বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০৩

বিনি_সুতোয়_গাঁথা 💙,পর্ব_০৩
লেখক_ঈশান_আহমেদ

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম।

আরাভ!আয়ান ফোন করেছিলো।তোকে আর আনহিকে ওর শ্বশুর,শ্বাশুড়ি যেতে বলছে দুপুরে।(মা)

আম্মু আমার শরীরটা ভালো লাগছে না।আমি যাবো না।(আমি)

আরাভ দুইজন মুরুব্বি তোমাকে যেতে বলছে আর তুমি যেতে চাইছো না।আর হ্যাঁ যাওয়ার সময় আনহিকে ওর কোচিং থেকে নিয়ে যাবে।(মা)

আম্মু যখন সিরিয়াস হয়ে যায় তখন সাধারণত আমাকে “তুমি” বলে।তাই এখন আর রাগানো ঠিক হবে না।

ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পড়লাম।আনহিকে ওর কোচিং থেকে গাড়িতে তুলে নিলাম।

ভাইয়া!বড় ভাইয়ার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি।খালি হাতে কি যাওয়া যায়।(আনহি)

তুমি তো আমার চেয়েও বেশি পাকনা।পিছনের সিটে তাকিয়ে দেখ সব আছে।(আমি)

আনহি পিছনে তাকিয়ে একটা হাসি দিল।

আচ্ছা ভাইয়া ভাবিকে তোর কেমন লাগছে।(আনহি)

আমি চুপ হয়ে আছি।কি বলব ভেবে পাচ্ছি নাহ্।যাকে আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসতাম সে এখন আমার ভাবি।

কি রে কোথায় হারায় গেলি?(আনহি)

ভালোই তো।(আমি)

আমার তো খুব খুব ভালো লাগছে।আর তোর শুধু ভালো লাগল।তবে ভাবির চেয়ে রিধিকা আপু আরও বেশি ভালো।(আনহি)

কি?ওই মেয়ে ভালো।জানিস কালকে আমার কতগুলো টাকা খরচ করিয়েছে!(আমি)

বিয়ের সময় এমন একটু-আকটু খরচ হয়।তুই এমন কিপ্টামি করিস কেন!(আনহি)

একদম রাস্তায় বসায় রেখে চলে যাবো বেশি পাকনামি করলে।(আমি)

আনহির সাথে কথা বলতে বলতে নিধিকাদের বাড়িতে চলে আসলাম।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই নিধিকা সামনে চলে আসল।যত দূরে থাকতে চাই আরও কাছে চলে আসে।অসহ্য লাগে একদম।

তোমাদের আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?(নিধিকা)

না ভাবি।(আনহি)

তা দেবর জি তোমার কি খবর?(নিধিকা)

এই মেয়ের কথা শুনলে কার না বিরক্ত লাগে।এ যে এতোটা অসভ্য আগে জানতাম না।কে বলছে আমার সাথে কথা বলতে!দেখে আমি রিরক্ত হই তারপরও আগবাড়িয়ে কথা বলে।

কালকেই তো কথা হলো আজকে আবার খবর জিগাসা করা লাগে নাকি!আমার চেয়ে তো আপনার খবর জিগাাসা করা বেশি জরুরি।আফটার অল আমার বড় ভাইয়ার বউ।(আমি)

নিধিকার হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেল।একদম ঠিক আছে বেহায়ার মতো কথা বলতে আসে!

সোফায় বসে মোবাইল টিপছি।সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।হঠাৎ কে যেন আমার গায়ের সাথে এসে বসল।তাকিয়ে দেখি নিধিকা।আমার তো রাগ উঠে গেছে।বসেছে তো বসেছে আবার হাতটা ধরে বসেছে।আমি এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

লজ্জা করে না আপনার?এতো বেহায়া হন কি করে!এমন গায়ে এসে বসছেন কেন!কয়জন একসাথে লাগে?এরপরে যদি এমন করেন তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।(ধমক দিয়ে কথাগুলো বলে ওখান থেকে চলে আসলাম)

দুপুরবেলা,

বাবা তুমি তো কিছুই খাচ্ছো না!(নিধিকার মা)

খাচ্ছি তো আন্টি।তবে আন্টি আপনার হাতের রান্না কিন্তু অনেক মজা।(আমি)

আমার শ্বাশুড়ি মা বলে কথা।(ভাইয়া)

আন্টি আসার পরে থেকে রিধিকা আপুকে একবারও দেখলাম না।আপু কোথায় আন্টি?(আনহি)

আসলে ওর ভার্সিটিতে আজকে একটু জরুরি কাজ আছে।তাই ও ভার্সিটিতে গিয়েছে।সমস্যা নাই একটু পরে চলে আসবে।(নিধিকার মা)

ওহ্ আচ্ছা।(আনহি)

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছি।তবে নিধিকা আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।আমার অনেক রাগ হচ্ছে।

আন্টি,আঙ্কেল! আমি এখন বাসায় চলে যাবো।আমার একটু কাজ আছে।(আমি)

কি যে বলেন বিয়াইসাব আমরা আজকে সন্ধ্যায় ঘুরতে যাবো আর আপনি এখনই চলে যেতে চাইছেন।(রিধিকা)

পিছনে তাকিয়ে দেখি রিধিকা দাঁড়িয়ে আছে।

আপু তুমি আসছো!তোমার জন্য এতোক্ষণ ওয়েট করতে ছিলাম।(আনহি)

ওকে আরেকটু ওয়েট করো।আমি এখনই ফ্রেশ হয়ে আসছি।(রিধিকা)

রিধিকা ওর রুমের দিকে চলে গেল।

সন্ধ্যাবেলায়,

আমরা ঘুরতে বের হলাম।আমার এসব ভালোই লাগছে না।কি আর করার তারপরেও ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।

কি ব্যাপার মি.চৌধুরী আপনি এমন মনমরা হয়ে হাঁটছেন কেন?(রিধিকা)

কোথায় মনমরা হয়ে হাঁটছি!(আমি)

আরে এই রিধিকা সবার সমস্যার সমাধান করে দেয়।আপনার কোন সমস্যা থাকলে একবার বলুন খালি।(রিধিকা)

আমার সমস্যার সমাধান এই জীবনে আর হবে না।(আমি)

কি ব্যাপার ছ্যাঁকা খাইছেন নাকি?(রিধিকা)

ছ্যাঁকা খেলেও এতটা কষ্ট হয় না যতটা ধোঁকা খেলে হয়।(আমি)

কে আবার আপনাকে ধোঁকা দিল?(রিধিকা)

তোমার এতোকিছু জানতে হবে না।চুপচাপ হাঁটো তো।(আমি)

এতো রাগ কেন আপনার?মুখটাকে সবসময় বাংলার পাঁচের মতো করে থাকেন।(রিধিকা)

চুপ করতে বলছি।চুপ করে থাকো।আমার রাগ উঠাবে না।(রিধিকা)

রিধিকা আর কথা না বলে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করল।সবাই পিক তুলছে।হঠাৎ নিধিকা এসে আমার একটা হাত চেপে ধরল।

মনে আছে আরাভ এই রাস্তায় তুমি আর আমি কত হেঁটেছি।(নিধিকা)

আমি ওর হাত ছাড়িয়ে বললাম,

মিসেস.নিধিকা চৌধুরী সহ্যের সীমা ছাড়াবেন না।আপনি কিন্তু আমার রাগ জানেন।এই পাব্লিক প্লেসে আপনাকে থাপ্পড় মারতে বাধ্য হবো।তখন এটা নিয়ে ভাববো না যে আপনি আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী।(আমি)

আমি নিধিকার থেকে দূরে সরে আসলাম।

আরে মি.চৌধুরী আপনার সাথে তো আমার একটা সেল্ফিও নাই।আসেন একটা সেল্ফি তুলি।(রিধিকা)

আমার এইসব ভালো লাগে না।ওদের সাথে গিয়ে তুলো।(আমি)

চুপ করুন তো।(রিধিকা)

রিধিকার প্যারায় ওর সাথে সেল্ফি তুলতে হলো।দূর থেকে নিধিকা সবটা দেখছে আর ফুলছে।

সো মি.আরাভ চৌধুরী আপনি কি ফুচকা খাবেন!(রিধিকা)

কালকে তো একবার বললাম আমি এইসব খাই না।আর এতো ভালো রেস্টুরেন্ট থাকতে এমন রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেতে হবে কেন?(আমি)

রাস্তার খাবারে একটা আলাদা মজা আছে।যা বড় বড় রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় না।(রিধিকা)

আমি যত দেখছি অবাক হয়ে যাচ্ছি।নিধিকা আর রিধিকা আপন বোন।তবে দুই বোনের মধ্যে কোন মিল নেই।নিধিকা বড় রেস্টুরেন্ট ছাড়া খেতে চাইতো না।ওর জন্য বাবার পকেট থেকে কত টাকা চুরি করেছি।আর রিধিকাকে দেখো সে রাস্তার পাশের দোকানে খেতে পছন্দ করে।

আমি এক কাপ কফি নিয়ে বেঞ্চে বসে খাচ্ছি।সবাই খাচ্ছে আর গল্প করছে।হঠাৎ কোথা থেকে যেন মাইশা আমার পাশে এসে বসল।এইবার কি হবে এই মেয়ে তো নিধিকাকে ভালো করেই চিনে।সবার সামনে যদি কিছু বলে দেয়।

আরে তুই আর নিধ……..(মাইশা)

আর কিছু বলার আগে মাইশার মুখে একটা ফুচকা ঢুকিয়ে দিছি।আমি ও কে চোখ দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে বললাম।

ভাইয়া আমি একটু আসছি।(আমি)

ওকে।(ভাইয়া)

আমি মাইশাকে নিয়ে কিছুটা দূরে সরে আসলাম।

কিরে কি হয়েছে?আমি শুনলাম নিধিকা নাকি তোর বড় ভাইকে বিয়ে করেছে?(মাইশা)

যা শুনেছিস ঠিকই শুনেছিস।(আমি)

মানে কি আমি কিছুই বুঝলাম না।(মাইশা)

আমি নিজেই তো কিছু জানি না।(আমি)

গাধা তুই নিধিকার সাথে কথা বলবি না।ও কেন এমন করল।(মাইশা)

আমার ওর মুখের দিকে তাকাতে ইচ্ছা করে না।ওর সাথে কি কথা বলব!আচ্ছা তোর বর সাহেব কোথায়?(আমি)

রাজিব তো অফিসে আছে।আমি এখানে এসেছিলাম বান্ধবীদের সাথে কিছু শপিং করতে।তোকে দেখে এগিয়ে আসলাম।(মাইশা)

ওহ্ আচ্ছা।(আমি)

আচ্ছা শোন আমার একটু তাড়া আছে।আর তুই একটু নিধিকার সাথে কথা বলিস।(মাইশা)

কথাগুলো বলে মাইশা চলে গেল।আমি ওদের কাছে ফিরে আসলাম।

কি রে ভাইয়া মাইশা আপু কোথায়?(আনহি)

চলে গেছে।ওর তাড়া আছে নাকি!(আমি)

মেয়েদের সাথে এতো মিশতে হয় না দেবর জি।(নিধিকা)

মেয়েদের সাথে এতো না মিশলে বিয়েটা কি করে হবে ভাবি জি!(আমি)

আমার মুখে ভাবি ডাক শুনে নিধিকার মুখটা লাল হয়ে গেছে।রাগ করলে বরাবর ওর মুখ লাল হয়ে যায়।আমার অনেক হাসি পাচ্ছে তাও চুপ হয়ে বসে আছি।

আরে ভাবি মাইশা আপুর তো বিয়ে হয়ে গেছে।(আনহি)

নিধিকা কিছু না বলে চুপ হয়ে বসে আছে।আমি ভালো করেই জানি ওর অনেক রাগ হচ্ছে।রাগ হলে ওর মুখ লাল হয়ে যায় আর চুপ হয়ে বসে থাকে।তবে আমার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে।

চলবে………

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করি!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here