ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:৯

#ভয়ানক_ভালোবাসা,পার্ট:৯
#Writer:#Meheruma_Imtaz_Raya(S.Q)

মুহিব আর বাকি রা সবাই রুদ্রের বাড়ির সামনে এলো , মুহিব কলিং বেল বাজালো কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে ফেললো তারপর যা দেখলো তা দেখে সবাই অবাক হলো কারণ পুরো বাড়ি ফাঁকা । পুরো বাড়ি তল্লাশি করার পর রিধি অথবা রুদ্রের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি ,তবে এখানে কেউ যে ছিলো সেটা বাড়ির পরিবেশ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো ,

– তীরে এসে তরী ডুবে গেলো ( মাহির )
-হ্যা রুদ্র হয়তো আগে থেকেই আমাদের এখানে আসার খবরটা পেয়ে গিয়েছিলো ( মুহিব)
-আর একটুর জন্য ওকে আমরা ধরতে পারলাম না ( মিরাজ )
– আমি হাল ছারবো না ( মুহিব)
– আমি যদি ভুল না হই তাহলে রুদ্র এখান থেকে বেশি দূরে যায়নি (মিরাজ)
– অফিসার মাহির ,আপনি প্লিজ কিছু একটা করুন (মুহিব)
– আমি আমার থানায় খবর পাঠাচ্ছি (মাহির)
মাহির তারপর চলে গেলো ,
মিরাজ বাড়ির পেছনের দিকে গিয়ে দেখলো সেখানের দরজাটা টা খোলা,
মুহিব বাড়ি টা ঘুরতে ঘুরতে সেই রুমে গেলো যেই রুমে রিধি এতদিন ছিলো । মুহিব রুমে ঢুকেই অবাক হলো কারণ পুরো রুম জুড়ে রিধির ছবি রয়েছে ।মুহিব মিরাজ কে ডাক দিলো ,
– মিরাজ ,
-হ্যা ভাইয়া ,
-এদিকে এসো ,
মিরাজ রুমে ঢোকার পর নিজেও রিধির এতো ছবি দেখে অবাক হলো ,
-মুহিব ভাইয়া এগুলো কি? আমাদের বাসায়ও মনে হয় রিধিপুর এতো ছবি নেই যতোটা এখানে আছে ( অবাক হয়ে)
– রুদ্র পুরোপুরি একটা সাইকো (রাগান্বিত কন্ঠে)
-আসলেই ,নয়তো কেউ এমন করতে পারে ।বাড়ির পেছনের দরজাটা খোলা ,আমি ভুল না রুদ্র রিধিপুকে নিয়ে ওখান দিয়েই পালিয়েছে ,
– আমি যদি ওকে একবার সামনে পাই তাহলে এবার ওকে আর জীবিত ছারবো না ( রাগান্বিত কন্ঠে)

– আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না মুহিব, রুদ্র কে আইন শাস্তি দিবে( মাহির )
– আমার আইনের উপর কোনো বিশ্বাস নেই ,তার আগের বার রুদ্রের বাবা নিজের পাওয়ার এর অপব্যবহার করে রুদ্র কে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলো ,আমরা তো মামলা করেছিলাম কিন্তু কোনো লাভ হয়নি ,(মুহিব)
– কিন্তু এবার আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি রুদ্রকে আইনে শাস্তি দিবে , রুদ্র নিজের কর্মফল ভোগ করবে ,( মাহির)
-মুহিব ভাইয়া তুমি একটু মাথা ঠান্ডা করো ( মিরাজ)
– সিরিয়াসলি মিরাজ ? তুমি আমাকে শান্ত হতে বলছো ? আমরা কেউ জানি না রিধি কে রুদ্র এখন কিরকম অবস্থায় রেখেছে ,( মুহিব)
– মুহিব ভাইয়া অফিসার মাহির তো বললো যে উনি এবার রুদ্রের শাস্তির ব্যবস্থা করবে ,আমরা আরেকবার আইনের উপর ভরসা করে দেখি ( মিরাজ)
-হুম (মুহিব)
– আমি থানায় খবর পাঠিয়েছি আশা করি খুব শিঘ্রই আমরা রুদ্র কে ধরতে পারবো( মাহির )

এদিকে,,

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আছে রিধি ,আর তার সামনেই বসে আছে রুদ্র ,
– জানো রিধি ওরা আবারও তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে এসেছিলো কিন্তু এইবার আমি আর আগের বারের মতো ভুল করিনি ,ভাগ্যিস আমার লোকেরা আমাকে খবর দিয়েছিলো ,রুদ্র ৩ ঘন্টা আগের কথা ভাবতে লাগলো ,

ফ্লেসব্যাক ,,

মুহিবরা যখন নাসরিন কে নিয়ে রুদ্রের বাড়ির উদ্দেশ্যে আসছিলো তখনি রুদ্রের একজন গোপন লোক রুদ্র কে খবর দেয় । খবর পাওয়ার সাথে সাথেই রুদ্রের মাথা কাজ করছিলো না কি করবে ,তখনি তার মাথায় বুদ্ধি এলো , এবং সে রিধির খাবারে ঘুমের ঔষুধ মেশানোর পরিকল্পনা করলো । পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে রিধি যখন খাবারের জন্য রুদ্র কে ডাকতে গিয়েছিলো তখন রুদ্র টেবিলে কেটে রাখা লেবু গুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলো। এরপর খেতে বসার পর লেবুর অযুহাত দেখিয়ে রিধিকে রান্না ঘরে পাঠায় তারপর সেই সুযোগে রিধির খাবারে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়ে দেয় ।তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিধি যখন ঘুমিয়ে পরে তখন রুদ্র বাহিরে গাড়ির আওয়াজ পায় ,সে বুঝতে পারে মুহিব রা চলে এসেছে তাই তারাতাড়ি করে রিধি কে নিয়ে বাড়ির পেছনের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যায় ,বাড়ির পেছনে আগে থেকেই গাড়ি রেডি করা ছিলো তাই বেশি কষ্ট করতে হয়নি ।

বর্তমান ,,

– তোমাকে যতবার ওরা আমার থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করবে আমিও ততবার তোমাকে আমার কাছে যত্ন করে রেখে দিবো , ভালোবাসি তোমায় রিধি। আর যদি ওই মুহিব বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে ওকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে আমি ১বারও ভাববো না,তোমার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি সব ,তোমার আর আমার মাঝে যদি কেউ আসার চেষ্টা করে তাহলে তাঁর পরিণাম খুব খারাপ হবে ,,

সকাল ৭টা,

ঘুম থেকে উঠার পর নিজেকে নতুন এক জায়গায় আবিষ্কার করায় একটু ঘাবড়ে গেলো রিধি । রিধি গতকাল রাতের কথা মনে করার চেষ্টা করলো ,
– গতকাল হঠাৎ এতো ঘুম পাচ্ছিলো কেনো আমার ? অস্বাভাবিক ঘুম আসছিলো , কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা আমি এখন কোথায় ?
রিধি রুম টার দিকে তাকালো ,রুমে শুধু একটা খাট ছাড়া আর কিছু নেই ,
-গুড মর্নিং রিধি ,
রুদ্রের কন্ঠ শুনে রিধি রুদ্রের দিকে তাকালো , রুদ্রের হাতে খাবারের প্লেট,
– হুম গুড মর্নিং , কিন্তু এই রুম টা কেমন যেনো চেঞ্জ লাগছে ,
– আমরা আগের বাসায় নেই তাই চেঞ্জ লাগছে ,
– মানে ? আমরা তাহলে এখন কোথায় ?( অবাক হয়ে)
– আমরা এখন আমার বাবার আরেকটি ফার্ম হাউসে আছি ,
– কখন আসলাম ?( অবাক হয়ে)
– তোমাকে আমি অনেক বার ডেকেছিলাম কিন্তু তুমি উঠো নি তাই আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছিলাম সরি (নিচু স্বরে)
-এইটা কোনো কথা না রুদ্র তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ করার ?(রাগান্বিত কন্ঠে)
– সরি রিধি ,আর হবেনা এবারের মতো ক্ষমা করে দাও (নিচু স্বরে)
– ঠিক আছে কিন্তু এবার আমাকে বলো , হঠাৎ এখানে কেনো এনেছো ?(সন্দেহের চোখে,)
– এমনি ,এক জায়গায় থাকতে ভালো লাগে না তো তাই আর কি ,
– ওহ আচ্ছা , কিন্তু এই বাসায় কি একটাই রুম ?
-না না , আরও রুম আছে ,তুমি বাড়ি টা ঘুরে দেখবে ?
– তুমি আমাকে বাড়ি টা ঘুরে দেখাবে ?
– হুম ,চলো ,
রুদ্র রিধি কে বাড়ি টা ঘুরে দেখাচ্ছে ,এই বাড়ি টাও অনেক টাই আগের বাড়ির মতো , শুধু রুম গুলো একটু ছোট তাছাড়া সব কিছুই একি,
– এই বাড়িটা আর ওই বাড়ি টা অনেক টাই একি তাই না ?
– হুম , আচ্ছা শোনো রিধি ,আমি একটু বের হবো কাজ আছে ,তুমি একা থাকতে পারবে তো তাইনা ?
– হ্যা হ্যা সমস্যা নেই ,
– আচ্ছা তাহলে সাবধানে থেকো ,আর কেউ যদি কলিং বেল বাজায় অথবা নোক করে তাহলে কোনো কথা বলবা না ওকে ?আর বারান্দায় অথবা ছাদে যাবা না ওকে ?
– ওকে ,
– আর আমি আসার সময় খাবার কিনে আনবো ওকে
– হুম ,
রুদ্র তারপর বাহির দিয়ে লক করে চলে গেলো ,

– আমি নিশ্চিত রুদ্র আমার খাবারে ঘুমের ঔষুধ মিশিয়েছিলো ,আমার ঘুম এতোটাও গভীর নয় যে রুদ্র আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে অথচ আমি কিছু টেরই পেলাম না , কিন্তু কেনো আমাকে এখানে আনলো , নিশ্চয় কোনো কারণ আছে । কিন্তু আমি আর কতো দিনই বা এখানে থাকবো ,এবার আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। এখানে আশেপাশে কোনো বাড়ি আছে কিনা সেটাও তো আমি জানি না , কিন্তু তার আগে আমাকে দেখতে হবে এখানেও সিসি ক্যামেরা আছে কি না ।
রিধি সব জায়গা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো কিন্তু একমাত্র ড্রয়িং ছাড়া আর কোথাও সিসি ক্যামেরা নেই ।
রিধি তারাতাড়ি ছাদে গেলো কিন্তু ছাদের গেট বন্ধ থাকায় আশাহত হয়ে নিচে ফিরে এলো । এবার রিধি বারান্দায় যাওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু বারান্দারও লক করা । যখন রিধি নিরাশ হয়ে পরছিলো তখনি রিধির চোখ পড়লো জানালার দিকে ,জানালা টা খুলে বাহিরে তাকালো কিন্তু জানালা দিয়ে খুব বেশি কিছু দেখা যায়না তবে একটা ছোট দোকান দেখা যাচ্ছিল ,
– ইয়েস পেয়েছি ,এবার আমাকে যেভাবেই হোক এই বাড়ি থেকে বের হতে হবে ,একবার যদি ওই দোকানে যেতে পারি তাহলেই আমি মুহিবের সাথে যোগাযোগ করতে পারবো , কিন্তু এই জাহান্নাম থেকে কিভাবে বের হবো আমি(আশাহত হয়ে)
তখনি রিধির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো ,রিধি সাথে সাথে রান্না ঘরে গেলো ওখানে গিয়ে ঘুমের ঔষুধ খুঁজতে লাগলো এবং পেয়েও গেলো
– এবার দেখি তুমি কিভাবে আমাকে আটকাও ,,
ঘুমের ঔষুধ টা নিয়ে পেছন ফিরতেই রিধি ঘাবড়ে গেলো কারণ তাঁর সামনে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে ,

#চলবে ,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here