You are my property,Part_14,15
M Sonali
Part-14
দিনের বেলা হলেও জানালা দিয়ে হালকা আলোতে যতটুক আলোকিত হয়েছে ততটুকুই। আমি ভালোভাবে চারিদিকে তাকিয়ে থেকে দেখতেই একটি ছায়ামূর্তি দেখতে পেলাম। যে ছায়ামূর্তিটি ধিরে ধিরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু আমি এবার ভয় পেয়ে যখন চিৎকার দিতে যাব, তখনি উনি দ্রুত এগিয়ে এসে আমার মুখটা চেপে ধরলেন। আমি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম এটা আর কেউ নয় এটা হলো রাজ। ওনাকে দেখতেই ছোটাছুটি বন্ধ করে থেমে গেলাম আমি। আমাকে থামতে দেখে উনি এবার আমার মুখটা ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
— আরে এমনিতে তো কথা বলো খুব কম।কিন্তু এখন এভাবে চিৎকার করতে নিয়েছিলে কেন? এখনোই তো আমাকে জনগণের হাতে মার খাওয়া তে গিয়েছিলে তুমি!
ওনার কথা শুনে আমি বিস্ফোরিত চোখে ওনার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালাম। উনি আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে মুচকি হেসে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর ভালোভাবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত আমাকে দেখতে লাগলেন। ওনার চাহনিতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি একটি মায়া কাজ করছে। যে মায়ায় আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে আছি শুধু আমি।
ওনাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি নিচের দিকে।কেনো জানি না অসম্ভব লজ্জা কাজ করতে লাগলো মনের মাঝে। হঠাৎ ওনার কথায় ধ্যান ভাঙলো আমার। উনি উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,
— মাশা আল্লাহ।
ওনার এই ছোট্ট একটি শব্দে যেনো বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো আমার। আমি ওনার দিকে আবারও ফিরে তাকালাম। তাকাতেই দেখলাম উনার চোখে স্পষ্ট যেন নেশা কাজ করছে। উনি আমার কাছে এগিয়ে এসে আলতো হাতে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
— আমার সামনে এটা কে দাঁড়িয়ে আছে? সে কি কোনো পরী না কি কোনো রূপকথার রাজকন্যা?
হঠাৎ করে এভাবে আমার কাছে এগিয়ে এসে কোমর জড়িয়ে ধরে এমন কথা বলায়, কেঁপে উঠলাম আমি। ওনার চোখের দিকে তাকানোর সাহস টাও যেন হারিয়ে ফেলেছি আমি। কথা যেন গলাতে এসেই থেমে গেছে। মুখ পর্যন্ত আর পৌঁছাতে পারছেনা আমার। সারাটা শরীর যেন কি কারনে থর থর করে কাঁপতে লাগলো। উনি হয়তো আমার ভয়টা বুঝতে পারলেন। তাই দ্রুত আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে উঠলেন,
— সরি রাহি আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম ডাক্তারের বলা কথা,,,,,,,।
এত টুকু বলে আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন উনি। উনার কথার অর্থ আমি কোন কিছুই বুঝতে পারলাম না। ডাক্তার এমন কি কথা বলেছেন যে উনি এভাবে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন? আর সত্যিই তো আমি কেন হঠাৎ এই ভাবে কাঁপতে শুরু করলাম ওনার স্পর্শে?
বেশ কিছুক্ষণ রুমের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে এই কথাগুলো ভাবতে লাগলাম আমি। হঠাৎ বাইরে থেকে রাই এর ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার। আমি দ্রুতো রুম থেকে বাইরে বের হতেই দেখলাম রাই মুখ ফুলিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ওর কাছে এগিয়ে আসতেই ও বলে উঠলো,
— কি ব্যাপার ভাবি সেই এসেছ থেকে ভাইয়ার সাথে রুমের মধ্যে কি গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করছো বলো তো? বলি তোমার ননদিনীর যে অনেক দেরি হয়ে গেল হলুদ লাগানোর। সে খেয়াল কি আছে তোমার? এত দেরিতে হলুদ লাগালে তাহলে বিয়েটা হবে কখন বলো তো? আর আমি কখন যাব আমার রাকিব এর কাছে? ইশশ আমার যে আর তর সইছে না।
রাই এর কথা শুনে ওর দিকে বড় বড় চোখে তাকালাম আমি। এই মেয়ে বলেটা কি? লজ্জা শরম বলতে কি কোন কিছু নাই? আমি যে সম্পর্কে এর ভাবি তাছাড়া ও এখন ননদিনী হবো সে কথা যেন ওর মাথাতেই নেই। বিয়ে হওয়ার আগেই কিনা আমার ভাইয়ার চিন্তায় ওর এই অবস্থা! তাহলে বিয়ে হওয়ার পরে ভাইয়ার কি অবস্থা করবে ভাবতেই যেন মাথা ঘুরছে আমার। ভাইয়া টা তো এবার গেল, এই রাই নামের প্যারায় না জানি তার কি অবস্থা হবে। যে ভাইয়া কি না মেয়েদের থেকে পাঁচ হাত দূরে থাকতো সব সময়! এখন সেই ভাইয়া দেখি এটার জ্বালায় পাগল হয়ে পাবনা চলে যাবে। কথাগুলো মনে মনে ভাবতেই খিলখিল করে হেসে দিলাম আমি। আমাকে এভাবে হাসতে দেখে মুখ ফুলিয়ে রাই বলল,
— কি হলো হঠাৎ এভাবে পাগলের মত হাসছো কেন তুমি? বলি আমার কি গায়ে হলুদ টা আদৌ হবে?
ওর কথায় হাসি থামিয়ে বলে উঠলাম আমি,
— রিলাক্স মাই ভাবিজান রিল্যাক্স। এখানি তোমার গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করছি চলো। তবে আমি শিওর আমার ভাইয়াটা তো এবার গেল।
আমার কথা শুনতেই রাই বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকাল। আমি এবার আরো জোরে খলখলিয়ে হেসে দিলাম। হাসতে হাসতেই সামনে তাকিয়ে দেখলাম একজন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার হাসি মাখা মুখটা দেখছে বুকের সাথে হাত গুঁজে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। ওনার চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। আর হঠাৎ করেই যেন একরাশ লজ্জা ঘিরে ধরল আমায়।
পা টা ও যেন থমকে গেল সেই জায়গাতেই। আমাকে সামনে এগোতে না দেখে এবার রাই কোমরে হাত দিয়ে রাগি চোখে তাকালো আমার দিকে। আমি ওর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাতেই ও রাগী গলায় বলে উঠলো,
— ভাইয়া তুমি কি দয়া করে এখান থেকে যাবে? এখন তো দেখছি আমার ভাইয়া টা ই আমার সবচাইতে বড় শত্রু হয়ে দাঁড়ালো। আমার গায়ে হলুদটা বুঝি আর হবে না গো।ভাইয়া তুমি এখান থেকে যাবে প্লিজ! নইলে তোমার এই বউ মানে আমার ভাবি টা আমায় আজ গায়ে হলুদ করতে দেবেনা আমি শিওর।
রাই এর কথা শুনে এবার রাজও খলখলিয়ে হেসে দিয়ে রাই এর মাথায় একটি গাট্টা মেরে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে সেখান থেকে চলে গেল। ওনাকে এভাবে চোখ মারতে দেখে আমার চোখ দুটো যেন কপালে উঠে গেল। সত্যিই আজ কেন জানি না ওনার এমন আচরণে অসম্ভব লজ্জা অনুভব করছি আমি। কিন্তু এই লজ্জা টা কি কারনে আমার মাঝে বাসা বাঁধছে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। উনি চলে যেতেই একপ্রকার জোর করেই রাই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের ওখানে। সেখানে আশেপাশে আরও অনেকেই বসে আছে রাইকে গায়ে হলুদ দেবে বলে। কিন্তু আমার জন্যই হয়তো এতটা দেরি হয়ে গেল।
তারপর সবকিছু মন থেকে ঝেড়ে ফেলে রাইকে গায়ে হলুদ লাগাতে মেতে উঠলাম সবাই। সকলের মাঝে দুষ্টু মিষ্টি হাসিতে যেনো ছেঁয়ে গেল। রাই কে গায়ে হলুদ লাগানো শেষ হতেই ১০-১২ বছর বয়সি একটি মেয়ে এসে আমার হাত ধরে টান দিলো। আমি মেয়েটার দিকে ফিরে তাকাতেই মেয়েটি বলে উঠলো,
— আপু আপু তোমাকে ওই পাশে একজন ডাকে। আমার সাথে আসো।
আমি মেয়েটার কথা শুনে কিছু বলার আগেই মেয়েটি আমার হাত ধরে একদিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। আমিও মেয়েটার সাথে সাথে সে দিকে যেতেই মেয়েটি আমাকে রেখেই দৌড়ে পালালো। সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম রাজ আবারও সেই দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আমার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওনাকে দেখে আমি পিছন দিকে ঘুরতে যাব তখন ই উনি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম আমরা ছাড়া এখানে আর কেউ নেই। তারপর আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি আচমকাই আমার দুই গালে নিজের হাতে হলুদ রাঙিয়ে দিলেন। আমি অবাক চোখে ওনার দিকে বড় বড় করে তাকাতেই উনি হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,
— নিজেদের বিয়েতে তো তোমাকে এভাবে হলুদ লাগাতে পারিনি। তাই সেই শখটা এখন পূরণ করে নিলাম। আমার হলুদ পরী কে হলুদ রাঙিয়ে দিয়ে।
কথাটি বলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার নাকের সাথে নাক ঘষে নিয়ে মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে গেলেন উনি। আমি যেন পাথরের মূর্তির মতো সেখানেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি হলো কিছুই যেন বুঝতে পারছি না আমি। শুধু এতোটুকুই বুঝতে পারছি মনের মাঝে একটি অন্যরকম ভাললাগার অনুভূতি যেনো দোলা দিয়ে গেল আমার। এ যেন এক অন্য রকম অনুভুতির আভাস পেলাম আজ আমি। যে অনুভুতিটা শুধু এই রাজ নামের ছেলেটাকে ঘিরেই সীমাবদ্ধ।
চলবে,,,,,,,,
You are my property
Part_15
M Sonali
বেশ ধুমধাম করেই ভাইয়া আর রাই এর বিয়েটা সম্পন্ন হলো। সবাই অনেক আনন্দে মেতে উঠেছে আজ। সকলের সাথে সাথে আমিও ভীষণ আনন্দিত। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর এবার ভাইয়ার তাড়াহুড়ো শুরু হল রাই কে নিয়ে বাড়িতে ফেরার। সাথে আমারও। সবাই যখন বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সেসময় আম্মু আমার কাছে এগিয়ে এলো। আম্মুকে এভাবে কাছে এগিয়ে আসতে দেখে আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। আম্মু আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে আমাকে সবার থেকে কিছুটা আড়ালে নিয়ে গেলেন। তারপর বলে উঠলেন,
— তুমি কোথায় যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছ রাহি? তুমি এখানেই থাকবে। আমরা শুধু রাইকে নিয়ে যাবো এখান থেকে। ভুলে যেও না এটা তোমার স্বামীর বাড়ি। আর তুমি এবাড়ির বউ। তাই আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে। তোমার আর আমাদের বাড়িতে কোন জায়গা নেই। শুধু কিছুদিন পর পর অন্য মেয়েদের মতো বাবার বাড়িতে দুই একদিনের জন্যে ঘুরতে যেতে পারো।
আম্মুর হঠাৎ এমন কথা একটুও আশা করিনি আমি। আম্মুর কথায় যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো আমার। কি বলছে আম্মু এসব? আজ থেকে কি তাহলে আমাকে তারা নিজেদের থেকে দূরে ঠেলে দিল? আমাকে কি পর করে দিলো তারা? কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে আমার। আমি শুধু অসহায় দৃষ্টিতে আম্মুর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আম্মু আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তার চোখটা আমার চোখ থেকে সরিয়ে নিল। তারপরে আমি কিছু বলার আগেই দ্রুত আমার সামনে থেকে সরে গেল আম্মু। কিন্তু যাওয়ার আগে আমি স্পষ্ট খেয়াল করলাম আম্মু কান্না করছেন। যদিও আমি জানি না এই কান্না করার মানেটা কি! আমি সেখানেই পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার আর তাদের সাথে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। সবাই একে একে বিদায় হতে শুরু করলো। রাই যাওয়ার আগে রাজকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করলো। রাজের চোখেও জল স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কিন্তু আমার মাঝে কোন রকমের কোন অনুভূতি নেই। আম্মুর বলা কথাটা যেনো বার বার কানে এসে বারি খেতে লাগলো আমার।
————————-
সবাই চলে যাওয়ার পর বাসাটা একদম খালি হতেই আমি হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়লাম। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে এখন আমার। কিন্তু কেন জানিনা সেই কান্না টাও গলা পর্যন্ত এসেই থেমে যাচ্ছে। মুখ দিয়ে আর বের হচ্ছে না। আমি চুপটি করে বেশ অনেকক্ষণ বসে রইলাম নিচে। রাতটাও প্রায় গভীর হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সে দিকে ফিরে তাকালাম আমি। তাকিয়ে দেখলাম দুটি মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলবো তার আগেই তারা বলে উঠলো,
— ম্যাডাম আপনি আমাদের সাথে আসুন।
মেয়েদুটিকে চিনতে আমার একটুও অসুবিধা হলো না। এ দুজন মেয়ে পার্লার থেকে এসেছিল রাইকে বধুর সাজে সাজাতে। তাদের কথার উত্তরে আমি কিছু বলবো তার আগেই দুজনে আমার হাত ধরে আমাকে নিচ থেকে টেনে তুলল। তারপর কিছু বলতে না দিয়ে আমার হাত ধরে আমাকে নিয়ে গেল একটি রুমে। যে রুমে রাইকে বধু সাজে সাজানো হয়েছিল। রুমে গিয়ে আমার হাতে তারা তুলে দিলো লাল পেড়ে সাদা রঙের একটি শাড়ি। পরো শাড়িটা গোল্ডেন কালার পাথড় ও সুতার কাজ করা। অসম্ভব সুন্দর এবং ভারী শাড়িটা। শাড়ি টা দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার অবস্থা হল আমার। আমি শাড়িটার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে তাদেরকে বলে উঠলাম,
— এটা আমায় দিচ্ছেন কেন?
— ম্যাডাম এটা আপনাকে পড়তে হবে। আপনাকে আমরা বধু সাজে সাজাবো।
কথাটি বলেই আমার থেকে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে তারা আমাকে সাজাতে লাগলো। আমার কি হলো জানিনা আমিও পাথরের মূর্তির মত কোন উত্তর না দিয়ে তাদের ইচ্ছা মত সাজতে লাগলাম। শাড়িটা অনেক সুন্দর করে পরিয়ে দিলো তারা আমায়। তারপর শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা স্বর্ণের অনেক সুন্দর এবং ভারী জুয়েলারি পরিয়ে দিতে লাগলো আমায়। কানে অনেক বড় দুটি ঝুমকা। গলায় স্বর্ণের নেকলেস। মাথায় টিকলি। খোঁপায় তাজা ফুলের গাজরা। কোমরে বিছা, দুহাত ভর্তি স্বর্ণের চিকন চিকন চুড়ির সাথে মোটামোটা ডিজাইনের বালা। চোখে গাড়ো কাজল, ঠোঁটে গাড়ো লাল লিপস্টিক। হালকা মেকাপ। সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আমায়। আয়নায় নিজেকে দেখে যেনো চিনতে পারছি না আমি।
সাজানো শেষ হতেই মেয়েদুটি আমাকে হাত ধরে চেয়ার থেকে দাঁড় করালো। তারপর আমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বলে উঠল,
— সত্যিই রাজ স্যারের পছন্দ অনেক সুন্দর। আপনাকে একদম সাদা পরীর মত লাগছে ম্যাডাম। আপনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে এই সাজে।
মেয়ে দুটির কথায় কোন ভাবান্তর দেখা গেল না আমার মাঝে। তারা আমার হাত ধরে নিয়ে গেল রাজের রুমের দিকে। তারপর রুমের মাঝে ঢুকতেই যেন চমকে উঠলাম আমি। পুরোটা রুম’ই ফুলে ফুলে সাজানো। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে রুমটা। তাজা ফুলের গন্ধে পুরোটা রুম যেন ম ম করছে। আমি চারিদিকে তাকিয়ে রুম টাকে দেখতে লাগলাম। মেয়েদুটি মুচকি হেসে বলে উঠলো,
— এটা আপনার জন্য সাজানো হয়েছে ম্যাডাম। আপনি এখানে বসুন আমরা চলে যাচ্ছি। একটু পর স্যার আসবে।
কথাটি বলেই মেয়ে দুটি আমাকে খাটের ওপর বসিয়ে রেখে চলে গেল। আমি চুপটি করে খাটের উপর বসে আশেপাশে তাকিয়ে সমস্ত জিনিস দেখতে লাগলাম। কি হচ্ছে এসব, কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না আমার।
বেশ কিছুক্ষণ সময় কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার। আমি রুমের মধ্যে চোখ বোলানো থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে ফিরে তাকালাম। তাকাতেই দেখতে পেলাম বেশ কয়েকটি লাল রঙের লাভসেপ বলুন উড়ে এলো রুমে।আর বেলুনগুলোর সাথে কিছু লেখা। আমি চুপ করে বসে থেকে কিছুক্ষণ বেলুনগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর আর দেরি না করে খাট থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম বেলুন গুলোর কাছে। তাতে লেখা দেখতে পেলাম
“ছাদে আসো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি”
লেখাটা দেখে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। কিন্তু কেন জানি না ছাদে গিয়ে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। তাই আর দেরি না করে দরজা দিয়ে বেরিয়ে ধীরে ধীরে ছাদে উঠতে লাগলাম। ছাদের দরজায় পৌঁছাতেই ছাদের উপর থেকে ঝলমলে আলো লাগলো চোখে। আমি ধীরে ধীরে ছাদের ওপর পৌঁছাতেই দেখতে পেলাম পুরো ছাদের উপরে ফুলের পাপড়ি বিছানো রয়েছে। আর অসম্ভব সুন্দর করে ডেকোরেট করা। আমি ধীরে ধীরে উপরে উঠে ছাদের উপরে কাউকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু না ছাদে তো আমি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না! যখনই ভাবলাম কেউ নেই, ভেবে পিছন দিকে ঘুরতেই সামনে তাকিয়ে দেখলাম রাজ হাঁটু গেড়ে বসে আছে হাতে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে।আমি ঘুরে দাঁড়াতেই ও মাথা নিচু করে বলতে শুরু করলো,
— জানিনা কখন কিভাবে তুমি আমার এই পাথর হওয়া মন টার মাঝে ফুল হয়ে ফুটে ছিলে। আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিলে তুমি। যে আমি কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারতাম না। মেয়েদের নাম শুনলে মাথায় আগুন লেগে যেত আমার। সেই আমি জানিনা কিভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলি। শুধু ভালোবেসে ক্ষান্ত হয়নি আমি। আমি জানি তোমার সাথে আমি প্রতারণা করেছি। আর প্রতারণা করে আমি জোর করে তোমাকে বিয়ে করেছি। তোমার নামে মিথ্যা অপবাদ ও দিয়েছি। সেজন্য আমি তোমার কাছে অসম্ভব লজ্জিত। দয়া করে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তবে আজকে রাতে আমি তোমাকে আপন করে পেতে চাই নিজের স্ত্রী হিসেবে। আশা করি তুমি আমায় ফিরিয়ে দেবেনা রাহি। জানি আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। সেজন্যই হয়তো এতটা কষ্ট দিচ্ছ আমায়। এত দিন হয়ে গেল বিয়ের পরেও তুমি আমার থেকে আলাদা থাকছো। কিন্তু আর নয় রাহি আমি তোমাকে ছাড়া আর একটি মুহূর্ত আলাদা থাকতে পারছিনা। প্লিজ তুমি আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নাও। আমরা তো এখন স্বামী-স্ত্রী তাই না! শুধু শুধু আমার ওপর রাগ করে থেকে কেন আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছো রাহি। আমাকে আর দূরে সরিয়ে রেখো না। আপন করে নাও রাহি। ভরিয়ে দাও নিজের ভালোবাসায়। আমার জীবনে যে ভালোবাসার বড়ই অভাব। তাই এ ভালোবাসার জন্য যে আমি সব সময় ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে থাকি তোমার পানে। তুমি কি সেই ভালোবাসার ব্যাকুলতা দেখতে পাও না? প্লিজ রাহি আজ আমায় ফিরিয়ে দিও না। আমি পাগল হয়ে যাব তোমাকে ছাড়া আর একটি মুহূর্ত দূরে থাকলে। আমাকে একটু ভালোবাসা দাও রাহি। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যে আমি ব্যাকুল হয়ে আছি। আমার জীবনটা যে বড্ড ভালোবাসা শূন্য রাহি। ছোটবেলা থেকে ভালোবাসা বলে কোন কিছু পাইনি আমি। যে ভালোবাসা পেয়েছি তোমাকে ঘিরে। কিন্তু সেটাকে আজ অব্দি আপন করে নিতে পারিনি আমি। প্লিজ তুমি আমায় ফিরিয়ে দিও না। নিজের ভালোবাসায় আজ রাঙিয়ে দাও আমায়। আমি তোমার কাছে শুধু এতোটুকুই চাই। আই লাভ ইউ রাহি, আই লাভ ইউ সো মাচ।
নিচের দিকে মাথা দিয়ে কথাগুলো একনাগাড়ে বলে আমার দিকে ফিরে তাকালেন উনি। আমিও এক নজরে তার দিকেই তাকিয়ে আছি। সে উঠে দাড়িয়ে আমার দুগালে হাত রেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন,
— উত্তর দিচ্ছ না কেন তুমি? তুমি কি আমায় ভালোবাসো না রাহি। এই এতদিনের সম্পর্কেও কি আমার প্রতি একবিন্দু ভালবাসাও বাসা বাঁধেনি তোমার মনে?
উনি আমার দিকে প্রশ্ন ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তার চোখে চোখ রেখে শক্ত গলায় বলে উঠলাম,
— না আমি আপনাকে ভালোবাসি না। শুনেছেন আপনি? আমি আপনাকে একটুও ভালোবাসি না। আমার মনে আপনার জন্য এক বিন্দু জায়গাও নেই। আপনি আমার জীবনের একটি অভিশাপ। অভিশাপ হয়ে এসেছেন আপনি আমার জীবনে। আমার জীবন থেকে সবকিছু একে একে কেরে নিচ্ছেন আপনি। আমি আপনাকে কখনোই ভালোবাসিনা। আর কখনো বাসবোও না। আমি অন্য কাউকে ভালবাসি। আমার ভালোবাসার অন্য একজন আছে। যাকে আমি নিজের মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসি। কিন্তু সে আপনি নন।
চলবে,,,,,,,,