পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-৫

পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-৫
Tithee sarker

পৌষ মাসের হাড় কাঁপানো শীতেও মাথায় মগের মগ জল ঢেলে যাচ্ছে শক্তি। তবুও তার মাথা ঠান্ডা হচ্ছে না।কান দুটো থেকে যেনো গরম ভাঁপ বের হচ্ছে। এমন কথা তবুও কিনা রক্তিমের মুখ থেকে।এটা তো রসিকতা হতে পারেনা।কারণ যে লোকটা তার সাথে ভালো করে কথা অব্দি বলে না সে করবে রসিকতা!

বিছানায় বসে ফুল স্পিডে ফ্যান চালিয়ে দিলো সে।কানে শুধু এখনও রক্তিমের একটা কথাই বাজচ্ছে।পরক্ষণেই ভাবে শক্তি যে হয়তো এটা মুখের টানে বলা কথা।ইন্টেনশনালি রক্তিম কখনোই ওকে এই কথা বলবে না। হ্যা,এটাই হবে হয়তো।এই ভেবে ফ্যান অফ করে কম্বল গায় দিয়ে জুবুথুবু হয়ে শুয়ে পরলো শক্তি। এতোক্ষণ এক্সাইটমেন্টে মাথায় জল ঢাললেও এখন বুঝতে পারছে ঠান্ডা কত প্রকার ও কি কি।

পরদিন বিকেলে বাড়ি ফেরে রক্তিম। আর এসেই সোজা শক্তির রুমে। হঠাৎ করে রুমে এভাবে কারো আগমনে শক্তি চমকে যায়।আর যখন দেখে যে এটা রক্তিম,তখন যে তার হৃৎপিণ্ড কত মিটার স্কেলে ছুটতে থাকে তা সে নিজেও জানে না।

এসেই শক্তির গাল দুটো আঙ্গুল দিয়ে চেপে বলে,

“কি যেন বলছিলি?এক ডায়লগ আর কত!তো এখন বল,চুমু খাবি?”

রক্তিমের কথা শুনে শক্তির হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার আত্মারাম যেন খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবে।শক্তি বুঝতে পারছে এখান থেকে বেরুতে হতে তাকে মাথা খাটাতে হবে।নয়তো এই ঘর থেকে আজ শক্তির লাশ বেরুবে।

“আমি কি করলাম?আমি কি নিজের ইচ্ছায় গিয়েছিলাম নাকি?বান্ধবীরা রিকুয়েষ্ট করলে যেতে হয় না? আর আমি কি রোজ রোজ যাই নাকি, আজই তো শুধু গেছিলাম।নিজে যে ছয়মাস ধরে ঢাকা পড়ে আছে সেটা কিছু না।এখন তো কোনো পরীক্ষাও নেই।কেনো পড়ে থাকা হয়, বন্ধুদের জন্যই তো।নিজের বেলায় কিছু না, শুধু আমার বেলায় সব হম্বিতম্বি। ছয়মাসে কি একবারও আসা যায় না?আমি কত মিস,,,,

এই অব্দি বলেই শক্তি মুখে হাত দিয়ে দেয়।কাকে কি বলছে এসব!!!সামনে তাকিয়ে দেখে রক্তিমও তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

বাঁচতে চাইলে পালা শক্তি। এই সুযোগ! এই ভেবে শক্তি এক ভোঁ দৌড়।এক দৌড়ে একদম রান্নাঘর।মনে হচ্ছে যেন ম্যারাথন জিতে এসেছে, এমনভাবে ওর শ্বাস উঠানামা করছে।জয়া ওকে দেখে বলে,

” কিরে,অলিম্পিক দৌড়ে এসেছিস নাকি?”

“রাক্ষস! রাক্ষসের মুখ থেকে বেঁচে এসেছি।”

———————————————–

পা দুটো দেয়ালে ঠেকিয়ে মাথাটা বিছানায় রেখে অদ্ভুত ভাবে শুয়ে আছে শক্তি। আর ভাবছে দুপুরে ঘটে যাওয়া সেই অদ্ভুত ঘটনা।এদিকে রিদ্ধি আর রুশা পাশে বসে রাজ্যের গল্প জুড়েছে। তাদের কথা তার এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বের হচ্ছে।

এরই মাঝে রক্তিম দড়জার কাছে এসে বলে,”পাঁচ মিনিটের মাঝে রেডি হয়ে নিচে আয়।দ্রুত!”

এই কথা শুনে শক্তি হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসে। রিদ্ধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,”কাকে বলছিস?”

রক্তিম শক্তির দিকে তাকিয়ে বলে,”কিরে আমার কথা কানে যায় না?দ্রুত তৈরি হ।”
আবার রিদ্ধিকে বলে,”বাবাকে ম্যানেজ করিস।”

এই বলে হনহনিয়ে চলে যেতে থাকে রক্তিম। আর রিদ্ধি পেছন থেকে বলতে থাকে,
“কোথায় নিয়ে যাবি ওকে?রক্তিম দাড়া।বাবাকে আমি কি বলবো?জানতে পারলে বাবা তুলকালাম বাঁধাবে। ”

“বাবা জানতে চাইলে বলিস,তার আদরের দুলালিকে মেরে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছি না।কিভাবে ম্যানেজ করবি এটা তোর ব্যাপার।”

রিদ্ধি অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে রক্তিমের যাওয়ার দিকে।ও কি বলবে বাবাকে! আজ আর রক্ষা নাই।

এইদিকে শক্তি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,”আমি যাবো না,রিদ্ধি দি এই খবিশটার সাথে।আমায় থাপড়িয়ে মেরে ফেলবে নিশ্চিত। ”

“কি আর করা ওই ঘাড়ত্যাড়া যখন বলছে যেতে তো হবেই।তুই শুধু চুপচাপ থাকবি আর যা জিজ্ঞেস করবে তার উত্তর দিবি।বাড়তি কোনো কথা না।”

কিছু করতে না পেরে শক্তি রেডি হয়ে নিচে আসে।দেখে রক্তিম গ্যারেজ থেকে ওর বাইক বের করছে।দেখে তো শক্তির চক্ষু চড়কগাছ!

রক্তিম ওকে বাইকে করে নিয়ে যাবে!রক্তিম নিজের বাইকে কখোনো কাউকে বসায় না।রক্তিম কি পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি।শক্তির ভাবনায় ছেদ পরে রক্তিমের হুংকারে,”সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকবি,না বাইকে উঠবি!”

রক্তিমের ধমকে শক্তি সুরসুর করে বাইকের পেছনে বসে যায়।
আজ নিয়তি এ কেমন খেলা খেলছে শক্তির সাথে।একথাই শুধু ভাবছে ও।সকাল থেকে এসব কি হচ্ছে তা শক্তির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বাইক চলতে শুরু করেছে।নিমিষেই বাড়ির রাস্তা পাড় করে বড়ো রাস্তায় উঠে গেলো ওরা।

এরই মাঝে রক্তিমের গমগমে আওয়াজ, “ভালোভাবে ধরে বোস!”

“ক্যারিয়ারে ধরেছি।”

শক্তির উত্তর শোনার পর গাড়ির স্পিডটা আরেকটু বাড়িয়ে দেয় রক্তিম। আর শক্তির হাত গিয়ে ঠেকে রক্তিমের কাঁধে। শক্তি সরাতে চাইলে রক্তিম বলে,
“তোকে সরাতে বলেছি?এভাবেই ধরে বোস।”

“খবিশ একটা।”

মিনমিন করে শক্তি।

কিন্তু সে যদি লুকিং গ্লাসে তাকাতো তবে দেখতে পেতো রক্তিমের হাসি মুখ।

বাইক এসে থেমেছে মহুয়া নদীর ব্রীজের উপর।এই ব্রীজটা প্রায় আধ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই জায়গাতেই মহুয়া নদী সবচেয়ে প্রশস্ত হয়েছে।অসম্ভব সুন্দর এই জায়গাটি। এখানে সারাবছরই কাশফুল ফোটে।আর এইসময় মানে শীতকালে জায়গাটা মুখরিত থাকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।গ্রাম থেকে দূরে হওয়ায় অনেক প্রেমিকযুগল এখানে ঘুরতে আসে। এই জায়গাটাকে অনেকে তাই লাভার্স পয়েন্টও বলে। অনেক শুনেছে শক্তি এই জায়গার কথা।কিন্তু কোনোদিনও আসতেই পারেনি।এই রক্তিমর জন্য।
কিন্তু রক্তিম তাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছে। এটাই ভাবছে শক্তি।

“কিরে,নাম!”
রক্তিমের কথা শুনে নিচে নামে শক্তি।

“দাড়া এখানে, আমি বাইকটা সাইড করে আসি।”

শক্তি কি বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।আচ্ছা আজকে কি খুব ভয়ংকর কিছু হতে চলেছে। রক্তিম তাকে এই ব্রীজ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেবে না তো?

এসব ভেবে ভেবে শক্তির হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।

রক্তিম শক্তির হাত ধরে ওকে একদম ব্রীজের কিনারায় নিয়ে আসে,যেখান থেকে কিনা পুরো নদীটা দেখা যায়।
শক্তি মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকছে আর ভাবছে কোন কুক্ষণে ও মিমির কথায় রাজি হয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল। এখন নিশ্চয়ই রক্তিম তাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেবে।কাল সকালেই ব্রেকিং নিউজ হবে,
“এক খবিশের হাতে এক নিরীহ বালিকা, থুক্কু কিশোরী খুন।”
তারপর সে ভুত থুক্কু পেত্নী হয়ে তার এক্স ক্রাশ সুশান্ত সিং রাজপুতের সাথে লা লা লা লালা করবে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here