ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:১৬,১৭
মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:১৬
পরদিন সকালেই মারিয়া রেডি হয়ে আশ্বিনদের বাসায় চলে আসে।। যেভাবেই হোক সাহিলের বলা কথাগুলো তার করতেই হবে,,,নয়তো আশ্বিন যদি একবার জেনে যায় যে অধরাকে মারিয়াই পানিতে ফেলে দিয়েছিলো…তবে মারিয়ার কি হবে কে জানে।।
মারিয়ার মনে পড়ে গেলো গতকাল সাহিলের বলা কথাগুলো…
🍁ফ্ল্যাশব্যাক…..
— মারিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাহিলের দিকে তাকিয়ে,,,””কি চাও তুমি??””
— সাহিল বাঁকা হাসি দিয়ে,,,””আমার রিপোর্ট দরকার,,,অধরার মেডিক্যাল রিপোর্ট।। আমি জানি ওই রিপোর্ট এখন আশ্বিনের কাছেই আছে।। হয়তো তার বাসায় নয়তো অফিসে,,,তুমি সেই রিপোর্ট আমাকে যেভাবেই হোক খুঁজে এনে দিবে।।””
— মারিয়া ভ্রু কুঁচকে,,,,””অধরার মেডিক্যাল রিপোর্ট!!! অধরার রিপোর্ট দিয়ে তুমি কি করবে?? আজব তো।। আমি পারবো না।।””
— “”তুমি না পারলে তো আমাকে এই ভিডিওটা আশ্বিনকে দেখাতেই হবে।।
যদি এমন না চাও তাহলে আমার কথামত রিপোর্ট গুলো খুঁজে বের করো।। তবে সাবধান,,,আশ্বিন যেনো ভুলেও তোমাকে সন্দেহ না করে।। মনে থাকবে?””
— মারিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে,,,””ঠিক আছে।।””
— সাহিল একটা হাসি দিয়ে,,,””গুড গার্ল।। তো,,,দুদিন সময় দিলাম। এর মধ্যেই রিপোর্টগুলো খুঁজে বের করো। যাও…।।””
🍁বর্তমানে….
— মারিয়া আশ্বিনের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে,,,””কোথায় খুঁজবো আমি অধরার রিপোর্ট?? উফ!! কেনো যে ওই অধরাকে পানিতে ফেলতে গিয়েছিলাম।। অসহ্য।।””
মারিয়া চুপিচুপি আশ্বিনের রুমের দরজার আড়াল থেকে দেখে আশ্বিন রুমে নেই।। তাই ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করে বুঝতে পারে আশ্বিন ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছে।।
— “”আশ্বিন শাওয়ার নিচ্ছে,,,মানে এটাই সুযোগ অধরার রিপোর্ট খুঁজে বের করার।।””
মারিয়া খুব সাবধানের সাথে আশ্বিনের পড়ার টেবিল,,বুক সেল্ফ,,আলমারি সব জায়গাতেই তন্ন তন্ন করে খুঁজেও রিপোর্ট পেলো না।।
— মারিয়া ক্লান্ত হয়ে খাটে বসে মনে মনে,,,,””ধ্যাত!! কোথায় রেখেছো রিপোর্টগুলো আশ্বিন?? কোথায় রেখেছো??””
আশ্বিনের ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার শব্দ শুনে মারিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে চুপচাপ সোফার উপর বসে।।
— আশ্বিন মারিয়াকে তার রুমে দেখে,,,””মারিয়া..তুমি এখানে!! কখন এসেছো??””
— মারিয়া একটা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে,,,””এইতো মাত্রই আসলাম।। তোমার সাথে ভার্সিটির ফাংশনে যাবো,,,তাই রেডি আগেই চলে এসেছি।।
দেখো না আশ্বিন,,,আমাকে কেমন লাগছে??””
— আশ্বিন মারিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে,,,””হুম,,,সুন্দর লাগছে।।
মারিয়া,,,তুমি মমের কাছে যাও।। আমি রেডি হয়ে আসছি।।””
— “”হুম…ঠিক আছে।।””
কথাটা বলেই মারিয়া চলে গেলো।। মারিয়া চলে যেতেই আশ্বিন দরজা লাগিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।।
🍁এদিকে…..
অধরা ঘুম থেকে উঠেই তিশা আর নিধিকে বাসায় আসতে বললো।। আজ ফাংশনে তিন বান্ধবী মিলেই শাড়ি পড়ে যাবে।। অধরা অবশ্য আগে কখনো শাড়ি পড়েনি তবে এবার সবার সাথে তাল মিলিয়ে সেও শাড়ি পড়ার জেদ ধরে রেখেছে।।
— অর্ণব পাঞ্জাবীর হাতা ঠিক করতে করতে হলরুমে এসে,,,,””বোন,,,এখনও রেডি হও নি?? ফাংশনে যাবে না??””
— অধরা অর্ণবের দিকে হা করে তাকিয়ে,,,””ভাইয়া!!! তোমাকে কতো কিউট লাগছে।। আজকে তো মেয়েরা তোমাকে দেখে একদম চোখ সরাতেই পারবে না।””
— আশ্বিন মারিয়াকে নিয়ে অধরাদের হলরুমে প্রবেশ করে,,,””অর্ণব।। তোরা রেডি তো?? চল তাহলে।।””
— “”আমি তো অনেক আগে থেকেই রেডি।। কিন্তু অধরার তো রেডি হওয়ার কোন খবরই নেই।।””
— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে,,,””কি হলো তোর?? যাবি না??””
অধরা কি বলবে? সে তো এক ধ্যানে হা করে আশ্বিনের দিকেই তাকিয়ে আছে।। লাল পাঞ্জাবীতে আশ্বিনকে দেখে পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে অধরা।। সবাই সত্যিই বলে,,,একটা ছেলেকে পাঞ্জাবীতেই সবথেকে বেশি সুন্দর লাগে।
অর্ণবের ধাক্কায় হুশ ফিরে অধরার।।
— “”ইয়ে মানে,,,তিশা আর নিধি আসছে।। আমি তাদের সাথেই যাবো।। তোমরা চাইলে চলে যেতে পারো।।””
— মারিয়া আশ্বিনের হাত ধরে,,,””আশ্বিন।। তাহলে চলো… আমরা চলে যাই।। অধরা নাহয় পরে চলে আসবে। চলো তো আশ্বিন…চলো।।””
আশ্বিন অধরার দিকে একবার তাকিয়ে মারিয়াকে নিয়ে চলে গেলো।। অধরা তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে…
— মনে মনে,,,””এসব কি ধরনের ড্রেস পড়েছে এই শাকচুন্নিটা।। তওবা,,,আস্তাগফিরুল্লাহ।। আশ্বিন ভাইয়া কিভাবে এই মেয়েকে সহ্য করে??আর…দেখো দেখো কিভাবে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে,,,,এহহ ঢং।।””
তারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তিশা আর নিধি আসে।। দুজন মিলে অধরাকে আশ্বিনের কিনে দেওয়া লাল শাড়িটা এক প্যাঁচে পড়িয়ে দেয়।। হাতে লাল চুড়ি,,,চোখে কাজল,,,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কপালে ছোট্ট লাল টিপ দিয়ে কাধ পর্যন্ত চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে অধরা।।
অধরাকে রেডি করে তিনজন মিলে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।।
🍁🍁
মারিয়া সবার থেকে লুকিয়ে,,,চুপিচুপি কলেজের পিছনে আসে।। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন অথবা অর্ণব তাকে দেখছে কিনা।।
— একটা বিরক্তি ভাব নিয়ে,,,””বলো কেনো ডেকেছো?””
— সাহিল একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,,,,””ওহ ডার্লিং!! বিরক্ত হয়েছো?? কিন্তু কি বলো তো,,,বিরক্ত হয়েও কোন লাভ নেই কারণ তুমি আমার কথা শুনতে বাধ্য।।
যাই হোক,,,রিপোর্ট পেয়েছো??””
— “”আর রিপোর্ট।। কাল থেকে আশ্বিনের রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও অধরার রিপোর্ট পাইনি। আমার মনে হয় অধরার রিপোর্ট আশ্বিনের কাছে নেই।।””
— “”আছে।। আমি শতভাগ নিশ্চিত আশ্বিনের কাছেই অধরার রিপোর্ট আছে।। রুমে খুঁজে না পেলে পুরো বাসায় খুঁজে দেখো,,,অফিসে খুঁজে দেখো।। কিন্তু কালকের মধ্যেই আমার রিপোর্ট চাই।।””
কথাগুলো বলেই সাহিল সেখান থেকে চলে গেলো।। মারিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সাহিলের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে।। হঠাত তার মনে হলো তার পিছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।।
— মারিয়া ধীরে ধীরে পিছনে ঘুরে চমকে উঠে,,,””আ..আ…আশ্বিন!! ত…তুমি এখানে??””
— আশ্বিন মারিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,,””সাহিলের সাথে কি নিয়ে কথা বলছিলে তুমি??””
— মারিয়া ভয়ে আমতা আমতা করে,,,””ত..তেমন ক..কিছু না।। তোমার আমার সম্পর্কে কি… এসব নিয়ে জিজ্ঞেস করেছে।। আর এই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কারণ।। এগুলোই।।””
— “”সত্যি কথা বলছো তো মারিয়া?? দেখে তো এমন মনে হচ্ছিল না।।””
— “”হ..হ্যা।। সত্যি কথাই বলছি। আর কি বলবে??””
— আশ্বিন মারিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে,,,””আচ্ছা ঠিক আছে।। তুমি আর সাহিলের সাথে কথা বলবে না।। সাহিল ভালো ছেলে না। সে তোমাকে বিপদে ফেলতে চাইবে।।
এখন চলো স্টেজের কাছে যাই।।””
মারিয়া আগে আগেই চলে গেলো।। আশ্বিন সাহিলের যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে চলে আসলো।। হঠাত কিছু একটা দেখে আশ্বিনের চোখ আটকে যায়।।
অধরা শাড়ি পড়ে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলে গেইট দিয়ে প্রবেশ করছে।। এদিকে দূর থেকে অধরাকে দেখে আশ্বিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে,,,,হৃৎস্পন্দন ক্রমাগত উঠা নামা করছে।। অধরাকে শাড়ি পড়ায় আজ বড় বড় লাগছে।। আজ তাকে দেখে কেউই বলতে পারবে না যে সে…..।।।
অর্ণব এসে অবাক হয়ে আশ্বিনের পাশে দাঁড়ায়।। অধরা দূর থেকে তাদের দেখে দৌড়ে এসে…
— “”ভাইয়া।। আমাকে কেমন লাগছে??””
— অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুচকি হেসে অধরার মাথায় হাত রেখে,,,””একদম মমের মতো লাগছে। শাড়ি পড়লে মমকেও এমন লাগতো।।””
অধরা খুশি হয়ে আশ্বিনের দিকে তাকাতেই আশ্বিন অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে…
— “”চল।। সবাইকে স্টেজের কাছে ডাকা হয়েছে।”
আশ্বিনের কিছু না বলায় অধরা একটু মন খারাপ করে। সে কিছু না বলে গিয়ে একটা চেয়ারে মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ে।।
বেশ কিছুক্ষণ পর আশ্বিন এসে হাটু গেড়ে অধরার সামনে বসে অধরার কানের পিঠে একটা কাঠগোলাপ গুজে দেয়।। অধরা অবাক হয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে থাকে।।
— “”এবার ঠিক আছে।। এটাই কম ছিলো,,,এবার তোকে সম্পূর্ণ লাগছে।।
একদম মায়াবিনী,,সবার থেকে আলাদা। সবার থেকে স্পেশাল।। আমার ওহি।।””
অধরা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশ্বিনের দিকে। আর আশ্বিন ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে।।
এদিকে আশ্বিনের এমন কান্ড দেখে আশেপাশের সবাই খুশিতে চিৎকার করতে শুরু করে। কেউ কেউ তো তাদের দুজনের একসাথে ছবি তুলে রাখে।। মারিয়ার এসব কিছু একদম সহ্য হচ্ছে না।
— দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে,,,””যতো খুশি হওয়ার হয়ে নাও অধরা। যাস্ট একটা সুযোগ,,,,একটা সুযোগ পেলেই দেখো আমি তোমার কি হাল করি। তখন সবার সামনে মুখ দেখাতেও ভয় পাবে তুমি।।””
অধরা আর আশ্বিন সবার কথা শুনে একসাথে হাসছে আর মারিয়া তাদের দিকে রাগী ভাবে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছে।।
—চলবে❤
#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_তাহসীন_মেরিন
পর্ব:::১৭
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে একমনে রাতের আকাশ দেখছে অর্ণব।। মনে হাজারো স্মৃতি আর কথা নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।। আজ সারাদিন ভার্সিটির ফাংশনের প্রতিটি মুহূর্ত অধরাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে অর্ণব।।
হাসি খুশি,,,নাচ গান,,,সবকিছুর মধ্যেই অধরা সবার সাথে নিজেকে কিভাবে যেনো মানিয়ে নিয়েছিলো।। অধরার এমন পরিবর্তনে সত্যিই আজ নিজেকে স্বার্থক মনে হচ্ছে অর্ণবের।।
— আশ্বিন এসে অর্ণবের পাশে দাঁড়িয়ে,,,””কিরে,,,তুই এতো রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আছিস।।। কিছু হয়েছে তোর??””
— অর্ণব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,,,””নাহহ।। এমনেই কিছু হিসেব মিলিয়ে দেখছিলাম।।
আমাদের জীবনে না চাইতেও অনেক কিছুই ঘটে যায়,,,তাই না আশ্বিন??
জানি না কেনো আজকে মম ড্যাডের কথা অনেক বেশি মনে পড়ছে।।””
— অর্ণবের কাধে হাত রেখে,,,””কি হয়েছে খুলে বলো তো।। কেউ কিছু বলেছে তোকে??””
— অর্ণব মুচকি হেসে,,,””আরে না না।। কে কি বলবে??”” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে…
“”আজকে অধরাকে দেখে মমের কথা মনে পড়ে গেলো।। শাড়ি পড়ায় আমার বোনটাকে একদম মমের মতোই লাগছিলো।।
অধরা আমার কাছে মম ড্যাডের রেখে যাওয়া আমানত।। আমার অধরা যেমনই হোক না কেনো,,,আমার কাছে তো সে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মূল্যবান।।””
“”একটা দূর্ঘটনা…আমার জীবনে হুট করে এসেই সব শেষ করে দিয়ে গেলো।। মম আর ড্যাড আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।।
তোর মনে আছে সেই দিনটার কথা??””
— আশ্বিন নিচের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে,,,,””হুমম মনে আছে।। কিভাবে ভুলে যাবো সেই দিনের কথা??””
“”বড় আব্বু আর বড় আম্মু সেদিন কতোটা খুশি ছিলো।। বড় আব্বুর এতো কষ্টের প্রোজেক্ট সেদিন হাতে পেয়েছিলো।। স্বপ্নগুলো একদম সত্যি হওয়ার পথে ছিলো।।””
— অর্ণব এক ধ্যানে নিচের দিকে তাকিয়ে,,,,””আমার তো এখনও মনে পড়ে….ড্যাড সেদিন স্টেজে দাঁড়িয়ে প্রোজেক্ট নিয়ে একটা বক্তৃতা দিয়েছিলো।। বিভিন্ন দেশের বড় বড় বিজনেস ম্যানরা সেদিন ড্যাডের প্রোজেক্টের কতো প্রশংসা করছিলো।।””
“”অধরার তখন মাত্র দুই বছর বয়স।। ড্যাডের স্বপ্ন ছিলো অধরা বড় হয়ে এই প্রোজেক্টের দায়িত্ব নিবে,,,,তাই ড্যাড পুরো প্রোজেক্টটা সেদিন অধরাকে ডেডিকেটেড করে দেয়।
কে জানতো,,,ড্যাডের স্বপ্নগুলো আর কোনদিন পূরণ হবে না।। মম আর ড্যাডের…অধরাকে প্রোজেক্ট নিয়ে সাকসেসফুল হতে,,কোনদিন দেখা হবে না।।””
“”অধরা কখনো এই প্রোজেক্টের যোগ্য না।। আমরা অন্যায় করছি আশ্বিন।। শুধু মাত্র ড্যাডের স্বপ্ন পূরণ করতে সবাইকে ধোঁকা দিয়ে রুল ভঙ্গ করে আমরৃ প্রোজেক্ট নিজের কাছে রাখতে পারি না।। তুই ভালো মতোই জানিস রুল অনুযায়ী,,, অধরা….।।।””
— আশ্বিন অর্ণবের কথা বলতে না দিয়ে,,,,””চুপ কর অর্ণব।।
অধরাই এই প্রোজেক্টের যোগ্য।। বুঝতে পেরেছিস তুই?? হ্যা…মানছি একটা এক্সিডেন্ট আমাদের অধরার অনেক বড় ক্ষতি করে দিয়েছে।।
কিন্তু তুই অধরাকে একবার দেখ।। ১৫ বছর আগের অধরা আর এখন অধরার মধ্যে পার্থক্যটা দেখ।। অধরা নিজেকে রিকভার করছে অর্ণব।।””
অর্ণব এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিলো।। আশ্বিন ঠিকই বলেছে,,,,অধরা নিজেকে অনেকটাই রিকভার করেছে।। হয়তো একদিন অন্য সবার মতো অধরাও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।।
কথাটা ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অতীতে ডুব দেয় অর্ণব।।।
🍁ফ্ল্যাশব্যাক🍁
প্রোজেক্ট ফাংশনে রহমান আর চৌধুরী ফ্যামিলির সবাই এসেছে।। অমিত রহমান স্টেজে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।। অপরদিকে ছোট্ট অধরা আশ্বিন,, অর্ণব আর শ্রাবণের সাথে খেলা করছে।। আশ্বিন শক্ত করে অধরার হাত ধরে রেখেছে যেনো সে হারিয়ে না যায়।।
ফাংশন শেষে সবাই মিলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।। অমিত আর দিয়া অনেক খুশি এতো বড় একটা প্রোজেক্ট হাতে পেয়ে।।
— দিয়া অধরাকে কোলে নিয়ে অর্ণবকে বললো,,,””বাবা চলো। এখন আমাদের বাসায় যেতে হবে।। সবাই অনেক টায়ার্ড।।””
— অর্ণব জেদ ধরে,,,””মম প্লিজ।। আমি একটু পর আশ্বিনের সাথে যাবো।। প্লিজ মম।””
— আশ্বিনের মা বললো,,,,””দিয়া।। অর্ণব নাহয় আশ্বিনের সাথে আমাদের গাড়িতে করে যাক।। তুমি চিন্তা করো না আমি অর্ণবকে দেখে রাখবো।।””
— দিয়া মুচকি হেসে,,,””আচ্ছা ঠিক আছে।। অর্ণব বাবা,,,কোন দুষ্টুমি করবে না কিন্তু। লক্ষী ছেলের মতো সবার কথা শুনবে।। ঠিক আছে??””
অর্ণব মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই দিয়া আর অমিত মুচকি হেসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।। আশ্বিন এক ধ্যানে অধরার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।। কেনো যেনো অধরাকে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না।।।
অমিত গাড়ি ড্রাইভ করছে।। পাশে দিয়া ঘুমন্ত অধরাকে কোলে নিয়ে বসে আছে।।
দুজন মিলে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছে হঠাত গাড়ির স্পিড বাড়তে শুরু করে।।
— “””অমিত!! কি করছো? আস্তে গাড়ি চালাও নয়তো এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।।””
গাড়ির স্পিড ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।। দিয়া ভয়ার্ত কণ্ঠে বারবার অমিতকে আস্তে ড্রাইভ করতে বলছে।।
— অমিত কাপা কাপা কণ্ঠে,,,””দিয়া,,,,গাড়ির ব্রেক কাজ করছে না।। সম্ভবত গাড়ির ব্রেক ফেইল হয়ে গিয়েছে।।””
— দিয়া চিৎকার করে,,,,””কিহহ??? অমিত এখন কি হবে??””
অমিত গাড়ির কন্ট্রোল হারিয়ে এলোমেলো ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে।। এদিকে,,,দিয়ার চিৎকার শুনে অধরার ঘুম ভেঙে যায়।। এতো দ্রুত গতিতে এলোমেলো ভাবে গাড়ি চালানো আর দিয়ার এমন ভয়ার্ত কণ্ঠ শুনে অধরাও ভয় পেয়ে কান্না শুরু করে।।।
— অমিত কোনভাবে গাড়িটা থামানোর চেষ্টা করে মনে মনে,,,,””রাতের অন্ধকারে রাস্তা কিছুই দেখা যাচ্ছে না।। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।।””
— দিয়া অধরাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে,,,””অমিত!!!! সামনে ট্রাককক…।।।””
অমিত কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রাকের সাথে তাদের গাড়ি সজোরে ধাক্কা লাগে।। মুহূর্তেই অধরাদের গাড়িটা উল্টে দূরে পরে যায়।।
এদিকে…..
শাহেদ সবাইকে নিয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠছিলো হঠাত তার ফোনে কল আসে।। শাহেদ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে অমিত।। সে ফোন রিসিভ করে….
—“”হ্যালো,,অমিত ভাই।।”” “”জি,,,আপনি কে বলছেন??”” “”কিহহহ???”” “”ক..কোন হাসপাতালে?”” “”আমরা এখনই আসছি।।।””
— দাদু ভাই শাহেদের ফোন রাখতেই,,,,””কি হয়েছে শাহেদ??””
— “”ভাইয়ার গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে বাবা।। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।। তাড়াতাড়ি চলো।।””
হঠাত এমন সংবাদ শুনে সবাই অনেক ঘাবড়ে যায়।। অধরার দাদির তো ইতিমধ্যে জ্ঞান হারানো অবস্থা।। আশ্বিনের মা তো অর্ণবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।।
হাসপাতালে পৌঁছেই শাহেদ আর আকাশ দৌড়ে ইমাজেন্সি ওয়ার্ডে আসে।।
— “”ডাক্তার।। আমার ভাইয়া ভাবি আর আমাদের মেয়ে র..রোড এক্সিডেন্ট হয়েছে।। তারা এখন কোথায় আছে?? কেমন আছে??””
— ডাক্তার সবার দিকে একবার তাকিয়ে,,,,””ছোট্ট বাচ্চাটাকে আইসিইউ রাখা হয়েছে।।
বয়সের তুলনায় তার মাথায় আঘাতটা অনেক ডিপ।। আমাদের এখনি অপারেশন করতে হবে।।””
— দাদু ভাই ডাক্তারের কাছে এসে,,,””আমার ছেলে আর বউমা।। তারা কেমন আছে???””
— ডাক্তার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শান্ত কণ্ঠে,,,””আই এম সরি।। অনেক লেইট হয়ে গিয়েছিলো,,,,দে আর নো মোর।।””
কথাটা শুনে সবার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে।। অর্ণব কথাটা শুনেই কান্না শুরু করে।। অধরার দাদি মুহূর্তেই জ্ঞান হারায়। ছোট মা আর মামুনি মিলে তাদের সামলানোর চেষ্টা করছে।। আশ্বিন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।।
আশ্বিন ধীরে ধীরে আইসিইউ ওয়ার্ডের দরজা দিয়ে আহত ছোট অধরাকে দেখতে থাকে।। ছোট মায়াবী মুখটার জায়গায় জায়গায় ক্ষতের দাগ।। রক্তে পরনের সাদা জামা লাল হয়ে গিয়েছে।।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অধরার অপারেশন শুরু হয়।। সবাই এখনো কান্না করছে।। অধরার দাদি আর অর্ণবকে নিয়ে ছোট মা বাসায় চলে গেলেও আশ্বিন অপারেশন থিয়েটারের বাহিরে একটা চেয়ারে নিরবে বসে আছে।। অবশেষে কয়েক ঘন্টা পর ডাক্তার বেরিয়ে আসে…
— আকাশ ডাক্তারের কাছে গিয়ে,,,,””ডাক্তার।। আমাদের অধরা…।।””
— “”অপারেশন সাকসেসফুল।। তবুও চব্বিশ ঘণ্টা আগে আমরা কিছু বলতে পারছি না।। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে যেকোন কিছু ঘটতে পারে।। আপনারা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন।।””
ডাক্তারের কথা মতো ধীরে ধীরে চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়ে গেল,,,কিন্তু অধরার জ্ঞান ফিরলো না।।
— ডাক্তার শাহেদের সামনে এসে,,,,””বাচ্চাটা কোমায় চলে গিয়েছে।। জানিনা আর জ্ঞান ফিরবে কিনা।। তবে অধরার ব্রেইন একটু হলেও কাজ করছে। তাই আমরা তার ট্রিটমেন্ট কন্টিনিউ রাখবো।।””
শাহেদ কথাটা শুনে চেয়ারে বসে পড়ে।। আকাশ তার পাশে বসে কাধে হাত রেখে…
— “”ধৈর্য রাখ।। দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।।””
— “”কি ঠিক হবে আকাশ? আমার ভাইয়া ভাবি আর কখনো ফিরে আসবে না।। আমার ছোট্ট মেয়েটা বাঁচবে কিনা তাও নিশ্চিত না।।
এই মাত্র শুনলাম শাহিন অমিত ভাইয়ার প্রোজেক্ট নিজের নামে করিয়ে নিয়েছে।””
— “”এসব কি হচ্ছে আমাদের সাথে??
এ কোন ঝড় আসলো??””
শাহেদ কথাটা শুনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।। আকাশ তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।। অপরদিকে আশ্বিন দূরে দাঁড়িয়ে তাদের কথাগুলো শুনছে।।
—চলবে❤