আমার_একাকিত্বের_শহরে__আপনি,০৪,০৫

#আমার_একাকিত্বের_শহরে__আপনি,০৪,০৫
#লেখিকা__ফিহা___আহমেদ
#পর্বসংখ্যা__০৪

তৃধার ও প্রয়তির মতো অবস্থা। তৃধা ও উষ্ঠা খেয়ে একটা ছেলের ওপর পরেছে।
তৃধাঃ এই মিয়া এইভাবে হা করে কি দেখছেন জীবনে কি কোনো মেয়ে মানুষ দেখেন নাই। ছাড়ুন আমায়।
ছেলেটি কোনো কথা না বলে হা করেই তাকিয়ে আছে। ছেলেটি তৃধাকে নিচ থেকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। যার কারনে তৃধা ছেলেটা ওপর থেকে ওঠতেও পারছেনা।

জিহান বেশ বিরক্ত হলো তার বেস্ট ফ্রেন্ড রাদিম এর কান্ডকারখানা দেখে।
জিহানঃ রাদিম সমস্যা কি তোর মেয়েটাকে ছাড়। এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন। মেয়ে দেখলেই তোর হুস থাকেনা।
জিহানের কোনো কথাই রাদিমের কানে যাচ্ছে না।
রাদিম হা করে তাকিয়ে আছে।
তৃধা রেগে গেলো।তার বয়ফ্রেন্ড ও তাকে এখনো ছুঁতে পারেনি।এই বেয়াদব পোলা কিনা জড়িয়ে ধরে আছে।
তৃধা রেগে রাদিমের বুকে কামড় বসিয়ে দিল।
রাদিমঃ মা,,,,,,গো,,,,,,,মা।মানুষরূপী রাক্ষসী।
তৃধাঃ এই কি বললেন আপনি আমি রাক্ষসী।কতক্ষণ ধরে ডাকছি আমাকে ছাড়তে আপনি ছাড়েননি তাই কামড় দিয়েছি।আপনি এইটারই যোগ্য। বলেই আরেকটা কামড় বসিয়ে দিলো।
রাদিম ব্যাথা পেয়ে তৃধাকে ছেড়ে দিলো।
তৃধা ওঠে প্রিয়তির হাত ধরে চলে গেল।

জিহানঃ শিক্ষা হয়েছে তোর।এইভাবে কোনো মেয়েকে কেউ জড়িয়ে ধরে। দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস।
রাদিমঃ ওই মেয়েটাও তো তোর ওপর পরেছে। খুব মজা লেগেছে তাই নারে জিহান।
জিহান রেগে গেলো রাদিমের কথায়।
জিহানঃ কি বললি তুই।তবে রে দাঁড়া আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।
জিহান রাদিমের পিছনে ছুটলো মারার জন্য। বেচারা রাদিম প্রাণপনে দৌড়াচ্ছে।

তৃধাঃ এখন কি হবে প্রিয় ক্লাস টাইম পয়ত্রিশ মিনিট শেষ।
প্রিয়তিঃ লাইব্রেরী থেকে ঘুরে আসি চল।এখনতো ক্লাসে ও ঢুকতে দিবেনা। তার চেয়ে একটু ঘুরাঘুরি করি সেটাই ভালো হবে।
তৃধাঃ বুদ্ধিটা দারুণ লেগেছে প্রিয়।চল ঘুরে আসি।

দুজন লাইব্রেরীতে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপওি।
রাদিম লাইব্রেরীতে বসে আছে ক্লাস বাদ দিয়ে। পড়া চোর যাকে বলে আরকি।টেবিলে বসে গালে হাত দিয়ে তৃধার কথা ভাবছে।ঠিক তখন তৃধা আর প্রিয়তি লাইব্রেরীতে ঢুকলো।রাদিম তৃধাকে দেখেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তৃধা লাইব্রেরীতে ঢুকতেই দেখলো রাদিম হা করে তাকিয়ে আছে। তৃধার মেজাজ বিগড়ে গেল।
তৃধাঃ এই মিয়া এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন।
রাদিমঃ কই তাকিয়ে আছি আমি।তুমি কি বিশ্বসুন্দরী নাকি। দেখতে একদম রাক্ষসীদের মতো লাগে।আমি বই দেখছি তোমাকে নয়।
তৃধা রাক্ষসী বলাতে খুব রেগে গেলো।
তৃধা হাত নাড়তে নাড়তে,,,, আমাকে রাক্ষসীদের মতো লাগে।আর হ্যাঁ আমি দেখতে অনেক সুন্দরী। কত ছেলে আমার পিছনে পরে আছে। আপনি নিজেকে আয়নায় দেখছেন কেমন গন্ডার এর মতো লাগে আপনাকে দেখতে।
রাদিম হেসে দিলো তৃধার কথা শুনে।
রাদিমঃ কই আমি তো তোমার পিছনে কোনো ছেলে দেখছিনা। গফ মারা বন্ধ করো।
তৃধাঃ কি আমি গফ মারি।
তৃধা রেগে কিছু করতে যাবে তার আগেই প্রিয়তি পিছন থেকে তৃধাকে টেনে নিয়ে লাইব্রেরীর বাহিরে চলে আসল।
তৃধাঃ দেখলি ছেলেটা কেমন ছ্যাঁচড়া যেখানে যাই এই গন্ডারকেই দেখি।অসহ্য।
প্রিয়তি কি বলবে বুঝতে পারছে না । তৃধার দিকে হাবার মতো তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ বিরক্ত হলো তৃধা।
তৃধা প্রিয়তিকে ধমক দিয়ে,,,, এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন।মনে হচ্ছে ফ্রী তে সিনেমা দেখাচ্ছি।
প্রিয়তিঃ রাজিব স্যারের ক্লাস শেষ চল মিঠুন স্যারের ক্লাসটা করি।
তৃধাঃ চল।
দুজন ক্লাস শেষ করলো।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য দুজনে।
তৃধাঃ আম্মু ফোন দিয়েছে।খালাম্মার মেয়েকে দেখতে আসবে। এখন আমাকেও যেতে হবে। আজকে তোর সাথে যেতে পারবোনা প্রিয়।
প্রিয়তিঃ ঠিক আছে তাহলে তুই চলে যা। আমি অন্য রিকশা দিয়ে চলে যাব।
তৃধা রিকশা নিয়ে চলে গেল।
প্রিয়তি রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে দশ মিনিট ধরে কিন্তু রিকশা পাচ্ছেনা।
প্রিয়তিঃ এখন কি করি। যদি হেঁটে যাই তাহলে বাড়িতে যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
প্রিয়তি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবছে কি করা যায়।
প্রিয়তি হাঁটা শুরু করলো। যদি কিছুদূর হাঁটার পর রিকশা পেয়ে যায়।

প্রিয়তি হাঁটতে হাঁটতে কিছদূর আসতেই দেখলো একটা বৃদ্ধ মহিলা রাস্তা পার হচ্ছে। মহিলাটি রাস্তার মাঝে পিছন থেকে একটা ট্রাক আসছে।
প্রিয়তি কি করবে বুঝতে পারছে না। ট্রাকটা মহিলার কাছাকাছি চলে আসল।প্রিয়তি দৌঁড়ে গিয়ে বৃদ্ধ মহিলাটিকে নিয়ে রাস্তার পাশের ঝোপে গিয়ে পরলো।
প্রিয়তিঃ আপনার কোথাও লাগেনি তো দাদু।
দাদুঃ আমি ঠিক আছি। কিন্তু পায়ে ব্যাথা পেয়েছি। তোমায় অনেক ধন্যবাদ মেয়ে আমাকে বাঁচানোর জন্য।
প্রিয়তিঃ না না দাদু ধন্যবাদ দিতে হবেনা।এটা আমার কর্তব্য।
বৃদ্ধ মহিলাটি প্রিয়তির কপালে চুমু দিয়ে বললো,,, তোমার নাম কি মেয়ে।
প্রিয়তি মিষ্টি হেসে,,,,, আমার নাম প্রিয়তি।
দাদুঃ যেমন মিষ্টি তুমি তেমন তোমার নামটাও।
প্রিয়তি মুচকি হাসল বৃদ্ধ মহিলাটির কথায়।
প্রিয়তিঃ দাদু আপনি কোথায় যাবেন।আমি আপনাকে দিয়ে আসি।
দাদুঃ আমি গ্রামে থাকি।এইখানে আমার ছেলে আর দাদুভাই এর সাথে দেখা করতে এসেছি। আমি একাই যেতে পারবো মেয়ে সমস্যা নাই।
প্রিয়তিঃ একদমই নয় দাদু।যদি আবার কিছু হয়। চলো আমি তোমায় তোমার ছেলের বাসায় দিয়ে আসি।
দাদুঃ আচ্ছা এত করে যখন বলছো তাহলে ঠিক আছে চল।

প্রিয়তি আর বৃদ্ধ মহিলাটি একটা অটোতে ওঠে। আধা ঘণ্টা পর একটা বড় বাড়ির সামনে এসে অটো থামলো।
প্রিয়তি ভাড়া দিয়ে দিলো অটোওয়ালাকে।
প্রিয়তিঃ দাদু তাহলে আমি যাই।
দাদুঃ যাই বললেতো হবেনা।চলো বাড়িতে। খেয়ে যাবে।না খাইয়ে তোমায় ছাড়ছি না।
অনেক বলার পর প্রিয়তি রাজি হলো।
প্রিয়তি হা করে বাড়িটি দেখছে।তিন তালা বিশিষ্ট একটি সুন্দর বাড়ি।বাড়িটির দুপাশে ফুলের বাগান। ফুলের বাগানের জন্য বাড়িটির সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে।
দাদুঃ বাড়ি পরে দেখো মেয়ে ভিতরে চলো।
দরজা খোলাই ছিল।দুজন ভিতরে প্রবেশ করলো।
ভিতরে ডুকে প্রিয়তির মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা।
প্রিয়তি মনে মনে,,, বাহির থেকে ভিতরে আরো সুন্দর।
দাদু প্রিয়তির হাত টেনে সোফায় বসিয়ে দিলো।
দাদুঃ বউমা বউমা কোথায় তুমি।
তখনি একজন মাঝ বয়সী মহিলা সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে,,,,, মা তুমি এসে গেছো। আদনানকে পাঠিয়েছি কিন্তু ও ফোন করে বললো তোমায় খুঁজে পাচ্ছে না।কত চিন্তায় ছিলাম জানো। আদনানকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি তুমি চলে এসেছো।
দাদুঃ তাই কর রাইসা।আর বড় দাদুভাইকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো। কতদিন দেখি নাই আমার দাদুভাইকে।তা বউমা ছোটজন কই।
রাইসা বেগমঃ ছোটজন ঘুমাচ্ছে। আমি ওঠিয়ে দিচ্ছি।
দাদুঃ না না ঘুমোক।ঘুম থেকে ওঠলে দেখা করবো।
রাইসা বেগম সোফার দিকে তাকিয়ে অবাক হলেন।
রাইসা বেগমঃ মা মেয়েটি কি হয় তোমার।
দাদু তখন রাস্তার সব ঘটনা খুলে বললো রাইসা বেগমকে।
রাইসা বেগম প্রিয়তির কাছে গিয়ে,,,,, মা তোমার নাম কি।
প্রিয়তিঃ প্রিয়তি।
রাইসা বেগমঃ বাহ্ ভারী মিষ্টি।
রাইসা বেগমঃ কে কে আছে বাড়িতে তোমার।
কথাটি বলার সাথে সাথে প্রিয়তির মনটা খারাপ হয়ে গেল।
প্রিয়তিঃ আমার কেউ নেই।
রাইসা বেগম অবাক হলেন।
প্রিয়তিঃ যখন আমার ছয় বছর তখন বাবা-মা আমায় ছেড়ে চলে গেছে।
রাইসা বেগম খুব কষ্ট পেলেন।
রাইসা বেগমঃ আসলে আমি দুঃখিত। কে বললো তোমার কেউ নাই। আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে।এখন থেকে আমাকে মা বলে ডাকবে।
প্রিয়তি রাইসা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে,,,, মা,,,, বললো।
রাইসা বেগম প্রিয়তির মথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রাইসা বেগমঃ চলো খাবার খাবে।নিশ্চয়ই অনেক খিদে পেয়েছে আমার মেয়ের।
মেয়ে ডাকটা শুনতে প্রিয়তির খুব ভালো লাগছে।
চোখ মুছে প্রিয়তি সিঁড়ির দিকে চোখ পরতেই খুব ভয় পেয়ে গেল।

চলবে……..
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

#আমার_একাকীত্বের_শহরে___আপনি
#লেখিকা__ফিহা___আহমেদ
#পর্বসংখ্যা__০৫

মিসেস রাইসাঃ তুমি বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।মা আপনি আমার সাথে আসুন।
প্রিয়তি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।
প্রিয়তি চোখের জল মুছে সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে ভয় পেলো। প্রিয়তি চোখ ডলতে ডলতে আবারও তাকালো ভুল দেখছে নাতো।
প্রিয়তি বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো- আ,,,আপনি।

জিহান সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে – আমার বাড়িতে আমি না থাকলে কে থাকবে।
প্রিয়তির আর বুঝতে বাকি নেই সে খান বাড়ি চলে এসেছে। তার মানে ওই দাদু জিহান খানের দাদু।দাদু তাইলে এনাদের কথা বলছিলেন তখন।
— ভালোয় ভালোয় কেটে পরি।
যদি ওনি ওনার মাকে সব বলে দেয়। ছিঃ ছিঃ কি ভাববেন আন্টি আমায়।
জিহান প্রিয়তিকে চুপ থাকতে দেখে,,,,,,,
— এই মেয়ে কথা বলছো না কেন কি এত ভাবছো।
প্রিয়তি তাড়াতাড়ি করে বাড়ি থেকে কেটে পরলো।
জিহান হাবলার মতো ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
জিহানঃ আজব মেয়ে তো। এইভাবে চলে গেল কেন।
মিসেস রাইসাঃ প্রিয়তি খাবার খে……..
মেয়েটা কই গেলো। জিহান প্রিয়তিকে দেখেছিস।
জিহান ব্রু কুঁচকে,,, প্রিয়তি।
মিসেস রাইসাঃ একটু আগেও এইখানে বসেছিল।
মিসেস রাইসা খুব কষ্ট পেলেন।মেয়েটা আমায় না বলে চলে গেল। ওনি দীর্ঘশ্বাস পেলে চলে গেলেন নিজের ঘরে।
জিহান পেন্টের পকেটে দুহাত রেখে,,,,,, প্রিয়তি,,,,,নাইস নেম।

প্রিয়তি বাড়িতে ডুকতে ডুকতে – যাক বাবা বেঁচে গেছি।কথায় আছে না,,,যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।
প্রিয়তি গোসল সেরে খাওয়া শেষ করে ঘুম দিলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে এখন ঘুমের মাধ্যমেই সব শান্তি।

জিহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রিয়তির কথা ভাবছে।
— এতদিন মেয়েটাকে ভালো করে দেখিনি।সত্যি মেয়েটার চেহারা মায়াবী। চোখগুলো টানা টানা। আর গোলাপি ঠোঁটের কথা ভাবতেই জিহানের শরীরে অদ্ভুত শিহরন খেলে গেল। গোলাপি ঠোঁটের পাশে কালো তিলটা ফর্সা চেহারায় মারাত্মক লাগছে।আমার হৃৎস্পন্দন যেন বন্ধ হয়ে গেছে। ওই চোখ যেন আমার সর্বনাশ ডেকে আনলো।জিহান চোখ বন্ধ করে প্রিয়তির গঠন ভাবছে আর ঘন ঘন নিশ্বাস পেলছে।

— ছোট দাদুভাই ও ছোট দাদুভাই ঘুম ভাঙলো কি।
কন্ঠ শুনে জিহান অবাক হয়ে পিছনে তাকালো।
জিহানঃ দাদু তুমি। তুৃমি যে আসবে আমাকে ফোন দিয়ে জানাবেনা – অভিমান করে বললো।
দাদু জিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে – রাগ করিস না দাদুভাই তোর মাকে ফোন দিয়ে আমি বলেছি।
জিহানঃ কই মা তো বললো না আমায়।
তখনি মিসেস রাইসা জিহানের ঘরে ডুকতে ডুকতে – তুই ভার্সিটি থেকে এসেই ঘুম দিয়েছিলি।বলার সুযোগ দিলি কই।তোর ভাই আদনান কে পাঠিয়েছি।
তারপর মিসেস রাইসা রাস্তার সব ঘটনা খুলে বললো।
জিহান মুচকি হাসল সব শুনে।
সবার পিছন থেকে – বাহ্। আমাকে ছাড়াই বুড়ী আড্ডা দিচ্ছে। আমাকে বুড়ী এখন আর একটুও ভালোবাসেনা।
আদনান এই কথা বলে তার দাদুকে জড়িয়ে ধরে।
দাদুঃ কে বলে তোকে এইসব ফাউ কথা।আমি তোকে অনেক ভালোবাসি দাদুভাই।
জিহার আর মিসেস রাইসা দাদি আর নাতির কান্ড দেখে হাসছে।
তারা সবাই মিলে গল্প করতে থাকে।

তৃধা খালাম্মার বাড়িতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।সাদা থ্রি পিচ এর ওপর দিয়ে হিজাব পরছে ঠিক তখনই মোবাইল বেজে উঠল। তৃধা খুব বিরক্ত হলো।
—- এখনই করোর ফোন দিতে হলো।
তৃধা ফোন না ধরে হিজাব পরছে। কিন্তু বার বার ফোন আসছে দেখে বাধ্য হয়ে ফোন রিসিভ করলো।
তৃধাঃ সমস্যা কি এত ফোন দিচ্ছো কেন।
তাসরিফঃ তৃধা তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
তৃধাঃ সিরিয়াসলি। তোমার আবার গুরুত্বপূর্ণ কথা। দেখ তাসরিফ আমি এখন মজার মুডে নাই খালাম্মার বাসায় যাবো তৈরি হচ্ছি এইসময় ফোন না দিলে হতো না।
তাসরিফঃ মা আমায় মেয়ে দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে। মা চায় আমি বিয়ে করি।
তৃধাঃ দেখ মজার মুডে নাই আগেই বলছি।এতই যখন শখ তো বিয়ে করে নে।বার বার ফোন দিবিনা বলছি।বলেই তৃধা ফোন কেটে দিল।

তৃধা রাগে গজগজ করতে করতে – সবসময় এত মজার মুডে থাকে কিভাবে বজ্জাতটা।মন চাচ্ছে গিয়ে কতক্ষণ মেরে আসি।কাছে থাকলে চুল একটাও থাকতো না।
–তৃধা মা হলো তোর। (মারিয়া বেগম তৃধার মা)
তৃধাঃ হ্যাঁ।আমি তৈরি চলো।
মারিয়া বেগমঃ বুঝিনা বাবা কি এত সাজুগুজু করিস তোরা।ঘন্টার পর ঘন্টা লাগিয়ে দিস সাজতে সাজতে।
তৃধাঃ কই এত সাজলাম আম্মু। একটুই তো।
মারিয়া বেগমঃ হইছে আমাকে আর বুঝাতে হবে না চল দেরি হয়ে যাচ্ছে। তোর খালা ফোন করতে করতে বেহুশ হইয়া যাইতাছে।

তিন ঘন্টা জার্নি করে খালাম্মার বাড়িতে আসল তারা।
ফাহমিদা বেগম মারিয়া বেগমকে দেখে জড়িয়ে ধরলো।
ফাহমিদা বেগমঃ কতদিন পর তোর সাথে দেখা হলো বোন।তা পিচ্চি কই।
তৃধা পিছন থেকে – খালাম্মা আমি মোটেও আর পিচ্চি নেই।
ফাহমিদা বেগম একগাল হেসে তৃধাকে জড়িয়ে ধরলেন।
ফাহমিদা বেগমঃ আমার মা কেমন আছে।
তৃধাঃ ভালো আছি খালাম্মা। নিশি আপু কই আপুর কাছে যাব।
ফাহমিদা বেগমঃ নিশি নিজের ঘরেই আছে গিয়ে দেখ।
তৃধা মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।

তৃধা নিশির রুমে গিয়ে দেখে নিশি সাজুগুজু করছে।
তৃধা পিছন থেকে নিশিকে জড়িয়ে ধরে।
নিশি হালকা ভয় পেলো।পরক্ষনে তৃধাকে আয়নাতে দেখে – বাহ্ পিচ্চিটা কত বড় হয়ে গেছে।
তৃধা গাল ফুলিয়ে – আমি মোটে ও পিচ্চি নই।
নিশি হেসে দিলো তৃধার গাল ফোলানো দেখে।
নিশি তৃধার গাল দুটি টেনে – হয়েছে হয়েছে আর রাগ করতে হবেনা।পাগলি মেয়ে।
তৃধাঃ নিশি আপু তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে নীল শাড়িতে।দুলাভাইয়া পাগল হয়ে যাবে তোমাকে দেখে।তৃধার কথায় নিশি লজ্জা পেলো। লজ্জায় গাল দুটিতে লাল আভা ফুটে উঠেছে।
তখনই ফাহমিদা বেগম আসলেন নিশি আপুর ঘরে।
ফাহমিদা বেগমঃ হলো তোর নিশি। পাএ পক্ষ চলে এসেছে তাড়া দিচ্ছে।
পাএপক্ষের কথা শুনতেই নিশি লজ্জা পেলো।

ফাহমিদা বেগম নিশিকে পাএপক্ষের সামনে নিয়ে গেলেন।তৃধা ও খুশি খুশি নিশির সাথে আসলো।
সামনে তাকাতেই তৃধার মাথায় বাজ পরলো।
তৃধা আনমনেই বলে উঠলো – তা…তাসরিফ।
তাসরিফ নিজের নাম শুনতেই সামনে তাকিয়ে থমকে গেল। তৃধা… তৃধা এইখানে কি করছে।

তৃধার কলিজাটা জ্বলে যাচ্ছে।
— তারমানে তাসরিফ সত্যি বলছিল।
নিশি ফিসফিস করে তৃধাকে বলে – তৃধা ছেলেটা কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম।আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। দোয়া কর বিয়েটা যেন এর সাথেই হয়।
তৃধা অনেক কষ্টে মুখে হাসি ফুটিয়ে হ্যাঁ বললো।
তৃধার কান্না আসছে।কিন্তু সবার সামনে কান্না করতে ও পারছেনা।
যাকে এত ভালোবাসে সে কিনা এখন অন্যকারোর। তৃধার কলিজা ফেটে যাচ্ছে। তাসরিফ স্থির দৃষ্টিতে তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে। তার যে কিছুই করার নেই।
মায়ের কথা না শুনলে মা অঘটন ঘটিয়ে বসবে।বাধ্য হয়ে আমার রাজি হতে হলো।
তাসরিফের মা মিসেস জয়ন্তী বলে – মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে আপনারা বললে আজই ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়ে যাক।
ফাহমিদা বেগমঃ আমরাও চাই ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হোক।
তাসরিফের বাবা জয়নাল আহমেদ – আমারও মেয়ে পছন্দ হয়েছে। বিয়েটা আজই হয়ে যাক।আমি সব ব্যাবস্থা করে এসেছি।
তৃধা এক দৃষ্টিতে তাসরিফের দিকে তাকিয়ে আছে।
— কিভাবে পারলো তাসরিফ আমার সাথে এমনটা করতে।ও কি পারতো না আমার কথা তার বাবা-মাকে বলতে। আসলে আমাকে কোনদিন ভালোই বাসেনি।তৃধা চলে গেল সেখানে থেকে।
সবার সম্মতিতে দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
নিশি অনেক খুশি। সে এমন ছেলেকেই নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে চেয়েছিল আর পেয়েও গেছে।

চলবে…….
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here