ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:০৪,০৫

ভালোবাসি_তাই❤,পর্ব:০৪,০৫
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:০৪

শ্রাবণ আর দাদি মিলে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে।। অধরা তাদের পাশাপাশি বসে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।।
— ছোট মা হল রুমে প্রবেশ করতে করতে,,,,””কি ব্যাপার?? কি নিয়ে এতো হাসি তামাশা ইচ্ছে?? আমিও একটু শুনি।।””

— দাদি হাসতে হাসতে,,,””অধরার ছোটবেলার কিছু ঘটনা বলছিলাম।। আমাদের বোকা রাণীটা ছোটবেলায় যে কতো দুষ্টু ছিলো তা মনে হতেই হাসি পাচ্ছে।।””

— “”একটু দুষ্টু হলেও আমার অধরা কিন্তু একটা লক্ষি মেয়ে।।””
কথাটা শুনে সবাই সামনে তাকিয়ে দেখে আশ্বিনের মা হলরুমে প্রবেশ করতে করতে কথাটা বললো।। আশ্বিনও সাথে এসেছে,,,,অধরার দিকে রাগী চোখ করে তাকিয়ে চুপচাপ সোফায় বসে পড়ে।।

— অধরা আশ্বিনের দিকে একবার তাকিয়ে মনে মনে,,,””এমা।। এই ধলাচিকার আবার কি হলো?? এমন রেগে গিয়ে আমার দিকে ভেড়ার মতো করে তাকিয়ে আছে কেনো?? আমি আবার কি করলাম??””
মনে মনে কথাগুলো ভেবে আশেপাশে খেয়াল করে বুঝতে পারলো।। “”ওহ আচ্ছা।। শ্রাবণ ভাইয়ার হাতে ধরে বসে আছি দেখে রেগে যাচ্ছেন উনি।। হিহি,,,জ্বলুক একটু…তাহলেই প্রকাশ করবে মনের অনুভূতি।। ভালোবাসা কি এতোই সোজা নাকি,,,হুমম??””

কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের বাসায় অধরার দাদা ভাই,,,ছোট আব্বু((চাচা)) আর আকাশ চৌধুরী ((আশ্বিনের বাবা)) প্রবেশ করে।। অর্ণব তাদেরকে এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে এসেছে।।
— অধরা দৌড়ে গিয়ে দাদা ভাইকে জড়িয়ে ধরে,,,””দাদু ভাই!!! চলে এসেছে।। আমার জন্য কি নিয়ে এসেছো??””

— “”আরে আরে আমার পিচ্চি বুড়িটা।। চলো তো গিয়ে দেখি দাদু ভাই অধরার জন্য কি নিয়ে এসেছে।।””,,,,কথাটা বলে সবার সাথে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে।।

ছোট মা সবার জন্য চা কফি নিয়ে আসে।। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে কিছু জানার অপেক্ষায় বসে আছে।।
— দাদু ভাই সবার অধীর আগ্রহ দেখে হাসিমুখে বললো,,,””অবশেষে দীর্ঘ ১৫ বছর পর আবারও আমরা রহমান গ্রুপের প্রোজেক্ট ফিরে পেয়েছি।।””
কথাটা শুনতেই উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।। সবাই যেন এই কথাটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।।

— “”আলহামদুলিল্লাহ।।”” সবাই হাসি মুখে।।

— আশ্বিনের বাবা বললেন,,,””প্রজেক্টটা ফিরে পাওয়া আমাদের জন্য এতোটা সহজ ছিলো না।। ১৫ বছর আগে অমিত ভাইয়ের((অধরার বাবা) এতো কষ্টের প্রোজেক্টটা শাহিন ছিনিয়ে নিয়েছিলো।। অবশেষে আমরা সফল হয়েছি।।””

— আশ্বিন বাবার কথায় বললো,,,””ড্যাড।। আমার ধারণা শাহিন হাসাদ এতো সহজে প্রোজেক্ট হাত ছাড়া করবেন না।। আমি যতদূর বুঝেছি তিনি আর তার ছেলে সাহিল তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সবকিছু করতে পারে।। আমাদেরকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে।। বড় আব্বুর কষ্টের প্রোজেক্ট আর হাত ছাড়া করতে দেওয়া যাবে না।।””

— “”আশ্বিন ঠিক বলেছে।। শাহিনের উপর আমার কোন বিশ্বাস নেই।। আমার ভাইয়ের সাথে যা করেছে তারপর তো তাকে বিশ্বাস করার কোন প্রশ্নই আসে না।।”” শক্ত মুখে কথাটা বললেন ছোট আব্বু।।

— “”আচ্ছা এসব কথা নাহয় পরে হবে।। এতো দূর থেকে এসেছো এখন সবাই ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম করো।। যাও।।”” অধরার দাদি সবার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললো।।

দাদির কথা মতো সবাই উঠে যে যার মতো চলে গেলো।। হল রুমে শুধু অধরা আশ্বিন শ্রাবণ আর অর্ণব বসে আছে।। অধরা এতোক্ষণ চুপচাপ বসে সবার কথা শুনছিলো।। তাদের বলা সব কথা তার মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে।।
— অধরা একটু নড়েচড়ে বসে বললো,,, “”ভাইয়া,,,আমরা তো প্রোজেক্ট ফিরে পেয়েছি।। চলো এই খুশিতে বাহিরে আইসক্রিম খেতে যাই।।””

— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে বললো,,,””তোর মুখে কি খাওয়া ছাড়া আর কোন কথা নেই?? একটু পরে পরেই খাই আর খাই।কোথাও যেতে হবে না।””

অধরার কথাটা শুনে মাথায় রাগ উঠে যায়।। তার খাওয়া নিয়ে এতো অপমান?? একটু তো খেতেই চেয়েছে তাই বলে এতো কথা শুনতে হবে?? অধরা কিছু বলতে নিবে তার আগেই কেউ একজন বললো….
— “”সা..র..প্রা..ই..জ””!!

কথাটা শুনে সবাই তাকিয়ে দেখে হলরুমে মারিয়া প্রবেশ করছে।। মারিয়াকে দেখেই অধরার মুখটা কালো হয়ে গেল।। এই মেয়েকে সে একদম সহ্য করতে পারে না।। মারিয়া হলো আশ্বিনের মামাতো বোন।।
— অধরা মনে মনে,,,”””এইযে চলে এসেছেন শাকচুন্নি।। এখনি আশ্বিন আশ্বিন বলতে বলতে ভাইয়ার গায়ের উপর উঠে যাবে।। এই মেয়ের কেনো এতো গায়ে পড়া স্বভাব?? আর ভাইয়াও তার সাথে হেসে হেসে গল্প করে।। কই আমার সাথে তো কখনো ভালো করে কথা বলে না।।””

— মারিয়া এসে আশ্বিনের পাশে বসে,,,””কি নিয়ে কথা হচ্ছিল??””

— শ্রাবণ একটা হাসি দিয়ে বললো,,,””আরে মারিয়া,,,তুমি!! আমরা ভাবছিলাম বাইরে আইসক্রিম খেতে যাবো।। কিন্তু আশ্বিন রাজি হচ্ছে না।।তুমিই বলো আশ্বিনকে।””

— মারিয়া হাসি হাসি মুখ করে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে,,,””ওয়াও।। আশ্বিন প্লিজ চলো যাই।। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।।””

— আশ্বিন অধরার দিকে একবার তাকিয়ে,,,””আচ্ছা ঠিক আছে চলো।।””
অধরা তো রাগে প্রায় কেঁদে দিবে অবস্থা।।
— “”কতো বড় মীর জাফর!! আমি যখন বললাম তখন যাবে না আর এই শাকচুন্নিটা বলতেই রাজি হয়ে গেলো।।যাবো না আমি””। কথাগুলো ভাবলো অধরা।।
পরে আবার ভাবলো,,,”” না গেলে যদি এই শাকচুন্নিটা আশ্বিন ভাইয়াকে নিয়ে চলে যায়!!””

🍁🍁

সবাই মিলে আইসক্রিম খেতে এসেছে।। রাতের খোলা আকাশের নিচে বসে প্রিয় মানুষের সাথে গল্প আর আইসক্রিম।। আহ!! কতোই না ভালোলাগার মুহূর্ত অধরার।। কিন্তু এই ভালোলাগা সব নষ্ট করে দিলো মারিয়া নামক এই মানব।। আসার পর থেকেই আশ্বিনের সাথে চিপকে লেগে আছে।। এদিকে অধরা তার আইসক্রিমকে মারিয়া ভেবে খেয়ে ফেলছে আর তাদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।।

— মারিয়া তার আইসক্রিম আশ্বিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে,,,””আশ্বিন এই ফ্লেভারটা খেয়ে দেখো।। আমি জানি তোমার ভালো লাগবে।।””

মারিয়ার কথা শুনে তো অধরা মনে মনে…না না করছে।। আশ্বিন যেন ভুল করেও এই আইসক্রিম না খায়।। কিন্তু আশ্বিন অধরার এতো আশায় পানি ঢেলে দিয়ে মারিয়ার আইসক্রিম খেয়ে ফেললো।। এই দৃশ্য দেখে অধরা আর স্থির থাকতে পারলো না।। অর্ণবকে টানতে টানতে নিয়ে বাসায় চলে আসে।।

— “”কি হলো তোর? এভাবে চলে আসলি কেনো?? কোনো সমস্যা??””

— “”চলে আসবো না তো কি করবো?? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের প্রেম করতে দেখবো??”” কথাটা বলেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে!!!
“”আমার সামনেই ভাইয়া ওই শাকচুন্নিকে কিস করলো।।।””

— অর্ণব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে,,,””কিহহ?? কোথায় কিস করলো?? পাগল হয়ে গিয়েছিস?? কি সব বলিস তুই??””

— “”কেনো তুমি দেখো নি?? ওই শাকচুন্নিটার খাওয়া আইসক্রিম খেয়েছে ভাইয়া।। এটাই তো কিস।। মানে আরকি ইন ডাইরেক্ট কিস।। একই তো কথা।।””
অধরার কথা শুনে অর্ণব হা করে বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।।

— “”আচ্ছা বোন এতো চিন্তা করিস না।। যাই হয়ে যাক,,,আমি ওই মারিয়াকে কিছুতেই আশ্বিনের হতে দিবো না।। তোর আশ্বিন শুধু তোরই থাকবে।।হুম””।।
ভাইয়ার কথায় একটু ভরসা পেয়ে কান্না বন্ধ করলো অধরা।।

🍁পরদিন….

অধরা কলেজে এসেই তার বান্ধবীদের খুঁজতে শুরু করলো।। তিশা ক্লাস রুমেই বসে ছিলো অধরা তার পাশে বসে….
— কি রে তিশা।। একা বসে আছিস কেনো? নিধি কোথায়??

— তুই হয়তো ভুলে গিয়েছিস নিধি এখন আর আমাদের মত সিঙ্গেল না।। সে মিরাজ ভাইকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে।।

— দূর।। আজকেই যেতে হলো।। আচ্ছা তুই তো আছিস।। তোকে দিয়েই হবে।।
শোন একটা কাজ আছে আমাদের।। শাকচুন্নি মারিয়া এসেছে আশ্বিন ভাইয়ার সাথে।।

— মারিয়া এসেছে তো আমাদের কি?? আমরা কি করবো??

— “”আমাদের কি মানে?? ওই শাকচুন্নিকে চোখে চোখে রাখতে হবে না?? কোন বিশ্বাস নেই তার উপর আমার।। চল আমার সাথে।।””
তিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই টেনে নিয়ে গেলো।।

ক্যান্টিনে আশ্বিন অর্ণব মারিয়া সাথে তাদের আরো কিছু ফ্রেন্ড বসে গল্প করছে।। আশেপাশের মেয়েরা সবাই আশ্বিন আর অর্ণবের দিকেই তাকিয়ে আছে।। কেউ কেউ তো চুল ঠিক করতে করতে তাদের আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে।। অধরা আর তিশা দূরে লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করছে।।

— “”এতো এতো সুন্দরী মেয়েকেই যেখানে আশ্বিন ভাইয়া পাত্তা দিচ্ছে না সেখানে তোর মতো আটার বস্তাকে কি করে পাত্তা দিবে??””

— “”চুপ কর।। বেশি কথা বললে তোকে মেরে গুম করে দিবো।।””

— “”না প্লিজ,,,গুম করিস না।। লাশটা নাহয় বাসার সামনে ফেলে রেখে আসিস।। নাহয় আম্মু ভাববে আমি প্রেম করে পালিয়ে গিয়েছি।।””
তিশার কথা শুনে অধরা রাগী ভাবে তার দিকে তাকায়।। তা দেখে তিশাও চুপ হয়ে যায়।।

— মারিয়ার দিকে তাকিয়ে,,,,””দেখ দেখ কিভাবে হেসে হেসে কথা বলছে।। কেনো রে কেনো?? কোলেই উঠে পড় না।। এতো দূরে বসে থেকে কি হবে??””

— তিশা অধরাকে রাগাতে বললো,,,””দেখ কিভাবে এক হাত দিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।।””
কথাটা শুনে অধরার রাগ চরমভাবে উঠে যায়।। সে কোন কিছু না ভেবেই বললো,,,,”””মারিয়া!! শেষ।। আজকে তুই শেষ।। এতো বড় সাহস?? এখন দেখবে এই অধরা কি জিনিস””

কথাটা বলেই অধরা জামার হাতা ফোল্ড করতে করতে তাদের সামনে গিয়ে জোরে চিৎকার করে বললো…
“””” এই মারিয়াআআআআ….!!!! “”””
এমন চিৎকার শুনে আশেপাশের সবাই অধরার দিকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকায়।। সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে অধরা একটু ঘাবড়ে যায়….
— “”…আপু।। মারিয়া আপু….কি করছো তুমি?? চলো না,,,আমার ফ্রেন্ডদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।।””

— “””উফফ ওহি।। এই কথা বলতে এতো জোরে চিৎকার করার কি আছে?? আর সরি। তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে আজকে মিট করতে পারবো না।। কারন এখন আমি আর আশ্বিন এক জায়গায় ঘুরতে যাবো।। সো বাইই।।””

কথাটা বলেই মারিয়া আশ্বিনের হাত ধরে অধরার সামনে দিয়েই চলে গেলো।। যাওয়ার আগে আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে গেলো।। অধরার তো ইচ্ছে করছে একটা লাফ দিয়ে মারিয়ার কাধে ওঠে তার সব চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে।।

— মারিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে,,,,
“”এহহহহহ ভাব’স।। ভাব দেখলে আর বাঁচি নাহহ।। যা যা যেখানে খুশি যা।। আমার কি?? আমিও একদিন তোকে দেখে নিবো হুহহ।।””

— তিশা অধরার কাছে এসে তাকে আরও বেশি রাগানোর জন্য বললো,,,
🎶🎶 ও ও ও মারিয়া।
ভাইয়া কো চুরা লিয়া।
এ তুনে কেয়া কিয়া।
আব অধরার কি হবে??
মারিয়া আ আ…মারিয়া!! 🎶🎶

অধরা তিশার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই তিশা চুপ হয়ে যায়।। অধরাও আর কথা না বাড়িয়ে ক্লাসে চলে আসে।

—চলবে❤

#ভালোবাসি_তাই❤
#মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:::০৫

আজ শুক্রবার…তাই একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠলো অধরা।। তারপর ফ্রেশ হয়ে খেতে এসে জানতে পারলো ওই শাকচুন্নি মারিয়া সকালেই তাদের বাসায় চলে গিয়েছে।। খবরটা শুনে অধরা সবার সামনে একটু দুঃখ প্রকাশ করলেও রুমে এসেই কিছুক্ষণ উড়া ধুরা ডান্স দেয়।।

— “”অবশেষে আপদ বিদায় হলো।। আহ!! কথাটা শুনেই,,,কলিজাটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।। দুইদিন কি পরিমান জ্বালিয়েছে আমাকে।। হুহহহ!! একদম চব্বিশ ঘন্টাই আশ্বিন ভাইয়ার সাথে চিপকে লেগে ছিলো।। ভাইয়ারও যেন মারিয়া ছাড়া কোন কথাই নেই।। এখন কি,,,মারিয়া তো তোকে রেখেই চলে গেলো।। খুব ভালো হয়েছে,,,এখন থাক তুই একা একা।।””

সকাল থেকেই মনটা একটু খুশি খুশি লাগছে।। অর্ণব অধরাকে দেখে বললো…
— “”বোন,,,কি ব্যাপার?? তোকে হঠাত এমন খুশি খুশি লাগছে কেনো??””

— “”ভাইয়া,,,খুশি হবো না?? ওই পথের কাঁটা দূর হয়েছে।। তুমি দেখোনি?? শাকচুন্নি মারিয়া এসে দুদিনেই কিভাবে ভাইয়ার গলায় ঝুলে যাচ্ছিলো,,,হুহহহ শখ কতো!! পুরান পাগলই ভাত পায় না আবার নতুন পাগলের আমদানি।। ভালো হয়েছে সে বিদায় হয়েছে।।””

— অধরার কথা শুনে অর্ণব হালকা হেসে অধরার গাল টেনে ধরে,,,””এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।। তুই হয়তো জানিস না।। মারিয়া আমাদের ভার্সিটিতেই এসে ভর্তি হয়েছে।। আর জানিস?? শুধু মাত্র আশ্বিন সুপারিশ করেছে বলেই প্রিন্সিপাল স্যার মারিয়াকে ভার্সিটিতে ভর্তি করেছে।।””

— অর্ণবের কথা শুনে অধরা যেন আকাশ থেকে পড়লো।। সে ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষণ অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো,,,””হোয়াট?? মানে এখন থেকে ওই শাকচুন্নির সাথে ভাইয়ার প্রতিদিন দেখা হবে!! না না না,,,এ হতে দেওয়া যাবে না।।
ভাইয়া তুমি কিছু করলে না কেনো?? চোখের সামনে তোমার বোনের হবু সংসারে আগুন লেগে যাচ্ছে।। এক নাগিনী উড়ে এসে আশ্বিন ভাইয়ার গলায় ঝুলে যাচ্ছে,,,,আর তুমি চেয়ে চেয়ে সব দেখছো??”””

— অর্ণব অধরাকে টেনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে তার সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো,,,””অধরা শোন।। একটা কথা মনে রাখবি,,,আশ্বিন যদি সত্যিই তোকে ভালোবেসে থাকে…তাহলে তার সামনে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দরী কেউ আসুক না কেন আশ্বিন শুধু তোকেই বেছে নিবে।। তাই বলছি,,,তুই মারিয়াকে নিয়ে এতো না ভেবে আশ্বিনকে নিয়ে ভাব।। এতেই তোর জন্য ভালো।।
যাই হোক,,,আশ্বিন তোকে বলেছে বিকালে ঠিক সময়ে যেন তার কাছে পড়তে যাস।।””

অধরা আর কিছু না বলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।। তারপর নিজের রুমে এসে ভাইয়ার বলা কথাগুলো একমনে ভেবে যাচ্ছে।। ভাইয়া তো ঠিকই বলেছে।। কিন্তু আশ্বিন ভাইয়া তো তাকে একদমই পছন্দই করে না।। তাও একবার চেষ্টা করে দেখলে কেমন হয়?? কথাটা ভেবে একটা মুচকি হাসি দেয় অধরা।।

🍁🍁

বিকেলে আসার কথা হলেও অধরা সময়ের একটু আগে আগেই পড়তে চলে আসে আশ্বিনের কাছে।। কিছুক্ষণ মামুনির সাথে গল্প করে আশ্বিনের রুমে চলে আসে।। কিন্তু কয়েকবার দরজা নক করার পরও ওপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই।

অধরা কিছু না ভেবেই রুমের দরজা খুলে ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করে দেখে আশ্বিন খাটের উপর গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।। আশ্বিনকে এভাবে দেখে অধরা ধীর পায়ে আশ্বিনের কাছে এসে আশ্বিনের দিকে এক পলক তাকিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে…খাটের উপর দুই হাত ভর দিয়ে মিষ্টি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।। ঘুমন্ত অবস্থায় কতটা নিষ্পাপ লাগছে তাকে,,,,এভাবে দেখে তো বোঝাই যাচ্ছে না বাস্তবে আশ্বিন কতটা রাগী।।

— “কতো কিউট দেখতে!! অথচ সবসময় একটা রাগী রাগী লুক নিয়ে থাকবে।। আর আমার সাথে তো ভালোভাবে কথাই বলতে চায় না।। কি হয় একটু সুন্দর করে কথা বললে?? এতো ইগো কেনো তোমার?? হুহহ!! তুমি একটা পচা…পচা ডিম… ধলাচিকা।। কিন্তু যাই হও না কেনো…তুমি শুধু আমার আশ্বিন ভাইয়া।।””
আশ্বিনের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই কথাগুলো বলছিলো অধরা।। তারপর খুব সাবধানে আশ্বিন কাছে এসে তার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে উঠে আসে।।

— নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো,,, “”আশ্বিন ভাইয়া উঠে পড়ো। আর কত ঘুমাবে?? তুমি পড়াবেনা আগে বললেই তো পাড়তে।। আমি এতো কষ্ট করে আসতাম না।।””

— অধরার ডাক শুনে আশ্বিন ঘুম ভেঙে যায়। সে শোয়া থেকে উঠে বসে অধরাকে বললো,,,””এতো বকবক করিস কেনো?? চুপচাপ গিয়ে পড়তে বসো।। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।।””
কথাটা বলেই আশ্বিন ওয়াশরুমে চলে যায়।। এদিকে অধরা আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে,,,””সারাদিন শুধু বকা আর বকা।। নিজে দোষ করলেও আমাকে বকবে।। অসভ্য একটা।।””

অধরা চুপচাপ পড়ার টেবিলে বসে বই খাতা খুলে সামনে নিয়ে বসে আছে।। আশ্বিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে টাওয়ালে মুখ মুছতে মুছতে এসে অধরার পাশে বসে পড়ে।।
— “”দুইদিন ব্যাস্ততার জন্য তোকে পড়াতে পারিনি।। আমি জানি তুই নিজে থেকেও বাসায় বই নিয়ে পড়িসনি।। তাই আজকে তোর ডাবল পড়া।।””

অধরা কথাগুলো শুনে একটা ভেংচি কেঁটে পড়া শুরু করলো।। মনে মনে,,,””এহহ!! ব্যাস্ততার জন্য পড়াতে পারিনি।। জানি তো আমি,,,মারিয়া আপু সাথে থাকলে পৃথিবীর কোন খবরই তোমার থাকে না।।””

বেশ কিছুক্ষণ পড়ার পর অধরা একটু নড়েচড়ে বসে মনে একরাশ সাহস জোগাড় করে বইটা বন্ধ করে বললো…
— “”বলছিলাম কি ভাইয়া,,,,মানে আরকি।। প্রতিদিনই তো পড়ি,,,চলো আজকে নাহয় গল্প করি।।””

— আশ্বিন অধরার খাতা চেক করতে করতে বললো,,,””কি গল্প??””

— আশ্বিনের উত্তর শুনে অধরা যেন মনে একটু সাহস পেলো।। সে ধীরে ধীরে বসে থাকা চেয়ারটা টেনে আশ্বিনের কাছে এসে বললো,,,””রোমান্টিক গল্প।।””

অধরার কথা শুনে আশ্বিন খাতার ভেতর থেকেই আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখে আধরা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে।। আশ্বিন ঘোর লাগা চোখে অধরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো…
— “”রোমান্টিক গল্প না করে চল আমরা রোম্যান্স করি।।””

— অধরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,,,””এহহ!!!””

— “”এহহ না হ্যাঁ।।”” বলেই অধরার কোমরে ধরে একটানে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে আশ্বিন।।
হঠাত টান দেওয়ায় অধরা টাল সামলাতে না পেরে আশ্বিনের বুকের উপর গিয়ে পড়ে।। আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘোর লাগা চোখে অধরার দিকেই তাকিয়ে আছে।। অধরাও কিছুক্ষণ অবাক চোখে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাত কেউ একজন দরজায় নক করায় অধরা সেখান থেকে সরে আসে।।

— আশ্বিনের মা রুমে প্রবেশ করে,,,””আশ্বিন এইনে তোর কফি। আর আমার মামুনির জন্য হরলিক্স।। তাড়াতাড়ি খেয়েনে তাহলে পড়ায় বেশি মন বসবে।””
কথাগুলো বলেই আশ্বিনের মা চলে যায়।।

আশ্বিন কোন কথা না বলে চুপচাপ একটা বই নিয়ে উল্টাতে শুরু করে। অধরাও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,,,
— “”ভাইয়া তুমি কি জানো?? মানুষের হার্টের মূল্য মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।।

— আশ্বিন কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বললো,,””হুম। তো কি হয়েছে?””

— “”না মানে…একটু ভেবে দেখো।। শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবাসি_তাই❤ আমার এতো মূল্যবান হার্ট তোমাকে বিনামূল্যে দিতে চাইলাম,,আমার হৃদয়ে লিখলাম তোমারই নাম।। আর তুমি কিনা আমাকে পাত্তাই দিচ্ছো না।।””

আশ্বিন কফি খাচ্ছিলো অধরার কথাটা শুনেই সে বিষম খেলো। মুখ থেকে কফি বেরিয়ে গিয়ে কাশতে শুরু করে।। অধরা দৌড়ে এসে আশ্বিনের পিঠে আলতো করে চাপড় দিতে দিতে,,,
— “”হায় হায়!! ষাট…সত্তর…আশি…নব্বই…একশো..।।””

— আশ্বিন একটু স্বাভাবিক হয়ে বললো,,,””এসব কি বলিস তুই?? আর…এই পিচ্চি,,,এখনো কিনা হরলিক্স খায় আবার আসছে প্রেম ভালবাসা বুঝাতে।। চুপচাপ পড়তে থাক।।””

— “”ভাইয়া!! হরলিক্স খাই তো কি হয়েছে? হুহহ…তুমি কি জানবে হরলিক্স খাওয়ার গুরুত্ব।। আর হরলিক্স খাই বলে কি আমি ভালোবাসার কথা বলতে পারবো না?? আজব তো!!””

— “”অধরা!! তোর মুখ বন্ধ না করলে এখন হরলিক্সের সাথে সাথে আমার মাইরও খাবি।। চুপচাপ পড়তে থাক।।””

অধরা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আশ্বিনকে একটা ভেংচি কেটে পড়তে শুরু করে।। আশ্বিন আঁড়চোখে একবার অধরার দিকে তাকিয়ে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে যেন সে হাফ ছেড়ে বাঁচলো।।

এদিকে……

শাহিন হাসাদ রাগী রাগী ভাবে তার বাসায় প্রবেশ করলো।। সাহিল সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে বললো…
— “”ওয়েলকাম ব্যাক ড্যাড।।”” শাহিনকে রাগী মুডে দেখে,,””কি হয়েছে??””

— শাহিন সোফায় বসতে বসতে,,,””আমার এতো দিনের কষ্টের প্রোজেক্ট…আমার ড্রিম হাত ছাড়া হয়ে গেলো।। এতোগুলো বছর যেই প্রোজেক্ট নিয়ে আমি গর্ব করতাম আজ আকাশ চৌধুরী আর শাহেদ রহমান মিলে তা ছিনিয়ে নিলো ঠিক ১৫ বছর আগে যেভাবে আমি অমিতের কাছ থেকে নিয়েছিলাম।। তারা হয়তো জানে না এই শাহিন কাউকে তার সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেয় না।। এর মূল্য তারা পাবে।।””

— “”ডোন্ট ওয়ারি ড্যাড। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম এমন কিছু হওয়ার।। তাই আগে থেকে আমার লোকদের লাগিয়ে রেখেছি।। ওই চৌধুরী আর রহমান ফ্যামিলির সব সিক্রেট এন্ড উইকনেস খুব শীঘ্রই আমরা জেনে যাবো।। আর তারপর…..।।”” একটা বাঁকা হাসি দিয়ে।।

— শাহিনও একটা বাঁকা হাসি দিয়ে,,,””দ্যাট’স লাইক মাই বয়।। এখন বুঝবে তারা এই শাহিন কি জিনিস।।””

🍁পরদিন….

অধরা কলেজে গিয়ে দেখে তার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী দুজনের কেউই আজকে আসেনি।। মনটা খারাপ হয়ে যায় তার।। তাই ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে মাঠের দিকে আসতেই দেখে মারিয়া টাইট ফিট ড্রেস পরে স্টাইল করে গেইট দিয়ে প্রবেশ করছে।। এদিকে মারিয়ার পাশে আশ্বিনকে দেখে অধরার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।।

— এহহহ ঢং!! কি ঢং করে দুজন হাত ধরে আসছে।। কেনো রে?? মারিয়া কি ছোট বাচ্চা?? যে হাত ধরে না রাখলে হারিয়ে যাবে।।
ইচ্ছে তো করছে দুটোকে ধরে নিয়ে ধাক্কা মেরে সাগরে ফেলে দেই।।

কথাগুলো বলে অধরা একটু দূরে গিয়ে একটা গাছের নিচে একা একা বসে পড়ে।। মুখ গোমড়া করে দূর থেকে মারিয়া আর আশ্বিনকে পর্যবেক্ষণ করছে সে।। হঠাত কেউ একজন বলে ওঠলো….

— “”দুষ্টু পরী একা একা বসে আছে কেনো??””

— অধরা কণ্ঠটা শুনে পাশ ফিরে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে,,,,””ধ্রুব ভাইয়া!! কেমন আছো?? কবে ফিরে এসেছো??””

— অধরার পাশে বসতে বসতে,,,””আরে আরে আস্তে।। হুম ভালো আছি।। কাল রাতেই ফিরে এসেছি।। আর ভার্সিটিতে এসেই এই দুষ্টু পরীর বাঘিনী রূপের প্রশংসা শুনলাম।। রকিকেও দেখে আসলাম।। হিহিহি মেরে একদম ফাটিয়ে দিয়েছো।। এই না হলে আমার দুষ্টু পরী।।””

— “”হিহিহি। ভাইয়াকে মেরেছিলো তাই মেরেছি ওই ছিঁলা মুরগীকে।। কার ভাইকে মেরেছে একটু বুঝুক।।””
কথাটা বলেই অধরা আর ধ্রুব একসাথে হেসে ওঠে।।

এদিকে….

আশ্বিন দূর থেকে লক্ষ করছে অধরা একটা ছেলের সাথে বসে হেসে হেসে গল্প করছে।। বিষয়টা একদম সহ্য হচ্ছে না তার।। ছেলেদের সাথে অধরার এতো কিসের কথা?? এক ধ্যানে অধরার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশ্বিন।। মুহূর্তেই চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গিয়েছে তার।। পাশে যে মারিয়া তার হাত ধরে বসে তাকে এটা সেটা বলে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই তার।। আশ্বিন রাগের বশে অজান্তেই মারিয়ার ধরে রাখা হাত শক্ত করে চেপে ধরে।।

— মারিয়া হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে,,, “”আহ!! আশ্বিন হাত ছাড়ো,,,ব্যাথা পাচ্ছি।।””

মারিয়ার কথায় হুশ ফিরতেই আশ্বিন তার হাত ছেঁড়ে দেয়।। তারপর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে দেখে সে আপনমনে বই পড়ছে।। আশ্বিন রেগে তার হাত থেকে বই কেড়ে নিয়ে…

— “”কেমন ভাই তুই?? বোনের খোঁজ রাখতে পারিস না?? তোর বোন যে চেনা নেই জানা নেই একটা ছেলের সাথে বসে হেসে হেসে গল্প করছে
সেদিকে কোন খেয়াল আছে তোর?? গিয়ে কিছু বলতে পারিস নাহহ??””

— অর্ণব দূরে বসে থাকা অধরার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,,,””এটা তো ধ্রুব।। অধরার অনেক ভালো ফ্রেন্ড।। অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে,,খুব ভালো ছেলে। কলেজের প্রথম দিন থেকেই তো তাদের বন্ধুত্ব।। আমি নিজে ধ্রুবর সব খোঁজ খবর নিয়ে ভালো বুঝে অধরার সাথে বন্ধুত্বের অনুমতি দিয়েছি।””

অর্ণবের কথাগুলো শুনে আশ্বিন অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আবার রাগী চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে বললো…
— “””এতই যখন ভালো ছেলে তাহলে তোর বোনের সাথে বিয়ে দিয়ে ফেলো।। যতসব!!””

কথাগুলো বলেই আশ্বিন রাগে সেখান থেকে চলে যায়।। অর্ণব আশ্বিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে আবার বই পড়ায় মনোযোগ দেয়।।

—চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here