অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ১০

#অগত্যা_তুলকালাম,পর্ব ১০
নাফীছাহ ইফফাত

জাফর আমার গায়ে হাত রাখতে যাচ্ছিলো ঠিক সেই মুহুর্তে রাফিন এসে সেই হাত মুঁচড়ে ঘুরিয়ে ফেললো। আমি চোখ খুলে আতঙ্ক নিয়ে সেদিকে তাকালাম। প্রাণ ফিরে পেয়েছি রাফিনকে দেখে। রাফিন জাফরকে মারতে মারতে থোঁতা ফাটিয়ে ভোতা বানিয়ে দিয়েছে। জাফর মাটিতে পড়ে কাঁতরাচ্ছে। ওর পেটে বেশ কয়েকটা লাথি মারলো রাফিন। তারপর বললো,
“তোর ব্যবস্থা আমি করবো। তোর পুরো পরিবারকে যদি জেলের ভাত না খাইয়েছি আমার নামও রাফিন না৷”

চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ফুফি এসে জাফরকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে আঁৎকে উঠলেন। ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আর আমাদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে লাগলেন। বললেন, “তোর বাপরে যদি আজকে না লাগাইছি খালি দেখবি। শয়তানের শয়তান। তোরে ঘরবন্দী করার ব্যবস্থা আমি কইরাই ছাড়ুম। তোর দাদু পিরিতি বাইর করুম আমি।”

রাফিন সেসব কথার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে আমার হাত ধরে বেরিয়ে এলো ঐ বাড়ি থেকে। আমি অসহায় চোখে বারবার শুধু দাদুর দিকে তাকাচ্ছিলাম। না জানি, আজকে দাদুর ওপর কি নির্যাতনটাই না হয়৷

রাফিন বাইকের সামনে এসে কোমল কন্ঠে বললো,
“বাইকে ওঠো।”
বাইকে উঠতেই ও বাইক নিয়ে কাশবনে চলে এলো। কাশবনের গহীনে রেললাইনের কাছে গিয়ে বাইক থামিয়ে আবার আমার হাত ধরে রেললাইনের ইস্পাতের ওপর বসলো আমাকে নিয়ে। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললো,
“তোমার খুব কষ্ট হয়েছে তাই না?”

আমি ছলছল নয়নে ওর দিকে তাকালাম। ঠোঁট উল্টে কান্না পাচ্ছে আমার। কান্না আটকে কোনোরকমে বললাম, “তুমি ঠিক সময়ে না আসলে আজকে আমি শেষ হয়ে যেতাম।” বলামাত্র চোখের পানি আর বাঁধ মানলো না। অঝোরে বেরিয়ে এলো।
রাফিন শক্ত করে আমার হাত ধরে বললো, “স্যরি, আমার আসতে দেরী হয়ে গেল। আমি আরও আগেই ঢুকেছিলাম বাড়িতে। তোমার ফুফি পথরোধ করে দাঁড়িয়ে ছিল। ঢুকতে দিচ্ছিলো না আমাকে। শেষে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে পড়েছিলাম। আমার ইচ্ছে করছিলো শয়তানটাকে পিষে মাটির সাথে লেপ্টে দেই।” আমার হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরলো ও। আমার হাতে ওর আঙ্গুলের ছাপ বসে গেছে।
প্রচন্ড রেগে অন্যহাতে রেললাইন থেকে একটা বড় পাথর দূরে ছুঁড়ে ফেললো ও। পরক্ষনেই দাঁড়িয়ে সজোরে লাথি মারলো আরও একটা বড় পাথরে।

আমি চুপচাপ বসে রইলাম। খানিক বাদে ও আবার আমার পাশে বসলো। আমি আস্তে আস্তে বললাম,
“আজকে দাদুর ওপর খুব নির্যাতন করবে ওরা।”
“তুমি…” কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ও। রাগে চোখদুটো রক্তবর্ণ রূপ ধারণ করেছে। হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণে এনে বললো,
“দাদু ইচ্ছে করেই যদি অত্যাচার সহ্য করতে চায় করুক। আমাদের কি করার আছে? আমরা আর কখনো ওখানে যাবো না। আর তুমি একা বাসা থেকে বেরুবে না।”

আমি মাথা নেড়ে বললাম, “একটা বখাটে ছেলেকে ভয় পেয়ে বাসা থেকে বেরুনো বন্ধ করে দিবো?”
“না, ভয় পেয়ে না। আমি বলছি বলে বেরুবে না তুমি, ক্লিয়ার?”
“হুম।”

আবার দুজনে চুপ। তাকিয়ে আছি সামনে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত খোলা মাঠের দিকে। বেশ খানিকক্ষণ পরে রাফিন বললো,
‘তোমাকে এত অপমান করে ওরা তারপরও কিসের টানে বারবার ওখানে ছুটে যাও বলতো?’

হৃদিতা শান্ত স্বরে বলে,
‘তোমার কাছে কেন ছুটে আসি?’

রাফিন আকস্মিক চুপ করে যায়। থেমে থেমে বলে,
‘ইউ মিন, আমি তোমাকে অপমান করি?’
“না, অসম্ভব! আমি উল্টোটা বোঝালাম।”
“মানে?”

আমি রহস্যময় ভঙ্গিতে হেসে সামনে তাকিয়ে থাকলাম। রাফিন আবার বললো,
“আমি তোমাকে অপমান করি?”
“আরে না রে বাবা! তোমার কাছে আমি কিসের টানে ছুটে আসি?”
“হেয়ালী করো না, ঠিক করে বলো।”
“কিসের টানে ছুটে আসি বোঝনা?” খানিকটা বিরক্ত নিয়ে বললাম।
“বুঝি না, ঠিক করে বলো বলছি।”
”উফফ! ভালোবাসার টানে দুজনের কাছেই ছুটে যাই।” দ্রুত বলে গেলাম কথাটা।

“এখনো ক্লিয়ার না। ক্লিয়ারলি বলো।”
আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,
“অপমান আমাকে ফুফি করে, দাদু না। দাদুকে ভালোবাসি বলেই ছুটে যাই। ঠিক যেমন তোমাকে ভালোবাসি বলেই বারবার তোমার কাছেই ছুটে আসি। তুমি আমাকে বকলেই কি আমি অন্য কাউকে অভিযোগ করতে যাই? কিংবা অন্য কারো কাছে চলে যাই কিংবা তোমার কাছে আসা বন্ধ করে দিই? নিজে নিজে শান্ত হয়ে আবার তোমার কাছে চলে আসি। দাদু আমাকে কত্ত আদর করে, তাই ফুফির শত অপমান ভুলে দাদুর কাছে ছুটে যাই।”

“ওহ তাই বলো।” মুচকি হাসে রাফিন। এতক্ষণে বুঝেছে পাগলটা।

পরমুহূর্তেই রাফিন আবার আমার দিকে আঙ্গুল তাক করে বললো, “বাট আর যাওয়া চলবে না। ভালোবাসো আর যা-ই করো, আমি না বলা পর্যন্ত তুমি বাসা থেকে বেরুবে না। হুম?”
“আচ্ছা বেরুবো না।”

আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় রাফিন আবার মনে করিয়ে দিলো,
“বেরুবে না কিন্তু।”
“আচ্ছা বাবা, বেরুবো না তো। তুমিও সাবধানে থেকো।”
“অকে। টেইক কেয়ার, বাই!”
রাফিন চলে গেল কিন্তু উল্টো পথে, মেইন রোডের দিকে। আমিও খুব বেশি মাথা ঘামালাম না বিষয়টা নিয়ে। হয়তো ওর কোনো কাজ আছে।

বাসায় এসে শুনি তখনও বাবা বাসায় ফেরেনি। আমি নাকীবের ঘরে গিয়ে ওকে খুঁজলাম। বারান্দায় বসে হাওয়া খাচ্ছে সে। মাথায় টোকা দিয়ে বললাম,
“কিরে মা খাবার দেয়নি? হাওয়া খাচ্ছিস যে?”

ও মুখ গোমড়া করে বললো, “মা দিয়েছিলো বাট আমি খাইনি। কেউই খায়নি আজ।”
“বাবা ফেরেনি?”
“নাহ!”
“মা খেয়েছে?”
“আমাদেরকে রেখে মা খাবে কখনো? মা আবার ভ্যানিলা কেক বানিয়েছে আজ।”

আমি ভেংচি দিয়ে বললাম, “মা নাকি কাজের জন্য সময় পায় না? আমাদের জন্য খাঁটতে খাঁটতে নাকি জীবন শেষ? তো আবার কেক বানাতে গেল কেন? আমরা বলেছিলাম?”
“মা এমনই, হুহ!”

আমাদের কথার মাঝেই কলিংবেল বাজলো। তৎক্ষনাৎ ফুফির বাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়ে গেল আমার। নাকীবকে বললাম, “আজকে অনেক বড় একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।”
“আচ্ছা দরজা খুলে এসে শুনছি।”
“না দরজা খুলবি না। হয়তো ফুফি এসেছে।” ভয়ার্ত স্বরে বললাম।

নাকীব খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো, “ছোটফুফি? রিয়েলি?”
“ছোটফুফি না।”
“তাহলে কি…” নাকীবের চেহারা মুহুর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

আমরা ধীরে ধীরে ড্রইংরুমে উঁকি দিলাম। ততক্ষণে মা দরজা খুলে যে এসেছে তাকে ভেতরে নিয়ে এসেছে। আমরা দেখলাম, সোফায় বাবা বসে আছেন।

নাকীব আমাকে কনুই দিয়ে গুতো মেরে বললো,
“ধুর আপু, শুধু শুধু ভয় দেখাও। বাবা এসেছে।”

আমরা বাবার কাছে গিয়ে বসতেই আবার কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি ঢোক গিলে দরজার দিকে তাকালাম। মা বললেন,
“হৃদি, দরজাটা খুলে আয়। আমি তোদের জন্য কেক নিয়ে আসছি ততক্ষণে।”

আমি বললাম, “আমি পারবো না। মা, তুমি যাও।”
“বড় বেয়াদব হয়েছিস তো! মুখে মুখে কথা বলিস! যেতে বলেছি না?”
আমি আবার কাঁচুমাচু করে বললাম, “বাবা, তুমি খুলো প্লিজ দরজাটা।”
মা রেগে বললেন, “তোর বাবা দরজা খুলবে? মানুষটা মাত্র বাইরে থেকে এলো।”
আমি নাকীবের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। ও বললো, “চলো একসাথে যাই।”

আমি গিয়ে ভয়ে ভয়ে দরজাটা খুললাম। সাথে সাথে ফুফি হামলে পড়ে ঢুকতে গিয়েও থেমে গেল। সপাটে চড় দিলো আমার গালে। টাল সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে পড়লাম জুতা রাখার বড় কাঠের বাক্সের ওপর। বাক্সের কোণা লেগে কপাল কেটে মুহুর্তেই রক্ত বেরিয়ে এলো। নাকীব দ্রুত আমাকে ধরে ফেললো। ততক্ষণে বাবা-মা দরজার সামনে চলে এসেছে। ফুফি চেঁচামেচি করতে করতে ভেতরে ঢুকে গেল।
বাবা বললেন, “কি হয়েছে নিশা? কোনো সমস্যা? এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন?”

“সমস্যা মানে? মহা সমস্যা ভাইজান। তোমার শয়তান ছেমড়ি (বলতে বলতে আমার চুলের গোছা টেনে ধরলেন ফুফি) আমার বাড়িত যাইয়া পিরিত করে। দাদু পিরিতি দেখায়৷ আমার শাউড়ি (শ্বাশুড়ি) আমি বুঝুম। ওর এত কিসের পিরিত?”

বাবা এসে এক ঝটকায় ফুফির হাত থেকে আমাকে সরিয়ে নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। মা ফুফির সামনে এসে বললো,
“তোমাকে আমরা কিছু বলি না বলে সবসময় বাড়ি বয়ে এসে চেঁচামেচি করবে আর আমার মেয়েকে অত্যাচার করবে এটাতো আমরা কিছুতেই মেনে নিবো না৷ কিছুতেই না। যাও বেরিয়ে যাও।”

“হুনো ভাবী, থাকতে আমি আহিনাই। চইল্যাই যামু। তার আগে তোমার মাইয়্যাডারে কইলাম সামাল দ্যাও। নইলে পরে ঠ্যালা বুঝবানি।”

“তোমার আর কিছু বোঝাতে হবে না। আমার মেয়ে আমি চিনি।”
“তুমি কিছু চিনো না ভাবী। তোমার মাইয়্যা এক পোলার লগে হারাদিন ঘুরে। হেই পোলার লগে আবার দাদু পিরিতি মারাইয়্যা আমার শাউড়ির লগে দেহা করতি যায়৷ আইজগা হেই পোলায় আমার ছেলেডারে মাইরা চোখ-মুখ ফুলাইয়্যা ঢোল বানাইয়্যা থুইয়া গেছে।” এপর্যায়ে ফুফি কান্নার অভিনয় করতে লাগলেন।

বাবা আমার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বললেন, “এসব সত্যি?”

তখন আমি বললাম, “বাবা, পুরোটা সত্যি না। ফুফি দাদুকে খুব নির্যাতন করে। দাদুর শরীরে সব ক্ষতচিহ্ন বাবা। তাই আমি মাঝেমধ্যে দাদুর সাথে দেখা করতে যাই। ঔষধ দিয়ে আসি। ওরা দাদুকে কখনো ঔষধ দেয় না। আর আজকে যাওয়ার পর দেখি দাদুর হাতে লম্বা একটা সেলাই। যাতার ওপর পরে নাকি এই অবস্থা হয়েছে। ওনার ছেলে ওনার এই হাল করেছে বাবা।”

“কিহ? ওরা এভাবে নির্যাতন করে?” বাবা-মা ও নাকীব একসাথে বললো।

আমি বললাম, “আজকে যখন দাদুর সাথে কথা বলছিলাম তখন জাফর আমাকে…”
“জাফর তোমাকে কি আপু? আপু, তোমাকে জাফর কি করেছে বলো?” নাকীব রীতিমতো গর্জে উঠলো।

আমি আস্তে আস্তে সবটা বললাম। এপর্যায়ে রাফিনের সাথে আমার সম্পর্কের বিষয়টা ফাঁস হয়ে গেল। কিন্তু নাকীব খুব সুন্দরভাবে ব্যাপারটা সামলালো। ও বললো,
“বাবা, রাফিন ভাইয়া হচ্ছে আমাদের টিমের বেস্ট ক্রিকেট প্লেয়ার। ও আগেও আপুকে বেশ কয়েকবার ফুফির হাতে অত্যাচারিত হতে দেখেছে, বিষয়টা আমাকে বলেছেও। বলেছে, তোমাদেরকে জানাতে। কিন্তু আপু জানাতে দেয়নি। তাহলে ওকে দাদুর সাথে আর দেখা করতে যেতে দিবে না তাই। তাই রাফিন ভাইয়া ওকে ফলো করে হয়তো ওখানে গিয়েছিল। বেশ করেছে ভাইয়া। ”

বাবা বললেন, “এতকিছু কখনো আমাকে বলিসনি কেন হৃদি?”

ফুফি বললেন, “নাকীব্বা তুই এত মিছা কথা কইবার পারছ? তর বইনে যদি তরার ইজ্জত না ডোবায় কইছ আমারে।”

বাবা সপাটে একটা চড় মারলেন ফুফির গালে। বাবার দেখাদেখি মা-ও চট করে একটা চড় মেরে দিলো। বাবা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই মা বললেন,
“তুমি মারলে তাই…”

বাবা ফুফির উদ্দেশ্যে বললেন, “মান-সম্মান হৃদি নয় তুই ডুবিয়েছিস ৩০ বছর আগে। একটা বস্তির ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বস্তিতে উঠেছিস। ব্যবহারটাও ঠিক বস্তিদের মতোই বানিয়েছিস৷ আমার তো মনে হয়, বস্তির মানুষদের ব্যবহারও তোর চেয়ে শতগুণে ভালো। তারা অন্তত পরিবারকে ভালেবাসে। তোর মতো নোংরা কীট জীবনে দুটো দেখিনি আমি। তোর সাথে আমাদের সমস্ত সম্পর্ক শেষ করেছি সেই ৩০ বছর আগেই। আজ থেকে জানবো তুই আমাদের কাছে মৃত। যদি বিন্দু পরিমাণ লজ্জা তোর থাকে তাহলে আর জীবনে এই জঘন্য মুখ তুই আমাদের দেখাতে আসবি না।”

অপমানে লাল হয়ে রাগে গিজগিজ করতে করতে ফুফি বেরিয়ে গেলেন। নাকীব রুমে এসে আমার কপালে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।

সন্ধ্যায় রাফিন ফোন দেয় আমায়। সালাম জানিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,
“কেমন আছো?”
”ভালো।”
“বাইরে বের হওনি তো?”

আমি চুপ করে থাকলাম। এতবার জিজ্ঞেস করার কি আছে? তখনই তো বললাম বের হবো না। আমাকে চুপ থাকতে দেখে ও বললো,
“কি হলো চুপ যে?”
“বেরোইনি।” দাঁতে দাঁত চেপে বললাম। এপর্যায়ে খেয়াল করলাম কথা বলতে গেলে আমার ঠোঁটে প্রচুর জ্বালা করছে। ঠোঁটও কেটে গেছে বোধহয়।

রাফিন ফোনের ওপাশে বললো,
“রেগে আছো নাকি?”
“না!”
“এভাবে কথা বলছো কেন তাহলে?”
“কিছু না।”
“আচ্ছা বাদ দাও। তোমার সো কল্ড ফুফি নাকি গিয়েছিল তোমার বাড়ি?”
“হুম, তুমি কিভাবে জানো?”
“আমি জানি। তোমাকে আঘাত করেনি তো আবার?”

আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“না, ইয়ে মানে হ্যাঁ।”
“কিহ? তোমার বাসায় গিয়ে তোমাকে আঘাত করেছে? কি করেছে শুনি?”
“তেমন কিছু না। ঐ আর কি… বাবা-মা ছিল পাশে.. আহ!”

রাফিন রেগে গিয়ে বললো, “তুমি আমাকে মিথ্যে বলছো আরোহী? আমাকে? আই হেইট লাই, ইউ নো বেটার আরোহী। তারপরও?”
“আসলে আমি…”

“চুপপ! জাস্ট শাট আপ! তোমার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই। তুমি তোমার রাস্তায় চলবে আমি আমার রাস্তায়।” একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে ফোন কেটে দিলো।

এই ছেলের সাথে কথা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। ওকে যা বলার আমি মেসেজে বলি। বাধ্য হয়ে পুরো ঘটনা মেসেজে লিখে পাঠালাম। মেসেজ সিন করলো আধঘন্টা পর। কল করলো আরও আধঘন্টা পর। তারপর বললো,
”আচ্ছা আরোহী, তুমি যদি কাল ভোরে উঠে শোনো তোমার ফুফিকে হাত-পা ভাঙ্গা অবস্থায়, চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় গহীন বনে পাওয়া গেছে তোমার কি কষ্ট হবে? কিংবা যদি দেখো জাফর শয়তানটা অলরেডি হাজতে তোমার কি কষ্ট হবে?”

রাফিনের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝলাম না। বললাম, “মানে?”
“কিছু না, বাদ দাও।”

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, “আচ্ছা এখন রাখি। আমার কিছু কাজ আছে।”
আমি কিছু বলার আগেই ও ফোন রেখে দিলো।

রাত আটটার দিকে নাকীব হন্তদন্ত হয়ে আমার রুমে এলো। আমার হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,
“আপু, আপু, জাফরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।”

আমার হঠাৎ রাফিনের বলা কথাগুলো মনে পড়ে গেল। তাৎক্ষণিক মনে পড়লো, বিকেলে আমাকে ড্রপ করে উল্টোপথে গিয়েছিল রাফিন। মেইন রোডের ওপাশে তো থানা। তারমানে রাফিনই এসব করেছে?”

রাতের খাবারের পর রুমে বসেছিলাম। নাকীব আবার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। রুমের দরজায় হুলস্থুল ধাক্কা দিয়ে ছুটে বেডের কাছে এসে বসে।
আমি ভয়ার্ত স্বরে বললাম, “আবার কি হয়েছে ব্রো?”

ও কিছু বলার আগেই রুমের বারান্দায় ধুপ করে কিছু পড়ার শব্দ পেলাম। আমি ও নাকীব ভয়ার্ত চোখে সেদিকে তাকাই। নাকীব বিড়বিড় করে বললো,
“নিঃসন্দেহে কোনো দূর্ঘটনা ঘটবে আজ।”

আমি ঢোক গিলে বললাম, “আরে কি হয়েছে সেটা তো বলিসনি৷”
“জাফরকে পুলিশ ধরে নেওয়ার পর ও জেল থেকেই পালিয়েছে। আমার খুব ভয় হচ্ছে আপু। বাবা-মাকে ডাকবো? আমরা শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবো আপু। ভয়ানক বিপদ আসছে সামনে।”

#Be_Continued__In_Sha_Allah ❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here