# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ১১,১২
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১১
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে অফিসের ভিতরে ঢুকতেই ম্যানেজার এসে আমাকে আমার কেবিনে নিয়ে গেলেন।
একটু পরে আব্বু এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আর ম্যানেজার কে বললো আমাকে যেন বেশি কাজ না দেওয়া
হয়। ম্যানেজার স্যার আমার কেবিনে এসে কাজ বুঝিয়ে দিলেন।
যাইহোক, প্রথম দিন তাই তেমন কাজ নেই। এছাড়া এই কাজগুলো আমার জানা ছিলো।
টুকিটাকি কাজ করছিলাম।এমন সময় পিয়ন এসে বললো স্যার মানে আব্বু নাকি ডাকতেছে।
আমি আব্বুর কেবিনের সামনে যায়ে বললামঃ আসতে পারি স্যার।
আব্বুঃ আমাকে আর কখনো স্যার বলবি না। আর তোর আসতে কোনো অনুমতি লাগবে না
আমিঃ আচ্ছা। কি জন্য ডেকেছো?
আব্বুঃ আয় বস এখানে। লাঞ্চের সময় হয়েছে লাঞ্চ করে।
এরপর আব্বুর সাথে লাঞ্চ করতে বসলাম। আব্বু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আমিও
আব্বুকে খাইয়ে দিচ্ছি। লক্ষ্য করলাম আব্বুর চোখের কোণায় পানি। আমি আর
কিছু বললাম না। কারণ, এই পানি কষ্টের পানি নয়, এই পানি হলো হারানো
সুখ কে খুঁজে পাওয়ার পানি।
লাঞ্চ শেষ করে আব্বুকে বলে আমার কেবিনে আসলাম।কাজ করতে করতে কখন যে পাঁচটা
বেজে গেলো বুঝতেই পারিনি। আব্বু এসে বললোঃ পাঁচটা বেজে গেছে বাসায় কখন যাবি?
আমিঃ এইতো এখনি যাবো।
আব্বুঃ চল্ গাড়িতে করে যাই।
আমিঃ না আব্বু তুমি যাও আমি রিকশায় চড়ে যাবো।
আব্বুঃ রিকশায় চড়ে যাবি মানে 😠😠😠?
আমিঃ আব্বু বুঝার চেষ্টা করো।আমি রিকশায় করে যাচ্ছি তুমি চলো।
আব্বুঃ ঠিক আছে আয়(মন খারাপ করে)।
আমিও রিকশা করে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় পৌছে দেখি আব্বু বসে থেকে টিভি দেখতেছে।
আমাকে দেখে বললোঃ ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করবি।
আমিঃ আচ্ছা।
রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। আব্বুর সাথে
নাস্তা করে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে। বাহিরে আসলাম। বাহিরে একটু হাঁটাহাঁটি করে
বাসায় গেলাম।নতুন শহরে কোনো বন্ধু না থাকায় বাহির বেশিক্ষণ থাকলাম না।
বাসায় এসে আব্বুর সাথে আড্ডা দিয়ে ডিনার করে রুমে রুমে গেলাম।
পরদিন সকালে নাস্তা করে অফিসে গেলাম। অফিসে যায়ে কাজ করে বাসায় চলে আসলাম।
এভাবে চলে গেল একমাস।এই এক মাসে আমার কাজ দেখে আব্বু মুগ্ধ হয়েছে। আসলে আমি আগে মাঝে মধ্যে
ভাইয়ার (সাইম আহম্মেদ) আর আব্বুর (আমজাদ চৌধুরী) সাথে অফিসে যেতাম। ইচ্ছা করেই এই কাজ গুলো করতাম।
যার ফলস্বরূপ আজকে আমার কাজগুলো সহজ হয়ে গেছে।
এই এক মাসে অফিসের স্টাফদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।এদের নাম হলো আঁখি,
ববি, নাহিদ,রাকিব আর রিমন। প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও নাস্তা করে রিকশায় চড়ে অফিসে গেলাম।
তবে আরেকটি কথা, এখনো অবধি কেউ জানে না যে, আমি এই কম্পানির মালিকের ছেলে। আব্বু সবার সাথে আব্বুর সূত্রে পরিচয়
করিয়ে দিতে চাইছিলো। কিন্তু আমি হইনি। আমি সাধারন ভাবেই আছি।
রাতে ডিনার করার সময় আব্বু বললঃ বাবা তুই লেখাপড়াটা একেবারে শেষ করে নাহয় আমায় ব্যাবহার দ্বায়িত্ব টা ঘাড়ে নে। আমি আর কতই।
আমিঃ আব্বু আমি কয়েক দিন অফিসে কাজ করবো তারপরে আবার লেখাপড়া শুরু করবো।
আব্বুঃ আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস।
যাইহোক, ডিনার করে রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম । সকালে ওঠে নাস্তা করে পূর্বের ন্যায় গেলাম।
অফিসে যাইয়ে কাজ করতেছি এমন সময় পিয়ন এসে বললো আব্বু আমাকে ডাকতেছে। আমিও চলে গেলাম
আব্বুর কেবিনে।
আব্বুর কেবিনের দরজা নক করে বললামঃ আসতে পারি।
আব্বুঃ হ্যাঁ আয়।আর তোকে কতবার বলবো আমার কেবিনে আসতে তোর অনুমতি লাগবে না। কথা কি তোর কানে যায়না,😡😡😡(একদম রেগে)
আমি যায়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ আমার সোনা আব্বু রাগ করে না। ভুল হয়ে গেছে আর এরকম হবে না,,(বলেই কপালে একটা চুমু দিলাম)
কী জন্য ডেকেছো বলো।
আব্বু আমাকে একটা লেটার হাতে দিয়ে বললোঃ এটা ভালো ভাবে পড়।
আমি লেটারটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।পড়া শেষে করে আমি যে কি
পরিমান খুশি হয়েছি তা বুঝতে পারবোনা।লেটারটা ছিলো আমার প্রোমোশনের। আমার পোস্ট টা হলো
ম্যানেজারের নিচের পোস্ট।
আমি আব্বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললামঃ ধন্যবাদ আব্বু।
আব্বুঃ ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই এটা তোর কাজের দক্ষতাই হয়েছে।আর
সবচেয়ে বড় কথা আমার ছেলে খুশি হয়েছে কি?
আমিঃ হ্যাঁ আব্বু খুশি হয়েছি।
আব্বুঃ খুব ভালো।
আমিঃ আব্বু তুমি থাকো আমি আমার কেবিনে গেলাম।
কেবিনে এসে কাজ করতে লাগলাম।অফিস শেষে আমার সব বন্ধুকে
আমার প্রোমোশনের কথা জানালাম।তারাও খুশি হয়েছে।
আঁখি বললঃ দোস অনেক দিন থেকে পেট পুরে খাওয়া হয়নি। আজ যদি তুই কিছু খাওয়াতিস।
আমিঃ শাকচুন্নী আপনার তো খালি খাওয়া।এই নাহিদ বিয়ের পর তুই এই রাক্ষসীকে খাওয়াবি কী?(আঁখি নাহিদের গার্লফ্রেন্ড)
নাহিদঃ সেটাই তো চিন্তারে ভাই। এখন থেকেই যে খাওয়া খায় । বিয়ের পর না জানি
আমাকে ফকির বানিয়ে দেয়😞😞😞।
নাহিদের কথা শুনে আঁখি বাদে আমারা সবাই হেঁসে দিলাম।আর আঁখি রাগ ফুঁসতে ফুঁসতে
বললঃ কি বললি আমি বেশি খাই😠😠😠😠।যা তোর সাথে কথাই নেই।
একথা বলেই আঁখি জোরে জোরে রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করে দিলো।
আর নাহিদ বেচারা আঁখির রাগ ভাঙাতে ওর পিছে পিছে দৌড় দিল।
আমরা আড্ডা দিচ্ছি কিছুক্ষণ পর ওরা দুজনে আসলো।
আমি বললামঃ দোস তাহলে তোরা সবাই সন্ধ্যায় পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্টে আসিস।
আমি ট্রিট দিবো।
সবাই খুশি মনে বললোঃ ঠিক আছে।
এরপরে বাসায় আসলাম। আব্বু এখনো আসেনি। অফিসে একটা মিটিং করতেছে।
যাইহোক ফ্রেশ হয়ে আসরের নামাজ পড়লাম।
আজকে একটু ছাদে গেলাম পড়ন্ত সূর্য টাকে দেখার জন্য। ছাদে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পরে
নিচে আসলাম। নিচে এসে দেখি আব্বু এসেছে।
আব্বুর সাথে বসে থেকে টিভিতে করোনা ভাইরাসের খবর শুনেছিলাম। হঠাৎ মনে হলো আজকে
ট্রিট দেওয়ার কথা।
আব্বুকে বললামঃ আব্বু আমি একটু বাইরে যাবো আসতে রাত হতে পারে।
আব্বুঃ কেন?
আমিঃ আসলে আব্বু আমার প্রোমোশনের জন্য বন্ধুরা ট্রিট চাইছে।তাই রেস্টুরেন্টে যাবো।
আব্বুঃ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি ফিরবি।
আমিঃ আচ্ছা।
দরজার কাছে আসতেই আব্বু আবার ডাক দিলো।
আব্বুঃ বাবা এদিকে একটু আয়।
আমি কাছে যায়ে বললামঃ কী হয়েছে?
আব্বু আমাকে একটা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বললো এটা কাছে রাখতে।
আমিও আর না করলাম না।কারণ, আমি যদি না নেই তাহলে আব্বু আমাকে ছাড়বে না।
বাসা থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্টে গেলাম। যায়ে দেখি সবাই এসেছে শুধু রিমন আপনি। আমরা ভিতরে ঢুকে
একটা টেবিলে বসলাম। অবশ্য টেবিল টা আমি আগেই বুক করে নিয়েছি।
রিমনকে ফোন দিলাম,,
আমিঃ হ্যালো এই কোথায় তুই?
রিমনঃ এই তো চলে এসেছি।
আমিঃ ঠিক আছে আয়।
বলেই ফোন কেটে দিলাম। একটু পরে রিমন আসলো।
তারপরে যে যার মতো অর্ডার করলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার
বাসায় চলে আসলাম।রাত প্রায় ১০ টা বেজে গেছে।
বাসায় এসে দেখি আব্বু বসে থেকে অফিসের কাজ করতেছে।
আমি বললামঃ আব্বু তুমি ঘুমাওনি।
আব্বুঃ তোর জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। ভাবলাম বসে থেকে না থেকে কাজ করি।
আমিঃ ডিনার করেছো?
আব্বুঃ হ্যাঁ এই মাত্র করলাম। ঘুমিয়ে পড় তাড়াতাড়ি।
আমিঃ হ্যাঁ তুমিও ঘুমিয়ে পড়।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। মোবাইল টা হাতে নিয়ে
নতুন করে ফেসবুকের একটি আইডি খুললাম।নাম দিলাম ” অবিশ্বাসীদের অবহেলার পাত্র”।
কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করে ফোন টা রেখে দিলাম।ভাবতে লাগলাম মা বাজ কথা। কেমন আছেন তারা হয়তোবা
ভালো আছে। আমার মতো পাপিষ্ট ছেলেকে ছাড়া। কিন্তু আমি ভালো নেই তাদের ছাড়া।এই বেইমান
মন বার বার তাদের কথা ভাবে। তাদের কথা ভাবলে এমন কোন দিন
নেই যেদিন চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজে না। মাঝে মাঝে মনে পড়ে সামিয়ার কথা।
সে হয়তো আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে বেঁচে নিয়েছে। আমার মতো চরিত্রহীন কে তো ঘৃণা করতো।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ওঠে নাস্তা করে অফিসে গেলাম।
এভাবে কেটে গেল আরো একবছর।এই একবছরে অনেক কিছু চেন্জ হয়েছে।
আজকে অফিস আগে ই ছুটি দিয়েছে। অফিস থেকে এসে লাঞ্চ করতেছি তখন
আব্বু বললোঃ বাবা এবার লেখা পড়াটা শুরু কর।
আমিঃ হ্যাঁ বাবা এখন ভর্তি হবো।
আব্বুঃ ঠিক আছে । বাসার থেকে একটু দূরে একটা ভালো কলেজ আছে এই কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলতেছি আজকে।কবে ভর্তি হবি?
আমিঃ কালকে ব্যবস্থা হলে কালকে ই।
পরের দিন আব্বুর যায়ে সাথে কলেজে ভর্তি হলাম। সেখানে আব্বু আমার ছেলে হিসেবে পরিচয় দিলো। আমিও আর কিছু
বললাম না।
যাইহোক প্রথম দিন কিছু বন্ধু বানিয়ে বাসায় চলে আসলাম।এরপর থেকে শুরু হলো আমার লেখাপড়ার জীবন মানে ছাত্রজীবন।
দেখতে দেখতে একবছর হয়ে গেল আমার কলেজে ভর্তি হওয়ার। ইয়ার চেন্জ পরিক্ষা দিলাম। এবার আমি
তৃতীয় বর্ষে। কলেজে আমার বেশ কয়েকটা বন্ধু হয়েছে।
আজকে রেজাল্ট দিয়েছে বেশ ভালোই রেজাল্ট করেছি। ভালো ছাত্র হওয়ায় এবারো আল্লাহর রহমতে ফার্স্ট হয়েছি।
আব্বুকে বললে আব্বুও খুব খুশি হয়েছে। আব্বু আমার মাঝেই আগের ছেলেকে খুঁজে পায়।
কারণ আব্বুর আগের ছেলেও লেখাপড়ায় ভালো ছিলো।
আব্বু আমাকে একটা বাইক উপহার দিয়েছে।
একদিন ক্যাম্পাসে বসে থেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় আব্বু ফোন দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি অফিসে যাতে। একথা বলেই ফোন কেটে দিল।
আমার মনে অজানা ভয় ঢুকে গেল। বন্ধুদের বলে বাইক নিয়ে দ্রুত অফিসে চলে আসলাম।
অফিসে যায়ে দেখি অফিসটা ফাঁকা। আমার মনের ভয় বেড়ে গেল।
আমাকে দেখে পিয়ন এসে বললো আব্বু নাকি আমাকে হলরুমে যেতে বলেছে।
আমি আর দেরি না করে হলরুমের দিকে দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। হলরুমে যায়ে দেখি সব স্টাফ বসে আছে।আর আব্বু স্টেজে মাইক্রোফোন হাতে
নিয়ে বসে আছে। আমাকে রুমে ঢুকতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়ে বলতে শুরু করলো,,,,,,,,
(চলবে)
# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ১২
আমাকে রুমে ঢুকতে দেখে আব্বু দাঁড়িয়ে যায়ে মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলোঃ লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান
আজ আমি আপনাদের যে জন্য হলরুমে ডেকেছি তা হলো আপনারা জানেন আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে। আজ থেকে ছয় বছর আগে
আমি আমার পরিবার হারিয়েছি। হারিয়েছি একটা ছেলে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি আবার আরেকটা
ছেলে পেয়েছি। যে ছেলে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমাকে এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা করেছিলো(যদিও এখানে আল্লাহ তায়ালা বাঁচিয়েছে)
। আমার ছেলে এই অফিসেই কাজ করে। যেদিন আমার ছেলে এই অফিসে জয়েন করে সেদিন আমি তাকে বলেছিলাম বাবা আমার এতো সম্পত্তি
থাকার পরেও তোমাকে জব করতে হবে কেন। সেদিন আমার ছেলে বলেছিলো আব্বু আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আমি তাকে সবার সাথে পরিচয়
করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম আমার ছেলে হিসেবে কিন্তু সে বলেছিল। আব্বু আমি যেমনি আছি তেমনি ভালো।তার মধ্যে নেই কোন অহংকার নেই কোন বড় মানুষিকতা। আমি যদি তাকে বলি বাবা আমাদের গাড়ি আছে। তুমি গাড়ি নিয়ে অফিসে যাবে।সে বলে কি জানেন বাবা আমি এমনি ভালো আছি।আপনারা কি জানেন বা চিনেন আমার ছেলে কে?
সবাইঃ না স্যার।
সবাই উৎসুক জনতার মতো আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে। আব্বু আবার বলতে লাগলো,
আব্বুঃ আজকে আপনাদেরকে আমি এইজন্যই ডেকেছিলাম যে, আমার ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। আমার ছেলে আর কেউ নয় আমার ছেলে হলো
আপনাদের পরিচিত সাহিদ হাসান সাহি।
আমার নাম শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। আমি এতোক্ষণ কলিগ মানে
অফিসের বন্ধুদের সাথে বসে ছিলাম। বন্ধুরাও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর অবাক হওয়ারই কথা। কারণ, এই এক বছরে কাউকে বুঝতে দেইনি যে আমি মালিকের ছেলে।
যাইহোক, কথা বলা শেষে আব্বু আমাকে স্টেজে ডাকলো। আমিও গেলাম।আমি যাওয়ার পরে আব্বু আমাকে
ফুল দিয়ে বরণ করে নিলো।আর এই অফিসের এমডির চেয়ারে বসতে বললো।
আমি চেয়ারে বসতেই আব্বু আবার বলতে শুরু করলঃ এই কম্পানি এবং সব সম্পত্তির মালিক এখন আমার ছেলে।
এখন আমি বেশ অসুস্থ আবার হায়াতের কথা বলাও যায়না এছাড়াও যদি কোনো কারণে আমি অফিসে আসতে না পারি তাহলে আমার
ছেলে সাহিদ হাসান সাহি এই অফিস দেখা শুনা করবে।আর আমি আশা করি আপনারা আমার অনুপস্থিতিতে কাজের কোনো গ্যাফলতি করবেন না।
আব্বু আরো কিছুক্ষণ লেকচার দেওয়ার পরে সবাই ছুটি দিলো।
হলরুম থেকে বের হয়ে বন্ধুদের কাছে রাতেই ববি বললঃ স্যার আপনি এখানে কোনো দরকার কী?
আমিঃ শোন তোরা আমার বন্ধু ছিলি আর এখনো থাকবি সো কোনো স্যার স্যার
করবি না।
রিমনঃ তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু তুই এতো দিন আমাদেরকে এই কথা জানায়নি কেনো?
আমিঃ আমি যদি তোদের বলতাম তাহলে তোরা আমার সাথে এতো ফ্রিলি থাকছি না।
নাহিদঃ সত্যি রে তুই মহান।
ওদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
রাতে ডিনার করার সময় আব্বুকে বললামঃ আব্বু এসব বলার কি প্রয়োজন ছিলো।
আব্বুঃ দেখ বাবা আমার শরীর টা বেশ খারাপ কখন কি হয়।
আমিঃ আর কখনো এসব কথা বলবে না। তোমার কিছু হলে আমি কি করে থাকবো।
আব্বুঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আর বলবো না। এবার খুশি।
আমিঃ হুমমম। আর তুমি এখন থেকে রেস্ট নেও।আর অফিসে একটা
এমডি পোস্টের সার্কুলার ছাড়ো।
আব্বুঃ ঠিক আছে।
আব্বুর সাথে কথা বলে রুমে আসলাম। ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে উঠে নাস্তা করে আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে কলেজে আসলাম।
কলেজ শেষ করে বাসায় আসলাম।এসে দেখি আব্বু এখনো আসেনি। আব্বুকে ফোন দিলাম।
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম আব্বু কোথায় আছো?
আব্বুঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাবা আমিতো অফিসে আছি। কেন?
আমিঃ বাসায় কখন আসবে?
আব্বুঃ বিকেলে আসবো।
আমিঃ আচ্ছা।
এভাবে চলে গেল প্রায় চার মাস। আব্বুর শরীর টা বেশ খারাপ। হার্টের রোগী।
কলেজে ক্লাস করেছিলাম এমন সময় আব্বুর পিএ আমার কাছে ফোন দিয়ে হাসপাতালে যেতে বললো।
আমার বুকের ভিতর ধুকপুক শুরু হয়ে গেল।আমি বাইক নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে গেলাম।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখি আব্বুর পিএ হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে আমার কাছে আসলো।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আব্বুর কি হয়েছে?
আব্বুর পিএঃ স্যার অফিসে বসে থেকে কাজ করতে করতে স্ট্রোক করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসলে আপনাকে
তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসতে বলে।
আমি আব্বুর পিএ এর সঙ্গে যেই রুমে আব্বুকে শিফট করা হয়েছে সেখানে গেলাম।
আব্বুর রুমে যায়ে দেখি আব্বুর পাশে উকিল বসে আছে আর মুখে অক্সিজেনের মাস্ক লাগানো
আছে।
আব্বু আমাকে দেখতে পাইয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে আমাকে তার কাছে ডাকলো আমিও আব্বুর পাশে
বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর কান্না করতেছি।
আব্বু তার মুখের মাস্কটি খুলে দিতে বললো। খুলে দেওয়ার পরে
আব্বু আমার কপালে চুমু খেয়ে বললোঃ এই পাগল ছেলে
কান্না করিস কেন?একদম কাঁদবি না।আর উকিল সাহেব আপনি আমার
সমস্ত সম্পত্তি আমার ছেলের নামে ট্রান্সফার করে দিন ।
ঊকিলঃ আচ্ছা স্যার।
এরপরে আব্বু তার সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে ট্রান্সফার করে দিলো।
হঠাৎ আব্বুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।আমি ডাক্তার কে ডাকতেই ডাক্তার এসে আব্বুকে নিয়ে
আইসিওতে নিয়ে গেল।
আমি আইপিওর রুমের পাশে বসে থেকে অঝর ভাবে কান্না করতেছি।
এতোক্ষণে অফিসের সব স্টাফ হাসপাতালে চলে এসেছে।
আমার বন্ধুরা এসে আমাকে শান্তনা দিচ্ছে।
একটু পরে ডাক্তার বের হয়ে আসলো। ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি বিষন্নতার ছাপ।
আমি দৌড়ে যায়ে ডাক্তার কে বললামঃ ডাক্তার আমার আব্বু কেমন আছে? ( কান্না করতে করতে)
ডাক্তারঃ ,,,,,,( চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে)
আমিঃ কি হলো ডাক্তার বলুন আমার আব্বু কেমন আছে? আমার আব্বুর কিছু হয়নি তো,,(কান্না করতে করতে)
ডাক্তারঃ সরি আমরা স্যার কে বাঁচাতে পারলাম না।
একথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল।
আমিঃ আবববববববু,,,,,,
এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।আর আমার অফিসের আর কলেজের
বন্ধুরা আমার পাশে বসে আছে।
আমার চোখ খোলা দেখে নাহিদ বললঃ দোস এটা ভাগ্য ছিল,,,
আমিঃ আমি আব্বুর কাছে যাবো আমাকে আব্বুর কাছে নিয়ে চল।
রিমনঃ দোস শান্ত হ।
আমিঃ না আমি আব্বুকে দেখবো।
শেষে ওরা আমার জোরাজুরিতে আব্বুর কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার আমাকে বললো,,
ডাক্তারঃ প্লিজ আপনি উত্তেজিত হবেন না। আপনার মাথার সমস্যা হবে।
বন্ধুরাঃ ঠিক আছে স্যার আমরা দেখছি।
আব্বুর কাছে যায়ে দেখি আব্বুকে একটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
আমি দৌড়ে যায়ে মুখের কাপড় খুলে দিয়ে কান্না করে বলতে লাগলামঃ আব্বু তুমি আমাকে একা করে কেন চলে গেল।কে
আমাকে আদর করে তুলে খাওয়াবে, কে আমাকে আদর করে বাবা বলে ডাকবে,কে আমাকে শ্বাসন করবে? কেন আমাকে একাই
রেখে চলে গেলে,।
রিমন আর রাকিব এসে আমাকে আব্বুর কাছে থেকে সরে নিয়ে গেল।
রিমন বললঃ দেখ ভাই এটা ভাগ্যে ছিলো এটা মেনে নিতে হবে।আর সময় নষ্ট না করে স্যারের দাফন কাজ শেষ করি।
আমিঃ হুমম চল।
এরপরে আব্বুর জানাযা করিয়ে দাফন শেষ করলাম। অবশ্য আমিই জানাযার
নামাজ পড়িয়েছি।
আব্বুর দাফন কাজ শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাসায় আসলাম। আমার সাথে রিমন,নাহিদ আর রাকিব আসলো আমার বাসায়
আমার সাথে থাকার জন্য।
বাসায় এসে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারতেছিলাম না। যেখানেই যাই সেখানেই আব্বুকে খুঁজে পায়।
যাইহোক, রুমে যায়ে শুয়ে পড়লাম। বন্ধুরা খাওয়ার জন্য জোর করলো। কিন্তু আমি খেলাম না।
রাতটা কোন মতো পার করলাম। ফজরের আজান শুনে মসজিদে গেলাম। নামাজ পড়ে এসে
আব্বুর কবরে যায়ে জিয়ারত করে চলে আসলাম।
প্রিয়জনের হারানো দুঃখ নিয়ে কেটে গেল পনেরো দিন। এখন আমি কিছু টা স্বাভাবিক।
আর অফিসের জন্য একটা এমডি রেখেছি।
এভাবে চলে গেলে দুই মাস। কয়েকদিন আগে থেকে ক্লাস করতে শুরু করে দিয়েছি।
আজকে সকালে অফিসে গেলাম। অফিসে যায়ে সবার সাথে দেখা করে এমডির কেবিনে গেলাম
হিসাব বুঝে নেওয়ার জন্য। মাঝে মাঝেই আমি আসি হিসেব বুঝে নেওয়ার জন্য।
অফিস থেকে কলেজে গেলাম । ক্লাস করে বাসায় ফিরলাম। গোসল করে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ পড়ে আব্বুর কবরে যায়ে আব্বুর জন্য
দোয়া করে বাসায় আসলাম। হাল লাঞ্চ করে ঘুমিয়ে গেলাম।
বাসায় কাজের জন্য একটা বুয়া মানে একটা খালা আছে।
কয়েকদিন আগে এক কাজে সন্ধ্যায় রেলস্টেশনে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি একজন বৃদ্ধা মহিলা মাথা হেলে কান্না করতেছে।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ কি হয়েছে আপনার?
মহিলাটিঃ বাবা আমি এই শহরে আমার ছেলের বাসায় থাকতাম। কিন্তু বউয়ের কথা শুনে আজকে
আমাকূ বাসা থেকে বের করে দিয়েছে,,,(কান্না করতে করতে)
মানুষ কত নিষ্ঠুর হতে পারে। বউয়ের কথা শুনে নিজেকে গর্ভধারিনী কে বাসা থেকে বিতাড়িত করলো। হায়রে মানুষ।
ধিক্কার জানাই সে সব সন্তান কে। হ্যাঁ মা বৃদ্ধা হয়েছে উল্টোপাল্টা কথা বলতে বা হিসেব করতেই পারে। তাই বলে নিজের
মাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া।
আমি বললামঃ কোথায় থাকবেন এখন?
মহিলাঃ রাস্তায় পাশে থেকে ই রাত কাটাবো।
আমিঃ আপনাকে রাস্তায় থাকতে হবে না আমার বাসায় চলুন।
মহিলাঃ না বাবা তোমার বাসায় গেলে তোমার মা বাবার সমস্যা হবে।
আমিঃ আমার মা বাবা কেউ নেই চলুন।
তার পর থেকে এই মহিলা আমার বাসায় থাকে। আমি কাজ করতে না দিলেও করে।
যাইহোক, এবার বাস্তবে ফিরি। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে হাসপাতালে গেলাম।কারণ মাঝে মাঝে আমার মাথার সমস্যার জন্য মাথার চেকাপ করাতে হয়।
চেকআপ করে ডাক্তারের কেবিনে থেকে বের হয়ে আসি।
হাসপাতাল থেকে বাহির এসে দেখি একটা মেয়ে বয়স আনুমানিক ১৭ থেকে ১৮ বছর হবে। চেয়ারে বসে থেকে কান্না করতেছে।
আমি মেয়েটিকে বললামঃ কি হয়েছে আপু?
মেয়েটি বললোঃ আমার আম্মু,,,,,
(চলবে)