দৌড় দেয়ার চেস্টা করলো মেয়েটাকে বাচানোর জন্য৷ কিন্তু ফ্লোর ভেঙ্গে গেলো৷ বায়োজিদ নিচে পরতে নিলো৷ নিচটা অনেক গভীর যেন কোন অতল গহবর৷ বায়োজিদ হাত দিয়ে কোনমতে ধরে ঝুলে রইলো। উঠার চেষ্টা করছে৷ উঠতে পারছেনা৷ বায়োজিদ কোন রকম উঠতে নিচ্ছে এসময় দেখলো তার সামনে একজন দাড়ানো লম্বা কোট পরা, মাথায় হ্যাট৷ বায়োজিদ মাথা তুলে তাকালো কিন্তু তার চেহারা দেখলো না৷ কাল অন্ধকার কিন্তু সেই অন্ধকারে সবুজ চোখ দুটা জ্বল জ্বল করছে৷ লোকটা একটা বিশাল কুড়াল দিয়ে বায়োজিদের হাতে কোপ দিলো৷ তার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো৷ বায়োজিদ অত গভীরে পরে যাচ্ছে৷ সব কিছু অন্ধকার চারপাশে৷।……
” বায়োজিদ, বায়োজিদ ”
ধড়ফড় করে ঘুম থেকে উঠলো সে৷ তারমানে এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলো৷ লিসা তাকে ডাকছে৷
— কি হয়েছে আপনার? আপনি ঘুমের মধ্যে ওমন করছিলেন কেন? এত নড়াচড়া? শরীরও ঘাম দিচ্ছে৷
— না। হয়তো কোন ভয়ানক স্বপ্ন দেখছিলাম৷
— ড্যানিয়েল আর জরিস এসেছে৷ আর তাদের গার্ড৷
— লিউক আর টরি আসেনি?
— না তারা আসেনি৷
— ওহ৷
— আচ্ছা একটা কথা৷ আমাদের কোন ট্রাকিং ডিভাইস কাজ করছেনা৷ আমরা অফিসে যোগাযোগ কর‍তে পারছিনা৷ এভাবে চললে তো আমরা এখানেই আটকা পরে যাবো৷
— আটকা পরলে খারাপ কি? এখানেই থাকবো সুন্দর জায়গা৷ জীব জন্তু পুড়িয়ে খাবো৷ পাতার পোষাক পরে ঘুরব। একেবারে আদিম জীবন৷ আধুনিকতার কোন প্যারা নাই৷
— আপনার কাছে মজা মনে হয় এটা জানা সত্ত্বেও যে এখানে থাকলে আমরা বাচতে পারবো না। ওই নরখাদকরা চিবিয়ে খাবে৷
— নরখাদক আর কয়টা হবে। সব কয়টার মাথায় বারি দিয়ে মেরে ফেলবো। ওদের উইক পয়েন্ট হচ্ছে ওদের মাথা৷ মাথা আলাদা করে দিলেই হইছে কাজ শেষ৷
— দেখুন। এসব ফাও কথা আর বলবেন না৷
— আমাদের কাছে খাবার পানি কতটুকু আছে?
— যা আছে ১ মাস চলবে৷
— আমাদের এখানকার চুক্তি ছিলো ৭ দিন৷ যাক মাত্র ৩ দিন হইলো৷ এখনো আছে সময়৷ একটা পথ বের হবে অবশ্যই৷
এই বলে বায়োজিদ ফ্রেশ হতে গেলো । ফ্রেশ হয়ে নিচে এলো৷ সবার সাথে পরিচয় হইলো৷ সবাই নাস্তা করছে। অনেকক্ষন হয়ে গেলো৷ লিউক আর টরি আসছেনা কেন তাদের স্পট থেকে৷ কথা ছিলো বাকি কয়টা দিন সবাই একসাথে এক স্পটে কাটাবে৷ বায়োজিদ বলল
— আচ্ছা আমাদের বাকি দুজন পার্টনার আর তাদের গার্ড আসেনি?
— না, তাদের তো খোজ পাচ্ছি না৷
বায়োজিদ বলল
— আচ্ছা আমরা যাবো সেখানে৷
সবাই বের হলো৷ জিপে উঠলো৷ জিপ নিয়ে যাচ্ছে। জিপ নিয়ে বের হলো৷ বায়োজিদ ড্রাইভ করছে৷ ড্রাই করে কটেজের সামনে এসে থামলো৷ সবাই নামলো৷ বায়োজিদ সামনে এগুতেই দেখে বন্দুক পরে আছে। বায়োজিদ বন্দুক উঠালো৷ বন্দুকের গায়ে ছোপ ছোপ রক্ত লাগা৷ সবাই দেখলো৷ বায়োজিদ হাটতে হাটতে সামনে গেলো৷ দেখলো ফ্লোরে ছোপ ছোপ রক্ত। যেন কাউকে হেটে হিচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হইছে৷
বায়োজিদ ভেতরে গেলো৷ পেছন পেছন বাকিরাও আসলো৷ পুরা ঘর হুলস্থুল অবস্থা৷ যেন ১০/১২ জন ঘরে ঢুকে তান্ডব চালিয়েছে৷ বায়োজিদ দেখলো সবখানেই হেচেড়ানোর দাগ। দোতালায় আসলো৷ এখানেও ফ্লোরে হ্যাচড়নোর দাগ৷ বায়োজিদের চোখ পরলো সামনের ক্যামেরায়। বায়োজিদ ক্যামেরাটা নিলো৷ ক্যামেরা অন করতেই তারা শুনতে পেলো৷ রুম অন্ধকার কারো চেহারা বুঝা যাচ্ছেনা৷
” আমি টরি, আমার সাথে আছে লিউক। আমরা আর বেশিক্ষন বাচবোনা৷ এক ধরবের অদ্ভুত নরখাদক জাতীয় পিচাশ আমাদের আক্রমণ করেছে৷ আমি বলতে চাই এখানে খুব ভয়ানক কিছু আছে৷ আমরা যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু ফল পাইনি ৷ এ ভিডিও আমি আমার বাকি পার্টনারদের জন্য রেখে যাচ্ছি৷ তারা জানুক। এটা কোন দ্বীপ না এটা একটা মরনকূপ। ”
এই পর্যন্তই তারপর একটা বিকট চিতকার শোনা গেলো৷ আর শোনা গেলো একটা গরগর শব্দ। একই সাথে শোনা গেলো কামড়াকামড়ি করে কিছু ছিড়ে খাওয়ার আওয়াজ৷
এ পর্যন্তই। ভিডিওটা সেখানে উপস্থিত সবাই দেখলো৷ সবার মুখেই চিন্তার ছাপ৷ সবাই এবার বুঝতে পারলো ঘটনা৷ এখানে খুব খারাপ কিছু একটা আছে। স্পট ১ আর স্পট ২। দুটা স্পটের লোকই মারা গেছে৷ এখন শুধু স্পট ৩ মানে বায়োজিদ -লিসা আর গার্ড এবং স্পট ৪ মানে ড্যানিয়েল -জরিস আর তাদের গার্ড এই ৬ জনই আছে৷ ঠিক কতক্ষন আছে জানেনা৷
বায়জিদ চুপ করে বসে আছে৷
— এখানে আর থাকার কোন মানে হয়না৷ আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে৷ ( ড্যানিয়েল)
— আমরা সবাই এখানে চুক্তি করেই আসছি। এখানে লোভ আমাদেরও আছে। আমরা প্রত্যেকেই ফটোগ্রাফির পুরস্ককারের জন্য লোভ করেছি৷ ( লিসা)
এরমধ্যে একজন গার্ড বলল
— আসলে মাফ করবেন কথার মাঝে কথা বলার জন্য৷ তবে আমি যেহুতু ডেনমার্কের আমি এমন শুনেছি যে এরকম দ্বীপ গুলায় এমন অনেক কিছুই থাকে যা বাহিরের কেউ জানেনা৷ কিন্তু আমি এসব কেবল শুনেছি৷ কিন্তু কখনো বিশ্বাস করিনি৷ আর এই দ্বীপ এরেনোফেরো এটা নিয়ে অনেক মানুষের মুখে অনেক কিছুই শুনেছি৷
আরেকজন গার্ডও বলল
— আসলে এসব শুনেছি কেবল কখনো দেখিনি৷ কিন্তু মনে হচ্ছে যা শুনতাম তা অনেকটাই সত্য। আমরা অনেক জায়গায় গিয়েছি আমাদের কোম্পানি থেকে ট্যুরিস্টদের গার্ড হিসাবে পাঠানো হইত। সেখানেও চুক্তি হইতো যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হলে কর্তৃপক্ষ দ্বায়ী থাকবেনা ৷ কিন্তু কখনো এমন বিপদে পড়িনি ৷ মনে হচ্ছে যেন আমরা কোন অশুভ শক্তির কবলে পরে গেছি। আমাদের কোন ট্রাকিং ডিভাইস কাজ করছেনা৷
এসময় বায়োজিদ মাথা তুলে তাকালো। এতক্ষণ চুপ করে বসে ছিলো। সে বলল
— আপনারা সবাই ফিরে যান৷ আমি আজ এখানে থাকবো৷
লিসা বলল
— মাথা খারাপ আপনার। আপনাকে এখানে রেখে যাবো৷
— আমার মাথায় কোন সমস্যা নাই। আমি পুরা সুস্থ সজ্ঞানে বলছি যে আমি এখানে থাকবো আজ রাতে। আপনারা ফিরে যান৷ আমার একটা প্ল্যান আছে৷ কিছু জিনিস লাগবে আমার৷ কাজ হয়ে গেলে আমি কাল ফিরে আসছি ৷ যেহুতু তারা গতকাল এসেছে আমি নিশ্চিত একপ্রকার যে তারা আজোও আসবে৷ আর আমার প্ল্যানটাও আশাকরি হবে।
সবাই জানতে আগ্রহী হয়ে উঠলো কি প্ল্যান। বায়োজিদ সবাইকে প্ল্যান বুঝালো৷ সবাই বুঝেও গেলো৷ কিন্তু কেউই বায়োজিদকে একা রাখতে চাইছেনা। বায়োজিদ সবাইকে বুঝালো৷ সবাই চলে গেলো৷ বায়োজিদ একা রয়ে গেলো৷
রাত ১১.৪৫। বায়োজিদ কটেজের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। একটা ছুড়ি দিয়ে নিজের হাত কাটলো। হাত থেকে ফোটা ফোটা রক্ত পরছে। বায়োজিদ তার নাইট ভিশন বাইনোকুলার দিয়ে তাকিয়ে আছে৷ হ্যা ওইতো জম্বিগুলা আসছে। সব কিছু তার প্ল্যান মত রেডি আছে৷
.
.
.
( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here