পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-১৭,১৮

পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-১৭,১৮
Tithee Sarker
পর্ব-১৭

সারা ঘরময় পায়চারি করছে শক্তি। শান্তর এক্সিডেন্টের পেছনে রক্তিমের হাত আছে এটা মনে হতেই ভয়ে তার বুক কেঁপে উঠছে।বিষয়টা জানাজানি হলে কি হবে তা সে ভাবতেও পারছেনা।

আজ রিদ্ধিরা চলে যাবে।সকাল থেকেই গোছগাছ চলছে।জয়ার একপ্রস্থ কান্নাকাটি কমপ্লিট।
জয়ার স্বভাবটা একটু অদ্ভুত। সবসময় চুপচাপ থাকে কিন্তু একটু কষ্ট পেলেই তার কি কান্না! কষ্টও পেতে হয় না,রান্না করার সময় তরকারি পুড়ে গেলেও কান্না করে দেয়।

আর কয়দিন পর রিদ্ধির পরীক্ষা বিধায় আজ চলে যেতে হচ্ছে। কেননা,পরীক্ষার আগেই ওকে নিয়ে অর্ক ঢাকা শিফ্ট করবে।সেখানে গোছগাছেও তো সময় লাগবে।

“ও রিদ্ধি দি,থাকো না আর কয়দিন! ”

“থাকতে তো চাইছিলামই শক্তি, কিন্তু দেখ আর কয়দিন পরই তো চলে যেতে হবে।তবে পরীক্ষার পর সিউর আসবো।”

“হুম!” মন খারাপ করে বলে শক্তি।

“মন খারাপ করিস না।আর কয়দিন পর তো তোরও পরীক্ষা। আমি থাকলে তোর পড়া হতো?”

“আচ্ছা যাচ্ছো,যাও।কিন্তু এটা বলে যাও হানিমুনে কোথায় যাবে?”

শক্তির মুখে দুষ্টু হাসি।

রিদ্ধি চোখ পাকিয়ে বলে,

“তবে রে বজ্জাত মেয়ে!বড়ো দিদিকে এসব বলতে লজ্জা করে না।”

“যা সত্যি তাই বললাম।এবার বলো কোথায় যাবে?কক্সবাজার? ”

“তোর বুঝি কক্সবাজার যাওয়ার খুব শখ?”

“আর কক্সবাজার! তোমার ভাইয়ের জন্য তো মহুয়ার পাড়েও যেতে পারি না।আবার কক্সবাজার! ”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে শক্তি।

“চিন্তা করিস না,মহুয়ার ব্রীজে যেমন আমার ভাই নিয়ে গেছিলো,কক্সবাজারেও আমার ভাই নিয়ে যাবে।হানিমুনেই!”

এই বলে চোখ টিপ দেয় রিদ্ধি।

“ছিঃ,কি অশ্লীল! ” বলে দৌড়ে পালায় শক্তি।

——————————–

কাল রক্তিম চলে যাবে ঢাকা। আর এবার বেশ অনেক দিনের জন্যেই যাবে।এক মাস পর তাদের পরীক্ষা, পরে আরো একমাসের জন্য ইউনিভার্সিটির ফার্মে কাজ করতে হবে।তারপর প্রেক্টিক্যাল।এক কথায় বলতে গেলে চার-পাঁচ মাসের ব্যাপার।

রিদ্ধিরা সকালে চলে যাওয়ার পর থেকেই শক্তি মন খারাপ করে রুমে এসে বসে আছে। এমন না যে,তার একা থাকার অভ্যাশ নেই।আগে তো রিদ্ধি বছরের বেশিরভাগ সময়ই ঢাকা থাকতো।কিন্তু কালকে রক্তিম চলে যাবে বলেই কি মনটা খারাপ তার!

শক্তি নিজেই ভেবে অবাক হয় যে,রক্তিমের প্রতি তার এতোটা টান হলো কিভাবে!!! আচ্ছা, সে কি রক্তিমকে আগে থেকেই ভালোবাসতো?

এসব ভাবতে বসলো শক্তি।

আসলেই তো রক্তিম ছাড়া আর কোনো পুরুষ মানুষের উপস্থিতি সে কোনোদিন পছন্দ করেনি।বাবুর পর রক্তিমই এমন এক ব্যক্তি যার ছোঁয়ায় সে কোনোদিন অস্বস্তি অনুভব করেনি।

এমন না যে রক্তিম কখনো এতোদিন বাইরে থাকে নি।বরং এরচেয়েও বেশি সময় ধরে বাইরে থেকেছে।কিন্তু আজ কেনো জানি শক্তির মনে চাইছে, রক্তিম থাক!আর কিছু দিন।নিতান্তই ছেলে মানুষি আবদার। শক্তি নিজেও তা বুঝতে পারে।আচ্ছা, রক্তিম কি তাকে পাগল টাগল করে ফেললো নাকি?

সন্ধ্যার পর শক্তির ডাকে পরে রক্তিমের রুমে।প্যাকিং কিছুই হয়নি।সব শক্তিকেই করতে হবে।
রুমে গিয়ে দেখে রক্তিম তার সব জামা কাপড়, বই পত্র এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। শক্তি কোনো কথা না বলে বিছানার নিচ থেকে ওর লাগেজটা বের করে সব গোছানো শুরু করে।
রুমে খুটখাট শব্দ শুনে রক্তিম বারান্দা থেকে ভেতরে আসে।রক্তিমের বারান্দাটা অসম্ভব সুন্দর। কোথা কোথা থেকে ফুল গাছ এনে বারান্দা ভরে রেখেছে।শক্তি দিনের বেলা অনেক বার এসেছে তবে রাতে আসা হয়নি।শক্তি শুধু ভাবে, “দিনের বেলাতেই এতো সুন্দর! রাতে চাঁদের আলোয় না কত সুন্দর লাগবে!”

শক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে রক্তিম,

“কালকে চলে যাচ্ছি। তোকে আর জ্বালানোর কেউ থাকলো না।”

শক্তি মাথা নিচু করে জবাব দেয়,

“হুম।”

রক্তিম ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর চুলে নাক ডোবায়। আর ধীর কন্ঠে বলে,

“তোর কষ্ট হবে না?কতোদিন তোকে ছাড়া থাকতে হবে।আমার তো যেতেই মন চাইছে না।”

আর এইদিকে শক্তি তো পুরোই অফ।ও কোনো রিঅ্যাকশনই দিতে পারছে না।ওর কি রিঅ্যাকশন বাটন নষ্ট হয়ে গেলো নাকি?
রক্তিমের হাত বিচরণ করছে শক্তির কোমর জুড়ে।শক্তির শরীরের কেমন একটা মৃদু শিহরণ বয়ে যাচ্ছে।

শক্তি ছোটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে কিন্তু রক্তিমের ছয় ফুটি শরীরের সাথে ওর মতো চুনোপুঁটি কি আর পারবে?তাই সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

রক্তিম ওর চুল থেকে মুখ উঠিয়ে ঘাড়ে এক ভয়ানক চুমু খায়।শক্তি আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।

কিছুক্ষণ পর রক্তিম নিজেই শক্তিকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। শক্তি লজ্জায় চোখ তুলে চাইতে পারছেনা।

“উফফ,,,এতো লজ্জা! এতো লজ্জা পাস না।তোর এই লাল গাল দুটো দেখে ইচ্ছে করছে,,,উমম,,,,”

“ইশশ,,,কি সব কথা বার্তা!” এই বলে শক্তি ছুটে বের হতে গেলেই রক্তিম ওকে পেছন থেকে আটকায়।

“রোজ তো পালিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।আজ তো নয়ই।”

এই বলে রক্তিম একটা ডেভিল স্মাইল দেয়।

আর শক্তি, সেতো পারলে এখুনি হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে।

“কি হবে এবার তার??”

(চলবে)
Tithee Sarker

#পূর্ণিমা সন্ধ্যায়
পর্ব-১৮

রক্তিম ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তার দিকে। শক্তি এক পা এক পা করে পেছুতে থাকে।গিয়ে ধাক্কা খায় দেয়ালে।পেছনে আর জায়গা নেই।পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই।দুপাশে হাত দিয়ে আটকে রেখেছে রক্তিম।শক্তির এবার সিরিয়াসলি কান্না পাচ্ছে।

হঠাৎই এক হাত দিয়ে শক্তির কোমর জড়িয়ে ধরে রক্তিম। শক্তির তো শ্বাস আটকে আসার জোগাড়।রক্তিমের ঠোঁট জোড়া এগিয়ে আসতে থাকে শক্তির দিকে।

শক্তি চোখ মুখ খিচে দু’হাতে নিজের জামা খামচে ধরে।তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু কিছু তো করতেই হবে।

হঠাৎ দরজার দিকে তাকিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে বলে ওঠে শক্তি,

“বাবু,তুমি এখানে! ”

শোনা মাত্রই রক্তিম ছিটকে দূরে সরে যায়।এর এই সুযোগে শক্তি এক দৌড়।

“এই শক্তি! দাঁড়া, দাঁড়া বলছি।”

“আমায় আর পাচ্ছো না।”

বলে দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে যায় শক্তি।এসেই দরজা লক করে বিছানায় গুটিশুটি মেরে বসে পরে সে।

উফফ,,, ভাবা যায়!কী ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে চলেছিলো তার সাথে।এখনও তার হৃদপিণ্ড ভয়ংকরভাবে উঠানামা করছে।

হঠাৎ ফোনের মেসেজ টোনে সে ধাতস্থ হয়।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।মেসেজটা পড়ে প্রথমে একটা ঝটকা খেলেও ধীরে ধীরে লজ্জা জেঁকে ধরে তাকে।

“ইশশ,,,লোকটা এতো লজ্জা কেনো দেয়!”

“এত্তো লজ্জা! তুই যখন লজ্জায় লাল হয়ে যাস,অজানা কোনো কিছু আমায় তোর দিকে টেনে নিয়ে যায়।মনে হয় তোর ওই গাল দুটোতে টুপ করে চুমু খেয়ে নেই। একদম গোলাপজামের মতো!”

“হে ঈশ্বর,,, এগুলো কি ধরণের কথা!আচ্ছা, উনি কি পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি?ইশশ,,কিভাবে যাবো আমি উনার সামনে!”

এসব ভাবতে ভাবতেই দু’চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো শক্তি।

পরদিন সকাল সকাল রক্তিমের ট্রেন।তাই ভোরের দিকে বাড়ি থেকে বের হতে হলো।যাওয়ার আগে অবশ্য শক্তির সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো,কিন্তু ওর বাবা এমন ভাবে সাথে লেগেছিলো যে শক্তিকে আলাদা ভাবে পাওয়াই গেলো না।

রক্তিম বেরিয়ে গেলো সকাল সাতটার দিকে।আর শক্তির ফোনে ওর নাম্বার থেকে একটা মেসেজ এলো সাতটা ত্রিশে।

“এই যে ম্যাম,যাওয়ার আগে যে আমায় দেখা দিলেন না।তার জন্য আপনার শাস্তি প্রাপ্য।আর সেই শাস্তি হলো এই যে, আমায় প্রতিদিন আপনার ছবি তুলে পাঠাতে হবে।একদিন মিস গেলেই ফিরে এসে মাইর চলবে।আর আপনার জন্য একটা জিনিস রেখে এসেছি আমার কাবার্ডে।দেখে নিবেন প্লিজ। ”

আজ শক্তি এতো পরিমাণ বিস্মিত তা আর বলার মতো না।আজ কীসব ঘটছে তার সাথে।

———————————
চার মাস পর,,,,

আজ শক্তিকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে।শক্তি জুবুথুবু হয়ে বসে আছে ড্রইংরুমে সবার সামনে। তার পরনে একটা মেরুন কালার জামদানী। লম্বা চুলগুলো কোনোরকম হাত খোপা করা।কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে ওর। বাড়ির সবাই বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে।এই বিষয়ে কেউ যে কিছু জানতো না।তা ভালো ভাবেই বোঝা যাচ্ছে। শুধু পীযূষ বাবু স্বাভাবিক ভাবেই বসে আছেন।

মোট চারজন এসেছে।এনাদের মধ্যে একজন বয়স্ক মহিলা শক্তিকে জিজ্ঞেস করলো,

“তোমার নাম কী মা?”

শক্তির গলা দিয়ে কোনো স্বরই বের হচ্ছে না।ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। গত এক ঘন্টা যাবত রক্তিমকে ফোনে ট্রাই করেও পাচ্ছে না সে।শেষে একটা মেসেজ করে রাখে।রক্তিম এসব জানতে পারলে কি হবে এসব ভেবেই তার কলজের জল শুকিয়ে যাচ্ছে।

“কিরে মা,তোর নাম বল!”

পীযুষ বাবুর আওয়াজে চোখ তুলে তাকায় সে।আর সামনে তাকাতেই তার হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ড্রইংরুমের দরজার সামনে রক্তিম দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে পারলে এখুনি সবকিছু তছনছ করে ফেলবে।চোখগুলো রক্ত জবার মতো লাল হয়ে আছে।

এখন কি হবে সব ঈশ্বর জানেন।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here