আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,০৮,০৯

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,০৮,০৯
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_০৮

বর্তমানে প্রিয়তি গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় আছে।
চটপট করছে ছাড় পাওয়ার জন্য।
প্রিয়তিঃ সমস্যা কি আপনার জিহান আমাকে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছেন কেন।ছাড়ুন বলছি।
জিহান চেয়ারে বসে আয়েশ করে পায়ের ওপর পা তুলে আপেল খাচ্ছে আর প্রিয়তির চটপট দেখছে। প্রিয়তির কথা শুনে খাওয়া বন্ধ করে প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে,,,
— সবাইকে হার্টএটাক থেকে বাঁচালাম।
প্রিয়তিঃ হার্টএটাক মানে।সবাই আমাকে দেখলে হার্টএটাক কেন করবে।
জিহান উচ্চ শব্দে হাসতে হাসতে — তোমাকে দেখতে ডাইনীদের মতো লাগছে। যে কেউ দেখলে হার্টএটাক করবেই। আমারতো মনে হচ্ছে ডাইনীদের তোমার থেকে আর ভালো দেখা যায়। আমার উচিত সবাইকে তোমার থেকে বাঁচানো।
প্রিয়তির খুব রাগ হলো ডাইনী বলাতে।
প্রিয়তিঃ আমাকে দেখতে কি এতই খারাপ দেখাচ্ছে। আপনি ইচ্ছে করে এসব করছেন।আমি কি অন্যায় করেছি। প্লিজ ছেড়ে দিন।
জিহানঃ অনেক অন্যায় করেছ।একটু আগেও একটা অন্যায় করেছ।
প্রিয়তিঃ মানে কি আমার তো মনে হচ্ছে না কোনো অন্যায় করেছি।ছাড়ুন আমায়।জাইমা আপু অপেক্ষা করছে আমার জন্য।
জিহানঃ আজ সারাদিন তোমায় এইভাবেই থাকতে হবে। চিল্লাচিল্লি করে কোনো লাভ নাই।
জিহান প্রিয়তির মুখে কাপড় বেঁধে বাগান থেকে চলে গেল।

আর প্রিয়তি ছুটার জন্য চটপট করছে। মুখে কাপড় বেঁধে দেওয়ার কারণে কথাও বলতে পারছেনা। শুধু গোঙানির শব্দ বের হচ্ছে।
তখনি কার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল প্রিয়তি।শব্দ শুনে আরো জোরে জোরে গোঙাচ্ছে।
পিছনে থেকে আদনান– প্রিয়তি তোমার এই অবস্থা কেন।কে তোমাকে এইভাবে বেঁধে রেখেছে শুধু নাম বল তার। এমন অবস্থা করবো জীবনে আর এইসব করার সাহস পাবেনা।
আদনান প্রিয়তির বাঁধন খুলে দিল। মুখ থেকে কাপড় খুলে দিল।
প্রিয়তি জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।
আদনান প্রিয়তির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে,,,,,,
— ঠিক আছ এখন তুমি।
প্রিয়তি জোরপূর্বক হেসে — হুম ঠিক আছি।
— ধন্যবাদ আপনাকে।
বলেই প্রিয়তি দৌড়ে বাগান থেকে চলে গেল।
আদনান কিছুই বুঝতে পারছেনা।প্রিয়তি এইভাবে চলে গেল কেন।

সবার অবস্থা খুব খারাপ। হলুদ দিয়ে একেকজনকে ভূতের মতো লাগছে।
তৃধাকে হলুদ লাগানোর জন্য চার-পাঁচ জন মেয়ে দৌঁড়াচ্ছে।
তৃধার হাতে হলুদের বাটি। হলুদের বাটি নিয়ে দৌঁড়াচ্ছে। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে করে ফেললো একটা অঘটন।
তৃধা একটা ইটের টুকরোর সাথে উষ্ঠা খেয়ে হলুদের বাটি নিয়ে পরলো রাদিমের ওপর। বেচারা রাদিমের অবস্থা খারাপ। হলুদের বাটি রাদিমের মুখের ওপর। তৃধার হাতে থাকা হলুদ রাদিমের পাঞ্জাবীতে লেগেছে।

তৃধা মুখের ওপর থেকে হলুদের বাটি সরিয়ে , , ,
— আ…আপনি।
রাদিমঃ ইচ্ছে করে এইসব করেছ তাইনা।আরে তোমার সাথে একটু মজাই তো করি তাই বলে এইভাবে প্রতিশোধ নিবে।
তৃধাঃ আমি ইচ্ছে করে করিনি বিশ্বাস করুন। ওরা আমার মুখে হলুদ দেওয়ার জন্য দৌঁড়াচ্ছিল। কিন্তু….
রাদিমঃ হয়েছে এইবার উঠ আমার ওপর থেকে আর বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলতে হবেনা।
তৃধা রাদিমের ওপর থেকে ওঠে দাঁড়ালো।
রাদিম ওঠে সোজা হাঁটা শুরু করলো।
পিছন থেকে তৃধা,,,
— আরে আরে আপনার লুঙ্গি খুলে যাচ্ছে । লুঙ্গি যখন পরতেই পারেননা তাহলে ঢং করে পরেন কেন।
রাদিম নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই লুঙ্গি অর্ধেকে পরে হাবুডুবু খাচ্ছে। বেচারা লুঙ্গি ওপরে তুলে দৌঁড়ে কোনোরকম সেখান থেকে পালিয়ে আসল।
এইদিকে রাদিমের এইসব কান্ড দেখে সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
তৃধাও না হেসে পারলো না।
— সত্যি ছেলেটা অদ্ভুত।কিছু না কিছু করে সবাইকে হাসিয়ে ছাড়ে।

রাদিম জিহানের ঘরে ডুকেই লুঙ্গিটা খুলে খাটের ওপর ছুঁড়ে মারল।
জিহান ওয়াশরুমের দরজা মেরে — কিরে রাদু লুঙ্গি খুলেছিস কেন।মান-সম্মান নেই নাকি।
রাদিমঃ মান সম্মান তো ওইখানেই শেষ করে আসলাম।
জিহানঃ মানে কোথায়।
রাদিম সব ঘটনা খুলে বললো।
জিহান সব শুনে হাসতে হাসতে খাটের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে।
রাদিম রেগে জিহানকে বালিশ ছুঁড়ে মারে।
জিহান বালিশ ধরে — রাগ করছিস কেন।তোকে তো আগেই বলেছি এইসব লুঙ্গি-পুঙ্গি পরিস না। দেখ আমিও পরিনি।মান-সম্মান এর ব্যাপার।যখন পরতেই পারিসনা তাহলে পরিস কেন।
হঠাৎ করেই জিহানের প্রিয়তির কথা মনে পরতেই ,,,
— ওহ্ শিট আমি তো ওর কথা ভুলেই গেলাম।
রাদিমঃ কার কথা বলছিস।
জিহান কিছু না বলে দৌঁড়ে চলে গেল।
রাদিমঃ যাহ্ বাবা এর আবার কি হলো।

জিহান বাগানে গিয়ে প্রিয়তিকে না পেয়ে অবাক হলো।
— মেয়েটা কি করে ছুটলো।নিশ্চয়ই কেউ ওকে সাহায্য করেছে। তার মানে যখন আমি ওকে বেঁধেছিলাম। কেউ আমাদের অনুসরণ করেছিল। তখনই আমার মনে হয়েছিল কেউ আমাদের দু’জনের আশেপাশে ছিল।কে হতে পারে।
জিহান প্রিয়তিকে খুঁজতে শুরু করলো।
— প্রিয়তিই বলতে পারবে কে ওকে সাহায্য করেছে।
খুঁজতে খুঁজতে প্রিয়তিকে কিচেনে রাইসা বেগমের সাথে দেখলো জিহান।
— মায়ের সামনে ডাকা ঠিক হবেনা।

জিহান সেখান থেকে স্টেজে জাইমার কাছে গিয়ে দু’হাতে হলুদ নিয়ে বোনের গালে হলুদ লাগিয়ে দিল।
জাইমা জিহানকে চুপচাপ দেখে…..
জাইমাঃ ভাইয়া তুই এত চুপচাপ কেন। আমার বিয়েতে তুই খুশি নয়।
জিহানঃ কে বললো তোকে এইসব আমি অনেক খুশি। আমার পিচ্চি বোনটার বিয়ে বলে কথা।
জাইমাঃ আমি ওই বাড়িতে যাওয়ার পর মনে রাখবি তো আমায়।
জিহান চলচল চোখে জাইমার দিকে তাকালো,,,,
— এইসব কি বলছিস তুই। দরকার হলে জয়কে ঘরজামাই করে রেখে দিব।
জিহানের কথা শুনে জাইমা হেসে দিলো।
জিহানঃ পাগলি বোন আমার।

বাবা তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। (রোহা)
আতিক সাহেব(রোহার বাবা)ঃ বল মামনি কি বলবে।
রোহাঃ বাবা আমি একজনকে ভালোবাসি।
আতিক সাহেবঃ এটাতো ভালো কথা।তো কে সেই ভাগ্যবান যাকে আমার মেয়ে ভালোবাসে।
রোহাঃ বাবা রাজিব খান এর ছোট ছেলে জিহান খান।
আতিক সাহেবঃ হুম। সবই বুঝলাম।তো এখন কি করতে হবে সেটা বল।
রোহাঃ তুমি জিহানের বাবাকে বল আমাদের দু’জনের বিয়ের কথা।
আতিক সাহেবঃ ঠিক আছে মামনি। তুমি নিশ্চিতে থাক।আমি সব ঠিক করে দিব।
রোহাঃ ধন্যবাদ বাবা।এইজন্যই আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
বলে আতিক সাহেবর ঘর থেকে চলে গেল।

চলবে…….
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_০৯

রাত এগারোটা উনপঞ্চাশ মিনিট বেজে চলেছে কিন্তু প্রিয়তির চোখে ঘুম নেই।
— ছাঁদ থেকে ঘুরে আসি।
প্রিয়তি সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠছে। হাঁটার মাঝে প্রিয়তির হাতে টান পরে।প্রিয়তি ভয় পেয়ে যায়।বুকে থু থু দিয়ে আশেপাশে চোখ বুলালো।
— কই কেউ নেই তো।কিন্তু আমার মনে হলো কেউ আমার হাতে ধরেছে।
আবারও হাতে টান পরলো।
পাশে তাকাতেই দেখে জিহান প্রিয়তির হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়তিঃ সমস্যা কি আপনার সারাক্ষণ আমার পিছনে না লাগলে আপনার শান্তি লাগেনা।
জিহান কিছু না বলে প্রিয়তির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়তিঃ আজব তো। কথা বলছেন না কেন।আমার হাত ছাড়ুন বলছি।

জিহান কিছু না বলে প্রিয়তিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
প্রিয়তিঃ সমস্যা কি আমার পথ আটকাচ্ছেন কেন।
জিহানের ডান হাত প্রিয়তির গাল স্পর্শ করলো।প্রিয়তির সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। শরীর হিম হয়ে গেল।
জিহান নেশাক্ত কন্ঠে……
— আমার চোখের দিকে তাকাও।
প্রিয়তি না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
প্রিয়তিকে চোখ বন্ধ করে থাকতে দেখে জিহান ধমক দিয়ে,,,,,,,
— সমস্যা কি তাকাচ্ছো না কেন।তাকাও বলছি।না হয় খুব খারাপ হবে।
জিহানের ধমক খেয়ে প্রিয়তি সাথে সাথে চোখ খুললো। চোখ বড় বড় করে জিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রিয়তি এক মিনিট জিহানের চোখে চোখ রেখে চোখ নিচে নামিয়ে ফেললো।
— আপনার চোখে চোখ রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয় জিহান বাবু।আপনার চোখের প্রেমে সেই প্রথম দিনই পরেছি।(প্রিয়তি মনে মনে)
জিহানঃ কি হলো চোখ নামিয়ে ফেললে কেন।
প্রিয়তিঃ আ…আমার ঘুৃ…ঘুম পাচ্ছে। আমি যাই।
জিহানঃ স্টুপিড মেয়ে। এইটা আমি বলিনি।তুমি কি সব ছেলেদের জাদু করো নাকি।
প্রিয়তিঃ মা…..মানে।জা…জাদু কেন করতে যাব।
জিহান মুচকি হাসল।

জিহানের আজকে প্রিয়তির নেশা বেশিই ধরেছে।আজকে তার প্রেয়সীকে হলুদ রঙের শাড়িতে “হলুদপরীর” মতো লেগেছে। এখনো তার প্রেয়সীর নেশা তার ভিতরটা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।
আচ্ছা একটু ছুঁয়ে দিলে কি খুব বড় পাপ হবে। সে তো একান্তই শুধু আমার। ভালোবেসে ফেলেছি প্রেয়সী। কখন, কবে ঠিক নিজেও জানি না। শুধু এইটুকু বুঝতে পারছি কারো সাথে তোমায় সহ্য হয়না।কার সাথে তোমায় দেখলে মন চায় খুন করে ফেলি।
। “”ভালোবাসি হলুদপরী””।
আজ থেকে হলুদ রঙের প্রেমে পরলাম।
জিহান প্রিয়তির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে এইসব কথা বললো।

হঠাৎ করেই জিহান প্রিয়তিকে কোলে তুলে নিলো। কোলে তুলে ছাঁদে নিয়ে গেলো।
প্রিয়তির কিছুক্ষণের জন্য মাথা হ্যাং হয়ে গেল।
— জিহান বাবু কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। ওনার হঠাৎ হলো কি।দিনেও তো আমায় এত এত শাস্তি দিলেন হঠাৎ কি হলো। এত ভালো হয়ে গেল কি করে।
জিহান প্রিয়তিকে ছাঁদের ডান পাশে থাকা বেঞ্চে বসিয়ে দিল। নিজেও প্রিয়তির পাশে বসলো।
প্রিয়তিকে নিজের কাছে এনে প্রিয়তির গালের সাথে নিজের গাল স্পর্শ করলো।
প্রিয়তি পুরো শরীর কেঁপে উঠল।বুক ধুকপুক করছে দ্রুত গতিতে।
দুজন দুজনের কাছাকাছি বসে আছে। আর হার্টবিট এর আওয়াজ শুনছে।
প্রিয়তি কেন জানি জিহানকে বাঁধাও দিতে পারছেনা।কেন পারছেনা প্রিয়তি নিজেও জানে না।
প্রিয়তি মাথা নিচু করে বসে আছে। জিহানের দিকে তাকাতেই দেখলো জিহান কেমন নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে।
জিহানের নেশাক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে প্রিয়তির কলিজা কেঁপে উঠল।
ভয়ে ঠোঁট গুলো কাঁপা শুরু করলো প্রিয়তির।
জিহান প্রিয়তির কাঁপা ঠোঁট দেখে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। প্রিয়তির ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিল।
প্রিয়তি পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে জিহানের স্পর্শ পেয়ে। ভয়ে প্রিয়তির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো।
গালে তরল কিছুর স্পর্শ পেয়ে জিহান হুঁশে এলো। প্রিয়তির ঠোঁট ছেড়ে দিলো।
জিহানঃ স…সরি। বলে ছাঁদ থেকে চলে গেল।
আর প্রিয়তি বেঞ্চে বসে বসে কান্না করছে।
সুখে কাঁদছে না দুঃখে কাঁদছে প্রিয়তি নিজেও জানে না।কিন্তু এখন ভীষণ কাঁদতে মন চাচ্ছে।
প্রিয়তি কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে গেল।
খাটে শুইয়ে বালিশ মাথার ওপর দিয়ে কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে বালিশ মাথার ওপর দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো প্রিয়তি।

চলবে…….
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here