আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,১০,১১

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি,১০,১১
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১০

আজকে জাইমা আপুর বিয়ে। পাল্লার থেকে মেয়ে চারজন এসেছে। জাইমা আপুকে দু’ঘন্টা ধরে বসিয়ে বসিয়ে সাজাচ্ছে। বেচারি জাইমা আপুর অবস্থা খারাপ বসে থাকতে থাকতে। কিছুক্ষণ পর পর আমার আর তৃধার দিকে অসহায় ভাবে তাকাচ্ছে।
চারজন মিলে জাইমা আপুকে সাজাচ্ছে। প্রথমজন চুলের স্টাইল করছে।দ্বিতীয়জন মুখে মেকাপ করছে।তৃতীয়জন আপুর লাল বেনারসি শাড়ির কুঁচি ঠিক করছে।চতুর্থজন গহনা পরাচ্ছে।
ঠিক চার’ঘন্টা পর আপুকে সাজানো শেষ হলো।
জাইমা আপু চেয়ার থেকে ওঠে,,,
—- আমার তো সাজা শেষ এইবার তোমাদের পালা। এই যে চার মেকাপ সাজানোওয়ালী এদের দুজনকে একদম কোনোকিছুতে ছাড় দেবেন না।একদম আমার মতো করে সাজিয়ে দেবেন।

আমি পালিয়ে যেতে নিলেই আপু কান ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল।
জাইমাঃ প্রিয়তি একদম নো চিটিং। আমি যা বলছি তাই করবে।না হলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
— এরা ভাই-বোন দুটোই এক।অল্পতেই ঘাড় তেড়া হয়ে যায়।বুঝিনা বাবা এত রাগ মানুষ কেমনে করে তাও ঘন্টায় ঘন্টায় নয় সেকেন্ড সেকেন্ড।
প্রিয়তি অসহায় ভাবে পাল্লারের মেয়েদের দিকে তাকালো।
চারজনের মাঝে একজন খুব ছোট।লিলিপুট বললেও চলে।কিন্তু মেয়েটা অনেক সুন্দরী। মেয়েটা আমার অসহায়ত্ব দেখে মিষ্টি হেসে বলে,,,,,
— তোমাকে হালকা সাজাবো টেনশন করো না।
প্রিয়তিঃ ধন্যবাদ আপুমনি।আপনার নাম কি আপুমনি।
— মিশু।
প্রিয়তিঃ হুম। আপুমনি তোমার নামটা অনেক সুন্দর।
মিশুঃ আমার চাইতেও তোমার নাম বেশি সুন্দর। আর তুমি তোমার নামের মতোই মিষ্টি আর সুন্দর । তোমাকে বেশি সাজালে সাদা পেত্নীদের মতো লাগবে।তাই হালকা সাজাবো ভাবছি।
মিশু আপুর কথায় আমি হেসে দিলাম।সাথে তৃধাসহ তিনজন আপু হাসতে লাগলো।
আমাকে আর তৃধাকে সাজানো শেষ হলো।

স্টেজে গিয়ে দেখি বিয়ে পড়ানো শুরু হয়ে গেছে।
কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলো……. জয় ভাইয়াকে কবুল বলতে বললো। জয় ভাইয়া সাথে সাথে কবুল বলে দিল।
জয় ভাইয়াকে সাথে সাথে কবুল বলতে দেখে উপস্থিত সবাই হাসাহাসি শুরু করলো।
সবাইকে হাসতে দেখে জয় ভাইয়া লজ্জা পেলো।
জাইমা আপুকে কাজি সাহেব দশ মিনিট ধরে কবুল বলতে বলছে।আপু কবুল বলছেনা। আপু কেঁদেই যাচ্ছে। কবুল বলার নাম নেই।
মামনি জাইমা আপুর কানে কি যেন বললো।তারপর আপু কবুল বললো।
অবশেষে বিয়ের পর্ব শেষ হলো।এখন আপু শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে।
অনেক কান্নাকাটি করে আপুকে বিদায় দিল সবাই।

রাতে,,,,,
সবাই মন খারাপ করে আছে।এইদিকে আমি আর তৃধা বাড়ি যেতে চাইছি।কিন্তু কি করে বলি এখন।দুজন মামনির ঘরে গেলাম।
গিয়ে দেখি মামনি মন খারাপ করে বসে আছে।
মামনির পাশে বসে,,,,,,
— মামনি।
রাইসা বেগমঃ কিছু লাগবে প্রিয়তি।
প্রিয়তিঃ না মামনি কিছু লাগবে না। আসলে কালকেই বাড়ি যেতে চাই সামনে পরীক্ষাতো তাই।
রাইসা বেগমঃ এইসব বললে হবেনা।কাল বউভাত জাইমার বউভাত শেষ হলে বাড়ি যাবে।
প্রিয়তিঃ না আসলে মা……
রাইসা বেগমঃ আমি যা বলছি তাই হবে।
রাইসা বেগমের শাসনে প্রিয়তির চোখ চলচল করে উঠলো। মনে হচ্ছে এক্ষুনি চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পরবে।
রাইসা বেগম প্রিয়তির চোখে জল দেখে,,,,,,
— মামনি তুমি কি কষ্ট পেয়েছো আমার কথায়।
প্রিয়তি মাথা নাড়িয়ে না বলে রাইসা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
— আজ যদি নিজের মা বেঁচে থাকতো ঠিক এইভাবেই শাসন করতো।নিজের মায়ের পর নিজের মনে দ্বিতীয় মায়ের স্থান দিয়েছি জিহান বাবুর মাকে।তাইতো ওনার সব কথা শুনি।
প্রিয়তি চোখের জল মুছে — ঠিক আছে মামনি তুমি যা বলবে তাই হবে।
রাইসা বেগম মুচকি হেসে প্রিয়তির কপালে চুমু দিলেন।

বউভাতে যাওয়ার জন্য সাজুগুজু করছি।
তখনি মামনির ডাক পরলো।
— প্রিয়তি, তৃধা আর কতক্ষণ লাগবে চলে এসো।
প্রিয়তিঃ হয়ে গেছে।আসছি মামনি।
দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে দু’জন দু খাম্বার সাথে ধাক্কা খেলাম।
প্রিয়তিঃ এই কোন খাম্বারে। বলেই সামনে তাকাতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। জিহান বাবু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।মনে হচ্ছে খাম্বা বলাতে রাগ করেছেন।

তৃধা সামনে তাকিয়ে — যা ভেবেছি আপনি ছাড়া কেউ হবে না। এই আপনার কি খেয়েদেয়ে কোনো কাজকাম নেই সারাক্ষণ আমাকে জ্বালাতে ভালো লাগে আপনার রাদিম।
তৃধা রাদিমের নাম ধরে কথা বলাতে খুব অবাক হলো।
রাদিমঃ কি করবো বলুন মেম।আপনার মতো সুন্দরী মহিলা আশেপাশে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।
তৃধা রেগে — কিহ্….. আমাকে মহিলাদের মতো লাগে।
তবে রে আজকে আপনার খবর করে ছাড়বো। বলেই রাদিমের পিছনে পিছনে দৌঁড়াতে লাগলো।

প্রিয়তিঃ স…সরি। আ..আসলে আ……
জিহানঃ সেটআপ।
জিহানের ধমকে প্রিয়তি কেঁপে উঠল।
জিহানঃ এইসব ভাষা কোথা থেকে শিখ।এইসব ভাষা যেন আর ইউজ করতে না দেখি।বুঝলে কি বললাম আমি।
প্রিয়তি ভীতু চেহারা নিয়ে –হ্যাঁ বুঝছি।
জিহান প্রিয়তির হাত ধরে গাড়ির সামনে নিয়ে গেলো।
জিহানঃ মামনি তোমাদের গাড়িতে তো জায়গা নেই প্রিয়তি আমার গাড়ি করে যাবে।
রাইসা বেগমঃ ঠিক আছে তুই প্রিয়তিকে নিয়ে আয়।আমরা গেলাম।সাবধানে আসবি।
আদনান রাগী দৃষ্টিতে প্রিয়তি আর জিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে খাবে দুজনকে। আদনান রেগে গাড়িতে বসে জোরে গাড়ির দরজা মারলো।মনে হচ্ছে আর একটুর জন্য গাড়ির দরজা ভাঙলো না।

জিহানঃ দাঁড়িয়ে আছো কেন। নাকি কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে দিতে হবে।
প্রিয়তিঃ না না আমি উঠছি।
প্রিয়তি গাড়িতে ওঠে বসলো। জিহান গাড়ি স্টার্ট দিলো।
জিহান গাড়ি চালাচ্ছে আর প্রিয়তি চোরা চোখে জিহানকে দেখছে একটু পর পর। জিহান লুকিং গ্লাসে সব দেখছে।জিহান কিছু না বলে মুচকি মুচকি হাসছে।

তিন’ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে অবশেষে তারা জয়ের বাড়িতে আসল।
জয় এসে প্রিয়তি আর জিহানকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলো।
প্রিয়তি বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখে সবাই ওদের আগেই চলে এসেছে।প্রিয়তির আদনানের দিকে চোখ পরলো।কি ভয়ানক ভাবে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমায় চোখ দিয়েই মেরে ফেলবে।
প্রিয়তি একটা শুকনো ঢোক গিলে রাইসা বেগমের পাশে বসল।
দুপুরে……
সবাই একসাথে খাওয়াদাওয়া করলো।
আসার সময় জাইমা আপু আর জয় ভাইয়াও আসলো আমাদের সাথে।

খান বাড়িতে…..
— মামনি বাড়িতে যেতে হবে এবার আর না করো না প্লিজ।
রাইসা বেগমঃ ঠিক আছে। সবাই ব্যাস্ত কাজে জিহানকে তোদের সাথে পাঠিয়ে দিচ্ছি একা যাওয়ার দরকার নেই।
প্রিয়তিঃ মামনি আমরা একাই যেতে পারবো সমস্যা নাই।
রাইসা বেগমঃ না একদম না। জিহান তোদের দুজনকে বাড়ি দিয়ে আসবে।
প্রিয়তি আর না করতে পারলো না।
— কি যে করি আল্লাহ এই লোকটার থেকে যতো পালাতে চাই ততোই আমার কাছাকাছি চলে আসে।আল্লাহ বাঁচাও এই লোকটার থেকে আমায়(মনে মনে)।
জিহান সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে — যেতে চাইলে চলো। এত ঢং করার দরকার নাই। তোমরা না যেতে চাইলেও আমি জোর করে নিয়ে যাব।
তৃধা সন্দেহের দৃষ্টিতে প্রিয়তি আর জিহানের দিকে তাকালো।
তখনি পিছনে থেকে,,,,,
— জিহান আমিও তোর সাথে যাব।
জিহানঃ রাদিম তোর কোনো কাজ থাকলে আসতে পারিস। শুধু শুধু গাড়িতে বসে বকবক করলে যাওয়ার দরকার নেই।
রাদিমঃ প্রমিজ কথা বলবো না।

চারজন গাড়িতে ওঠে বসলো।
জিহান খুব বিরক্ত হলো প্রিয়তিকে পিছনের সিটে বসতে দেখে।
জিহান চেয়েছিল প্রিয়তি তার পাশের সিটে বসুক।
জিহান কিছু বললো না সবাই যদি মাইন্ড করে।চুপচাপ গাড়ি চালানো শুরু করলো।
দু’ঘন্টা পর গাড়ি থামলো প্রিয়তির বাড়ির সামনে।
প্রিয়তি, তৃধা গাড়ি থেকে নেমে একসাথে — ধন্যবাদ বললো।

তৃধাঃ ভাইয়া বাড়ির ভিতরে আসুন।
তৃধার কথায় প্রিয়তি চোখ রাঙায় তৃধার দিকে তাকিয়ে।
আর তৃধা শয়তানি মার্কা হাসি দিল প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে।
তৃধার কথায় রাদিম আর জিহান গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে প্রবেশ করলো।
তৃধা রাদিমের দিকে তাকিয়ে — আপনাকে আসতে বলিনি জিহান ভাইয়াকে বলেছি।
রাদিম দাঁত সবগুলো বাহির করে — প্রিয়তি আমাকে ওর বাড়িতে আসতে বলেছে।তোমার সমস্যা কি।
তৃধা আর কিছু না বলে রাদিমকে মুখ ভেঙিয়ে চলে গেল।
আর রাদিম তৃধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হেসে যাচ্ছে।

প্রিয়তি শরবত বানাচ্ছে আর তৃধাকে বকে যাচ্ছে।
— এমন মেহমানদারী করমু না জীনের আর এই বাড়িতে আসার নাম নিবেনা জি……জিহান বাবু।বলে প্রিয়তি শয়তানি হাসি দিল।

প্রিয়তি ট্রে নিয়ে জিহান আর রাদিমের সামনে রাখলো।
প্রিয়তিঃ খেয়ে নিন। সবসময়তো আর আসা হবেনা আজকে ভালো মতো খেয়ে নিন।
প্রিয়তির আচরনে জিহানের খুব সন্দেহ হলো।
জিহানঃ এই মেয়ে নিশ্চয়ই কোনো কিছু মিশিয়ে দিয়েছে খাবারে।(মনে মনে)
জিহান পাশে তাকিয়ে দেখে রাদিম অর্ধেক খাবার শেষ করে ফেলেছে।
জিহান কিছু বলবে তার আগেই রাদিমের পেট মোচড় দিয়ে উঠলো।
পেটে গুড়গুড় আওয়াজ শুরু হলো।পেটে ব্যাথা করতে শুরু করলো।
রাদিম অসহায় ভাবে প্রিয়তির দিকে তাকিয়ে — ইয়ে মানে তোমাদের ওয়াশরুমটা কোথায়।
প্রিয়তিঃ বাম দিকে গেলে পেয়ে যাবেন।
রাদিম ওয়াশরুমের সন্ধান পেয়ে দৌঁড়ে সেদিকে চলে গেল।

আর প্রিয়তি ভীতু চেহারা নিয়ে জিহানের দিকে তাকালো।
— আমি তো শুধু জিহান বাবুর গ্লাসে ওষুধ মিশিয়েছি তাহলে রাদিম ভাইয়ার সমস্যা হলো কেন।সমস্যা তো এই জিহানের বাচ্চার হওয়ার কথা ছিল।
জিহান বসা থেকে দাঁড়িয়ে প্রিয়তির সামনে এগোচ্ছে। আর প্রিয়তি ভয়ে ভয়ে পিছনে যাচ্ছে। যেতে যেতে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেলো।আর পালানোর পথ নেই।
জিহানঃ কি হলো পালাও। দাঁড়িয়ে আছো যে।তুমি ইচ্ছে করে করেছো তাই না।আমি আগেই বুঝে গেছি তুমি নিশ্চয়ই আমার ওপর প্রতিশোধ নিবে। কিন্তু আপসোস বেচারা রাদিম ফেঁসে গেল।
পিছন থেকে রাদিম বলে — ভাই তোর রোমাঞ্চ শেষ হলে বাড়ি চল। আমার পেটের অবস্থা খুব খারাপ।
জিহান প্রিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে — পরে দেখে নিব তোমায়।বলে প্রিয়তির বাড়ি থেকে চলে গেল।

চলবে………
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

#আমার_একাকীত্বের_শহরে__আপনি
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১১

প্রিয়তি নিজের ঘরে ঢুকতেই তৃধা প্রিয়তির হাত ধরে খাটে বসিয়ে দেয়।
প্রিয়তিঃ কি হলো হঠাৎ এমন করছিস কেন।
তৃধাঃ জিহান ভাইয়ার সাথে তোর কি চলছে।
প্রিয়তিঃ কি চলছে মানে।
তৃধাঃ খান বাড়িতে গিয়ে অনেক কিছুই দেখেছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সবার সামনে কিছু বলতেও পারিনি।তোর আর জিহান ভাইয়ার মাঝে কি রিলেশন আছে।
প্রিয়তি যেন আকাশ থেকে পরলো।
প্রিয়তিঃ কি………কিহ্ বললি তুই। পাগল হয়ে গেছিস তুই তৃধা।এমন কিছুই নেই আমার আর ওনার মাঝে।
তৃধাঃ তাহলে ভাইয়া তোর সাথে এমন করে কেন।সারাক্ষণ তোকে বকাবকি করে।
প্রিয়তিঃ আমি কি জানি। ওনিই তো আমার সাথে কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছেন এই কয়দিন।
তৃধাঃ তুই জানিস কোন সময় একটা ছেলে একটা মেয়ের ওপর অধিকার ফলায়।
প্রিয়তিঃ কোন সময়….
তৃধাঃ যখন ছেলেটা মেয়েকে ভালোবাসে।তুই কোনো ছেলের সাথে কথা বললেই ভাইয়া তোকে কোনো না কোনো ভাবে শাস্তি দেয়। প্রিয় আমার তো মনে হচ্ছে ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।

তৃধার মুখ থেকে ভালোবাসা শব্দটি শুনে প্রিয়তি লজ্জা পেলো।
তৃধাঃ কিরে প্রিয়তি ভালোবাসি বলতেই লজ্জা পেতে শুরু করলি।ব্যাপার কি বল।প্রেমে পরলি না তো আবার।
প্রিয়তিঃ তুই ভুল ভাবছিস এমন কিছুই না।আমার মতো এতিমের আবার কিসের ভালোবাসা। যার বাবা নেই মা নেই তাকে কেউ মেনেও নিবেনা।তুই ওইসব ভাবিস না। এমন কিছুই নয়।
তৃধাঃএকটা থাপ্পড় মারমু তোরে প্রিয় উল্টাপাল্টা কথা বললে।আমি তোর বোন নই।আর জিহান ভাইয়ার মা তোকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে।আমার তো মনে হচ্ছে জাইমা আপুর থেকেও বেশি।আর কোনোদিন নিজেকে এতিম বলবি না। না হলে তোর সাথে আমার সব কথা বন্ধ।
প্রিয়তিঃ আচ্ছা সরি আর বলবো না।এইবার আসল কথায় আসি।তুই এত চুপচাপ হয়ে গেলি কেন।সত্যি করে বল তৃধা। কিছু লুকাবি না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুই ভালো নেই। তুই যদি সত্যি কথা না বলিস তাহলে আমি মনে করবো আমি সত্যিই এতিম। আমি কারোর কেউ নই।যদি করোর কিছু হতাম তাহলে আমার থেকে কথা লুকাতো না কেউ।

প্রিয়তি এতক্ষণ অন্য দিকে ফিরে অভিমানী কন্ঠে এইসব কথা বলেছে।তৃধার দিকে তাকাতেই দেখে তৃধা কাঁদছে।
প্রিয়তি আশ্চর্য হলো।কি এমন বললাম ও কি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছে। তৃধাকে কাঁদতে দেখে প্রিয়তির নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
প্রিয়তিঃ সরি তৃধা আমি ওভাবে বলতে চাইনি।
তৃধা প্রিয়তিকে জড়িয়ে ধরে সশব্দে কান্না শুরু করে দিলো।
মনে হচ্ছে অনেক দিনের কষ্ট জমা ছিল বুকে।এখন কান্না করে সব কষ্ট দূর করছে।
প্রিয়তিঃ কি হলো তৃধা বল আমায় কাঁদছিস কেন এইভাবে।তাসরিফ ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে আবার তোর।ভাইয়াকে এখনি ফোন দিচ্ছি। আমার বোনকে কষ্ট দিয়ে ভাইয়া ছাড় পেয়ে যাবে এটাতো হবেনা।
প্রিয়তি ফোন করতে যাবে তার আগেই তৃধা ফোন কেড়ে নিল প্রিয়তির হাত থেকে।
প্রিয়তি কিছুই বুঝতে পারছেনা।

তৃধাঃ কান্না করতে করতে,,, তাসরিফ বিয়ে করে ফেলেছে তৃধা।
তৃধার কথায় প্রিয়তির মাথায় বাজ পরলো।
প্রিয়তি চিৎকার করে — কি……….কি বললি তুই।
মজা করছিস তাইনা তৃধা।
তৃধাঃ সত্যি বলছি আমি। আর বিয়েটা আমার সামনেই হয়েছে প্রিয় বলেই তৃধা প্রিয়তিকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে করে কান্না করতে থাকে।
প্রিয়তি বুকটা ফেটে যাচ্ছে তৃধার কান্না দেখে।
প্রিয়তি শক্ত করে তৃধাকে জড়িয়ে ধরে।
প্রিয়তি তৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
প্রিয়তিঃকার সাথে হয়েছে আর তুই বা কোথায় দেখলি ভাইয়ার বিয়ে।
তৃধাঃ আমার খালাম্মার মেয়ে নিশি আপুর সাথে।

প্রিয়তি কি বলবে বুঝতে পারছে না। ভালোবাসার মানুষটিকে হারানো যে কত কষ্ট যে হারায় সে বুঝে।
প্রিয়তিঃ ভাইয়া ওনার মায়ের কাছে তোর কথা বলেনি।
তৃধাঃ না বলেনি কাপুরুষটা।ওর মা নাকি বলেছে নিশি আপুকেই বিয়ে করতে হবে।নিশি আপুকেই ওনার ঘরের বউ করে আনবে।
প্রিয়তিঃ তারপরও একবার তো তোর কথা বলতে পারতো।
তৃধাঃ আমার তো মনে হচ্ছে আমার সাথে টাইম পাস করেছে প্রিয়।ওই কাপুরুষটার কথা আমায় আর বলবিনা।

তৃধার কান্না দেখে প্রিয়তির চোখে জল এসে পরলো।
প্রিয়তিঃ যা হবার হয়েছে তৃধা।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।হয়তো এর থেকেও আল্লাহ তোকে তাসরিফ ভাইয়ের থেকেও ভালো একজনকে তোর জীবনে এনে দিবে।একদম কান্না করবিনা বলছি।এইরকম বেঈমান ছেলেদের জন্য কাঁদতে নেই।এরা এমনি। মেয়েদের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে ঠকায়।আমাকে নিজের বোন ভাবলে একদম বেঈমানটার জন্য কাঁদবিনা।
তৃধাঃ চোখের জল মুছে ঠিক আছে কান্না করবোনা।
প্রিয়তিঃ আজকে তোর প্রিয় খাবার বিরিয়ানি রান্না করবো।মনে কর আজ থেকে জীবন শুরু পিছনের কথা একদম ভাববি না।যা হবার হয়েছে। ভুল প্রতিটি মানুষ করে থাকে। আবার শুধরানোর সুযোগ পায়। তুই তো ভাগ্যবান তৃধা আল্লাহ তোকে ভুল শুধরানোর সুযোগ দিয়েছে। তুই ভুল কাউকে সিলেক্ট করেছিস।দেখবি এমন একজন তোর লাইফে আসবে। যে তোকে ছাড়া কিছুই বুঝবেনা।এবার গোসল কর গিয়ে। মাথা হালকা হয়ে যাবে।
প্রিয়তি কিচেন চলে গেল বিরিয়ানি রান্না করতে।
তৃধাঃ সত্যি এমন বান্ধবী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।ওর কথা গুলো শুনে আমার মন হালকা হয়ে গেছে।এমন একটা বান্ধবী যার আছে সে সত্যিই ভাগ্যবতী।
তৃধা ওয়াশরুমে গোসল করতে চলে গেল।

জিহানঃ মামনি আজকে বাবার নিউজিল্যান্ড থেকে আসার কথা ছিলনা।
রাইসা বেগমঃ হ্যাঁ বাবা।আসতে আসতে বিকাল হবে।জাইমার বিয়েতে থাকতে না পেরে কাল ফোনে অনেক আপসোস করলো তোর বাবা।
জিহানঃ আমি এয়ারপোর্টে যাব বাবাকে নিয়ে আসতে।
রাইসা বেগমঃ আচ্ছা আদনানকে নিয়ে যাস।
জিহান আদনানের দিকে তাকালো — আদনান টিভিতে ইংলিশ মুভি দেখছে।
আদনান টিভি অফ করে জিহানকে দিকে তাকিয়ে বলে– তুই গিয়ে বাবাকে নিয়ে আয়। আমার জরুরি কাজ আছে।
রাইসা বেগমঃ এইটা কেমন কথা আদনান।এতদিন পর তোর বাবা আসছে আর তুই যাবিনা তোর বাবাকে আনতে।
আদনানঃ প্লিজ মামনি অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট।
রাইসা বেগম কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে গেলেন।

জিহান এয়ারপোর্টে গেছে তার বাবা রাজিব খানকে আনার জন্য।
আদনান রাইসা বেগমের ঘরে গেল।
রাইসা বেগম বসে বসে তখন উপন্যাস পড়ছিলো।
আদনান রাইসা বেগমের পাশে বসে — মামনি কিছু কথা ছিল তোমার সাথে।
রাইসা বেগম বইয়ের মাঝে মুখ রেখেই — কি বলবি বল।
আদনানঃ আসলে মামনি।
রাইসা বেগমঃ কথা না ঘুরিয়ে কি বলবি সেটা বলো।
আদনানঃ মামনি আমি প্রিয়তিকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই প্রিয়তিকে।
আদনানের কথা শুনে উপন্যাসের বইটি টেবিলের ওপর রাখলেন রাইসা বেগম।
রাইসা বেগমঃ তু্ই কি বলছিস তুই নিজে জানিস।প্রিয়তি যদি রাজি থাকে তাহলে আমার কোনো আপওি নেই।মেয়েটাকে আমার এমনিতেই অনেক পছন্দ। ও রাজি না থাকলে আমি জোর করবোনা।
আদনানঃ আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু বাবাকে কে বুঝাবে।
রাইসা বেগমঃ সেটা আমার ওপর ছেড়ে দে।কিন্তু প্রিয়তির ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমি কিছুই করবোনা।
আদনানঃ ঠিক আছে মামনি।
খুশি হয়ে চলে গেল।

জিহান রাজিব খানকে নিয়ে বাড়ি আসলো।
রাইসা বেগম নিজের স্বামীর জন্য নানা রকমের খাবার রান্না করলেন।সবাই একসাথে টেবিলে বসে খাচ্ছে।
রাজিব খান সবার উদ্দেশ্যে বললেন– তোমাদের সবার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।
জিহান আর আদনান একসাথে — জ্বি বাবা বলো কি বলবে।
রাজিব খানঃ তোমাদের দুজনের বিয়ে ঠিক করেছি আমি।
জিহানের মাথায় বাজ পরলো বাবার মুখ থেকে বিয়ের কথা শুনে।
জিহানঃ হোয়াট। কি বলছো তুমি এইসব বাবা।
কিন্তু আদনান খেয়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আগে থেকেই আদনান বিয়ের কথা জানতো।
রাজিব খানঃ দেখো জিহান তোমার পড়াশোনা কিছুদিনের মধ্যে কমপ্লিট হয়ে যাবে। আর আমাদেরও আর বেশিদিন সময় নেই। তাই ভাবলাম দু’ছেলের একসাথে বিয়ে দিবো। জিহান তোমার বউ আমি ঠিক করে ফেলেছি।আমার বন্ধু আতিক সাহেবের মেয়ে রোহার সাথে বিয়ে হবে তোমার।
জিহান খাওয়া ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল।
জিহানঃ এইটা কখনোই সম্ভব না বাবা।আমি একজনকে ভালোবাসি।আর এমন ন্যাকা টাইপের মেয়েকে আমি মরে গেলেও বিয়ে করবোনা।
রাজিব খানঃ যাকে ভালোবাসো তাকে ভুলে যাও আমি যার সাথে ঠিক করেছি বিয়ে তার সাথেই হবে। এটাই আমার শেষ কথা।

জিহান বাবার কথায় রেগে খাবারের প্লেট ছুড়ে ফেলে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ভাংচুর শুরু করলো।
রাইসা বেগমঃ তুমি এমন করছো কেন ও যাকে ভালোবাসে তাকেই বিয়ে করুক। কেন শুধু শুধু অশান্তি করছো।
রাজিব খানঃ দেখো রাইসা আমি কথা দিয়ে ফেলেছি।বন্ধুর কথা না রাখলে আমি কি করে মুখ দেখাবো। আর আমার কথাই শেষ। আদনান তুমি নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে।
আদনানের আর খুশি কে দেখে।খুশিতে নাচতে মন চাইছে।
জিহান কিছুক্ষণ ভাংচুর করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
রাইসা বেগম পিছন থেকে অনেক ডাকলেন জিহান পাওা না দিয়ে চলে গেল।

জিহান গাড়ি চালিয়ে সোজা প্রিয়তির বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো।
প্রিয়তি তখন গোসল করে গামছা দিয়ে চুল ঝাড়ছিল। আর তৃধা ঘুমাচ্ছে।
রান্না শেষ করে এসে দেখলো তৃধা গোসল সেরে ঘুমাচ্ছে। তৃধাকে ঘুমাতে দেখে প্রিয়তি গোসল সেরে কিচেনে আসল খাবার নিতে। তৃধাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে একসাথে খেয়ে নিবে।
প্লেটে খাবার বাড়ছে প্রিয়তি।তখন কলিং বেল বেজে উঠল।
— এখন আবার কে আসল।
প্রিয়তি দরজা খুলে অবাক হলো।
— আপনি আপনি ভর দুপুরে আমার বাড়িতে কেন এসেছেন।

জিহান কিছু না বলে প্রিয়তিকে ভিলেনদের মতো কাঁধে উঠিয়ে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে দিল।
প্রিয়তিঃ সমস্যা কি আপনার। আ…আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন।আমি কিন্তু চিৎকার করবো এখন।
জিহান কিছু না বলে দড়ি দিয়ে প্রিয়তির হাত বেঁধে দিল।
প্রিয়তিঃ আরে আমার হাত বাঁধলেন কেন।ছিঃ তাহলে এই ছিল এতদিন আপনার মনে।
প্রিয়তিকে এত কথা বলতে দেখে জিহানের খুব রাগ হলো।
জিহান প্রিয়তির ওড়না গলা থেকে নিয়ে মুখে বেঁধে দিল। এখন প্রিয়তি কথা বলতে পারছেনা।
প্রিয়তি রাগী দৃষ্টিতে জিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আর গোঙাচ্ছে। আর জিহান হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
এিশ মিনিট পর গাড়ি থামলো।
প্রিয়তির হাতের বাঁধন খুলে দিল জিহান।মুখ থেকে বাঁধা ওড়না খুলে দিল।
জিহানঃ গাড়ি থেকে নামো।
প্রিয়তি জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে গাড়ি থেকে নামলো।
গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকাতেই প্রিয়তির মাথায় বাজ পরলো।

চলবে……..
[ভুল-ক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here