বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_১২(অন্তিম পর্ব)

বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_১২(অন্তিম পর্ব)
লেখক_ঈশান_আহমেদ

আয়ান আর নিধিকা তোমরা দুজনে আজকে থেকে আলাদা থাকবে।(বাবা)

বাবা প্লিজ আমাকে মাফ করে দেও।আমি তো নিজের দোষ স্বীকার করছি।আর আমি তোমাদের ছেড়ে কখনোই থাকতে পারবো নাহ্।(আয়ান)

বেয়াই সাহেব আমি আর কি বলব!আমার কথা বলতেও লজ্জা হচ্ছে।আপনারা আলাদা হবেন না দয়া করে।আমি বরং আমার এই অসভ্য মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি।(নিধিকার বাবা)

নাহ্।আয়ান আর নিধিকা দু’জনের কেউই কোথাও যাবে নাহ্।ওদের একটা শেষ চান্স দেওয়া উচিত ভালো হওয়ার জন্য।এর পরেও যদি ভালো হতে না পারে তাহলে আমাদের বাড়িতে ওদের দুজনের কোন জায়গা নেই।(মা)

আম্মু ঠিকই বলেছে একটা শেষ সুযোগ দেওয়া উচিত।(আনহি)

আমি জীবনেও এমন কিছু করব নাহ্ মা।তবে নিধিকার বিষয়ে আমি বলতে পারব নাহ্।(আয়ান)

আমিও আর করব নাহ্।লাস্ট একটা সুযোগ দিন।(নিধিকা)

রিধিকাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে।রিধিকার কেবিনের বাইরে বসে আছি।সবাইকে জোর করে ভাইয়ার সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।।নিধিকা থাকতে চেয়ে ছিল কিন্তু ও কে জোর করে বাসায় পাঠিয়েছি।আমি চাই না ও আমার আর রিধিকার মাঝে আসুক।

রিধিকা চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে।মি.চৌধুরী বলে কাউকে খুঁজছে।(ডক্টর)

ডক্টরের কথায় আমার মুখে আচমকা হাসি ফুটে উঠল।তাহলে আমার রিধিকা একদম ঠিক আছে।দৌড়ে কেবিনের ভিতরে গেলাম।

রিধিকা আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিল।ও কে দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।মাথা,হাত-পা,মুখের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।হাতে স্যালাইন চলছে।রিধিকা ইশারা করে ওর পাশের চেয়ারে বসতে বলল।আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম।ও কে দেখে আমার চোখ দিয়ে একভাবে পানি পড়েই চলেছে।রিধিকা এক হাত আস্তে আমার হাতের উপর রাখলো।

মি.চৌধুরী কয়টা বাজে?(জড়ালো ভাবে কথাগুলো বললো রিধিকা)

রিধিকা প্লিজ কথা বলো নাহ্।তোমার কথা বলা ঠিক নাহ্।আর কথা বলতে তো কষ্টও হচ্ছে।(আমি)

চুপ!বলুন কয়টা বাজে।(আবার একইভাবে বলল রিধিকা)

রাত ১০ টা।(আমি)

রিধিকার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আমি ওর চোখেের পানি মুছে দিলাম।

এই পাগলি কাঁদছো কেন?তুমি তো ঠিক হয়ে গেছো।(আমি)

রিধিকা কিছু বলছে না শুধু কাঁদছে।

এই তুমি এভাবে কেঁদো না।দেখছো না এমনি কান্না থামাতে পারছি না।আর তুমি এভাবে কাঁদলে তো আরও থামাতে পারব নাহ্।(আমি)

জানেন ভেবেছিলাম আজ বারোটায় আপনাকে সারপ্রাইজ দিব।তার জন্য সব শপিং করে এনেছিলাম।আর তার সাথে আমার মনের কথাও বলে দিব।যতই হোক আমার একমাত্র জামাইয়ের বার্থডে।একটু স্পেশাল ভাবে তো পালন করা লাগেই।(রিধিকা)

অনেক কষ্টে কথাগুলো বলল।মনে হয় কথাগুলো বলতে ওর গলা লেগে যাচ্ছিল।

আমি রিধিকাকে জড়িয়ে ধরলাম।

সমস্যা নেই।তুমি সুস্থ হও তারপরে সব হবে।এইসব ভেবে কেউ কাঁদে নাকি!(আমি)

রিধিকা আমার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলাচ্ছে।হঠাৎ কারো কাশির আওয়াজে পিছনে ফিরলাম।একজন মহিলা ডক্টর দাঁড়িয়ে আছে।আমি উঠে দাঁড়ালাম।

আমি আসলে উনাকে চেক-আপ করতে এসেছি।(ডক্টর)

আচ্ছা আপনি ও কে দেখুন।আমি গিয়ে বাড়িতে কল করে বলে আসি যে ওর জ্ঞান ফিরেছে।(আমি)

আচ্ছা আপনার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসেন?(ডক্টর)

হ্যাঁ অনেক ভালোবাসি।এতোদিন তা বুঝতে পারি নাই।তবে আজকে যখন ওর এক্সিডেন্ট হলো তখন মনে হচ্ছিল আমার জীবন থেকে অনেক বড় কিছু হারিয়ে ফেলছি।কিন্তু আল্লাহ রহমতে আমি আবার আমার প্রিয়তমাকে ফিরে পেয়েছি।(আমি)

রিধিকার দিকে তাকিয়ে দেখি ও অনেক খুশি।এর কারণ আমি ভালো করেই জানি।যতই যাই হোক রিধিকা যে আমায় ভালোবাসে তা আমি আগেই আন্দাজ করতে পেরেছি।

কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিলাম।কেবিনে এসে দেখি রিধিকা বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।আর নার্স ও কে খাইয়ে দিচ্ছে।

আচ্ছা আমি কি ও কে খাইয়ে দিতে পারি?(আমি)

জ্বী অবশ্যই।(নার্স)

নার্স কেবিন থেকে চলে গেল।আমি রিধিকাকে খাইয়ে দিচ্ছি।রিধিকা বলে উঠল,

মি.চৌধুরী আপনি খেয়েছেন?(রিধিকা)

উফ!তুমি আগে খাও তারপরে আমারটা দেখা যাবে।(আমি)

আপনি যদি এখন গিয়ে না খান তাহলে আপনার সাথে আমি আর কথা বলব নাহ্।(ভেঙে ভেঙে কথাগুলো বলল রিধিকা)

আচ্ছা আমি এখনই খেতে যাচ্ছি।আর শুনো তুমি এতো কথা বলবে নাহ্।তোমার কথা বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।(আমি)

নার্স এসে রিধিকাকে ঔষধ খাইয়ে দিল।কিছুক্ষণের মধ্যে রিধিকা ঘুমিয়ে পড়ল।আর আমিও খেতে চলে আসলাম।নাহলে মহারাণী জানলে আবার চটে যাবে।

রিধিকার কেবিনের সামনে পায়চারি করছি।হঠাৎ নার্স এসে ডাক দিল।

রিধিকার কি কিছু হয়েছে?(আমি)

না আপনি একটু উনার কেবিনে যান।উনি আপনাকে কিছু বলবে।(নার্স)

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১২:৩০ বাজে।আমার বুঝতে বাকি নেই ও কি বলবে!কেবিনে গেলাম।

একটু লেট হয়েছে ঠিকই।তবে আমি তারপরেও বলব।হ্যাপি বার্থডে মাই ডিয়ার চৌধুরী সাহেব।আর আই লাভ ইউ।আমি আপনাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি।(রিধিকা জড়ালো ভাবে কথাগুলো বলল)

আই লাভ ইউ টু মাই ডিয়ার এলোকেশরী।(আমি)

রিধিকার কপালে আলতো করে ভালোবাসা ছুঁইয়ে দিলাম।রিধিকা আমার গলা জড়িয়ে ধরল।

এভাবে সাতদিন পাড় হয়ে গেল।রিধিকা এখন মোটামুটি সুস্থ।রিধিকাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।সবাই রিধিকাকে নিয়ে ব্যস্ত।মহারাণীর এখন আমার জন্য সময় নেই।

নিধিকা এসে আমার সামনে দাঁড়ালো।

আরাভ প্লিজ আমায় মাফ করে দেও।আয়ানকে তো মাফ করে দিছো।আমাকেও প্লিজ মাফ করে দেও।আমি কেন ওমনটা করেছি তা আমি নিজেও জানি নাহ্।(নিধিকা)

আসল কথা আপনার অভ্যাস হলো একটা ছেড়ে আরেকটাকে ধরা।দয়া করে আমার সাথে যেই নাটকটা করেছেন সেটা ভাইয়ার সাথে করবেন নাহ্।আর আমার আর রিধিকার কোন বিষয়ে আপনি ইন্টাফেয়ার করবেন নাহ্।আমি আর কিছু বলতে চাই নাহ্।আর যাই হোক আপনি আমার বড় ভাইয়ের বউ।আমি)

আরাভ আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি।আসল কথা আমি তোমাকে কখনো ভালোই বাসতে পারি নাই।আয়ানের প্রতি আমার যেই টানটা আছে সেটা আমি তোমার প্রতি কখনো ফিল করতে পারিনি।ধরে নিতে পারো তোমার সাথে যেটা ছিল সেটা শুধুই টাইমপাস।আমি আসলেই একটা বাজে মেয়ে।আমার মতো মেয়েদের জন্যই সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কত ছেলের জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।আরাভ আমাকে প্লিজ মাফ করে দেও।বিশ্বাস করো আমি একদম পাল্টে যাবো।(নিধিকা)

এইসব শুনতে আমার আর ভালো লাগছে নাহ্।এইসব এখন আমার কাছে নিতান্তই অভিনয়ের মতো।এখনই আমার সামনে থেকে চলে যান।(ধমক দিয়ে বললাম)

নিধিকা ভয়ে আর কিছু না বলে চলে গেল।

চার বছরের সম্পর্ক তার কাছে এখন টাইমপাস মনে হয়।যাক এইসব ভেবে লাভ নেই।আগে যাও একটু জায়গা ছিল আমার মনে নিধিকার জন্য।এখন তা পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে।

রুমে এসে চুপচাপ বসে আছি।রিধিকা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।

কি গো চৌধুরী মহাশয় আপনি কি রাগ করেছেন?(রিধিকা)

এখানে কি তোমার!তোমার জন্য তো কত মানুষ অপেক্ষা করছে তাদের কাছে যাও।(আমি)

ওফ!(রিধিকা)

মাথার ব্যান্ডেজে হাত দিয়ে রিধিকা বলে উঠল।

কি হয়েছে রিধিকা?তোমার কি মাথায় ব্যাথা করছে?(আমি)

রিধিকা জোরে হেসে দিল।

কিছুই হয়নি মি.চৌধুরী।আমি জাস্ট আপনার রাগ ভাঙানোর জন্য এটা করলাম।(রিধিকা)

রিধিকা চলে যাচ্ছিল আমি টান দিয়ে ও কে আমার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলাম।

জানো রিধিকা আমি না এই কয়েকদিন ধরে অনেক কষ্ট পেয়েছি।এই কষ্ট আমি আমার সারাজীবনেও পাই নাই।তুমি প্লিজ আর যাই করো আমাকে কখনো কষ্ট দিও নাহ্।(আমি)

আমি আমার চৌধুরী সাহেবকে কখনোই কষ্ট দিব নাহ্।(রিধিকা)

রাতেরবেলা বিছানায় বসে আসি।রিধিকা এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

একটা জিনিস চাইবো দিবেন?(রিধিকা)

হুম বলো নাহ্!(আমি)

রিধিকা আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,

আমি আপনাকে নিজের করে পেতে চাই মি.চৌধুরী।(রিধিকা)

রিধিকা তুমি এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নাহ্।আর কয়দিন যাক তারপরে সব হবে।(আমি)

নাহ্।আমি চাই না আপনাকে হারিয়ে ফেলতে।প্লিজ!(রিধিকা)

রিধিকা…..(আমি)

রিধিকা আমার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল,

চুপ!আর একটা কথাও নাহ্।(রিধিকা)

রিধিকা আমায় বিছানায় ফেলে দিল।একটা একটা করে আমার শার্টের বোতাম খুলছে।আমি ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ও কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে শার্টটা খুলে নিচে ছুড়ে মারলাম।রিধিকার গলায় আমার ঠোঁট স্পর্শ হতেই সে কেঁপে উঠল।আর আমার পিঠ খামচে ধরল।আমি নিজেকে রিধিকার মধ্যে হারিয়ে ফেলেছি।চার ঠোঁট এক করে দিলাম।দুজনে মেতে উঠলাম এক মিলন মেলায়।(আর জানা লাগবে নাহ্।আমার আবার এইসব বলতে লজ্জা লাগে)

তিন বছর কেটে গেল।সবাই মিলে একটা সুখী পরিবার।নিধিকার একটা মেয়ে হয়েছে।আজ একটা খুশির খবর পেলাম।আমি বাবা হতে চলেছি।আমি এলোকেশরী প্রেগন্যান্ট।

এই যে মি.চৌধুরী তুমি কি আর ভালো হবে নাহ্?(রিধিকা)

যাক বাবা আমি আবার কি করলাম?(আমি)

তুমিই তো সব করেছো?(রিধিকা)

বলবে তো কি করেছি!(আমি)

তুমি নাকি মুসকানকে(ভাইয়া মেয়ে) বলেছো আমি এক সময় চিকন প্রাণী ছিলাম।(রিধিকা)

রিধিকার কথায় জোরে হেসে দিলাম।

আসলেই তো চিকন প্রাণী ছিলে।আর এখন গুলুগুলু হয়ে গেছো।(আমি)

প্রেগন্যান্ট হলে এমন একটু মোটা হয়েই থাকে সব মেয়েরা।(রিধিকা)

আমি রিধিকাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।

জানি তো আমি।(আমি)

ওফ ছাড়ো।আমি এখন রেগে আছি।(রিধিকা)

রিধিকা কয়দিন পরে বাচ্চার মা হবে আর এখনো তোমার বাচ্চামো গেল নাহ!(আমি)

কয়দিন পরে যখন বাচ্চা হবে তখন ও কেও সামলাতে হবে আর আমাকেও বুঝলে চৌধুরী সাহেব!(আমি)

রিধিকাকে জড়িয়ে ধরে প্রমেস করলাম।

জ্বী অবশ্যই মিসেস.চৌধুরী মানে আমার এলোকেশরী।(আমি)




পাপা মাম্মাহ্ আমাদের ছেড়ে কেন চলে গেল?(আরভী)

আল্লাহ্ চাইনি তোমার মা আমাদের সাথে থাকবে তাই তোমার মাকে নিয়ে চলে গেছে।(আমি)

কি ভাবছেন এতোক্ষণ যা বলছিলাম তা কি ছিল!এগুলো ছিল আমার জীবনের সুখের অধ্যায় আর হ্যাঁ আমি এখনও অনেক সুখী আমার মেয়ে আরভীকে নিয়ে।আর এতোক্ষণ আমার জীবনের গল্প আমার পাঁচ বছরের ছোট মামুনিকে বলছিলাম।কতটা বুঝতে পেরেছে কে জানে!আমার এলোকেশরী এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিল আরভীকে জন্ম দিতে গিয়ে।আর আমার হাতে সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে গেছিল আমার ছোট মেয়েটার!

যেখানে ভেবেছিলাম তোমাকে না দেখলে একটা দিন পাড় করতে পারব নাহ্।সেখানে তোমাকে না দেখে পাঁচটা বছর অনায়সে পাড় করে দিলাম।বিশ্বাস করো এই পাঁচ বছরে এমন কোন দিন নেই যে তোমাকে মনে পড়ে নাই।তবে মেয়েটাকে দেখলেই সব দুঃখ দূর হয়ে যায়।কারণ মেয়েটা দেখতে তো একদম তোমার মতোই হয়েছে এলোকেশরী।।

আর আমার পরিবারের সবাই আমার পাশে আছে।তবে একজনের অনুপস্থিতি এখনো আমার হৃদয়কে কাঁদায়!ভীষণ ভালোবাসতাম তোমায় আমার এলোকেশরী।তোমার আমার সম্পর্ক তো “বিনি সুতোয় গাঁথা”-যা কখনোই ছিঁড়বে নাহ্।💙

পাপা বৃষ্টি হলে কবরের নিচে মাম্মার ঠান্ডা লাগে নাহ্?(আরভী)

মেয়েটার কথার কোন উত্তর দিতে পারলাম নাহ্।চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।

সমাপ্ত

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।নেক্সট না লিখে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন তাহলে আমাদের লেখার আগ্রহ বেড়ে যায়!]

(গল্পটা কিছুটা সত্য,কিছুটা কাল্পনিক।তবে জানিনা আপনাদের কেমন লাগবে!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here