কাবিননামা Part_3

কাবিননামা
Part_3
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

সাগর জাবিনের ঘরে ঢুকলো দরজা নক করে। সাগরকে আসতে দেখে নওশীন জাবিনের কাছ থেকে চলে গেলো। জাবিন তখন একা ছিল আর মন খারাপ করে বসে ছিলো। সাগর ঘরে ঢুকলো। জাবিন একটু নড়েচড়ে বসলো।

-মন খারাপ করে আছো কেন? (সাগর)
-এমনি।
-ডিনার করবেনা?
-না।
-কেন?
-ইচ্ছা নেই।
-ড্রেস চেঞ্জ করে খাবার খেতে আসো। আমি পাশের ঘরে আছি।
-জাবিন কিছু বলল না।
-কি বলছি শুনেছো?
-প্লিজ! আমি খাবো না। আমাকে জোর করবেন না।
-তুমি আসবে নাকি আমি তোমায় কোলে নিবো? কোনটা?
-আসছি। (দাঁতে দাঁত চেপে জাবিন)

সাগর ঘর থেকে বের হয়ে গেলো আর জাবিন দরজা লাগিয়ে দিলো ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য। জাবিন একটা একটা করে গয়না খুলছে আর চোখের পানি ফেলছে। নাকফুলটা খুলল না জাবিন। নিজেকে আজ অদ্ভুত সুন্দর লাগছে জাবিনের কাছে। নাকফুলটার কারণে জাবিনের সৌন্দর্য্য আজ বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। জাবিন হাত মুখ ধুয়ে ১০ মিনিট পর খাবারের ঘরে গেলো। সাগর টি শার্ট পরা ছিল তখন। জাবিনের আব্বু আর সাগরের পরিবারের সবাই একসাথে বসে গল্প করছে। তার একপাশে সাগর কপালে আঙ্গুল রেখে বসে আছে। জাবিনকে দেখে নওশীন এগিয়ে আসলো। জাবিনকে নওশীন তার পাশের চেয়ারে বসালো। সাগরের মাম্মাম জাবিনের মুখে একটা চুমু দিলেন। রিমি আর লামিয়া চেয়ারে বসে ছিল। সাগর এসে জাবিনের বিপরীত চেয়ারে বসলো জাবিনের মুখোমুখি। জাবিন আস্তে আস্তে খাচ্ছে। রিমি জাবিনকে বলল

-আপু খাইয়ে দিব?
-না।
-জাবিন এমনি। নিজের হাতে খুব কম ভাত তুলে খেয়েছে। রিমিই খাইয়ে দিতো সবসময়। (জাবিনের আব্বু)
-আচ্ছা আব্বু সমস্যা নেই। (সাগর)
-বাবা তুমি তো কিছুই খাচ্ছো না! রান্না কি ভালো হয়নি? (জাবিনের আব্বু সাগরকে উদ্দেশ্য করে)
-না আব্বু ঠিক আছে সব।
-বেয়াই সাহেব আমার মেয়েটা কে এখন আপনাদের হাতে তুলে দিলাম। আপনারাই ওকে দেখে রাখবেন। (জাবিনের আব্বু সাগরের আব্বুকে বলল)
-তা নিয়ে আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকুন। মেয়ে এখন আমার।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে নওশীন আর রিমি জাবিনকে জাবিনের ঘরে বসিয়ে দিয়ে আসলো। জাবিনের ঘর আজ ফুল দিয়ে সাজানো। ফুলের সুবাসে চারপাশ কেমন মাতাল মাতাল হয়ে আছে। জাবিন চুপচাপ গিয়ে খাটে বসলো। তখন জাবিন থ্রি পিস পরা ছিল আর কোনো মেকাপ ছিল না মুখে। আধা ঘন্টা ধরে জাবিন একা বসে আছে একদম মূর্তির মতো। সাগরের আসার কোনো নামগন্ধ নেই। খাটের সাথে হেলান দিয়ে থাকলো জাবিন। আর আনমনে কি যেন ভাবছিলো। এরই মধ্যে সাগর আসলো। জাবিন সোজা হয়ে বসলো। সাগর দরজা লক করে দিলো। জাবিনের বুক তখন ধুক করে উঠলো। সাগর জাবিনের থেকে দুই হাত পরিমান গ্যাপ রেখে জাবিনের মুখোমুখি বসলো। জাবিন চাদর খামচে ধরে আছে। আর আংটি পড়া নরম হাতগুলো অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সাগর তাঁকিয়ে শুধু জাবিনের হাত দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। জাবিন মাথা নিচু করে ছিলো তাই সাগরের হাসিটা দেখতে পায়নি। হঠাৎ করে সাগর জাবিনের হাতের উপর নিজের হাত রাখলো। জাবিন রীতিমত ভয় পেয়ে যায় আর কেঁপে উঠে। অবাক করা দৃষ্টিতে জাবিন সাগরের দিকে তাঁকালো।

-ভয় পেয়েছো? (সাগর জাবিনের কাছে এসে)
-জাবিন কিছু বলল না।
-চাদরটা যেভাবে আঁকড়ে ধরে ছিলে আর একটু হলে ছিঁড়ে যেত।
-জাবিন হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে সাগরের থেকে।
-লাভ নেই তো! এই হাত তো আর ছুটবেনা। এই হাত আর এই মেয়েটার সম্পুর্ন দলিল এখন আমার কাছে। তাকে আমি কিনে নিয়েছি কবুলের জোরে। (জাবিনের হাতে কিস করে সাগর)

জাবিন বারবার শিহরিত হচ্ছে। জাবিন চোখ বন্ধ করে ফেলল। সাগর শুধু জাবিনকে দেখছে। ফ্যানের বাতাসে চুল উড়ছে জাবিনের।

-জাবিন? তোমার পথচলার সঙ্গী হওয়ার যোগ্যতা কি আমি রাখিনা? নাকি আমি আনস্মার্ট? নাকি দেখতে খারাপ? নাকি তোমায় সুখ দিতে পারবোনা? তোমার অর্ধেক হওয়ার যোগ্যতা কি আমার নেই? (জাবিনের হাত নিজের দুই হাতের মুঠোয় বন্দি করলো সাগর)
-এখন এসব প্রশ্ন করা সম্পুর্ন ভিত্তিহীন। (শান্ত গলায় বলল জাবিন)
-জাবিন তুমি কেন বুঝতেছো না বলো তো আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি? আমার জীবন টাই উলট পালোট করে দিয়েছো তুমি। তুমি ছাড়া যে সাগর বাঁচবে না। (জাবিনের গালে হাত রেখে সাগর)
-আপনার ইচ্ছা…. ইচ্ছা আর আমার ইচ্ছার কি কোনো মূল্য নেই?
-এইভাবে কেন বলছো জাবিন?
-মা মারা যাওয়ার আগে বলেছিলো জাবিন তুমি আমার স্বপ্ন পুরণ করো আর আপনি সেইটা নিজ হাতে নষ্ট করে দিয়েছেন। (শান্ত গলায় জাবিন)
-আমি??? আর আম্মুর স্বপ্ন ছিল তার বড় মেয়ে ডাক্তার হবে তাই তো? (জাবিনের গাল থেকে হাত নামিয়ে সাগর)
-হ্যা তাই। আজ সেই স্বপ্ন আমি মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছি।
-তোমার স্বপ্ন তোমারই থাকবে শুধু পূরন করার দায়িত্বটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি এতটাও খারাপ নই জাবিন।
-জাবিন আর কিছু বলল না।
-চোখ মুখ একদম লাল করে ফেলেছো। ঘুমাও। কালকে কলেজ যাবে।
-জাবিন অবাক হলো সাগরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে।

সাগর বিছানা থেকে ফুল সরিয়ে জাবিনকে শুইয়ে দিলো। সাগর বিন ব্যাগের উপর বসলো। জাবিন ভেবে পাচ্ছেনা সাগর ওইখানে গিয়ে কেন বসলো। জাবিন মনে মনে বলছে ভালই হয়েছে তাতে আমার কি? জাবিন অন্যদিকে ঘুরে ঘুমিয়ে পরলো। সকাল ৯ টায় জাবিনের ক্লাস। ৮ টায় বের হতে হবে। সাগর ও অফিসে যাবে। জাবিন ঘুম থেকে জেগে দেখে সাগর নেই। জাবিন একটা হাসি দেয়। এরপর ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে যায়। গিয়ে দেখে সাগর ব্রেকফাস্ট করছে। নওশীন জাবিনকে বলল

-গুড মর্নিং বউমনি। আসো এখানে।
-মর্নিং। (জাবিন আস্তে করে বলল)
-আজকে কলেজে না গেলে হয়না? (জাবিনের আব্বু)
-পরশু এক্সাম। আজ যেতেই হবে।
-সাগর শুধু শুনছে কিছু বলছেনা।

জাবিন ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়। চুলে বিনুনি করছিলো এমন সময় সাগর আসলো রেডি হয়ে। জাবিন আয়নায় দেখছিলো। কালো শার্টে দূর্দান্ত মানিয়েছে সাগরকে। সাগরের ঘড়ি জাবিনের ড্রেসিং টেবিলের উপরে সেইটাই নিতে আসছে সাগর।

-বের হবে না এখন? (ঘড়ি নিয়ে সাগর)
-হুম।(চুল ঠিক করে জাবিন)
-সুন্দর লাগছে অনেক। (জাবিনের সামনে দাঁড়িয়ে সাগর)
-জাবিন কিছু বলল না।
-আমার সাথে আজ থেকে কলেজ যাবে।
-কেন?
-জাবিন প্লিজ এতদিন বাসে গিয়েছো সমস্যা নেই। আজ থেকে আমার সাথেই যাবে।
-তার প্রয়োজন নেই।(ব্যাগ গুছাতে গুছাতে জাবিন)
-জাবিন? (ধমক দিয়ে জাবিনের আব্বু)
-কি আব্বু? আসো ভেতরে।
-সাগর যা বলছে সেইটাই করবি।

এরপর জাবিন আর কিছু না বলে সাগরের গাড়ি দিয়ে কলেজে গেলো। সাগর ইচ্ছে করেই পেছনের সিট লক করে রেখেছে যাতে জাবিন সেইখানে না বসতে পারে আর সাগরের পাশে বসে। সাগর সবসময় ড্রাইভ করার সময় সানগ্লাস পরে আজও তাই করলো। ১ ঘন্টা পর সাগর জাবিনের কলেজে পৌঁছালো। ক্যাম্পাসে গাড়ি পার্ক করে জাবিনকে ওর ক্লাসে দিয়ে আসলো সাগর। ততক্ষনে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। সাগরকে দেখে জাবিনের ক্লাস টিচার বলল

-সাগর তুই? (খুশি হয়ে)
-রেহান? এতদিন পর?(সাগর রেহানকে হাগ করলো)
-এইখানে তাও জাবিনের সাথে?
-ফোনে বলব আর খেয়াল রাখিস ওর। পরে কথা হবে। বাই।
-যা।

জাবিনের ক্লাসমেট সবাই হা করে তাঁকিয়ে ছিলো সাগরের দিকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here