EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ২০,২১

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖,পর্বঃ ২০,২১
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ২০

প্রিন্সিপাল স্যারঃ প্রিয় শিক্ষার্থী বৃন্দ আজ কে আমি তোমাদের একটা খুশির কথা বলবো।আমি আশা করি এতে তোমরা সকলে সম্মতি প্রদান করবে। আর তা হলো আগামী ২৭ তারিখে এই কলেজ থেকে সিলেট এবং কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী ট্যুরে যাওয়া হবে।

সবাইঃ ইয়েস স্যার। আমরা রাজি।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ ঠিক আছে তাহলে তোমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নেও।

হলরুমে থেকে বের হয়ে নেহার কাছে গেলাম। নেহার সঙ্গে মিমও ছিলো । ওদের দুজনকে নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে গোসল করে যোহরের নামাজ পড়ে সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম।

আমিঃ নেহা তুই যাবি কী ট্যুরে?

নেহাঃ আসলে ভাইয়া আমি যেতে চাচ্ছি না।

আমিঃ কেন?( অবাক হয়ে)

নেহাঃ সেখানে যাওয়া মানে অযথা খরচ করা।আর আমার জন্য তুমি কত খরচ করবে বলো?

নেহার কথা শুনে ঠাসস ঠাসস করে গালে দুইটা লাগিয়ে দিয়ে বললামঃ কী বললি তোর জন্য আমি কত খরচ করবো? মানে বোঝাতে চাচ্ছিস তুই আমার কেউ না।
শোন তুই যদি না যাস তাহলে আমিও যাবো না।

বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। ভাবতেই পারিনি নেহা আমাকে এই কথা বলবে। হয়তোবা আমাকে এখনো পর ভাবে। এখনো আপন করে নিতে পারেনি। কিন্তু সে তো আর জানে না। সে আমার কাছে কতটা আপন।

রুমে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে এসব ভাবতেছি আর চোখে দিয়ে পানি পড়তেছে। হঠাৎ বুঝতে পারলাম রুমে কেউ ঢুকলো।চোখে খুলে দেখি নেহা দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললামঃ কিছু বলবি? আমি তো তোর কেউ না😞😞।

নেহা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ ভাইয়া তুমি আমাকে এতো ভালবাসো? আমাকে মাফ করে দাও ভাইয়া, আমি বুঝতে পারিনি আমার কথা দ্বারা তুমি এতো কষ্ট পাবে😭😭। আমি ভেবেছিলাম আমার আম্মু মারা যাওয়ার পরে এই পৃথিবীতে কেউ আর আমাকে ভালোবাসবে না। কেউ আমার সাথে ভালো ব্যবহার করবে না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি একজন ভাইকে পেয়েছি যে নিজের থেকে বেশি আমার কেয়ার করে। প্লিজ ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দাও।😭😭😭😭(কান্না করতে করতে)

আমিও ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ তুই কেন বুঝিস না তোরা ছাড়া এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই। আমার যা কিছু আছে সব তো তোদের জন্যই। আমি এসব রেখে কী করবো বল?
এখন বল তুই যাবি কিনা?

নেহা মুচকি হেসে বললঃ হুমম আমি যাবো।

আমিঃ এইতো আমার ভালো আপু্। আমার মেয়ে কী করতেছে?

নেহাঃ তোমার মেয়ে আমার রুমে ঘুমিয়ে গেছে।

আমিঃ ওহহহ।

নেহাঃ ভাইয়া আমি গেলে তো মিমকেও নিয়ে যেতে হবে।

আমিঃ হুমম যাবো তো সমস্যা কোথায়?

নেহাঃ কেউ কিছু মনে করবে না তো?

আমিঃ কে কি মনে করবে? আর বেশি সমস্যা হলে মিমের জন্য একটা সিটের বিল পে করে দিবো।

নেহাঃ হুমম। ওও আমার তো মনেই নেই যে, তোমার মেয়ের মামনি তো আবার কলেজের ম্যাম। সমস্যা হওয়ার কথাই নেই। তো ভাইয়া তোমার মেয়ের মামনি কবে বাসায় আনতেছো?(😜😜😜)

আমিঃ নেহা মার খাবি কিন্তু। বেশি পেকে গেছিস তাই না। তুই রুমে যা আমি ঘুমাবো।

নেহাঃ আচ্ছা ঘুমাও আমি ভাবির সঙ্গে কথা বলি।

আমিঃ কীহহহহহহহ?

নেহাঃ কিছু না।
বলেই রুম থেকে দৌড়। আমি মনে মনে বললাম, পাগলি একটা।

ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে মিম এসে ডাকতেছে।
মিমঃ বাবাই ওতো আদকে ঘুলতে দাবো।

আমিঃ ওকে আম্মা তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।

ফ্রেশ হয়ে এসে আসরের নামাজ পড়ে মিম আর নেহাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম।

একটা পার্কে এসে বাইক থামালাম। এই পার্ক টা বেশ গোছানো। পার্ক টা আমার বাসা থেকে বেশ দূরে। আবার কলেজের থেকে কাছে। কেননা কলেজ আমার বাসা থেকে পূর্বে আর পার্ক টা কলেজ থেকে পশ্চিমে।

আর বন্ধুদের সূত্রে জানতে পারলাম সামিয়া এই পার্ক থেকে পশ্চিমে একটু দূরে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। যাজ্ঞে, আমি আমার মেয়ে আর বোনকে নিয়ে একটা ফুচকার দোকানে গেলাম।
নেহা আবার ফুচকা খেতে বেশ পছন্দ করে। নেহার দেখা দেখা দেখি আমার মেয়েও ফুচকা খাওয়া শিখেছে।

ওরা ফুচকা খাচ্ছে আর আমি কফি খাচ্ছি। আমরা যেই টেবিলে বসে খাচ্ছি সেই টেবিলে চারটা চেয়ার দেওয়া আছে। আমার সামনের দুই চেয়ারে মিম আর নেহা বসে থেকে ফুচকা খাচ্ছে। আর আমার পাশের চেয়ার টা ফ্রি আছে। হঠাৎ মিম মামনি মামনি বলে চিৎকার করতে লাগলো। পিছনে ফিরে দেখি সামিয়া আসতেছে।

আমি একবার সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে আবার চোখটা নামিয়ে কফি খাওয়ায় গভীর ভাবে মনোযোগ প্রদান করলাম। যাতে সামিয়া বুঝতে পারে আমি তাকে দেখিনি। মিম চেয়ার থেকে নেমে সামিয়ার কাছে গেল। আর সামিয়া মিমকে কোলে তুলে নিলো।

সামিয়া আমার পাশে এসে দাড়াতেই নেহা বললঃ আরে ভাবি যে কেমন আছেন?

আমি নেহার দিকে রক্তিম চোখে তাকালাম। নেহা ভয়ে ঢোক গিলতেছে।

সামিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ। ননদি তুমি কেমন আছো?

নেহাঃ আমিও ভালো আছি ভাবি সরি আপু।(ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে)

সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললোঃ আরে তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন। আর তুমি আমাকে ভাবি বলেই ডাকতে পারো।

আমিঃ নেহা তোর আরো কী ভাই আছে নাকি?(জানার পরেও)

নেহাঃ কেন?(অবাক হয়ে)

আমিঃ এইযে ম্যাম তোকে ভাবি ডাকতে বলতেছে যে? আর তোকে ননদি বলতেছে।

সামিয়াঃ নেহার ভাইতো নেহার সামনেই বসে আছে। তাই না ননদি?
😏😏😏

নেহাঃ হুমম ভাবি।

আমি মনে মনে বললাম, শালি তুই আমার বোনকেও হাত করে ফেলেছিস।

নেহাঃ কী ব্যাপার মিস্টার আমাকে বসতে বলবেন না নাকি?

আমি ধিরে ধিরে বললামঃ আমার মতো চরিত্রহীন। ছেলের পাশে আবার বসবেন?

সাহিদের কথাটা সামিয়ার কলিজার মধ্যে তীরের মতো ঢুকলো। কিন্তু সামিয়া ভাবতেছে, তুমি আমাকে যতই অবহেলা করো আর কথা শুনাও তবুও আমি তোমার পাশে থাকবো। তোমাকে আবার আমার করবোই।

সামিয়া মুখটা কালো করে আমার পাশে বসলো। মিম এখনো সামিয়ার কোলে আছে। সামিয়া টেবিল থেকে ফুচকার প্লেট টা হাতে নিয়ে মিমকে তুলে খাওয়াতে লাগলো। আমি মিমের খাওয়া দেখতেছি। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিম বললোঃ বাবাই তুমি থাবে?

আমিঃ না আম্মু তুমি খাও।

সামিয়া তুলে মিমের মুখে দিচ্ছে আর মিম খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মা তার মেয়েকে তুলে খাওয়াচ্ছে। হঠাৎ মিম বললোঃ বাবাই আজকে মামনিতে বাতাই নিয়ে দাবো।

আমি কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার মেয়ে যে আমাকে এই রকম পরিস্থিতিতে ফেলবে তা কে জানে।

সামিয়াঃ না আম্মু আমি এখন যাবো না। পরে একেবারে যাবো তোমার বাবাই এর বাসায়।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমিঃ ওই আশায় বসে থাকো।(ধীরে ধীরে)

মিমঃ আততা মামনি।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিল মিটিয়ে ফুচকার দোকান থেকে বের হয়ে বাইকের কাছে আসলাম। সামিয়া মিমকে অনেক গুলো চকলেট কিনে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে নেহার কাছে দিয়ে আমার কাছে এসে বললোঃ কালকে কলেজে তাড়াতাড়ি এসো কাজ আছে।

বলেই চলে গেল। আমি ওদের দুজনকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
রাতে মিমকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম। ফজরের ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে আব্বুর কবরে যায়ে দোয়া করে চলে আসলাম।

আটটার দিকে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বের করে দেখি সিফাত ফোন দিয়েছে।
আমি রিসিভ করে বললাম,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছিস?

সিফাতঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। কিছু বলবি কী?

সিফাতঃ হুমম সাহিদ তুই এখনি রাজশাহীতে চলে আয়।

আমিঃ কেন?(ভয় পেয়ে)

সিফাতঃ আন্টি মানে তোর আম্মু খুব অসুস্থ। মেডিকেলে ভর্তি করানো আছে।

আমার আম্মুর যদি কিছু হয় তাহলে আমি কী করে বেঁচে থাকবো।

আমিঃ আচ্ছা যাবো। কিন্তু আমি নার্সের বেশে যাবো। তুই সে ব্যবস্থা কর।

সিফাতঃ ঠিক আছে তুই আয়।

ফোনটা কেটে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখি নেহা আর মিম রেডি হয়ে ছোফায় বসে আছে।

আমি নেহার কাছে যায়ে বললামঃ নেহা আমি আজকে কলেজে যাবো না। চল তোদের নামিয়ে দিয়ে আসি।

নেহাঃ কেন কোথাও যাবে নাকি?

আমিঃ একটা কাজ আছে। একটু বাহিরে যাবো।

নেহাঃ আচ্ছা।

মিমঃ বাবাই তোথায় দাবে?

আমিঃ একটু বাহিরে যাবো আম্মু। তুমি তোমার আন্নির সাথে থাকবে আর আমি আসার সময় তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবো আচ্ছা।

মিমঃ আততা বাবাই।

আমি বাইকে করে নেহা আর মিমকে কলেজে নিয়ে যায়ে নামিয়ে দিয়ে বললামঃ তোদের ছুটির সময় ড্রাইভার আংকেল কে ফোন করে আসতে বলিস। আর তোরা যেন একাই বাসায় যাস না।

নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া। তুমি কখন আসবে।

আমিঃ সন্ধ্যায় বা রাতে।

নেহাঃ আচ্ছা সাবধানে যেও।

আমিঃ হুমম।

এর পরে ইকবাল, রিয়াদের সঙ্গে দেখা করে বাসায় আসলাম। আজকে শাকিব কলেজে আসে নি।

বাসায় এসে বাইক টা রেখে দাড়োয়ান চাচাকে বলে বের হলাম বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্য। কিছুক্ষণ আগে অনলাইনে টিকেট কেটে ছিলাম।

বাসে উঠে বসতেই মনে পড়লো আজ থেকে তিন বছর আগের কথা। কতদিন পরে আজ নিজের শহরে যাচ্ছি। বাসের সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। এটা একটা আমার বাজে অভ্যাস।

_-_-_-_-_

সামিয়াঃ নেহা আজকে তোমার ভাইয়া আসেনি?

নেহাঃ না ভাবী ‌। ভাইয়ার কী যেন কাজ আছে তাই একটু বাইরে গিয়েছে।

সামিয়াঃ ওহহহ,,(মন খারাপ করে),[ শয়তান আজকে একটু তাড়াতাড়ি কলেজে আসতে বলেছিলাম আর তিনি কাজে গেছেন।ঢপ দেখে আর বাচিনা,, মনে মনে]

নেহাঃ ভাবি মন খারাপ করো না, চলে আসবে। এখনি এই অবস্থা বিয়ের পর না জানি।

সামিয়া লজ্জা মাখা মুখে একটা মুচকি হেসে বললঃ পাজি মেয়ে কোথাকার?

মিমঃ মামনি আমাল তকলেত থেত হয়ে দেতে।

সামিয়াঃ ওকে আম্মু চলো তোমাকে আরো চকলেট নিয়ে দেয়।

মিমঃ হুমম মামনি তলো,,।

এর পর নেহা সামিয়া আর মিম ক্যান্টিনে গেল।

_-_-_-_-_-_

দীর্ঘ সফর করে চলে আসলাম সেই অবিশ্বাসীদের শহরে। বাস থেকে নেমে সিফাত কে ফোন দিলাম,,,,

আমিঃ আমি এসেছি তুই কোথায়?

সিফাতঃ তুই এক মিনিট দাঁড়া।

আমিঃ ঠিক আছে।

একটু পরেই সিফাত আসলো। আমাকে দেখার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো। আমিও জড়িয়ে ধরলাম। প্রায় তিন বছর পরে সিফাতের সঙ্গে দেখা। অনেক চেন্জ হয়েছে। তবে রাফির কয়েক বার ঢাকায় গিয়েছিল আর সেখানে তার সঙ্গে কয়েক বার দেখা হয়েছিল।

ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করার পরে সিফাত আমাকে মেডিকেলে একটি ডাক্তারের কেবিনে নিয়ে গেল। তবে যাওয়ার সময় আমার মুখে মাস্ক ছিলো ফলে যারা আমাকে দেখেছে তারা চিনতে পারে নি। ডাক্তারের কেবিনে যায়ে দেখি আমার কয়েক বছরের এক বড় ভাই মাহফুজ বসে আছে। তবে সে তিন বছর আগে মেডিক্যালের স্টুডেন্ট ছিল। তাহলে সে এখন ডাক্তার।
তবে তার সাথে আমাদের ফ্রেন্ডলি ভাবটায় বেশি ছিলো।

যাজ্ঞে, আমাকে দেখে মাহফুজ ভাই জড়িয়ে ধরলেন। আমিও জড়িয়ে ধরলাম। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর সিফাত আমাকে নার্সের ড্রেস দিলো।
আর আমি সেগুলো পড়ে নিলাম। সব কিছু চেন্জ করে একেবারে ক্ষণিকের নার্স হয়ে গেলাম।

এর পরে মাহফুজ ভাই, সিফাত আর আমি কেবিন থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগলাম আম্মুর কেবিনের উদ্দেশ্যে।

আম্মুর কেবিনের সামনে যায়ে দেখি আমজাদ চৌধুরী বিপরীত মুখী হয়ে ফোনে কারো সাথে যেন কথা বলতেছে। তবে বুঝতে পারিনি কিন্তু কথা শুনে বুঝতে পারলাম এটা আমজাদ চৌধুরী।

আম্মুর কেবিনের ভিতরে পা বাড়ালাম। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করতেছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে কেবিনের ভিতরে ঢুকলাম।

কেবিনের ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম তা দেখে তো আমার,,,,,,

(চলবে)

💘 কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন।💘

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ২১

আম্মুর কেবিনের দিকে পা বাড়ালাম। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করতেছে । অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে কেবিনের ভিতরে ঢুকলাম।

কেবিনের ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি বের হয়ে হচ্ছে আর চোখ দুটি অন্ধকার হয়ে আসতেছে। এ আমি কাকে দেখতেছি ? আমার আম্মুকে চিনাই যাচ্ছে না। চেহারাটা শুকিয়ে গেছে, মনে হচ্ছে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। হয়তোবা আমার জন্য কান্না করতে করতে চোখের নিচে এমন দাগ পড়েছে।
বেডের সঙ্গে লেপ্টে শুয়ে আছে।

আম্মুর একপাশে ভাইয়া আর অন্য পাশে ভাবি বসে আছে। ভাবির কোলে একটা ছেলে সন্তান। মনে হয় এটা তাদের ছেলে।

মাহফুজ ভাই আম্মুকে চেকআপ করার জন্য আম্মু কাছে গেলেন। ভাইয়া আর ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ সাইম ভাই আপনি আর ভাবি একটু বাহিরে যাবেন প্লিজ। রুগির চেকআপ করবো তো আপনারা বাইরে গেলে ভালো হতো।

সাইম আহম্মেদঃ আচ্ছা ভাই ঠিক আছে যাচ্ছি।

ভাইয়া আর ভাবি কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। তবে যাওয়ার সময় ভাইয়া আমার দিকে কয়েক বার সন্দেহের চোখে তাকালো।

ভাইয়া আর ভাবী যাওয়ার পরে আমি দরজাটা ভালোভাবে লাগিয়ে দিয়ে আসলাম। আমি লাগাতে যাওয়ার কারণ হলো, যাতে সবাই বুঝতে পারে আমি একজন নার্স। আর দরজা লাগানোর মাধ্যমে নার্সের কাজটাই প্রকাশ করলাম।

আম্মুর মাথার কাছে যায়ে বসলাম। আম্মু এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো । আমি আম্মুর কপালে হাত বুলিয়ে দিতেই আম্মু জেগে গেলো। আম্মু চোখ খুলেই বলতে লাগলোঃ বাবা সাহিদ কই তুই,,? একবার আমার কাছে আয় বাবা। এসে আম্মু বলে ডাক। কোথায় গেলি তুই?😭😭😭

আম্মু এসব বলতেছে আর চোখ দিয়ে পানি ফেলতেছে। আমিও নিরবে কান্না করতেছি। আম্মু চোখ বন্ধ করে আবার বলতে লাগলোঃ সাহিদ বাবা আমি আর বাঁচবো না বাবা, কোথায় আছিস একবার আমার কোলে আয় বাবা। এই তোরা কোথায় আছিস আমার সাহিদ আমার কোলে এনে,,,

হঠাৎ আম্মু কথা বলা বন্ধ করে দিলো কেন। মাহফুজ ভাই দেখে বললো সেন্সলেস হয়েগেছে।

এরপরে আমি আম্মুকে একবার দেখে আবার মাহফুজ ভাই আর সিফাতের সাথে মাহফুজ ভাইয়ের কেবিনে আসলাম।কেবিনে এসে সোফায় ধপাস করে বসে পড়লাম। এমন পরিস্থিতিতে কেমন করে আমার আম্মুকে রেখে চলে যাবো। চোখের সামনে আমার জন্মদাত্রীর এমন অবস্থা কেমন করে সহ্য করি। আমিতো আর কিছুই করতে পারবোনা। সেই অধিকার আমার নেই। দূর থেকেই আমাকে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজাতে হবে।

আমি মাহফুজ ভাইয়াকে বললামঃ ভাইয়া আমার আম্মুর অবস্থা এখন কেমন?

মাহফুজ ভাইয়াঃ আসলে সাহিদ তোমার আম্মুর অবস্থা এখন বেশ খারাপ। তুমি এখানে চলে এসো। বলা তো যায়না কখন কি হয়। আর তোমার আম্মুর এই অবস্থা শুধু তোমার জন্য চিন্তা করে। তাই বলি কি ভাই তুমি আবার তোমার মায়ের কোলে ফিরে এসো।

সিফাতঃ হ্যাঁ সাহিদ তুই ফিরে আয়। দেখলি তো আজকে আন্টি তোর জন্য কেমন আচরণ করলো। শুধু আজকে নয় আন্টিকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে প্রতিদিন আমি দেখতে আসতাম। আর প্রতিদিনই আন্টি তোর জন্য কান্না করতো। প্লিজ ভাই সব কিছু ভুলে আবার ফিরে আয়। মানুষের তো ভুল হতেই পারে। প্লিজ ভাই তুই চলে আয়।

আমি আর কি বলবো। আমারো তো মন চায় মায়ের কাছে ফিরে এসে সেই ছোট্টবেলার মতো মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থেকে রাখাল ছেলের পিঠা গাছের গল্প শুনতে, সেই আলাউদ্দিনের আশ্চর্যের প্রদিপের গল্প শুনতে, কোলে শুয়ে থেকে চাঁদের সাথে গল্প করতে, মায়ের হাতে ভাত তুলে খাইতে। কিন্তু এক অজানা শক্তি এসে বাঁধা দিচ্ছে।

ওদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার আম্মুর কেবিনে গেলাম। কেবিনে ঢুকে দেখি ভাবি আম্মুর পাশে বসে আছে । আমি প্রেশার চেক করার বাহানায় আম্মুকে দেখে হাসপাতাল থেকে বাইরে আসলাম।

বাহিরে এসে সিফাত কে বলে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। বাসে উঠে সিটে বসতেই ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখি নেহা ফোন দিয়েছে।

কেটে দিয়ে আমি ফোন দিলাম। নেহা রিসিভ করে বললো,,,,
নেহাঃ আসসালামুয়ালাইকুম। ভাইয়া কোথায় আছো?

আমিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাসে উঠেছি।

নেহাঃ ওহহ। কখন তুমি বাসায় পৌছবে ?

আমিঃ সন্ধ্যায়। মিম কোথায় আছে?

নেহাঃ আমার সঙ্গেই আছে। কথা বলবে ?

আমিঃ হুমম দে ?

মিমঃ আততালামুআলাইতুম। বাবাই তোথায় আতো?

আমিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম।বাসে উঠেছি আম্মু। তুমি কি করতেছো?

মিমঃ আমি মামনিল তোলে থুয়ে আতি।

আমিঃ কিহহহ,,,। তোমার মামনি আমার বাসায় কেন?

সামিয়াঃ আমি থাকবো না তো কে থাকবে?

আমিঃ আপনি আমার বাসায় কেন? তারপরে আবার আমার অনুমতি না নিয়ে আর এসবের মানে কি?

সামিয়াঃ বারে আমি আমার হবু স্বামীর বাসায় থাকবো এতে আবার কার অনুমতি লাগবে। আর এসবের মানে তুমি ভালো করেই জানো।

আমিঃ দেখুন এসব বাদ দিন। এসবের আর আশা করেন না। হয়তো আপনারই ভালো হবে।

বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। কথা বলার আর ইচ্ছে নাই। একটু পরে বাস ছেড়ে দিলো। বাস তার আপন গতিতে চলতেছে। আর আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাবতে ছি, আম্মু আমাকে ছাড়া থাকবে কি করে? আম্মুর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারবোনা। আচ্ছা আমি কি ফিরে আসবো? আবার কী তৈরি হবে তাদের সাথে আমার আজ থেকে তিন বছর আগের সেই সম্পর্ক? তাদের হলেও আমার কিন্তু হবে না তাদের প্রতি সেই ভালোবাসা, সেই শ্রদ্ধা।

তবে আম্মুর প্রতি আমার সেই ভালোবাসা সেই শ্রদ্ধা একই থাকবে। বরং তার থেকে বেশিই আম্মুর প্রতি আমার ভালোবাসা টা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, একটা মা তার ছেলেকে কতটা পরিমাণ ভালোবাসে সব সময় তার কথা বলবে, তার চিন্তায় নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে। সব মায়েরাই মনে হয় এমনি হয়। “হে আল্লাহ আপনি আমার আম্মুকে সুস্থতা দান করুন।”

ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলাম ফোনের রিংটোনের আওয়াজে। পকেট থেকে বের করে দেখি রাফি ফোন দিয়েছে।
আমি রিসিভ করলাম।

রাফিঃ হ্যালো সাহিদ তুই নাকি রাজশাহীতে এসেছিস?

আমিঃ হুমম। তুই কখন ফিরবি?(রাফি তার বাবার এক কাজের জন্য সাথে সিলেটে গেছে। যা আমাকে সিফাত বললো)

রাফিঃ আজকে রাতে বের হবো।

আমিঃ ওহহহ।

রাফিঃ তুই আজকে নাহয় আমার বাসায় যা আমি আসতেছি তো।

আমিঃ আরে না,, আমি বাসে উঠেছি। ঢাকায় যাবো।

রাফিঃ আচ্ছা ভালোভাবে যাস।

আমিঃ ঠিক আছে।

ফোন রেখে সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বেশ কিছু সময় ধরে ঘুমালাম। বাসের হেলপারের ডাকে ঘুম ভাঙলো। বাস থেকে নেমে ড্রাইভার আংকেল কে ফোন দিয়ে আসতে বললাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে। তারমানে মাগরিবের আজান হয়েগেছে।

হায় হায় আল্লাহ আপনি আমাকে এতো ঘুম কোথা থেকে দিয়েছেন। পাশের একটা মসজিদে যায়ে নামাজ পড়ে বের হয়ে আসলাম। একটা দোকানে যায়ে আমার মেয়ের জন্য এক বক্স চকলেট আর নেহার জন্য এক প্লেট ফুচকা কিনলাম।

একটু পরে ড্রাইভার আংকেল গাড়ি নিয়ে আসলেন। গাড়িতে উঠে বসে পড়লাম। প্রায় বিশ মিনিট পর বাসায় এসে পৌঁছলাম।

গাড়ি থেকে নেমে দরজার কাছে যায়ে কলিং বেল বাজাতেই নেহা এসে দরজা খুলে দিল। আমি ভিতরে ঢুকে ফুচকা আর চকলেটের বক্স আমার রুমে নিয়ে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি আমার মেয়ে আমার রুমে কি যেন খুঁজেতেছে।

আমি ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললামঃ কি হয়েছে আমার আম্মুটা
কি খুজতেছে?

মিমঃ আমাল তকলেত তোই?

আমি আমার মেয়েকে তার জন্য আনা চকলেটের বক্স টা দিলাম। এটা পেয়ে তো সে খুশিতে লাফাতে শুরু করেছে।

আমি ফুচকার প্যাক টা নেহা দিয়ে দিলাম। নেহাও ফুচকা পেয়ে খুশি যে লাফাতে লাগলো। ওদের কে হাসি খুশি রাখতে পারে আমাকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সুখি মনে হচ্ছে।

যাজ্ঞে, হাসি খুশির মাধ্যমে কেটে গেল রাত টা। সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে গেলাম। কলেজ শেষে সামিয়ার অফিসে গেলাম। সেখানেও নিত্য দিনের ন্যায় একই কথা।
ওদের কে নিয়ে বাসায় আসলাম।

এভাবে কেটে গেল দুই দিন। আজকে প্রিন্সিপাল স্যার বলেছেন আগামী কাল সকাল সাত টায় ট্যুরে যাওয়ার জন্য বাস ছেড়ে দিবে।
সবাইকে কলেজের ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে হবে। আর মিমের যাওয়া নিয়ে কোনো প্রকার ঝামেলা হয়নি। বরং সবাই খুশি হয়েছে।এই রকম একটা কিউটী বাচ্চা প্লাস ফ্রেন্ডের মেয়ে তাদের সাথে যাচ্ছে ভাবা যায়। বলতে গেলে এটা তাদের ভাগ্য।😏😏😏

আজকে বিকালে ঘুম থেকে উঠতেই নেহা বায়না ধরলো আমাকে নিয়ে শপিং মলে যাবে। আমিও আর না বললাম না। কারণ, কালকে এক জায়গায় যাবে কিছু তো কেনাকাটা প্রয়োজন। তাছাড়া আমারও কিছু কেনাকাটা করার ছিল।

সন্ধ্যার আগে আমি, মিম আর নেহা এই তিন জন গাড়ি নিয়ে শপিং মলে গেলাম। আসলে শপিং করতে যাওয়ার সময় বাইক নিয়ে যাতে আমাকে ভালোলাগে না। একাই গেলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু একসাথে দুই তিনজন গেলে সমস্যা। একেতো কয়েক হালি ব্যাগ তার উপর আবার আসতে রাত হবে বা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

গাড়ি পার্ক মিমকে কোলে নিয়ে নেহার হাত ধরে শপিং মলে গেলাম। প্রথমে লেডিস সাইটে গেলাম। ওমা সেখানে যায়ে দেখি আমার EX, ইংলিশ, আমার কিউটির মামনি দাঁড়িয়ে আছে। ওহহ তাহলে নেহা ওকে আমাদের আসার কথা বলেছ।

এরপরে ম্যাম কে নিয়ে দোকানের ভিতরে ঢুকলাম। নেহা আর সামিয়া তাদের শপিং করতে ব্যস্ত।
আমি আর আমার মেয়ে অসহায়ের মত তাদের শপিং করা দেখতেছি। একটু পরে সামিয়া সেল্স ম্যানকে মিমের জন্য কিছু পোশাক দেখাতে বললো।

আমি নেহাকে বললামঃ আপু তোর ফোনটা একটু দে তো।

নেহা আমাকে ওর ফোনটা বের করে দিলো। দেখি ফোনটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। আজ থেকে একবছর আগে এটা ওকে নিয়ে দিয়েছিলাম। আজকে আবার একটা নিয়ে দিবো। চলে গেলাম শাওমির শোরুমে। সেখান থেকে নিচ মডেলের একটা ফোন কিনে লুকিয়ে নিয়ে যায়ে গাড়িতে রাখলাম। সারপ্রাইজ দিবো বলে।

ওও নেহার মোবাইল ফোন যে জন্য নিলাম, সেটা তো করাই হলো না। কল লিস্টে যায়ে দেখি ভাবি নামে সেভ করা একটা নাম্বারে বেশি কথা হয়ে। নাম্বার টা দেখে তো বেহুঁশ হওয়ার মতো অবস্থা। কেননা আমার এই নাম্বার টা হলো আমার EX এর। তারমানে নেহাই সামিয়া কে সব কিছু বলে। দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। সুন্দর যে EX এর নাম্বার টা ব্লাক লিস্টে রাখলাম 😎😎😎😎।

কাজ শেষে চলে আসলাম ওদের কাছে। ওদের এখনো শপিং করা শেষ হয়নি। নেহাকে ওর ফোন দিয়ে দিলাম। আমি আমার প্রয়োজনীয় কিছু কাপড় কিনলাম। ওদের কে নিয়ে একটা জুয়েলারিতে গেলাম। সেখানে যায়ে একটি নেকলেসে আমার নজর আটকে গেল। আমি হেল্প বয়কে এটা প্যাক করে দিতে বললাম। আমি যখন নেকলেসটা প্যাক করে দিতে বলেছিলাম। তখন সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসতেছে।
সে মনে করেছে এটি আমি তার জন্য কিনেছি।

এবার দেখো মজা কেমন লাগে, নেহাকে বললামঃ নেহা এই নেকলেস টা ভালো ভাবে রাখিস তো এটা মিমিকে গিফট করবো।

সাহিদের কথা শুনে সামিয়ার ভিতরে মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিঠাচ্ছে। তবুও সব কিছু নিরবে সহ্য করে নিল। এতো কিছু করার পরেও যদি তাকে সাহিদ কে হারাতে হয়।

নেহাঃ আরে আমাদের ক্লাসের। চিনিস না? কয়েক দিন আগে আমাকে প্রোপোজ করেছিলো। আমি কয়েকদিন সময় চেয়েছিলাম। এখন ভেবেছি ট্যুরে যায়ে এই নেকলেস দিয়ে আমি আবার প্রোপোজ করবো।

সাহিদের কথায় নেহা অবাক হয়ে গেল। নেহা ভাবতেও পারেনি তার ভাই অন্য একজন কে ভালোবাসে। সামিয়া আর এক মূহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে গেল।

আমি অবাক হলাম। কী ব্যাপার এই টুকু কথাতে সামিয়া এতো হার্ট হবে ভাবতেই পারিনি। হলে হবে আমার কী? কেবল তো শুরু।

নেহা আর মিমকে নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় পৌছে ঘড়িতে দেখি রাত নয়টা বেজে গেছে। ভেবেছিলাম কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনার করে আসবো কিন্তু তা আর হলো না। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের বক্স টা নিয়ে নেহার রুমে গেলাম। তবে একটা জিনিস ভাবাচ্ছে গাড়িতে উঠার পর থেকে বাসায় আসার অবধি নেহা আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। মিম গাড়িতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। ওকে কোলে করে নিয়ে এসে আমার বিছানায় শুয়ে দিলাম।

নেহার রুমে যায়ে দেখি নেহা শুয়ে আছে। আমি নেহাকে ডাক দিলাম।
আমিঃ আপু তোর কী শরির খারাপ?

আমার কথা শুনে নেহা ওঠে বসে পড়লো।
নেহাঃ না ভাইয়া ঠিক আছি।

আমিঃ তাহলে?

নেহাঃ এমনি শুয়ে আছি।

আমিঃ ওওও,, এই নে এটা (ফোনের বক্স টা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে) তোর জন্য ।

নেহাঃ কি আছে এখানে?

আমিঃ মোবাইল ফোন।

নেহাঃ আচ্ছা রেখে দেও।

নেহার এমন আচরণে আমি অবাক হয়ে গেলাম। নেহাকে বললামঃ কি হয়েছে আপু তোর?

নেহাঃ ভাইয়া তুমি কি সত্যিই মিমিকে ভালোবাসো?

ওহহ এতক্ষণে বুঝতে পারলাম এই ব্যাপার। হায়রে ভাবি পাগলি যে,,।
আমিঃ কেন?(না জানার ভান করে)

নেহাঃ এমনি বলতেছি।

আমি মুচকি হেসে বললামঃ সেটা পরে বুঝতে পারবি।
চল ডিনার করবি।

নেহাঃ আমি খাবো না। তুমি খাও।

আমিঃ সেটা বললে হবে না তুইও চল আমার সাথে।

শেষে আমার জোরাজুরিতে ডিনার করার জন্য রাজি হলো।
অতঃপর দুই ভাইবোন মিলে ডিনার করে যে যার রুমে গেলাম।
আমি রুমে এসে আমার এবং আমার মেয়ের তিন দিনের প্রয়োজনীয় ড্রেস গুলো ল্যাকেজে ভরে নিলাম।

_-_-_-_-_-_
নেহা ডিনার করে রুমে এসে সামিয়া কে ফোন দিলো।
নেহাঃ হ্যালো ভাবি কী করতেছো?

সামিয়াঃ এইতো বসে আছি। তুমি?(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)

নেহাঃ ডিনার করে রুমে আসলাম।

সামিয়াঃ ভালো।

নেহাঃ তোমার কন্ঠ এমন লাগতেছে কেন? কান্না করতেছো?

সামিয়াঃ কি করবো বলো, যার জন্য এতো কিছু করলাম। সে আজ অন্য কারো।(কান্না করতে করতে)

নেহাঃ ভাবি তোমার ভেঙে পড়লে চলবে না। ভাইয়া হয়তো তোমাকে হার্ট করার জন্য কথাটা বলেছে। তাছাড়া আমি ভাইয়াকে চিনি। কোনো দিন আমার কাছে কোন কথা লুকাইনি । মিমি যদি সত্যিই প্রোপোজ করতো তাহলে আমাকে আগেই বলতো। বুঝেছো। তুমি লেগে থেকো।

সামিয়াঃ ঠিক আছে। পরে কথা হবে।

নেহার কথা শুনে সামিয়া কিছুটা শান্তি পেলো।

ফজরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে [ফ্রি মাইন্ড] নামাজ নেহা আর মিমকে ডেকে তুললাম। মিমকে ফ্রেশ করে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে আসলাম। নেহা এখনো ডাইং টেবিলে আসে নি।

একটু পরে নেহা আসলো। গত কাল বুয়াকে কিছু খাবার রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিতে বলেছিলাম।

তিন জন একসাথে নাস্তা করে রুমে এসে ড্রেসআপ করে বের হয়ে গাড়িতে এসে বসলাম। এর পরে ড্রাইভার আংকেল আমাদের যে কলেজে নিয়ে যায়ে নামিয়ে দিলেন।

কলেজে পৌছে ঘড়িতে দেখি ৬.৩০ মিনিট বেজেছে। নেহা নেহার ফ্রেন্ড দের কাছে গেলো। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আমার বন্ধুদের কাছে যেতেই প্রিন্সিপাল স্যার সকলকে গাড়িতে উঠার জন্য বললেন।সিটি লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত করা হয়েছে। একটু পরে সামিয়া এসে আমার কাছ থেকে মিমকে নিয়ে গেল।

মিমকে নিয়ে যাওয়ার পরেই ইকোনমিক স্যার এসে আমাকে বললেন,,
স্যারঃ এই লিস্ট নিয়ে সকল বাসে যায়ে দেখো তো সবাই ঠিক মতো উঠেছে কিনা?

আমিঃ ঠিক আছে স্যার।

এরপরে সকল বাসে যায়ে দেখে আসলাম। সবাই ঠিক ঠাকই বসেছে। মোট ১১ টি বাস যাচ্ছে আমাদের কলেজ থেকে। অনেক কয় বছর পর আমাদের কলেজ থেকে ট্যুরে যাচ্ছে এই জন্য স্টুডেন্টদের যাওয়ার আগ্রহ টা বেশি।

যাজ্ঞে, আমি আমাদের ডিপার্টমেন্টের জন্য যেই বাস ফিক্সড করা হয়েছে সেটাই গেলাম। ওমা গাড়িতে উঠে দেখি আমার বন্ধুরা সহ সবাই নিজ নিজ সিটে বসে পড়েছে। সব সিট পূর্ণ হয়ে গেছে। আমার পকেট থেকে টিকেটের কার্ডটা বের করে দেখি ৩৬ নাম্বার সিটটা আমার।

৩৬ নাম্বার সিটে যায়ে তো আমি অবাক। কেননা আমার পাশের সিটেই বসে আছে,,,,,,,

(চলবে)

💘💘 কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন💘💘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here