প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_২৪

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_২৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

“হেই ববি। কেমন আছো?”

ববি জোর পূর্বক হেসে আফনানের দিকে এগিয়ে এলো। আয়রা এবং রাশেদা খানমকে ছেড়ে আফনান প্রাণোচ্ছ্বল হাসিতে ববিকে ঝাপটে ধরে বলল,,

“কতো বছর পর তোমার সাথে দেখা হলো ববি। আ’ম সো এক্সাইটেড।”

ববি মৃদ্যু হেসে বলল,,

“৪ বছর তো হবেই।”

“রাইট। অনেক অভিমান জমে আছে কিন্তু তোমার উপর।”

“আই নো আফনান। আমি তোমাদের সবাইকে খুব হার্ট করেছি। বিশেষ করে আয়রাকে৷ অবশ্য এর জন্য আমি খুব অনুতপ্ত। ক্ষমা ও চেয়েছি সবার কাছে অনেকবার।”

আফনান প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,,

“ওকে ছাড়ো এখন এসব কথা। পরে ও এই বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে। এখন বলো? তোমার ওয়াইফ কোথায়? পরিচিত হতে পারি তো তার সাথে?”

আফনানকে ছেড়ে বারিশ মৃদ্যু হেসে পিছু ফিরে জিনিয়া আহমেদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লিলিকে ডেকে বলল,

“লিলি। কাম হেয়ার।”

লিলি মলিন হেসে মাথা নিচু করে ববির পাশে এসে দাঁড়ালো। লিলির ডান হাতটা ধরে ববি ম্লান হেসে আফনানের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“সি ইজ মাই ওয়াইফ। লিলি।”

ববি এবার লিলিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“লিলি। হি ইজ আফনান। আপুর দেবর। তোমার ভাইয়া হবে।”

লিলি মৃদ্যু হেসে আফনানের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কেমন আছেন ভাইয়া?”

আফনান মৃদ্যু হেসে বলল,,

“ভালো আছি ভাবি। আপনি কেমন আছেন?”

লিলি হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালো। আফনান এক পলক লিলির দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে চোখ সরিয়ে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মাশাআল্লাহ্। ভাবী জাস্ট ওয়াও ববি। এখন বুঝলাম, ববি এমনি এমনি হুট করে ভাবীকে বিয়ে করে বসে নি।”

আয়রা রাগে গজগজ করে আফনানের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,

“ভাইয়া স্টপ প্লিজ। এক্ষনি তুই রুমে যা, ফ্রেশ হ, রেস্ট নে।”

আফনানকে জোর করে টেনে আয়রা আফনানের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। সবাই নিজেদের মধ্যে নানা রকম কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তন্মধ্যে হেমার শ্বাশুড়ী হেমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“হেমা খাবার সার্ভ করে দাও। দুপুর তো গড়িয়ে যাচ্ছে।”

হেমা মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। কিচেন রুমের দিকে মোড় নিতেই লিলি দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে হেমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে খানিক ইতস্ততবোধ করে বলল,,

“আপু। আমি আপনাকে হেল্প করি?”

হেমা প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,,

“একদমই না। তোমার হেল্প আমার লাগবে না। দয়া করে সামনে থেকে সরো।”

লিলি কাতর স্বরে বলল,,

“আপনি একা হাতে এতো কাজ সামলাতে পারবেন না আপু। আমি হাতে হাতে একটু হেল্প করলে কাজটা অনেকটাই ইজি হবে।”

হেমা খড়তড় স্বরে বলল,,

“কাজের বুয়া আছে বাড়িতে ওকে? তোমার কোনো রকম হেল্প লাগবে না।”

“কাজের বুয়াকে দেখলাম একটু আগেই আন্টির থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে। আসলে উনার মেয়ে নাকি বাড়িতে খুব অসুস্থ। তাই হুট করেই উনাকে চলে যেতে হলো। প্লিজ আপু, না করবেন না, আপনাকে একটু হেল্প করতে দিন।”

হেমা কিছু সময় মৌণ থেকে পরক্ষনে গোমড়া মুখে বলল,,

“ওকে চলো।”

হেমা দ্রুত পায়ে হেঁটে কিচেন রুমের দিকে পা বাড়ালো। লিলি মৃদ্যু হেসে হেমাকে অনুসরণ করে কিচেন রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। ববি কিছুটা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা অবলোকন করছিলো। হালকা হেসে ববি পেছনের চুল গুলো টেনে মাথা নিচু করে বলল,,

“ভালোবাসি আমার “পুতুল বৌ” টাকে। খুব খুব খুব ভালোবাসি!”

হেমা কাঁচের বাটিতে সমস্ত ডিশ গুলো বেড়ে দিচ্ছে আর লিলি অন্য হাতে একটা একটা করে সবগুলো আইটেম ডাইনিং টেবিলে রেখে আসছে। কিচেন রুমের কাজ শেষ করে হেমা হঠাৎ লিলির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে কপাল কুঁচকে বলল,,

“এসব আম্মুর শাড়ি আর গহনা না? হাতের রুলি গুলো ও তো মামানীর। আম্মু সব কিছু তোমাকে দিয়ে দিয়েছে? মানে আমার জন্য কিছুই রাখেন নি?”

লিলি মাথা নিচু করে ম্লান স্বরে বলল,,

“আম্মুর সবকিছুই তো আপনার আপু। আমি তো জাস্ট একদিনের জন্য এসব পড়ে এসেছি মাএ। আসলে আপাতত আপনার ভাই বেকার তো, তাই তেমন ভাবে আমাকে কিছু কিনে দিতে পারেন নি। আপনার শ্বশুড় বাড়িতে আমি নিশ্চয়ই বাড়ির শাড়ি পড়ে, খালি কানে, খালি গলায় আসতে পারতাম না। এতে আপনার ই মান সম্মান ক্ষুন্ন হতো। তাই হয়তো আম্মু অপারগ হয়ে আমাকে এসব দিয়েছেন পড়তে। তবে আমি কথা দিচ্ছি আপু, বাড়ি পৌঁছেই সমস্ত জিনিস পএ আম্মুর হাতে তুলে দিবো। আম্মু খুব যত্ন করে আপনার জন্য এসব তুলে রাখবেন।”

কিছুক্ষণ লিলির দিকে খড়তড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হেমা হাতে কয়েকটা খাবারের প্লেইট নিয়ে কিচেন রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে এলো। হেমার পিছু পিছু লিলি ও কিচেন রুম থেকে প্রস্থান নিলো।

বিকেল ৪ টা। খায়রুল আহমেদ মাএ উনার দরকারী কাজ সেরে হেমার শ্বশুড় বাড়িতে এসেছেন। ববি, আতিক, আফনান, রাজিব আহমেদ না খেয়ে বসেছিলেন খায়রুল আহমেদের জন্য। উনাকে পেয়েই সবাই খাবার টেবিলে বসলেন। বাড়ির বাকিরা প্রায় এক ঘন্টা আগেই দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে ফেলেছেন। তার মধ্যে লিলি ও ছিলো।

লিলি এবং হেমা মিলে বাকি পাঁচজনকে সার্ভ করে খাওয়াচ্ছে। খায়রুল আহমেদের সাথে কৌশল বিনিময় করে আফনান খাবারে মনযোগ দিলো। লিলি বড় চিংড়ি মাছটা আফনানের প্লেইটে দিতেই আফনান লিলির দিকে একবার তাকিয়ে পরক্ষনে হেমার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,,

“এসব কি ভাবী? মেহমানকে দিয়ে তুমি সার্ভ করাচ্ছ? ইট’স নট ফেয়ার ভাবী।”

হেমা কিছু বলার পূর্বেই লিলি মলিন স্বরে আফনানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“আমি কোথায় আপনাদের মেহমান ভাইয়া? আমি তো আপনাদের পরিবারেরই একজন সদস্য। আপু একা হাতে সব করবে, খুব খারাপ লাগছিলো আমার৷ তাই তো আমি ও আপুর পাশে থেকে হাতে হাতে আপুকে একটু হেল্প করছি।”

আফনান খাবার মুখে দিয়ে ববির কানে ফিসফিসিয়ে খুব সিরিয়াস হয়ে বলল,,

“এই ববি। ভাবীর কোনো ছোট বোন নেই? থাকলে আমি একটু ট্রাই করতাম আসলে। আসার পর থেকেই ভাবীর এতো এতো গুন দেখছি। ভাবীর বোন ও নিশ্চয়ই খুব গুণী হবে।”

ববি বাঁকা হেসে বলল,,

“এক পিস ই ছিলো। তা ও আমার ভাগ্যে। তুমি চাইলে “মেহেরকে” ট্রাই করতে পারো আফনান। বেচারী পাঁচ বছর ধরে তোমার পেছনে পড়ে আছে।”

“ওহ্ নো। যাই বলো, মেহেরের কথা বইল না প্লিজ। অসম্ভব ঝগড়ুটে এই মেয়ে তার উপর কথায় কথায় গাঁয়ে হাত তোলার ও ধাঁচ আছে। এই যে বাড়িতে ঢুকলাম। দু তলায় দাঁড়াতেই এই মেয়ে তিন তলার সিঁড়ি বেয়ে ঝড়ের গতিতে দৌঁড়ে এসে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হুট করে আমার শার্টের কলার চেঁপে ধরে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কোনো রকম ভালো, মন্দ জিগ্যেস না করেই বলে উঠল,,

“এই আফনান। কবে বিয়ে করবি আমায়?”

তৎক্ষনাৎ খাবারটা ববির নাকে, মুখে উঠে গেলো। উচ্চ আওয়াজে কাশছে ববি। আফনান ব্যতিব্যস্ত হয়ে ববির দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলো। লিলি পেরেশান হয়ে ববির মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,,

“কি হয়েছে ববি? হঠাৎ নাকে, মুখে উঠল কেনো?”

ববি অস্পষ্ট স্বরে বলল,,

“জোরে জোরে হাত বুলাও লিলি। জোরে জোরে!”

লিলি উদ্বিগ্ন হয়ে ববির মাথায় হাত বুলাচ্ছে। সবাই খাওয়া বন্ধ করে ববির দিকে তাকিয়ে আছে। ববি গড়গড় করে পুরো পানিটা খেয়ে আফনানের কানে কানে বলল,,

“এরপর তুমি কি বললে?”

“বলার সুযোগ দিলো কই? হুট করে আমাকে লিপ টু লিপ কিস করে ভৌঁ দৌঁড়ে তিন তলায় উঠে গেলো! তুফান এই মেয়ে। ফ্ল্যাট মালিকের মেয়ে বলে কিছু বলতে পারি না। নাকানি, চুবানি খাইয়ে মারছে আমায়!

ববি চোখ দুটো প্রকান্ড করে বলল,,

“এ তো রীতিমতো পুরুষ নির্যাতন আফনান। তোমার স্টেপ নেওয়া উচিত!”

“একটা বুদ্ধি দাও তো, কি করা যায়?”

“খাবারটা শেষ করে নেই। এরপর বলছি।”

আফনান ডানে, বায়ে মাথা নাঁড়ালো। খাবার পর্ব শেষ করে আফনান এবং ববি চার তলার ছাঁদে এলো। লিলি এবং আয়রার অবস্থান ও তাদের পিছু পিছু। আয়রা সর্বক্ষণ লিলির পেছনে পেছনে থাকছে। কিছুতেই লিলির পাশ থেকে নড়ছে না। ববিকে ও লিলির সাথে একটু দাঁড়াতে দিচ্ছে না। দু দন্ড কথা বলতে ও দিচ্ছে না। অদৃশ্য একটা দেয়াল তৈরি করে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।

বিকেল ৬ঃ০০ টা। গৌধুলির আবিরে রাঙ্গা অস্তায়মান লাল সূর্য আকাশে ম্লান ভাবে বিরাজ করছে। দিনের শেষে থেমে আছে চারপাশের কোলাহল। প্রকৃতিতে নেমে এসেছে এক অন্য রকম প্রশান্তি। পশু, পাখি নীড়ে ফিরে যেতে শুরু করেছে। সমস্ত আকাশ জুড়ে পাখিরা দল বেঁধে পালাক্রমে ঝাঁকে ঝাঁকে তাদের নিজস্ব নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। চরাচরে সর্বএ বিরাজ করছে এক নৈসর্গিক নীরবতা। সূর্য্যের রক্তিম আলোর ছটায় প্রকৃতি যেনো অন্য রকম রঙ্গে নিজেকে রাঙ্গিয়েছে।

ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে লিলি নীরব মনে প্রকৃতিকে খুব সূক্ষ্ম ভাবে অনুভব করছে। আকাশ পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে ঝাঁক বাঁধা পাখিদের হাতছানি দেখছে। সূর্য্যের অস্ত যাওয়া দেখার জন্য তার চোখ দুটো হাঁসফাঁস করছে। সূর্য্য কিভাবে আকাশে তার অস্তিত্বকে বিলীন করে তাই এবার অনুধাবন করার পালা। আয়রা সেই কখন থেকে লিলির দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখের চাহনীতেই যেনো লিলির চরম সর্বনাশ দেখছে। যা চাইলে ও হয়তো লিলি আটকাতে পারবে না। আয়রা বেশ বিরক্তি নিয়ে হাতের কনুই দিয়ে লিলিকে গুতো মেরে বলল,,

“অমন হা করে কি দেখছ আকাশে? আকাশের কোথাও তো আমি ববিকে দেখতে পারছি না!”

লিলি উদাসী চিত্তে একই ভঙ্গিতে আকাশ পানে তাকিয়ে আনমনা স্বরে বলল,,

“আসলে, দেখার চোখ আলাদা আমাদের। আমি সর্বএ উনাকে দেখতে পাই। আমার দেহ, মন, চোখ সব জুড়েই উনার বসবাস। চারদিকেই আমি উনার সুপ্ত বিচরণ খুঁজে পাই! যে মানুষটা সর্বক্ষণ আমার মনে বিরাজ করে, তাকে সব জায়গাতে দেখাটা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু না!”

আয়রা লিলির থেকে চোখ ফিরিয়ে ববির দিকে তাকালো। কিছু দূর দাঁড়িয়ে ববি এবং আফনান নিজেদের মধ্যে কিসব নিয়ে যেনো ভীষণ হাসছে আর বাচ্চাদের মতোন খুনসুঁটি করছে। এসবের ফাঁকে ও ববি একবার হলে ও আড়চোখে লিলির দিকে তাকাচ্ছে। মুগ্ধতায় তার চোখের তাঁরা দুটো জ্বল জ্বল করছে। আয়রা কিছুতেই দুজনের কেমেস্ট্রি টলারেট করতে পারছে না৷ রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। লিলিকে সজোরে ছাঁদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে তার। লিলির জান নিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে। হাত, পা খুব সাংঘাতিকভাবে কঁচলে আয়রা আপন মনে বিড়বিড় করে বলল,,

“আমাকে কাঁদিয়ে দুজনের মধ্যেই খুব কেমিস্ট্রি চলছে না? তোমাদের দুজনকে কিভাবে আলাদা করতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে ববি৷ তোমাদের মধ্যে যদি আমি সন্দেহের বীজ ঢুকাতে না পারি না, তো আমার নাম ও আয়রা না।”

আফনানের পাশ থেকে সরে এসে ববি ছাঁদের ডান কর্ণারের ফুলের ছোট্ট বাগিচাটায় দাঁড়ালো। রকমারী ফুলের সুবাসিত ঘ্রাণে চারপাশটা মৌ মৌ করছে। গৌধূলি লগ্নের হিমেল বাতাসে ফুলের সৌরভ যেনো পাল্লা দিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ববি হালকা হেসে গোলাপ গাছটা থেকে একটা ফুটন্ত বড় রক্তিম গোলাপ ছিঁড়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে লিলির পেছনটায় দাঁড়ালো। লিলি এখনো একই দৃষ্টিতে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে৷ কিছুতেই যেনো তার দৃষ্টি ঐ মুগ্ধ করা রঙ্গিন আকাশ থেকে সরছে না। লাল পাড়ের শাড়ির আঁচলটা তার বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে উড়ছে। ববি হাত বাড়িয়ে লিলির খোঁপার মাঝখানে গোলাপ ফুলটা গুজে দিতেই ঘটনার আকস্মিকতায় লিলি কপাল কুঁচকে পিছু ঘুড়ে দাঁড়ালো। ববি ভাব ভঙ্গি পাল্টে গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল,,

“আকাশে কি দেখছ হুম? কি আছে আকাশে?”

লিলি খোঁপায় হাত দিয়ে মিষ্টি হেসে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আপনাকে দেখছি। রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ঐ রাগী দৃষ্টিটাই আমার খুব মিষ্টি লাগছে দেখতে। চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছে।”

ববি ভ্রু উঁচিয়ে বলল,,

“রহস্য কি হুম? সাহিত্যিক টাইপ লাগছে!”

লিলি ফিক করে হেসে বলল,,

“নাথিং।”

আয়রা রাগে গজগজ করে ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলো। আফনান ফোনের দিকে তাকিয়ে উচ্চ স্বরে হেসে আয়রাকে পেছন থেকে ডেকে বলল,,

“এই আয়রা কোথায় যাচ্ছিস? ববি এবং ভাবীর রোমান্টিক মুহূর্তের ভিডিওটা দেখে যা, প্লিজ।”

আয়রা পিছু ফিরে চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়, তুই আমার আপন ভাই তো?”

ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলো আয়রা। আফনান অবুঝ চাহনীতে বোকা হেসে বলল,,

“আমি আবার কি করলাম?”

ববি এবং লিলি আফনানের দিকে তাকিয়ে উচ্চ শব্দে হেসে দিলো। তন্মধ্যেই ছাঁদে চতুর্থ ব্যক্তির আগমন ঘটল। ব্যক্তিটাকে দেখতেই আফনানের চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেলো। শুকনো ঢোক গিলে আফনান ব্যক্তিটার দিকে প্রকান্ড চোখে তাকিয়ে বলল,,

“তুতুতুমি?”

মেহের বাঁকা হেসে আফনানের দিকে ধীর পায়ে এগুচ্ছে আর বলছে,,

“ছাঁদে এলে অথচ আমাকে ডাকলে না, কাজটা কি ঠিক করেছ আফনান?”

আফনান বাচ্চাদের মতো ডানে, বায়ে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। মেহের আচমকা ক্ষুব্ধ হয়ে আফনানের শার্টের কলার চেঁপে ধরে বলল,,

“আমার হাত থেকে এবার তোর নিস্তার নেই আফনান। অনেক ঘুড়িয়েছিস আমাকে। এবার তো তোকে আমি নিজের করেই ছাড়ব। জোর করে হলে ও নিজের করব।”

আফনান কাঠ কাঠ গলায় বলল,,

“আমি তো আবার কাতার ব্যাক করব মেহের। তোমাকে বিয়ে করা হয়তো সম্ভব হবে না।”

“কে বলল হবে না? আমাকে বিয়ে করেই তুই কাতার ব্যাক করবি ওকে?”

তন্মধ্যেই ববি গলা খাঁকিয়ে মেহের এবং আফনানের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

“ডোন্ট ওরি মেহের। আফনান তোমাকে এবার বিয়ে করেই দেন কাতার যাবে। নিজের হিসেবটা ষোলো আনা বুঝে নিতে হবে!”

মেহের তাড়াহুড়ো করে আফনানের শার্টের কলার ছেড়ে ববির দিকে তাকিয়ে মুখে বিষাদের ছাপ ফুটিয়ে বলল,,

“ববি ভাই। আপনি আমার পাশে থাকবেন তো? এই হাদারামটাকে বিয়ে করতে?”

ববি পাঞ্জাবির কলারটা পেছনের দিকে ঠেলে বেশ ভাব নিয়ে বলল,,

“হোয়াই নট?”

মেহের মিষ্টি হাসল। আফনান হাঁসফাঁস করছে কখন ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিবে। ববি মৃদ্যু হেসে লিলি এবং মেহেরের পরিচয় করিয়ে দিলো। দুজনই নিজেদের মধ্যে কৌশল বিনিময় করে খুব ভাব জমিয়ে দিলো। কিছুটা সময়ের মধ্যেই তারা দুজন খুব মিশে গেলো। মন খুলে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগল।

চারদিকে মাগরিবের আযান পড়তেই আয়রা দৌঁড়ে এলো ছাঁদে। আফনানের পাশ থেকে ববিকে টেনে এনে আয়রা বাঁকা হেসে বলল,,

“মামু বলেছেন তোমাকে এক্ষনি ফরিদপুর যেতে হবে। কোনো একটা সাইটের কাজে। লিলি এই দু, এক দিন এই বাড়িতেই থাকবে। মামানী এবং আন্টির সাথে।”

ববি কপাল কুঁচকে চোখে, মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বলল,,

“না। লিলি কিছুতেই এই বাড়িতে থাকবে না। ইভেন আম্মু এবং মামানী ও এই বাড়িতে থাকবে না। হুট করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানে কি?”

“আমি কি বলব? যা বলার মামুর সামনে দাঁড়িয়ে বলো। আমি তো তোমাকে জাস্ট ডাকতে এলাম। ডাকা শেষ এখন আমি চলে যাবো!”

আয়রা প্রস্থান নিলো। ববি পিছু ঘুড়ে লিলির দিকে তাকালো। মেহের, আফনান এবং লিলি ফোনে কিছু একটা দেখে খুব হাসছে। ববি সামনের চুল গুলো পেছনে ঠেলে বিষন্ন স্বরে বলল,,

“কিভাবে থাকব আমি লিলিকে ছাড়া? সাইটের কাজ মানেই তো খুব ইমার্জেন্সি। যেতেই হবে। কতো দিনের জন্য যেতে হবে তা ও তো জানি না।”

আফনান এবং মেহেরের মাঝখান থেকে লিলিকে টেনে এনে ববি ছাঁদের চিলিকোঠায় দাঁড়ালো। লিলি জিগ্যাসু দৃষ্টিতে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কি হয়েছে ববি? আপনাকে এতো বিষন্ন লাগছে কেনো?”

ববি আচমকা লিলির কোঁমড়ে হাত দিয়ে তীব্র ভাবে লিলির ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে অস্পষ্ট স্বরে বলল,,

“আমাকে হয়তো ফরিদপুর যেতে হবে লিলি। কিভাবে থাকব আমি তোমাকে ছাড়া?”

ববির চোখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে লিলি অস্পষ্ট স্বরে বলল,,

“কে বলল আপনাকে?”

লিলির ঠোঁট জোড়া ছেড়ে ববি লিলির ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে বলল,,

“মামু আয়রাকে পাঠিয়েছেন। এক্ষনি হয়তো রওনা দিতে হবে। তোমাকে এই বাড়িতে রেখে যেতে আমার মন সায় দিচ্ছে না লিলি।”

#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here