EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ১৩

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ১৩
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi

মেয়েটিঃ আমার আম্মুর ব্রেন টিউমার ছিলো। হঠাৎ করে আজকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে
আসি। কিন্তু ডাক্তার আমার আম্মুকে দেখে বললো আম্মুর অপারেশন করতে হবে। আর এর জন্য
দুই লক্ষ টাকা প্রয়োজন। টাকা ছাড়া আম্মুকে অপারেশন করবে না। আর ডাক্তার বললো অপারেশন
ছাড়া আম্মুকে বাঁচানো যাবে না।(কান্না করতে করতে বললো)

আমিঃ আপু তুমি কোনো চিন্তা করো না। তোমার আম্মুর অপারেশন হবে। তোমার আম্মুর কাছে আমাকে নিয়ে চলো।

আমার কথা শুনে মেয়েটির চোখে মুখে খুশির আভা দেখতে পেলাম।
মেয়েটিঃ সত্যি আপনি আমার আম্মুর অপারেশন করার টাকা দিবেন?(খুশি হয়)

আমিঃ হুমম আপু তোমার আম্মুর কাছে আমাকে নিয়ে চলো।

মেয়েটিঃ চলুন।

মেয়েটির সাথে ওর মায়ের কাছে গেলাম।যায়ে দেখি একটা বেডে শুয়ে রাখা হয়েছে। চোখ বন্ধ করে আছে।
মনে হয় ঘুমিয়ে গেছ। আমি মেয়েটিকে করে চলে আসলাম। ডাক্তার দের কেবিনে। কিছু ডাক্তার বসে থেকে নাস্তা করতেছে আর
টিভি দেখতেছে।এটা দেখে প্রচুর পরিমাণে রাগ উঠলো।

ঐ রোগিটার আশেপাশে কোনো ডাক্তার বা নার্স কেউ নেই। একটা মানুষ মৃত্যু শয্যায় মৃত্যুর প্রহর গুনতেছে আর ডাক্তার রা তাদের রুমে
বসে থেকে চা নাস্তা করতেছে।আজ যদি এই মানুষটা ধনী বা কোনো প্রভাবশালী হতো তাহলে হয়তোবা ঐই রুমটাতে ডাক্তারের সিরিয়াল পড়ে যেত।
শুধু বাধাটা কোথায় জানেন? বাঁধা টা হলো অর্থ সম্পদে।
এই মহিলা টার যদি অর্থ সম্পদ থাকতো তাহলে আর এই বাধা থাকতো না। একটা ডাক্তার উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে এসে যদি একটা মানুষ কে এই অবস্থায় রেখে
দিতে পারে, তাহলে তাদের মনুষ্যত্ব টা কোথায়?

আমাকে দেখে যে ডাক্তার আমাকে চেকআপ করাই তিনি আমার কাছে এসে
বললঃ স্যার আপনার কোনো সমস্যা হয়েছে কী?

আমিঃ সমস্যা আমার না সমস্যাটা হলো আপনাদের 😠😠😠😠।

ডাক্তারঃ কেন কী হয়েছে স্যার?

আমিঃ কি হয়েছে মানে? ১৩২ নাম্বার কেবিনে যে ব্রেন টিউমারের রুগী আছে
আপনারা তাকে একাই রেখে এসে এখানে বসে চা নাস্তা করতেছেন 😡😡😡( একদম রেগে)

ডাক্তারঃ আসলে স্যার আমরা উনাকে ২লক্ষ টাকা আনতে বলেছিলাম।
কিন্তু আনেনাই । এজন্য আমরা ঐ রুগিকে ওটিতে নেইনি।

আমিঃ এই আপনাদের মানসিকতা।একজন রুগী মৃত্যু শয্যায় আছে আর আপনারা
ছিঃ

ডাক্তারঃ সরি স্যার।

আমিঃ দ্রুত ওই রুগির অপারেশনের ব্যবস্থা করুন?

ডাক্তারঃ ওকে স্যার।

এরপরে কয়েকটি ডাক্তার মিলে ঐ মহিলাকে ওটিতে নিয়ে গেল।
আর আমি মেয়েটিকে শান্তনা দিচ্ছি। আমি মেয়েটিকে বললামঃ আপু তোমার
নাম কী?

মেয়েটিঃ আমার নাম নেহা।

আমিঃ খুব সুন্দর নাম আপু তোমার। কান্না করো না আচ্ছা। তোমার আম্মু সুস্থ
হয়ে যাবে।

নেহাঃ ভাইয়া আমার আম্মু ছাড়া আর কেউ নেই এই পৃথিবীতে।

আমিঃ কে বললো কেউ নেই, আমি আছি।

নেহা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষণ পরে শান্ত হয়ে গেল।

ওহহহ আপনাদের তো বলাই হয়নি এই হাসপাতালটা হলো একটা
বেসরকারি হাসপাতাল। আর এই হাসপাতালের মালিক এবং প্রতিষ্ঠাতা হলো আমার আব্বু।
আর এখান থেকে যা কিছু আয় হয়, তা এতিমখানায় দান করি।

তবে এটার মালিক বর্তমানে আমি।

যাইহোক, নেহাকে নিয়ে আমি ওটির দজার পাশে ছোফায় বসে আছি।

একটু পরে ডাক্তার বের হয়ে এসে বললোঃ স্যার আপনাকে আর এই মেয়েকে
পেশেন্ট ভিতরে ডাকতেছে।

আমি নেহাকে নিয়ে ওটিতে গেলাম। মহিলাটি আমাকে ডাকলে।

আমিও কাছে গেলাম। মহিলা টি আমার হাত ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললোঃ বাবা আমি জানি
আমার আর হায়াত বেশি নেই। বাবা তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ, তুমি আমার এই মেয়েকে দেখে রেখো।
আমি ছাড়া এই দুনিয়ায় ওর আর কেউ নেই। আর আমি যদি না থাকি তাহলে নেহা মা তুই একদম কান্না করবি না।

আমিঃ আন্টি আল্লাহ রহমতে আপনার কিছু হবে না।আর আমি নেহাকে নিজের বোন হিসেবে
কাছে রাখবো।

আন্টিঃ তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বাআআবা,,,(কথা গুলো কষ্ট করে বলতেছিলো)

হঠাৎ দেখি আন্টি চোখের পাতাগুলো নামিয়ে নিলো।

ডাক্তার দ্রুত আন্টির পালস্ চেক করে বললোঃ সরি স্যার উনি মৃত্যু বরণ করছেন।
আর উনার ব্রেন টিউমারের লাস্ট স্টেজে যাওয়ার জন্য আমরা বাচাতে পারিনি।

নেহা ওর মায়ের মৃত্যুর কথা শুনে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ আম্মু
তুমি আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে। আমি কার কাছে থাকবো। তুমি ছাড়া যে এই পৃথিবীতে
আমার আর কেউ নেই। তুমি কেন আমাকে একা রেখে চলে গেলে😭😭😭(কান্না করতে করতে)

আমি পিছন থেকে নেহার কাঁধে হাত রেখে বললামঃ বোন ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
আর কে বললো এই পৃথিবীতে তোর কেউ নেই আমি তো আছি।আজ থেকে তুই আমার
বোন আর আমি তোর ভাই।

নেহা আমার কথা শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ ভাইয়া আমার সাথে এমন কেন হলো
বলতে পারবে? জন্মের একমাস আগে বাবা কে হারিয়েছি । কোনো দিন বাবার আদর পাইনি।
বাবার কোলে চড়ে কোনোদিন ঘুরে বেড়ায় নি। ছোট বেলায় স্কুলে সবার বাবা তার ছেলেমেয়ে দিয়ে আসতো-নিয়ে আসতো।
আর আমি আমার বাবার জন্য পথ চেয়ে স্কুলের গেটে বসে থাকতাম।এই বুঝি আমার বাবা এসে আমাকে কোলে নিয়ে
কপালে চুমু খেয়ে বলবে, মামনি তুমি কান্না করো না। এই দেখো তোমার বাবা এসে গেছে।
কিন্তু কোন দিন সেই আশা আমার পূরণ হলোনা।
আর আজ আমার আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেল। কে আমার মাথায় তেল দিয়ে বলবে,নেহা তোর চুল গুলো খুব সুন্দর ? কে আমাকে তুলে খাওয়াবে ?
কেন এমন হলো ভাইয়া কেন?😭😭😭( কান্না করতে করতে)

আমি কি বলে তাকে শান্তনা দিবো সেই ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি। চারিপাশে তাকিয়ে দেখি ডাক্তার সহ নার্সদের চোখেও পানি টলমল করতেছে।

আমি নিজেকে সামলে নিয়ে নেহার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ দেখ বোন যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।আর কান্না করলেও তা ফিরিয়ে আসবো না।
আন্টি তো তোকে নিষেধ করলো কান্না করতে। তারপরেও যদি কান্না করিস তাহলে তো আন্টির কথা রাখতে পারলি না।প্লিজ বোন আমার কান্না করিস না।

নেহাঃ সরি ভাইয়া আর কান্না করবো না।

আমিঃ এইতো সুন্দর বোন আমার।

তারপরে নেহাকে ওর আম্মুর মুখ শেষ বারের মতো দেখালাম।
নেহা শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে।

নেহাকে আমার বাসায় রেখে খালার (বুয়া) পরিচয় করিয়ে দিলাম।

এরপরে আমার বন্ধুরা মিলে আন্টির দাফনের কাজ সেরে ফেললাম।

দাফনের কাজ শেষ করতে রাত আটটা বেজে গেল। বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বাসায় আসলাম।
বাসায় এসে দেখি নেহা খালার রুমে মনমরা হয়ে বসে আছে।
আমাকে দেখে আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো।

আমি বললামঃ আপু তুই ডিনার করবি না?

নেহাঃ না ভাইয়া ভালো লাগতেছে না।

আমিঃ তা বললে তো হবে না আপু। চল তোকে খাইয়ে দেয়।

তারপরে, নেহাকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে আনে চেয়ারে বসালাম।
আমি ওকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম।ভাত খাওয়ানোর পরে
একটা ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে দিলাম।যাতে রাতে একটু ঘুমাতে পারে।

নেসাকে আমার পাশের রুমে নিয়ে এসে শুয়ে দিলাম। এরপরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। গায়ে
একটা কম্বল টেনে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে আসলাম।

ছাদে এসে ভাবতে লাগলাম আমার জীবন কাহিনী টা।
হাহা হা কী থেকে কী হয়ে গেল। নিজের পরিবার ছুড়ে ফেলে দিল।
আর আজকে নতুন একটা পরিবার পেলাম।কি দোস করেছিলাম আমি তাদের কাছে?

না আমাকে ভেঙ্গে পড়লে হবে না। নেহার জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে হবে।

ছাদে অনেক ক্ষণ থাকার পরে নেহার রুমে গেলাম। দেখি নেহা ঘুমিয়ে আছে।
রুমটা একটু গরম করতেছে।এসি টা চালু করে দিলাম।

আমার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরে উঠে নামাজ পড়ে আন্টির কবরে যায়ে দোয়া কর আসলাম।

বাসায় এসে নেহাকে ঘুম থেকে উঠিলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে বললাম।
নেহা নিচে আসতেই আন্টি,নেহা আর আমি একসাথে নাস্তা করলাম।

নাস্তা শেষে নেহা বললামঃ আপু তোর বাসায় যাই চল। প্রয়োজনীয় যা কিছু আছে নিয়ে আসি।

নেহাঃ আচ্ছা ভাইয়া।

আমি আর নেহা গাড়ি নিয়ে বের হলাম নেহার বাসার উদ্দেশ্যে। নেহার বাসায় পৌছে শুধু বইগুলো আর কিছু প্রয়োজনীয়
জিনিস নিয়ে আসলাম।

আমার বাসায় এসে নেহাক জিজ্ঞাসা করলামঃ আপু তুই কোন ক্লাসে পড়িস?

নেহাঃ ইন্টারনেট ফার্স্ট ইয়ারে।

আমিঃ তোকে আমি যেই কলেজে পড়ি সেই কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবো।

নেহাঃ ঠিক আছে। ভাইয়া তোমার সম্পর্কে কিছু বলো?

আমিঃ হা হা হা আমার সম্পর্কে আবার কি বলবো। এটা আমার বাসা আর আমার বাবা কয়েক মাস আগে মারা গেছে।
আর আমি এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষে আর নাম হলো সাহিদ হাসান সাহি। তুই আমাকে
তুই বলবি।আর শোন বিকেলে তোকে নিয়ে শপিং মলে যাবো।

নেহাঃ আচ্ছা ভাইয়া।

আমি রুমে এসে শুয়ে থাকতে ঘুমিয়ে গেলাম। দুপুরে নেহার ডাকে
ঘুম ভাঙলো।

নেহাঃ ভাইয়া এই ভাইয়া উঠ?

আমিঃ হুমম আপু তুই যা আমি উঠতেছি।

ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নামাজ পড়ে নেহাক ডেকে নিয়ে যায়ে আমার
হাতে তুলে ডিনার করলাম।

বিকেলে নেহাকে নিয়ে শপিং মলে গেলাম। নেহার জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় আর খালার জন্য কিছু কাপড় নিলাম।
নিয়ে বাসায় আসলাম।
নেহাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করেই কয়েক দিন কেটে দিলাম।যাতে ওর মনটা ফ্রেশ হয়ে।

এভাবে চলে গেল একমাস।নেহা এখন মোটামুটি সুস্থ।
আর কয়েকদিন আগে খালাকে এসে তার ছেলে নিয়ে গেছে।খালা এখন তার ছেলের কাছে আছে।

আজকে নেহাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলাম।নেহা কিছু বন্ধু বানিয়ে নিলো।
তারপরে ওকে নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি বাসায় আসলাম।

পরের দিন দুই ভাই বোনে একসাথে কলেজে গেলাম।নেহা ওর বন্ধুদের
কাছে চলে গেল আর আমি আমার বন্ধুদের কাছে গেলাম।

আমার আপু বেশ ভালো স্টুডেন্ট। আপুকে রাতে পড়ানো, খাইয়ে দেওয়া, মাথায় তেল দিয়ে দেওয়া,ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া আর এদিকে
আমার অফিস দেখাশোনা করা এসব করতে আরো একটি বছর কেটে গেল।

নেহা এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আর আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।আমার আপু
ভালো ছাত্রী হওয়ায় এবার ফার্স্ট হয়েছে।

পরিক্ষার পর কলেজ ছুটি ছিলো। ছুটিটা ভালো কাটলো দুই ভাই বোনের ঘোরাফেরা করে।

কাল থেকে কলেজ শুরু। রাতে দুই ভাই বোন একসাথে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম।আর এখন বুয়া এসে কাজ করে দিয়ে যায়।
আপু করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি করতে দেইনি।

নিত্য দিনের ন্যায় সকালে উঠে নাস্তা করে ভাই বোন কলেজে গেলাম।

কলেজে বন্ধুদের কাছে যাতেই ইকবাল [(আমার বন্ধু ।আরো দুজন আছে ওরা হলো শাকিব আর রিয়াদ)] বললোঃ সাহিদ দোস কলেজে তো
ইংলিশ ম্যাম,,,

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here