আমার_একাকীত্বের_শহরে___আপনি,০৬,০৭

#আমার_একাকীত্বের_শহরে___আপনি,০৬,০৭
#লেখিকাঃফিহা___আহমেদ
#পর্বসংখ্যা__০৬

এই মেয়ে দাঁড়াও বলছি। আগামীকাল আমার কথা ইগনোর করে বাড়ি থেকে এইভাবে পালিয়ে আসলে কেন।
প্রিয়তি দোকানে এসেছে সকালের নাস্তা কিনতে।জিহান তখন ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি করে যাচ্ছিল প্রিয়তিকে দোকানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিহান গাড়ি থামিয়ে প্রিয়তির কাছে গেলো। প্রিয়তি জিহানকে দেখামাত্র দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটা শুরু করলো। প্রিয়তিকে এইভাবে চোরের মতো পালিয়ে যেতে দেখে জিহান খুব বিরক্ত হলো। বিরক্তিকর কন্ঠে প্রিয়তিকে কথাটি বললো।
জিহানঃ দাঁড়াতে বলছি। না হয় খুব খারাপ হবে।
জিহানের কথা শুনে প্রিয়তি ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।
প্রিয়তি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে..
— কি…কিছু বলবেন।
জিহানঃ এই গরমে দিয়ে তুমি কাপঁছো কেন।শীত লাগছে নাকি।
প্রিয়তিঃ না….ন….না।তে….তেমন কিছু না।
জিহান খুব বিরক্ত হলো প্রিয়তিকে তোতলিয়ে কথা বলতে দেখে।
— সমস্যা কি তোমার আমাকে দেখলেই কাঁপা-কাঁপি শুরু করো।আমি বাঘ না ভাল্লুক। ধমক দিয়ে প্রিয়তিকে বললো।
জিহানের কথায় প্রিয়তি কেঁপে উঠল।
ধমক খেয়ে প্রিয়তি কেদেঁ দিল।
প্রিয়তিকে কাঁদতে দেখে জিহান প্রচন্ড রেগে গিয়ে হাত ওঠায় থাপ্পড় মারতে।থাপ্পড় মারার আগেই প্রিয়তি সেই বিখ্যাত অকাজটা করে বসলো।বেচারি ভয়ে হিসু করে দিলো।

জিহান রাগের বদলায় এখন বেক্কল হয়ে গেল। প্রিয়তির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। প্রিয়তি যে এমন কিছু করবে সেটা তার কল্পনার বাহিরে। কতটা ভয় পেয়ে হিসু করে দিল।জিহান আশপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিল কেউ আছে কিনা। কাউকে আশেপাশে না দেখতে পেয়ে জিহান সস্তির নিশ্বাস ফেললো। জিহান তার জ্যাকেট খুলে প্রিয়তির কোমরে বেঁধে দিল।
এইদিকে প্রিয়তি লজ্জা ভয়ে আর বেশি কান্না শুরু করলো।
জিহান রেগে গেলো প্রিয়তিকে কান্না করতে দেখে।
জিহানঃ স্টুপিড মেয়ে। এইভাবে ভ্যাঁ ভ্যাঁ না করে গাড়িতে ওঠে বস।কেউ তোমাকে এইভাবে দেখলে তোমার মান-সম্মান থাকবে তো।
জিহানের কথা শুনে প্রিয়তি তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে ওঠে বসলো।
জিহানকে প্রিয়তি বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দিলো। জিহান প্রিয়তিকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিল।

প্রিয়তি জিহানকে কিছু না বলে দ্রুত গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে উষ্ঠা খেয়ে পরে যেতে নিবে তার আগেই জিহান প্রিয়তিকে ডাইরেক্ট কোলে তুলে নেয়।
প্রিয়তি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো জিহানের দিকে।
—- আচ্ছা এই খারুস বেটা কি ভুলে গেল নাকি আমি যে হিস্ করে দিয়েছি।প্রিয়তি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
জিহানঃ এইভাবে তাকিয়ে আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছ।বাহ্,,,বাহ্,,বাহ্।একে তো এক নাম্বার করে বসে আছো।এখন আবার কোলে ওঠে বসে আছো।
প্রিয়তি চোখ নিচে নামিয়ে,,,,
— ক…ককই আমি তো আপনার দিকে তাকাইনি।
জিহানঃ বাহ্।মিথ্যে দেখি ভালোই বলতে পারো।তোমাকে মিথ্যের নোবেল দেওয়া উচিত।
প্রিয়তিঃ আপনি কিন্তু আমাকে রীতিমতো অপমান করছেন।
জিহানঃ এক নাম্বার করে ও তোমার লজ্জা নেই।স্টুপিড কোথাকার।

প্রিয়তি লজ্জিত হলো জিহানের কথায়।কি করে পারলো এই অকাজ করতে।আল্লাহ আমি কি করে মুখ দেখাবো ওনাকে মান-সম্মান সব শেষ আমার।ওনি যদি দাদু আর ওনার মাকে বলে আমার হিস্ দেওয়ার কথা ছিঃ ছিঃ কি ভাববেন ওনারা।
মন চাচ্ছে চেয়ারে বসে ফাঁসি দেই।
জিহান প্রিয়তিকে দরজার সামনে নামিয়ে দিল। প্রিয়তি নামা মাএই জিহানের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো।
জিহানঃকি অসভ্য মেয়ে। মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো। এর জন্য শাস্তি বরাদ্দ।
জিহান বাড়ি চলে গেল।

প্রিয়তি গোসল সেরে খাটের ওপর বসে নিজেকে নিজে বকছে।
প্রিয়তিঃ ছিঃ প্রিয়তি ছিঃ।কি করে পারলি এই অকাজটা করতে।তাও জিহান খান এর সামনে।আমি ভার্সিটি যাব না আর।আর জিহান খানের মুখোমুখি হতে চাই না।

তৃধা এইভাবে মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন মা।
মায়ের কথা শুনে তৃধা সামনে তাকালো।মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে,,,,,,,
—- না মা কিছু হয়নি। আমর শরীর ঠিক নেই।বাড়ি চলে যাই।
মারিয়া বেগমঃ আর কিছুদিন থাকতে বলেছে তোর খালাম্মা।
তৃধাঃ প্লিজ মা। আমার পরীক্ষা ও আছে।প্রিয়তির বাড়িতে যাই।তুমি আসলে বাড়ি চলে আসবো।
মারিয়া বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে — আচ্ছা যা। সাবধানে যাবি।
তৃধাকে তার খালাম্মা অনেক করে বলেছে থাকার জন্য। তৃধা পরীক্ষার নাম দিয়ে প্রিয়তি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

প্রিয়তি রান্না করছে কিচেনে। তখন কলিং বেল বেজে উঠল।
প্রিয়তিঃ এই সময়ে কে হতে পারে।
প্রিয়তি দরজা খুলে আশ্চর্য হলো।
প্রিয়তিঃ তৃধা তুই।তুই নিশি আপুর বিয়েতে…..
তৃধাঃ হ্যাঁ গিয়েছি।আর বিয়ে হয়ে গেছে।
প্রিয়তিঃ মানে কালই তো গেলি। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে গেল। ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়েছে নাকি।
তৃধাঃ হুম।এইসব কথা পরে বলি।এখন আমি একটু রেস্ট নিতে চাই।
প্রিয়তির কেমন অদ্ভুত লাগছে আজ তৃধাকে।মনে হলো কিছু লুকালো।সন্দেহের দৃষ্টিতে তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে।
তৃধা প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে একগাল হেঁসে প্রিয়তির ঘরে চলে গেল ।
প্রিয়তিঃ আরে আ..আমার রান্না।
প্রিয়তি কিচেনে গিয়ে দেখলো সবজি কিছুটা পুড়ে গেছে।
প্রিয়তিঃ ধ্যাত কপালটাই খারাপ আজ।সকালে দিলাম হিস্ করে। এখন সবজি পুড়িয়ে দিলাম।না জানি আর……..

তখনই আবার কলিং বেল বেজে উঠল।
প্রিয়তি খুব বিরক্ত হলো।
— আবার কে আসলো।
দরজা খুলে প্রিয়তি ঝটকা খেল।
প্রিয়তিঃ দাদু আপনি।
দাদুঃ কিগো মেয়ে ঘরে যেতে দেবে নাকি এইখানেই দাঁড়িয়ে রাখবে।
প্রিয়তিঃ আ…আসুন দাদু।
দাদু আরাম করে সোফায় বসলো। আর প্রিয়তির মাথায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
— আমার বাড়ি কি করে চিনল দাদু।আমি তো বলিনি।আজতো জিহান খান আমার বাড়িতে এসেছে। তার মানে কি ওনি।খারুস লোক একটা।
দাদুঃ কি এত ভাবছিস মেয়ে।
প্রিয়তিঃ না…ন….না। কিছুনা।না…ইয়ে মানে দাদু। আমার বাড়ি চিনলেন কিভাবে।
দাদুঃ সেটা জেনে কি করবে মেয়ে।যাও গিয়ে ঝটপট তৈরি হয়ে নেও।
প্রিয়তি যেন আকাশ থেকে পরলো।
প্রিয়তিঃ তৈরি হবো মানে।
দাদুঃ আমার সাথে খান বাড়িতে যাবে।
প্রিয়তিঃ কেন দাদু।

তখনই কেউ ঘরে প্রবেশ করতে করতে,,,,, দু দিন পর আমার ছোট মেয়ে জাইমার বিয়ে তাই তোমাকে নিতে এসেছি।
প্রিয়তিঃ আন্টি আপনি। বসুন।
রাইসা বেগমঃ এখন বাড়িতে অনেক কাজ বাকি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেও। আর হ্যাঁ আন্টি নয় মা বলে ডাকবে।যদি মা মেনে থাক তাহলে তৈরি হয়ে নেও।
*প্রিয়তি কি করবে বুঝতে পারছে না। এমনিতে ওই জিহান খারুস এর সামনে পরতে চায় না। সেই ভাগ্য বারবার ওনার সামনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।
প্রিয়তিঃ আচ্ছা আমি তৈরি হয়ে আসছি।

প্রিয়তি নিজের ঘরে গিয়ে পায়চারি করতে লাগলো।
প্রিয়তিকে চিন্তিত দেখে…
— কিরে এইভাবে পায়চারি করছিস কেন।
প্রিয়তি তৃধাকে সব খুলে বললো।
তৃধাঃ তো যা।
প্রিয়তিঃ তুই ও আমার সাথে চল।
তৃধাঃ অসম্ভব। আমি পারব না। তুই ওদের সাথে যা আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।
প্রিয়তি তৃধাকে ওনেক কষ্টে রাজি করালো।
প্রিয়তিঃ দাদু হয়ে গেছে।
দাদুঃ তা ও কে।
প্রিয়তি তৃধাকে রাইসা বেগম আর দাদুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।তৃধাও হাসি মুখে সবার সাথে কথা বললো।
সবাই গাড়িতে ওঠে বসলো। খান বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো সবাই।

চলবে…….
[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

#আমার_একাকীত্বের_শহরে___আপনি
#লেখিকা__ফিহা___আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_০৭

দু’ঘন্টা পর গাড়ি থামলো খান বাড়ির গেইটের সামনে।
সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেল প্রিয়তি ছাড়া।
— ভীষণ ভয় আর লজ্জা লাগছে।যদি ওনার সামনে পরি তাহলে কি হবে। ইস কি কান্ডটাইনা করলাম আমি।
ড্রাইভারঃ কি হলো আপামনি নামেন। আপনার জন্য সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তিঃ হ্যাঁ কাকু নামছি।
রাইসা বেগমঃ কি হলো মামনি গাড়িতে বসে ছিলে কেন। লজ্জার কিছু নেই তুমি আমার মেয়ে। এখানে কোনো কিছুতে লজ্জা পাবেনা।
প্রিয়তিঃ ঠিক আছে।
তৃধাঃ বাড়িটা কত সুন্দর প্রিয়।
প্রিয়তিঃ হুম।আচ্ছা তৃধা তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন মনে হচ্ছে আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছিস।আর এত চুপচাপ হয়ে আছিস।
তৃধাঃ তেমন কিছু না।এমনি হালকা মাথা ব্যাথা করছে।
প্রিয়তিঃ কিহ্ আগে বলবি না তুই। এখন বলছিস মাথা ব্যাথা।
ওদের দুজনের কথার মাঝে রাইসা বেগম ডাক দিল দুজনকে।
দুজন বাড়ির ভিতরে গেল।
রাইসা বেগম তৃধা আর প্রিয়তিকে গেস্ট রুমে থাকতে দিলেন।
রাইসা বেগমঃ ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি আবার আসব।
প্রিয়তিঃ ঠিক আছে মামনি।

দুজন ফ্রেশ হয়ে খাটের ওপর বসে গল্প করছে।তখন একটা মেয়ে ওদের ঘরে প্রবেশ করলো।
— আমি জাইমা।
প্রিয়তি খাট থেকে নিচে নেমে গেল।
— কেমন আছো আপু। তাহলে তোমার বিয়ের কথা মামনি বললো।
জাইমাঃ হুম। তুমি প্রিয়তি রাইট।
প্রিয়তিঃ হ্যাঁ আপু।আর ও আমার বান্ধবী তৃধা।
তিনজন মিলে গল্প জুড়ে দিলো।
জাইমাঃ আমাদের বাড়িটা তোমাদের ঘুরিয়ে দেখাব।চলো।
জাইমা দুজনকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে।
প্রিয়তিঃ আপু দুলাভাইয়ের নাম কি।
জাইমা লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলে — জয় মাহমুদ।
তৃধাঃ হুম দারুন তো।
সবার কথা মাঝে প্রিয়তির বাগানের দিকে চোখ গেল।
— জিহান ফুল গাছের পরিচর্যা করছে। মুখে হাতে টি-শার্টে মাটি লেগে আছে।কেমন অগোছালো লাগছে।
তৃধাঃ আপু আমি একটু নিচ থেকে আসছি।
জাইমাঃ ঠিক আছে যাও।
জাইমার মোবাইল বেজে উঠল। হবুবর ফোন দিয়েছে।
জাইমাঃ প্রিয়তি আমি একটু আসছি।
প্রিয়তি মুচকি হেসে মাথা নাড়লো।

তৃধা নিচে গিয়ে দেখে মেহমান আসা শুরু করেছে।
তৃধা ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রোল করতে করতে ঘরে প্রবেশ করবে তার আগেই একটা বাচ্চা বলে উঠলো,,
— মানুষরূপী রাক্ষসী।
তৃধার পা থেকে গেল।পাশে তাকাতেই দেখে বাচ্চা একটা মেয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
মেয়েটির পাশেই রাদিম দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
রাদিমকে দেখেই তৃধার মাথা গরম হয়ে গেল।
তৃধা রাদিমের সামনে গিয়ে রাগী কন্ঠে — আপনি বাচ্চাদেরকেও আমার পিছনে লাগিয়ে দিলেন।আপনার আমার পিছনে লাগা ছাড়া আর কাজ নেই নাকি।

হুট করেই মেয়েটি তৃধাকে বলে — মাম্মা তুমি এমন ঝগড়ুটে কেন।
মেয়েটির কথা শুনে তৃধা আকাশ থেকে পরলো।
তৃধাঃ এই পিচ্চি পাগল হয়ে গেছ তুমি মাম্মা কেন বলছো।
মেয়েটি — আমি মোটে ও পিচ্চি নই।আমার একটা কিউট সুন্দর নাম আছে। মালিহা। আমার পাঁচ বছর।আমার বয়ফ্রেন্ড ও আছে।আর চাচ্চুই তো বললো তোমাকে মাম্মা বলতে।
তৃধাঃ আমি খুব ভালো করেই জানতাম আপনি ছাড়া এই কাজ কেউ করবেনা।শেষে কিনা বাচ্চাদের ও আমার পিছনে লাগিয়ে দিলেন।
রেগে ঘরে চলে গেল তৃধা।

প্রিয়তি ছাঁদ থেকে নেমে বাগানে আসলো।
— বাগানটা সত্যি খুব সুন্দর। কিন্তু ওনি কোথায় গেলেন।
এদিক ওদিক তাকিয়ে জিহানকে খুঁজছে।
তখন পিছনে থেকে কেউ বলে — চোরের মতো এদিক ওদিক কি খুঁজছো।
প্রিয়তি পিছনে তাকিয়ে দেখলো একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তিঃ না আসলে আমি বাগান ঘুরতে এসেছি।
— এদিক ওদিক তাকিয়ে চোরের মতো করে কেউ বাগান ঘুরতে আসে।
প্রিয়তিঃ আপনি আমায় ভুল বুঝছেন।
— ছেলেটা হাসতে শুরু করলো। আরে ভয় পেয়ো না আমি তো মজা করেছি তোমার সাথে। আমি আদনান খান।রাজিব খানের বড় ছেলে। তোমার নাম কি।
— প্রিয়তি।
আদনানঃ ওহ্ আচ্ছা তুমি সেই মেয়ে যে আমার দাদুকে এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছো। ধন্যবাদ। চল তোমাকে বাগান ঘুরিয়ে দেখাই। আর তুমি কিন্তু খুব সুন্দর।
প্রিয়তি মুচকি হেসে মাথা নাড়লো।
— চলুন।

জিহান বাগানে কাজ শেষ করে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো। বেলকনি থেকে আদনান আর প্রিয়তিকে একসাথে দেখে রাগে মাথার রগ ফুলে গেল। ভাইয়ের সাথে প্রিয়তিকে দেখে জিহানের প্রচুর হিংসা হলো। কেন হলো সে নিজে ও জানে না। প্রিয়তির আশেপাশে কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারে না জিহান। নিজের ভাইকেও না।
রেগে জিহান দেয়ালে ঘুসি দেওয়া শুরু করে। হাত কেটে রক্ত পরছে।
— এর জন্য তোমায় শাস্তি পেতে হবে প্রিয়তি।

★★★

আজ জাইমার গায়ে হলুদ। মেয়েরা সবাই পরবে হলুদ রঙের কাপড় আর ছেলেরা হলুদ রঙের পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি।
সবাই কাজে ব্যাস্ত।
তৃধা আর প্রিয়তি মিলে জাইমাকে বাঙালি স্টাইলে হলুদের কাপড় পরিয়ে দিলো। চুল খোঁপা করে বেলীফুলের গাজরা পরিয়ে দিলো। তাজা বেলীফুলের গহনা দিয়ে জাইমাকে সাজিয়েছে তৃধা আর প্রিয়তি।
তৃধাঃ আপু তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে। একদম পুতুলের মতো।ভাইয়া দেখলে হার্ট স্টক করবে।
প্রিয়তিঃ ঠিক বলেছিস তৃধা।আপুকে একদম পরীর মতো লাগছে। চল আপু তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে স্টেজে চলো।

জাইমাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে তৃধা আর প্রিয়তি দুজন জাইমার দু’পাশে।
তিনজনের দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। তিনজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
জিহান ফোনে কথা বলছিল।সবাইকে হা করে সামনে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিহানও সামনে তাকালো। সামনে তাকাতেই থমকে গেল। প্রিয়তিকে হলুদ রঙের কাপড়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। মুখে তেমন সাজ নেই। এইটুকুতেই মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে।
জিহানের বুকের বা পাশ ধুকপুক শুরু করলো প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে।
জিহান চোখ বন্ধ করে ফেললো। আর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবেনা। পাশে তাকাতেই দেখে আদনানও প্রিয়তির দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। জিহান খুব রাগ হলো আদনানকে এইভাবে প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ।রেগে জিহান সেখান থেকে চলে গেল।

রাদিম এর একই অবস্থা। তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে হা করে। তৃধাকে হলুদ রঙের কাপড়ে ভীষণ সুন্দর লাগছে।
রাদিমকে এইভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মালিহা রাদিমের দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
মালিহা রাদিমের হাত ধরে — চাচ্চু তুমি মাম্মাকে এইভাবে দেখছো কেন।তোমার নজর লেগে যাবে।
রাদিমের ডিস্টার্ব হলো মালিহার কথায়।
রাদিমঃ পিচ্চি চুপ থাক।শান্তিতে একটু দেখতে দে।
মাহিলা মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে চলে গেল।

জাইমাকে স্টেজে বসিয়ে দিয়ে প্রিয়তি চলে আসল। আদনান এসে প্রিয়তির সামনে দাঁড়িলো।
প্রিয়তিঃ ভাইয়া কিছু বলবেন।
আদনানঃ আজকে তোমায় অনেক বেশি সুন্দর লাগছে প্রিয়তি।
প্রিয়তি আদনানের চোখে কেমন নেশা দেখতে পেলো।
প্রিয়তি — ধন্যবাদ বলে সেখান থেকে চলে গেল।
— এই আদনান খানকে তেমন সুবিধার মনে হচ্ছে না। কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে।এর থেকে যত দূরে থাকব ততো মঙ্গল।
প্রিয়তি হাঁটছে আর নিজে নিজে কথা বলছে।
তখনি কেউ তাকে হাত ধরে টেনে বাগানের ভিতর নিয়ে গেল।

চলবে…….
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here