পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-৬
Tithhe sarker
“চোখ খোল!আমি তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলবো না।”
রক্তিমের এই কথা শুনে আচমকা চোখ খুললো শক্তি। রক্তিম কি করে তার মনের কথা জানলো!
তাকিয়ে দেখলো সে একদম রক্তিমের বুকের কাছে।রক্তিম তো লম্বা অনেক।তাকে দেখার জন্য শক্তিকে মাথা উঁচু করা লাগে।
“আমার দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে তাকা!” রক্তিমের এই কথায় ভ্যাবচেকা খেয়ে সামনে তাকালো শক্তি।
পশ্চিমাকাশে সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু।সূর্যের লাল আভা পুরো আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে। আর তারই প্রতিচ্ছবি পরছে নদীর জলে।পাখিরা দলবেঁধে উড়ে চলেছে তাদের নীড়ের দিকে।ব্রীজের পাশের পাতাঝড়া গাছটায় এসে বসেছে কিছু নাম না জানা পাখি।তাদের কলকাকলিতে পরিবেশ আরও মনোমুগ্ধকর।উওুরে বাতাস শরীর কাপিয়ে দিচ্ছে। আশে পাশে আর কোনো মানুষ দেখা যাচ্ছে না। কৃষকরাও মাঠ থেকে বিদায় নিয়েছে বেশ আগে, নদীতেও কোনো নৌকা দেখা যাচ্ছে না।
শক্তি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এতো সুন্দর মূহুর্ত সে কখোনও অনুভব করেনি।
হঠাৎই কোমড়ে কারো স্পর্শ টেরে পেয়ে কেপে উঠে শক্তি। পাশে তাকিয়ে দেখে রক্তিম এক দৃষ্টিতে তারই দিকে তাকিয়ে আছে।রক্তিম পেছনে দাড়ানোয় শক্তির পিঠ ঠেকেছে একদম রক্তিমের বুকে।
রক্তিম ওকে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের থুতনি ঠেকায় শক্তির কাঁধে।
এসব কি হচ্ছে শক্তির সাথে তা সে ভেবে পাচ্ছে না।পেটের ভেতর যেনো কেউ সুরসুরি দিচ্ছে। পেটটা কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠছে।এমন অনুভূতি কেনো হচ্ছে? আর রক্তিমই বা এমন কেনো করছে।তার কিছুই ভেবে পাচ্ছে না শক্তি।
“তো কি যেনো বলছিলি?মিস করছিলি আমায়?”
রক্তিমের এমন হিসহিসিয়ে বলা কথা শুনে শক্তির রীতিমতো কাঁপা কাপি শুরু হয়ে যায়।
“কিরে,কথা বল!”
“উমহু,,ক,কি বল বো?”
রক্তিম আর একটু ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,
“এই যে,আমায় যে মিস করছিলি।”
“আ,আমি কখন ব বললাম?”
মিনমিন করে বলে শক্তি।
“আচ্ছা, ঠিক আছে। বলিস নি।”
এই বলে রক্তিম শক্তির ঘাড়ে শক্ত করে চুমু খায়।
শক্তির যেন তাতে শ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম।শক্তি কোনোমতে বলে,
“আমি বা,বাড়ি যাবো।”
শক্তির কথা শুনে রক্তিম ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, ঘাড়ে ঠোঁটের স্পর্শ আরো গভীর হয়।এর মানে এখন যাওয়া যাবে না।
এদিকে শক্তির বুক ধুকপুক করছে।তার সাথে কি হচ্ছে এসব তা সে বুঝতে পারছেনা।
“ভালোবাসি তোকে।”
এই বলে রক্তিম তাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
আচ্ছা শক্তি কি ভুল কিছু শুনলো!এটা কি তার মনের ভুল!রক্তিম তাকে ভালোবাসে,সিরিয়াসলি! তাকে ঘন্টায় ঘন্টায় ঝাড়ি মারা,চড় থাপ্পড় মারা মানুষটা তাকে ভালোবাসে।এই কথাটা শক্তি ঠিক হজম করতে পারছে না।
এতোক্ষণে শক্তি আড়চোখে তাকালো রক্তিমের দিকে।দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছে রক্তিম। রক্তিমের এই অভ্যাসটাই শক্তির একদম পছন্দ নয়।তাছাড়া
ব্লু জিন্স আর হোয়াইট শার্টে যাকে পুরোই ড্যাশিং লাগছে।শার্টের ওপর কালো জ্যাকেটটা তার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সিগারেটটা শেষ করে নিচে পায়ে পিশে ফেলে রক্তিম।বাইক স্টার্ট দিতে দিতে শক্তিকে বলে,
“বাইকে ওঠ।”
ভাবখানা এমন যেনো কিছুই হয়নি।আর এদিকে শক্তি এখনো ঘোরে আছে।
“কিরে বোস।”
রক্তিমের কথা শুনে সুড়সুড় করে পেছনে বসে গেলো শক্তি। শক্তি একটা হাত রক্তিমের কাধেঁ রেখেছে।রক্তিম পেছন থেকে শক্তির আরেকটা হাত নিয়ে এসে তার কোমড়ে রাখে।শক্তি হাত সরাতে চাইলে কঠিন চোখে তার দিকে তাকায় রক্তিম।
আস্তে আস্তে বাইকের গতি বাড়ছে।বাতাসে কাপিয়ে দিচ্ছে শক্তিকে।ও পরেছে একটা পাতলা সোয়েটার। হঠাৎ লক্ষ করলো আকাশে মস্ত চাঁদ উঠেছে। চারদিক চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে। আর এইদিকে নতুন অনুভূতির দোলায় ভাসছে শক্তি। ও ভাবে আজ কি তবে পূর্ণিমা সন্ধ্যা। এই #পূর্ণিমা সন্ধ্যায় কি শক্তির জীবনটা পাল্টে গেলো।
——————————————–
বাইক এসে থেমেছে কলেজ ক্যাফের সামনে।রক্তিম ওকে নিয়ে ভেতরে ঢোকে।গিয়ে দেখতে পায় আরাফ সহ রক্তিমের আরো কিছু বন্ধুরা বসে আছে।শক্তিকে দেখেই একগাল হেসে জিজ্ঞেস করে আরাফ,
“আপু,রাগ করেছো আমার সাথে?রাগ করোনা।এইদিন এটাকে যদি না জানাতাম তো আমার জানও থাকতো না।”
এই বলে আবার হাসে আরাফ।
শক্তি বুঝতে পারে যে ওরা সবাই সবকিছু জানে।লজ্জায় সে আর মাথা তুলতে পারেনা।
“তোরা যাবি নাকি আমরা চলে যাবো?” রক্তিমের এই কথায় সবাই রেস্টুরেন্ট ফাঁকা করে চলে যায়।উপজেলা এলাকা আর সন্ধ্যার পর হওয়ায় জায়গাটা এখন ফাঁকা।
“বল কি খাবি?”
জিজ্ঞেস করে রক্তিম।
শক্তি নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,
“আমি কিছু খাবো না।”
“থাপ্পড় খাবি??চুপচাপ অর্ডার কর।”
রক্তিম ইস ব্যাক অন হিস ক্যারেক্টার,হু,,হু।
—————————————-
এইদিকে বাড়িতে পীযূষ বাবুর ঘরে তাঁর চেচামেচি শোনা যাচ্ছে।
“ও কোথায় গেছে শক্তিকে নিয়ে।তোমাদের সামনে দিয়েই নিয়ে গেছে নিশ্চয়ই। তোমরা কেউ আটকাও নি কেনো?”পীযূষ বাবুর হুংকার।
উনি মানুষটা শান্ত শিষ্ট হলেও,রেগে গেলে রক্তিমের মতোই ভয়ংকর।
” আরে,,আমি তো কিছুই জানি না কখন গেলে।”জয়ার উত্তর।
“তুমি নিশ্চয়ই জানো,রিদ্ধি। এখন আবার বলো না যে তুমিও জানোনা। ”
“জানি তো বাবা।কিন্তু রক্তিম কি কারো কথা শোনে?তুমিই বলো!”
রিদ্ধি অসহায় ভাবে বলে।
“আরে,এক্ষুনি এসে যাবে দেখো তুমি।এতো চিন্তা করার কি আছে! “বলে জয়া।
” আচ্ছা,,, সত্যি করে বলো তো জয়া,তুমি পারতে তোমার মেয়েকে এভাবে একটা পাগলের সাথে ছেড়ে দিতে?”
“এবার কিন্তু তুমি বাড়াবাড়ি করছো।শক্তিকে তুমি ভালোবাসো বলে আমার ছেলেটার সাথে এমন ব্যবহার করতে পারোনা।” রাগি কন্ঠ বলে জয়া।
“কি করেছি তোমার ছেলের সাথে আমি।বরং ওই শক্তির সাথে কারণে অকারণে বাজে ব্যবহার করে।আমি দেখেও কিছু করতে পারি না।আর কত ছাড় দেবো আমি তোমার ছেলেকে।”
“আর আমার ছেলেটা যে তিন বছর ধরে ধুকে ধুকে মরছে শক্তির জন্য,সেটার কি বলবে তুমি?”
জয়ার কথা শুনে দড়জার বাইরে থমকে দড়ায়।
“তার জন্য রক্তিম ধুকে ধুকে মরছে!”
(চলবে)