ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:১০,১১

ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:১০,১১
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:১০

অপরাধীকে কেন্দ্র করে উপস্থিত সবাই রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।। আশ্বিন চোখ মুখ শক্ত করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে।।
— আশ্বিন রাগী কণ্ঠে বললো,,,””তোকে এখানে নিয়ে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে।। বুঝতে পারিনি তুই এমন সব কান্ড করবি।।””

— শ্রাবণ আশ্বিনের কথায় তাল মিলিয়ে বললো,,,””দেখলি তো…আশ্বিন।। আমি তোকে আগেই বলেছিলাম…এই মেয়েকে এখানে নিয়ে আসা ঠিক হবে না। তুই তো আমার কথা শুনলি না। এখন বোঝ।।””

— আশ্বিন অপরাধীর দিকে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে বললো,,,””ভুলটা যেহেতু আমি করেছি,,,সো আমাকেই এর সমাধান করতে হবে।””

অধরা এতোক্ষণ অর্ণবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সোফায় বসে মাথা নিচু করে চুপচাপ তাদের সব কথা শুনছিলো।। আশ্বিনের কথা শেষ হতেই সে বললো…
— “”ভাইয়া!! আমি সত্যি বলছি।। আমি নিজে থেকে পানিতে পড়ে যাইনি। কেউ আমাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিলো।।””

— আশ্বিন রেগে চিৎকার করে,,,””আর একটা কথা বলবি না তুই।। সব সময় তুই এমন সব ধরনের কাজ করবি যেন বাকি সবাই আতঙ্কে পরে যায়।। একবার পার্কে হারিয়ে যাবে তো একবার লেকের পানিতে পরে যাবে।। কালকে সবাই পাহাড় দেখতে যাবো না? দেখা যাবে এই ইডিয়েট পাহাড় থেকেই পরে গিয়েছে।। অপদার্থ একটা।।””

— অর্ণব অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,,””বোন,,,আশ্বিন যা বলছে তা ঠিকই বলছে।। তখন যদি শেষ মুহূর্তে আশ্বিন গিয়ে তোকে পানি থেকে না তুলতো তাহলে কি হতে পারতো ভেবে দেখ একবার।। আমাদের রাগ করাটা কি স্বাভাবিক না??””

— অধরা অসহায় ভাবে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো,,,””কিন্তু ভাইয়া!! সত্যি বলছি কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। আমি নিজে থেকে পরে যাইনি।।””

— মারিয়া একটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো,,,””ওহ!! ওহি….তোমার মাথায় কি কোন সমস্যা আছে?? আমি বুঝতে পারি না এই বোকা মেয়েকে অর্ণব কিভাবে বছরের পর বছর সামলে রেখেছে। সবার আদরে একদম বাদর হয়ে গিয়েছে।। একে তো নিজে দোষী,,,তার উপর আবার মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছে।।””

মারিয়ার কথায় অধরার মনে কষ্ট পায়।। সে তো মিথ্যা কথা বলেনি তাহলে এসব কথা তাকে কেনো শুনতে হবে?? আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে অধরার থেকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে।। সবাই অধরাকে অবিশ্বাস করছে!!

— ধ্রুব অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,,,””তোমরা যাই বলো…আমার কাছে মনে হচ্ছে অধরা সত্যি কথাই বলছে।। আমি অধরাকে যতদূর জানি,,, সে কখনো কোন ভুল কাজ করলেও…তার দোষ অস্বীকার করে না।।””

— অর্ণব শান্ত কণ্ঠে বললো,,,””কিন্তু অধরা যখন লেকের পানিতে পড়ে গিয়েছিলো তখন তো আশেপাশে আমরা কাউকেই দেখিনি। তাহলে কে ধাক্কা দিবে তাকে??””

— ধ্রুব কিছু একটা ভেবে বললো,,,””এমনও তো হতে পারে আমরা যখন অধরার কাছে পৌঁছেছি ততক্ষণে সে চলে গিয়েছে। হতে পারে…।।””

— ধ্রুবর কথায় মারিয়া হাত তালি দিতে দিতে,,,,””ওয়াও!! যাস্ট ওয়াও।। কি সুন্দর করে গোয়েন্দা গীরি করছে।। যেমন অধরা তেমনি তার ফ্রেন্ড।। একজন নিজের দোষ ঢাকতে মিথ্যা বলছে তো অন্যজন লজিক দেখিয়ে মিথ্যাকে সত্যি করছে। ওয়াও!! ভেরি ইমপ্রেসিভ!! হুহহ ড্রামা বাজ।””

সবার এমন ব্যবহার দেখে এমনিতেই অধরার মন খারাপ ছিল তার উপর মারিয়ার এমন আচরণ।। সবাই মিলে কিভাবে অধরাকে অপরাধী বানিয়ে ফেলেছে।। তাদের এরূপ ব্যবহার দেখে অধরা আর কষ্ট চেপে রাখতে পারলো না।। সে হুহু করে কেঁদে ওঠে সোফা থেকে উঠে দৌড়ে তার রুমে চলে আসে।।

— “”অধরা দাঁড়া!!”” তিশা আর ইশমি অধরার পিছু পিছু চলে আসে।।

অনেকক্ষণ ধরে কান্না আটকে রাখায় অধরার হেঁচকি উঠে গিয়েছে।। খাটের উপর বসে একনাগাড়ে কান্না করায় তার চোখ মুখ ফুলে… গুলুমুলু গালগুলো লাল হয়ে আছে।। ইশমি আর তিশা নানাভাবে তাকে সান্তনা দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না।।

— তিশা অধরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,,,””এই সব দোষ ওই শাকচুন্নিটার।। নিজে তো ঢং করবেই আবার অন্যকে ড্রামা বাজ বলে।। ইচ্ছে তো করছিল শাকচুন্নিটার চুল টেনে ধরি।””

— ইশমি তিশার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,,,””আমারও ওই মেয়েকে একদম সহ্য হয়না। সবসময় একটা অহংকারী ভাব নিয়ে থাকে। আমার তো মনে হয় ওই মারিয়াই অধরাকে ধাক্কা দিয়েছে।
কারণ যখন অধরা পানিতে পড়ে গিয়েছিল তখন আমাদের সাথে মারিয়া ছিলো না।।””

— অধরা চোখ মুছে নাক টেনে বললো,,,””কিন্তু ওই শাকচুন্নি আমাকে কেনো ধাক্কা দিবে?? আমি তার কি ক্ষতি করেছি? পানিতে তো ধাক্কা উল্টো আমার তাকে দেওয়া উচিত,,,কারন সে আমার আশ্বিন ভাইয়ার গলায় ঝুলতে চায়।।””

অধরার এই মুহূর্তে এমন কথায় তিশা আর ইশমি হাঁসবে না কাঁদবে।। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে তিশা বললো….
— “”যদি ইশমি আপুর কথা সত্যি হয় তাহলে মনে রাখ,,,আমরাও তাকে ছেড়ে কথা বলবো না।। ওযহা নিয়ে এসে এই শাকচুন্নিকে ঝাড়ু দিয়ে পেটাবো।। হিহিহি।”””
তিশার কথায় তিনজন একসাথে হেসে ওঠে।।

🍁🍁

রাতে খাওয়ার সময় আশ্বিন বারবার অধরার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে ছিলো।। মেয়েটাকে এভাবে বকা দেওয়া তার উচিত হয়নি।।
এদিকে অধরা অভিমানে একবারও আশ্বিনের দিকে ফিরে তাকায়নি।
— “”হুহহ!! কথা বলবো না এমনকি তাকাবোও না তোর দিকে। কতো বড় সাহস…মারিয়ার সামনে আমাকে বকা দিস।। তোর জন্য শাকচুন্নিটাও সুযোগ পেয়ে আমাকে কথা শুনালো।।
কি ভেবেছিস আমি তোদের শান্তিতে থাকতে দিবো। জি ন্যাহহ।। শুধু দেখতে থাকো কি করি আমি।””

খাওয়া দাওয়া শেষে অধরা নিজের রুমে প্রবেশ করতে নিবে ঠিক তখনই কেউ একজন তার হাত টেনে তাকে অন্য রুমে নিয়ে আসে।।
— “”কি সমস্যা তোমার আশ্বিন ভাইয়া?? আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো কেনো?? আরো কথা শোনানো বাকি আছে নাকি??””

— আশ্বিন অধরাকে খাটে বসিয়ে তার পাশে বসে পড়ে,,,””হ্যা বাকি আছে।। তুই সবসময় এমন উল্টো পাল্টা কাজ করিস কেনো বলো তো?? আমাদের কথা নাহয় না ভাবলি,,,একবার নিজের কথা ভেবে দেখ।। যদি তোর কিছু হয়ে যেতো তাহলে….কি হতো??””

— অধরা একটা ভেংচি কেটে উঠে দাঁড়িয়ে,,,””তাহলে তো তুমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হতে।। তোমার আর শাকচুন্নিটার রাস্তা যে ক্লিয়ার হয়ে যেতো।। তখন উটের পিঠে চড়ে নাচতে নাচতে শাকচুন্নিকে বিয়ে করতে যেতে।। কি ভেবেছো,,আমি কিছু জানি না?? আমি সব জানি।। হুহহ ঢং।।””

অধরা কথাগুলো বলেই হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।। এদিকে আশ্বিন অধরার কথাগুলো শুনে বোকার মতো অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো।।
— “”কি বললো অধরা?? রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে যাবে মানে?? আর এই শাকচুন্নি আবার কে??”” মারিয়াকে শাকচুন্নি বানিয়ে দিলো!!””
কথাটা ভেবেই হেসে ওঠে আশ্বিন।।

🍁পরদিন…..

— আশ্বিন সবার উদ্দেশ্যে বললো,,,””আজকে যেহেতু সবার আগে থেকেই পাহাড়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। সো তাই হবে।। কিন্তু অধরা কোথাও যাবে না।। প্রথমত এই গাধীর উপর কোন বিশ্বাস আমার নেই।। দ্বিতীয়ত কালকের ঘটনার পর অধরার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।। সো তুই (অধরাকে ইশারা করে) বাসায়ই থাকবি।।””

— অধরা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,,,””ঠিক আছে।। যাবো না আমি।””

—- মনে মনে,,,””এহহ!! এখন তো আমাকে রেখেই যাবি। তোদের রোম্যান্স দেখে ফেলবো নাহহ!!
তোর এই মারিয়া শাকচুন্নিকে যদি পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে পারতাম তাহলে মনে শান্তি পেতাম।। আমারও দিন আসবে।। কিন্তু কবে আসবে?😕””

— অর্ণব আশ্বিনকে বললো,,,,””তাহলে আমি অধরার সাথে থাকি। বোনকে একা ফেলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।।””

যেই কথা সেই কাজ।। সবাই মিলে অধরা আর অর্ণবকে রেখেই চলে গেলো।। পুরো বাসায় কিছু স্টাফ আর অধরা অর্ণব।।

— অধরা মনে মনে,,,””পাজি ছেলে। পচা ডিম।। সত্যিই আমাকে রেখে চলে গেল।।😒 আমার জন্যই ঘুরতে আসা অথচ আমাকে রেখেই চলে গেলো😤।।””

— “”না জানি শাকচুন্নিটা ভাইয়ার গলায় ঝুলে গেলো কিনা।। তিশাকে তো বলেছিলাম তাদের চোখে চোখে রাখতে।। ওই মেয়ের উপর কোন বিশ্বাস নেই।””

— “”সন্ধ্যা হয়ে আসছে তবুও তারা আসছে না।। কেনো?? শাকচুন্নি মারিয়া ভাইয়াকে নিয়ে পালিয়ে গেলো নাতো?😨 হায় হায়!! তাহলে আমার কি হবে??””

সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যায় সবাই ফিরে আসলো।। অধরা দূর থেকে তাদের লক্ষ্য করছে,,,,কেউ অবশ্য অধরার সাথে তেমন কথা বলছে না।। এদিকে সবাই খুব হাসি খুশি থাকলেও মারিয়া মুখ ভার করে আছে।।
— অধরা মারিয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে,,,””এর আবার কি হলো?? যাওয়ার সময়ও তো হাসি খুশি ছিলো। অবশ্য শাকচুন্নিরা হাসলেও তাদের ভালো লাগে না।। যাই হোক আমার কি।।””

অধরা রুমে এসে তিশার সামনে বসে….
— “”আজকে সারাদিন কি কি করলি? কোথায় কোথায় ঘুরতে গেলি??””

— তিশা আমতা আমতা করে,,,””ইয়ে মানে।। কাল সকালে বলবো। আমি অনেক টায়ার্ড। সো গুড নাইট।।””
তিশা কথাটা বলেই ঘুমিয়ে পড়লো।। অধরা এক প্রকার রাগারাগি করে সেও ঘুমিয়ে পড়ে।।

মাঝ রাতে অধরার মনে হচ্ছে সে শূন্যে ভাসছে।। হালকা শীত লাগছে তার। সে ঘুমের ঘোরেই চোখ খুলে দেখে খোলা আকাশ আর সে ভেসে আছে।।

— “”হায় আল্লাহ!!””😱

সে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ভালোভাবে খেয়াল করে দেখে আশ্বিন তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।। অধরা আশ্বিনের দিকে বোকার মতো করে তাকাতেই আশ্বিন তার দিকে তাকিয়ে এক বাঁকা হাসি দিয়ে চোখ টিপ দেয়।। আশ্বিনের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে অধরা হা হয়ে যায়।।

—চলবে❤

#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:১১

অধরা ড্যাবড্যাব করে অবাক নয়নে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।। এদিকে আশ্বিনও মুচকি হেসে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এ যেন চোখের ভাষায় দুজনের মনের অনুভূতির প্রকাশ।।

— হঠাত পেছন থেকে সবাই মিলে একসাথে,,,,
“” সা র প্রা ই জ!!!
হ্যাপি বার্থডে অধরা।।””

অধরা পিছনে ফিরে সবাইকে এভাবে দেখে অবাক হয়ে যায়।। আজকে তার জন্মদিন!! অধরা তো ভুলেই গিয়েছিলো। আশ্বিন অধরাকে কোল থেকে নামিয়ে তার হাত ধরে সবার কাছে নিয়ে আসে।।

— আশ্বিন অর্ণবকে বললো,,,,””তোর বোনকে কোলে তুলে নিয়ে এসে আমার হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।। আরো খাইয়ে আরো মোটা করে ফেল অধরাকে।।””

আশ্বিনের কথায় অধরা আর মারিয়া ছাড়া বাকি সবাই হেসে ওঠে।। অধরা আশেপাশে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে রিসোর্ট সম্পূর্ণ অধরার মনের মতো করে সাজানো হয়েছে।। কিন্তু এসব কিভাবে হলো??

— তিশা আর ইশমি অধরার কাছে এসে বললো,,,””কিরে?? কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?? জানিস এইসব কিছু আশ্বিন ভাইয়ার প্লেন।।। তোর পছন্দ মতো করেই সবকিছু সাজিয়েছে।। ভাইয়া কতো সুইট,,,তাই নারে??”””

— অধরা দূরে থেকে আশ্বিনের দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখে সে হেসে হেসে অর্ণবের সাথে কথা বলছে।। অধরা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,,””হ্যা।। দেখতে হবে না কার আশ্বিন ভাইয়া।।””
অধরার কথায় তিশা আর ইশমি একসাথে হেসে ওঠে।।

— শ্রাবণ তাদের কাছে এসে,,,””এই তোরা এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?? ইশমি তোমাকে না বললাম অধরাকে তাড়াতাড়ি রেডি করিয়ে নিয়ে আসতে।। কেক কাটতে হবে না?? অনেক কাজ বাকি আছে,,,সো কুইক!!””

ইশমি আর তিশা মিলে অধরাকে একটা রুমে নিয়ে আসে।। তারপর অধরাকে একটা গোলাপি রঙের গাউন ড্রেস পড়িয়ে দিয়ে হালকা মেকআপ করিয়ে দেয়।।

— “”তোমরা কিন্তু এখনও আমাকে বলছো না,,,,এসব কখন করলে? কিভাবে করলে??””

— ইশমি অধরার চুল ঠিক করতে করতে,,,””সেদিন যখন তুমি লেকের পাড়ে বসে ছিলে তখনই আমরা প্লেন করেছিলাম,,,,পরদিন তোমার জন্মদিন উপলক্ষে আশ্বিন ভাইয়া আর শ্রাবণ মিলে রিসোর্ট সাজাবে আর বাকিরা সবাই মিলে পাহাড়ে ঘুরতে যাবে…।।””

— ইশমির সাথে তাল মিলিয়ে তিশা বললো,,,,””কিন্তু তোর এতো সব কর্ম কান্ড দেখে ভাইয়া আর আমাদের পাহাড়ে পাঠিয়ে রিক্স নিতে চায়নি।। তাই,,,তোকে বাসায় রেখে আমাদের পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার নাম করে এই রিসোর্টে নিয়ে আসে। এতে অবশ্য ভালোই হয়েছে,,,আমাদের রিসোর্টটাও ঘুরে দেখা হলো আবার তোর জন্মদিনের ডেকুরেশন সবাই মিলে নিজ হাতে করলাম।।””

— অধরা কিছু একটা ভেবে,,,,””ওই শাকচুন্নি মারিয়াও কি এসব জানতো?? সেও কি তোদের এসব প্লেনে সাথে ছিলো?? আমার জন্য এতো কিছু করলো?? আমার প্রতি তার এতো দরদ!!””

— তিশা অধরাকে থামিয়ে দিয়ে,,,,””আরে রাখ তো তোর দরদ।। ওই মেয়ে আমাদের প্লেন সম্পর্কে কিছুই জানতো না।। দেখলি না,,,,আজকে সকালেও কেমন হাসিখুশি ভাবে ঘুরতে বের হলো,,,,কিন্তু রিসোর্ট এসে যখন জানতে পারলো যে আমরা এখানে কেনো এসেছি তখন মারিয়ার মুখটা দেখার মতো ছিলো।। হিহিহি।।””

— “”ওহ আচ্ছা!!! তো এই কারণেই তখন মারিয়াকে এমন গোমড়া মুখ করে থাকতে দেখেছিলাম।। খুব ভালো হয়েছে।।””

অধরা আরো কিছু বলতে নিবে তখনই অর্ণব এসে দরজায় নক করে…
— “”অধরা!! বোন,,,,তোরা এতো দেরী করছিস কেনো?? তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আয়।। সবাই অপেক্ষা করছে।””

অর্ণবের ডাক শুনে অধরা তিশা ইশমি বেরিয়ে আসে।। অর্ণব অবাক চোখে অধরাকে দেখছে।। হালকা সাজে অধরাকে একদম পরীর মতো লাগছে।।

— “”মাশাআল্লাহ..মাশাআল্লাহ!! আমি তো আগেই জানতাম আমার বোনটা যে পরীর মতো সুন্দর।। আজকে নাহয়..সবাই জানতে পারবে।। চল এখন।।””

অধরা মুচকি হেসে অর্ণবের হাত ধরে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে।। এদিকে,,,আশ্বিন শ্রাবণের সাথে কথা বলতে বলতে একবার সামনে তাকিয়ে সে স্তব্ধ হয়ে যায়।।

গোলাপী গাউন পরিধানকৃত অধরা রূপে একটা পরীর দিকে চোখ আটকে যায় তার।। কাজল কালো চোখ আর হালকা গোলাপি ঠোঁট সব মিলিয়ে অধরাকে ঠিক কতটা মায়াবী লাগছে তার হিসেব মেলানো কঠিন।। আশ্বিন এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে।।
অর্ণবের হাত ধরে অধরা যতই সামনে এগিয়ে আসছে আশ্বিনের হৃৎস্পন্দন ততটাই বেশি প্রখর হচ্ছে।।

— অধরা আশ্বিনের কাছে এসে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,,,””ভাইয়া!! আমাকে কেমন লাগছে??””

— অধরার কথায় আশ্বিনের হুশ ফিরে আসে।। সে মুহূর্তেই অন্যদিকে তাকিয়ে একটা মৃদু কাশি দিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,,””একটা ড্রেস পড়তে তোর এতো সময় লাগে?? আমি তো ভেবেছিলাম আজকে আর কেক কাটাই হবে না।। যাই হোক,,,চল।।””

আশ্বিন কথাটা বলেই সামনে চলে গেলো। এদিকে অধরা চোখ ছোট করে আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি দিলো।। হঠাত ধ্রুব এসে অধরার পাশে দাঁড়িয়ে বললো…

— “”আজ তো দেখি আমার দুষ্টু পরীকে একদম হুর পরীর মতো লাগছে।। বাই দ্য ওয়ে,,,,হ্যাপি বার্থডে।।””

— “”হিহিহি।। থ্যাংক ইউ ধ্রুব ভাইয়া।।””

অধরা ধ্রুবকে আরো কিছু বলতে নিবে তার আগেই আশ্বিন ধুম করে এসে অধরাকে টেনে নিয়ে চলে যায়।।

সবাই মিলে কেক কাটার জন্য একসাথে হয়।। মারিয়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে বিরক্তি লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।।
অধরা কেক কেটে সবাইকেই খাইয়ে দেয়।। মারিয়াকে কেক খাওয়াতে গেলে মারিয়া অধরার দিকে একটা রাগী লুকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।।

— অধরা মারিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে,,,””কি হলো এটা?? শুধু কেকই তো খাওয়াতে চেয়েছি।। এতো ভাব নেওয়ার কি আছে?? হুহহ,,,না খেলি। আমার কি?””

আশ্বিন মারিয়ার এভাবে চলে যাওয়াটা লক্ষ্য করলো।। সেও মারিয়ার পিছু নেয়।। অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে,,,””হ্যা হ্যা। যাও যাও।। তোমার জানটুস রাগ করেছে,,,তার রাগ ভাঙিয়ে আসো।। হুহহ ঢং!! “”

— আশ্বিন মারিয়ার পেছন পেছন এসে,,,””মারিয়া দাঁড়াও।।।””
আশ্বিনের কথায় মারিয়া দাঁড়িয়ে পড়ে।। আশ্বিন মারিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে…

— “”কি হয়েছে তোমার?? এভাবে চলে যাচ্ছো কেনো?””

— মারিয়া বিরক্তি লুক নিয়ে বললো,,,””আশ্বিন।। আমার এসব ভালো লাগছে না।। আমি একা থাকতে চাই।।””

— আশ্বিন একবার দূর থেকে অধরার দিকে তাকিয়ে আবার মারিয়ার দিকে ফিরে বললো,,,””দেখো মারিয়া।। তুমি আমার বোন,,,আমার একমাত্র মামাতো বোন। আমি কখনোই চাই না তুমি এভাবে ডিপ্রেশনে পরে নিজের জীবনটা নষ্ট করে দাও। তোমাকে কেনো আমার ভার্সিটিতে ভর্তি করেছি জানো?? যেন আমার সব ফ্রেন্ডদের সাথে মিশে তুমি আবার নরমাল লাইফে ফিরে আসো।। কারো জন্য তো কারো জীবন থেমে থাকে না।। আবার নতুন করে সব শুরু করো।। একটা উপদেশ দেই…অধরার সাথে বন্ধুত্ব করো…দেখবে জীবনে আর কখনো বিনোদনের অভাব পড়বে না।। হিহিহি।।
যাই হোক,,,এখন চলো পার্টি ইনজয় করি।””

— মারিয়া মুচকি হেসে,,,””তুমি যাও। আমি আসছি।।””

আশ্বিন চলে যেতেই মারিয়া রাগী লুকে তাকিয়ে মনে মনে,,,,,””অধরা অধরা অধরা।। আমার আর সহ্য হয়না ওই মেয়েকে।। ছোট থেকেই ওই মেয়ের জন্য তুমি আমাকে ইগনোর করছো আশ্বিন।। কি আছে ওই মেয়ের মাঝে?? না আছে গুণ আর না আছে সৌন্দর্য,,,তাও কেনো পরে আছো তুমি অধরার কাছে??
আমার পেছনে কতো ছেলে ঘুরঘুর করে অথচ আমি তাদের পাত্তাই দেই না,,,আর তুমি কিনা ওই মেয়ের জন্য আমাকে ইগনোর করছো।।
বেশ করেছি কাল তাকে পানিতে ফেলে দিয়ে।। মরে গেলে আরো বেশি খুশি হতাম।।””

মারিয়া কথাগুলো ভেবে নিজেকে সামলে নিয়ে সবার সামনে আসতেই দেখে…সবাই মিলে গ্রুপ ফটো তুলছে।। মারিয়াও গিয়ে তাদের সাথে যোগ দিলো।।

🍁🍁

সবাই গল্পের মধ্যে অনেকটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।। এই সুযোগে আশ্বিন অধরার হাত টেনে আস্তে করে তাকে নিয়ে একটু দূরে খোলা আকাশের নিচে চলে আসে।।

— “”আশ্বিন ভাইয়া!! আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছো??””
আশ্বিন কিছু না বলে একটা ছোট বক্স অধরার দিকে এগিয়ে দিলো।। অধরা বক্সটা হাতে নিয়ে ভালোভাবে খেয়াল করে বললো….

— “”এটা কি?? কি আছে এখানে??””

— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে,,,””খুলে দেখ।””

অধরা বক্স খুলে দেখে অনেক সুন্দর কারুকাজ করা কাঠের এক সেট চুড়ি। অধরা চোখ বড় বড় করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।। আশ্বিন জানে চুড়ি অধরার কতোটা পছন্দের।।

— অধরা অবাক হয়ে বোকার মতো বললো,,,””চুড়ি!!! কার জন্য??””

— অধরার কথা শুনে আশ্বিনের রাগ উঠছে।। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,,,””মারিয়ার জন্য এনেছি। দেখ তো পছন্দ করবে কিনা।।””

— মারিয়ার কথা বলায় অধরার রাগ উঠে যায়। সে আশ্বিনকে একটা ঝাড়ি দিয়ে বললো,,,””মারিয়ার জন্য এনেছো তাহলে আমাকে কেনো দেখাচ্ছো? গিয়ে মারিয়াকে পড়িয়ে দিয়ে তার হাত ধরে বসে থাকো। যতসব।।””

কথাটা বলেই আশ্বিনের হাতে চুড়ির বক্স ধরিয়ে দিয়ে চলে আসতে নিতেই,,,আশ্বিন অধরার হাত ধরে ফেলে।।
আশ্বিন ধীরে ধীরে অধরার কাছে এসে অধরাকে অবাক করে দিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।। আশ্বিনের এমন কান্ডে অধরা স্তব্ধ হয়ে যায়।।
আশ্বিন অধরার কাধের উপর থেকে আলতো করে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কাধের উপর মাথা রেখে কানের কাছে মুখ এনে শীতল কণ্ঠে বললো…

— “”তোর সাহস তো দেখি বেড়ে গিয়েছে।। আমায় ঝাড়ি দিয়ে কথা বলছিস?? আমাকে,,,এই আশ্বিন চৌধুরীকে?? জানিস না আমার উপর কেউ জোর গলায় কথা বললেও আমি তার কি হাল করি??””

আশ্বিনের কথায় কোন রাগের প্রকাশ নেই।।শীতল কণ্ঠে বলা কথাগুলো অধরার বুকে তীরের মতো বিঁধে গেলো।। মুহূর্তেই কেঁপে উঠে অধরা।।

— “”কি হলো?? এখন কথা বলছিস না কেনো? এতক্ষণ তো ঠিকই বকবক করছিলি।।””

অধরা আর কি বলবে সে তো বরফ হয়ে গিয়েছে।। কথায় আছে,,,অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর।। এই মুহূর্তে আশ্বিনের এতো কাছে আসায় অধরা পাথর হয়ে গিয়েছে।।

আশ্বিন অধরার অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে ধীরে ধীরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অধরার হাতে আলতো করে চুড়ি পড়িয়ে দেয়।।

— “”মারিয়াকে এতোটা হিংসা করিস,,,জানতাম না।।””

— “”করবো না কেনো? ওই শাকচুন্নিটা তোমার গলায় ঝুলতে চায়।।””

— অধরার কথায় আশ্বিন হালকা হেসে,,,,””আশ্বিন চৌধুরীকে সব মেয়েরাই চায়।। আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলেদের সবাই নিজের করে পেতে চায়।””

— “”হুহহ!! এতো চাইলেও লাভ নেই।। তুমি শুধু আমার।। কোন শাকচুন্নিকে তোমার আশেপাশেও আসতে দিবো না আমি।””

কথাটা বলেই দৌঁড় দেয় অধরা।। পর মুহূর্তে আবার ফিরে এসে আশ্বিনের শার্টের কলার ধরে টেনে তার মাথাটা নামিয়ে আশ্বিনের গালে একটা চুমু দিয়েই আবার দৌড়ে পালায়। আশ্বিন তো অধরার কাজে পুরো শকড।। কিছুক্ষণ বোকার মতো করে তাকিয়ে থেকে পর মুহূর্তে একটা হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো…

— “”দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছে। একটা টাইট তো দিতেই হবে।।””

মারিয়া এতোক্ষণ দূর থেকে আশ্বিন আর অধরাকে দেখছিলো।। রাগে তার গা জ্বলে যাচ্ছে।। হাত দিয়ে শক্ত করে জামা চেপে ধরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করছে সে।

— “”অধরাকে আমি ছাড়বো না।। আশ্বিন শুধু আমার।। রেডি থেকো অধরা,,,দেখো আমি তোমার কি করি।।”” কথাটা বলেই চলে যায় মারিয়া।।

🍁এদিকে….

আশ্বিন সেখান থেকে চলে আসতে নিতেই তার ফোনে একটা কল আসে। আশ্বিন ফোন রিসিভ করে….

— “”হ্যা মুহিব,,,বলো।।””

— “”স্যার।। এখানে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে গিয়েছে।। শাহিন আর সাহিল মিলে ছোট মণির (অধরা) ডাক্তারকে তুলে নিয়ে সব সত্যি জেনে গিয়েছে।। এমনকি ছোট মনির সব রিপোর্টও এখন তাদের কাছে।।””

— “”হোয়াট???
মুহিব তোমাকে আমি বলেছিলাম শাহিন হাসাদের উপর নজর রাখতে।। তোমাদের অজান্তে কিভাবে তারা ডাক্তারকে কিডন্যাপ করে???”” রেগে চিৎকার করে।।

— “”আমরা বুঝতে পারিনি স্যার।।
পরশু দিন রহমান গ্রুপের সাথে প্রজেক্ট নিয়ে মিটিং ডাকা হয়েছে। বড় স্যারকেও থাকতে হবে।।””

— “”মুহিব যেভাবেই পারো অধরার রিপোর্ট গুলো সরিয়ে ফেলো।। নয়তো অধরার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।। আমরা কালই ফিরে আসছি। শাহিনকে একটা প্রজেক্টের জন্য আমি অধরার জীবন নিয়ে খেলতে দিবো না।।
কালকেই যেন আমি রিপোর্ট গুলো পেয়ে যাই।””

আশ্বিন ফোন রেখে রাগে সামনে থাকা গাছে স্ব জোরে ঘুষি মারে।।

— “”শাহিন হাসাদ!! তোর জন্য যদি আমার অধরার বিন্দু মাত্র ক্ষতি হয়,,,আমি তোকে জানে মেরে ফেলবো।। কথাটা মনে রাখিস।।””

—চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here