গল্প – পলাশ_ফুলের_বসন্ত,পর্ব-২,৩,
কলমে – দেবিকা_সাহা
দ্বিতীয় পর্ব
— নিন আগে জলটা খেয়ে নিন।এতোগুলো কথা বলে হাঁফিয়ে গেছেন নিশ্চই। জলটা খেয়ে নিয়ে নাহয় আমাকে দেখবেন।
— কিহ্??
আকাশের কথাটা শুনে একটু ইতস্তত হয়েই ওর দিক থেকে চোখটা সরিয়ে নিলো পৌষালি।।
— আপনি তাড়াতাড়ি জলটা খেয়ে নিন।তারপর আমরা কথা বলি?
– কথা? আর কি কথা? আর তো কোনো কথা নেই।আমার তো যা বলার বলা হয়ে গেছে।
হ্যাঁ সবটাই তো বলেছি যা যা ভেবে এসছিলাম।কিছুই তো বাদ দিইনি।
শেষের কথাদুটো একটু আস্তে আস্তেই নিজের মনে মনে আওড়াচ্ছিলো পৌষালি।
— হ্যাঁ। সে আপনি হয়তো সবই বলে দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্নপত্রের উত্তরগুলো শুনবেন না?
— কিসের প্রশ্নপত্র? এটা কি এক্সাম হচ্ছে নাকি যে এখানে প্রশ্নপত্র আসবে?
— পরীক্ষা নয় বলছেন?©দেবিকা..
— অদ্ভুত তো।কিসের পরীক্ষা আবার?
— এই যে আপনি আমার সামনে এতো সুন্দর সুন্দর প্রশ্ন হাজির করলেন,, তা সেগুলোর উত্তর না শুনেই চলে যাবেন? এটা তো ঠিক নয় না??
যাক বাবা উনি আবার উত্তর দিতে চাচ্ছেন নাকি আমার প্রশ্নগুলোর? আমি তো ভেবেছিলাম প্রশ্নগুলো শুনেই বিয়েটা ক্যানসেল করে দেবে। কিন্তু সেটা তো করছে না।উলটে যেচে পড়ে উত্তর দিতে চাইছেন।যাক,,তা ভালো একদিকে। সবদিকে ক্লিয়ার হয়ে নেওয়া যাবে।
আপনি আবার কি ভাবছেন? আমার উত্তরগুলো শুনবেন না নাকি? আমি কিন্তু একেবারে উত্তরপত্র রেডি করে বসে আছি।শুধু সাবমিট করার অপেক্ষা। আমি আবার একটু ট্যালেন্ডেড স্টুডেন্ট কি না!! উত্তরপত্র একটু তাড়াতাড়িই রেডি হয়ে যায় সেই সুবাদে।
আকাশের মুখে এমন কথা শুনে পৌষালি একবার আড়চোখে তাকালো ওর দিকে।
— আরে ওভাবে তাকানোর কিছু নেই।আমি ভুল কিছু বলিনি তো।ইনফ্যাক্ট আপনিই তো কিছুক্ষন আগে বললেন যে আমি নাকি ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট। সেই কনফিডেন্স থেকেই তো আমি নিজের সম্পর্কে এমন মন্তব্যটা করছি।
ভারী অদ্ভুত লোক তো।তখন থেকে বকেই যাচ্ছে।আমি একটু চুপচাপ আছি বলে তার মুখে একেবারে কথার ফুলঝুরি ফুটছে।
— বলুন আপনার উত্তর। আমিও শুনি একটু। অবশ্য যখন দেখা করতে এসেইছি তখন উত্তরটা শুনে যাওয়াটাই বেটার।
— হ্যাঁ আমিও তো সেটাই বলছি।
বলছি যে কফি খাবেন? না মানে এভাবে কফিশপে এসে জল খেয়ে কাটানোটা ঠিক নয় বুঝলেন।
— নাহ্,,আমি কিছু খাবো না।আপনি খেলে নিজের জন্য অর্ডার করুন।আমি ঠিক এখন কফিটা প্রেফার করছি না। আসলে বাড়িতে অনেক কাজ আছে বুঝলেন তো?আপনার থেকে উত্তরটা শোনার পর আমাকে বাড়ি যেতে হবে।।
বেশ রাগী রাগী গলায় নকল হাসির রেখা মুখে টেনে এনে কথাগুলো বললো পৌষালি।©দেবিকা..
— আরে আপনার প্রশ্নটা তো এম.সি.কিউ টাইপ।তাই উত্তরটা খুব তাড়াতাড়িই রেডি হয়ে গেলো। এই দেখুন না আমার এই মোবাইলটা হচ্ছে আপনার এই এতোগুলো প্রশ্নের একমাত্র উত্তরের ঠিকানা।
— কিহ্??
— আরে বুঝলেন না তো? আমি বুঝিয়ে বলছি। এই দেখুন না ইউটিউব দেখে রান্নাবান্না,ঘর গোছানো সবই দিব্যি শিখে নেওয়া যায়। আর একোর্ডিং টু ইউ আমি খুব ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট। তাই এইগুলো ঠিক শিখে নিতে পারবো। কি বলেন??
মুচকি হাসতে হাসলে পৌষালিকে লক্ষ্য করে কথাগুলো বললো আকাশ।
পৌষালি তো আকাশের মুখ থেকে এসব উত্তর শুনে কেমন গট গট করে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।
তবে একটা মুশকিল আছে।বলছি কি বাচ্চা মানুষ করার ব্যপারটা কি ইউটিউব খুঁজলে পাবো?
পৌষালি এই মুহূর্তে জল খাচ্ছিলো।আকাশের মুখ থেকে এই কথাটা শুনে তার একেবারে বিষম যায় যায় অবস্থা।
— এই এই কি হলো আপনার? জল খেতে গিয়ে এভাবে বিষম খাওয়া মানে কেউ নিশ্চই মনে করছে আপনাকে।
— ঠিক আছে। সব বুঝেছি।সবটা বুঝে গেছি।
— বাহ্,,তাহলে তো আমি ঠিকঠাকই উত্তর দিয়েছি মনে হচ্ছে। কিন্তু ওই যে উত্তরটা ঠিক দিতে পারলাম না,, সেটার কি হবে?
— কিচ্ছু হবে না। অনেক উত্তর শুনে নিয়েছি আমি।এবার আমি উঠি।বাড়ি যেতে হবে।
— এবাবা,,তা কি করে হয়।প্রথম বার নিজের হবু বরের সঙ্গে দেখা করতে এলেন।এভাবে খালি মুখে যেতে দেওয়া যায় নাকি?অন্তত এককাপ কফি তো খেতেই হবে।
পৌষালি আর কি করে।মুখের উপর না-ও তো বলতে পারছে না।তাই অগত্যা কফি খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেই হলো।
কি আশ্চর্য রে বাবা!! কি করতে এসেছিলাম,, আর এসে কি সব শুনছি।এতো কোনো হিসাবই মিলছে না।ইউটিউব থেকে রান্না শিখে নাকি আমাকে বিয়ে করবে। ভাবা যায়??
সেদিনের সকালটা পেড়িয়ে সন্ধ্যেটা খুব তাড়াতাড়িই এসেছিলো শহর কোলকাতায়। পৌষালির জন্য আজকের দিনটা একেবারেই ওর কষে রাখা হিসেব মিলে কাটেনি।বরং অনেকটা অদ্ভুতরকম ভাবেই কেটেছে।©দেবিকা..
সন্ধ্যের দিকটাতে গল্পবইদের সাথেই কাটাতে খুব করে মন চাইছে মেয়েটার।যেমন ভাবা তেমনি কাজ।বুকসেল্ফ হাতড়ে নিজের সবথেকে প্রিয় গল্পবইটা বের করে নিলো পৌষালি। তবে বইয়ের পাতার ভাঁজে একটা চিঠি দেখতে পেয়ে অজান্তেই যেনো মনের কোনে আঁধার নেমে এলো মেয়েটার।
এটাতো সেই চিঠিটা।যেটা অনিন্দ্য খুব যত্ন করে লিখেছিলো ওর জন্য।
আচ্ছা সব তো বেশ ঠিকঠাকই ছিলো।সুন্দর ভাবেই তো কাটছিলো দিনগুলো।তবে এমন কেনো হলো? অনিন্দ্য পৌষালির কাছে এমন কিছু চেয়ে বসলো যেটা দেওয়া পৌষালির সাধ্যের বাইরে।
পৌষালির আজও মনে পড়ে সেই ফিঁকে হয়ে যাওয়া সম্পর্কের পরিসমাপ্তির দিনটা। কেমন করে অচিরেই কথাগুলো বলে দিলো অনিন্দ্য। তার বউ চাকরি করবে,বাইরের জগতের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে,, এটা নাকি ওর পরিবারের লোকেদের একদম পছন্দ নয়।বিশেষ করে ওর মায়ের। আর অনিন্দ্য কোনোদিন মায়ের মুখের উপর কথা বলেনি,, তাই আজও পৌষালির হয়ে ওর মায়ের সাথে তর্ক করতে পারবে না।অবশ্য অনিন্দ্যর তখন এটাও মনে হয়েছিলো যে মেয়েরা ঘর সংসার ছেড়ে চাকরিবাকরি করলে সংসারটা নাকি ভেসে যায়।বিশেষ করে নাকি ওদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মে যারা আসবে তারা নাকি ঠিকঠাক মানুষ হবে না। আর অনিন্দ্য দেখেছে ওর মা এতোদিন সংসার সামলেছেন।এখন যদি ওর বিয়ের পরেও ওর মাকেই সংসার সামলাতে হয়,, তবে বিয়ে করার কি মানে।।
অথচ তিনবছর ধরে প্রেম করার সময় একবারের জন্যও এইসব কথা মনে আসেনি অনিন্দ্যর। ওই যে ওয়ার্কিং লেডি প্রেমিকা হতে পারে কিন্তু বউ নয়।
পৌষালি বরাবরই স্বাধীনচেতা মেয়ে।এভাবে নিজের স্বপ্নগুলোকে ভেসে যেতে দেওয়া ওর পক্ষে সম্ভব নয়।
কিই বা করতাম আমি? তুমি তো কিছু শোনারই চেষ্টা করলে না অনিন্দ্য। আমাকে একটুও বোঝার চেষ্টা করলে না।এই বিষয়টাকে নিয়ে শান্তভাবে আলোচনা করার পক্ষপাতিও ছিলে না তুমি সেদিন। কেমন একটা ইগোস্টিক হয়ে গেলে। তবে আমি যে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না।আমার দূর্ভাগ্য যে তিনবছর পরেও তুমি আমায় বুঝলে না।আমার চাওয়া পাওয়া জানলে না।তবে আমি তো নিজেকে বুঝি।তোমার কথা মেনে কম্প্রোমাইজ করতে হলে নিজের কাছে নিজে হেরে যেতাম।আর সেটা হলে যে আমি বাঁচতাম না অনিন্দ্য। তাই আমাকে যে বেড়িয়ে আসতেই হলো।কিচ্ছু করার ছিলো না।আমাদের ডেস্টিনি হয়তো এতোটুকুই ছিলো।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখের কোনটা অল্প ভিজে উঠলো পৌষালির।হঠাৎ করে ফোনের আওয়াজে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে আসলো মেয়েটা।
— একি? ইনি আবার এখন কেনো ফোন করেছেন??
দেবিকা..
(চলবে)
#গল্প – #পলাশ_ফুলের_বসন্ত ( পর্ব-৩ )
#কলমে – #দেবিকা_সাহা
ফোনটা হাতে নিয়ে ধরবোনা ধরবোনা করেও ফোনটা শেষপর্যন্ত ধরেই নিলো পৌষালি। ওদিকের ব্যক্তিটি তো বেশ রেডি হয়েই ছিলো কথা বলার জন্য।
— আপনি এখন? আপনার যা বলার সেটা যদি আমার বাড়িতেই জানিয়ে দেন তবে খুব ভালো হয়।আসলে আপনি যে বিয়েটা করতে চান না সেটা আমি বাবা মাকে বলার থেকে আপনার বাড়ির লোক যদি ফোন করে জানিয়ে দেয় তবে সেটা বেশি ভালো।
— আমি কিন্তু সেটা…..
— আমি বুঝতে পারছি যে আপনি সেভাবে বলতে চাননি,আসলে আপনারও তো দোষ না।আপনি তো আর আমার প্রিন্সিপাল গুলো জানতেন না।তাই আপনি বিয়েটাতে রাজি হয়েছিলেন।কিন্তু এখন সবটা জানার পর আপনি যে বিয়েটা ভেঙে দিতে চাইবেন,, এটাই তো স্বাভাবিক। এই ব্যপারে কোনো সরি বলতে হবে না। শুধু যদি ডিরেক্টলি বাড়িতে ফোন করে বলে দিতেন তাহলে একটু ভালো হতো।
আচ্ছা ঠিকাছে আমিই নাহয় বলে দেবো।©দেবিকা..
— নাহ্ থাক।আপনাকে কিছু করতে হবে না।যা করার আমিই করবো।
— আচ্ছা বেশ।বাঁচালেন আপনি আমাকে। ঠিকাছে এখন ফোনটা রাখছি কেমন?? ঘুমিয়ে পড়ুন।গুড নাইট।
কথাটা বলে উল্টোদিকের ব্যক্তিটির থেকে কোনো উত্তরের প্রতীক্ষা না করেই ফোনটা রেখে দিলো পৌষালি।
এটা কি হলো? কি জন্য ফোনটা করেছিলাম আর কি শুনতে হলো। এতো ভারি অদ্ভুত মেয়ে।নিজের মনের কথাগুলো আমার মুখে বসিয়ে নিলো।
ঠিক আছে,, আমিও দেখছি কি করা যায়। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মিস পৌষালি।
এক কাপ চা আর তার সাথে হারিয়ে যাওয়া কিছু গল্প। ব্যস্ত জনজীবনে এটুকু যেনো একটা শান্তির রেশ খেলে দিয়ে যায়। আজ সকালের ইন্টারভিউটা খুব ভালো করে দিতে হবে। যতোই হোক,,জীবন হয়তো সুযোগ বারবার দেয়না। যে সুযোগটা হাতে আছে সেটাকে হাতছাড়া করা একেবারেই উঁচিত হবে না। ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে এসবই ভাবছিলো পৌষালি।
জীবনে না পাওয়া আর ঠকে যাওয়ার ভিড়ে পাওয়ার হিসেবগুলো হয়তো খুবই কম।তবে যেটুকু পাওয়া আছে জীবন ঘিরে ওগুলোকেই মনের মাঝে সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসে পৌষালি নিজের মতোন করে।
এবাবা কতোটা দেরি হয়ে গেলো। আমার তো আজ একটু তাড়াতাড়িই বেড়োনোর কথা ছিলো। আমি আবার কিসব ভাবতে গিয়ে দেরি করে দিলাম।
চটপট রেডি হয়ে তাড়াহুড়োতেই ঘর থেকে বেড়োচ্ছিলো পৌষালি। কিন্তু সেই মুহূর্তে ড্রয়িংরুমের সোফাটাতে দুজন ব্যক্তিকে দেখে বেশ খানিকটা অবাকই হলো মেয়েটা। আকাশ আর ওর মা দুজন বসে পেষালির বাড়ির ড্রয়িংরুমের সোফাটায়। অন্যদিকে পৌষালির মা বেশ হেসে হেসেই ওনাদের সাথে গল্পে মেতেছেন।©দেবিকা..
একি এনারা এখানে? বিয়ে ক্যানসেলের কথা বলতে ডিরেক্ট বাড়ি চলে এলো? তার উপর বিয়ে ক্যানসেল শুনেও মা এভাবে হেসে হেসে কথা বলছে? ভাবা যায়!!
এইতো পৌষালি চলে এসেছে। কিরে তোর রেডি হতে এতোক্ষন লাগে? এনারা কখন এসেছে জানিস? সেই যে চা নিয়ে নিজের ঘরে গেলি,,, তারপর থেকে আর তো পাত্তাই নেই তোর। আমি এক্ষুনিই যেতাম তোকে ডাকতে।
নিজের মায়ের কথা শুনে পৌষালি একটু ঘাবড়েই গেলো। কি হলো ব্যাপারটা? বিয়ে ক্যানসেল শুনেও মা এরকম স্বাভাবিক ব্যবহার করছে কিভাবে? আর এনারাও বা এখানে বসে কি করছেন এতোক্ষন ধরে?
— তোমাকে বেশিক্ষন আটকাবো না মা।তোমার মায়ের মুখে শুনলাম আজ নাকি তোমার চাকরির ইন্টারভিউ আছে। শুভ কাজে যাওয়ার আগে দেরি না করানোই ভালো।খুব সাবধানে যেও কেমন। আর মন দিয়ে ইন্টারভিউটা দিও।আমি কিন্তু পসিটিভ রেজাল্ট শোনার আশাতেই রইলাম।আর শোনো বেশি টেনশন কিন্তু একদম করবে না। আমার আকাশ তো সেই ছোটবেলা থেকেই যেকোন পরীক্ষার নাম শুনলেই ভয়ে আর টেনশনে একধাপ বেশি পিছিয়ে যায়।আর ওর এই টেনশন দেখে আমারই তো কেমন ভয় শুরু হয়ে যায়। আমি জানি তুমি এমনটা করবে না।আকাশের মুখে তোমার সম্পর্কে যেটুকু শুনেছি তাতে এটা বেশ বুঝেছি যে তুমি খুব সাহসী আর স্পষ্ট বক্তা। শোনো মেয়ে আমার এমন বৌমাই পছন্দ।©দেবিকা..
শেষের কথাটার মানেটা পৌষালি ঠিক ওর হিসেবের সাথে রিলেট করতে পারলো না। আসলে ও তো ভেবেছিলো বিয়েটা ক্যানসেল। কিন্তু উনি এমনটা কেনো বললেন? তার মানে কি…
না না এখন আর এসব ভেবে কাজ নেই।আগের কাজটা নিয়ে আগে ভাবতে হবে।তারপর নাহয় এসব নিয়ে ভাববো ক্ষন।
কথাগুলো ভেবেই মুখে একটা হালকা হাসির রেখা টেনে এনে পৌষালি অনিতাদেবী আর ওর মাকে প্রনাম করে ওখান থেকে নিজের গন্তব্যের উদ্দ্যশ্যে বেড়োনোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
এক্সকিউজ মি।আমিও বেড়োবো।একচুয়ালি আমারও কলেজ আছে।চলুন তাহলে একসাথেই যাওয়া যাক।
হ্যাঁ হ্যাঁ তাই ভালো। আকাশ তাহলে তুমিও পৌষালির সঙ্গে বেড়িয়ে পড়ো।আমি আর তোমার মা বরং এখন তাহলে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তাগুলো সেরে নিই।আর একটু গল্পও করি দুই বেয়ান মিলে।
অনিতাদেবীও পৌষালির মায়ের কথায় সমর্থন জানালেন।
এটা কি হলো??
— যাক,, আমাদের যাত্রাপথের তিরিশ মিনিট পর হলেও আপনি যে মুখ খুলেছেন সেটাই অনেক বড়ো কথা। আমি তো ভাবছিলাম আপনি হয়তো এই মৌনব্রত কখনোই ভাঙবেন না।
— আচ্ছা আপনি তো এসেছিলেন আমার বাড়িতে বিয়েটা ক্যান্সেল করবেন বলে।তাহলে কি হলো?
— আমি আপনাকে কখন বলেছি যে বিয়েটা ক্যান্সেল? একবারের জন্যও তো বলিনি। আমি বিয়েটা করছি।©দেবিকা..
— মানে??
— হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন আপনি। আমি বিয়েটা করছি।আর আপনাকেই করছি।আর এটা ফাইনাল।
— কিন্তু….. আমি যে….
— এখন আর প্লিজ কোনো কিন্তুর উত্তর শুনতে চাইবেন না।একটু পরেই আপনার ইন্টারভিউ আছে।আপনি এখন সেদিকটাতেই ফোকাস করুন।বাকি কথা নাহয় পরে হবে।
আর হ্যাঁ আমার কিন্তু আবার ঘরোয়া বউ-এর থেকে স্বাবলম্বী বউ-ই বেশি পছন্দ। ঠিক আপনার মতো।
— কিহ্??
— তা নয়তো কি।
কি করবো বলুন,, আপনাদের মেয়েদের এতো এতো শাড়ি, গয়না, আর মেকাপ কিটস কিনতে হয়,,, যে ঘরোয়া বউ হলে আমি তো পুরো ফতুর হয়ে যাবো।তাইতো অনেক ভেবে দেখলাম,, যে ওয়ার্কিং লেডি-ই ভালো। আপনি বেশ আপনার টাকা দিয়ে নিজের পছন্দের জিনিসগুলো কিনে নেবেন।এই শাড়ি,গয়না এসব।অবশ্য আমি জানি শপিং-এর মধ্যে আমার জিনিসগুলোও কিছুটা ইনক্লুডেড হয়ে যাবে।আমার খরচটাও বেশ বেঁচে যাবে। আহা!! ভাবলেই মনটা ভালো হয়ে যাচ্ছে।
মুচকি হেসে পৌষালিকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাগুলো বললো আকাশ।
পৌষালির তো আকাশের এরূপ মন্তব্য শুনে একেবারে চক্ষু চরকগাছ। আকাশের কথাগুলো শুনে ও একটু চুপচাপই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে।শুধু মুখ থেকে একটা কথাই বেড়োচ্ছে — ” হ্যাঁ,, তা তো বটেই।। ”
প্রথম যাত্রার গন্তব্যটা বেশ ভালোই হলো পৌষালি আর আকাশের জন্য।আর পৌষালির ইন্টারভিউ-টাও ওর মতো করে বেশ ঠিকঠাকই হলো। এই কারনটার জন্য আজ মনটা বেশ ভালোই আছে পৌষালির।
পৌষালির আজ হঠাৎ করেই মনে হলো আকাশকে একটা থ্যাংকস তো জানানো যেতেই পারে।কারন সকালবেলায় ওর ওসব অদ্ভুত কথাগুলো শুনে মনটা একটু হলেও ডাইভার্ট হয়েছিলো।নাহলে আমিও কি কম টেনশন করি নাকি? আর এমনিতেও সকালে তার সাথে তেমন কথা বলা হয়নি।সে এই বিয়েটা নিয়ে কি ভাবছে সেটাও তো জানতে হবে। নাহ্,,একটা ফোন করি তাকে।সবে তো বিকেল।এখন একবার দেখা করা যেতেই পারে।©দেবিকা..
এসব ভেবে নিয়েই পৌষালি আরো একবার আকাশের নাম্বারটা ডায়াল করলো।
তবে সময় হয়তো সবসময় একরকম তালে চলে না।শহরের ভিড়ের ফাঁকে একটা কোনার দিকে পৌষালি দাঁড়িয়েছিলো আকাশের আসার অপেক্ষায়।
হঠাৎ করেই চোখটা আটকে গেলো ভিড়ের মধ্যে একজনকে দেখে।অনিন্দ্য না? এখানে? ছেলেটাকে হঠাৎ করে দেখে বুকটা যেনো কেমন ছ্যাঁত করে উঠলো। ও এখানে কি করছে? আর ওর পাশে ওটা সংযুক্তা না? কিন্তু সংযুক্তা কিভাবে অনিন্দ্যকে চিনতে পারে? সংযুক্তা তো শুধু আমার মুখ থেকে অনিন্দ্যর নামটাই শুনেছে। চিনলো কি করে ওকে? আর ওদের পরস্পরের সাথে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওরা একে অপরকে চেনে।কিন্তু কি করে চিনতে পারে? তবে কি………….
( চলবে )