গল্প -পলাশ_ফুলের_বসন্ত (পর্ব-৪,৫)

গল্প -পলাশ_ফুলের_বসন্ত (পর্ব-৪,৫)
কলমে -দেবিকা_সাহা
পর্ব-৪

আজ কতোগুলো দিন পর অনিন্দ্যকে দেখলাম। আচ্ছা ও নিশ্চই আমাকে ভুলে গেছে।অবশ্য সেটাই তো স্বাভাবিক। আর আমি তো এটাই চেয়েছিলাম যেনো ও আমায় ভুলে যায়।নিজের জীবনে ফের এগোতে পারে। কি করবো ওর খারাপ তো আমি চাইতে পারিনি কখনো।আর পারবোও না।ও আমাকে নাই বুঝতে পারে।আমার চাওয়া পাওয়ার নাই মূল্য দিতে পারে।কিন্তু আমি তো একদিন ওকে ভালোবাসতাম।ওর ক্ষতি তো চাইতে পারিনা।ও ওর মতো নিজের জীবন নিয়ে ভালো থাকুক।

এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই সামনের দিকে অনিন্দ্যকে আর দেখতে পেলো না পৌষালি।হঠাৎ করে ভিড়ের মাঝে ওই কোনার চায়ের দোকানটার দিকে তাকিয়ে পৌষালির চোখদুটো আরো খানিকটা থমকে গেলো।
আকাশ আর অনিন্দ্য পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।ওদেরকে দেখে মনে হচ্ছে একে অপরের বেশ চেনা। সংযুক্তাও অনিন্দ্যর পাশে দাঁড়িয়ে।©দেবিকা..
ইতিমধ্যে আকাশ পৌষালিকে দেখতে পেয়ে হাত নেড়ে ইশারায় পৌষালিকে ওদের ওখানে আসতে বললো।
অনিন্দ্য আর সংযুক্তা পৌষালিকে এখনো খেয়াল করেনি।ওরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় ব্যস্ত আপাতত।

না না,,, ওদের সামনে কেনো যেতে পারবো না আমি? অনিন্দ্যকে ফেস না করতে পারার তো কোনো কারন নেই।আমি আমার দিক থেকে একদম ঠিক ছিলাম।আর আমি যখন কোনো ভুল করিনি তখন হেসিটেড করার কোনো কারন নেই। আর পৌষালি কখনো কিছুর জন্য আপস করতে শেখেনি। সত্যি কথা বলতে বা সত্যির মুখোমুখি দাঁড়াতে পৌষালি কখনো ভয় পায় না।

— হাই পৌষালি।একচুয়ালি আমি আপনাকে আগেই ওখানে দেখেছি।আপনি হয়তো আমাকে খেয়াল করেননি।ইভেন আমি আপনার ওখানেই যাচ্ছিলাম।তো হঠাৎ করে আমার ছোটোবেলার বন্ধু অনিন্দ্যর সাথে দেখা হয়ে গেলো।আজ কতোগুলো দিন পর ওর সাথে সামনাসামনি দেখা।সবটাই কিন্তু আপনার জন্য।আপনি যদি আজ এখানে আসতে না বলতেন তবে অনিন্দ্যর সাথে দেখা হওয়ার সৌভাগ্যটা আমার আর হতো না।

আকাশের মুখে কথাগুলো শুনে পৌষালি শুধু একটু আলতোভাবে সৌজন্যতার হাসি হাসলো।

ওদিকে অনিন্দ্য নিজের সামনে এতোদিন পর পৌষালিকে দেখে বেশ খানিকটা অবাক।নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটার দিকে। অনিন্দ্যর সাথে সাথে সংযুক্তাও বেশ অবাক।

— অনিন্দ্য,, তোর সাথে পৌষালির পরিচয়টা করিয়ে দিই।ও পৌষালি। আমার উড বি।আর পৌষালি এই হচ্ছে…..

— অনিন্দ্য।।
— আপনি অনিন্দ্যকে চেনেন?? না মানে..
— না। এই অনিন্দ্যকে আমি চিনি না।আর আপনি বললেন না উনি আপনার ছোটোবেলার বন্ধু,,তখনই আপনি ওনার নামটা একবার বলেছেন।সেখান থেকেই জানতে পারলাম।©দেবিকা..
— ওহ্। আচ্ছা আচ্ছা। আর এই হচ্ছে সংযুক্তা।অনিন্দ্যর ওয়াইফ।ছমাস হলো ওদের বিয়ে হয়েছে।

আকাশের মুখে ‘ অনিন্দ্যর ওয়াইফ ‘ কথাটা শুনে পৌষালি এবার সত্যিই একটু বেশি ধাক্কা খেলো।
একবছরের মধ্যে অনিন্দ্য শুধু নিজের জীবনে এগিয়েছে তা নয়,, বরং বলা যায় খুব ভালো ভাবেই এগিয়েছে,,, আর সেটা বিয়ে পর্যন্ত।কিন্তু কবে হলো এতোসব? অনিন্দ্য এতো তাড়াতাড়ি সবকিছু ভুলতে পারলো??

হাই পৌষালি আপনার সাথে আলাপ হয়ে খুব ভালো লাগলো।আসলে আমার আর অনিন্দ্যর না আজ একটু জরুরি কাজ আছে এক জায়গায়।বেশক্ষন দাঁড়াতে পারবো না।
আকাশদা,, আমাদের না এবার বেড়োনো উঁচিত।নাহলে এবার সত্যিই দেরি হয়ে যাবে।আসলে কাজটা খুব আর্জেন্ট।আমারও খারাপ লাগছে এভাবে বেড়োনোর কথা বলতে।কিন্তু কাজটা সত্যিই….

— না না ঠিক আছে। কোনো ব্যপার না। আর ফোন তো রয়েইছে।ফোনে কথা হবে পরে।কোনো ব্যপার না।

সংযুক্তা একটু হেসে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো। তবে অনিন্দ্যর মুখটা গম্ভীরই ছিলো।ও হয়তো পৌষালিকে এখন এই মুহূর্তে নিজের সামনে একসেপ্ট করতে পারেনি। তাই এমন ব্যবহার।।

তবে সংযুক্তা যেভাবে পৌষালিকে আপনি আঞ্জেতে সম্বোধন করলো তাতে পৌষালির খটকাটা আরো খানিকটা বাড়লো।

অনিন্দ্যর কথা ছেড়েই দিলাম।কিন্তু সংযুক্তা তো আমার ক্লাসমেট ছিলো।ও তো আমার সুবাদে অনিন্দ্যকে সেভাবে কখনোই চিনতো না।হয়তো আমার মুখ থেকে কয়েকবার ওর নামটা শুনেছে।কিন্তু ও হঠাৎ করে এভাবে অচেনা লোকের মতো কথা বললো কেনো? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।

— পৌষালি,, কিছু ভাবছেন? না মানে হঠাৎ করে এভাবে চুপচাপ হয়ে গেলেন।
আকাশের কথা শুনে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলো পৌষালি।©দেবিকা..
— নাহ্,,তেমন কিছু না।আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন তো।আপনার এই বন্ধুর কি লাভ ম্যারেজ না এরেঞ্জ ম্যারেজ।
— এইরে। তা তো বলতে পারবো না।ওই যে বললাম।ওর সাথে আমার অনেক বছর যোগাযোগ ছিলো না।তবে ওর বিয়েতে নিমন্ত্রনের সুবাদে অনেকদিন পর দেখা হয়েছিলো।ছোটোবেলার প্রায় সব বন্ধুকেই নিমন্ত্রণ করেছিলো।আর সেই সুবাদে আমিও বাদ যাইনি।ওর বিয়েটা জানেন খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবেই হয়েছিলো।সে দেখার মতোই একটা ব্যাপার ছিলো ওর বিয়েটা।

— ওহ্ আচ্ছা।
— আচ্ছা আপনি হঠাৎ এই প্রশ্নটা করলেন!!
— না তেমন কিছু না। এমনিই জানতে ইচ্ছে হলো।বাদ দিন।
— হ্যাঁ সেটাই ভালো। তো পৌষালি আমাদের নেক্সট গন্তব্য কোথায়?
— আজ প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেলো।এখন বরং বাড়ি ফেরাটাই বেটার। আর একদিন বেড়োনো যাবে।
— ওকে ফাইন।কোনো প্রবলেম নেই। এই পৌষালি চা খাবেন??

আকাশের এতো উৎসাহের সাথে দেওয়া প্রস্তাবটা ঠিক ফেরাতে পারলো না পৌষালি।
আর এমনিতেই মাথাটা খুব ধরেছে।এককাপ চা হলে মন্দ হয় না।

চা খাওয়ার পুরো সময়টা ধরেই আকাশ নিজের মতো নানা কথা বলে যাচ্ছিলো পৌষালিকে উদ্দেশ্য করে। কখনো নিজের কলেজের কথা,কখনো বা ওর নিজের স্টুডেন্ট লাইফের কথা।কখনো আবার ওর বাড়ির কথা,ওর মায়ের কথা,ওদের মা-ছেলের ছোট্ট সংসারের কথা।আরো কতো কিছু।

পৌষালি একমনে আকাশের কথাগুলো চুপচাপ শুনছিলো।একটু আগে অনিন্দ্যর সাথে দেখা হওয়াতে মাথাটা ধরেছিলো,,এটা ঠিকই।তবে এখন যেনো সেই মাথা ধরাটা একনিমেষেই গায়েব হয়ে গেলো। অবশ্য এটা এই চায়ের জন্য,, না আকাশের এতো সুন্দর করে বলা কথাগুলোর জন্য?? সেটা এই মুহূর্তে প্রশ্নসাপেক্ষ পৌষালির কাছে।।©দেবিকা..

ঘুমোনোর চেষ্টা খুব করে করলেও রাত বারোটার সময়-এও চোখের পাতাদুটো কিছুতেই এক হতে চাইছে না পৌষালির।বারবার সকালের দৃশ্যটা চোখের সামনে ফুঁটে উঠছে। অবশ্য এমনটাই তো হওয়ার ছিলো।কিন্তু কিছুতেই মনকে যেনো মানানো যাচ্ছে না। এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না।

আচ্ছা অনিন্দ্য তো সবসময় ঘরোয়া, সংসারি বউ চাইতো।সেরকম দেখেই তো সংযুক্তাকে বিয়ে করেছে নিশ্চই। ওর পছন্দ মতো,ওর মায়ের পছন্দ মতো। তবে সংযুক্তার হাতে শাখা পলা কিচ্ছু ছিলো না কেনো? এমনকি কপালে সিঁদুরটুকুরও কোনো অস্তিত্ব ছিলো না। এমনটা অনিন্দ্য মেনে নিচ্ছে? সবথেকে বড়ো কথা অনিন্দ্যর মা এটা মেনে নিচ্ছেন?

আমি কিসব ভাবছি? এসব সম্পূর্ণ ওদের পার্সোনাল ব্যপার।এটা নিয়ে তো আমার ভাবার কোনো মানেই হয় না। না না,,এসব আর ভাবা যাবে না। ঘুমোতে হবে।
এসব ভাবনার ভিড়েই হঠাৎ করে পৌষালির ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে লেখা আকাশের নাম।
একি!! আকাশ এখন ফোন করেছে? ও এখনো ঘুমোয়নি?
কথাটা ভাবতে ভাবতেই আকাশের ফোনটা রিসিভ করলো পৌষালি।

— পৌষালি ঘুমিয়ে পড়ুন।বেশি চিন্তা করে লাভ নেই।
— আপনি…..
— আসলে আমি এমনিই বললাম কথাটা। আপনি এখন ফোনটা রিসিভ করলেন দেখে বেশ বুঝতে পারছি কোনো বিষয় নিয়ে খুব ভাবছেন আপনি।

— না মানে ওই আর কি।কিন্তু আপনি এখনো ঘুমোননি কেনো বলুন তো?
— আমার এখন সন্ধ্যা বুঝলেন তো।রাত তো হবে ভোর তিনটেতে।©দেবিকা..
— আপনি নিশাচর নাকি?
— হুম। তা বলতে পারেন। এবার আপনি বলুন তো কি ভাবছেন এতো যা আপনার মূল্যবান ঘুমটাকেই কেড়ে নিয়েছে।
— তেমন কিছু না… আসলে….
— না। এটা বললে তো মানছি না।তেমন তো কিছু অবশ্যই। আচ্ছা আপনি একটা কাজ করুন।
— কি কাজ?
— আপনার হাতের কাছে কাগজ পেন আছে তো? ওগুলো বের করুন।
— হ্যাঁ তা তো আছে।কিন্তু এখন কাগজ পেন দিয়ে কি করবো?
— আহা এতো প্রশ্ন করবেন না। যা বলছি তাই করুন।কাগজ আর পেনটা বের করুন।
— হ্যাঁ করেছি।
— গুড। এবার যে বিষয়টা আপনাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না,,তার নামটা লিখে ফেলুন। লিখেছেন? ওকে লেখা হয়ে গেলে ওই নামটাকে পেন দিয়ে কেটে দিন। এমনভানে কাটবেন যাতে নামটার কোনো অস্তিত্বই আর আপনার কাছে না থাকে। আর তারপর ওই কাগজটাকে জানলা দিয়ে ফেলে দিন।ওকে উড়ে যেতে দিন বাইরের পৃথিবীতে। দেখবেন,, ওই কাগজটাই আপনার দুশ্চিন্তাগুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে আপনার থেকে।

আকাশের এই প্ল্যানটাকে হঠাৎ করেই বেশ ভালো মনে হলো পৌষালির। ও তাই আর দেরি না করে কাগজে অনিন্দ্যর নামটা লিখে আকাশের বলা স্টেপগুলোই ফলো করলো।©দেবিকা..

— কি?? রিলাক্স লাগছে ??
— সত্যি বলবো? অনেকটা রিলাক্স লাগছে। আমি এখন এটাই ভাবছি যে এই প্ল্যানটা এতোদিন কেনো আমার মাথায় আসেনি। থ্যাংক ইউ আকাশ। থ্যাংকস এ লট।

— মেনশন নট। চলুন গুড নাইট। এবার সব চিন্তাগুলোকে পাশে সরিয়ে দিয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ুন।কাল সকালে কথা হবে।

— গুড নাইট।

ফোনটা রেখে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখটা বন্ধ করলো পৌষালি। সত্যি অনেকটা হালকা লাগছে।।

দেবিকা..

(চলবে)

#গল্প – #পলাশ_ফুলের_বসন্ত ( পর্ব-৫ )
#কলমে – #দেবিকা_সাহা

আমাদের জীবনের হিসাবটা খানিকটা গল্পের মতোই।নিজের নিয়মে হঠাৎ করেই হয়তো জীবন নিজের জন্য গল্প লেখে।

হ্যাঁ কালকে অনিন্দ্যর সাথে আবার দেখা হওয়াতে, অনিন্দ্য আর সংযুক্তার বিবাহিত জীবনের কথা শুনে বেশ খানিকটা অবাক হয়েছিলো পৌষালি। আর সত্যি বলতে খানিকটা কষ্টও পেয়েছিলো মেয়েটা অনিন্দ্যকে এভাবে এই কয়েকটা দিনের মধ্যে এতোটা এগিয়ে যেতে দেখে। যদিও কষ্ট পাওয়ার কথা না।কারন এমনটাই তো হওয়ার ছিলো। কিন্তু তবুও আমাদের আনকনসিয়াস মন তো আর আমাদের কথা শোনে না।আমরা হয়তো মনকে একরকম বোঝাই,একরকম করে যুক্তিগুলোকে সাজাই।কিন্তু কোথাও না কোথাও গিয়ে মন যেনো নিজের মতো কিছু চায়।যা সব যুক্তি তর্কের হিসেবের বাইরে।©দেবিকা..
তবে কাল রাতে আকাশের বলা ট্রিকস্ -টা বেশ কাজে দিয়েছে। আচ্ছা আকাশকে আজ অন্তত আমার একটা থ্যাংকস বলা উঁচিত।ওর আইডিয়াটা ছিলো বলেই আমার আজ বেশ ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে মন-টা।

এসব ভেবেই আকাশের নাম্বারে একটা ফোন করে বসলো পৌষালি।যদিও এই প্রথম ও একটু নিজে থেকেই ইচ্ছে করে ফোন করলো ছেলেটাকে।

— থ্যাংকস এ লট আকাশ। আপনি জানেন না,,কালকে বলা আপনার ট্রিকস-টা কতোটা কাজে দিয়েছে আমার জন্য।সত্যিই বলছি।আমি তারপরেই একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারলাম।আচ্ছা,,এরকম আরো অনেক ট্রিকস নিশ্চই জানা আছে আপনার। আমাকে কিন্তু অবশ্যই বলবেন।আমার তো এটা ভেবেই ভালো লাগছে যে,, আমার সমস্যাগুলো এখন থেকে আর আমার কাছে বেশি স্টে করতে পারবে না।কর্পূরের মতো উবে যাবে এক নিমেষেই।থ্যাংক ইউ।থ্যাংক ইউ।

এখন সকাল প্রায় নটা হলেও আকাশের কাছে এখন মাঝরাত বলা যেতে পারে।এই সকাল সকাল ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করেই এভাবে এক নিশ্বাসে কারোর থেকে এতোগুলো কথা শুনে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ছেলেটা।পৌষালির কথা শেষ হলে আকাশ নিজেই একটু ভেবে বলা শুরু করলো–©দেবিকা..

— ওরে বাবা,, আপনি তো পুরো এক্সপ্রেস ট্রেন চালিয়ে দিলেন সকাল সকাল। যেটুকু ঘুম আমার চোখে অবশিষ্ট ছিলো,, সেটুকুও আর থাকলো না।একধাক্কায় আমাকে ছুটি দিয়ে পালিয়ে গেলো।

— না মানে.. একচুয়ালি আমি না একটু ওভার এক্সাইটেড হয়ে যাই মাঝে মাঝে….. কি বলতে যে কি বলে ফেলি।

— হ্যাঁ সে আর বলতে।তার প্রমান তো আমি আগেই পেয়েছি।আর হ্যাঁ শুনুন থ্যাংকস বলতে হবে না এতো।বন্ধুত্বে নো সরি নো থ্যাংকস।

— ওকে।
— আর ট্রিকস্ তো আছেই আরো অনেক।সময় মতোন সবটারই এপ্লাই করা হবে।আমিও পালিয়ে যাচ্ছি না,,আর আপনিও না। পালাতে চাইলেও পালাতে দিচ্ছে কে??

— আচ্ছা?? এতোটা কনফিডেন্স নিজের উপর?
— নাহ্,, নিজের উপর তো নয়।
— তাহলে??
— আপনার উপর। আপনার উপর আমার পুরো বিশ্বাস আছে।
— মানে?
খানিকটা চমকে উঠেই প্রশ্নটা করলো পৌষালি।

— কিছু না।এই মানে-টা আপাতত আমি বুঝলেই চলবে।

এই খুনশুটি ভরা কথোপকথনে কখন যে অনেকটা সময় এগিয়ে গেলো তার হিসাব হয়তো ওরা দুজন কেউই রাখেনি। আসলে কিছু কিছু মুহূর্তগুলোকে হিসেবের মধ্যে না বাঁধাই ভালো।ওদেরকে এগিয়ে যেতে দিতে হয় নিজের মতোন করে।

এইসব কিছুর মধ্যে একটা সপ্তাহ পেড়িয়ে গেছে শহরের প্রতিদিনকার তালিকা থেকে। আকাশ আর পৌষালির বিয়ের দিনটা খুব তাড়াতাড়ি চলে আসার কথা থাকলেও বিয়েটা আপাতত একটা বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এই প্রস্তাবটা আকাশই দিয়েছিলো।যেহেতু পৌষালির নতুন চাকরি, তাই এক্ষুনিই বিয়েটা হলে মেয়েটাকে অনেকটা কম্প্রোমাইজ করতে হবে।তেমন হয়তো কিছুই হবে না,,তবুও চাকরি পাওয়ার পর পৌষালি স্বাধীনভাবে আনন্দটুকু করে নিক কয়েকদিন।এটাও ঠিক,,বিয়ের পরের জীবনেও আনন্দে কোনো খামতি পরবে না।তবুও ব্যাচেলার লাইফকে উপলব্ধি করার আনন্দটাই আলাদা।আর আকাশের এই প্রস্তাবে বাড়ির সবাই-ও একপ্রকার রাজি হয়ে যায়।©দেবিকা..

অবশ্য পৌষালি এই ব্যপারটা নিয়ে কথা বলেছিলো আকাশের সাথে। ওর যুক্তিতে অবশ্য আরো একটা বিষয় ইনক্লুডেড ছিলো।
পৌষালি বেশ গুছিয়েই আকাশকে কয়েকটা কথা বলেছিলো।

” দেখুন আকাশ, আমার মনে হয় আমাদের ফ্রেন্ডশিপটাকে আরো কিছুটা সময় দেওয়া উঁচিত। আমাদের একে অপরকে আরো ভালো করে,বেশি করে জানা উঁচিত।একে অপরের চাওয়া পাওয়া গুলোকে চেনা উঁচিত। এই সময়গুলোই হয়তো একটা সম্পর্কের ভিত গড়ে দেয়। ”

আকাশও সেদিন বেশ আনন্দের সাথেই স্থির ভাবে কয়েকটা কথা গুছিয়ে বলেছিলো–

আপনি যতোটা সময় চান,,ততোটাই নিন।আমার কোনো প্রবলেম নেই।আমি বাড়ির দিকটা সামলে নেবো।আমারও একটু সময় দরকার বুঝলেন।তবে আপনি যে কারনগুলোর জন্য সময় চাইছেন,,আমার কারনগুলো কিন্তু সেটা না।একটু আলাদা বলতে পারেন। আসলে এই সময়টার মধ্যে আমিও দেখি রান্নাবান্না,,আর ঘর গোছানো শিখতে পারি কিনা!!

আকাশের মুখে ওইরকম একটা প্রস্তাবের এরকম একটা অদ্ভুত উত্তর শুনে সত্যিই আর বেশি কিছু বলার থাকে না পৌষালির।ছেলেটাকে যতো দেখছে ততোই যেনো অবাক হয়ে যেতে হয়।

আকাশ সত্যিই হয়তো আলাদা।একদম অন্যরকম।ওর নিজের মতোন।
এই কথাগুলোই মনে মনে ভেবে নিয়ে সেদিন আরো একবার একটা মুক্তির স্বাদ পেয়েছিলো মেয়েটা। তবে এই মুক্তির সংঞ্জাটা একটু আলাদা।কোনো কিছু থেকে বেড়িয়ে আসার মুক্তি নয়।বরং একটা নতুন সম্পর্ক, নতুন ভরসা,নতুন বিশ্বাসের আস্থা পাওয়ার মুক্তি। যেই মুক্তির স্বাদটা একেবারেই আলাদা।

আজ পৌষালির জন্মদিন।প্রতি বছরের মতোই এবারেও পৌষালির বাবা মা মেয়ের জন্মদিন সেলিব্রেট উপলক্ষে একটা ছোটোখাটো পার্টির আয়োজন করেছেন। পৌষালির বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে নিকট আত্মীয়স্বজন, সবাইকেই ইনভাইট করা হয়েছে। সকাল থেকেই হাজার হাজার ম্যাসেজ আর শুভেচ্ছাবার্তা এসে জমা হচ্ছে পৌষালির ফোনে।এইসব চেক করতে করতেই পৌষালির চোখটা আটকে গেলো ইনবক্সে আসা একটা ম্যাসেজ দেখে।©দেবিকা..

অনিন্দ্য আমাকে উইশ করছে!! কিন্তু কেনো? সেসব দিন তো চলে গেছে।এমনিতেও কথাবার্তা সব বন্ধ।সেদিন সামনাসামনি দেখা হওয়ার পরেও তো একটা ভালোমন্দ কিচ্ছু জিজ্ঞেস করেনি ছেলেটা।তবে আজ কেনো? আজ কেনো হঠাৎ করে আমায় জন্মদিনে উইশ করতে গেলো।এটার তো কোনো দরকার ছিলো না। হ্যাঁ এটা ঠিক,,সম্পর্কটা থেকে আমি বেড়িয়েছিলাম।প্রবলেমটা আমার ছিলো।আমার পক্ষে এতোকিছু মেনে নেওয়া সম্ভবপর ছিলো না।তবে বন্ধুত্বটা তো আমি ভাঙতে চাইনি।আমি তো চেয়েছিলাম, আমাদের মধ্যে যোগাযোগটা যেনো থাকে। সেদিন তো তুমি আমার কোনো কথাই শুনতে চাওনি অনিন্দ্য। যোগাযোগটা তুমিই রাখলে না,রাখতে চাইলে না। তার কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের জীবনটাকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিলে। তার পরেও আমি কিচ্ছু ভাবিনি এসব নিয়ে। আমার ভালোলাগা, আমার কষ্টগুলোকে কোনোদিন বুঝলে না।নিজের মতো করে একতরফাই ভেবে নিলে।তারপরেও আমি তোমাকে কিচ্ছু বলিনি।বরং তোমার ভালোই চেয়ে এসেছি সবসময়। তুমি যেভাবে ভালো থাকতে চাও সেভাবেই নাহয় ভালো থেকো,,,এরকম চিন্তা নিয়েই নিজের সমস্ত অভিযোগগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখেছি সবসময়।তবে আজ কেনো? কথা নেই বার্তা নেই,, হঠাৎ করে ‘ হ্যাপি বার্থডে ‘ উইশ।যা খুশি নাকি?

না না এটার কোনো রিপ্লাই-ই দেবো না আমি।

— এই দিদি তোকে জ্যামমা ডাকছে। আকাশ দাদারা এসেছে রে। যা গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে আয়।আর আজকে তুই একা একা ঘরে বসে কি করছিস বলতো? আমরা সবাই তো বাইরের ঘরে।কোথায় সবাই মিলে মজা করবো তা না।

— কিছুনা।তুই যা।আমি আসছি।
— আচ্ছা ঠিকাছে। তাড়াতাড়ি আসিস।

আমি সত্যিই হয়তো একটু বেশি ভাবছি।কিন্তু ভাবনাটা তো আর এমনি এমনি আসছে না।

— একদম নয়।নিশ্চই কোনো না কোনো কারন আছে তোমার ভাবনার।©দেবিকা..
— আপনি ?
— চলেই এলাম।বার্থডে গার্ল-এর সাথে দেখা না করলে চলে নাকি?আপনি তো এখানে একা একাই মুখ কালো করে বসে আছো।তাই আমিই চলে এলাম।

আকাশের কথাতে পৌষালি সৌজন্যতার হাসিটাই হাসতে পারলো আপাতত।
নতুন কোনো উত্তর ঠিক এই মুহূর্তে মাথায় আসছে না।এতো কিছুর মধ্যে মাথাটা বড্ড ধরেছে।কথার পিঠে নতুন করে কথা বসাতে ঠিক ভালো লাগছে না আর।

— একটা রিপ্লাই দিয়েই দিন বরং। কিচ্ছু আসবে যাবে না তাতে।

হঠাৎ করে আকাশের মুখে এইরকম একটা অপ্রত্যাশিত কথা শুনে বেশ ঘাবড়েই গেলো মেয়েটা।।
©দেবিকা..

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here