প্রেম_ফাল্গুন #পর্ব_১৭,১৮

#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_১৭,১৮
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

লিলিকে ছেড়ে ববি অন্য পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল। লিলি ও স্বস্তি পেয়ে চোখ জোড়া বুজে নিলো। সেই ঘুম ভাঙ্গল লিলির ফজরের আযানের মুখরিত প্রতিধ্বনিতে।

শরীরের আড়মোড়া ভেঙ্গে লিলি পিটপিট চোখে ব্যালকনীর জানালার দিকে তাকালো। রাতের আঁধার এখনো সম্পূর্ণ কাটে নি। ভোরের আলো ফুটতে এখনো অনেকটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। নিম্ন তমসায় ঘেরা বিস্তর আকাশ সাথে গোটা ধরণী। শেষ রাতের অম্বর ঘেরা পুলকিত মিহি আলোতে অপার স্নিগ্ধতা, নিবৃত্তে মোড়ানো প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে সূক্ষ্ম ভাবে অবলোকন করার তৃপ্তিই যেনো আলাদা। নিভৃতে রজনী কেটে গেছে সেই অনেক আগেই। এবার শুধু ভোরের আলো ফুটার পালা।

লিলি গ্রামে থাকতে বহুবার প্রকৃতির এই সুন্দরতম মুহূর্তটাকে খুব কাছ থেকে অবলোকন করেছে, মন থেকে প্রতিটা মুহূর্তকে উপভোগ করেছে। ফজরের নামাযের ইতি টেনে তসবিহ্ হাতে উপর ওয়ালার নাম যপ করতে করতে গ্রামের নির্জন রাস্তায় নির্ভয়ে নিজের ছায়াকে সঙ্গিনী করে দীর্ঘ পথ হেঁটেছে। রাত এবং দিনের কুদরতি শক্তিকে বার বার প্রকৃতির রহস্যের বেড়াজালে আবদ্ধ করেছে। উপর ওয়ালার সমস্ত সৃষ্টিই যেনো একেকটা মহা রহস্যে আবর্তিত। যে রহস্যের ভেদ করা ধরণীর কোনো মনুষ্যের পক্ষেই কখনো সম্ভবপর না।

আযানের সুমধুর সুর লিলির কান দুটোতে মন্ত্রমুগ্ধের মতোন বাজছে। আযানের এই ধ্বনি যেনো তাকে রীতিমতো আল্লাহ্ র সান্নিধ্যে ডাকছে। ইবাদাতে মশগুল হতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। উপর ওয়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে লিলি শোয়া থেকে উঠে ফ্লোরে পা রাখতেই কাপড়ে হঠাৎ হেচকা টান লাগল। ঘোলা ঘোলা চোখে লিলি পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল ববির ব্লাক ওয়াচটাতে লিলির কাপড়ের আঁচলটা বাঁধা। কপাল কুঁচকে লিলি বিস্মিত চোখে ববির ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকালো। ঘুমন্ত অবস্থায় ববিকে শান্ত, শিষ্ট, নির্মল, মায়াবী এক টুকরো জোছনা রাত মনে হচ্ছে। যার মুখপানে তাকিয়ে অবলীলায় গোটা একটা অমবস্যা রাত জোছনা রাত ভেবে কাটিয়ে দেওয়া যাবে।

আলতো হাতে লিলি ববির ওয়াচ থেকে কাপড়ের আঁচলটা ছাড়িয়ে বেড ছেড়ে নামতেই ববি পেছন থেকে ঘুম জড়ানো স্বরে অস্পষ্টভাবে লিলিকে ডেকে বলল,,

“এই। কোথায় যাচ্ছ?”

লিলি পিছু ঘুড়ে আশ্চর্যিত চোখে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আপনি না ঘুমুচ্ছিলেন? হঠাৎ জাগলেন কিভাবে?”

ববি চোখ বুজেই বলল,,

“তুমি অলওয়েজ সব জায়গায় এসে আমাকে ডিস্টার্ব করো। ঘুমটাকে ও ডিস্টার্ব করলে। কি দরকার ছিলো আমাকে টাচ করার?”

লিলি আমতা আমতা স্বরে বলল,,

“আআআপনিই তো বাধ্য করলেন। কিকিকি দরকার ছিলো ওওওয়াচে আমার শাড়ির আঁচল বাঁধার?”

“রিস্ক নিতে চাই নি ওকে? ভেবেছিলাম এপাশ থেকে ওপাশ হওয়ার টাইমিং এ যদি হঠাৎ ধপাস করে নিচে পড়ো? তাই সেইফটির জন্য বাধ্য হয়ে ওয়াচে আঁচলটা বাঁধা। তোমার তো আবার হিতাহিত জ্ঞান একদমই নেই৷ ব্রেন জাস্ট ফাঁকা।”

লিলি নাক ফুলিয়ে বলল,,

“এতোই যেহেতু বুঝেন, তাহলে এই অপদার্থ মেয়েটাকে বিয়ে করলেন কেনো?”

ববি ফট করে চোখ জোড়া খুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“সেই কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিবো না। নেক্সট টাইম যদি বিয়ে করার বিষয়টা নিয়ে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করো আই টোল্ড ইউ গতকাল রাতের মতো এমন অসংখ্য চড় আবার গালে পড়বে। তখন ওয়িন্টমেন্ট ও লাগিয়ে দিবো না।”

“একটু ভালো করে কথা বলতে পারেন না আপনি তাই না? সবসময় শুধু রেগে থাকেন। যতো রাজ্যের রাগ আমার উপরেই ঝাড়েন।”

“তুমি প্রশয় দাও বলেই আমার রাগ গুলো প্রশয় পায়। একটু চালাক, চতুর, চঞ্চল হতে পারো না? তাহলেই তো অযথা আমার রাগ দেখাতে হয় না!”

লিলি রাগান্বিত হয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। ববি আবারো পেছন থেকে ডেকে বলল,,

“ঘুমুচ্ছি আমি। ওয়াশরুম থেকে ফিরে তুমি ও আমার পাশে ঘুমিয়ে পড়বে। রুম থেকে একদম বের হবে না।”

লিলি কোনো প্রতিত্তুর না করে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে ঠাস করে দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলো। ববি হালকা হেসে বলল,,

“আমার গম্ভাট বউ ভীষণ রেগে গেছে। কবে যে এই গম্ভাট বউটা রাগ দেখিয়ে আমার কাছাকাছি আসবে গড নৌজ!”

লম্বা হয়ে শুয়ে ববি আবারো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো। লিলি ফ্রেশ হয়ে অযূ করে আধ ঘন্টার মধ্যে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো। জায়নামাজ খুঁজে লিলি স্থির মনে নামাযে দাঁড়ালো। নামায শেষে তসবিহ্ পড়ে লিলি মোনাজাতে ঢুকড়ে কেঁদে বলল,,

“আমি জানি না মাবুদ। আমার পরিবার এখন কেমন আছে। আদৌ ওরা ভালো আছে কিনা। গ্রামের হিংস্র মানুষদের থেকে নিরাপদে আছে কিনা। ঐ মেম্বারের ছেলে রিফাত আমার পরিবারের কোনো ক্ষতি করেছে কিনা! কেনো জানি না মনটা খুব কুহ্ গাইছে। বার বার মনে হচ্ছে এবার ওরা হাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। নিশ্চয়ই কোনো ভয়ঙ্কর স্টেপ নিবে। খুব ভয়ঙ্কর স্টেপ। যা হয়তো আমি দুঃস্বপ্নে ও ভাবতে পারছি না। যাই হয়ে যাক মাবুদ, তুমি আমার পরিবারের সবাইকে ভালো রেখো, সুস্থ রেখো, নিরাপদে রেখো।”

জায়নামাযটা গুটিয়ে লিলি কাবার্ডে গুছিয়ে রাখল। চোখের জল মুছে খোলা চুলে ব্যালকনীতে দাঁড়ালো। চারদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। শান্ত চোখে লিলি ব্যালকনীর গ্রীলে কপাল ঠেকিয়ে আশেপাশের নির্মল প্রকৃতিটাকে অবলোকন করছে। শহরের মানুষরা এখনো ঘুমে আচ্ছন্ন। রাস্তায় লোকজনদের কোনো গতগম্য নেই। প্রতিটা বাড়ির মস্ত বড় লোহার গেইটগুলো এখনো ভেতর থেকে লাগানো। ফুটপাতের দোকান গুলো শাটার বন্ধী৷ রাস্তায় ছোট, খাটো যানবাহনের চলাচল অবাধে চলছে। রাস্তার দু ধারে কয়েকটা প্রকান্ড বিশাল গাছ দেখা যাচ্ছে। গাছের মগডালে পাখ পাখালির কোনো অস্তিত্ব নেই। ভোর হতেই মোরগের কোনো হাঁক ডাঁক নেই। শহুরে জীবনটা কেমন যেনো নির্জীব আর গুমুটে! প্রকৃতির আসল স্বাদটা খুঁজে পাওয়া যায় না এখানে।

লিলি প্রবল উচ্ছ্বাস নিয়ে উঁকি ঝুকি মেরে জুবায়ের আহমেদের বাড়িটা খুঁজছে। গ্রীলের শেষ কর্ণারে চোখ ঠেকিয়ে ও জুবায়ের আহমেদের ছোট বাড়িটা লিলির চোখে পড়ল না। সমস্ত উদগ্রীবতা ক্ষান্ত হয়ে এলো লিলির। বিষন্ন মন নিয়ে লিলি ব্যালকনী থেকে প্রস্থান নিয়ে খোলা চুলে বড় একটা খোঁপা করে ববির পাশ ঘেঁষে শুলো। ববির দিকে মুখ ঘুড়িয়ে শুয়ে লিলি নিষ্পলক দৃষ্টিতে ববিকে দেখছে। ববির প্রতিটা গরম নিশ্বাস লিলির চোখে, মুখে উপছে পড়ছে। পরম আবেশে লিলি চোখ জোড়া বুজতেই ববি ঘুমন্ত অবস্থায় নড়েচড়ে লিলিকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরল। লিলি ফট করে চোখ জোড়া খুলে ববির দিকে তাকালো। অস্বস্তিতে লিলি হাঁসফাঁস করছে ববির থেকে ছাড়া পেতে। লিলির অস্থিরতাকে প্রশয় না দিয়ে ববি লিলিকে আরো টাইট করে ঝাপটে ধরল। ববির শক্তির সাথে না পেরে লিলি এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে ছোট আওয়াজে ববিকে বলল,,

“ববি শুনছেন? ছাড়ুন আমাকে।”

“উহুহু। ডিস্টার্ব করছ কেনো? ঘুমুতে দাও।”

“উফফ! শুধু কি আপনিই ঘুমুবেন? আমি ঘুমোব না?”

“আমি তো বারণ করি নি ঘুমুতে। চুপ করে ঘুমাও।”

“আপনি তো জানেন আমার এভাবে ঘুম হয় না।”

“তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ও ঘুম হয় না। স্যরি, আ’ম হেল্পলেস।”

লিলি ক্ষীপ্ত হয়ে বলল,,

“বিয়ের আগে কাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোতেন শুনি?”

“তখন অন্য ব্যাপার ছিলো। এখন পাশে সদ্য বিয়ে করা ওয়াইফ থাকতে নিজেকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয়?”

“আমার কষ্ট আপনার চোখে পড়ে না?”

“না পড়ে না। কাউন্ডলি আমাকে একটু ঘুমুতে দাও। আর তুমি ও ঘুমাও।”

লিলি তবু ও ধস্তাধস্তি করছে। ববি অগ্নিশর্মা হয়ে লিলির দিকে প্রখর দৃষ্টিতে তাকাতেই লিলি শান্ত হয়ে ফটাফট চোখ জোড়া বুজে নিলো। ববি হালকা হেসে লিলিকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরল। খনিকে মধ্যে দুজনই গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়ল।

ঘড়িতে সকাল ৯ টা। পুরো বাড়িতে মানুষের হাঁক ডাক আর শোরগোলের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। তন্মধ্যেই দরজায় ঠকঠক করে সশব্দে টোকা পড়ল। ঘুম ভেঙ্গে লিলি আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে লিলিকে সাপের মতো পেঁচিয়ে শুয়ে থাকা ববিকে ছোট আওয়াজে ডেকে বলল,,

“ববি শুনছেন? কেউ দরজা ধাকাচ্ছে।”

ববি নাক, মুখ কুঁচকে ঘুমের ঘোরে বলল,,

“সো হোয়াট? লেট মি স্লিপ।”

“ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ববি। আই থিংক বাড়িতে কিছু হয়েছে। শোরগোলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।”

ইতোমধ্যেই খায়রুল আহমেদের খড়তড় গলার আওয়াজ শোনা গেলো। উনি সশব্দে দরজায় টোকা মারছেন আর চেঁচিয়ে বলছেন,,

“ববি দরজা খোলো। না হয় বাধ্য হবো দরজা ভাঙ্গতে।”

এই পর্যায়ে এসে ববি ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নিলো। লিলিকে এক ঝটকায় গাঁ থেকে সরিয়ে ববি হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে গাঁয়ের টি শার্টটাকে ঠিক করে সামনের চুল গুলো সেট করে ব্যতিব্যস্ত স্বরে বেডের এক কোণায় বসে থাকা লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কাপড়টা ঠিক করে ব্যালকনীতে যাও। মনে হচ্ছে মামু খুব রেগে আছে। আপাতত মামুর সামনে তোমার যাওয়াটা ঠিক হবে না।”

ববির কথা মতো লিলি কাপড়টা ঠিক করে শুড়শুড়িয়ে ব্যালকনীতে চলে গেলো। ববি তাড়াহুড়ো করে রুমের দরজাটা খুলতেই খায়রুল আহমেদ চোয়াল শক্ত করে বললেন,,

“রিফাত কে ববি? ছেলেটা কেনো সাত সকালে আমার বাড়ির সামনে এসে এভাবে হাঙ্গামা করছে?”

ববি কপাল কুঁচকে ছোট আওয়াজে বলল,,

“রিফাত? মেম্বারের ছেলে?”

খায়রুল আহমেদকে পাশ কাটিয়ে ববি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ড্রইং রুমের ডান পাশের কর্ণার থেকে মোটা একটা স্ট্যাম্প হাতে নিয়ে বাড়ির সদর দরজা ক্রস করে সোজা বাড়ির মেইন গেইটে চলে এলো। রাস্তার ফুটপাত ঘেঁষে রিফাত খু্ব উঁচু স্বরে জুবায়ের আহমেদের সাথে তর্ক করছে। রিফাতের সাথে ঐ দিনের বখাটে ছেলে গুলো ও আছে। ছেলে গুলো ক্ষুব্ধ হয়ে বার বার ববিদের বাড়ির গেইটের সামনে অগ্রসর হতে চাইছে কিন্তু জুবায়ের আহমেদ বার বার তাদের আটকে দিচ্ছে। পথ আগলে দাঁড়াচ্ছে৷ পুরো রাস্তায় এলাকার লোকজনদের ঢল পড়ে গেছে। সবাই জটলা পাঁকিয়ে রাস্তার এপাশে ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সবাই নির্বাক দর্শক হয়ে পুরো ঘটনা এন্জ্ঞয় করছে। সোনিয়া আহমেদ ও পাশে দাঁড়িয়ে রিফাতের সাথে তর্ক করছে৷ রিফাত বার বার চেঁচিয়ে বলছে,,

“আমি লিলিকে চাই। শুধুমাএ লিলিকে চাই। প্রয়োজনে ঐ ববির লাশের উপর দিয়ে আমি লিলিকে এখান থেকে নিয়ে যাবো৷ এবার আমি কিছুতেই লিলিকে ছাড়ব না। কিছুতেই না!”

এলাকার লোকজন ফিসফিসিয়ে বলছে,,

“ছেলেটা চেয়ারম্যানের ভাতিজা ববির কথা বলছে না? আর লিলিই বা কে? ববি আবার কোনো মেয়েকে উঠিয়ে আনল না তো? ছেলেটা কি বলছে এসব?”

খায়রুল আহমেদ ববির পাশে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। খায়রুল আহমেদের পাশে জিনিয়া আহমেদ, সাহেরা খাতুন, হেমা ও দাঁড়িয়ে আছে। সাহেরা খাতুন এবং হেমা লজ্জায় ববিকে ধিক্কার জানাচ্ছে আর মাথা নিচু করে বলছে,,

“ছিঃ ছিঃ ববি। শেষ পর্যন্ত তোর জন্য পুরো এলাকার সামনে আমাদের মাথা নিচু হলো? আমাদের বাড়ির মান সম্মান সব নিলামে উঠে গেলো? এলাকার লোকজনদের মুখে যা নয় তা শুনতে হচ্ছে। ছিঃ লজ্জা হচ্ছে আমাদের। লজ্জা।”

ববির রাগটা যেনো মাথায় চড়ে বসল। স্ট্যাম্প হাতে নিয়ে ববি রিফাতের দিকে এগিয়ে যেতেই খায়রুল আহমেদ পেছন থেকে ববির হাতটা টেনে ধরে চোয়াল শক্ত করে বলল,,

“কোথায় যাচ্ছ তুমি? কি করতে যাচ্ছ?”

ববি পিছু ফিরে রাগী চোখে খায়রুল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার হাতটা ছাড়ো মামু। ঐ লাফাঙ্গার গুলোকে আমি উচিত শিক্ষা দিতে যাচ্ছি।”

“দয়া করো আমাকে ববি। আমার মান সম্মান আর ডুবিও না। চেয়ারম্যানের ভাগ্নে হয়ে আর তামাশা দেখি ও না। নিজের ব্যক্তিত্বকে এভাবে এলাকার লোকজনদের কাছে ছোট করো না। যা করার আমার ছেলে ফেলেরা করবে। তুমি প্লিজ আমার পেছনে এসে দাঁড়াও।”

“তোমার ছেলে ফেলেরা কিছু করতে পারবে না মামু। যা করার আমাকে করতে হবে।”

তন্মধ্যেই রিফাতের দৃষ্টি পড়ল ববি এবং খায়রুল আহমেদের দিকে। ববিকে দেখা মাএই রিফাত জুবায়ের আহমেদকে পাশ কাটিয়ে দ্বিগুন রেগে এক ছুটে ববির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,

“আমার লিলিকে বের করে দে ববি। এক্ষনি আমার লিলিকে বের করে দে। ঐ দিন তোকে বিশ্বাস করাটাই আমার ভুল ছিলো। সেকেন্ড টাইম আমি আবারো ভুল করে বসলাম।”

ঘাঁড়ের রগ টান টান করে ববি খায়রুল আহমেদের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে বাম হাতে থাকা স্ট্যাম্পটা দিয়ে রিফাতের পায়ের সাংসপেশীতে জোরে এক আঘাত মেরে বলল,,,

“ইউ ব্লাডি, বিচ। তোর সাহস হয় কি করে? আমার লিলির নাম তোর ঐ অপবিএ মুখে উচ্চারণ করার? কাম অন, লেট মি আনসার?”

রিফাত ব্যাথায় কুঁকিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। রিফাতের চ্যালা ফ্যালারা ববির চারপাশে এসে দাঁড়াতেই খায়রুল আহমেদ ববির সামনে দাঁড়িয়ে তেজী স্বরে চ্যালাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“থামো তোমরা, প্লিজ থামো। ঠান্ডা মাথায় একটা সিদ্ধান্তে যেতে হবে আমাদের। তোমরা আমার অফিসে এসো। বিষয়টা আমি সমাধান করছি।”

রিফাত জখমযুক্ত পা নিয়ে চোখ তুলে খায়রুল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি কোনো সমাধান চাই না চেয়ারম্যান। আমি শুধু লিলিকে চাই। আপনার ভাগ্নে আমার নাকের ডগা দিয়ে আমার লিলিকে গ্রাম থেকে তুলে এনেছে। কতো বড় দুঃসাহস আপনার ভাগ্নের!”

রিফাত ব্যাথায় কুঁকিয়ে আবার বলল,,

“শুধু তাই নয়, আপনার ভাগ্নে তো এখন আপনাদের সবার সামনে আমাকে জখম করল। আমি এর বিচার চাই চেয়ারম্যান। কঠিন বিচার চাই।”

ববি রাগে ফুসফুস করছে। খায়রুল আহমেদের দিকে তাকিয়ে ববি তার জেদ সংবরণ করে রাখছে। শান্ত স্বরে খায়রুল আহমেদ রিফাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“অবশ্যই তুমি বিচার পাবে। উপযুক্ত বিচার পাবে। আমার অফিসে এসো, ঠান্ডা মাথায় আমরা কথা বলি।”

খায়রুল আহমেদের কথায় সম্মতি জানিয়ে রিফাত এবং তার চ্যালা ফ্যালারা এক এক করে খায়রুল আহমেদের অফিসে গেলো। জুবায়ের আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে ববির দিকে তাকিয়ে আছে। সোনিয়া আহমেদ তেঁড়ে এসে জুবায়ের আহমেদকে টানতে টানতে নিজেদের বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে সশব্দে বাড়ির মেইট লাগিয়ে দিলো। পাশাপাশি গেইটে তালা ও ঝুলিয়ে দিলো।

এলাকার লোকজন ববির দিকে তাকিয়ে নানা রকম কুৎসা রটাচ্ছে। যা নয় তাই ভাবছে ববিকে নিয়ে। স্ট্যাম্প হাতে নিয়ে ববি বাড়ির মেইন গেইটে ঢুকতেই সাহেরা খাতুন অশ্রুসিক্ত চোখে ঠাস করে ববির গালে কষে এক চড় মেরে বলল,,

“দিলি তো আমার ভাইয়ের সমস্ত মান সম্মান ধূলোয় মিশিয়ে? এলাকার লোকজনদের কাছে আমার ভাইকে ছোট করে? তোর কি মনে হয়? এতো কিছুর পরে ও আমার ভাই আমাদের এই বাড়িতে জায়গা দিবে?”

ববি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হেমা ফ্যাস ফ্যাস করে কাঁদছে। কান্না থামিয়ে হেমা জোরে চেঁচিয়ে বলল,,

“ঐ মেয়েকে তুই আজই ঐ ছেলেটার হাতে তুলে দিবি ববি। আপদ যতো দ্রুত পারিস বিদায় কর। রোজ রোজ অশান্তি আমাদের ভালো লাগছে না। তোর জন্য আমার মা ও মাথার ছাদটা হারাবে। পথে দাঁড়াতে হবে। এলাকার লোকজনদের ও মুখ দেখাতে পারবে না।”

ববি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হেমার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“লিলি আমার ওয়াইফ আপু। ঐ স্ক্রাউন্ডেলটার হাতে লিলিকে তুলে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসছে না। বুঝে শুনে কথা বলো আপু, ফর গড সেইক।”

রাগে গজগজ করে ববি দ্রুত পায়ে হেঁটে ববির রুমের দিকে অগ্রসর হলো। পেছন থেকে জিনিয়া আহমেদ মাথা নিচু করে ববিকে ডেকে বলল,,

“ববি? তোমার মামু বলেছে লিলিকে নিয়ে অফিস রুমে যেতে। ওখানেই বিচার হবে।”

ববি মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। জিনিয়া আহমেদ উদ্বিগ্ন হয়ে আবার পেছন থেকে ববিকে ডেকে বলল,,

“যাই হয়ে যাক ববি। লিলির হাতটা ছেড়ো না। মেয়েটা বড্ড অসহায়। কি মায়া মেয়েটার দু চোখে। সত্যি বলতে মেয়েটার মায়ায় পড়ে গেছি আমি। খুব ভালবেসে ফেলেছি মেয়েটাকে।”

ববি অশ্রুসিক্ত চোখে জিনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি ওর হাতটা ছাড়ার জন্য ওকে বিয়ে করি নি মামানী। আজন্ম তাকে আমার ভাগ্যের সাথে জুড়ে নিয়েছি আমি। লিলি জীবনে ও আমার, মরণে ও আমার। লিলি একান্তই আমার।”

চোখের জল মুছে ববি রুমের দরজায় কয়েকটা টোকা মারতেই লিলি ব্যালকনী থেকে কান্নারত অবস্থায় দৌঁড়ে এসে রুমের দরজাটা খুলে আচমকা ববিকে ঝাপটে ধরে বলল,,

“আমি ব্যালকনী থেকে সব দেখেছি ববি। আপনাকে ছেড়ে আমি কোথাও যেতে চাই না। প্লিজ আমাকে ঐ রিফাতের হাতে তুলে দিবেন না ববি। আমি আপনার কাছে হাত জোর করছি প্লিজ।”

ববি লিলিকে টাইট করে ঝাপটে ধরে লিলির ঘাঁড়ে দীর্ঘ একটা চুমো খেয়ে শান্ত স্বরে বলল,,

“বি কুল লিলি। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। ববি আজন্মের জন্য লিলিকে ধরেছে। পৃথিবী উল্টে গেলে ও ববি লিলিকে ছাড়বে না। লিলি শুধু ববির৷ শুধুমাএ ববির।”

লিলি কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,,

“রুমের দরজাটা আটকে দিন ববি। রিফাত যে কোনো মুহূর্তে এই রুমে চলে আসতে পারে। আমাকে টেনে হেছড়ে আপনার বুক থেকে নিয়ে যেতে পারে। ঐ রিফাত সব পারে সব।”

ববি অট্ট হেসে বলল,,

“এটা রিফাতের গ্রাম না৷ এটা ববির শহর। রিফাতের এতো বড় দুঃসাহস হয় নি ববির বুক থেকে লিলিকে কেড়ে নেওয়ার। হাত কেটে রেখে দিবো ঐ স্ক্রাউন্ডেলটার। ইউ জাস্ট ডোন্ট ওরি ওকে?”

লিলি টাইট করে ববিকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“তা ও আমার খুব ভয় করছে ববি। আপনার মামু যদি আমাকে ঐ রিফাতের হাতে তুলে দেন?”

“কোনো চান্স নেই। ববি যা বলবে তাই হবে। এখন চলো। মামুর আমাদের ডেকেছেন। রিফাত ও ঐখানে আছে।”

“আমি যাবো না ববি। প্লিজ আমি যাবো না। রিফাত সুযোগ পেলে হয়তো আমাকে ছাড়বে না। জোর করে ওর সাথে নিয়ে যাবে।”

“আমি তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখব। রিফাত কেনো? রিফাতের বাপের বাপের ও পারবে না ববির হাত থেকে লিলিকে জোর করে কেড়ে নিতে!”

ববিকে ছেড়ে লিলি চোখের জল মুছে ববির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তাহলে চলুন। লেইট হলে আপনার মামু আবার রাগ করবেন।”

ববি ম্লান হেসে লিলির মাথায় বড় করে ঘোমটা টেনে দিয়ে লিলির হাত ধরে রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে খায়রুল আহমেদের অফিস রুমে চলে এলো। লিলিকে দেখা মাএই সাহেরা খাতুন, হেমা, খায়রুল আহমেদ চোখ রাঙ্গিয়ে লিলির দিকে তাকালো। লিলি ভয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলল। রিফাত এবং রিফাতের চ্যালারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকালো। রিফাত জখম যুক্ত পা নিয়ে বসা থেকে উঠে লিলি এবং ববির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লিলিকে উদ্দেশ্য করে চোখ লাল করে বলল,,

“নতুন বউ সেজে আছিস কেনো? তুই তো ববির রক্ষিতা। রক্ষিতারা এভাবে সেজেগুজে, গয়না পড়ে ঘুড়ে নাকি?”

ববি ক্ষুব্ধ হয়ে রিফাতের গলা চেঁপে ধরে বলল,,

“লিলি আমার ওয়াইফ। আমার লিগালি ওয়াইফ। প্রথমবার তোকে ছাড় দিলে ও এবার আমি তোকে ছাড় দিবো না স্ক্রাইন্ডেল। আই ওয়ানা কিল ইউ।”

লিলি ববির হাতটা ধরে টানছে আর সশব্দে কেঁদে বলছে,,

“ববি ছাড়ুন উনাকে। মরে যাবেন তো উনি।”

হেমা তেড়ে এসে লিলির দু গালে দু চড় বসিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,

“তোমার জন্যই আজ আমাদের বাড়িতে আজ এতো অশান্তি। তুমিই হলে সব অশান্তির মূল বুঝেছ? আজই তুমি ঐ ছেলের সাথে তোমার গ্রামে ফিরে যাবো। দু, একদিনের মধ্যে আমরা ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো।”

লিলি গালে হাত দিয়ে হেচকি তুলে হেমার দিকে তাকিয়ে আছে। জিনিয়া আহমেদ আর সাহেরা খাতুন হেমাকে টেনে এনে চোখ রাঙ্গিয়ে হেমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাহেরা খাতুন প্রখর রেগে হেমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“ঐ মেয়েটার গাঁয়ে হাত তুলা তোর উচিত হয় নি হেমা। মেয়েটা এমনি এমনি এই বাড়িতে আসে নি, তোর ভাইয়ের হাত ধরে এই বাড়িতে এসেছে। সব দোষ তোর ভাইয়ের। মারতে হলে তোর ভাইকে মার।”

ববি চড়ের বিষয়টা এখনো খেয়াল করে নি। খায়রুল আহমেদের চেঁচামেচিতে ববি বাধ্য হয়েছে রিফাতের গলাটা ছাড়তে। জেদ সংবরণ করতে না পেরে ববি খায়রুল আহমেদের দিকে তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,

“এই লাফাঙ্গাগারটাকে তুমি এক্ষনি তোমার অফিস থেকে বের করো মামু। একে আমি এক মুহূর্ত চোখের সামনে সহ্য করতে পারছি না। দুনিয়া এদিক সেদিক হয়ে গেলে ও লিলিকে আমি ছাড়ছি না। তোমরা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে ও আমি লিলিকে ছাড়ছি না। প্রয়োজনে লিলির হাত ধরে আমি বাড়ি ছাড়ব। কোনো বিচারের প্রয়োজন নেই আমার। আমি নিজেই নিজের বিচার করতে পারি।”

খায়রুল আহমেদ ক্ষুব্ধ হয়ে ববির গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে বললেন,,

“সমস্ত বেয়াদবির সীমা তুমি পাড় হয়ে গেছো ববি। যাও রুমে যাও। বউয়ের আঁচল ধরে সোজা রুমে যাও। দেখব, এই বউ তোমাকে স্বর্গে নিতে পারে কিনা। গেট আউট ফ্রম হেয়ার। জাস্ট গেট আউট।”

রিফাত তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে খায়রুল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“লিলিকে কোথায় যেতে বলছেন আপনি? ভালোয় ভালোয় লিলিকে আমার হাতে তুলে দিন। লিলি আমার সাথে গ্রামে ফিরবে। আপনার ভাগ্নের সাথে রুমে যেতে নয়।”

খায়রুল আহমেদ এবার ঠাস করে রিফাতের গালে কষে এক চড় মেরে বললেন,,

“বিবাহিত মেয়েকে তার স্বামীর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার তুই কে? দেখছিস না মেয়েটা বিবাহিত? মেয়েটা আপাতত আমার ভাগ্নের বউ৷ যদি কখনো ওদের ছাড়াছাড়ি হয় কথা দিচ্ছি আমি ঐ মেয়েকে তোর হাতে তুলে দিবো। এখন তুই আমার এলাকা থেকে বিদেয় হ৷ চ্যালা ফ্যালা সহ বিদেয় হ।”

রিফাত গালে হাত দিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে খায়রুল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“কাজটা আপনি ঠিক করলেন না চেয়ারম্যান! আপনি বলেছিলেন সুষ্ঠু বিচার করবেন।”

ববি আবারো রিফাতের কলার চেঁপে ধরে বলল,,

“এই তুই কাকে চোখ রাঙ্গাচ্ছিস? আমার মামুকে? আমার মামুর বাড়িতে দাঁড়িয়ে তুই আমার মামুকে চোখ রাঙ্গাচ্ছিস?”

খায়রুল আহমেদের চ্যালা ফ্যালারা এসে রিফাত এবং তার চ্যালা ফ্যালাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলো। জুবায়ের আহমেদ দরজার আড়াল থেকে সবটা শুনে আনন্দ অশ্রু নিয়ে ববির বাড়ি থেকে প্রস্থান নিলেন। ববি আচমকা খায়রুল আহমেদকে ঝাপটে ধরে কান্না জড়িত স্বরে বলল,,

“থ্যাংকস মামু৷ মেনি মেনি থ্যাংকস। তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না, আজ ববি কতোটা খুশি হয়েছে। আজ তুমি একদম যোগ্য বিচার করেছ মামু। আই স্যালু্ট ইউ মামু। আই স্যালুট ইউ।”

খায়রুল আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,

“আমি মন থেকে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারছি না ববি। সমাজে তুমি আমার মাথাটা ঠিক কতোটা নিচু করেছ তা শুধু আমি জানি। অবশ্য তোমার এসব জানার কথা ও না। তুমি তো আবেগটাকেই এখন বিবেক হিসেবে দেখছ। ভালো, মন্দ জাজ করার বিবেক বুদ্ধি হারিয়েছ।”

ববিকে ছেড়ে খায়রুল আহমেদ প্রস্থান নিলেন। লিলি মাথা নিচু করে নীরবে চোখের জল ছাড়ছে৷ সাহেরা খাতুন ববির দিকে তেড়ে এসে বললেন,,

“দেখলি আমার ভাই কতোটা ভালো মানুষ? এতো অপমান, লজ্জা, সম্মান হানির পরে ও আমার ভাই আমাদের এই বাড়ি ছাড়তে বলেন নি। কেনো জানিস? তোকে ভালোবাসেন বলে, আমাদের ভালোবাসেন বলে। ছোট বেলা থেকে তোকে কোলে, পিঠে মানুষ করেছেন বলে। ভাগ্নের অন্যায় দেখে ও ভাগ্নেকে কোনো ভাবে হার্ট করতে পারছেন না। ভাগ্নের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে ও সহ্য করতে পারছেন না। তুই বেইমান বলেই পারছিস তোর কোমল মনের মামুকে ভালোবাসার বিনিময়ে এতোটা হার্ট করতে। এখনো বউয়ের হয়ে সাফাই দিতে। বউকে সাপোর্ট করতে।”

হেমা দাঁত কিড়িমিড় করে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“এক্ষনি আমি এই বাড়ি ছাড়ছি। আর এক মুহূর্ত ও আমি এই বাড়িতে থাকতে চাই না। ঐ মেয়েটার মুখ ও দেখতে চাই না। আগামি এক বছর ও আমি এই বাড়িতে পা রাখব না। তোমাদের যদি আমাকে দেখতে ইচ্ছে হয় তাহলে প্লিজ ঐ বাড়িতে চলে যেও। এক পলক আমাকে দেখে এসো।”

জিনিয়া আহমেদ অশ্রুসিক্ত চোখে এক পলক লিলির দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে অফিস রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। ববি লিলির হাত ধরে নিজেদের রুমে ঢুকে রুমের দরজাটা আটকে দিলেন। বেডের উপর মাথা নিচু করে বসে ববি ছোট আওয়াজে লিলিকে বলল,

“এক গ্লাস পানি দাও তো।”

লিলি রুম থেকে বের হয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে গ্লাসে করে পানি নিয়ে এলো। ববির মুখের কাছে পানির গ্লাসটা ধরতেই ববি গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানিটা শেষ করল। লিলির হাতে গ্লাসটা ধরিয়ে ববি লিলির দিকে তাকাতেই কপাল কুঁচকে চোখে, মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ ফুটিয়ে বলল,,

“তোমার গাল দুটো ফুলে আছে কেনো লিলি? কি হয়েছে?”

লিলি গ্লাসটা হাতে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে পিছু ঘুড়ে জোর পূর্বক হেসে বলল,,,

“ব্যালকনীর গ্রীলের ছাপ পড়েছে। তাই গাল দুটো ফুলে লাল হয়ে গেছে।”

ববি বসা থেকে উঠে লিলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“গ্রীলের ছাপ তো এতো প্রখরভাবে লাগার কথা না। সত্যি করে বলো কি হয়েছে?”

লিলি প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,,

“ববি। আম্মু, আব্বুর জন্য আমার খুব টেনশান হচ্ছে। রিফাত নিশ্চয়ই আম্মু, আব্বুর সাথে খুব খারাপ কিছু করেছে। আব্বুর নাম্বারে একটু কল করবেন প্লিজ। আমি নাম্বারটা বলছি।”

ববি চোয়াল শক্ত করে লিলির ডান হাতটা চেঁপে ধরে বলল,,

“আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। এরপর যা হওয়ার হবে।’

লিলি অশ্রুসিক্ত চোখে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আপনার আপু আমার গালে চড় মেরেছে ববি।”

লিলির হাতটা ছেড়ে ববি অগ্নিশর্মা হয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিতেই লিলি পেছন থেকে ববির হাতটা টেনে ধরে করুন স্বরে বলল,,

“দয়া করুন ববি। প্লিজ আপুকে কিছু জিগ্যেস করতে যাবেন না। বিশ্বাস করুন আমি আর চাই না আমার জন্য আপনাদের পরিবারে আর কোনো অশান্তি হোক। এতো সব অশান্তিতে আমি হাফিয়ে উঠছি। হাত জোর করছি আমি আপনার কাছে। প্লিজ থেমে যান।”

ববি থেমে গেলো। চোখে জল নিয়ে ববি লিলিকে টাইট করে ঝাপটে ধরে বলল,,

“আপুর হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি লিলি। পারলে আপুকে ক্ষমা করে দিও।”

“এসব কি বলছেন ববি? আপু আমার বড়। আমার গাঁয়ে একশবার হাত তুলার অধিকার আছে উনার। আমি কিছু মনে করি নি ববি। সত্যি বলছি আমি কিছু মনে করি নি। প্লিজ আপনি এভাবে আমার কাছে ক্ষমা চাইবেন না। প্লিজ।”

ববিকে ছেড়ে লিলি আলতো হাতে ববির পুরো মুখে হাত বুলিয়ে গলা জড়ানো স্বরে বলল,,

“আমার কেনে জানি না মনে হচ্ছে, আপনি শুধু দয়াবোধ থেকে আমার জন্য এতোকিছু করছেন না ববি। নিশ্চয়ই অন্য কোনো কারণ আছে। কারণটা কি ববি?”

লিলির কপালে দীর্ঘ একটা চুমো খেয়ে ববি লিলিকে জড়িয়ে ধরে বলল,,

“কারণটা তোমাকে মন থেকে বুঝে নিতে হবে লিলি। কারণটা এক্সপ্লেইন করে বুঝানো যাবে না। আমি অপেক্ষায় থাকব লিলি। একদিন তুমি ঠিক কারণটা বুঝতে পারবে।”

#চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here