পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-৪

পূর্ণিমা সন্ধ্যায়,পর্ব-৪
Tithee sarker

মানুষের জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন তার কাছে সবকিছুই নতুন মনে হয়।সবকিছুর প্রতি কৌতুহল বেড়ে যায় নতুনকে জানার আগ্রহ বাড়ে।নতুন অনুভূতি মনে উঁকি দেয়। চার পাশের সবকিছুই রঙিন মনে হয়। মনে হয় আশে পাশে হাজার খানেক প্রজাপতি উড়ছে।এককথায় বললে,আমাদের সিনিয়ররা যাকে বলে পুরাই পাঙ্খা হয়ে যাওয়া!
এই সময়টা হলো টিনএজের শেষের দিকে।কিশোরী থেকে যুবতীতে পাড় হওয়ার সময়।

শক্তি আর পিয়াও বর্তমানে এই স্টেজে আছে। পিয়া এটার সুযোগ নিলেও শক্তির পিচ্চি পাচ্চা মনটাকে শাষণে রাখতে হচ্ছে। কারণ একটাই ‘দ্য গ্রেট রক্তিম’।
শক্তির মনটা খারাপ। কেননা আজ তার সব বান্ধবীরা কলেজ থেকে ঘুরতে যাবে।অবশ্য বেশি দূরে কোথাও না।কাছেই একটা নতুন পার্ক হয়েছে সেখানে।কিন্তু শক্তি যেতে পারবে না।কারণ একটাই।ঘুরতে গেলে দেখা যাবে কোথা থেকে ওই যমদূত রক্তিম এসে ওর জানটা কবজ করে নিয়ে চলে যাবে।
যদিও রক্তিম নেই এখন।ও আছে ঢাকায়, কিন্তু কলেজে ও নিজে এসে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল। আর যাওয়ার আগে শান্ত গলায় শাসিয়ে গেছে যে যদি শুনতে পায় যে তার না থাকাকালীন সময়ে শক্তি যা মন চায় তা করেছে তো থাপ্পড় একটাও মাটিতে পড়বে না।
এমন অবস্থায় আর কিইবা করতে পারে শক্তি। শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া।

এরই মাঝে সে রিদ্ধির কথা গুলো নিয়ে ভেবছে অনেক। তাই সাহস করে একদিন রক্তিমের সাথে কথা বলতে গেছিলো।সে এই বাড়িতে আছে আজ নয় বছর ধরে কিন্তু লাস্ট সে রক্তিমের সাথে কথা বলেছিল মনে হয় প্রায় চার পাঁচ বছর আগে।এর মাঝে সে একবারও নিজে থেকে রক্তিমের সাথে কথা বলেনি।শুধু রক্তিম যা জিজ্ঞেস করে তার উত্তর দেয়।এমন খবিশের সাথে কি কথা বলতে ইচ্ছে হয়,যে কিনা তাকে দেখলেই ঝাড়ি মারার জন্য রেডি থাকে। আর একটা বিষয় সে লক্ষ করেছে রক্তিমের সাথে কথা বলাটা পীযূষ বাবু একদম পছন্দ করে না।সে যাই হোক!

রক্তিমের ঢাকা যাওয়ার আগের রাতে সে সাহস জুটিয়েছিল। মামনী রুশাকে বলছিল রক্তিমকে খাবারের জন্য ডাকতে।শক্তি বললো,

“আমি যাই,মামনী?”

শক্তির এই কথা শুনে সবাই যেন ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।
জয়া বলে,”তুই!তুই যাবি,তাও বাবাইকে ডাকতে!”

পাশ থেকে রিদ্ধি বলে,”হ্যা,তুই যা।”

শক্তির উপরে যাওয়ার দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।এরই মাঝে জয়া চাপা গলায় বললো রিদ্ধিকে হঠাৎ শক্তি কেনো রক্তিমের সাথে কথা বলতে গেলো।
রিদ্ধি এর কারণ জানা সত্ত্বেও চুপ করে থাকলো।মনে মনে ভাবে শক্তিকে রক্তিমের সাথে সহজ হতে না দিলে তার ভাইটাকে আর ঠিক করা যাবে না।

শক্তি রক্তিমের রুমের সামনে এসে জোরে একটা শ্বাস নিলো।কোনো রকমে সাহস জুটিয়ে বললো,

“রক্তিম দা,দ,আ,দা,,,!”

রক্তিম চকিতে পেছনে ফিরতেই শক্তির ভয়ে কাচুমাচু হয়ে থাকা মুখটা দেখলো।রক্তিমের চোখ দুটো স্থির হয়ে যায় শক্তির চোখে।ভ্রূ কুচকে দেখতে থাকে তাকে।মূলত শক্তির ঠোঁটের উপরে থাকা কালো কুচকুচে তিলটাকে।রক্তিমের এমন চাওনিতে অস্বস্তি অনুভব করে শক্তি। আশেপাশে চোখ রেখে আবার বলে,

“মা,মামনী খেতে ডাকে, দাদা।”

ব্যস!হয়ে গেলো। যাও শক্তির ডাকতে আসাটা কিছুটা কাজে দিয়েছিল। শেষে এই দাদা ডাকায় সব ঘেটে ঘ হয়ে গেল।শক্তির দাদা ডাকটা একদম সহ্য করতে পারে না রক্তিম। দাঁতে দাঁত চেপে বলে রক্তিম,

“যাবি এখান থেকে নাকি থাপ্পড় খাবি?এন্ড রিমাইন্ড ওয়ান থিংক, আমি তোর দাদা না।আমি শুধু রুশার দাদা।”
এই বলে মুখের ওপর দড়জা লাগিয়ে দেয় রক্তিম। আর এইদিকে তো রাগে কান্না করে দেবে অবস্থা শক্তির। তবু্ও সে নিজেকে ঠিক রেখে বলে,”বদ লোক কোথাকার, খবিশ!আমি জানতাম সয়তানটা আমায় দেখতেই পারেনা।আমাকে নাকি নিজের বোন বলেই ভাবে না।তো কি ভাবিস?আমারও বয়ে গেছে তোকে দাদা ডাকতে।হুহ্!”

এই বলে রুমে গিয়ে দড়াম করে দড়জাটা লাগিয়ে দেয়।

————————————————-

এরই মাঝে কেটে যায় আরও কিছু মাস।রক্তিম এই ছয় মাসে একবারও বাড়ি আসেনি।রিদ্ধি যদিও এসেছে দুবার।সময়টা শক্তির ভালোই কাটছিল। কিন্তু কোথাও যেন সে কিছু একটা মিস করছিল।তার সামন্য ভুলেই রক্তিমের চোখ রাঙানো,ধমক দেওয়া এগুলো যেন তারও গা সওয়া হয়ে গেছিল।এখন কিছু দিন যাবত তার আশে পাশে রক্তিমের অনুপস্থিতি কেন জানি তাকে বারবার বিষন্ন করে তুলছিল।সে ভীষণ ভাবে রক্তিমকে অনুভব করতে চাইছিল।কিন্তু পারছিলো না।

এরই মাঝে একদিন ছিলো মিমির বার্থডে।কলেজে ভর্তি হওয়ার পর যাদের সাথে শক্তির ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো,মিমি তাদেরই একজন। সব বান্ধবীরা ঠিক করলো মিমির বার্থডেটা কলেজের সামনে যে বড় রেস্তোরাঁ আছে সেখানে সেলিব্রেট করবে।মিমিও রাজি হয়েছিলো ট্রিট দিতে।কিন্তু শক্তিকে কোনো ভাবেই রাজি করানো যাচ্ছে না সেখানে যাওয়ার জন্য।তার একটাই কথা,’আমার মরার কোনো শখ নাই।’

সবাই কত করে বোঝাচ্ছে ওকে যে গেলে কিছু হবেনা।কিন্তু শক্তিকে কি এতো সহজে নিয়ে যাওয়া যায় নাকি!

শেষে পিয়াও বললো সবাইকে যে শক্তি যেতে পারবে না।কিন্তু মিমি একদম নাছোড়বান্দা। সে কিছুতেই শক্তিকে ছাড়া তার জন্মদিন পালন করবে না।

এদিকে শক্তি বলছে,”বোন রে,তোর জন্মদিন পালন করতে গেলে তোদের সবাইকে আমার মৃত্যু দিন পালন করতে হবে যে!”

কিন্তু কে শোনে কার কথা।ওরা তো আর রক্তিমকে চেনে না।এখানে পিয়াও কিছু করতে পারলো না।দুটোকে বগল দাবা করে সবাই চললো রেস্তোরাঁয়।

কলেজ থেকে বেরোতেই আরাফের সাথে দেখা।আরাফ হলো রক্তিমের ছোট বেলার বন্ধু। শক্তি মনে মনে ভাবে,”সর্বনাশ!পুরাই বাঁশ। এখন রক্তিমের কাছে গিয়ে কিছু না লাগালেই চলে।

শক্তিকে দেখে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে আরাফ,”কেমন আছো পিচ্চি আপু?”

শক্তিও হেসে জবাব দেয়, “ভালো,ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন? ”

“এইতো বেশ চলে।তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে তোমাদের?

পাশ থেকে পিয়া বলে,” আসলে ভাইয়া আমাদের এই ফ্রেন্ডের আজ বার্থডে তো,তাই আরকি সামনে কলেজ ক্যাফেতে যাচ্ছি। ”

পিয়ার এই কথা শুনে শক্তি চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালো।কি দরকার ছিল আরাফকে এই কথার বলার।

শক্তি জোর করে একটু হেসে বলে,”তবে আমি যাই,ভাইয়া?”

“হ্যা,হ্যা,ভালো থেকো আপু।”

রক্তিমের এই বন্ধুটিকে বেশ লাগে শক্তির। কি সুন্দর ভাবে কথা বলে।আর ওইটা একটা খবিশ। তবে বন্ধুদের মাঝে শুধু আরাফকেই চেনে শক্তি। আর কারো সাথে ওকে কথা বলতে দেয় না রক্তিম।

রেস্তোরাঁয় বসে আছে ওরা পাঁচ জন।খাবার অর্ডার করেছে মাত্রই।কিন্তু শক্তির মন কেনো যেনো কু-ডাকছে।মনে হচ্ছে রক্তিম এতোক্ষণে ঠিকই জেনে গেছে ওর এখানে আসার কথা।

শক্তির ভাবতে দেরি কিন্তু পিয়ার ফোনে রক্তিমের কল আসতে দেরি হয় না।

“হ্যা,,হ্যালো ভাইয়া,বলেন।”

ওইদিকে রক্তিমের গম্ভীর আওয়াজ, “ফোনটা শক্তিকে দে।”

পিয়া ইশারায় দেখায় ফোনটা নিতে।শক্তির মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেনো এক্ষুনি কেঁদে দেবে।মনে মনে সবগুলোকে চুটিয়ে গালি দিচ্ছে।

ফোনটা শক্তি কানে ধরতেই রক্তিমের কলিজা হিম করা আওয়াজ,

“সাহস কি বেশি বেড়ে গেছে?কয়টা থাপ্পড়,,,,,

রক্তিমের কথা শেষ হওয়ার আগেই শক্তির মিনমিনে আওয়াজ শোনা গেলো,

” থাপ্পড় খাবি! এই এক ডায়লগ আর কত।”

“তো কি বলবো,চুমু খাবি?এক্ষুনি বাড়ি যাবি তুই নইলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”

রক্তিমের কথা শুনে শক্তির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।লজ্জায় গাল দুটি লাল হয়ে যায়।একি ধরনের কথা।তবুও রক্তিমের মুখে!ফোনটা পিয়ার হাতে দিয়ে কোনো রকমে দৌড়ে বেরিয়ে আসে শক্তি।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here