কাবিননামা
Part_4
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
জাবিনের ক্লাসমেট সবাই সাগরের দিকে তাঁকিয়ে ছিল। জাবিন এতে ভ্রুক্ষেপ করলো না। জাবিন নিজের মত বই বের করে পড়া শুরু করলো। জাবিনের ফ্রেন্ডস রা জাবিনকে জিজ্ঞেস করছে বারবার এই হ্যান্ডসাম ছেলেটি কে? কিন্তু জাবিন কিছুই বলছেনা। রেহান জাবিনের ইংলিশ টিচার। জাবিন রেহানের কাছেই ইংলিশ পড়ে। কলেজ ছুটি হওয়ার পর জাবিন রেহানের কাছে পড়তে গেলো। রেহান চুপচাপ ক্লাসরুমে বসে ছিল। জাবিন গিয়ে বসার পর রেহান সবার আগে জাবিনকে প্রশ্ন করলো
-সাগর তোমার কি হয়?
-জাবিন কিছু বলল না।
-জাবিন give me answer. What is your relation with sagor chowdhury?? (চেঁচিয়েই বলল রেহান)
-স্যার what’s wrong with u? R u okay? (জাবিন ভয়ে ভয়ে রেহানকে জিজ্ঞেস করলো)
-আমাকে উত্তর টা দাও। সাগর তোমার কি হয়? (শান্ত গলায় বলল রেহান)
-গত কালকে ওনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। উনি আমার হাজবেন্ড। (আস্তে করে বলল জাবিন)
-Oh really? আগে থেকেই রিলেশন ছিল নাকি এরেঞ্জ ?
-উনি জোর করে আমায় বিয়ে করেছেন আমার মতছাড়া। উনি আমায় পছন্দ করেন বলে।(মাথা নিচু করে জাবিন)
-তার মানে? তোমার মতামত ছাড়া এই বিয়ে হয়েছে?
-হ্যা স্যার।
-বই বের করো। (কিছুটা স্তব্ধ হয়ে রেহান)
-কিন্তু স্যার আপনি এইভাবে রেগে গেলেন কেন?
-সেইটা তোমার না জানলেও চলবে।
-হুম।
জাবিন রেহানের কাছে পড়ে বাসায় আসে। যদিও সাগর গাড়ি পাঠিয়েছিলো জাবিনের জন্য। কিন্তু জাবিন সেই গাড়িতে আসে নি। একা একাই বাসায় আসে। এইটা শুনে সাগর রেগে যায়। সন্ধ্যায় অফিস আওয়ার শেষ করে সাগর সরাসরি জাবিনের বাসায় চলে আসে। জাবিনের আব্বু সাগরকে দেখে খুশি হলেন। ড্রইং রুমে রিমি আর লামিয়া বসে টিভি দেখছিলো। সাগর রিমিকে জিজ্ঞেস করলো
-রিমি জাবিন কোথায়?
-ভাইয়া আপু তো আপুর ঘরে।
-ও কি জানে না আমি এসেছি?
-হ্যা লামিয়া তো বলে আসছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। (এই কথা বলে সাগর উঠে জাবিনের ঘরে গেলো)
জাবিন টেবিলে বসে পড়ছিলো। বইয়ের উপরে রেহানের ছবি। সাগরের দরজা নকের আওয়াজ শুনে জাবিন তাড়াহুড়া করে বই বন্ধ করে পিছু তাঁকায়। জাবিন টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়। সাগর ভেতরে ঢুকে টাই খুলছিলো।
-আমি আসছি প্রায় ১ ঘন্টা হয়েছে। এর মাঝে কি একবারো আমার সাথে দেখা করার প্রয়োজন বোধ করো নি? (টাই খুলতে খুলতে সাগর)
-হ্যা সেইটাই।
-ডিনার করেছো?
-হ্যা করেছি। আপনি কি আজকে এই বাসায় থাকবেন?
-কেন কোনো প্রবলেম?
-নাহ
-প্রবলেম হলে বলো চলে যাচ্ছি।
জাবিন আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সাগর ফ্রেশ হয়ে রিমি আর লামিয়ার সাথে গল্প করতে বসলো। পাশে জাবিন টিভি দেখছে। সাগর জাবিনের দিকে তাঁকাচ্ছে আর হাসছে। জাবিনের আব্বু জাবিনকে বললেন সাগরকে খাবার দিতে। জাবিন সাগরকে খাবার দিয়ে চলে আসলো। সাগর খাবার খাওয়া শেষ করে জাবিনের ঘরে ঘুমাতে গেলো। জাবিন তখন ইংলিশ পড়ছিলো। সাগর দরজা লক করে দিয়ে জাবিনের বই বন্ধ করে জাবিনকে কোলে তুলে নিলো। জাবিন হতভম্ব হয়ে গেলো। সাগর জাবিনকে বিছানায় শোয়ালো সাগর শ্যাডো লাইট অন করে দিলো। জাবিনের বুকের উপর থেকে ওড়না সরিয়ে দিল সাগর। জাবিনের চুল খুলে দিলো আর জাবিনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করলো। জাবিন কান্না করছে।
-আপনি কি করছেন এসব? প্লিজ এসব করবেন না। ছেড়ে দিন আমাকে। (কাঁদতে কাঁদতে জাবিন)
-আমি কি এতই খারাপ? নাকি কোনোদিন খারাপ কিছু করেছি? কেন আমায় এমন শাস্তি দিচ্ছো বলো তো?
-দেখুন আমি আপনার সাথে কিছু করিনি। আপনিও আমায় ছুঁবেন না।
-চুপ!! তোমায় অপবিত্র হাত দিয়ে ছুঁচ্ছি না। পবিত্র করেই নিয়েছি।
-প্লিজ এমন করবেন না আমার সাথে। আমি মরেই যাবো! (জাবিন উচ্চস্বরে কাঁদছে)
সাগর আর কিছু বলার আগেই সাগরের ফোনে ফোন আসলো। রেহান ফোন করেছে। সাগর জাবিনকে ছেড়ে দিয়ে ফোন রিসিভ করলো।
-রেহান বলছিলাম। বিরক্ত করলাম নাকি?
-না। বল (অস্থির হয়ে সাগর)
-কংগ্রেটস জানাতে ফোন করলাম।
-কিসের কংগ্রেটস?
-এই যে বিয়ে করলি জানালি না! (এই কথা বলতে গিয়ে রেহান কেঁদে দিয়েছে)
-আসলে সব হুট করে হয়ে গেছে তো তাই জানাতে পারিনি। স্যরি রে দোস্ত!
-আরে না! তা এখন কই আছিস? জাবিনের বাসায়?
-হ্যা
-জাবিন কই?
-আমার পাশেই আছে।
-ওহহ! আচ্ছা বন্ধু রাখি তাহলে।
এই কথা বলে আর এক সেকেন্ড দেরি করলো না রেহান। ফোন কেটে দিলো। রেহান ফোনটা কেটে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে পকেটে হাত দিয়ে নিঃশব্দে কেঁদে দিল।
এইদিকে জাবিন বিছানায় শুয়ে কাঁদছে। সাগর পাশে বসে জাবিনের কান্না দেখছে। কিছু বলছে না। রাত তখন ১২ টা বাজে। সাগর রিমিকে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় নিজের বাসার উদ্দেশ্যে। জাবিন কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। সাগর বাসায় এসে নিজের ঘরে শুয়ে পরে। সাগর ও আনমনে হয়ে ঘুমিয়ে যায়।
পরেরদিন সকালবেলা….
সাগর রেডি হয়ে নিজের বাসায় ব্রেকফাস্ট করে জাবিনের বাসায় জাবিনকে আনতে যায়।
-ভাইয়া আপনি? (রিমি সাগরকে বলল)
-জাবিন কোথায়?
-কলেজে।
-এত তারাতারি? (অবাক হয়ে সাগর)
-হ্যা ভাইয়া। আজকে রেহান স্যার এর পড়া আছে ক্লাস শুরুর আগে তাই আপু আজকে তারাতারি চলে গেছে।
-ওহ। ভালো থেকো আমি আসছি।
-খেয়ে যান।
-না। খেয়ে এসেছি।
এরপর সাগর অফিসে চলে যায়। অফিসে কিছুতেই সাগরের মন বসছে না। অস্থির অস্থির লাগছে সাগরের। সাগর নিজেকে সামলাতে না পেরে রেহানকে ফোন দিলো। তখন ক্লাস টাইম ছিল। রেহানের ফোন ও সাইলেন্ট করা ছিল। রেহান দেখেনি সাগরের ফোন কল। আজকে রেহানকে একদমই অন্যরকম লাগছে সবার কাছে। এত সুন্দর ছেলে যদি মুখ গোমরা করে থাকে তবে সেইটা দৃষ্টি কটু। জাবিন সকাল থেকেই লক্ষ্য করছে রেহানের মন খারাপ। আজকে রেহান জাবিনের সাথে একটা কথাও বলেনি।
এইদিকে সাগর না পারছে জাবিনকে দেখতে আর না পারছে অফিস করতে।
চলবে