স্বর্নাভ_সুখানুভূতি দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ,(পর্ব-১৯)

#স্বর্নাভ_সুখানুভূতি দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ,(পর্ব-১৯)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

রোদ্দুরে প্রজ্জ্বলিত প্রভাত। টাইয়ের নাট টাইট করতে করতে মায়ের ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াল জাওয়াদ। খোলা দরজায় ঝুলছে পর্দা। পর্দার ওপাশ থেকে মৃদুস্বরে সালাম দিল,
‘আসসালামু আলাইকুম মা। আসব?’

মায়মুনা আধশোয়া হয়ে বসে আছেন, জয়নাল আবেদ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছেন। ছেলের গলা শুনে চোখ তুলে তাকালেন দুইজনেই। মায়মুনা ধীর স্বরে বললেন, ‘আয়।’

জাওয়াদ ভেতরে ঢুকল। বাবার উপস্থিতি দেখে চমকাল বেশ। তার ভাবনা ছিল বাবা এতক্ষণে বেরিয়ে গেছেন। মাকে একান্তে কিছু কথা বলবার মননে এসেছে, এখন বাবার সামনে কথাগুলো বলতে ইতস্ততবোধ হচ্ছে তার। বিস্মিত ঠেলে সালাম দিল, ‘আসসালামু আলাইকুম, বাবা।’

ছেলের বিনম্র আচরণে জয়নাল আবেদীনের মনে প্রশান্তি বয়ে গেল। হেসে বললেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কী অবস্থা বাবা?’
‘এই তো ভালো। বলছি বাবা, এবার আপনার অবসরে যাওয়া উচিত।’

জয়নাল আবেদীন ভ্রু কুঁচকালেন, ‘হঠাৎ রিটায়ার্ডের কথা আসল কেন?’

জাওয়াদের স্বর থেকে নম্রতা সরল না।
‘হঠাৎ না বাবা। আমি বেশ কিছুদিন যাবত ভাবছি ব্যাপারটা নিয়ে। সারাবছর তো আমাদের জন্য খেটে গেলেন। এবার আমাদের সুযোগ দিন। আমি আর ভাই তো রোজকার করছি। সংসার চালানোর দায়িত্ব এবার আমরা হাতে নিই। এই বয়সে এত কষ্ট করে সকাল সন্ধ্যা অফিস করার দরকার নেই বাবা।’

জয়নাল আবেদীন হেসে ফেললেন। স্ত্রীর পানে চেয়ে বললেন, ‘শুনছো, তোমার ছেলে কী বলছে?’

মায়মুনার চোখে আনন্দ। ছেলের কথায় খুশির আভা ছড়িয়েছে তার মনে। তিনি ও হেসে বললেন, ‘ছেলে যখন বলছে, তখন ছেড়ে দাও। ‘

জাওয়াদ মায়ের সায় পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে বলল, ‘ মা ও বলছে। বাবা আজই আপনি অফিসে গিয়ে কথা বলবেন। দুই ছেলে আয় করার পর ও বৃদ্ধ বয়সে বাবার পরিশ্রম করা শোভা পায় না, বাবা। এটা সন্তান হিসেবে আমাদের জন্য ব্যর্থ আর অপমানজনক ব্যাপার। ‘

জয়নাল আবেদীন ছেলের কাধ চাপড়ালেন। তার ছেলে এত দায়িত্বশীল হয়ে গেছে! বললেন, ‘একটা কর্মজীবী পুরুষের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর অধ্যায় হলো অবসরের পরের সময়টা। কাজের অভ্যাস হওয়ার পর বেকার থাকা যায় না, একাকিত্ব ঝেঁকে বসে। আমি পারব না অবসরের অসহায় সময়টা পার করতে। তাই এখনো অবসর নিয়ে ভাবছি না।’

জাওয়ার তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল না। খানিক ভাবল, তারপর বলল, ‘ আমি আপনাদের হজ্জ্বে পাঠানোর কথা ভাবছিলাম। সারাজীবন তো কাজের পেছনে ছুটতে গিয়ে নামাজ রোজা ছাড়া ইবাদত করা হয়নি। এবার হজ্জ্ব করে আসুন। তারপর দুনিয়াবি চিন্তা বাদ দিয়ে ইবাদতে মনোনিবেশ করবেন। কাজের জন্য তো ঘুরাঘুরিও হয়নি, এখন মাকে নিয়ে ইচ্ছেমতো ঘুরবেন, জীবককে উপভোগ করবেন আর পরিবারকে সময় দিবেন। টাকার পয়সার ব্যাপার আমরা দেখব। আপনি শুধু জীবন উপভোগ করবেন। আর আমরা থাকতে আপনি একাবোধ করবেন না। তাও যদি করেন তবে আমি আপনার অবসর কাটানোর একটা কাজের ব্যাবস্থা করে দিব। তবুও এই সকাল সন্ধ্যার চাকরি থেকে অবসর নিন। প্লিজ বাবা!’

ছেলের পরিকল্পনা শুনে জয়নাল আবেদীনের চোখে পানি এসে গেল। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে দেখলেন তিনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন ছেলের পানে। হজ্জ্বের স্বপ্ন দেখাল ছেলে! এই স্বপ্ন তো তিনি নিজে এখনও দেখতে পারেননি। ছেলের কাধে থাকা জয়নাল আবেদীনের হাতটা কেঁপে উঠল। তার সেই অবাধ্য, দায়হীন ছেলেটা কত আদর্শ ছেলে হয়ে গেল! বাবার দায়িত্ব কাধে নিচ্ছে, যে স্বপ্নটা তিনি মনে মনে এঁকে রেখেছেন সেই স্বপ্ন পূরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। একটা বাবার জন্য কত সুখকর ব্যাপারটা! জয়নাল আবেদীনের ইচ্ছে হলো ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিতে। কিন্তু তিনি পারলেন না, বাস্তবতায় অনেক কিছু পারা যায় না। তার চোখ ভিজে আসছে। সেই কান্না ছেলেকে দেখাতে চাইলেন না। ব্যাগ হাতে নিয়ে ধীর স্বরে বললেন,
‘আমি ভেবে দেখব।’ বলে অফিসের জন্য রওনা হলেন। লিফটে উঠতেই চোখ বেয়ে জল গড়াতে লাগল। মুখে হাসির রেখা। গর্বে ফুলে উঠছে বুক। ছেলেটাকে তিনি মানুষ করতে না পারলেও ছেলেটা মানুষ হয়ে গেছে। চমৎকার এবং আদর্শ মানুষ। এক বাবার আর কী চাই?

বাবার যাবার পানে চেয়ে ভ্রু কুঁচকাল জাওয়াদ, ‘বাবা ওভাবে চলে গেল কেন, মা?’

মায়মুনা আঁচলে চোখ মুছে হাসলেন। বাবা মায়ের এই অনুভূতি বাবা মা ছাড়া কেউ অনুভব করতে পারবে না। তিনি প্রসঙ্গ ঘুরালেন, ‘ তোর অফিসের দেরি হচ্ছে না?’
জাওয়াদ মায়ের পাশে বসে বলল, ‘ না, সময় আছে এখনো। তোমার সাথে কিছু কথা আছে ।’

মায়মুনা আগ্রহী হলেন, ‘কোন ব্যাপারে?’

জাওয়াদ তৎক্ষনাৎ কিছু বলল না। কিছু সময় নিয়ে ধীর স্বরে বলল, ‘ আমার পর্দার ব্যাপারে।’
মায়মুনা ভ্রু কুঁচকালেন, ‘তোর আবার কিসের পর্দা?’

পুরুষের পর্দা সমন্ধে মুশরাফার বলা কথাগুলো মাকে বলল জাওয়াদ। তারপর বলল, ‘বাইরের কোন নারীকে আমি খুব সহজে এড়িয়ে যেতে পারি। কাজের হলে মাথা নিচু করে এক দুই কথা কাজ সেরে পাশ কাটতে পারি। তারজন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হয়না। এ ব্যাপারে আমি স্বাধীন। কিন্তু সমস্যা হলো ঘরের পর্দা নিয়ে। ঘরের থেকে কিভাবে পর্দা করব মা? আমি পারছি না,এই লুকোচুরি খেলতে। ‘ জাওয়াদকে ভীষণ অসহায় দেখাল। মায়মুনা প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে বললেন, ‘ঘরের পর্দা বলতে? কার থেকে পর্দা করবি?’

‘ভাবি গায়রে মাহরম, মা। মুশরাফার যেমন জিশানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ জায়েজ নেই, তেমন আমারও ভাবির সাথে দেখা সাক্ষাৎ জায়েজ নেই। সবচেয়ে কঠোর গুনাহ দেবর-ভাবির সম্পর্কের পর্দা লঙ্ঘনকারীদের। ইসলাম শুধু ভাবিকে নয়, দেবরকেও ভাবি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে, পর্দা করতে বলেছে।এই ভয়টা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, কিছু আমি পর্দা করতে পারছি না। ঘর থেকে বের হলে দেখা হচ্ছে, খেতে গিয়ে, উঠতে বসতে। নিজেকে অসহায় লাগছে মা, কী করতে পারি বলো তো!’ জাওয়াদের চোখে মুখে নিরীহ ভাব।

মায়মুনা কপালে চিন্তার রেখা টেনে ভাবতে বসলেন। কিন্তু কোন সুরাহা করতে পারলেন না। কাকন পর্দা করে না। এমন না যে দেবরের প্রতি সে দুর্বল। বরং সে স্বাধীনভাবে চলতে পছন্দ করে। তাকে বলে কয়ে ও পর্দা করানো যাবে না। আর পর্দা জাওয়াদ করবে, সে ক্ষেত্রে কাকনকে আড়াল হতে বলতে পারবেন না তিনি। এদিকে ছেলেমানুষ জাওয়াদ, সে তো আর ঢেকেঢুকে চলতে পারবেনা। রুম থেকে বের হলে দেখা হবেই। খাবারটা সবাই একসাথে খায়, তখন ও দেখা হবে। এর প্রতিকার কী? ছেলেকে কী বলবেন তিনি! কোন কূল করতে না পেরে মায়মুনা বললেন,
‘আমার তো কিছু মাথায় আসছে না।’

জাওয়াদ বলল,’ , মুশরাফা মেয়ে হয়ে লুকিয়ে চুবিয়ে পর্দা করতে পারলেও আমি পারব না। প্রথমত, আমি পুরুষমানুষ। আমার পর্দা শরীরী নয়, চোখের। দ্বিতীয় হলো, এটা আমার মত বিরুদ্ধ। আমি ইসলামের বিধান মানব, কোন অন্যায় করব না যে লজ্জা পাব বা দ্বিধা করব। আমার ওসব রাখঢাক নেই। যা করার বলার তা সরাসরি। কোন বাহানা দিতে পারব না। খেতে ডাকলে হয়তো আমি সরাসরি বলে দিতে পারি। তখন ব্যাপারে সমীচীন হবে না। তাই অন্য সমাধান করতে চাইছি। এখানে তোমার সাহায্য লাগবে ।’

মায়মুনা ভ্রু নাড়ালেন, ‘কী সাহায্য? ‘

‘অনিকদের বাসার নিয়ম চালু করতে চাইছি আমি। বাবা ভাইয়াকে আমি বুঝিয়ে বলব,তুমি শুধু ভাবিকে বলবে। এটা ছাড়া কোন পথ দেখছি না আমি।আল্লাহ আমাকে পথ দেখাক।’

মায়মুনা কেন যেন এই নিয়মে মত দিলে পারলেন না। তিনি উদাস হলেন। তারপর বললেন, ‘আচ্ছা এটা নিয়ে আমি ভাবব।’

জাওয়াদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হেসে বলল, ‘ আল্লাহ আমাকে জান্নাত দিলে, আমি তোমাকে নেয়া ছাড়া জান্নাতে যাব না ইন শা আল্লাহ। একটু হেল্প করো, প্লিজ!’

কীভাবে লোভ দেখাচ্ছে ছেলে! মায়মুনা হেসে ফেললেন, ‘তোর অফিসের দেরি হচ্ছে, যা এবার।’

জাওয়াদ উঠে দাঁড়াল। মায়মুনা ডাকলেন, ‘শুন, কাউকে কিছু বলিস না। আমি তোর বাবার সাথে কথা বলব। দুজন মিলে ভেবে দেখব কী করা যায়। তারপর যা বলার আমি বলব। নিশ্চিন্তে যা, এখন।’

জাওয়াদকে আনন্দিত দেখাল। চমৎকার হাসল সে। বলল, ‘ উপরে আল্লাহ আছেন, নিচে উছিলা হিসেবে আমার মা আছেন। আমার চিন্তা কী! যাই মা।’

জাওয়াদ বিদায় নিয়ে চলে গেল। মায়মুনা চৌকাঠে তাকিয়ে রইলেন। আকস্মিক হেসে উঠলেন, চোখ বেয়ে দু’ফোঁটা জ্বল গড়াল। সন্তানের উন্নতি দেখতে এত আনন্দ, এত সুখ কেন!

শেষ বিকেলের কোমল আলোয় ফুটপাত ধরে হাঁটছে জাওয়াদ মুশরাফা। সেই সাথে গল্পের ট্রেন চলছে পাল্লা দিয়ে। আকস্মিক তারিফ এসে দাঁড়াল ওদের সামনে। মুশরাফা চমকে তাকাল ভাইয়ের দিকে। তারিফ এক গাল হেসে আদুরে সুরে ডাকল, ‘ কেমন আছিস, মুশি?’
মুশরাফা অবাক হয়ে বলল, ‘তুমি সত্যিই এসেছো ভাইয়া?’
তারিফ আবার হাসল। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, তোকে নিতে এসেছি। বাসায় চল মুশি। কতদিন আমরা একসাথে খাই না, আড্ডা দিই না! ‘

মুশরাফা অসাড় দাঁড়িয়ে রইল। তারিফ এসে ওর হাত ধরে বলল, ‘ তোর পোশাক আশাকে আমার কিছু যায় আসে না, তুই আমার বোন এটাই মূল কথা। আগের ভুল আর হবে না, কেউ তোকে কিচ্ছুটি বলবে না। ভাইয়া আছি না? ভয় কিসের? চল।’

আকস্মিক ঘুম ভেঙে গেল মুশরাফার। বিস্ময় নিয়ে চোখ খুলল। এটা স্বপ্ন ছিল! কী সুন্দর স্বপ্ন! এমনটা হবে আদৌ? বাস্তবে না হোক, স্বপ্নে সুখানুভূতি তো হলো। এ ও কম কী! এমন চমৎকার একটা স্বপ্ন দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেল মুশরাফা। হাতড়ে ফোন খুঁজল। জাওয়াদকে জানাতে হবে, সুন্দর স্বপ্ন শুভাকাঙ্ক্ষীকে জানাতে হয়।
কিন্তু ফোন পেল না। উঠে বসে খুঁজল। ফোনের দেখা নেই। সাহরি খেয়ে এখানে রেখে ঘুমিয়েছিল। গেল কই? খুঁজতে গিয়ে নিজের ফোনের বদলে জাওয়াদের ফোন পেল। মুশরাফা চাপা শ্বাস ফেলল। তারপর নিজের নাম্বারে ডায়াল করল। ওর ভাবনাকে ঠিক প্রমাণ করে ফোন তুলল জাওয়াদ। মুশরাফা সালাম দিয়ে বলল,
‘আজও তাড়াহুড়ায় আমার ফোন নিয়ে গেছেন?’
জাওয়াদ হেসে বলল,
‘বউয়ের মতন বউয়ের ফোন ও আমার কাছেপাশে থাকতে চায়। আমি দয়ালু মানুষ, বউকে তো আর প্যাকেট করে পকেটে ভরে আনতে পারি না, তাই বউয়ের আগ্রহী ফোনকেই নিয়ে এসেছি। ‘

মুশরাফা আবার হেসে ফেলল, ‘ বউয়ের ফোনকেই তবে বুকপকেটে আটকে রাখেন। বউ টউ বাদ।’

‘তোমার জেলাসনেস তো জড়পদার্থ ও ছাড় দিচ্ছে না রাফা। নিজের ফোনের উপর ও জেলাস! সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার। ‘ জাওয়াদের হাসি বাড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। মুশরাফা বলল,
‘শুনুন না।’
‘ শুনান দেখি।’ জাওয়াদ হাসি থামাল। মুশরাফা উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘আজ চমৎকার একটা স্বপ্ন দেখেছি।’
জাওয়াদ আগ্রহী প্রকাশ করে বলল, ‘কী স্বপ্ন দেখলে?’

মুশরাফা স্বপ্নের বিবরণ দিয়ে প্রাণোচ্ছল স্বরে বলল, ‘কী সুন্দর না, স্বপ্নটা? আমার এত আনন্দ লাগছে!’

ফোনের ওপাশে জাওয়াদ মৃদু হাসল। আজ রাখঢাক করল না। দৃঢ় স্বরে বলল, ‘আল্লাহ শীঘ্রই তোমার স্বপ্ন করবেন। ‘
মুশরাফা বোধহয় জাওয়াদ থেকে কথাটা আশা করেনি। অবাকই হলো সে। বিস্ময় বাড়ল জাওয়াদের দৃঢ়তা দেখে। লোকটা এত নিশ্চিত হচ্ছে কিভাবে? সে কি মেনে নিয়েছে বা কিছুর ইঙ্গিত পেয়েছে? মুশরাফা ভ্রু কুঁচকাল, ‘আপনি এত নিশ্চিত হচ্ছেন কিভাবে? ‘

আজ হাদিস মুশরাফা নয় জাওয়াদ শুনাল। নম্র, শীতল স্বরে, ‘আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন দোয়া করে তখন সে যেন এরূপ না বলে, যদি তুমি চাও (তবে আমার দোয়া কবুল করো)। বরং সে যেন দৃঢ়তার সাথে এবং পরম আগ্রহভরে দোয়া করে। কেননা কিছু দান করা আল্লাহর কাছে বিরাট কিছু নয়। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, আওয়া নাসাঈ)’

পরপরই বলল, ‘ স্বপ্নের শ্রোতা স্বপ্ন শুনে যেমনটা আশা করেন তেমনটা হয়। ইন শা আল্লাহ হবে। আমি মন থেকে চাইছি হোক।’

হাদিস শুনে মুশরাফার মনে প্রশান্তি বয়ে গেল। লোকটা আজকাল তাকে হাদিস শুনায়, ব্যাপারটা সুন্দর, সুখবহ। সে হেসে বলল,
‘সুন্দর হাদিস। জাযাক-আল্লাহু খায়রান। আল্লাহ আপনার আশা পূরণ করুক।’

‘আমিন।’

‘আমি আপনাকে ঠিক বুঝতে পারিনা। যখন আমি আপনার কোমলতা আশা করি, তখন আপনি কঠোর হন। আবার যখন ভাবি আপনি হয়তো এখন কঠোর হবে, তখন আপনি কোমল হন।’ হাসি থামিয়ে বলল মুশরাফা।

ইঙ্গিতটা ঠিকই ধরতে পারল জাওয়াদ। সে ও উত্তর দিল, ‘ তোমার ফ্যামিলির ব্যাপারে আমার কিছু শর্ত আছে। শর্ত পূরণ হলে তুমি এবং তারা উন্মুক্ত। তখন আমি কোমল হবো। আর না হলে কঠোর। তবে আমি সবসময় চাইবো, তোমার অপূর্ণতারা পূর্ণতা পাক। এতটুকুই। ‘

সহজ কথা বেশ প্যাঁচিয়ে বলল জাওয়াদ। এতে মুশরাফা বুঝতে পারল না, কিছু বলার সু্যোগ ও পেল না। জাওয়াদ ফোন রেখে দিল। মুশরাফা ওর কথা বিশ্লেষণ করতে বসল। জাওয়াদ ডুবল কাজে। ব্যাঘাত ঘটল অপ্রত্যাশিত কলে। বুক পকেটের ফোনটা বাজছে। ফোনটা ওর নয়, মুশরাফার। একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসছে। জাওয়াদ নাম্বারটা মনোযোগ দিয়ে দেখল। লাস্ট ডিজিট দেখে চিনতে পারল, এটা তারিফের নাম্বার। মামার ফোনে দেখেছিল। তারিফ ফোন দিচ্ছে! জাওয়াদ ফোনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাড়াল, ‘ এত অল্পতেই বোনের চিন্তায় অস্থির হলে চলবে না, শালাবাবু। ধৈর্য ধরুন, এখন এটাই আপনাদের একমাত্র সম্বল। আগে বোনজামাইয়ের সাথে বোঝাপড়া শেষ করুন, তারপর বোন অবধি যাবার অনুমতি পাবেন। ‘

ফোন রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ভাগ্যিস আসার সময় মনে করে মুশরাফার ফোন নিয়ে এসেছিল। নয়তো কলটা মুশরাফার হাতে পড়ত। জল গড়াবার আগেই ঘোলাটে হয়ে যেত।

ফোনটা বেজে যাচ্ছে অনবরত। একবার দুইবার, কয়েকবার। তারপর এলো বার্তা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here