You are my property,Part_16,17

You are my property,Part_16,17
M Sonali
Part-16

— না আমি আপনাকে ভালোবাসি না। শুনেছেন আপনি? আমি আপনাকে একটুও ভালোবাসি না। আমার মনে আপনার জন্য এক বিন্দু জায়গাও নেই। আপনি আমার জীবনের একটি অভিশাপ। অভিশাপ হয়ে এসেছেন আপনি আমার জীবনে। আমার জীবন থেকে সবকিছু একে একে কেরে নিচ্ছেন আপনি। আমি আপনাকে কখনোই ভালোবাসিনা। আর কখনো বাসবোও না। আমি অন্য কাউকে ভালবাসি। আমার ভালোবাসার অন্য একজন আছে। যাকে আমি নিজের মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসি। কিন্তু সে আপনি নন।

এতোটুকু বলে থেমে গেল রাহি। ওকে থামতে দেখে বোবার মতো পিছনদিকে কয়েক পা পিছিয়ে গেল রাজ। তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল,

— তুমি এসব কি বলছ রাহি? তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো? কবে থেকে?

— যখন থেকে রাজ নামের অভিশাপ আমার জীবনে এসেছে তখন থেকে ভালোবাসি আমি অন্য কাউকে। শুনতে পেরেছেন আপনি? আপনাকে আমি ঘৃণা করি। আপনি এমন একজন মানুষ যে আমার কপালে কলঙ্কের দাগ লাগিয়েছেন। শুধু তাই নয় আপনি জোর করে আমার হাত কেটে আমার হাতে নিজের নাম লিখে দিয়েছেন। যা আমি এখনো নিয়ে বেড়াচ্ছি নিজের হাতে। অন্যের সামনে নিজের হাত বের করতে লজ্জা লাগে আমার। আপনি এমনই একজন মানুষ যে জোর করে বিয়ে করে আমাকে জোর করে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছেন। আপনি কি করে ভাবলেন এতকিছুর পরেও আমি আপনাকে মেনে নেব? কক্ষনো না আমি আপনাকে কখনো মেনে নেব না। আই জাস্ট হেট ইউ মিস্টার রাজ চৌধুরী। আই হেট ইউ সো মাচ।

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে কান্না করতে করতে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলাম আমি। তারপর রুমে গিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো সবকিছু ছিড়ে ফেলে দিতে লাগলাম। সবকিছু এলোমেলো করে নিচে খুলে ফেলে দিয়ে বিছানায় পড়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলাম আমি। আমি জানিনা আমি কেন এমনটা করলাম রাজের সাথে। তবে আমি শুধু একটি কথাই জানি আমার এতটা রাগ লাগছে যে কোনো কিছুই সহ্য হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে আমার আজকে শুধুমাত্র রাজ এর জন্যে এই অবস্থা। তাই আজ আমার আম্মু আমার সাথে এমন আচরণ করেছেন। যেন আমি তাদের থেকে পর হয়ে গেছি। এগুলোর সব কিছুর জন্যে দায়ী শুধু মাত্র রাজ আর কেউ নয়।

তাই ওকে আমি কখনো নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারব না। ভালবাসতেও পারব না কখনো। কথাগুলো ভাবছি আর ফুঁপিয়ে কান্না করছি আমি। হঠাৎ রুমে কারো উপস্থিতি টের পেলাম কিন্তু সে দিকে ফিরে তাকালাম না আমি। তারপরে হাতে টান অনুভব করতেই উঠে বসলাম আমি। রাজকে দেখলাম ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বিছানায় বসে তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলাম। সে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার হাতদুটো তার দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে বলতে শুরু করলেন,

— আমি জানি রাহি, তুমি আমাকে যে কথাগুলো বলেছো সেগুলো রাগের বশে বলেছ। তুমি অন্য কাউকে নয় তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসো। আমি আমার জন্য তোমার চোখে ভালোবাসা দেখতে পেরেছি। তাহলে কেন শুধু শুধু নিজের রাগকে এভাবে ঘৃণায় পরিনত করছো আমার প্রতি। প্লিজ রাহি এমনটা করো না। আমি যে শেষ হয়ে যাবো। আমার পৃথিবীতে ভালবাসা বলতে কেউ নেই। এত বছর পর তোমাকে নিজের ভালোবাসায় রাঙিয়ে দিতে চাইছি। তোমার মাঝে পৃথিবীর সব ভালোবাসা খুঁজে নিতে চাইছি আমি। তুমি আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিওনা রাহি। আমি শেষ হয়ে যাবো আমার মাঝে থেকে সবকিছু হারিয়ে যাবে। আমি আবারও সেই আগের মতো পাথরের মূর্তি হয়ে যাব। যার মাঝে থাকবে না কোন অনুভূতি কোনো মায়া কোনো ভালবাসা। প্লিজ আমার ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করো। আমি বুঝতে পারছি আমি ভুল করেছি। আর সে জন্য তোমার কাছে আমি ক্ষমাও চাইছি। রাহি তুমি আমাকে যে শাস্তি ইচ্ছা দিতে পারো আমাকে খুন করে ফেললেও আমি নিষেধ করব না। কিন্তু দয়া করে তুমি একথা বলো না যে তুমি আমাকে ভালোবাস না। আমার সাথে থাকতে চাও না। এটা যে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবোনা রাহি। আমি যে তোমায় বড্ড বেশি ভালোবাসি।

পাগলের মত উত্তেজিত হয়ে কথা গুলো বলতে লাগল রাজ। কিন্তু তার কোন কথাই যেনো এখন আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। আমার মস্তিষ্কের মাঝে এখন এক প্রকার আগ্নেয়গিরির লাভা দৌড়াদৌড়ি করছে। অসম্ভব রাগ লাগছে আমার। আর সেই রাগের কারণ হিসাবে এখন আমি দায়ী করছি শুধু এই রাজ নামের লোক টিকে। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে রাজ আবারো বলে উঠলো,

— কি হলো রাহি তুমি চুপ করে আছো কেন? তুমি আমায় বলো তুমি অন্য কাউকে নয় তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো। তারপর তুমি যেটা চাইবে সেটাই হবে। প্রয়োজন হলে আমি নিজের মুখ কখনোই তোমাকে দেখাবো না। তবুও তুমি এ কথা বলো না যে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো। তাহলে যে আমার মাঝে থেকে সব বিশ্বাস হারিয়ে যাবে। আমি আর কখনো কাউকে বিশ্বাস করতে পারব না। ভালবাসতে পারব না কাউকে। নিজেকে যে পাথর করে ফেলব আমি। তখন যে জীবনটা বড়ই কঠিন হয়ে যাবে রাহি। তুমি এমন টা করো না আমার সাথে। আমি বদলে গেলে তখন পস্তাবে সবচেয়ে বেশি তুমি। যেটা আমি কখনোই চাইনা।

উনি আমার গালে হাত রেখে অনেক বিনয়ের সুরে কথাগুলো বললেন। কিন্তু ওনার কোন কথাই যেন এখন আমার মস্তিষ্কে কাজ করছে না। আমি ওনার হাত ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে ওনার থেকে দূরে সরে এসে দাঁড়িয়ে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বলতে শুরু করলাম,

— খবরদার আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না। আপনি যত কিছু বলেন না কেন আমার মুখ থেকে একটা শব্দ ই শুনতে পারবেন। সেটা হচ্ছে আমি আপনাকে কখনোই ভালোবাসিনি ভালবাসি না আর কখনো ভালবাসবোও না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আপনার সাথে আমি থাকতে চাই না। আপনার যা খুশি করতে পারেন সেটা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। তবে একটা কথা শুনে রাখুন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কাউকে ঘৃণা করলে সে আপনি। আর কেউ নয়। আই হেট ইউ মিস্টার রাজ চৌধুরি আই হেট ইউ।

কথাগুলো বলে দরজার দিকে পা বাড়ালাম আমি রুম থেকে বেরিয়ে যাব বলে। হঠাৎ চুলে কারো টান অনুভব করতেই পিছন দিকে ঘুরে তাকালাম আমি। আর পিছনে ঘুরে তাকাতেই যেন অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল আমার। কারণ রাজকে এখন অসম্ভব ভয়ানক দেখতে লাগছে। ওর চোখগুলো পুরো লাল টকটকে হয়ে গেছে। মুখটায় হিংস্রতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। আমার চুলের মুঠি ধরে এক ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলো ও। নিচে পরে গিয়ে হাতে ব্যাথা পেয়ে কুকিয়ে উঠলাম আমি। তারপর রাজ চিৎকার করে বলে উঠলো,

— ভেবেছিলাম সারা পৃথিবীর মেয়েরা এক রকম হলেও তুই হয়তো অন্যরকম। তাই তোকে সবচাইতে বেশি ভালোবেসেছিলাম আমি। কি করি নি তোর জন্য আমি? তোকে বিয়ে করার পর তোর স্বামী হওয়া সত্বেও কখনো তোর উপর জোর করে নিজের স্বামীত্য খাতাইনি আমি। আর তুই কিনা নিজের স্বামীকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালোবাসিস বলছিস? আজকে তোকে আমি খুন করে ফেলবো। তোদের মতন মেয়েদের জন্য আমার মত কত পুরুষের জীবন নষ্ট হয়। তোকে আমি শেষ করে ফেলব। এই জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই তোর। আজ তুই প্রমাণ করে দিলি যে আমি ভুল ছিলাম। তোকে বিশ্বাস করে সবচাইতে বড় ভুল করেছি আমি। তুইও সেই মহিলাদের মত যারা পুরুষদের জীবন নষ্ট করে। এমনকি নিজের বাচ্চাকাচ্চার জীবনটাও নষ্ট করে, শুধু নিজের কথা ভেবে। তোর মত মেয়েদের জন্য সমাজে আজ কত শত পুরুষ লাঞ্চিত। তোকে আমি শেষ করে ফেলব। তোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

কথাগুলো একনাগাড়ে বলেই কোমরের বেল্ট খুলতে লাগলেন উনি। ওনাকে এত হিংস্র রুপে দেখে এবার ভয়ে কেঁপে উঠলাম আমি। আজ অব্দি কখনো ওনাকে এমন হিংশ্র রুপে দেখিনি আমি। যেন এক হিংস্র বাঘ দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।

ওনাকে বেল্ট খুলতে দেখে আমি ভয়ে ভয়ে ছেচরিয়ে ছেচরিয়ে পিছন দিকে যেতে লাগলাম। কিন্তু উনি যেন দমে যাওয়ার পাত্র নয়। বেল্ট খোলার চেষ্টা করে আমাকে পিছাতে দেখে বেল্ট না খুলে উনি আবার দৌড়ে এগিয়ে আসলেন আমার কাছে। তারপর আমার চুলের মুঠি ধরে দাঁত কিড়মিড় করে বললেন,

— এই বলনা বল, কি নেই আমার মাঝে। তুই আমাকে কেন ভালবাসতে পারিস না। আর কাকে ভালোবাসিস তুই? তুই বিবাহিত মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও কাকে ভালোবাসিস? তুই একবার শুধু তার নামটা বল তাকে নিজের হাতে শেষ করবো আমি। তারপরে তোকেও শেষ করে ফেলবো। তুই কেন আমাকে ভালোবাসিস না একটা কারণ বল। আমাকে ভালো না বাসার মত একটা কারণ বল শুধু।

কথা বলে বললেই রাগ সহ্য করতে না পেরে আমার মাথাটা সজোরে ধাক্কা দিলেন উনি। সাথে সাথে আমার মাথা গিয়ে দেওয়ালে জোরে করে বারি খেলো।সাথে সাথে সারা পৃথিবী যেন চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে আসলো আমার। আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে লাগলাম। আর জ্ঞান হারানোর আগে শুধু একটা কথাই শুনতে পারলাম। সেটা হল রাজ উত্তেজিত কণ্ঠে পাগলের মত চিৎকার করে বলে উঠলো,

” রাহিইইইইইইই,,”

চলবে,,,,,,,,

You are my property
Part_17
M Sonali

মাথায় হালকা ব্যাথা নিয়ে চোখ মেলে তাকালাম আমি। তাকাতেই নিজের রুমে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। চোখ মেলে তাকিয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখলাম আব্বু আম্মু ভাইয়া সবাই আমাকে ঘিরে ধরে বসে আছে। আমাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। আম্মু ছলছল চোখে আমার পাশে এগিয়ে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— এখন কেমন লাগছে মা?

আম্মুর কথার উত্তর না দিয়ে আমি উঠে বসার চেষ্টা করলাম। তখনই ভাইয়া আমার পাশে এগিয়ে এসে আমাকে ধরে তুলে বালিসের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো। তারপর বলল,

— নিজের উপর এতো প্রেশার দিস না রাহি। তাহলে তোর সমস্যা হতে পারে। তুই এখনো পুরোপুরি সুস্থ নোস। চুপচাপ শুয়ে থাক।

ভাইয়া কথার কোন উত্তর না দিয়ে আশে পাশে চোখ বুলিয়ে দিতে লাগলাম আমি। তার পরেই আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,

— আমার কি হয়েছিল আম্মু? আমি এখানে এলাম কি করে?

— তুই পা স্লিপ করে ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় ব্যথা পেয়েছিলি। আমরা তোকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিয়েছি। ডাক্তার বলেছে তোকে রেস্ট নেওয়ার জন্য। একটু রেষ্ট হিলেই সুস্থ হয়ে যাবি তুই। কেন তোর কি কিছু মনে নেই রাহি?

পাশে বসে থেকে কথাগুলো বলে উঠলো ভাইয়া। ভাইয়ার কথা শুনে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম আমি। “এসব কি বলছে ভাইয়া? আমি ওয়াশরুমে কখন পা স্লিপ করে পড়ে গেলাম?”

— এসব তুমি কি বলছো ভাইয়া? আমি ওয়াশরুমে কেন পড়ে যাব? আমাকে তো রাজ,,,

এতোটুকু বলতেই ভাইয়া আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

— রাজ? কিসের রাজ? কে রাজ? কার কথা বলছিস তুই রাহি?

ভাইয়ার এমন কথায় যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আমার। এসব কি বলছে ভাইয়া? রাজকে চেনে না? আবার বলছে কিসের রাজ কে রাজ?

— ভাইয়া এসব কি বলছ তুমি? তুমি রাজ কে চেন না? রাজ আমার স্বামী। যার সাথে তোমরা আমাকে বিয়ে দিয়েছিলে।

আমার কথা শুনে এবার আম্মু কিছুটা রাগি গলায় বলে উঠলো,

— তুই কি পাগল হয়ে গেলি রাহি? ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে কি তোর মাথায় কোন সমস্যা হয়ে গেল? তোর তো এখনো বিয়ে’ই হয়নি। তাহলে তোর স্বামী কোথা থেকে। কোন রাজের তোর সাথে বিয়ে হয়েছে? নাকি তুই কোন স্বপ্ন দেখেছিস?

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো, পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যেতে লাগল। কি বলছে আম্মু এসব! আমার এখনো বিয়ে হয়নি? রাজ নামের কেউ নেই? তাহলে এতদিন আমার সাথে যেটা ঘটে গেল সেগুলো কি সব স্বপ্ন? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব। আমি এত বড় স্বপ্ন কিভাবে দেখতে পারি? তখনই হঠাৎ আমার মনে পরল আমার হাতে লেখা রাজের নামের কথা। সেটা তো নিশ্চয়ই মিথ্যে হতে পারে না। কথাটি ভাবতেই নিজের হাতের দিকে তাকালাম আমি। আর তাকাতেই দেখতে পারলাম হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো আছে। আমি তখন’ই উত্তেজিত সরে বলে উঠলাম,

— তোমরা রাজকে চিনতে পারছ না? রাজের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। ও আমার স্বামী। যার নাম আমার হাতে লেখা ছিল। এই দেখো ব্যাণ্ডেজ করা রয়েছে এখানে আমার রাজের নাম লেখা আছে।

আমাকে এমন কথা বলতে দেখে আব্বুর কি যেনো হল সে দ্রুত আমার রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আর ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— তুই হয়তো কোনো স্বপ্ন দেখেছিস পুচকি। তোর হাতে কারো নাম লেখাই নেই। তুই ওয়াশরুমে পড়ে গিয়ে তোর হাত কেটে গেছে। এজন্যই তোর হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। যখন ব্যান্ডেজ খোলা হবে তখন দেখতে পারবি এখানে কারো নাম লেখা’ই নেই।

ওরা এসব কি বলছে কোন কিছুই মাথায় ঢুকছেনা আমার। আমার সাথে এই এত কিছু ঘটে গেলো অথচ সবাই বলছে এগুলো আমার স্বপ্ন! তাহলে এত বড় স্বপ্ন আমি কিভাবে দেখতে পারি? যেটা সত্যি একদম বাস্তব এর মত কেটেছে আমার সাথে? আচ্ছা আমার এটা যদি স্বপ্ন না হয়ে থাকে তবে তো ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে রাই এর সাথে। কথাটা মনে পড়তেই আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম,

— ভাইয়া রাই কোথায়? তোমার সাথে যার বিয়ে হয়েছে মানে আমার ভাবি কোথায়? ভাইয়া রাইকে নিয়ে আসো। আমি ওকে দেখতে চাই। তোমরা আমার কথা বিশ্বাস না করলেও রাই করবে।

আমার কথা শুনে এবার আম্মু মুখে আঁচল গুঁজে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল কান্না করতে করতে। আম্মুকে এভাবে চলে যেতে দেখে যেন আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম আমি। এবার ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে বুকের সাথে চেপে ধরে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল,

— প্লিজ রাহি শান্ত হ। এগুলো সব তোর স্বপ্ন আমি এখনো বিয়ে করিনি। আর রাই বলে আমাদের জীবনে কেউ নেই। সব তোর মনের ভুল।

ভাইয়ার কথায় এবার যেন আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম আমি। রাজ বলে কেউ নেই, এমনকি রাই বলেও কেউ নেই? আর ভাইয়া এখনো বিয়ে করেনি? এটা কিভাবে সম্ভব? আমি সব কিছু এখন পর্যন্ত মনে করতে পারছি। সব চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠছে। এতটা বাস্তবতা কিভাবে স্বপ্নের মাঝে থাকতে পারে? আর কিভাবে বলছে ওরা যে রাজ বা রাই বলে কেউ নেই? সবকিছুই আমার মনের ভুল? উফ মাথা ধরে যাচ্ছে আমার এসব ভাবতে ভাবতে। যখনই কিছু বলতে যাব তখনি আব্বু একজন ডাক্তার কে সাথে নিয়ে রুমের মাঝে প্রবেশ করলেন। এই ডাক্তারকে আমি আগেও দেখেছি। এনার কাছে’ই আমি রাজ কে রাস্তা থেকে আহত অবস্থায় তুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেছিলাম। ইনিই ছিলেন সেই হাসপাতালের ডাক্তার। আমি চুপ করে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি আমার কাছে এসে আমার পালস্ চেক করলেন তারপর আরো একটু চেকাপ করে কিছু ঔষুধ লিখে দিয়ে বললেন,

— কোন সমস্যা নেই আপনার মেয়ে এমন অনেকটা সুস্থ আছে। যে ঔষুধ গুলো লিখে দিলাম এগুলো কিনে নিয়ে এসে নিয়ম করে খাওয়ান ইনশাআল্লাহ উনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।

ডাক্তারের হাত থেকে প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিলেন আব্বু। তারপর ডাক্তার কে সাথে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালেন। আমি ডাক্তার আঙ্কেলকে ডাক দিয়ে বলে উঠলাম,

— ডাক্তার আঙ্কেল আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন? আপনার হাসপাতালে আমি একটি লোককে আহত অবস্থায় নিয়ে ভর্তি করেছিলাম। যার নাম ছিলো রাজ চৌধুরি। আপনার মনে আছে তার কথা?

আমার কথা শুনে আঙ্কেল পেছন ফিরে তাকালেন আমার দিকে। তারপর কিছু একটা ভেবে আমার কাছে এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

— তুমি একটু রেস্ট নাও মামনি। এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা করো না। তোমার এখন রেস্ট এর প্রয়োজন। আর তোমাকে আমি আগে থেকেই চিনি তোমার আব্বুর বন্ধু হিসাবে।মাথায় বেশি প্রেশার দিও না। এতে তোমার সমস্যা হতে পারে।

কথাগুলো বলে আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে আব্বুর সাথে বেরিয়ে চলে গেলেন ডাক্তার আংকেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তাদের চলে যাওয়ার দিকে। এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে? কেউ আমার কথা বিশ্বাস করছে না কেনো। তাহলে কি সত্যিই আমি এসব কিছু স্বপ্ন দেখেছি? আর তাছাড়া ডাক্তার আংকেল আমার আব্বুর বন্ধু হলেন কিভাবে? আমিতো এর আগে কখনো আব্বুর সাথে তাকে দেখেনি? আব্বুর কাছে ওনার কথাও শুনিনি কখনো। ভাইয়া পাশে বসে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— এসব উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে এবার একটু শুয়ে রেস্ট নে পুচকি। আমি তোর জন্য গরম দুধ নিয়ে আসছি। গরম দুধ খেলে তোর একটু ভালো লাগবে। আর এসব স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর তোর শরীর বেশি ভালো নয় বুঝলি।

কথাটি বলে মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ভাইয়া। আমি চুপটি করে বসে সবকিছু নিয়ে ভাবতে লাগলাম। তাহলে এসব কি সত্যিই আমার স্বপ্ন? রাই বা রাজ বলে কি সত্যিই কারো অস্তিত্ব নেই এ পৃথিবীতে?

চলবে,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here