গল্প -পলাশ_ফুলের_বসন্ত,পর্ব-১৬,১৭

গল্প -পলাশ_ফুলের_বসন্ত,পর্ব-১৬,১৭
কলমে -দেবিকা_সাহা
পর্ব-১৬

দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেছে শহরের বুক থেকে। মনের অভ্যন্তরে থাকা কিছু কিছু অনুভূতিগুলোকে আপাতত মনের গহনেই রেখে নিত্যদিনের ব্যস্ততার সাথে তাল মেলাচ্ছে প্রতিটা মানুষ।জীবন এমনই।কারোর জন্য বা কিছুর জন্য সে কখনো থেমে থাকে না।সে তার নিজের তালেই চলে।

এই যেমন সেদিন পৌষালির সামনে না চাইতেই নিজের ফিলিংস গুলোকে প্রকাশ করে আকাশও কেমন একটা চুপচাপ হয়ে গেছে।ওর বারবার মনে হচ্ছে নিজেকে একটু আলতো ভাবে গুটিয়ে নেওয়া যায় কি না!! পৌষালি সত্যিই ওই আগের ঘটনাগুলোকে নিয়ে খুবই বিরক্ত। ওর সামনে আর নাই-বা সেই ঘটনাটাকে এক্সপ্লেইন করার চেষ্টা করলাম।এরকম কিছু কিছু ঘটনাকে মন থেকে চিরদিনের জন্য মুছে দেওয়াই শ্রেয়।
ওদিকে পৌষালিও অন্য একটা কারনে বিচলিত হয়ে আছে।ও বেশ বুঝতে পারছে যে আকাশ চাইছে না সেই ঘটনাগুলো পৌষালির কাছে এক্সপ্লেইন করতে।কিন্তু এমনটা যে হতে দেওয়া যায় না। সব সম্পর্কের আগে আকাশ আমার একজন খুব ভালো বন্ধু।একজন বন্ধু হয়ে আর একজন বন্ধুর মনের কথা যে আমায় জানতেই হবে।

কথাটা মনে আসার সাথে সাথে ব্যাগ থেকে ফোনটা বার করে আকাশের নাম্বারে একটা কল করলো পৌষালি। দুবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ হলো।
— হ্যাঁ পৌষালি বলো।
— হ্যাঁ বলছিলাম যে কাল কি আপনি ফ্রি আছেন?
— কাল…… হ্যাঁ মোটামুটি ফাঁকাই আছে কালকের সিডিউল-টা।কিন্তু কেনো বলোতো? কোনো দরকার আছে?
— কেনো দরকার ছাড়া কি আমি আপনাকে ডাকতে পারি না? যাই হোক বাদ দিন।আসল কথায় আসি।দরকার তো অবশ্যই আছে।কালকে আমি আপনাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো।আপনি না বললেও কোনো লাভ হবে না।যেতে কালকে আপনার হবেই আমার সাথে। যাই হোক এখন ফোনটা রাখছি।এটাই বলার ছিলো।আর হ্যাঁ সকাল দশটা মানে কিন্তু সকাল দশটা।এই পৌষালি কিন্তু কোনরকম দেরি সহ্য করবে না। আমার যা বলার ছিলো বলা হয়ে গেছে।গুডনাইট।

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো পৌষালি।

ওদিকে এরকম দেখে আকাশও খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের দিকেই কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ছেলেটা।

এটা কি হলো? ম্যাডাম কি আমাকে থ্রেট দিলেন? অবশ্য সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে!! রীতিমতো নিজের মতো করে ধমক দিয়ে, নিজের কথাগুলো বলে নিজে থেকেই ফোনটা কেটে দিলো।আবার কাল নাকি এক মিনিটও দেরি করা যাবে না। বাবা রে!! মনে তো হচ্ছে স্কুলের হেডমিস্ট্রেস এসে তার স্টুডেন্টকে ঝেড়ে গেলো।কি জানি কি অপেক্ষা করছে আবার কালকে!!

কি রে এতো সকাল সকাল বেড়োচ্ছিস?অফিস যাস তো আর একটু দেরি করে।
— হ্যাঁ মা আজ একটু সকাল সকালই বেড়োতে হবে। আজ অন্য একটা কাজে বেড়োচ্ছি।অফিস যাবো না আজ।আর শোনো মা,,আজ আমার জন্য আর টিফিন পাঠাতে হবে না।
— কেনো? সারাদিন না খেয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না রে। কি যে তোদের সব নতুন ফ্যাশান হয়েছে!! যতো অভিমান যেনো ওই খাওয়ার উপরেই।কিছু হলেই খাবো না।
— উফফ্ মা।তুমি পারোও বটে।কখন বললাম যে আমি খাবো না।শুধু বলেছি টিফিন নেবো না।যাই হোক আমার এবার সত্যি সত্যিই দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমি আসছি।

যাক বাবা কি যে বলে গেলো!! এই বললো খাবো না,,এই বললো খাবো কিন্তু টিফিন নেবো না।বাইরের খাবার খাওয়ার মেয়েও তো আমার মেয়েটি নয়।তাহলে হলো-টা কি আবার। সত্যিই আমার মেয়ের মতিগতি মা হয়ে আমিই বুঝে উঠতে পারলাম না।ওকে বোঝা আর যাই হোক আমার কাজ নয়।।

কথাগুলো আপন মনে ভাবতে ভাবতেই পৌষালির মা আবার নিজের কাজে মন দিলেন।।

ওদিকে প্রায় একঘন্টা ধরে বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। আর পৌষালির তখন থেকে কোনো পাত্তা নেই।
বারবার নিজের হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝেই পৌষালির নাম্বারে ফোন করছে ছেলেটা।কিন্তু তার কোনো পজেটিভ রেজাল্ট তো পাওয়াই যাচ্ছে না,,উলটে বারেবারে একই কাজ করতে করতে নিরাশ হচ্ছে ছেলেটা। কারন উল্টোদিকের ব্যক্তিটির ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। ফোনের মালিকের কোনোরূপ পাত্তা নেই।

কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌষালি হাঁফাতে হাঁফাতে বাসস্ট্যান্ডের দিকে প্রায় ছুটে এলো। এক হাতে সাইড ব্যাগটা নিয়ে হাতঘড়িটার দিকে তাকাতে তাকাতে আসছিলো মেয়েটা।ওদিকে এই গরমে ঘেমে নেয়ে তার যে কি অবস্থা সেটা আপাতত এই পরিস্থিতিতে ওর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।এটা তো ওর উল্টোদিকে ব্যক্তির পক্ষেই একমাত্র বোঝা সম্ভব।

— ওহ্,,তুমি চলে এসেছো? ভালোই হলো আমাকে আর তোমার জন্য ওয়েট করতে হলো না।নাহলে না সত্যি সত্যিই খুব দেরি হয়ে যেতো।চলো এগোনো যাক।
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে পৌষালি একবার আকাশের দিকে তাকালো। আকাশের মুখের অভিব্যক্তি দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সে কতোটা শকড্ হয়ে গেছে পৌষালির কথাগুলো শুনে।কেমন একটা বড়ো বড়ো চোখে মেকি রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে ছেলেটা। ওর দিকে তাকিয়ে একবার ঢোক গিলে ভিতু ভিতু গলায় পৌষালি আবার বলা শুরু করলো —

— আসলে তুমি আজ একদমই ঠিক টাইমেই এসেছো।আমারই মনে হয় একটু দেরি হয়ে গেছে।কি আর করা যাবে বলো। রাস্তাঘাটের ব্যাপার তো।আমি কিন্তু ঠিকঠাক টাইমেই বেড়িয়েছিলাম বাড়ি থেকে।কিন্তু…..
বিশ্বাস হচ্ছে না?? কি করি…..
এই দেখো আমি তোমাকে ছুঁয়ে বলছি যে আমি ঠিক সময়েই……. না মানে আমার কিন্তু খুব একটা বেশি দোষ নেই………

— বলছি সবই তো বুঝলাম।কিন্তু আমাকে একটা কথা বলোতো।তোমার ফোনটা কোথায় থাকে? মোবাইল ফোনের কার্যকারিতা সম্পর্কে কি কোনো আইডিয়া আছে তোমার? আই জাস্ট আস্ক।

— ফোন???
— জি ম্যাডাম। ফোন।

পৌষালি এবার তড়িঘড়ি করে ব্যাগের পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোনটা বের করেই তো বেশ অবাক।কুড়িটা মিস কল আকাশের নাম্বার থেকে।
আকাশের দিকে তাকাতেই দেখলো ছেলেটা ভ্রূ কুঁচকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

— আ—-স—-লে….. হয়েছে টা কি…. ফোনটা না সাইলেন্ট করা ছিলো।আমি ঠিক খেয়াল করিনি ব্যপারটা। ওই তাড়াতাড়ি বেড়োতে গিয়েই তো…..

কথাটা বলে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা খুব মন দিয়ে ওর বলা কথাগুলোর বিশ্লেষণে ব্যস্ত।

— আর এমনিতেও এতো মন দিয়ে আমার কথাগুলো বিশ্লেষণ করার কোনো প্রয়োজন নেই।এমন ভাবে তাকিয়ে আছো যেনো আমি কোনো অপরাধ করে ফেলেছি।আর তারপর সেই অপরাধটার হয়ে মিথ্যে সাফাই দিচ্ছি।
অপরাধ যদিও একটু হয়েছে।তবে সেটা আমার অজান্তেই। আর না জেনে কোনো অপরাধ করলে সেটা আর অপরাধ থাকে না।
আর তাছাড়া বড়ি বড়ি জিন্দেগি মে এইসি এইসি ছোটি ছোটি বাত হোতি রাহেতি হে।দ্যাট ইজ নান অফ আওয়ার বিসনেজ।সো লেটস্ গো।

কথাটা বলে আকাশের কাছ থেকে আর কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করে ছেলেটার হাতটা শক্ত করে ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো মেয়েটা।
পৌষালির এহেনো ব্যবহারে আকাশ খানিকটা অবাক হলেও একটা নাম না জানা ভালোলাগা এসে ভিড় করছিলো মনে। আর তারপর পৌষালি আজ ওকে প্রথমবার আপনি সম্বোধন ভুলে গিয়ে তুমি বলে সম্বোধন করছে।এই ব্যপারটা আকাশ অনেকক্ষন আগেই খেয়াল করেছে।এই ব্যপারটা নিয়ে পৌষালিকে আর নতুন করে কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না। এই অনুভূতিটাকেই আগলে নিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিলো বারবার।একেই বোধহয় ভালোবাসা বলে।।

…….( চলবে )…….

#গল্প- #পলাশ_ফুলের_বসন্ত ( পর্ব-১৭ )
#কলমে – #দেবিকা_সাহা

আকাশ খুব অবাক হলো হঠাৎ করেই নিজের আশেপাশের সেই চেনা নিস্তব্ধ পরিবেশটা দেখে।এটা তো সেই জায়গা,,যেখানে আকাশ বারবার ছুটে আসতো সময় পেলেই।শহর পেড়িয়ে বড়ো রাস্তার পাশে থাকা সেই হাইওয়ে-টা।কখনো বা ওর জীবনের প্রাপ্তিগুলোর সাক্ষী বহন করতো এই জায়গাটা,,কখনো বা মন খারাপের অভিব্যক্তি হয়ে ফুঁটে উঠতো এই চেনা চারদিকটা। তাইতো পৌষালিকে নিজের মনের কথাটা এখানে এসেই বলেছিলো ছেলেটা। ওর জীবনের ভালোবাসার সাক্ষীস্বরূপ এই জায়গাটাই নাহয় থাকলো। এসব ভাবতে ভাবতেই আকাশ যেনো কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো। তবে হঠাৎ করেই ভাবনার ঘোর কাটলো।আর আবারো একরাশ প্রশ্ন ভিড় করে আসলো মনে।
পৌষালি আমায় হঠাৎ করে এখানে কেনো নিয়ে আসলো? তবে কি ও নিজের মনের কথা আমায়….
না না কি সব ভাবছি আমি!! এও কি সম্ভব হতে পারে?? ও তো আমাকে বন্ধুর বাইরে গিয়ে কখনো কিছু ভাবেনি।আর তারপরে সেই ঘটনাগুলোর পর থেকে ওর মনে আমার জন্য একটা অলিখিত খারাপলাগা,অভিমান এসে জড়ো হয়েছে।অবশ্য এটাই তো স্বাভাবিক। এটাই তো হওয়ার ছিলো।আমি যা করেছি ওর সাথে,, তারপর আর….

— কি হলো কি ভাবছো বলোতো? আরে আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছি। চলো তাড়াতাড়ি।

— পৌষালি আমরা এখানে? না মানে এখানে কেনো…..
— কারন আজকের জন্য এর থেকে ভালো কোনো জায়গা আমি খুঁজে পেলাম না তাই।
— মানে??
— উফফ্। সব মানের উত্তর যদি এখানেই দিয়ে দিই,,তবে আর সারপ্রাইজের কি থাকলো বলো।একটু ধৈর্য্য ধরো বৎস।ধীরে ধীরে সবটা জানতে পারবে।

পৌষালি হঠাৎ করেই আকাশের চোখদুটো নিজের হাত দিয়ে আলগা ভাবে ঢেকে দিলো।মনের মধ্যে হাজার রকমের প্রশ্নের উদ্ভব হলেও আপাতত প্রশ্নগুলোকে মনের মাঝেই যত্ন করে তুলে রাখলো আকাশ।অনুভূতিগুলোকে এখন অনুভব করতেই ব্যস্ত ছেলেটা।
কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা শীতল হাওয়ায় ভরে গেলো চারিদিকটা। পৌষালি ধীরে ধীরে আকাশের চোখদুটো থেকে ওর হাতের বাঁধনটা আলগা করে দিলো।চোখ মেলে একমূহুর্তের জন্য আকাশের চোখদুটো যেনো স্থির হয়ে গেলো।
হাইওয়ের পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় এখন উপস্থিত ওরা।ফাঁকা মাঠ বলা যেতে পারে।ঠিক তার পাশেই একটা জায়গায় একটা ছোটো কাঠের টেবিল রাখা।আর তার উপরেই রয়েছে নানা রঙের গোলাপ দিয়ে তৈরি একটা বোকে।পাশে রাখা রয়েছে একটা কেক। আর সবথেকে আকর্ষণীয় ওই টেবিলের উপর ছোটো ছোটো ফুল দিয়ে সুন্দর ভাবে লেখা রয়েছে
” শুভ জন্মদিন বন্ধু। ভালো থেকো ভালোবাসা ”

আকাশ একবার পৌষালির দিকে তাকালো।অমলিন আনন্দে ভরে রয়েছে মেয়েটার মুখটা।সে আবার তার ব্যাগ থেকে ডি.এস.এল.আর – টা বের করে ওটাতে ফোকাস করতে ব্যস্ত। আকাশের কাছে এখন যেনো সবটাই স্বপ্নের মতো।আকাশ কখনো ভাবতেই পারেনি আজকের দিনটাতে পৌষালির থেকে ও এমন অপ্রত্যাশিত ভাবে এরকম একটা সুন্দর উপহার পাবে।
পৌষালি লক্ষ্য করলো আকাশের চোখদুটো কেমন যেনো চিকচিক করছে।স্পষ্ট বুঝতে পারছে ছেলেটার হয়তো চোখদুটো ভিজে আসছে।
শুভ জন্মদিন আকাশ। খুব খুব ভালো থেকো।আর হ্যাঁ আমার কিন্তু আগের সেই হাসিখুশি আকাশকেই চাই।এই আমার সামনে যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে সে যেনো কেমন একটা গম্ভীর হয়ে গেছে আজকাল।

— পৌষালি,, তুমি এসব কখন….. না মানে আজ আমার জন্মদিন তুমি সেটা…
— জানি। আর আমি না জানলে আর কে জানবে বলোতো। আমার সমস্ত সত্ত্বার সাথে যে তুমিই আছো আকাশ। আর আমি নিজের সত্ত্বা নিয়ে এটুকু জানবো না?? সেটা কি করে হয় বলোতো?

পৌষালি লক্ষ্য করলো আকাশ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। যেনো ওর চোখদুটো অনেক না বলা কথা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
— কি বলোতো? এরম করে তাকিয়ে থাকলে হবে বলো? কতো কষ্ট করে এই সব কিছুর আয়োজন করলাম। জায়গাটা ডেকোরেট করলাম নিজের মতোন করে।তুমি তো কিছু বলছোই না যে কেমন লাগলো তোমার সারপ্রাইজটা। না বললে আমি কি করে বুঝবো।আর হ্যাঁ কেক কাটার পর কিন্তু এই পায়েসটাও খেতে হবে।আমি এটা নিজের হাতে বানিয়েছি।তাও আবার কাল সারা রাত জেগে।

— ইউ নো পৌষালি,, আমি নিজেও কেমন যেনো ভুলে গিয়েছিলাম আজকের দিনটা। আর প্রতিবছর তো মা– ই…..

এবছর আমিই বারন করেছিলাম আন্টিকে… অবশ্য আন্টির সাথেও সবাই মিলে একটা প্ল্যান আছে।সেটা অবশ্য একটু পরে হবে।

পৌষালি আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না,,, সত্যিই ভাবতে পারছি না যে তুমি এভাবে এতো সুন্দর করে আমার জন্মদিনটা সেলিব্রেট করছো।কি বলে যে তোমায় ধন্যবাদ…… থ্যাংকস পৌষালি। থ্যাংকস এ লট ফ্রম কোর অফ মাই হার্ট।
— এই দাঁড়াও দাঁড়াও।থ্যাংকস কিসের শুনি? তুমিই আমাকে একদিন শিখিয়েছিলে যে বন্ধুত্বে নো সরি,নো থ্যাংকস। তাহলে এখন এমন কেনো শুনি?
— সত্যিই তো।খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে আমার। আর হবে না।তো ম্যাডাম,, আমরা এখন কেকটা কাটবো তো? আমি কিন্তু সত্যিই আর লোভ সামলাতে পারছি না।তাড়াতাড়ি কেকটা খেতে হবে তো।তারপর আবার তোমার বানানো পায়েস। উফফ্ ভাবলেই আমার একেবারে দিল খুশ হয়ে যাচ্ছে।
— হ্যাঁ হ্যাঁ চলো।
— সবই তো ঠিক আছে। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন আছে পৌষালি। বলছি যে পায়েসটা তুমি হঠাৎ রাত জেগে বানাতে গেলে কেনো? না মানে…
— আরে শোনোই না ব্যপারটা কি হয়েছে। তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলেই তো এতো এতো প্ল্যান।মা যদি আমার পায়েস রান্নার ব্যপারটা জানতো,,তাহলে তো কোনো না কোনো ভাবে জেনেই যেতো যে আজ তোমার জন্মদিন।আর মা জানতে পারলে কোনো কারনে যদি তোমাকে বলে দিতো,,তাহলে আমার সারপ্রাইজটাই তো মাটি হয়ে যেতো একেবারে। সেটা কি করে হতে দিই বলো? আর তার জন্যই তো এতো কাঠখড় পোড়ানো।

— বুঝলাম।চলো কেকটা কাটা যাক এবার।
— হ্যাঁ একদম।আর হ্যাঁ শোনো,,মুখে একটু হাসি এনে ওই টেবিলটার সামনে দাঁড়াও তো। এই যে দেখছো ডি এস এল আর- টা এনেছি,,এটারও তো ইউটিলাইজ করতে হবে এখন।তাই না? চলো চলো চলো বেশ লক্ষী ছেলেটির মতো দাঁড়িয়ে পড়োতো।

খানিকটা সময় অনেকটা হাসিখুশি আর এত্তোটা এত্তোটা ভালোলাগা নিয়ে কেটে গেলো ওদের।সময়টা যে কিভাবে অতিবাহিত হয়ে গেলো,, সেটা যেনো বোঝাই গেলো না। আর সত্যি বলতে কি,, কিছু কিছু মুহূর্তের হিসেব করতে নেই কক্ষনো।একদম বেহিসাবি হয়েই তাদেরকে তাদের মতো করেই এগিয়ে যেতে হয়।
আচ্ছা পৌষালি আমাকে একটা কথা বলোতো।তুমি যে হঠাৎ করে আমাকে এই ‘ তুমি ‘ সম্বোধন শুরু করলে…..
আকাশকে আর বলতে না দিয়েই ওর মুখ থেকে কথাটা কেড়ে নিয়ে বেশ সাজিয়ে নিয়ে কিছু কথা বললো মেয়েটা।
— একচুয়ালি এর পিছনে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস আছে।
— ইতিহাস? কি ইতিহাস আবার?
— হ্যাঁ ইতিহাস। আচ্ছা শুনতে যখন চাইছো তখন বরং বলি।একচুয়ালি এতোদিন ওই সিঙ্কিং সিঙ্কিং ড্রিঙ্কিং ওয়াটার কেসটা চলছিলো আমার তরফ থেকে। কিন্তু সত্যি বলতে কি,,এখন আর ওই সিঙ্কিং সিঙ্কিং ব্যপারটা চলছে না।কি আর করি বলো ভেবেছিলাম উলটো দিকের ব্যক্তিটি সব বুঝে যাবে মুখে কিছু বলার আগেই। কিন্তু তিনি তো…… কিছুই বুঝলেন না।বুঝলেন না বললে একটু বেশি বলা হয়ে যাবে। তার থেকে বলা ভালো উনি একটু বেশিই বুঝে গেলেন।আর তাইতো তার বোঝাটার রেকটিফাই আমাকেই করতে হবে।

এই মুহূর্তে পৌষালির কথাটা শুনে আকাশ বেশ বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।
কিন্তু পৌষালি এখন ওর এই দৃষ্টির কোনো পাত্তা না দিয়েই উল্টোদিকে তাকিয়ে নিজে নিজে বলেই যাচ্ছে নিজের কথাগুলো।

কোথায় ভেবেছিলাম সব কিছু বুঝে যাবে তুমি।আমি বলার আগেই আমার মনের কথাগুলো বুঝে যাবে।কথায় বলে মানুষের চোখ দেখলেই নাকি মনের অর্ধেক কথাই বোঝা যায়।তুমি আমার চোখ দেখে কি কক্ষনো কিচ্ছু বুঝতে পারোনি আকাশ? নাকি…… তুমি কি জানো না যে –
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে।শুধু তোমায় ভালোবেসে।

কথাগুলো একনিশ্বাসে বলেই পৌষালি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যাচ্ছিলো। কিন্তু এগোতে আর পারলো কোথায়!! কোনো একটা হাতের দৃঢ় বন্ধন যেনো ওকে আটকে দিলো খুব শক্ত করে। সে বন্ধন ছেড়ে এগোনো যে খুব মুশকিল।
— কিছু কিছু কথা বুঝতে পারলেও যে উলটো দিকের ব্যক্তিটির থেকে শুনতে ইচ্ছে করে খুব করে। কি করবো বলো। এই অবুঝ মন যে এটাই চাই।।

পৌষালি এতোক্ষনে আকাশের চোখে চোখ রেখে তাকালো।দুজনের স্থির দৃষ্টি যেনো দুজনকে নিবদ্ধ করছে খুব করে।পারস্পরিক অনুভূতির ভালোলাগায় পরিপূর্ণ স্থির আর দৃঢ় সেই দৃষ্টি। এই দৃষ্টি থেকে পিছিয়ে আসা যায় না।শুধুই হারিয়ে যেতে মন চায় সেই অনন্ত নীল দৃষ্টির গহনে।।

………( চলবে )…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here