শ্যামাবতী,পর্ব: ২

শ্যামাবতী,পর্ব: ২
লাবিবার_গল্পকথা

নিস্তব্ধ রাতে দুজন মানব-মানবী পাশাপাশি বসে আছি কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই। দুজনের মনেই দুজনকে জানার জন্য রয়েছে ব্যাকুলতা। তবে কেউই আগ বাড়িয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না।
এতক্ষণ রাহাতের পাশে বসে থাকায় বুঝতে পারলাম লোকটা বেশ গম্ভীর। কথা কম বলে, তবে এখন তো তার উচিত একটু কথা বলা নয়তো আমরা পরিচিত হব কি করে? আমার খুব ইচ্ছা হচ্ছে লোকটার সম্পর্কে জানতে। তবে লজ্জা আর জড়তার জন্য বলতে পারছিনা। নীরবতা ভেঙে হঠাৎ করেই রাহাত গম্ভীর কণ্ঠে
বলে উঠলো,

-‘তো পিচ্চি কি নাম তোমার?’
আমি জানালার দিকে মুখ করে বসে ছিলাম। হঠাৎ করেই তার এরূপ কথায় আমি তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম। গাড়ির ভেতর আলো থাকায় তার মুখখানি এবার আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম। তাকে দেখে অটোমেটিক্যালি আমার মুখটা হা হয়ে গেল। লোকটার সত্যিই ভয়ানক সুন্দর। কিন্তু বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না রাহাতের কথা শুনে।

-‘আমাকে দেখার জন্য অনেক সময় পাবে। বরটা তোমারি! কেউ নিয়ে যাচ্ছে না। আপাতত আমি যা কোশ্চেন করছি তার অ্যানসার দাও।’

আবারও লজ্জা মিহিয়ে গেলাম। লোকটা কথায় কথায় শুধু লজ্জা দেয়। মান সম্মান পুরোই ফালুদা হয়ে গেল। তবে লোকটা আমার পিচ্চি কেন বলল? আমি যদি পিচ্চি হয়ে থাকি তবে সে আমার বিয়ে কেন করব? হোয়াই? মনে মনে বললাম কিন্তু কথা গুলো বাইরে প্রকাশ করতে পারলাম না। জানালার দিকে মুখ করে নিচু স্বরে উত্তর দিলাম।

-‘তাহিয়ান ইসলাম তাহি আমার নাম।’
-‘আর আমার?’
তার এ প্রশ্নের উত্তর কি দিব বুঝতে পারছিনা। আসলে তার নামটা তো আমার ঠিকভাবে শোনা হয়নি। শাশুড়ি মুখে শুনেছিলাম একবার রাহাত নামটা। তাই সেটাই বলে দিলাম।

-‘রাহাত!’
সে গাড়ি চালাতে চালাতেই প্রশ্ন করল,
-‘পুরো নাম?’
তার পুরো নাম তো আমি জানিনা। তাই কোন প্রকার কথা ছাড়াই চুপচাপ বসে থাকলাম। কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হতেই সে নিজে থেকেই বললো,
-‘রাফিদ আবরার আমার পুরো নাম। রাহাত নিক নেইম।’
নামটা বেশ সুন্দর, অবশ্য লোকটা ও অনেক সুন্দর কিন্তু খুব মুডি। আচ্ছা ডিফেন্সের লোকেরা কি এমনই হয়? গম্ভীর গম্ভীর টাইপের?
পরক্ষনেই রাহাত আবারো গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করল,

-‘বয়স কত তোমার?’
তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলাম।
-‘১৭ চলছে তবে কিছুদিনের মধ্যে ১৮ হয়ে যাবে।’
লোকটা এবার একটু শব্দ করে হাসলো। আমার রাগ হল, এখানে হাসার কি হলো? আমি কি হাসার কিছু বলেছি? কিছুটা রাগ নিয়ে ফিরলাম তার দিকে কিন্তু পরক্ষণেই তার বাঁকা দাঁতের হাসি দেখে থমকে গেলাম। লোকটা কত সুন্দর করে হাসে! তার এই বাঁকা দাঁতের হাসি দেখে কত মেয়ে যে দেওয়ানা হয়েছে কে জানে। আমি চেয়েও চোখ সরাতে পারলাম না। হাসিটা ও একটা আর্ট। সবাই সুন্দর করে হাসতে পারে না। তার হাসি এত সুন্দর হতেও সে কেন এমন গম্ভীর হয়ে থাকে? আমি যদি তার মত এমন সুন্দর হাসির অধিকারী হতাম তাহলে তো আমি সবসময় হাসিতেই থাকতাম।
রাতে আর কোন কথা হলো না তার সাথে আমার। তাকে দেখতে দেখতে যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম নিজেও বুঝতে পারিনি।

——————-

যখন আমার ঘুম ভাঙ্গে তখন প্রায় ভোর হয়ে এসেছে। গাড়িটা তখন রাস্তার এক সাইডে দাঁড় করানো ছিল। আমি পাশে তাকিয়ে দেখি রাহাত ও ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। হয়তো সারারাত জার্নি কারণে টায়ার্ড লাগছিল তাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিও আর তাকে জাগালাম না। কিছুক্ষণ নিষ্পলক তার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। রাতে লোকটাকে যতটা সুন্দর লাগছিল দিনের এই মিষ্টি আলোতে তাকে আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। আমার তো ভাবতেই অবাক লাগে যে লোকটি আমার! লোকটি একান্তই আমার নিজস্ব।

চারদিকে ভোরের আলো ফুটে গিয়েছে। দেখলাম গাড়িটা এমন একজায়গায় দাঁড় করানো যেখানে চারপাশে গাছপালা ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দূর দিগন্তে ও কোন দোকানপাট আছে কিনা সন্দেহ। এভাবে একা বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না। তাই আস্তে করে সিট বেল্টটা খুলে গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বের হলাম। গাড়ি থেকে বের হতেই মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে গেল। সকালের স্নিগ্ধ বাতাস ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে চোখ মুখ। চোখ বন্ধ করে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলাম। হঠাৎ মনে হলো আমার পাশে কেউ আছে তাই তারা তারি পাশে ফিরে তাকালাম। তাকাতেই দেখতে পেলাম রাহাত আমার পাশে দাড়িয়ে দূর পানে দৃষ্টি নিবন্ধ রেখেছেন। কিছুক্ষণ নীরবে কেটে যাওয়ার পর তিনি গাড়ির দিকে যেতে যেতে আমাকে বললেন গাড়িতে উঠে বসতে। আমিও চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম।

আমরা যখন পৌছালাম তখন প্রায় দশটা বাজে। বাড়ির গেটের সামনে গাড়ি দাঁড়াতেই ভেতর থেকে আমার বয়সি দুটো মেয়ে ছুটে আসলো। বাড়িটা দেখতে ছোটখাটো একটা রাজপ্রাসাদের মত। পরিধি যদিও খুব বেশি না তবুও রাজপ্রাসাদের থেকে কোন অংশে কম না। বাড়ির সামনের ফাঁকা জায়গা গুলোতে বেশকিছু ফুল গাছ রয়েছে। আমার শাশুড়ি মা এবং বাকি সবাই আমাদের অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন। ভেতরে ঢুকতেই আমার শাশুড়ি মা রাইমাকে দিয়ে আমাকে রাহাত এর রুমে পৌঠিয়ে দিল ফ্রেশ হয়ে নেয়ার জন্য। রাইমা হচ্ছে আমার একমাত্র ননদিনী। মেয়েটা বেশ মিশুক, কাল থেকে ভাবি ভাবি করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। অবশ্য অল্প সময়ের ভিতর খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে আমাদের। রাইমা আমার থেকে বয়সে বড় হলেও সম্পর্কে ছোট যে কারণে সে আমাকে ভাবী বলে ডাকলেও আমি তার নাম ধরে ডাকতে পারিনা, আপু বলেই ডাকি।
রাহাতের রুমটা বেশ গোছালো। মাঝারি সাইজের রুমটাতে একটা আলিশান বেড, বেডসাইডে ছোট টেবিল, টেবিলটার উপর রাহাতের ছোট একটা হাস্যজ্জল ফটো ফ্রেম রয়েছে। গোলাপি রঙের দেয়ালে বেশ কিছু ওয়ালমেট দেখা যাচ্ছে। এক সাইডে একটা বুকসেলফ রয়েছে ঠিক তারই পাশে সোফা ও টি-টেবিল। তার বরাবর সামনেই রয়েছে কাবার্ড ও ড্রেসিং টেবিল। রুমের বা দিক থেকে রয়েছে ওয়াশরুম। এবং আমার সবথেকে ভালো লাগলো ঠিক রাস্তা সংলগ্ন রয়েছে একটি বারান্দা, বারান্দাটা বেশ বড়। বারান্দাটায় একটা বেতের সোফা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না। মনে মনে ভাবলাম এখানে বেশ কিছু ফুলের গাছ রাখবো তাহলে বেশ লাগবে বারান্দাটা। অতঃপর রুমে চলে আসলাম। রাতে যদিও গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু তবুও ঘুমটা ভালো হয়নি যে কারণে ভেবে নিলাম ফ্রেশ হয়ে একটা সুন্দর ঘুম দিব।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here