কিছু মেঘ কিছু বৃষ্টি,পর্ব-০১
লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
দীর্ঘ আটবছরের সংসার জীবনে বাচ্চা না দিতে পারার জন্য নিজের স্ত্রীকে চিরতরে শেষ করে দেবার সিধান্ত নিলাম…..
অবশ্য আমার কোনো ইচ্ছে ছিলো না প্রশংসাকে (আমার স্ত্রীর নাম)খুন করার।কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে এটা ছাড়া আর কোনো উপায় অবশিষ্ট নেই আমার কাছে।এই আটটা বছর বাবা মায়ের সহস্র খোটা,অভিযোগ,কটুক্তি মুখ বুঝে সহ্য করেছি।কিন্তু এক পর্যায়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমার।সত্যি বলতে একটা বাচ্চা পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা আমার ভেতরে লালিত হচ্ছিলো বহু বছর ধরে।যখন বুঝতে পারি প্রশংসার পক্ষে আমাকে সন্তান দেয়া সম্ভব নয়,ওকে অনুরোধ করি আমরা জীবন থেকে সরে যেতে।কিন্তু ও কিছুতেই রাজি হয় না।প্রশংসার স্পষ্ট বক্তব্য সে আমাকে কোনো কিছুর বিনিময়ে ছাড়তে পারবে না….
আমি আমার তরফ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখি নি,কিন্তু প্রশংসা আমার কোনো অনুনয় বিনয় কানে তোলে নি।ও বরং আমায় একটা বিয়ে করার পরামর্শ দেয়।কিন্তু আমি কখনো একজন দুজন স্ত্রীর সাথে সংসার করার কথা ভাবতেও পারিনা….
একদিকে পারিবারিক চাপ,অন্যদিকে নিজের মানসিক অবসাদ সমস্ত দিক বিবেচনা করে সিধান্ত নিলাম প্রশংসাকে নিজের জীবন থেকে সরিয়েই দেবো।ও এমনিতেও আমাকে সন্তান সুখ দিতে পারবে না,কেন শুধু শুধু বাঁচিয়ে রাখবো ওকে।নিজে থেকে আমার রাস্তা দিয়ে সরে দাঁড়ালে অবশ্য অন্য কথা ছিলো।ওর কোনো ক্ষতি করতাম না আমি।কিন্তু এখন আমি নিরুপায়।
রাতে প্রশংসাকে নিয়ে রাস্তায় যেতে যেতে কথাগুলো ভাবছিলাম।আমার পরিকল্পনা ওকে খুন করার।একটা সুনসান জায়গা দেখে গাড়িটা থামিয়ে দিলাম….কারণ আমার কাজের জন্য এর থেকে উপযুক্ত জায়গা আর দুটো হতে পারে না।
—কি হলে গাড়ি থামালে কেন?
(বিস্মিত চোখে প্রশংসার প্রশ্ন)
—একটু নামো তো গাড়ি থেকে…. কাজ আছে,,
—গাড়ি থেকে নামতে হবে কেন, আচ্ছা কি হয়েছে বলো তো।
—গাড়িটা ঝামেলা করছে।তুমি দাঁড়িয়ে একটু ওয়েট করো,আমি সেরেই জানাচ্ছি তোমায়,,
—কি বলো,এখন আবার গাড়ির কি হলো!
—আরে টেনশন করার কিছু নেই,বেশী সময় লাগবে না আমার।
প্রশংসা আমার কথামতো গাড়ি থেকে নেমে আসলো।ও একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।জায়গাটা বেশ অন্ধকার ছিলো।আমিও ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে গাড়ি রিপেয়ার করার ভান করি।আমার ওপর থেকে প্রশংসার দৃষ্টি সরে যেতেই গাড়ি থেকে আমার রাখা ধারালো ছুড়িটা বের করে পা টিপে টিপে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।কাছে গিয়ে ওকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই খপ করে মুখটা চেপে ধরি,তারপর পেছন থেকে ছুড়িটা বসিয়ে দিলাম।আমার চোখের সামনে আমার স্ত্রী কোরবানির পশুর মতো ছটফট করে উঠলো, আমি আর সময় নষ্ট না করে ওকে ঠেলে নিচের খাঁদে ফেলে দেই……
ব্যস,আমার পথের কাটা দূর,আর কোনো ঝামেলা রইলো না আমার জীবনে….
–
–
–
–
পরের দিন সকাল বেলা।আমার বাসায় একটা মেডিকেল রিপোর্ট আসে।তিনদিন আগের মেডিকেল টেস্টের রিপোর্ট।জানতাম প্রশংসা কখনো মা হতে পারবে না,ও জোর করে টেস্ট করিয়েছিলো।এই নিয়ে যে কতোবার মেডিকেল টেস্ট হয়েছে ওর,সেই হিসেবে আমার নিজেরো নেই।বরাবরের মতো এবারেও নেগেটিভ রিপোর্ট আসবে এটা জেনেও ফাইলটা খুলতে লাগলাম….
চরম অনিচ্ছা আর বিরক্তিকর ভাব নিয়ে লেখাগুলোর দিকে চোখ বুলাই….দেখতে পাই রিপোর্ট পজেটিভ……!!!!😱
—-হায় আল্লাহ,,এটা কি দেখছি আমি……
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি প্রশংসা তিন মাসের প্রেগন্যন্ট…..তার মানে আমার সন্তান বড়ো হচ্ছিল ওর গর্ভে।সেই আমি কিনা নিজের হাতে……লেখাগুলো পড়ে হাত থেকে ফাইলটা পড়ে গেলো আমার….ধপাস করে সোফার ওপরে বসে পড়লাম…..
চলবে……