গল্পঃ দ্যা ডার্ক আইল্যান্ড,পর্বঃ_৪
লেখাঃ_IH_Abid
.
.
তারমানে এ দ্বীপে ভয়ানক কিছু একটা আছে৷ কোন বড় রহস্য আছে৷ রহস্যকে ছোটবেলা থেকে লালন করতো বায়োজিদ৷
তাকে বের করতে হবে কি আছে এখানে৷ বায়োজিদ পিস্তলটা হাতে নিলো৷ আজ রাতে বেরুবে সে৷
বায়োজিদ খুব আস্তে আস্তে দরজা দিয়ে বেরুলো। লিসা ঘুম। কটেজের বাইরে আরেকটা রুম আছে সেখানে গার্ডও ঘুমাচ্ছে। বায়োজিদ আস্তে করে বেরিয়ে আসলো৷ আশেপাশে ঝি ঝি পোকার শব্দ৷ আর পাওয়া যাচ্ছে শকুনের ডাক। বায়োজিদ পিস্তলটা লোড করে নিলো। জ্যাকেটের ভেতর ভরে রাখলো৷ আস্তে আস্তে হাটছে বায়োজিদ। পরিবেশটা মারাত্মক ভয়ানক তবে কেন যেন বায়োজিদের ভয় করছেনা। রহস্য তাকে টানছে। রাত ১২.০০ টা বাজে। সে তার কটেজ থেকে বেশ দুর চলে আসলো৷ হঠাৎ সে দাড়ালো। একটা সাউন্ড পাচ্ছে সে। অদ্ভুত ধরনের বাজনা। সে আস্তে আস্তে সেদিক এগিয়ে গেলো। বায়োজিদ জংগলের ফাকে ছোট্ট একটা টানেল দেখতে পেলো৷ টানেলের ভেতর থেকেই আসছে৷ বায়োজিদ টানেলের ভেতর পা বাড়ালো৷ ভেতরে সিড়ি আছে। সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামছে৷ পিস্তলটা হাতে ধরে রেখেছে। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখলো ভেতরটা হাল্কা আলো আধারির মিশ্রন। বায়োজিদ নিচে নেমে একটা বড় পাথরের পেছনে লুকালো। দেখলো দূরে কয়েকটা জম্বি আগুনের পাশে হাত ধরে গোল গোল ঘুড়ছে। আবার কেউ মুখ দিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ বের করছে আবার কয়েকজন ঢোল পিটাচ্ছে৷ অর্থাৎ এখানে একপ্রকার পার্টি চলছে। বলা যায় এই নরপিশাচ বা জম্বিদের পার্টি৷ সেখানে জম্বিগুলা কাচা মাংস চিবুচ্ছে কেউ ফ্লোরে লেগে থাকা রক্ত চাটছে।
অর্থাৎ একপ্রকার আনন্দ চলছে এখানে। বায়োজিদ চুপ করে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে আর দৃশ্যগুলো দেখছে৷ বায়োজিদের ঘেন্না আসছে প্রচুর৷ বায়োজিদের শার্টের পকেটে একটা পেন ক্যামেরা আছে যেটা দিয়ে সে সব ভিডিও শ্যুট করছে। বায়োজিদ দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় তার কাধে পিছন থেকে কেউ হাত দিলো। বায়োজিদ চমকে উঠে পিছুন ফিরে দেখে লিসা। বায়োজিদ অবাক
— তুমি?
— হ্যা আমি। তোমার পেছন পেছন আসছি। এসব কি?
বায়োজিদ লিসার মুখ চেপে ধরলো৷
— একদম চুপ লিসা। ওদিকে দেখ। চিতকার দিওনা।
লিসা সামনে তাকালো। চমকে উঠলো। বায়োজিদ তার মুখ এখনো চেপে আছে। লিসা তাকালো। সামনে দৃশ্যগুলো দেখলো।
— প্লিজ চিতকার করবেন না। নাইলে এখান থেকে জিন্দা বেচে বের হওয়া যাবেনা৷ কাচ্চা চাবিয়ে ফেলবে৷
চলো বেরুই এখান থেকে৷
লিসা আর বায়োজিদ বেরুতে নিবে এমন সময় কিছু একটার সাথে হোচট খেলো লিসা। পাশে থাকা ছোট পাথরের মুর্তিটি পরে গেলো। শব্দ পেয়ে জম্বিগুলা গড়গড় আওয়ান করে উঠল। জম্বিরা এদিক ওদিক দেখছে৷ বায়োজিদ আর লিসা আস্তে আস্তে বেরুচ্ছে। আস্তে আস্তে টানেল থেকে বের হয়ে আসলো। চুপ করে জংগলের ভেতর দিয়ে হাটতে হাটতে বেরুচ্ছে৷ ।
— আপনি আমার পিছন এ এসেছেন কেন?
— ( কান্না কন্ঠে) এসব কি? এগুলা কি? কোথায় ফাসলাম?
— আমার মনে হয় এখানে ভয়ানক কোন রহস্য লুকিয়ে আছে। যে রহস্যের ব্যাপারে পৃথিবীর কেউ জানেনা।
যদি আমরা এসব ফাস করে দেই নিসন্দেহে ফেমাস হবো এতে কোন সন্দেহ নাই৷
বায়োজিদ এসময় কিছু একটার শব্দে পেলো। লিসাও শব্দটা পেলো৷ থমকে গেলো৷ দুজন তারা জংগল ছেড়ে অনেকটাই সামনে এসেছে৷
হঠাৎ বায়োজিদ তার পেছন থেকে একটা গড়গড় শব্দ পেলো৷ বায়োজিদ ঘুড়ে দাড়াতেই দেখে জম্বিটা একেবারে তার কাছে চলে এসেছে। বায়োজিদ সর্ব শক্তি দিয়ে জম্বিটার মাথার লাথি দিলো৷ জম্বিটা ঘুরে পরে গেলো৷ এসময় আশেপাশে আরো শব্দ পেল।
— লিসা আমার পেছনেই থাকবেন৷
এই বলে বায়োজিদ তার জ্যাকেটের পকেট থেকে পিস্তলটা বের করলো৷ জম্বিটা উঠে আসছে বায়োজিদ পিস্তলের বাট দিয়ে ওটার মাথায় জোরে আঘাত করলো৷ মাটিতে পড়ে গেল। বায়োজিদ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ওটার মাথায় জোড়ে পা দিয়ে মাথা পিষ্ঠ করে দিলো।
বায়োজিদ বলল
— চলেন এখান থেকে দ্রুত৷
বায়োজিদ আর লিসা দৌড়াচ্ছে। এসময় হঠাৎ ২ টা জম্বি হামাগুড়ি দিয়ে এসে পরলো তাদের সামনে বায়োজিদ পিস্তল বের করে সোজা গুলি করলো জম্বিটার মাথায় আরেকটা জম্বি আচমকে লাফ দিয়ে বায়োজিদের উপর উঠে গেছে বায়োজিদের হাত থেকে পিস্তল ফসকে গেছে। জম্বিটাকে দু হাত দিয়ে ধরে রেখেছে। সেটা বায়োজিদের ঘাড়ে কামড়াতে নিচ্ছে লিসা একটা কাঠের লাঠি দিয়ে জম্বিকে কয়েকটা বারি মারলো। এবার জম্বিটা উঠে দারালো৷ এবার লিসার দিকে এগুচ্ছে। বায়োজিদ পা দিয়ে ল্যাং দিয়ে জম্বিটাকে ফেলে দিলো। পিস্তলটা হাতে দিয়ে মাথায় গুলি করলো।
— আপনি ঠিক আছেন লিসা?
— জ্বি।
— চলুন। এভাবে দৌড়াচ্ছে তারা। জংগলের এড়িয়া ছেড়ে তাদের কটেজে ফিরে আসলো। জম্বিগুলার সম্ভবত লিমিট আছে তারা জংগলের এরিয়া বাদে বের হয়না।
কটেজে তার বসে আছে বায়োজিদ প্রচুর হাপাচ্ছে। পানির বোতল থেকে ঢক ঢক করে গিলছে৷
লিসা বলল
— আপনি কি পাগল? এত রাতে ওখানে কি করতে গিয়েছেন? আর কেনই বা গেলেন?
— ( হাল্কা রেগে) পাগল তো আপনি। আপনি এভাবে আমার পিছন পিছন আসলেন কেন? যদি পথিমধ্যে তারা আপনাকে ধরে খাইতো?
— আমি পিছন পিছন না আসলে এতক্ষনে আপনাকে সাবাড় করে দিতো। আমি বারি দেয়াতে আপনি উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে। যাক বাচলাম এ যাত্রায়।
— আচ্ছা ঘটনা কি? কি এসব? আপনি কি আগেই জানতেন এসবের ব্যাপারে যে আপনি সেখানে গেলেন?
— এগুলা কি? বা এসব কি হচ্ছে আমি কিছুই জানিনা৷ তবে এতুটুক বুঝতে পারছি। এ দ্বীপে কোন ভয়ানক শক্তি লুকিয়ে আছে। এমন কিছু আছে যা সাধারন কেউ জানেনা। কিন্তু কি আছে তা জানিনা৷ এটাই খুজে বের করতে হবে৷
— আপনার এসব খুজতে মন চায়৷ যেকোন সময় ওরা কাচা চাবিয়ে খেতে পারে৷ এখান থেকে দ্রুত বের হতে হবে৷
— রহস্যটা মাথা চারা দিছে। করতেই হয়। কেউ না করুক। আমি একাই করবো।
বায়োজিদ ল্যাপটপ বের করে ভিডিওগুলা দেখাতে লাগল। কিভাবে ব্যানার , রুবজ আর তাদের গার্ডকে হত্যা করেছে। তাদের চিবিয়ে খাচ্ছে নরখাদকরা।
লিসা চেয়ে চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষন দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
— এখানে আর থাকা যাবেনা। কালই চলে যাবো। সবাই৷ আর বুঝতাছিনা সব নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেলো কেন৷ আমরা আমাদের অফিসেও যোগাযোগ করতে পারছিনা৷
— হতে পারে এটা তাদের কোন কাজ।
— কাদের?
— যারা এ দ্বীপটায় প্রভাব বিস্তার করছে।
— কারা?
— তারা কারা সেটাই তো জানিনা। সেটাই খুজতে হবে৷
লিসা আর বায়োজিদ কটেজের ছাদে গেলো।
বায়োজিদ তার নাইটভিশন বাইনোকুলার দিয়ে জঙ্গলের ভেতর দেখছে। জঙ্গলের গভীরে অনেকগুলা জম্বি হাটাহাটি করছে। লিসাও দেখলো। তবে জম্বিগুলো জঙ্গল থেকে বেরুই না। হয়তো এটা তাদের নির্ধারিত এলাকা৷ সেখান থেকে তারা বেরুয় না। লিসা ছাদ থেকে নামছে। বায়োজিদ নামতে নিবে। আবার হঠাৎ আচমকা কি মনে করে যেন বাইনোকুলারটা চোখের উপর রাখলো। আকাশের দিকে তাকালো। খুব অবাক হয়ে গেলো। বাইনোকুলারে দেখছে একটা ঝাড়ুর উপর একটা মহিলা উড়ে যাচ্ছে৷ বায়োজিদ চেয়ে রইলো একভাবে । উড়ে গিয়ে দূর চলে যাচ্ছে৷ একেবারে দ্বীপের শেষ মাথায়৷
এদিকে লিসা ডাক দিলো।
— আপনি নামছেন না কেন? কি দেখছেন?
— জ্বি না কিছু না।
বায়োজিদ লিসাকে কিছু বলল না৷ নিচে নেমে আসলো৷ বায়োজিদ খাটে শুইলো৷ বুঝলো রহস্যের জটলা খুব গভীর। এমন কিছু যা কেউ আগে কখনো ভাবে নাই৷
মুনা তার ঝাড়ুতে করে উড়ে সোজা জ্যাক ক্রো এর গুহার ভেতর আসলো৷
— আসো আসো মুনা। মাই উইচ কুইন। আমার ডাইনী রানী৷
.
.
.
( সমাপ্ত)