একা_তারা_গুনতে_নেই — লামইয়া চৌধুরী। পর্বঃ ২০

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ২০
ইমাদ অবাক হয়ে বলল, “স্যরি?”
সুহা কি বলবে সাথে সাথে ভেবে পেল না। কয়েকটা মুহূর্ত নিরবে কেটে গেল। তারপর সুহা কথা পেয়ে গেল, “আপনি কি খুব বেশি ব্যস্ত? তাহলে পরে কল করি?”
ইমাদ বলল, “আগে বলুন আপনি কে? কেন ফোন করেছেন?”
“আমি কে তা জানতে হবে না। আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই কল করেছি।”
“মানে?” ইমাদের চোখ, মুখ বিরক্তিতে কুঁচকে গেছে।
“মানে কিছু না।” সুহা কল কেটে দিলো। ইমাদ কান থেকে মোবাইল সরিয়ে চোখের সামনে ধরে রাখল। কার নাম্বার এটা?
.
কাদিন আর দীপার মাঝে ভয়াবহ ঝগড়া এবং কথাকাটাকাটি হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে কাদের সাহেবের ইনসুলিন প্রয়োগ থেকে। দীপা শ্বশুরকে ইনসুলিন দিতে দিতে নাকি বলেছিল, “বাবা, আমরা ট্রেনে করে গেলে কেমন হয়?”
কাদের সাহেব এক পৃথিবী বিস্ময় নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। বললেন, “কোথায় যাওয়ার কথা বলছ?”
“আমাদের গ্রামের বাড়িতে।”
“আমাদের গ্রামের বাড়িতে?”
দীপা ঘাড় নাড়তে নাড়তে বলল, “জি, বাবা।”
কাদের সাহেবের ইনসুলিন দেয়া শেষ। তিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালেন, “কি বলছ কী!”
দীপা চট করে কাদের সাহেবের হাত টেনে ধরে তাঁকে আবার সোফায় বসাল, “বাবা, বসুন না। কথা বলি।”
তারপর নিজে হাঁটুর উপর ভর দিয়ে কাদের সাহেবের মুখোমুখি মেঝেতে বসল। বলল, “বাবা, আমি না কোনোদিন ট্রেনে চড়িনি। কোনোদিন না। আমরা এবার ট্রেনে করে যাই? সবাই মিলে? পিকনিকের মত লাগবে।”
কাদের সাহেব থতমত খেয়ে অনেকক্ষণ দীপার দিকে তাকিয়ে রইলেন। ধীরে ধীরে তাঁর চেহারা শক্ত হয়ে আসছে। এই মেয়ে বলে কী! বলার আগে নিশ্চয়ই ভেবে কিছু বলে না। আবদার আর ছাগলামির মাঝে ফারাক আছে। চোয়াল শক্ত করে কাদের সাহেব না করতে যাচ্ছিলেন তার আগেই দীপা ঘাড় নত করে বলল, “স্যরি, বাবা। ভুল হয়ে গেছে। বুঝিনি যে এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না।”
কাদের সাহেব বললেন, “হ্যাঁ আসলেই এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না।”
দীপার মন খারাপ হলো তিনি বুঝতে পারলেন। তবুও অসঙ্গত প্রশ্রয় দিলেন না। উঠে চলে গেলেন। ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু হলো না। রাতে ফিরে কাদিন দীপার উপর ক্ষেপে গেল, “এগুলো কোন ধরনের কথা, দীপা? তুমি নতুন বউ। তুমি ট্রেনে করে বউভাতের জন্যে আমাদের বাড়িতে যাবে? মানুষ কি বলবে?”
দীপা অবাক হয়ে বলল, “কই যাব? যাব না তো। শুধু আবদার করেছিলাম। পরে নিজেই ত না করে দিয়েছি।”
“বাবা সত্যি সত্যি ট্রেনের টিকিট কেটে বসে আছেন।”
“তাই নাকি?” দীপা খুশিতে বিছানা থেকে লাফিয়ে নামল।
আরো বলল, “উমা বাবা কী ভালো! আমি গিয়ে একটা থেঙ্কস দিয়ে আসি।”
দীপা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে যেতে চাইল। কাদিন দেয়ালের মত সামনে দাঁড়িয়ে দীপাকে বাধা দিলো। দীপার দু’বাহু খামচে ধরে বলল, “আমার বউ এত উন্নত শ্রেণীর গাধী হতে পারে ভাবতেও পারছি না।”
তাহমিদও দীপাকে কথায় কথায় গাধী বলত। দীপা রাগে কেঁদে ফেলল, “আমি আর আপনার সাথে থাকব না।”
“যতসব, ধ্যাত।” কাদিন দীপাকে ছেড়ে দিয়ে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। সে রাতে দীপা খেল না। খাওয়ার সময় সবাই ডাকলেও খেতে গেল না। রাগে কাদিনের চোখ লাল আর মুখ তেতো হয়ে গেল। কড়ি ডাকতে গেলে দীপা চোখ মুখ শক্ত করে কঠিন গলায় বলল, “তোমার ভাই যে মেয়ের জন্য দিওয়ানা সেই মেয়েকেই বিয়ে করাতে। শুধু শুধু তাহমিদকে শিক্ষা দিতে এই বিয়েটা না হলেও চলত।”
কড়ি বিস্ময়ের শেষ সীমানায় পৌঁছে গেল, “মেজো ভাইয়ার আবার কবে পছন্দের কেউ ছিল?”
“ছিল না? না থাকলে সে এত দেবদাস কেন?”
কড়ি দীপার কান্নামোছা ফোলা মুখটার দিকে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল। দীপা রেগে গেল, “কি হলো চুপ করে আছো কেন?”
“কি বলব তাই ভাবছি।”
“দীপা ঘরের দরজা বন্ধ করে দরজায় পিঠ দিয়ে দাঁড়াল, “তোমার ভাইয়ের যদি আমাকে মনে নাই ধরে তবে আমায় বিয়ে করল কেন? তোমরা কেন জুরাজুরি করে এ বিয়ে করিয়েছ?”
কড়ি ভেবে দেখল সবকিছু খোলাসা করে বললেই ভালো। মিহি স্বরে বলল, “দেখো ভাবি, মেজো ভাইয়ার পছন্দের কেউ কখনোই ছিল না। ওর কাউকে পছন্দই হতো না। ও এত বেশি খুঁত ধরে মানুষের তার চোখে কেউ কখনো আটকে যেতে পারেনি। তার কাছে কারো হাসি সুন্দর ত, চোখ ভালো না। আরেকজনের নাকটা ভালো, ভ্রুগুলো যেন কেমন। এই মেয়ের হাঁটার ধরন ভালো না, ঐ মেয়ে বসতে হয় কি করে সেটা জানে না। এসব বলতে বলতেই ওর জীবন অর্ধেক কেটে গেল।”
“দেখো কড়ি একদম মিথ্যে বলবে না। তাৎক্ষণিক গল্প বানাতে তুমি অনেক পটু তা আমার জানা আছে।”
“মিথ্যে নয়। ভাইয়ার কখনো প্রেম ছিল না তা শতভাগ সত্য। ভাইয়া হলুদের রাত থেকেই ডিস্টার্বড। তাই হয়তো কেমন হয়ে আছে।”
“ডিস্টার্বড কেন?”
“কে যেন মোবাইল করে তোমার কথা বলে দিয়েছে।”
“আমার কথা?”
“হ্যাঁ।”
“কি কথা?”
“তোমার একটা প্রেম ছিল আর সেই প্রেমিকের জন্য তুমি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছ। তবে সেই প্রেমিক যে তার নিজেরই বন্ধু সেটুকু জানে না।”
দীপা স্তব্ধ হয়ে গেল। ওহ কাদিন সাহেব এজন্যই ত তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকছে। দূরে থাকছে এতে সে যথেষ্ট আপ্লুত। এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। তবে এর পেছনের কারণটা জেনে রাগে তার শরীরের সবকটা লোম পুড়ে যাচ্ছে। দীপা শান্ত গলায় কড়িকে বলল, “সবাইকে বলে দিও আমার শরীর ভালো লাগছে না। তাই খাব না।”
কড়ি কথা বাড়াল না। খাবার টেবিলে গিয়ে বলল, “ভাবি ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর ডাকিনি। থাক ঘুমাক।”
কাদিন তখনি মনে মনে ঠিক করে ফেলল, “এই মেয়েকে সে উচিত শিক্ষা দিবে। খাওয়াটা শুধু শেষ হোক।”
চলবে…
বি.দ্রঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমার প্রকাশিত নতুন উপন্যাসের বই “যে শ্রাবণে ফাগুন” পাওয়া যাচ্ছে তাম্রলিপির প্যাভিলিয়নে। প্যাভিলিয়ন নং ১৬। তাছাড়া, ঘরে বসে সারাদেশের যেকোনো প্রান্তে বইটি পেতে পারেন রকমারি কিংবা অন্যান্য অনলাইন বুকশপে অর্ডার করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here