#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ৩১ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা রুমে বসে ফাহিমের জন্য অপেক্ষা করছে। ফাহিমকে সব জানানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। ইভানার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ফিরে এলো ফাহিম। ইভানার কাছে আসতেই ইভানা তাকে বললো,
‘জানেন কি হয়েছে?’

‘হুম। আম্মুর কাছে শুনেছি। ভাইয়ার কাজের জন্য আমি সত্যি ভীষণ লজ্জিত ইভানা।’

ইভানা প্রতিত্তোরে কিছু বলে না। ফাহিমই বলে,
‘আমার মনে হয় তোমার মন এখন বেশি ভালো নেই। তুমি যদি চাও তাহলে চলো আজ আমরা ঘুরে আসি বাইরে থেকে।তাহলে দুজনের মনই ভালো হয়ে যাবে।’

ইভানা রাজি হয়ে যায় ফাহিমের প্রস্তাবে। প্রস্তাবটা খারাপ নয়। দুজনে ঘুরতে বের হয় হাতিরঝিলের দিকে। সেখানে পৌঁছে দুজনে অনেক মজা করতে থাকে। ইভানা ও ফাহিম একে অপরের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় চারিদিকে। সময়টা যেন অনেক সুন্দর ভাবে যাচ্ছিল।

তবে ভালোর মধ্যে হঠাৎ একটা খারাপ ঘটনা ঘটে যায়। ফাহিমের সামনে আচমকা একটা মেয়ে এসে দাঁড়ায়। ফাহিমের চেনা পরিচিত মনে হচ্ছিল৷ মেয়েটা অনেক হেসে হেসে ফাহিমের সাথে কথা বলছিল। ফাহিমও হাসি মুখে কথা বলছিল। যা দেখে ইভানা ভীষণ রেগে যায়। ফাহিম মেয়েটাকে ইভানার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,
‘ইভানা ও হলো মিতা। আমার কলেজ লাইফের বান্ধবী।’

‘নাইস টু মিস ইউ ইভানা।’

মিতার কথা শুনে ইভানা সৌজন্যবোধ বজায় রাখার জন্য একটু কথা বলে। কিন্তু মেয়েটাকে তার একদম সহ্যই হচ্ছিল না। এরমধ্যে মিতা আবার বলে,
‘তোর বউ তো অনেক সুন্দরী আর ইয়াং ফাহিম। এইজন্য তো বলি কলেজ লাইফে আমায় পাত্তা দিলি না কেন। নিশ্চয়ই আগে থেকে এই মেয়ের সাথে তোর সম্পর্ক ছিল তাইনা?’

ইভানা বলে ওঠে,
‘যেই সময় আপনারা কলেজে পড়তেন সেই সময় আমি ক্লাস ৫ এ পড়তাম। ঐ বয়সে প্রেম করব বলে মনে হয়?’

‘এখন বাচ্চারা যা আপডেটেড হয়েছে।’

‘আমাদের ফ্যামিলির কারো এসব নিব্বা-নিব্বি প্রেম করার রেকর্ড নেই।’

ফাহিম হঠাৎ তাদের মাঝে বলে ওঠে,
‘কিন্তু ইভানা তুমি যে আমায় বলেছিলে তোমার নাকি ক্লাস এইট থেকে বয়ফ্রেন্ড ছিল।’

ইভানা ফাহিমের দিকে রক্তিম চোখে তাকায়। ইভানার প্রেস্টিজ এই মেয়েটার সামনে একদম মাটিয়ে মিশিয়ে দিল। ইভানা কত বড় মুখ করে বলল আর ফাহিম! ইভানার এত রাগ হলো যে সে বলে উঠল,
‘আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকব না।’

বলেই ইভানা হাঁটা ধরল। ফাহিম মিতার থেকে বিদায় নিয়ে ইভানার পিছু পিছু চলল।

৬১.
তোহা ও ফারহান একসাথে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। ফারহান এবার কিছু করে নি। বরং তোহাই তাকে ফোন করে এখানে ডেকেছে। যার কারণে ফারহান ভীষণই অবাক। তোহা যে নিজে থেকে তাকে এভাবে ডাকবে সেটা সে ভাবতে পারে নি। অনেকক্ষণ ধরে রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসে আছে তারা। কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই কোন কথা বলছে না। এই নীরবতা ভেঙে ফারহান নিজেই বলে ওঠে,
‘আপনি কি জন্য আমায় আজ এখানে ডাকলেন বললেন না তো!’

‘আমি কিছু জরুরি কথা বলতে চাই।’

‘হুম, বলুন। আমি আপনার কথা শোনার জন্যই তো আছি।’

বেশ ফ্লাটি স্টাইলে কথাটা বলে ফারহান। যা শুনে তোহার মাথায় রাগ উঠে যায়। কিন্তু সে বড় শ্বাস টেনে নিজেকে সামলায়। যেই পরিকল্পনা তোহা করেছে সেটা কোনভাবে বানচাল হতে দিলে চলবে না। তাই তোহা মৃদু হেসে বলে,
‘আসলে আমি শুনলাম আপনি নাকি আমাদের বাড়িতে আমার জন্য বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে গিয়েছিলেন!’

‘তাহলে এটাও নিশ্চয়ই শুনেছেন যে আপনার দাদা-বাবা আমাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে।’

‘শুনেছি তো। তবে মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া কারেগা কাজি প্রবাদটা শুনেছেন নিশ্চয়ই?’

‘মানে?’

‘মানে, আমি চাই আপনাকে বিয়ে করতে।’

তোহার কথা শুনে ফারহান চমকে ওঠে। তার কাছে সবটা স্বপ্নের মতো মনে হয়। এই মুহুর্ত টার জন্য তো সে এতদিন অপেক্ষা করছিল। উত্তেজনা সামলাতে না পেরে ফারহান বলে,
‘আমি ঠিক শুনছি তো?’

‘হুম, নিঃসন্দেহে। তবে আমার পরিবারের কেউ এই বিয়ে মানবে না। তাই আমি চাই কাজি অফিসে গিয়ে আপনাকে বিয়ে করতে।’

‘সত্যিই?’

‘হ্যাঁ, সত্যি। আপনি কিন্তু কাউকে এই কথা জানাবেন না। আপনার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে চলে আসবেন কাল কাজি অফিসে। নিজের পরিবারকেও কিন্তু জানাবেন না।’

‘ঠিক আছে। তোহা আমি ভীষণ খুশি। জানেন এই মুহুর্ত টার জন্য কত অপেক্ষায় ছিলাম আমি।’

‘যতো খুশি হওয়ার হয়ে নিন। কারণ কাল থেকে আপনার খুশি চিরতরে বিলুপ্ত হতে চলেছে।’

মনে মনে কথাটা বলে তোহা। তবে মুখে বলে,
‘আমিও কালকের জন্য অপেক্ষায় আছি। কালকের দিনটা খুব স্মরণীয় হতে চলেছে আমাদের দুজনের জন্যই।’

বলেই একটা হাসি দেয় তোহা। অতঃপর উঠে চলে আসে।

৬২.
কে’টে গেছে একটি দিন। এখন ভরদুপুর। তোহা হঠাৎ করেই ইভানাকে ফোন করে তার সাথে দেখা করতে বলে। অতঃপর ইভানাকে সাথে নিয়ে কাজি অফিসের দিকে রওনা দেয়। ইভানা তো কিছু বুঝতে পারছিল না যে আসলে কি হচ্ছে।

কাজি অফিসে গিয়ে ইভানা দেখে ফারহান তার ক’জন বন্ধুকে নিয়ে এসেছে। তোহাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসে। কিঞ্চিৎ হেসে বলে,
‘বাহ, আপনি নিজের বোনকে নিয়ে এসেছেন তাহলে! ভালো আমার বন্ধুরাও এসে গেছে। এইবার কাজি অফিসের ভিতরে চলুন। আমরা বিয়েটা করে নেই।’

ফারহানের কথা শুনে হতবাক হয়ে যায় ইভানা। বিস্মিত মুখ দিয়ে তোহার দিকে তাকায়। তোহার মুখশ্রী ছিল শক্ত। তোহাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারহান তার হাত ধরে বলে,
‘কি হলো? চুপ করে আছেন কেন? ভেতরে চলুন।’

তোহা ঝট করে হাত ছাড়িয়ে নেয়। ফারহান ভ্রু কুচকে তাকায়। ফারহানের বন্ধুরাও এগিয়ে আসে এদিকে। তোহা যেন এই মুহুর্তটার অপেক্ষায় ছিল। এবার সে ফারহানকে বলে,
‘আপনি কি ভেবেছিলেন আমি আপনাকে বিয়ে করতে আসব এখানে? যদি তা ভেবে থাকেন তাহলে আপনি ভুল। কারণ আপনি যদি পৃথিবীর শেষ ছেলেও হন তাহলেও আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা।’

‘এসব কি বলছেন আপনি তোহা? আপনিই তো কাল আমাকে কাজি অফিসে আসতে বলেছিলেন বিষয় জন্য!’

‘আমি যা বলার এখন স্পষ্ট করে বলছি। আপনি আপনাকে সবার সামনে প্রত্যাখ্যান করলাম। করবো না বিয়ে আপনাকে। আপনি আমার যোগ্য নন।’

কথাটা তীরের মতো বিধছিল ফারহানের হৃদয়ে। তোহা একটু থেমে বলে,
‘মনে আছে, একদিন এভাবেই ইভানাকে বিয়ের আসরে সবার সামনে অপমান করে চলে গেছিলেন। সেদিন একটি বারের জন্যেও ওর মনের অবস্থার কথা ভাবেন নি। আমার বোনটা সেদিন কত কষ্ট পেয়েছিল। আজ আমি আপনাকে সেই কষ্টটাই ফিল করালাম।’

ফারহান কিছু বললো না। তোহা ইভানার হাত ধরে বলল,
‘চল এখান থেকে।’

বলেই ইভানাকে নিয়ে ফিরে চলে এলো। ফারহান দাঁড়িয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখলো। তার মন পু*ড়ে যাচ্ছে। তবুও সে কিছু করতে পারছে না। ফারহানের বন্ধুরা এগিয়ে আসে। তাদের একজন বলে,
‘কি হলো ফারহান? তুই যে বললি আজ তোর বিয়ে। ঐ মেয়েটাই তো তোর হবু বউ। তাহলে ও এভাবে চলে গেলো কেন?’

ফারহানের বুক চিরে দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে আসে। সে বলে,
‘ও আমায় রিজেক্ট করে চলে গেছে।’

ফারহানের বন্ধুরা সবাই বিস্মিত হয়ে তাকালো। ফারহানের এক বন্ধু টিটকারি করে বলল,
‘ইস দোস্ত, তোর জন্য কষ্ট হচ্ছে। এই বয়সে এসে এভাবে ছ্যা’কা খেয়ে ব্যাকা হলি।’

ফারহান তার বন্ধুদের কিছু না বলে নিজের গাড়িতে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। আজ সে বুঝতে পারছে প্রত্যাখিত হওয়ার জন্য। কান্না পাচ্ছে খুব তার। এই কষ্ট যে মেনে নেওয়া যায় না। ঝর্ণার মুখটা মনে পড়লো তার।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here