You are my property,Part 45,46

You are my property,Part 45,46
M Sonali
Part-45

দীর্ঘ 10 থেকে 11 ঘণ্টা একটানা জার্নি করে আসার পর পৌছালাম কক্সবাজার। জায়গাটা এতটা সুন্দর যে এখানে আসতেই যেনো এতক্ষণ জার্নি করে আসার ক্লান্তিটা হারিয়ে গেল এক নিমেষে। প্রকৃতির সৌন্দর্য যে এতটাও ভালো হতে পারে সেটা হয়তো এখানে না আসলে জানতে পারতাম না কখনোই। আমি ছোট বেলা থেকেই প্রকৃতিপ্রেমী। কিন্তু কখনোই দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি কারো সাথে। শুধু বাসার আশেপাশের পার্ক গুলোতে মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতাম ভাইয়ার সাথে। তাছাড়া সব সময় বাসায় থেকে অভ্যস্ত আমি। কক্সবাজার আসার ইচ্ছে ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু কখনও সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি। রাজ যে আমাকে এভাবে সারপ্রাইজ দিয়ে এখানে নিয়ে আসবে সেটা আমার ভাবনার বাইরে ছিল। সত্যিই জায়গাটা এতটা সুন্দর যে বলে বোঝাতে পারব না। গাড়ি থেকে নামতেই সমুদ্রের ঠান্ডা হাওয়া এসে বারবার গা স্পর্শ করে যাচ্ছে আমার। সেই হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে আপন খেয়ালে উড়ে চলেছে আমার মাথার চুলগুলো। আমরা যে হোটেলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি সেই হোটেলটা মস্ত বড় ও অনেক সুন্দর একটি হোটেল। তার ঠিক সামনেই রয়েছে সমুদ্র সৈকতের একটি দিক। এখান থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সমুদ্র সৈকত ও হাজার মানুষের আনাগোনা।

আমাকে গাড়ি থেকে নেমে চুপ করে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে দেখে রাজ ডেকে বললো,

— ভেতরে যাবে না? প্রকৃতি দেখার অনেক সুযোগ পাবে রাহি। এখন চলো ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়া যাক। অনেকটা রাস্তা জার্নি করে এসেছি আমরা।

ওর কথায় ধ্যান ভাঙল আমার। ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওর সাথে সামনের দিকে হাটা দিলাম। গাড়িটাকে এক সাইডে পার্কিং করে রেখে গাড়ি থেকে ব্যাগ পত্র গুলো নিয়ে আমাদের পিছু পিছু আসতে লাগল রাজু ড্রাইভার। তিনজন একসাথে হোটেলের ভেতরে ঢুকতেই দুজন লোক হাসিমুখে এগিয়ে এসে রাজ কে সালাম দিয়ে বলল,

— স্যার আমরা এতক্ষণ আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আপনাদের আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?

তার কথার উত্তরে রাজ মৃদু হেসে বলে উঠলো,

— না তেমন কোনো সমস্যা হয়নি, বরং বেশ ভালোভাবেই এসেছি। তবে আমাদের জন্য রুম বুক করা হয়েছে তো?

— জ্বি স্যার সে নিয়ে আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমরা সবকিছু রেডি করে রেখেছি। ভিতরে চলুন আপনাদের এখানে অবশ্যই ভালো লাগবে। আপনাদের জন্য স্পেশাল রুমের ব্যবস্থা করে রেখেছি আমরা।

লোকটির কথার উত্তরে ড্রাইভার রাজুকে ডেকে এনে সামনে দেখিয়ে বলে উঠল রাজ,

— ইনি হলেন আমার ড্রাইভার রাজু। উনি আমাদের সাথেই এসেছেন। আপনারা উনার জন্য একটি রুমের ব্যাবস্থা করে দিন। আর আমাদের নিজের রুমে নিয়ে চলুন। খুব টায়ার্ড লাগছে আমাদের।

রাজের কথার উত্তরে লোক দুটির মাঝে একজন রাজু কে সাথে নিয়ে আরেকটি রুমের ব্যাবস্থা করতে চলে গেলেন। আর অপরজন আমাকে আর রাজকে সাথে নিয়ে দোতালায় একটি বিশাল বড় রুমের সামনে নিয়ে গেলেন। তারপর দরজা খুলে চাবি আমাদের হাতে দিয়ে আমাদের জন্যে খাবারের ব্যাবস্থা করতে চলে গেলেন। রুমটা অসম্ভব সুন্দর এবং সাজানো গোছানো ও পরিপাটি। অনেক বড় একটি রুম এটা। দেখে বোঝাই যাচ্ছে রুমটা হয়তো শুধু স্পেশাল গেস্টদের জন্য। কারণ আমার জানামতে হোটেলের রুম গুলো এর চাইতে অনেক ছোট ছোট হয়।

আমি রুমের মধ্যে ঢুকে চারিপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। রুমের দেওয়ালের সাথে সুন্দর সুন্দর বেশ কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যের পেন্টিং সাথে নানা রকমের ফুলের পেন্টিং লাগানো আছে। রুমের মাঝে থাকা বিছানাটাও অনেক বড় এবং খুব গোছানোভাবে রাখা। রুমের এক পাশে রয়েছে এক জোরা সোফাসেট আর ঠিক তার সামনেই রয়েছে একটি বড় আলমারি। তার পাশেই দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে রাখা আছে এলইডি টিভি। আর অপরপাশে রয়েছে বেশ বড় একটি বেলকনি। আমি দৌড়ে বেলকুনির ভেতরে চলে গেলাম। সেখানে যেতেই দেখতে পেলাম সেখান থেকে সমুদ্রসৈকত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর সেই সাথে বেলকুনিতে রয়েছে ছোট ছোট ফুল গাছ এর টপ। যে গাছ গুলোতে ছোট ছোট অসংখ্য ফুল ফুটে আছে। জায়গাটা এতটা বেশি ভালো লাগছে আমার, যা বলে বোঝাতে পারবোনা। আমি এদিক থেকে ওদিক বারবার ছুটে চলে সবকিছু দেখতে লাগলাম। বিশেষ করে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে সমুদ্র সৈকত দেখাটা যেন অত্যন্ত ভালো লাগছে আমার। যখন আমি এসব দেখতে ব্যস্ত, তখন’ই কোমরে হঠাৎ কারও ঠান্ডা হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম। আর পেছনে ঘুরে তাকালাম আমি। তাকিয়ে দেখলাম রাজ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘারে মুখ গুজে দিয়েছে। চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে নেশা ভরা গলায় বলে উঠল,

— জায়গাটা তোমার পছন্দ হয়েছে জান? কেমন লাগছে এখানে এসে?

রাজের কথার উত্তরে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর নাকটা হালকাভাবে টিপে দিয়ে বলে উঠলাম আমি,

— এতটা ভাল লাগছে যা আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না রাজ। সত্যিই এমন একটি জায়গায় ঘুরতে আসা কল্পনা ছিল শুধু আমার। কখনো ভাবতেও পারেনি সত্যিই এখানে এমন কোন জায়গাতে আসতে পারবো। আমার যে কত দিনের ইচ্ছা ছিল এখানে বেড়াতে আসা আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না। আপনি যে এভাবে আমাকে সারপ্রাইজ দিবেন, সত্যি কি বলব অসম্ভব ভালো আছে আমার রাজ। আপনাকে অনেক বেশি ধন্যবাদ

— উহু শুধু ধন্যবাদ দিলে তো চলবে না! আমিতো এখানে তোমার ধন্যবাদ এর আশায় তোমাকে নিয়ে আসিনি জান। আমার যে অন্য কিছু চাই। তার কথায় একটি মাতাল করা ভাব স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি। তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললাম,

— আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে রাজ। অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছি। চলুন একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। খুব ক্ষুদা লেগেছে আমার।

আমার কথার উত্তরে উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে তুলে নিলেন। তারপর কোলে করে নিয়ে এসে বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে বললেন,

— তুমি বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তারপর তুমি ফ্রেশ হয়ে আসবে, আর সেই ফাকে আমি খাবার আনিয়ে নিবো কেমন।

কথাটি বলেই আমার কপালে একটি চুমো একে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন উনি।

সে চলে যেতেই আমিও বাধ্য মেয়ের মতো বিছানায় নিজের গা এলিয়ে দিলাম। বেশ অনেকক্ষণ সময় এভাবে জার্নি আর হাঁটাহাঁটির পর সত্যিই অনেক ক্লান্ত লাগছে শরীরটা। তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি। অনেক সময় পর ঘুম ভাঙলো গালে কারো নরম স্পর্শ পেয়ে। চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পেলাম রাজ আমার কাছে এসে গালে নিজের হাত দিয়ে আলতো করে স্পর্শ করছে। আমাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে সে আমার মুখের কাছে নিজের মুখটা নিয়ে এসে মিষ্টি সুরে বলে উঠল,

— ঘুম হয়েছে আমার ঘুম কুমারি? নাকি আরো ঘুমাতে চান? আমার তো মনে হচ্ছে আপনি এখানে ঘুম পাড়ার জন্যই এসেছেন।

তার কথায় চোখ দুটো হালকা ডলে নিয়ে উঠে বসলাম আমি। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। চারিদিকে বেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। বুঝতেই পারিনি এতটা সময় কখন পেরিয়ে গেছে। আমি ওনার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলাম,

— এত বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি আমি? আর আপনি আমাকে একবারও ডাকেননি রাজ? ইস কত বেলা হয়ে গেছে, আমাদের বুঝি আজ আর সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া হলো না। তাই না রাজ?

উনি আমার কথায় হালকা হেসে নিয়ে আমার নাকে আলতো করে টেনে দিয়ে বলে উঠল,

— আরে পাগলি ঘুম থেকে উঠে এসব কি আবোল তাবোল বলছ? ভালো ভাবে বাইরে তাকিয়ে দেখো এখনো সন্ধ্যা হয়নি। আমরা যখন এসেছি তখন থেকে জাষ্ট কয়েকটা ঘন্টা সময় পেরিয়েছে মাত্র। কিন্তু আকাশে অসম্ভব মেঘ করায় প্রকৃতিটাকে দেখতে এতো ভয়ানক লাগছে। মনে হচ্ছে যেন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

উনার কথায় বেলকুনি দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম আমি। সত্যিই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে এসেছে চারিদিক। গাছের পাতাগুলোও একদম নিরব নিস্তব্ধ হয়ে আছে। একটুও নড়াচড়া করছে না তারা। যেন মনে হচ্ছে সবাই মিলে আজ কোন সমাবেশে বসেছে। কেউ একটু নড়াচড়া করলেই তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি ধিরু পায়ে খাট থেকে নেমে বেলকুনিতে চলে গেলাম। আমার পিছু পিছু রাজও এসে পাশে দাঁড়ালো। তারপরে আকাশ পানে তাকিয়ে দেখলাম একদম ঘন কালো মেঘে ছেয়ে আছে আকাশটা। সমুদ্রের ঢেউ গুলোও ধিরু গতিতে আছড়ে পড়ছে তীরে। চারিদিক থেকে কেমন একটা ঠাণ্ডা হাওয়া এসে সুই এর মতো গেথে যাচ্ছে শরীরে। যদিও গাছের পাতা তেমন নড়াচড়া করছে না। কিন্তু সমুদ্রের এই ঢেউ এর কারনেই হয়তো এমন ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভুতি হচ্ছে আমার।

আমি যখন এসব নিয়ে আকাশ-পাতাল ভাবছি তখনই রাজ আমার হাতটা শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠল,

— কি ব্যাপার রাহি তুমি কি ফ্রেশ হবে না? তাড়াতাড়ি যাও না প্লিজ ফ্রেশ হয়ে এসো। আমাদের তো খেতে যেতে হবে নাকি? মনে হচ্ছে ঝর আসতে পারে। এখন এখান থেকে চলো তো।

ওর কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে রুমে চলে আসলাম। তারপর রুমে ঢুকেই ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হওয়ার জন্য। বেশ কিছুক্ষণের মাঝে ফ্রেশ হয়ে যখনি নিজের জামা কাপড় পড়ার জন্য জামা-কাপড় নিতে যাব! তখনই আমার খেয়াল হলো আমি তো বাসা থেকে কোন কাপড়-চোপড় নিয়ে আসিনি! তাহলে এখন আমি পড়বো কি? এবার ভীষণ মাথা ঘুরছে, কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই তাওয়ালটা নিজের সাথে কোনরকম জড়িয়ে নিয়ে হালকা একটু দরজা খুলে উঁকি মেরে বলে উঠলাম,

— রাজ আপনি কি এখানে আছেন?

একবার ডাকার সাথে সাথে যেন দৌড়ে চলে আসলেন উনি। তারপর একদম আমার মুখের সামনে মুখ নিয়ে চোখ টিপ মেরে বলে উঠলেন,

— বলো জান কি দরকার? আমি কি ভিতরে আসব তোমাকে ফ্রেশ হতে হেল্প করার জন্যে?

উনার এমন কথা শুনে চোখ দুটো যেন কপালে উঠে গেল আমার। কেমন বেশরম লোক একটা। আমি দরজাটা হাল্কা লাগিয়ে দেওয়ার মতো করে বলে উঠলাম,

— আপনাকে কি আমি বলেছি ভিতরে আসার জন্য? আজব লোক তো আপনি! আমাকে তো বাসা থেকে কোন কাপড়’ই আনতে দিলেন না। তাহলে এখন আমি পড়বো টা কি? এখন কি সারাদিন এই তাওয়াল পরেই থাকবো আমি?

— হুমম থাকতেই পারো তাতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। কিছু না পরে থাকলেও সমস্যা নাই।

ওনার কথায় রাগি চোখে তাকালাম ওনার দিকে। আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে হাসতে হাসতে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে একটি ব্যাগ খুলে তার মধ্যে থেকে একটি জামা নিয়ে এসে হাতে দিলেন উনি আমার। জামাটা হাতে নিয়েই আমি দ্রুত দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমের ভেতরে চলে আসলাম। তারপর ড্রেসটাকে খুলে দেখতেই চোখদুটো যেন ছানাবড়া হয়ে গেল আমার। কেননা অসম্ভব রকমের কাজ করা একটি জরজেট কাপড়ের গাউন জামা তুলে দিয়েছেন উনি আমার হাতে। এটা কি যখন তখন পড়ে থাকার জন্য নাকি? লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে? এসব কথা ভেবে কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম আমি। তারপর কোন উপায় না পেয়ে জামাটা পড়ে নিলাম। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে সোজা ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কোমরে হাত দিয়ে বলে উঠলাম,

— এটা কি এনেছেন কি আপনি আমার জন্যে? এসব জামা কি সব সময় পরে থাকা যায়?

— হুমম যায়, আর তুমি এগুলোই পরবে বুঝলে। তবে চিন্তা করো না রাতে ঘুমোনোর সময় এসব পরে ঘুমাতে হবে না তোমায়। এখন কথা না বাড়িয়ে জলদি চলো খাবার খেয়ে নেই।

তার কথায় আমি কিছু বলতে যাবো, সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে সোজা আমার হাত ধরে পাশে থাকা সোফায় রাখা খাবারের কাছে নিয়ে গেলেন আমায়। তারপর সামনে বসিয়ে রেখে নিজে হাতে খাবার মেখে তুলে ধরলেন আমার সামনে।

খাবার দেখে ওনাকে আর কিছু বলতে পারলাম না আমি। কারন আমারও অনেক খুধা লেগেছে।

চলবে,,,

You are my property
Part 46
M Sonali

বাইরে অসম্ভব ঝড় হচ্ছে। আর সেই ঝড়ের সাথে তাল মিলিয়ে হচ্ছে অসম্ভব বজ্রপাত। বেশ কিছুক্ষণ পরপরই অনেক জোরে জোরে ডেকে উঠছে মেঘ। আমি গুটিসুটি মেরে বিছানার এক কোনায় বসে আছি। রাজ এতক্ষণ আমার পাশেই বসে ছিল। তাই খুব একটা ভয় হচ্ছিল না। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ হলো রাজ ওয়াশরুমে গিয়েছে যে কারণে রুমের মাঝে একদমই একা বসে আছি আমি। আর মেঘের এমন গর্জনে অসম্ভব ভয় লাগছে। ছোটবেলা থেকেই আমি মেঘের গর্জন খুব ভয় পাই। আর সেটা যদি হয় রাতের বেলা তাহলে তো কথাই নেই।এখন রাত প্রায় সারে আটটা বাজতে চললো। বেশ অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পরেও রাজ যখন ওয়াশরুম থেকে না ফিরলো, তখন আমি বিছানা থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে ওয়াশরুমের কাছে এগিয়ে গেলাম।

তারপর দরজায় টোকা দিব কি দিব না এমনটা ভাবতে ভাবতেই দরজায় টোকা দিয়ে বসলাম। কিন্তু না, রাজ তবুও দরজা খুলছে না। এবার সত্যিই অনেক ভয় লাগছে। এদিকে মেঘও বারবার ডেকে চলেছে আপন মনে। ভয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। তাই আরো বেশ কয়েকবার টোকা দিলাম দরজায়। সাথে সাথে খুব জোরে বিকট শব্দ করে মেঘ গর্জন করে উঠল। সেই সাথে তাল মিলিয়ে কারেন্টও চলে গেল। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল। ভয়ে আমি জোরে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলাম। তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলে আমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো রাজ। বুকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,

— এই পাগলি এভাবে ভয় পাচ্ছ কেন তুমি? আমি আছি না তোমার কাছে! এই দেখো আমি এসেছি। ওয়াশরুমে গেলে কি এত তাড়াহুড়ো করে বের হওয়া যায় বলো? আমি অনেকক্ষণ হলো বের হতে চাইছিলাম কিন্তু কাজ শেষ না করে কি করে বের হবো বলো।এই দেখো কিছুই হয়নি সব ঠিক আছে। ভয় পেওনা জান আমার। দেখো আমি আছি তো তোমার কাছে।

ওর কথায় আমি ওর শার্ট দুহাতে খামচে আঁকড়ে ধরে ওর বুকে শক্ত করে মাথা গুঁজে রেখে কান্না করতে লাগলাম। সত্যিই অসম্ভব ভয় পেয়েছি। এতটা ভয় হয়তো কখনই পাইনি। এমনিতেই মেঘের গর্জন অসম্ভব ভয় পাই, তার ওপর যখন আশেপাশে কেউ নেই একদন একা। আর অপরিচিত জায়গা বলে ভয়টা যেনো আরো বেশি জেঁকে বসেছে আমার মনে। আমাকে এভাবে ভয় পেতে দেখে রাজ আমাকে কোলে তুলে নিল। তারপর কোলে নিয়ে বিছানার উপরে গিয়ে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল। ওনার বুকে মাথা গুঁজে যেন নিজেকে এখন অনেক বেশি নিরাপদ লাগছে। সত্যিই একটি মেয়ের জন্য তার স্বামীর বুক’ই সবচাইতে নিরাপদ এবং শান্তির জায়গা। এরকম শান্তি হয়তো অন্য কারো কাছেও হয়না। যে শান্তি টা নিজের ভালবাসার মানুষ স্বামীর বুকে মাথা রেখে পাওয়া যায়। আমি ওনার বুকের মাঝে যতটা সম্ভব ঢুকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে রইলাম। সে আমায় আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। সাথে চুলের মাঝে বিলি কেটে দিতে লাগলেন বারবার। আমি পরম আদরে উনার বুকে মাথা গুঁজে চুপ করে রইলাম। এভাবেই কেটে গেল বেশ অনেকটা সময়। বাইরে ঝড়ও অনেকটা কমে এসেছে। মেঘের গর্জনও তেমন নাই। সেই সাথে কারেন্ট এসে চারিদিকে বেশ আলোকিতও হয়ে গেছে।কিন্তু আমার যেন ওনার বুক থেকে সরতেই ইচ্ছা করছে না। দুপুর থেকে একটানা ঝড় হওয়ার আজকে বাইরে ঘুরতে যাওয়া হয়নি আজ। সেই দুপুর থেকেই অসম্ভব জোরে ঝড় শুরু হয়েছে। যার কারণে আর ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তখন থেকে রুমের মাঝেই রয়েছি আমরা। হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ার শব্দে ধ্যান ভাঙগো আমাদের। রাজ আমাকে আলতো হাতে মাথাটা নিজের হাতের ওপর থেকে বালিশে নামিয়ে দিয়ে, কপালে ছোট করে একটি চুমো একে দিয়ে দরজা খুলতে চলে গেলেন।

দরজা খুলতেই একটা সার্ভেন্ট আমাদের রাতের খাবার দিতে রুমের ভিতরে ঢুকলো। তার পিছু পিছু ছোট্ট একটি গুলুমুলু বিড়াল রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ল। বিড়ালটাকে দেখে আমি বিছানা থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে বিড়ালটার কাছে এগিয়ে গেলাম। এত সুন্দর বিড়াল আমি কখনো দেখিনি। যখনই হাত বাড়িয়ে বিড়ালটাকে ধরতে যাব তখনি ৫ থেকে ৬ বছর বয়সি একটি মেয়ে দৌড়ে এসে আমার সামনে থেকে বিড়ালটাকে কোলে নিয়ে নিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

— আমার বনিকে নিচ্ছ কেন? এটাতো আমার বিড়াল বনি। তুমি কেন নিচ্ছিলে?

মেয়েটিকে এতটা মিষ্টি দেখতে যে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। আমি হা করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি আবারও বলে উঠলো,

— এই যে আন্টি তোমার কি মন খারাপ? তুমি আমার বনিকে নেবে? কিন্তু এটাতো আমার বনি! আচ্ছা আমি আব্বুকে বলবো তোমার জন্য এমন একটা বনি বিড়াল এনে দিতে কেমন।

এই মিষ্টি মেয়েটির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে যেন মনটা ভরে গেল আমার। আমি ওর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে ওর গালে হাত রেখে বললাম,

— মামনি নাম কি তোমার? আর তুমি এখানে কি করছ?

— আমার নাম মিষ্টি আর আমি এখানে আব্বু-আম্মুর সাথে ঘুরতে এসেছি। আমরা তো ওই পাশের রুমেই থাকি। তোমার নাম কি?

— তোমার নামের মতো তোমাকে অনেক মিষ্টি দেখতে। আর তুমি অনেক মিষ্টি করে কথাও বল। আমার নাম রাহি। তুমি আমায় রাহি আন্টি বলে ডাকতে পারো।

আমার কথার উত্তরে মেয়েটি মুচকি হেসে দিয়ে বলে উঠলো,

— না তোমাকে আমি রাহি আন্টি না, পরী আন্টি বলে ডাকবো। তোমাকে না এই ড্রেসটা তে একদম পরীর মত লাগছে। অনেক সুন্দর তুমি ঠিক আমার আম্মুর মত।

মেয়েটির কথার উত্তরে আমি কিছু বলবো তার আগেই রাজ এসে ওর সামনে বসে গাল টিপে দিয়ে বলল,

— এই যে পাকনা বুড়ি তুমি এখানে কি করছ?

— আরে বোকা আঙ্কেল তুমি? আমি তো এখানে বনিকে নিতে এসেছি। কিন্তু বোকা আঙ্কেল এখানে কি কর তুমি?

ওদের কথা শুনে অবাক হয়ে বলে উঠলাম,

— এই এক মিনিট এক মিনিট! রাজ আপনি ওকে চেনেন? মানে আপনারা এমন ভাবে কথা বলছেন যেন আপনারা আগে থেকেই পরিচিত?

আমার কথার উত্তরে রাজ মিষ্টির গাল টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— আর বলো না রাহি। আজকে দুপুরে যখন তোমাকে রেখে কিছুক্ষনের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম, তখন যাওয়ার সময় লিফটে ওর সাথে আমার দেখা হয়ে যায়। আর সেখানে ভুল বশত ওর এই বিড়ালটাকে আমি পুতুল ভেবে ছিলাম। তখন থেকেই আমাকে ও বোকা আঙ্কেল বলে ডাকে।

— কি বলছেন কি আপনি রাজ? এই এত টুকুন মেয়ে লিফটে একা উঠেছিলো?

আমার কথার উত্তরে রাজ কিছু বলার আগেই মিষ্টি বলে ওঠে,

— না না পরী আন্টি, আমি তো একা উঠেছিলাম না। আমার সাথে আব্বুও ছিল। তাই না বোকা আঙ্কেল?

মিষ্টির কথার উত্তরে রাজ হেসে বলল,

— হ্যা তখন ওর আব্বুর সাথেও পরিচিত হয়েছি আমি। ওরা আমাদের পাশের রুমেই উঠেছে। আচ্ছা মামনি তুমি এখন এখানে একা এসেছো কেন? তোমার আব্বু আম্মু তো চিন্তা করবেন তোমাকে নিয়ে তাই না?

রাজের কথাটা শুনেই জিভে কামড় দিলো মিষ্টি। তারপর অসহায় গলায় বলে উঠল,

— এই রে আমিতো একদমই ভুলে গেছি। আচ্ছা বোকা আঙ্কেল, পরী আন্টি এখন আমি যাই আম্মু মনে হয় আমাকে খুঁজছে। আবার পরে কথা হবে আচ্ছা।

কথাগুলো বলেই দৌড়ে চলে গেলো মিষ্টি। আমি ওর দিকে তাকিয়ে থেকে হাসতে লাগলাম। সত্যিই নামের মত মেয়েটি অনেক মিষ্টি এবং ওর কথাগুলো খুব মিষ্টি লাগছিলো শুনতে।

মিষ্টি চলে যেতেই রাজ গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তখনই সার্ভেন্ট লোকটি আবার আসলো আর রাজের হাতে কিছু একটা দিয়ে বলে উঠল,

— এটা স্পেশালি আপনার জন্য স্যার। এটা শুধু মাত্র যারা হানিমুন করতে আসে এখানে তাদের জন্য স্পেশালি দেওয়া হয়।

কথাগুলো বলেই লোকটা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। রাজ দরজা লাগিয়ে দিয়ে হাতে থাকা মাটির পাত্রে রাখা তরলটা নিয়ে টেবিলে রাখলো। তারপর আমার কাছে ফিরে আসলো। আমি বিছানায় বসে পা ঝুলাতে ঝুলাতে জিগ্যেস করলাম,

— ওটাতে কি আছে রাজ?

রাজ আমার প্রশ্নে ঐ মাটির পাত্রের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দিয়ে বললো,

— ওটা তেমন কিছু না, আর ওটা কিন্তু তোমার জন্যে নয়। তাই ওটার কাছেও যাবেনা বুঝলে? আমি একটু বাইরে থেকে আসছি। দেখে আসি রাজু কিছু খেয়েছে কি না।

কথাটা বলেই রাজ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি অনেক কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ঐ মাটির পাত্রটার দিকে। তারপর গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে পাত্রটাকে হাতে তুলে নিলাম। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম তাতে তরল শরবত জাতিয় কিছু রাখা। কিন্তু রাজ আমায় এটা খেতে বারন করলো কেনো? কথাটা ভাবতেই কৌতুহল নিয়ে এক চুমুক খেয়ে নিলাম আমি তরলটা। তারপর,,,,,,,,

রাজ রাজুর সাথে দেখা করে সব কাজ শেষ করে রুমে চলে আসে। আর রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই ওর চোখ দুটো যেনো বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়। কারন সামনে তাকিয়ে দেখে,,,

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here