আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,পর্বসংখ্যা_২৬

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,পর্বসংখ্যা_২৬
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ

— জয় তুমি এখানে কি করছো।বাড়িতে মেহমানরা রয়েছে এখন যাও এখান থেকে পরে কথা বলব তোমার সাথে। আজ বিয়ে অনেক কাজ পরে আছে।এখন আমায় বিরক্ত করো না যাও।
— এমন করছো কেন জাইমা।আজ দু’দিন তোমার আদর পাচ্ছি না। তোমার আদর না পেয়ে কেমন শুকিয়ে যাচ্ছি দেখ।
দু’জনের কথা শুনে কিচেনে থাকা মহিলাগুলো মিটমিটিয়ে হাসছে।
জাইমা চোখ গরম করে জয়ের দিকে তাকালো।
জয় ভয় পেয়ে চলে গেল কিচেন থেকে।

প্রিয়তি তৃধাকে ফোন করে যাচ্ছে তৃধার ফোন ধরার কোনো খবর নাই।
— এই মেয়েটাকে এতগুলো ফোন দিলাম ধরছে না কেন। গায়ে হলুদেও আসেনি। আজ বিয়ে যদি না আসে তাহলে ওর সাথে আমি কথা বলা বন্ধ করে দিব😕।
প্রিয়তি মন খারাপ করে বসে আছে।
তখন পিছন থেকে প্রিয়তিকে কেউ জড়িয়ে ধরে।
প্রিয়তি বিরক্ত হয়ে পিছনে তাকাতেই বড়সড় ঝটকা খেলো।
— তুই…..
— সরি রে আম্মু অসুস্থ ছিল তাই আসতে পারি নাই। প্লিজ প্রিয় রাগ করিস না🙁।
প্রিয়তি তৃধাকে জড়িয়ে ধরে — ঠিক আছে মাপ করে দিলাম😊।
তুই এসেছিস এতেই আমি অনেক বেশি খুশি।

পাল্লার থেকে আসা ছয়জন মহিলা রোহা আর প্রিয়তিকে সাজাচ্ছে।
তিন ঘন্টা ধরে দুজনকে বসিয়ে রেখেছে।প্রিয়তির প্রচুর অসহ্য লাগছে।
— আর কতক্ষণ লাগবে আপুরা😕।
— এইতো আর দশমিনিট এরপর তোমার ছুটি।
— কিহ্ আরো দশমিনিট।প্লিজ তাড়াতাড়ি করো আমার কোমর ব্যাথা করছে।
প্রিয়তির কথা শুনে রোহা হেসে দিলো।
— প্রিয়তি শুধু একদিনের জন্য এ-ই দিনটি তো আর আসবে না।
প্রিয়তি মুচকি হাসল রোহার কথায়।

রোহা গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা পরেছে আর প্রিয়তি ব্লাক কালার লেহেঙ্গা পরেছে। দুজনকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। দুজনের দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। চোখ সরাতেই পারছে না কেউ।
জিহান ব্লাক কালার সেরোয়ানি আর আদনান গোল্ডেন কালার সেরোয়ানি পরেছে।দুজনকে বেশ লাগছে।রোহা আর প্রিয়তি তাদের জামাইদের দেখে বড়সড় ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। দুজনেই আড় চোখ তাকাচ্ছে জামাইদের দিকে।

কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। আদনান আর রোহার বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার পর জিহান আর প্রিয়তির বিয়ে পড়ানো শুরু করলো কাজি সাহেব।
কাজি সাহেব প্রিয়তিকে কবুল বলতে বলে।প্রিয়তি কবুল বলতে যাবে তার আগেই কেউ প্রিয়তির গলায় ছুরি ধরে।
জিহান বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায়।

— কি করছিস মাহবিন পাগল হয়ে গেলি তুই।প্রিয়তির গলা থেকে ছুরি সরিয়ে পেল।
— না আজকে আমি এই মেয়েকে মেরে ফেলবো । এই মেয়ের জন্য তুমি আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছ।
আমি তোমায় ভালোবাসি জিহান ভাই। তুমি আমার হয়ে যাও প্লিজ…………
— পাগলামি বন্ধ কর মাহবিন।প্রিয়তির কিছু হলে আমি তোকে খুন করে ফেলবো।
মাহবিন কোনো কথা শুনছে না।

পিছন থেকে আদনান মাহবিনের মাথায় পিস্তল ধরে।
মিসেস কুহেলি আর আরিফ খান ভয় পেয়ে যায় আদনানের কাজে।
— মাহবিন প্রিয়তিকে ছেড়ে দে। যদি কথা না শুনিস তোকে গুলি করতে আমি একবার ও ভাববো না।

আর কাকা তোমার মেয়েকে সামলে রাখো।সবকিছুর মূল হলে তুমি।
আমাদের দুই ভাইয়ের সাথে ঝামেলা লাগিয়ে দিয়েছ।রোহা আর প্রিয়তিকে আমাকে দিয়ে কিডন্যাপ করিয়েছ।সবার মাঝে ভুল বুঝাবুঝি করিয়েছ।সামান্য সম্পওির জন্য তুমি এতটা নিচে নামতে পারলে।প্রিয়তিকে আমি ভালোবাসতাম এটা সত্যি। প্রিয়তিকে নিজের করার জন্য রোহার সাথে মিথ্যে বিয়ের নাটক করলাম।কিন্তু রোহার সাথে স্বামী-স্ত্রীর নাটক করতে করতে ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পরলাম। রোহাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

আদনান এর মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনে রোহা অবাক হলো। রোহার ও একই অবস্থা। আদনানের সাথে মিথ্যে বিয়ের নাটক করতে করতে আদনানকে ভালোবেসে ফেলেছে।
সবাই আদনানের কথা শুনে আরিফ খানকে বাজে কথা শুনানো শুরু করলো।
কুহেলি খান আদনানের পায়ে ধরে বসে আছে মাহবিনকে ছেড়ে দিতে।বাবার কথায় আদনান মাহবিনকে ছেড়ে দেয়।

রাজিব খান তার ছোট ভাইকে তার স্রী আর মেয়ে সহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
প্রিয়তি আর জিহানের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
রাজিব খানের ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তার ভাই এমন কাজ করবে।
— মন খারাপ করো না যা হবার হয়ে গেল।এখন আর কোনো ঝামেলা নাই। তুমি আদনানকে কিছু বলো না। এখন ওর সাথে রোহার বিয়ে হয়ে গেছে এখন আর কোনো সমস্যা নাই।


রাদিম আর তৃধা জিহানের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছুতেই জিহানকে ঘরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
— দশ হাজার টাকা ছাড়া ঘরে প্রবেশ করা নিষেধ।
আর কোনো উপায় না পেয়ে জিহান টাকা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।


জয় আর জাইমা আদনানের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
জাইমাঃ বিশ হাজার টাকা দিলে ভাবির কাছে যেতে দিব।
আদনানও কোনো উপায় না পেয়ে বিশ হাজার টাকা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।

বেলী আর রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সজ্জিত খাটে বসে আছে প্রিয়তি।জিহান প্রিয়তির কাছে এসে ঘোমটা তুলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন কত জনম দেখে নাই।
জিহানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়তি লজ্জা পেয়ে আবার মাথায় ঘোমটা দিল।
জিহান আবার প্রিয়তির ঘোমটা তুলে দিল।প্রিয়তিকে কোলে তুলে আয়নার সামনে দাঁড় করালো।
— কি হলো আয়নার সামনে নিয়ে আসলেন কেন…..

জিহান কিছু না বলে প্রিয়তির শরীরে থাকা গহনা গুলো এক এক করে খুলে ফেললো।
আর প্রিয়তি আয়নার দিকে তাকিয়ে জিহানের কান্ডকারখানা দেখছে।
জিহান আলমারি থেকে গ্রিন কালারের একটা গহনার বাক্স এনে প্রিয়তির সামনে রাখলো।
প্রিয়তি ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে জিহানের দিকে।
জিহান গহনার বাক্সটা খুলে প্রিয়তিকে গলায় ডায়মন্ডের নেকলেস পরিয়ে দিল।
— এত সুন্দর নেকলেস….
— পছন্দ হয়েছে তোমার বউ😊।
— ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
— বাসর রাতের গিফট দিলাম তোমায়।এবার তুমি আমায় কি দেবে।

প্রিয়তির মন খারাপ হয়ে গেল কথাটি শুনে।
— আমি তো কিছুই কিনিনি।আগামীকাল দেব….
— আমি কিছু কিনে দেওয়ার কথা বলিনি।
— তাহলে….
— আজ তোমার কাছে আমি একটা মেয়ে বাবু গিফট চাইছি।
তখন প্রিয়তির সেদিনের কথা মনে পরে গেল।
— তাহলে জিহান বাবু এই কথাটি বুঝাতে চেয়েছিলেন আমায়।
লজ্জায় প্রিয়তি মাথা নিচু করে ফেললো।প্রিয়তিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জিহান প্রিয়তির মাঝে ডুব দিলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here