কাবিননামা Part_2

কাবিননামা
Part_2
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

জাবিনের আব্বু রিমি আর জাবিনকে কঠোর ভাবে নির্দেশ দিয়ে বললেন সাগরের সাথেই বিয়েটা হচ্ছে। রিমির কোনো আপত্তি নেই কারণ সাগর সম্রান্ত ঘরের সন্তান। ওদের মতো পরিবারের মেয়েকে সাগর বিয়ে করতে চায় সেইটা ভালো কথা। আর সাগর দেখতেও মাশায়াল্লাহ! সব মিলিয়ে ভালোই হলো। রিমি লামিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো লামিয়া স্কুল থেকে আসার পর। আর জাবিন এখনো কাঁদছে। জাবিনের আব্বু আয়োজন শুরু করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র ঘরোয়া ভাবে তিনি কাবিন করাবেন। জাবিনের খালামনিরা থাকবে শুধু। এছাড়া আর কেউ নয়। রাতে যখন জাবিন ঘুমাতে গেলো বোনদের সাথে তখন জাবিনের ফোনে একটা sms আসলো। জাবিন sms open করে দেখলো unknown number. লিখা ছিল onek kedecho tai na??? SoRry janpakhi r konodin kadabona. জাবিন হেসে দিলো আর ভাবলো কে করতে পারে এমন sms. জাবিনের মাথায় সাগরের চিন্তা আসে নাই। জাবিন ঘুমিয়ে পরলো। পরেরদিন জাবিন বোনদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলো। মেইন রোডে সাগর দাঁড়িয়ে ছিল গাড়ি নিয়ে। সাগর জাবিনকে দেখে জাবিনের সামনে আসলো এই প্রথম। সানগ্লাস পকেটে ঢুকিয়ে জাবিনকে জিজ্ঞেস করলো

-কেমন আছো?
-জাবিন এই প্রথম সাগরের কন্ঠ শুনলো আর এত সুন্দর কন্ঠ কি কারো হয় নাকি? এইটাই ভাবছে জাবিন। জাবিন কোনো উত্তর দিলো না
-জাবিন আমি তোমাকেই বলছি।
-জ্বি ভালো আছি। আর আপনি আমার সাথে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। এতে মানুষ একেকজন একেকভাবে নিবে।
-সবাই জানে সাগর জাবিনের কি হয়!
-কিন্তু আমি সেইটা জানিনা যে আপনি আমার কি হোন!
-চলো তোমায় কলেজে নামিয়ে দিয়ে আসি।
-না আমি নিজেই যেতে পারবো।
-কলেজ বাস সাগর চৌধুরীর বউয়ের জন্য নয়। আসো আমার সাথে! (সাগর জাবিনের হাত ধরে)
-How dare you to touch me?? (দাঁত কটমট করে বলল জাবিন)
-Dare এভাবেই হয়ে যায়। নওশিনের (সাগরের ছোট বোন) কলেজে তোমায় ট্রান্সফার করে নিয়ে আসবো।
-প্লিজ ইনাফ। আর কিছু শুনতে চাইছিনা। (শান্ত গলায় বলল জাবিন)

এরই মাঝে জাবিনের বাস এসে পরলো। জাবিন বাসে উঠে চলে গেলো। সাগর সানগ্লাসের ডাট কামড়াচ্ছে আর হাসছে। সাগর মনে মনে বলল একটা মেয়ে যে আমার জীবনটাই উলোটপালোট করে দিলো তার মনে আমি বিন্দুমাত্র নেই! এসব ভাবতে ভাবতে সাগর চলে গেলো অফিসে।

অফিসে গিয়েও সাগর শান্তি পাচ্ছে না। জাবিনের সাথে এই প্রথম কথা বলল সাগর কিন্তু তারপরেও যেন কেন এমন লাগছে। জাবিনকে ফোন ও করতে পারবেনা কারণ জাবিন এখন কলেজে। এর মাঝে নওশীন ফোন করলো সাগরকে।

-ভাইয়া? (নওশীন)
-কি হয়েছে?
-তোমার অফিসে আসছি।
-কেন? কলেজে না গেলি তুই সকালে!!
-যাবো না। আজ ইংলিশ ক্লাস ছিল তাই
-তাতে কি??
-পড়া পারিনা। মাম্মাম পাপা যেন না জানে আমি কলেজ যাইনি। প্লিজ ভাইয়া ম্যানেজ করো না। তুমি না আমার সোনা ভাইয়া।
-কোথায় তুই এখন?
-মতিঝিল
-তার মানে তুই কলেজের সামনে থেকেই আমায় বলছিস কলেজ যাবি না?
-হ্যা ভাইয়া।
-ড্রাইভারকে নিয়ে অফিসে চলে আয়। তারপর দেখ আমি তোর কি হাল করি
-ভাইয়া প্লিজ
-চুপ একদম। আধা ঘন্টার মধ্যে অফিসে আয়।
-আসছি

এই কথা বলার পর সাগর ফোন কেটে দিলো। সাগর চেয়ারে বসে থুতুনিতে হাত রেখে নিজে নিজেই বলল ভাবি কত সুন্দর পড়াশুনা করে আর ননদ এমন!! যে করেই হোক কুত্তিটাকে মানুষ করতেই হবে। এরপর সাগর অফিসের কাজে মন দিলো। কিছুক্ষন পরেই নওশীন অনুমতি না নিয়ে সাগরের কেবিনে ঢুকে গেলো।

-ওই কুত্তি তুই কার পার্মিশন নিয়ে ঢুকলি? (নওশীনের কান ধরে সাগর)
-ভাইয়া প্লিজ ছাড়ো। ব্যাথা পাচ্ছি তো!
-আর তুই কি কলেজে গিয়েছিলি নাকি কোনো ফ্যাশন শো তে?
-কেন ভাইয়া?
-চুলের অবস্থা এমন কেন? এত মেকাপ কেন করেছিস?
-তোমার কি? সরো আমাকে বসতে দাও। (সাগরের চেয়ারে বসে পরলো)
-জাবিনকে দেখিস আর নিজেকে দেখ! ও কিভাবে কলেজ যায় আর তুই কিভাবে যাস??
-ভাইয়া ওইটা তোমার বউ আর আমি তোমার বোন। পার্থক্য তো থাকবেই তাই না?
-কালকে থেকে এভাবে যাবিনা কলেজে। তুই কি কম সুন্দর যে তোকে আরো সুন্দর করে সেজে যেতে হবে?
-ক্ষুধা লাগছে! আর সে আমায় জ্ঞান দিচ্ছে! (মুখ বাঁকা করে নওশীন)
-দাঁড়া খাবার আনাচ্ছি।

এই হলো নওশীন। সাগরের চোখের মণি। নওশীন ও সাগরকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতে পারেনা। যখন যা দরকার সব আগে ভাইয়াকে জানাবে নওশীন। ভাইয়া ছাড়া নওশীনের একদিন ও চলেনা। ভাইয়ার সাথে রাগ,,দুঃখ,,অভিমান সবটাই করে। কিন্তু নিজের ভালোবাসা ভাইয়ার জন্য অফুরন্ত।

-ভাইয়া জাবিনের সাথে কথা হয়েছে নাকি এখনো কোনো কথাই বলো নি? (খাবার খেতে খেতে নওশীন)
-তোর বউমনি হয়। নাম ধরে ডাকছিস কেন? (রেগে গিয়ে সাগর)
-সমস্যা কই? একই ক্লাসেই তো পড়ি।
-তবুও বউমনি বলে ডাকবি।
-আচ্ছা। কিন্তু আফসোস আজও আমার বউমনিকে আমি সরাসরি দেখতে পারলাম না।
-শুক্রবার দেখিস।
-এখন সেই আশাতেই আছি। ভাইয়া বউমনির সাথে ম্যাচ করে আমায় একটা ল্যাহেঙ্গা কিনে দিও তো!
-কেন তুইও কি বিয়ে করবি ?
-না। বউমনির মতো করে সাজবো।
-কোনো দরকার নেই। জাবিন আমার একার। কাউকেই দিবো না ওর ভাগ বসাতে। ইভেন তোকেও না।
-তুমি আসলেই আর মানুষ হবা না!
-খেয়ে বাসায় যা। কলেজ টাইম প্রায় শেষ।
-তোমার সাথে যাবো।
-আমার যেতে লেট হবে
-কেন?
-শপিংমল এ যাবো। জাবিনের জন্য কিছু গিফট কিনবো।
-সোনা ভাইয়া আমায় নিয়া যাবা না?
-থাম! তোকে শপিং এ নিলে ১০ মিনিটে আমার পকেট খালি হয়ে যায়।
-এত কিপ্টে কেন তুমি? যাও যাও লাগবেনা! আমার বর ই আমায় কিনে দিবে।
-ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল? (নওশীনের দিকে অসহায়ের মতো তাঁকিয়ে সাগর)
-হুহহহ
-চল এখনি যাবো।
-থ্যাংক ইউ সোনা ভাইয়া। (সাগরকে চুমু দিয়ে)
-দাঁত ব্রাশ করিস? আমায় যে চুমু দিলি?
-ভাইয়ায়ায়ায়া? (রেগে গিয়ে নওশীন)

সাগর ম্যানেজারকে সব বুঝিয়ে দিয়ে নওশীনকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। জাবিন আর নওশীনের জন্য অনেক কিছু কিনলো সাগর। এসব বিয়ের দিন জাবিনকে দিবে সাগর।

এরপর সবাই শপিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো। সাগর ও নিজেক ব্যস্ত রাখলো কাজের মাঝে। অফিসের কাজ ইদানীং অনেক বেশি। সাগরের পাপা আর সাগর মিলে করে সব। সাগর আর জাবিনের একসাথে শপিং এ যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু জাবিন যেতে পারেনি এক্সাম ছিল বলে। তবে সেইটা শুধু মাত্র অজুহাত ছিল জাবিনের। যাই হোক বিয়ের দিন জাবিন নিজে নিজেই সাজলো। পার্লারে যেতে জাবিনের ভালো লাগেনা তাই। জাবিন তার আব্বুর কিনে দেওয়া শাড়িটা পরলো। জাবিনের কাজিনরা জাবিনকে সাজাতে হেল্প করলো। রিমি আর লামিয়া বর পক্ষের সবার সাথে কথা বলছে। নওশীন রিমি আর লামিয়ার সাথে সম্পুর্ন বন্ধুর মতো মিশে যায়। এইটা দেখে সাগরের পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয়েছে।

যখন জাবিনকে ড্রইং রুমে নিয়ে আসলো জাবিনের কাজিনরা তখন সাগর বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। সাগরের ফেমিলির সবাই হা করে তাঁকিয় থাকে। নওশীন ও অবাক হয়ে গেছে। জাবিনের আব্বু সবাইকে বলল

-any problem?
-বেয়াই সাহেব এইটা মেয়ে নাকি হুর পরী? (সাগরের পাপা)
-বলেছিলাম না আমার বউমা দেখার মতো। (সাগরের মাম্মাম)
-এইটা আমাদের সাগরের বউ? (সাগরের ফুপ্পি)

সাগর এখনো মুগ্ধ চোখে তাঁকিয়ে আছে জাবিনের দিকে। জাবিন মাথা নিচু করে আছে। নওশীন জাবিনের কাছে গেলো।

-ভাইয়া really u r best. তোমায় থ্যাংক্স এত কিউট একটা বউমনি আমায় এনে দেওয়ার জন্য। (জাবিনের দিকে তাঁকিয়ে নওশীন)

সাগর নিজের জায়গায় বসলো। কপালে আঙ্গুল রেখে হেসে দিলো। সাগরের চোখে পানি টলমল করছে আর সেইটা আনন্দ অশ্রু। সাগর জাবিনের দিকেই তাঁকিয়ে ছিলো। কবুল বলার সময় জাবিন কেঁদে দিয়েছিলো। এরপর নিজেই স্বাভাবিক হয়ে কবুল বলল জাবিন। বিয়েটা শেষ হলো। নওশীন আর জাবিনের বোনেরা জাবিনকে নিয়ে জাবিনের ঘরে যায়। জাবিন মনমরা হয়ে বসে থাকে। নওশীন জাবিনের প্রশংসায় মঞ্চমুখ। সব ফর্মালিটি শেষ করে সবাই সন্ধ্যার পর বেরিয়ে গেলো। শুধু সাগরের পরিবার ছিলো জাবিনদের বাসায়। সাগর রিমি আর লামিয়ার সাথে কথা বলল। রাত ৯ টার দিকে সাগর জাবিনের ঘরে যায় নক করে। তখন সেখানে নওশীন ছিলো। সাগরকে দেখে নওশীন বেরিয়ে গেলো। জাবিন ঘরে একা। এখনো মন খারাপ করে বসে আছে জাবিন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here