#প্রেম_ফাল্গুন
#পর্ব_১৩,১৪
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)
“বোকা মেয়ে। স্বামীকে কেউ ভাই বলে ডাকে?”
ববি বিষম খেয়ে শুকনো কাশল। লিলি ইতস্তত বোধ করে জিনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তাহলে কি বলে ডাকব?”
জিনিয়া আহমেদ চাঁপা হেসে ববিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“কি ববি৷ তোমার বউ তো দেখছি কিছুই বুঝে না। খুবই ভোলাভালা। এতো অবুঝ হলে চলবে?”
ববি পেছনের চুল গুলো টেনে মাথা নিচু করে লজ্জা প্রকাশ করল। জিনিয়া আহমেদ লিলির দিকে তাকিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে বললেন,,
“তোমার বয়স কতো লিলি?”
“সতেরো তে পড়ল সবে মাএ!”
ববি বেকুব হয়ে লিলির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,
“অনলি সেভেনটিন! আমি তো ভেবেছিলাম সি ইজ 18+. শেষ মেষ আমি বাল্য বিবাহ্ করলাম?”
জিনিয়া আহমেদ বেশ আশ্চর্যিত হয়ে লিলির দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“এতো ছোট? পড়ালেখা কতটুকু তোমার?”
“মাএ এস.এস.সি দিয়েছি। এক মাস পরেই রেজাল্ট পাবলিশ হবে।”
“নড়াইল তোমার জন্মস্থান তাই তো?”
“জ্বি।”
“এর আগে কখনো শহরে আসো নি?”
“না। এই নিয়ে দুইবার শহরে আসা।”
“কোনো ব্যাপার না। শহরে যেহেতু একেবারের জন্য এসেই পড়েছ তাহলে আস্তে ধীরে শহরের সমস্ত আদব, কায়দা, নিয়ম, রীতি সব শিখে যাবে। খুব চঞ্চল হতে হবে তোমাকে, বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করতে হবে, বাড়ির সবার সাথে মিশতে হবে, কথা বলতে হবে, উপস্থিত বুদ্ধি তো ভীষণ রকমের থাকতে হবে, শহরের এদিক সেদিক ঘুড়ে বেড়াতে হবে, শহরের চল, চলন শিখতে হবে, অত্যধিক সাহস থাকতে হবে, পরিবারের হোক বা বাইরের লোকজন হোক সবার সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে, ছোটদের শ্রদ্ধা করতে হবে, সবার মন জয় করার মতো ক্ষমতা তোমার মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে। তার পাশাপাশি প্রতিবাদ করার ক্ষমতা ও থাকতে হবে। মুখ বুজে নিজের সাথে অন্যায় কখনো মেনে নিবে না। তবেই তুমি একটা সংসারকে আগলে রাখতে পারবে। নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারবে। বয়স ও তোমার তেমন হয় নি। তাই হয়তো এই বিষয়গুলোতে তুমি খুব অজ্ঞ৷ তবে খুব দ্রুত এই অজ্ঞতা গুলো তোমার কাটিয়ে উঠতে হবে। নতুবা সংসার জীবনে বেশিদিন টিকতে পারবে না।”
ববি গলা ঝাঁকিয়ে জিনিয়া আহমেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“মামানী। তোমরা কথা বলো। আমি আসছি।”
লিলি চোখ তুলে ববির দিকে তাকালো। ববি এক পলক লিলির দিকে তাকিয়ে হুড়মুড়িয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলো। জিনিয়া আহমেদ লিলিকে নিয়ে বেডের উপর বসলেন। লিলির ডান হাতটা ধরে মলিন হেসে বললেন,,
“আজ তোমাদের ফুলসজ্জা৷ জানো?”
লিলি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। সে পারছে না পাখি হয়ে আকাশে উড়াল দিতে। অন্তত এই লজ্জাকর পরিস্থিতি থেকে তো মুক্তি পাওয়া যাবে। লিলি মৌণ হয়ে বসে আছে। প্রতিত্তুরে কিছু বলছে না। জিনিয়া আহমেদ হাসি চেঁপে বললেন,,
“লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই লিলি। আসলে আমি একটা ব্যাপার ক্লিয়ার করতে তোমাকে এই কথাটা বললাম। তোমার ননশের সাথে যদি তোমার ভালো সম্পর্ক থাকত, তাহলে হয়তো এই কথাগুলো তোমার ননশ ই তোমাকে বলত। যাই হোক, আমি এখন যে কথা গুলো তোমাকে বলব খুব মনযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনবে কেমন?”
লিলি মাথা নিচু করে হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালো। জিনিয়া আহমেদ অল্প সময় থেমে বললেন,,
“দেখো লিলি। তুমি এখনো এনাফ ম্যাচুয়েড নও। ঐদিকে ববির বিয়ের বয়স অলরেডি হয়ে গেছে। এক্ষেএে, ববির অনেক চাহিদা থাকতে পারে। তোমার কিন্তু কিছুতেই উচিত হবে না এখনি ববির সমস্ত চাহিদা মেটানোর। এতে ইন ফিউচারে তোমার অনেক শারীরিক প্রবলেম দেখা দিতে পারে। তাই আমার মনে হয় তোমার আরো এক থেকে দেড় বছর সময় নেওয়া উচিত। অন্তত নিজেকে স্টেবল করার জন্য। আই হোপ, তুমি বুঝতে পারছ আমি কি বলতে চাইছি?”
লিলি মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলল,,
“আমাদের মধ্যে এসব কিছুই হবে না মামানী। আমার প্রতি উনার কোনো ফিলিংস নেই, চাহিদা ও নেই। আমরা নামে মাএ হাজবেন্ড, ওয়াইফ। উনি কখনো আমাকে ছুঁয়ে দেখবেন না। আর আমি ও কখনো উনার কাছাকাছি যাবো না। দুজনের মধ্যেই একটা অদৃশ্য দেয়াল থাকবে। দেয়ালের এপারে ওপারে আমাদের বুঝাপড়া সীমাবদ্ধ থাকবে। দেয়াল ভেদ করে কখনো আমরা এক হতে পারব না মামানী। সেই চিন্তা কখনো আমার মাথাতে ও আসবে না।”
মৌণতা ভেঙ্গে লিলি জিনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“বুঝতে পেরেছি মামানী। আপনি যা বলবেন তাই হবে।”
“গুড। তার মানে তুমি এটা ভেবো না যে, আমি ববিকে ভালোবাসতে বারণ করেছি। শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া ও হাজবেন্ড এবং ওয়াইফের মধ্যে একটা মানসিক সম্পর্ক থাকে। সেই মানসিক প্রশান্তিটা কিন্তু ববিকে তোমার ষোল আনায় দিতে হবে। এক্ষেএে যেনো কোনো রূপ ত্রুটি না হয়। অলওয়েজ ববির আশেপাশে থাকতে হবে। ববির যত্ন নিতে হবে। ববির কখন কোনটা লাগবে খেয়াল রাখতে হবে। ববির কথা মেনে চলতে হবে। জমিয়ে ববির সাথে প্রেম করতে হবে। তোমাদের বয়সটাই তো প্রেমের। বিয়ের পর প্রেম আরো মাখো মাখো হয় জানো তুমি?”
লিলি হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালো। জিনিয়া আহমেদ লিলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
“ববি আমাদের সবার খুব আদরের। ববিকে কখনো আমি ভাগ্নের চোখে দেখি নি। নিজের ছেলের চোখেই দেখেছি। আমার নিজের কোনো ছেলে নেই। মেয়ে আছে দুটো। দুজনই আমেরিকায় স্বামী সহ স্যাটেল্ড। দিনে দুবার ভিডিও কলে তাদের সাথে কথা হয়। রাতে আবার দুজনই একসাথে কল করবে। গ্রুপ কল বুঝলে? যদি ওরা শুনতে পারে ববি বিয়ে করেছে। খুশিতে জাস্ট পাগল হয়ে যাবে ওরা। আর তোমাকে দেখার জন্যে ও মরিয়া হয়ে উঠবে।”
লিলি হালকা হাসল। জিনিয়া আহমেদ বসা থেকে উঠে খাবারের প্লেইটটা লিলির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,
“জলদি খেয়ে নাও। আমি আসছি। কেমন?’
“মামানী। আপনি খেয়েছেন তো?”
“না। তোমার মামু খেলেই পরে আমি খাবো। ববি তো গেছে দেখি কি হয়!”
ওয়াশরুমের দরজার কাছে বালতি ভর্তি কাপড় দেখে জিনিয়া আহমেদ কপাল কুঁচকে বললেন,,
“কে ওয়াশ করল এত গুলো কাপড়? বুয়া কি এসেছিলো তোমাদের রুমে?”
লিলি খাবারের প্লেইটটা বেডের উপর রেখে আমতা আমতা করে বলল,,
“একচুয়েলি মামানী। আমিই ওয়াশ করেছি কাপড় গুলো। আসলে আপনার ছেলের প্যান্ট, শার্ট গুলো খুব নোংরা হয়েছিলো, তাই ভাবলাম ধুঁয়ে দেই।”
“তাই বলে নতুন বউ এসব ধোঁয়া মুছার কাজ করবে?”
“আমার কাজ করতে ভালোই লাগে মামানী৷ তাই কাপড় গুলো ধুঁয়ে নিলাম। আপনি কিছু মনে করবেন না প্লিজ।”
“কাজ করার জন্য বাড়িতে বুয়া আছে। নেক্সট টাইম ধোঁয়া মুছার কোনো কাজ তুমি করবে না? বুঝতে পেরেছ?”
লিলি গম্ভীর মুখে মাথা নাঁড়ালো। জিনিয়া আহমেদ কাপড়ের বালতি সহ লিলির ভেজা জামা কাপড়গুলো নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলেন। খাবারের প্লেইটটা স্টাডি টেবিলের উপর রেখে লিলি লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ক্লান্তি দূর করার জন্য বিছানায় গাঁ এলাতেই ক্ষনিকের মধ্যে তার দুচোখে ঘুম ধরা দিলো। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল লিলি।
ঐদিকে, ববি বাড়ির সবাইকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। কেউ কারো সাথে কোনো রূপ কথা বলছে না। সবার মুখে গম্ভীর ভাব৷ একটু আগেই ববি সবাইকে জোর করে টেনে হেছড়ে খাবার টেবিলে বসিয়েছে। ম্লান হেসে ববি সবার প্লেইটে খাবার সার্ভ করছে। সাহেরা খাতুনের প্লেইটে ভাত সার্ভ করতে নিলেই সাহেরা খাতুন ববিকে থামিয়ে ঝাঁঝালো স্বরে বললেন,,
“ববি আমি খাবো না বলেছি তো। এরপরে ও কেনো এই লোক দেখানো নাটক গুলো করছিস? তুই প্লিজ রুমে যা। বউয়ের আঁচল ধরে বসে থাক। এখন তো তোর বউ ই তোর অধিক আপন। আমরা কেউই তোর কিছু না। জাস্ট নাথিং।”
ববি শান্ত স্বরে বলল,,
“আম্মু প্লিজ৷ ওভার হাইপার হয়ো না। পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করো। তোমার ছেলে যার সাথে সুখে থাকবে, ভালো থাকবে তাকেই বিয়ে করে ঘরে তুলেছে। তোমার ছেলের সুখ কি তোমার কাছে অধিক প্রিয় নয়? তুমি চাও না তোমার ছেলে যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে সুখি হোক? শান্তিতে সংসার করুক? আমি যেমন লিলিকে ভালোবাসি। এর চেয়ে ও ভালো আমার গোটা পরিবারকে বাসি। লিলির আমার মাএ কয়েকদিনের ভালোবাসা৷ আর তোমরা সেই ছোট বেলা থেকে৷ যাদের ভর করে আমি এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। এই যে, জোর করে আমি তোমাদের এখানে টেনে নিয়ে এলাম, খাবার টেবিলে বসালাম, খাবার খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম এসব কেনো করছি জানো? তোমাদের ভালোবাসি বলেই। কোনো ছলনা বা নাটক থেকে নয়। লিলি যেমন আমার লাইফে অপরিহার্য। তেমনি তোমরা আমার লাইফে অপরিহার্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারো জায়গা কেউ দখল করতে পারবে না।”
হেমা গলা জড়ানো স্বরে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আয়রা কোন দিক থেকে খারাপ ছিলো ববি? কেনো তুই আয়রাকে ঠকালি? শ্বশুড় বাড়ির সবাই আমার সাথে প্রচন্ড ক্ষেপে আছে। আতিক তো আমার কলটা পর্যন্ত পিক করছে না। কেনো আমাকে এভাবে তুই আতিকের কাছে অপদস্ত করলি? বল কেনো?”
“আয়রা কোনো দিক থেকেই খারাপ ছিলো না আপু। তবে আয়রা আমার মন মতো ছিলো না! লিলিকে ভালোবাসার পর আমি অন্য কাউকে মনে ঠাঁয় দিতে পারি নি। আমার জন্য যেহেতু আয়রার ক্ষতি হয়েছে, তোমার শ্বশুড় বাড়িতে কলহ্ বেঁধেছে, জিজুর সাথে তোমার প্রবলেম ক্রিয়েট হয়েছে। আমিই চেষ্টা করব পরিস্থিতি কন্ট্রোল করার। রাতে আমি তোমাকে নিয়ে তোমার শ্বশুড় বাড়ি যাবো। সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করব। বিশেষ করে আয়রাকে। আই হোপ, আয়রাকে সমস্তটা বুঝানোর পর আয়রা আমার মনের অবস্থাটা বুঝবে। আমার সিদ্ধান্তকে সায় জানাবে। আমি এ ও বিশ্বাস করি, আয়রা আমার চেয়ে ও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে, আমার চেয়ে ও বেস্ট কাউকে। যে আয়রাকে তার সমস্তটা দিয়ে ভালোবাসতে পারবে, আগলো রাখতে পারবে।”
“কিন্তু আয়রার তো তোকে প্রয়োজন ছিলো ববি। শুধু তোর প্রয়োজন ছিলো।”
“আমার ও তো লিলির প্রয়োজন ছিলো আপু। শুধু লিলির।”
খায়রুল আহমেদ ভীষণ রেগে চেঁচিয়ে বললেন,,
“এতো যে লিলি লিলি করছ, ঐ লিলির বংশ পরিচয় কি? বাবা কি করে? নড়াইলে তাদের কয়টা বাড়ি আছে? কয়টা গাড়ি আছে? কতো বিঘা সয় সম্পত্তি আছে? টেল মি।”
“কিছু নেই লিলির৷ লিলির বাবার ও কিছু নেই। শুধু মাএ এক গন্ডা জমিতে তাদের দুই রুম বিশিষ্ট একটা পাকা বাড়ি আছে। দু, তিনটা বাড়ি ও নেই, গাড়ি ও নেই, বিঘা বিঘা জমি ও নেই।”
“শেষে কিনা তুমি একটা গরীবের মেয়েকে বিয়ে করলে ববি? যার বাবার কোনো সামর্থ্যই নেই। মেয়েকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই!”
“লিলির বা লিলির বাবার সম্পত্তির লোভে পড়ে আমি লিলিকে ভালোবাসি নি, বিয়ে করি নি। গ্রাম্য একটা, সরল, সোজা, আনস্মার্ট, নির্বোধ মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি। যার সামর্থ্য না থাকলে ও আকাশ জোড়া স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্নের টানেই সে একদিন দু, তিনটে বাড়ি, গাড়ি, বিঘে বিঘে জমি হাসিল করতে পারবে।”
খায়রুল আহমেদ রাগে গজগজ করে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠতে নিলেই ববি এক ছুটে খায়রুল আহমেদের হাত চেঁপে ধরে বলল,,
“প্লিজ মামু৷ খাবারটা খেয়ে যাও। ববি তোমার হাত ধরেছে মামু। এভাবে তুমি ববিকে রিফিউজ করতে পারো না।”
ববির চোখে জল টলমল করছে। ববির চোখের দিকে এক পলক তাকিয়ে খায়রুল আহমেদ বাধ্য হয়ে খাবার টেবিলে বসলেন। ববিকে খাবার টেবিলে বসিয়ে জিনিয়া আহমেদ সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছেন। সাহেরা খাতুন এবং হেমার মাঝখানের চেয়ারটায় বসে ববি আহ্লাদি স্বরে সাহেরা খাতুনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“আম্মু খাইয়ে দাও। আজ আমি তোমার হাতেই খাবো।”
সাহেরা খাতুন নাক টেনে কেঁদে বললেন,,
“তুমি এখন আমার মনে নেই ববি। মাকে তুমি খুব হার্ট করেছ৷ মা আর কখনো মন থেকে তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না, আদর করে খাইয়ে দিতে ও পারবে না। তোমার জন্য তোমার বোনের সাংসারিক জীবনটা ও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী ববি। একান্ত তুমিই দায়ী।”
হেমা হেচকি তুলে কেঁদে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠতে নিলেই ববি পেছন থেকে হেমার হাত টেনে ধরে বলল,,
“আপু৷ তুমি ও কি আম্মুর মতো আমাকে মন থেকে কেটে দিয়েছ? ছোট ভাইয়ের একটা ভুল ক্ষমা করতে পারবে না? তাহলে কি আমি ধরে নিবো, আমি আবারো অনাদ হয়ে গেছি? বাবা মারা যাওয়ার পর যতোটা অনাদ হয়ে গেছিলাম?”
সাহেরা খাতুন ভীষণ রেগে বললেন,,
“আমাদের কাউকে এসব আবেগ প্রবণ কথা বলে লাভ নেই ববি৷ তুমি কারো থেকে কোনো রূপ সেমপ্যাথি পাবে না। এমনকি তোমার বউকে ও আমরা মেনে নিতে পারব না।”
আচমকা হেমা ববির হাতটায় একটা চুমো খেয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে বলল,,
“তুই অজান্তেই আমাদের সবাইকে খুব হার্ট করেছিস ববি৷ মস্ত বড় একটা অন্যায় করেছিস। তোর কাছে অন্যায়টা ঠুনকো মনে হলে ও আমাদের কাছে বিশাল। এতো সহজে তোকে ক্ষমা করা আমাদের কারো পক্ষেই সম্ভব না। আর তোর বউকে ও মেনে নেওয়া সম্ভব না। আমার হাতটা ছাড় ববি। আমাকে যেতে দে। একটু একা থাকতে দে।”
“খাবারটা খেয়ে যাও আপু প্লিজ। ইট’স মাই হাম্বেল রিকুয়েস্ট।”
ববির আকুতিভরা মুখের দিকে তাকিয়ে হেমা শান্ত হয়ে গেলো। হাতে গোনা দু লোকমা খাবার খেলো। উপস্থিত সবাই একটু আধটু খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলো। সাহেরা খাতুন রুমে প্রবেশ করার পূর্বে ববিকে ডেকে বললেন,,
“তোমার বউকে যেনো আমার এিসীমানায় ও না দেখি। কথাটা মনে রেখো।”
ববি কিছু বলার পূর্বেই সাহেরা খাতুন রুমের দরজা আটকে দিলেন। ববি বিষন্ন মন নিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই দেখল লিলি বেডের এক কোণায় নিজেকে যথেষ্ট গুটিয়ে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে আছে। দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে ববি রুমের দরজায় খিল দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল দুপুর ৩ঃ৩০ বাজছে। স্টাডি টেবিলের দিকে নজর পড়তেই ববির চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। খাবারটা ববি যেমন দেখে গেছে খাবারটা এখন ও ঠিক তেমনই আছে। একটা ভাত ও জায়গা থেকে নড়ে নি। প্রচন্ড ক্ষীপ্ত হয়ে ববি লিলির সম্মুখে দাঁড়িয়ে লিলিকে দুহাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে বলল,,
“লিলিলিলিলি। হেই স্টুপিট গার্ল। গেট আপ।”
ববির তীক্ষ্ণ স্বরের হাঁক ডাকে লিলি হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল। কাঁধ থেকে তার শাড়ি অলরেডি খসে পড়েছে। আপাতত সেই দিকে দৃষ্টি নেই লিলির। লিলির দৃষ্টি এখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করে তার পাশে বসে থাকা ববির উপর। ঘুমে আচ্ছন্ন ঘোলা ঘোলা দুচোখে লিলি ববির দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,,
“কি হয়েছে ববি ভাই? খারাপ কিছু হয়েছে? এভাবে ডাকছেন কেনো?”
“মামানী একটু আগে তোমাকে কি বলে গেছে?”
লিলি ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে বলল,,
“কি বলে গেছে?”
ববি দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,
“ডোন্ট কল মি “ভাই।” হাজবেন্ডকে ভাই ডাকা যায় না।”
“তাহলে কি ডাকব?”
ববি কপাল চাপড়ে বলল,,
“নাম ধরে ডাকবে নাম ধরে।”
লিলি দীর্ঘ একটা হামি তুলে বলল,,
“ঠিক আছে।”
আচমকা ববি লিলির বাম হাতটা চেঁপে ধরে বলল,,
“খবারটা এখনো খাও নি কেনো?”
লিলি ব্যাথায় নাক, মুখ কুঁচকে বলল,,
“আপনি এখনো খান নি তাই।”
“কে বলল আমি খাই নি?”
“কেউ না। আইডিয়া করে বললাম।”
“তোমাকে এতো আইডিয়া করতে কে বলেছে?”
লিলি মাথা নিচু করে হাতের ব্যাথায় কুঁকাচ্ছে। লিলির হাতটা ছেড়ে ববি মাথা নিচু করে সামনের চুল গুলো টানছে আর বলছে,,
“আমি জাস্ট নিতে পারছি না এতো পেইন। ঐদিকে আমার পুরো পরিবার আর এইদিকে তুমি। পরিবারের লোকদের কোনো রকমে ম্যানেজ করতে পারলে ও আমি তোমাকে ম্যানেজ করতে পারছি না লিলি। তুমি এতো গম্ভাট কেনো? পরিস্থিতি কেনো বুঝতে চেষ্টা করো না? কেনো নিজের খেয়াল রাখতে জানো না? কেনো অনুমানের বসে এতো কিছু ভেবে নাও? আমি জাস্ট পারছি না তোমাকে নিয়ে। একদম পারছি না।”
লিলি ছোট আওয়াজে বলল,,
“আমি খুব সহজে সবাইকে আপন করে নিতে পারি না ববি। পরিস্থিতি ও মানিয়ে নিতে পারি না। বুঝতে অনেকটা সময় লাগে আমার। আসলে কখনো এরকম পরিস্থিতির শিকার হই নি তো তাই সময় লাগছে আমার। তার উপর আমি গ্রামের মেয়ে, অতো চঞ্চল বা চতুর নই। নিজের খেয়াল ও আমি রাখতে পারি না। হুট হাট অবিবেচকদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসি। আপনাকে অকারণে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি সত্যিই খুব অনুতপ্ত ববি। প্লিজ ফরগিভ মি।”
লিলির দিকে এক পলক তাকিয়ে ববি সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে ছোট আওয়াজে লিলিকে বলল,,
“শাড়িটা ঠিক করো।”
নিজের দিকে তাকিয়ে লিলি তাড়াহুড়ো করে শাড়িটা বুকে জড়িয়ে নিলো। মনে মনে বিড়বিড়িয়ে বলল,,
“গড নৌজ। উনি আমাকে কি ভাবছেন!”
বসা থেকে উঠে ববি খাবারের প্লেইটটা লিলির দিকে এগিয়ে বলল,,
“ফ্রেশ হয়ে খাবারটা খেয়ে নাও।”
লিলি মাথা নিচু করে বেড ছেড়ে উঠে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল৷ ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে রুমে ফিরে লিলি বেডের উপর থেকে খাবারের প্লেইটটা হাতে নিয়ে বেডে আধ শোয়া অবস্থায় ফোনে স্ক্রলিং করা ববিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
“বাড়ির সবাই খেয়েছে?”
“হুম।”
“সবাই হয়তো আপনার সাথে খুব রাগারাগি করেছে তাই না?”
“এতোকিছু তোমার জানার দরকার নেই। খেতে বসেছ খাও।”
লিলি মুখটা কালো করে বিড়বিড় করে বলল,,
“এই লোকটা সবসময় আমার উপর রাগ দেখায়। অকারণে হাইপার হয়ে থাকে। ভালো করে একটু বুঝিয়ে বললেই তো আমি বুঝি। কি এতো রাগ আমার প্রতি ঐ লোকটার?”
বিড়বিড় করে লিলি জাস্ট দু লোকমা ভাত খেলো বাকি খাবারটা তার গলা দিয়ে নামছে না। ববির দিকে তাকিয়ে লিলি মুখটা কাচু মাচু করে বলল,,
“ববি। শুনছেন?”
ববি চোখ তুলে লিলির দিকে তাকালো। লিলি অসহায় ভঙ্গিতে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আর খেতে পারব না। বমি বমি ভাব হচ্ছে৷”
ববি রাগী চোখে লিলির দিকে তাকিয়ে বলল,,
“পুরোটা খাবার কমপ্লিট করতে হবে৷ নো মোর ওয়ার্ডস।”
“বিলিভ মি। আমি পারছি না ববি।”
লিলির সত্যি সত্যি বমির ভাব হচ্ছে৷ মুখভঙ্গি দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ববি শান্ত স্বরে বলল,,,
“ঠিক আছে৷ রেখে দাও।”
লিলি হাত ধুঁয়ে ববির পাশে আড়ষ্ট হয়ে বসে খানিক সংকোচবোধ করে বলল,,
“চাচার কাছে একটু কল করবেন?”
ববি রাগান্বিত হয়ে বলল,,
“অধিকার খাটিয়ে তুমি কোনো কথা বলতে পারো না তাই না? সবসময় তোমার কুঁড়ে ভাব। জাস্ট ইরেটেটিং একটা গার্ল এন্ড স্টুপিট অলসো।”
লিলি আচমকা ভীষণ রেগে বলল,,
“কথায় কথায় এতো ইরেটেটিং, স্টুপিট বলবেন না তো। ডিজগাস্টিং লাগে শুনতে।”
ববি এক ভ্রু উঁচু করে বলল,,
“ওহ্ রিয়েলি? ডিজগাস্টিং লাগে শুনতে?”
“হুম লাগে। নেক্সট টাইম এসব বলে একদম আমাকে বিরক্ত করবেন না।”
ববি রুখে এসে লিলির গাঁয়ে সাথে চিপকে বসে বলল,,
“বিরক্ত তো আমি করবই। যতো দিন না তুমি আমার মনের কথা বুঝবে!”
“হোয়াট?”
“নাথিং। এভাবে চোখ রাঙ্গিয়ে আমার সাথে একদম কথা বলবে না। ওকে?”
লিলি আরো ভয়ঙ্কর ভাবে চোখ লাল করে এক নিশ্বাসে বলল,,
“আপনি ও আমার সাথে এভাবে চোখ রাঙ্গিয়ে কথা বলবেন না। ওকে?”
“আমি ওয়ান হান্ড্রেড বার বলব। বাট, তুমি একবার ও বলতে পারবে না!”
“আপনি বলতে পারলে আমি কেনো পারব না? আমি ও বলব। আমি তো টু হান্ড্রেড বার বলব। আপনার চে ওয়ান হান্ড্রেড বার বেশি!”
“তার মানে তুমি ইকুুয়েল ইকুয়েল করতে চাইছ?”
“হুম৷ ব্যালেন্স করতে চাইছি।”
“ওকে ডান। আমি এখন যা করব, তোমাকে ও তা করতে হবে রাজি?”
লিলি বেডের উপর পা তুলে ববির সম্মুখে বসে এক রোঁখা ভাব নিয়ে বলল,,
“হুম রাজি।”
ববি আচমকা লিলির ডান গালে টুপ করে একটা চুমো খেয়ে বলল,,
“এবার তুমি ও আমার গালে চুমো খেয়ে দেখাও।”
উত্তেজিত হয়ে লিলি অজান্তেই ববির গালে চুমো খেয়ে বলল,,
“খেয়েছি। তো কি হয়েছে?”
ববি বাঁকা হেসে লিলির দিকে তাকালো। জেদ কাটিয়ে লিলি চোখ দুটো প্রকান্ড করে মুখে হাত দিয়ে বলল,,
“ছ্যাঁ ছ্যাঁ। এ আমি কি করলাম?”
ববি ডেবিল হাসি দিয়ে বলল,,
“বলেছিলাম না ববির সাথে পাঙ্গা নিও না। দেখলে তো এবার কি হলো?”
লিলি এবার প্রচন্ড রকম লজ্জা পেয়ে হুড়মুড়িয়ে ববির সামনে থেকে উঠতে নিলেই ববি লিলির হাতটা টেনে ধরে বলল,,
“আই থিংক এটাই তোমার ফার্স্ট কিস ছিলো?’
লিলি লজ্জায় কাত হয়ে মাথা নাঁড়ালো। ববি বাঁকা হেসে বলল,,
“ভালো ছিলো। আমার এই চঞ্চল লিলিকেই চাই। যে অলওয়েজ আমার সাথে অধিকার নিয়ে কথা বলবে। আমার সাথে খুব ঝগড়া করবে, রাগ করবে, অভিমান করবে, আর… আমাকে অনেকটা বুঝবে।”
লিলি পিছু ফিরে ববির দিকে তাকিয়ে বলল,,
“এসব তো মানুষ তার ভালোবাসার মানুষের থেকে এক্সপেক্ট করে৷ আমি তো আপনার ভালোবাসার মানুষ নই।”
মুহূর্তের মধ্যে ববি লিলির হাতটা ছেড়ে দিলো।বেড ছেড়ে উঠে ববি সিগারেট ধরিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে লিলিকে ফোনটা ধরিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলল,,
“জুবায়ের আঙ্কেল। কথা বলো।”
ববি সিগারেট টেনে সোজা ব্যালকনীতে দাঁড়ালো। ব্যালকনীর গ্রীলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ববি মুখে সিগারেট রেখে সামনের চুল গুলো টেনে বলল,,
“আই লাভ ইউ লিলি। আই রিয়েলি লাভ ইউ। আই ডোন্ট নো, তুমি কবে আমার মনের কথা জানবে, বুঝবে! তবে এতো সহজেই আমি তোমাকে আমার মনের কথা জানতে বা বুঝতে দিবো না। বছর খানিক সময় দিতে চাই তোমাকে। যথেষ্ট দূরে রাখতে চাই তোমার থেকে। তোমার মধ্যে এখনো এনাফ ম্যাচিউরিটি আসে নি। এখনি তোমার কাছাকাছি গেলে হয়তো আমি আমার চাওয়া পাওয়া গুলোকে দমিয়ে রাখতে পারব না। ভুল কিছু হয়ে যাবে। আমি কখনো চাইব না আমার চাহিদার জন্য তোমার শারীরিক কোনো ক্ষতি হোক। তাই আপাতত ডিস্টেন্স মেন্টেইন করাই শ্রেয়।”
ঐদিকে জুবায়ের আহমেদ সবে মাএ লাঞ্চ করে বিছানায় গাঁ এলিয়েছেন। এতক্ষণ সোনিয়া আহমেদের নানা রূপ কটু কথা উনি দাঁতে দাঁত চেঁপে সহ্য করেছেন। ববির নাম্বার থেকে রিং বাজা মাএই জুবায়ের আহমেদ পাশে শুয়ে থাকা সোনিয়া আহমেদকে পাশ কাটিয়ে হম্বিতম্বি হয়ে কলটা পিক করলেন। হাসি মুখে উনি হ্যালো বলতে নিলেই সোনিয়া আহমেদ ঝড়ের বেগে জুবায়ের আহমেদের কান থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে সশব্দে বললেন,,
“কেনো জেনে বুঝে তুই আমার সর্বনাশটা করলি লিলি? চেয়ার ম্যান সাহেব একটু আগে এসে আমাদের যা নয় তা বলে অপমান করে গেছেন। তোর চাচাকে ও অনেক হুমকি দিয়েছেন। কেনো করলি এটা তুই? বল কেনো করলি?”
লিলি গলা জড়ানো স্বরে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,
“চাচার কাছে ফোনটা দাও চাচী। আমি চাচার সাথে কথা বলব। চাচাকে উনি বেশি বকাঝকা করেন নি তো?”
“বকাঝকা করবে না তো কি ছেড়ে দিবে? কোথায় হাত দিয়েছিস তুই জানিস? চাঁদে হাত দিয়েছিস চাঁদে। কি যোগ্যতা আছে তোর ববির ওয়াইফ হওয়ার? ববির ধারে কাছে ঘেঁষার ও তো যোগ্যতা নেই তোর। ববি কোথায় আর তুই কোথায়? কম্পেয়ার করে দেখেছিস কখনো? তুই এতোটাই চাঁপা স্বভাবের মেয়ে, আমার বাড়িতে এক সপ্তাহ থেকে গেলি, চুপিচুপি ববির সাথে প্রেম ও করলি অথচ আমি টের ও পেলাম না? এতো ধূর্ত মেয়ে তুই? এতো?”
লিলি নাক টেনে কেঁদে বলল,,
“আমি জানি চাচী। আমি ববির যোগ্য নই। উনার ধারে কাছে ও যাই না। আপাত দৃষ্টিতে উনি সত্যিই আমার কাছে আকাশের দুর্লভ চাঁদ। আমাদের বিয়েটা ভালোবাসার বিয়ে ছিলো না চাচী। পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে উনি আমাকে বিয়ে করেছেন। দয়া করে উনি আমাকে বিয়ে করেছেন। চাইলেই আমি এক্ষনি তোমাকে সব কিছু খুলে বলতে পারছি না।”
“শোন। তোর ভালোর জন্য একটা কথা বলছি। তোদের বিয়েটা কাজী অফিসে হয়েছে। কোর্ট ম্যারেজ ও না, যে যথেষ্ট স্ট্রং হবে বিয়েটা৷ ববি হয়তো না বুঝেই আবেগের বসে তোকে বিয়েটা করে ফেলেছে। পরে যে কোনো মুহূর্তে ববির সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারে। পরিবারের চাঁপে হোক বা নিজের সিদ্ধান্তে। যেকোনো মুহূর্তেই ববি পল্টি নিতে পারে। তখন তোর কি হবে? কি করবি তুই? কোথায় যাবি? তাই বলছি ববির থেকে যথেষ্ট দূরে থাকবি। কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা ভুলে ও করবি না। নিজের শেষ সর্বনাশটা হাতে ধরে করিস না।”
লিলি মুখ চেঁপে কাঁদছে। তার ছোট মাথায় এতো প্যাঁচ ঢুকছে না। একেক জনের একেক রকম মন্তব্যে সে হাঁফিয়ে উঠছে। নিজের বোধ বুদ্ধি থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। লিলির কান্নার আওয়াজ ববি ব্যালকনী থেকে শুনছে৷ সিগারেট টা হাত থেকে ফেলে ববি হম্বিতম্বি হয়ে লিলির কান থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে উঁচু আওয়াজে বলল,,,
“কে আন্টি?”
সোনিয়া আহমেদ থতমত খেয়ে বললেন,,
“হ্যাঁহ্যাহ্যাঁ ববি আআআমি।”
“আপনার কাছে হাম্বেল রিকুয়েস্ট আন্টি। দয়া করে লিলিকে কোনো রূপ উস্কানিমূলক কথা বলবেন না৷ আগে আপনার অনেক কথা সহ্য করেছি কারণ লিলির প্রতি তখন আমার কোনো জোর ছিলো না। তবে এখন আমার লিলির প্রতি সম্পূর্ণ জোর আছে। লিলি আমার ওয়াইফ। এখন কিন্তু আমি কিছুতেই আমার ওয়াইফের কোনো অপমান সহ্য করব না। বুঝতে পেরেছেন আপনি?”
সোনিয়া আহমেদ ভয়ে কেঁপে উঠে পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা জুবায়ের আহমেদের দিকে ফোনটা এগিয়ে দিলেন। জুবায়ের আহমেদ ক্ষীপ্ত চোখে সোনিয়া আহমেদের দিকে তাকিয়ে ফোনটা নিয়ে ড্রইং রুমে চলে এলেন। সোফায় বসে উনি ম্লান স্বরে বললেন,,
“হ্যালো।”
ববি ঐ পাশ থেকে বলল,,
“চাচা। এদিকের অবস্থা ঠিকঠাক আছে। আপনি শুধু আন্টিকে সামলে রাখুন। লিলিকে কল করে যেনো অযথা রাগারাগি না করে। ছোট্ট একটা মেয়ে, বোধ বুদ্ধি ও তেমন নেই। আমাদের মতো এতো চাঁপ সে নিতে পারে আপনিই বলুন?”
“হুম। আমার দিক থেকে আমি যথেষ্ট চেষ্টা করব। তোমার মামা একটু আগে এসেছিলো ববি। ছোট, বড় অনেক কথা বলে গেছেন। যাই হয়ে যাক ববি, তুমি কিছুতেই লিলির হাত ছেড়ো না। আগলে রেখো আমার ভাতিজীটাকে। নিজের মতো করে বুঝিয়ে, শুনিয়ে নাও, তোমার মতো করে তৈরী করো।”
“মামু আপনাকে কি বলেছে আমি জানি না, তবে আমি কিছুতেই লিলির হাত ছাড়ব না। আপনাকে এসিউর করলাম। নিশ্চিন্তে থাকুন আপনি। লিলিকে খুব দ্রুত আমি আমার মতো করে তৈরী করে নিবো।”
“আশ্বস্ত হলাম। এখন রাখছি বাবা। একটু রেস্ট দরকার আমার।”
ববি ফোনটা কেটে বেডের উপর ফোনটা ছুড়ে মেরে ব্যালকনির দিকে যেতেই লিলিকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেলো। আচমকা ববি লিলিকে কোলে উঠিয়ে নিলো। লিলির অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“ডোন্ট ক্রাই “পুতুল বউ।” ববি আজীবন তোমার পাশে থাকবে। আশেপাশের কারো কথায় কান দিবে না। আমার পুতুল বউকে তো যথেষ্ট স্ট্রং হতে হবে নাকি?”
“পুতুল বউ? আপনি আমাকে এই নামে ডাকছেন কেনো ববি?”
“তোমার এতো কিছু জানতে হবে না। এখন আমরা দুজন লম্বা একটা ঘুম দিবো। ওকে?”
লিলি শান্ত চোখে হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালো। লিলিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ববি জানালার পর্দা লাগিয়ে লিলির পাশে লম্বা হয়ে শুলো। ববি ম্লান হেসে লিলিকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্তে চোখ জোড়া বুজে নিলো। লিলি হাঁসফাঁস করছে আর ছোট আওয়াজে বলছে,,
“ববি ছাড়ুন। আমার দম আটকে আসছে। এভাবে কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরে?”
“ধরে। সব হাজবেন্ডরাই তার ওয়াইফকে এভাবে ঝাপটে ধরে৷ এভাবে বুকে নিয়েই ঘুমায়। অভেস্য করে নিতে হবে তোমার।
#চলবে….?